01-10-2020, 12:36 PM
ত্রয়োবিংশ পর্ব (#03)
ওদের এই সফটওয়্যার ফার্মে ছোটো ছোটো কাজ আসতে শুরু হয়। প্রথম কয়েক মাস সবাই কাজে ডুবে যায়। একদিন মিস্টার সেন দেবায়নকে ডেকে বলেন যে ওকে এই সফটওয়্যার ফার্ম ছেড়ে হোটেকের দিকে একটু নজর দিতে হবে। সফটওয়্যার ফার্মের পরিচালনা করার জন্য অনেক লোকজন আছে। হোটেল বিজনেসের ব্যাপারে দেয়ায়ন শুধু মাত্র অনুপমাকে জানিয়ে রেখেছিল।
কাঁচের দরজার পেছনে বসে দেবায়ন, সামনে বড় টেবিল একটা ল্যাপটপ। ঘষা কাঁচের দরজায় ওর পোস্ট লেখা, অপারেশান ম্যানেজার। কোনদিন স্বপ্নে ভাবেনি এত তাড়াতাড়ি নিজের একটা কোম্পানি হয়ে যাবে। স্বপ্ন সাকার হবার পরে দেবায়নের সাথে সাথে অনুপমা বেশ খুশি। সামনে ল্যাপটপ খোলা। ডিসেম্বরের ঠাণ্ডা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যায় তাই অফিসে আসতে দেরি হয়ে যায়। অফিসে ঢুকে নিজের মেল দেখে একটু চুপচাপ বসে। টেবিলে ওর মায়ের আর অনুপমার ছবি। ধনোলটি গিয়ে মায়ের সাথে অনুপমার একটা ছবি তুলেছিল। ওর জীবনের সব থেকে বড় দুই স্থম্ভ কে দেখে, হবু বৌমা তাঁর মামনিকে জড়িয়ে ধরে। এমন সময়ে অনুপমা কাঁচের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে।
অনুপমা চেয়ারে বসে বলে, “তোমার সাথে খুব জরুরি কথা আছে।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “কার কি হল আবার? শ্রেয়া কিছু বলেছে? পায়েলের কিছু হয়েছে?”
অনুপমা, “না এসব কথা নয়। বাবা কালকে আমাকে বলছিল যে তুমি নাকি পরের মাস থেকে বাইরে যাবে ওই হোটেলের কাজে?”
দেবায়ন, “হ্যাঁ। এর পর থেকে এইখানে আমার কাজ একটু একটু করে কমাতে হবে। তুমি এই অপারেশান দেখবে আর সুপর্ণা ম্যাম আছেই তোমাকে হেল্প করার জন্য। রুপক টেকনিকালে আছে, সুতরাং চিন্তার কোন কারন নেই।”
অনুপমা, “দীপঙ্করদা একবার আমাকে বলছিল যে বাইরের কিছু প্রোজেক্ট এলে ভালো হয়। সেই নিয়ে বাবার সাথে আমার গত রাতে কথা হচ্ছিল। বাবা আমাকে বলল যে অনিমেশ আঙ্কেলের ছেলে ইন্দ্রনীল নাকি আমাদের কোম্পানিতে জয়েন করতে চায়।”
দেবায়ন, “ইন্দ্রনীল? মানে যার সাথে তোমার একসময়ে…”
অনুপমা হেসে ফেলে, “হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ। ওই ইন্দ্রনীলের সাথে বাবা আমার এঙ্গেজমেন্ট ঠিক করেছিল। যাইহোক সেটা পুরানো ব্যাপার, ওই নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। ইন্দ্রনীল নাকি আমাদের ওভারসিস বিজনেস দেখবে।”
দেবায়ন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “ইন্দ্রনীল আমাদের কোম্পানি জয়েন করবে এই কথা আমাকে এতদিন কেন জানায়নি কাকু?”
অনুপমা, “আমি ঠিক এই কথা বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। বাবা বললেন যে, ওই কথা নাকি একদম মাথা থেকে বেড়িয়ে গেছিল। তোমার সাথে নাকি এই নিয়ে আলোচনা করত পরে। মানে তুমি আর বাবা যখন ওই বিন্সারের রিসোর্ট কিনতে যাবে তখন তোমার সাথে এই নিয়ে আলোচনা করত। যাই বল, এই পদক্ষেপ আমার ঠিক ভালো বলে মনে হচ্ছে না।”
দেবায়ন, “কারন?”
অনুপমা, “তুমি বলেছিলে যে, কন্সট্রাক্সান কোম্পানির ভি.সি জোগাড় করতে অনিমেশ আঙ্কেল হেল্প করেছিল। এখন আবার ওর ছেলে আমাদের কোম্পানি জয়েন করতে চায়। অনিমেশ আঙ্কেলের আসল উদ্দেশ্যটা কি?”
দেবায়ন একটু চিন্তিত হয়ে পরে, “দেখি পরের মাসে বিন্সার যাবো আরও কয়েকটা জায়গায় যাবো। তখন না হয় কাকুর সাথে আলোচনা করে নেব এই ব্যাপারে।”
অনুপমা একটু চিন্তিত হয়ে বলে, “আমি চাইনা ইন্দ্রনীল আমাদের কোম্পানি জয়েন করুক।”
দেবায়ন হেসে ফেলে অনুপমার কথা শুনে, “আরে বাবা, পুরানো কথা ছাড়ো। তুমি ওকে দেখেছ সেই সাত আট বছর আগে। এখন দেখে কি আর প্রেম জাগবে নাকি? দেখা যাক কি হয়। কাকু যখন বলছেন তখন একবার শোনা যাক।”
অনুপমা, “ইন্দ্রনীল জয়েন করতে চাইলে ভালো কিন্তু কত কাজে দেবে সেটা দেখার। আমি বাবাকে বলে দিয়েছি যে ওকে জয়েন করাতে পারি একটা শর্তে ও যদি জয়েন করার এক মাসের মধ্যে আমাদের একটা বাইরের বড় প্রোজেক্ট এনে দেয়।”
দেবায়ন হেসে ফেলে, “এই ত আমার পুচ্চি সব শিখে গেছে। এবারে তাহলে আমি বাইরের কাজ দেখতে পারি।”
অনুপমা, “হ্যাঁ, তুমি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেরাও আর কি।”
দেবায়ন চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুমি না থাকলে আমি কি আর এখানে বসতে পারতাম?”
অনুপমা ওর গলা জড়িয়ে বলে, “সত্যি সেটা নয় পুচ্চু ডারলিং। তুমি না থাকলে আমি এখানে বসতে পারতাম না। সব কিছু হয়েছে শুধু তোমার জন্য। তুমি বাবার সাথে যদি না কথা বলতে তাহলে আজ অনেক কিছু হতনা।”
দেবায়নের চোখে সেই রাতের দৃশ্য ভেসে ওঠে। পারমিতাকে কোলে করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া, সারা রাত ধরে পারমিতার সাথে সম্ভোগ কেলিতে মত্ত হওয়া। কিছুদিন পরে অনুপমার বাড়িতে এই নিয়ে বচসা। একটা ছোটো প্রশ্ন সবার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
অনুপমা হেসে দেবায়নের মাথায় টোকা মেরে বলে, “ওই রাতের কথা মনে পরতেই আমার বরটা হারিয়ে যায়।”
দেবায়নের কান লাল হয়ে যায় লজ্জায়, “না না… সেটা নয়।”
অনুপমা বাঁকা হাসি হেসে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, জানা আছে আমার। এক কাজ কর, আজকে আমার বাড়িতে রাতে থেকে যেও। আমি ভাবছি একবার বাবার সাথে কথা বলতে। আমি মামনিকে ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি।”
দেবায়ন হেসে বলে, “থাকতে পারি একটা শর্তে, রাতে গেস্ট রুমে আমার সাথে কাটাতে হবে।”
অনুপমা হেসে গলা জড়িয়ে বলে, “ওকে ডান পুচ্চু সোনা।”
প্রেয়সীর গজ দাঁতের মোহিনী হাসি দেখে অফিস ভুলে ওই খানে গোলাপি নরম অধরে চুম্বন একে দেয়। অনুপমা স্থান কাল ভুলে দেবায়নের গলা জড়িয়ে সেই সুমধুর চুম্বনে হারিয়ে যায়। দেবায়ন ঠোঁট ছেড়ে কানে কানে বলে, “রাতে একটা লাল লঞ্জারি পরে এস। তোমাকে অনেকদিন কাছে পাইনি, রাতে তোমাকে চটকে একাকার করে দেব।”
দেবায়নের প্রসস্থ ছাতির ওপরে নরম স্তন জোড়া চেপে, নিজেকে কঠিন কাঠামোর সাথে মিশিয়ে দিয়ে প্রেমঘন মিহি কণ্ঠে বলে, “রাতের জন্য তর সইছে না পুচ্চু সোনা।”
দেবায়ন ওর কোমর জড়িয়ে বলে, “তর আমারো সইছে না পুচ্চি। কতদিন হয়ে গেল তোমাকে ঠিক ভাবে চুমু খাইনি, তোমাকে প্রান ভরে দেখিনি। তোমার শরীরের রস খাওয়া হয়নি।”
অনুপমা দেবায়নের আগুন চোখ দেখে লজ্জা পেয়ে বুকে মুখ লুকিয়ে বলে, “প্লিস সোনা এখানে ওই ভাবে দেখো না। আমি গলে যাচ্ছি, তোমার ওই চোখের সামনে দাঁড়ানোর শক্তি হারিয়ে ফেলছি সোনা।”
এমন সময়ে ফোন বেজে ওঠাতে ওদের প্রেমের স্রোতে বাধাপ্রাপ্তি হয়।
রোজ বিকেলের মতন অফিসের পরে বাইকে চেপে দেবায়ন আর অনুপমা বাড়িতে পৌঁছায়। অন্যদিন অনুপমাকে বাড়িতে নামিয়ে চা খেয়ে তারপরে লেকটাউন চলে যায়। অনুপমা ওর মামনিকে ফোনে জানিয়ে দিয়েছিল যে দেবায়ন ওদের বাড়িতে রাতে থাকবে।
নিচে বসার ঘরে পারমিতা আর পায়েল বসে টিভি দেখছিল। অঙ্কনের সামনে ক্লাস টুয়েল্ভের পরীক্ষা, তাই নিজের রুমে পড়াশুনায় ব্যাস্ত। বেশির ভাগ দিন দেবায়নের সাথে পায়েলের দেখা হয় না। অনুপমাকে নামিয়ে বাড়ি ফেরার একটু তারা থাকে। পায়েল উপরে অনুপমার রুমে বসে টিভি দেখে। আগের থেকে পায়েলের মানসিক অবস্থা বেশ স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এই বাড়িটাকে নিজের বাড়ির মতন করে নিয়েছে। অনুপমার দেখাদেখি পায়েল পারমিতাকে মামনি বলে ডাকে। দেবায়নকে দেখে মৃদু হাসে পায়েল। সবাই বসার ঘরে বসে গল্প করে, পায়েল চুপচাপ সবার কথা শোনে।
দেবায়ন একবার পায়েলকে জিজ্ঞেস করে, “তুই একবারের জন্য আমাদের অফিসে গেলি না।”
পায়েল মৃদু হেসে বলে, “পরে যাবো।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “তোর কলেজ কেমন চলছে?”
পায়েল, “ভালো।”
দেবায়ন, “বেড়াতে যাবি কোথাও?”
পায়েল, “অঙ্কনের পরীক্ষা শেষ হোক তারপরে ভেবে দেখব।”
অনুপমা হেসে জিজ্ঞেস করে, “আমাদের সাথে যেতে দোষ আছে নাকি?”
পায়েল কিছু উত্তর দেয় না। চুপচাপ বসে থাকে। দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “কি হল তোর? একটু বাইরে বের হতে পারিস ত। অন্তত কাকিমার সাথে শপিং করতে যেতে পারিস। তাতে তোর মন ভালো হবে।”
পায়েল নিচু গলায় বলে, “ভেবে দেখব।”
অনুপমা দেবায়নকে ইশারায় জানায়, থাক আর বেশি বলতে যেও না। যা করার ভাই করবে খানে।
কিছু পরেই মিস্টার সেন বাড়ি পৌঁছে যান। দেবায়নকে দেখে খুশি হয়ে বলেন যে ওর সাথে কথা ছিল। অনুপমা আগে থেকেই জানিয়ে দিয়েছিল কিছুটা। দেবায়ন মিস্টার সেনকে বলে যে অনুপমার সাথে ওই বিষয়ে একটু কথাবার্তা হয়ে গেছে। মিস্টার সেন বলেন রাতে খাবার পরে কথা বলবেন।
রাতে খাবার পরে বসার ঘরে মিস্টার সেন, অনুপমা আর দেবায়ন বসে ওদের আলোচনা নিয়ে। পারমিতা, পায়েল আর অঙ্কনকে নিয়ে ওপরে চলে যায়। পারমিতা আজকাল আর এই সব বিষয়ে বিশেষ মাথা ঘামায় না। গত কয়েক মাসে, অফিসের কাজ করতে করতে অনুপমার মাথা অনেক খুলে গেছে।
অনুপমা কথা শুরু করে, বাবাকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি ইন্দ্রনীলের কথা বলছিলে আমাকে। হটাত ইন্দ্রনীল কেন? বাইরে অনেক ভালো ভালো কোম্পানি পাবে চাকরি করতে সেই সব ছেড়ে এখানে কেন?”
মিস্টার সেন, অনুপমা আর দেবায়নের দিকে একবার দেখে বলেন, “অনিমেশের ইচ্ছে কোলকাতা ফিরে আসার। অনিমেশ চাইছিল যে ইন্দ্রনীল কোন দেশি একটা কোম্পানিতে চাকরি করুক। ওদিকে ইন্দ্রনীল ফ্রাংকফুর্ট ছেড়ে আসতে নারাজ। একটা বাইরের প্রোজেক্ট তোমাদের ফার্মে এলে খুব ভালো। অনিমেশের সাথে মিস্টার হেরজোগের ভালো সম্পর্ক আছে। আর মিস্টার হেরজোগের অনেক চেনাজানা আছে আছে সারা ইউরোপে। সব মিলিয়ে আমি দেখলাম যে ইন্দ্রনীল একদম উপযুক্ত ছেলে। ইন্দ্রনীল ওকে দিয়ে ইউরোপের কিছু কাজ উঠাতে পারবে।”
দেবায়ন অনুপমার দিকে তাকায়। অনুপমা ওর বাবাকে বলে, “বাইরের প্রোজেক্ট এলে খুব ভালো। তবে আমার মনে হয় এখানের কাউকে নিযুক্ত করলে ভালো হত।”
মিস্টার সেন, “ইন্দ্রনীল ইউরোপে বড় হয়েছে, ওখানে পড়াশুনা করেছে। অইখানের মানসিকতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভাবে ওয়াকিবহাল। ওর হাত দিয়ে ব্যবসা আসা বেশি সুবিধাজনক। সবকিছু ভেবেই আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি।”
অনুপমা, “কিন্তু বাবা, এই ফার্ম আমাদের। এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে একবার আমাদের জানালে বড় ভালো হত।”
মিস্টার সেন, “জানি সেটা। বলতাম তোদের। আমি আর দেবায়ন পরের মাসে হোটেলের কাজে বের হতাম। সেই সময়ে ওর সাথে এই সব নিয়ে আলোচনা করতাম। আমি সব কিছু ভেবে চিন্তেই পদক্ষেপ নেই, আর দেবায়নের আশা করি কোন অমত নেই।”
দেবায়ন মিস্টার সেনকে আহত না করে অনুপমাকে বলে, “ঠিক আছে, কাকু যখন বলছেন তখন সেটাই হবে। আর তুমি যেটা বলেছ সেটা আমরা করব।”
মিস্টার সেনকে বলে, “কাকু, আমাদের একটা কথা আছে এখানে। ওকে নিযুক্ত করা নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই তবে ওকে এক মাসের মধ্যে বিজনেস নিয়ে আসতে হবে।”
মিস্টার সেন হেসে বললেন, “হুম বুঝতে পারছি। ইন্দ্রনীলের ব্যাপারে আমার এইটুকু খবর তোমাদের দেবার ছিল। এরপরে তোমরা কি করে ওকে কাজে লাগাবে সেটা তোমাদের ব্যাপার।”
আলোচনা পর্ব শেষে দেবায়ন গেস্টরুমে চুপচাপ বসে চিন্তায় মগ্ন। মিস্টার সেনের কপালের রেখা ওকে বলছে যে মিস্টার সেন কিছু লুকিয়ে গেছেন ওদের কাছ থেকে। অনুপমার সামনে সরাসরি প্রশ্ন করতে চায়নি, হয়ত আবার কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেড়িয়ে আসবে সেই দ্বিধায়। ঠাণ্ডা বেশ ভালোই পড়েছে। দেবায়ন একটা সিগারেট জ্বালিয়ে অনুপমার অপেক্ষা করে। সেদিন আর উপরে অনুপমার রুমে যায় না। ওইখানে অনুপমার সাথে পায়েল থাকে। পায়েল আর সেই আগের মেয়েটা নেই, যে এক সাথে দুই রমণীর সাথে খেলায় মেতে উঠতে পারবে।
ওদের এই সফটওয়্যার ফার্মে ছোটো ছোটো কাজ আসতে শুরু হয়। প্রথম কয়েক মাস সবাই কাজে ডুবে যায়। একদিন মিস্টার সেন দেবায়নকে ডেকে বলেন যে ওকে এই সফটওয়্যার ফার্ম ছেড়ে হোটেকের দিকে একটু নজর দিতে হবে। সফটওয়্যার ফার্মের পরিচালনা করার জন্য অনেক লোকজন আছে। হোটেল বিজনেসের ব্যাপারে দেয়ায়ন শুধু মাত্র অনুপমাকে জানিয়ে রেখেছিল।
কাঁচের দরজার পেছনে বসে দেবায়ন, সামনে বড় টেবিল একটা ল্যাপটপ। ঘষা কাঁচের দরজায় ওর পোস্ট লেখা, অপারেশান ম্যানেজার। কোনদিন স্বপ্নে ভাবেনি এত তাড়াতাড়ি নিজের একটা কোম্পানি হয়ে যাবে। স্বপ্ন সাকার হবার পরে দেবায়নের সাথে সাথে অনুপমা বেশ খুশি। সামনে ল্যাপটপ খোলা। ডিসেম্বরের ঠাণ্ডা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যায় তাই অফিসে আসতে দেরি হয়ে যায়। অফিসে ঢুকে নিজের মেল দেখে একটু চুপচাপ বসে। টেবিলে ওর মায়ের আর অনুপমার ছবি। ধনোলটি গিয়ে মায়ের সাথে অনুপমার একটা ছবি তুলেছিল। ওর জীবনের সব থেকে বড় দুই স্থম্ভ কে দেখে, হবু বৌমা তাঁর মামনিকে জড়িয়ে ধরে। এমন সময়ে অনুপমা কাঁচের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে।
অনুপমা চেয়ারে বসে বলে, “তোমার সাথে খুব জরুরি কথা আছে।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “কার কি হল আবার? শ্রেয়া কিছু বলেছে? পায়েলের কিছু হয়েছে?”
অনুপমা, “না এসব কথা নয়। বাবা কালকে আমাকে বলছিল যে তুমি নাকি পরের মাস থেকে বাইরে যাবে ওই হোটেলের কাজে?”
দেবায়ন, “হ্যাঁ। এর পর থেকে এইখানে আমার কাজ একটু একটু করে কমাতে হবে। তুমি এই অপারেশান দেখবে আর সুপর্ণা ম্যাম আছেই তোমাকে হেল্প করার জন্য। রুপক টেকনিকালে আছে, সুতরাং চিন্তার কোন কারন নেই।”
অনুপমা, “দীপঙ্করদা একবার আমাকে বলছিল যে বাইরের কিছু প্রোজেক্ট এলে ভালো হয়। সেই নিয়ে বাবার সাথে আমার গত রাতে কথা হচ্ছিল। বাবা আমাকে বলল যে অনিমেশ আঙ্কেলের ছেলে ইন্দ্রনীল নাকি আমাদের কোম্পানিতে জয়েন করতে চায়।”
দেবায়ন, “ইন্দ্রনীল? মানে যার সাথে তোমার একসময়ে…”
অনুপমা হেসে ফেলে, “হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ। ওই ইন্দ্রনীলের সাথে বাবা আমার এঙ্গেজমেন্ট ঠিক করেছিল। যাইহোক সেটা পুরানো ব্যাপার, ওই নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। ইন্দ্রনীল নাকি আমাদের ওভারসিস বিজনেস দেখবে।”
দেবায়ন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “ইন্দ্রনীল আমাদের কোম্পানি জয়েন করবে এই কথা আমাকে এতদিন কেন জানায়নি কাকু?”
অনুপমা, “আমি ঠিক এই কথা বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। বাবা বললেন যে, ওই কথা নাকি একদম মাথা থেকে বেড়িয়ে গেছিল। তোমার সাথে নাকি এই নিয়ে আলোচনা করত পরে। মানে তুমি আর বাবা যখন ওই বিন্সারের রিসোর্ট কিনতে যাবে তখন তোমার সাথে এই নিয়ে আলোচনা করত। যাই বল, এই পদক্ষেপ আমার ঠিক ভালো বলে মনে হচ্ছে না।”
দেবায়ন, “কারন?”
অনুপমা, “তুমি বলেছিলে যে, কন্সট্রাক্সান কোম্পানির ভি.সি জোগাড় করতে অনিমেশ আঙ্কেল হেল্প করেছিল। এখন আবার ওর ছেলে আমাদের কোম্পানি জয়েন করতে চায়। অনিমেশ আঙ্কেলের আসল উদ্দেশ্যটা কি?”
দেবায়ন একটু চিন্তিত হয়ে পরে, “দেখি পরের মাসে বিন্সার যাবো আরও কয়েকটা জায়গায় যাবো। তখন না হয় কাকুর সাথে আলোচনা করে নেব এই ব্যাপারে।”
অনুপমা একটু চিন্তিত হয়ে বলে, “আমি চাইনা ইন্দ্রনীল আমাদের কোম্পানি জয়েন করুক।”
দেবায়ন হেসে ফেলে অনুপমার কথা শুনে, “আরে বাবা, পুরানো কথা ছাড়ো। তুমি ওকে দেখেছ সেই সাত আট বছর আগে। এখন দেখে কি আর প্রেম জাগবে নাকি? দেখা যাক কি হয়। কাকু যখন বলছেন তখন একবার শোনা যাক।”
অনুপমা, “ইন্দ্রনীল জয়েন করতে চাইলে ভালো কিন্তু কত কাজে দেবে সেটা দেখার। আমি বাবাকে বলে দিয়েছি যে ওকে জয়েন করাতে পারি একটা শর্তে ও যদি জয়েন করার এক মাসের মধ্যে আমাদের একটা বাইরের বড় প্রোজেক্ট এনে দেয়।”
দেবায়ন হেসে ফেলে, “এই ত আমার পুচ্চি সব শিখে গেছে। এবারে তাহলে আমি বাইরের কাজ দেখতে পারি।”
অনুপমা, “হ্যাঁ, তুমি গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেরাও আর কি।”
দেবায়ন চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে অনুপমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুমি না থাকলে আমি কি আর এখানে বসতে পারতাম?”
অনুপমা ওর গলা জড়িয়ে বলে, “সত্যি সেটা নয় পুচ্চু ডারলিং। তুমি না থাকলে আমি এখানে বসতে পারতাম না। সব কিছু হয়েছে শুধু তোমার জন্য। তুমি বাবার সাথে যদি না কথা বলতে তাহলে আজ অনেক কিছু হতনা।”
দেবায়নের চোখে সেই রাতের দৃশ্য ভেসে ওঠে। পারমিতাকে কোলে করে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া, সারা রাত ধরে পারমিতার সাথে সম্ভোগ কেলিতে মত্ত হওয়া। কিছুদিন পরে অনুপমার বাড়িতে এই নিয়ে বচসা। একটা ছোটো প্রশ্ন সবার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
অনুপমা হেসে দেবায়নের মাথায় টোকা মেরে বলে, “ওই রাতের কথা মনে পরতেই আমার বরটা হারিয়ে যায়।”
দেবায়নের কান লাল হয়ে যায় লজ্জায়, “না না… সেটা নয়।”
অনুপমা বাঁকা হাসি হেসে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, জানা আছে আমার। এক কাজ কর, আজকে আমার বাড়িতে রাতে থেকে যেও। আমি ভাবছি একবার বাবার সাথে কথা বলতে। আমি মামনিকে ফোন করে জানিয়ে দিচ্ছি।”
দেবায়ন হেসে বলে, “থাকতে পারি একটা শর্তে, রাতে গেস্ট রুমে আমার সাথে কাটাতে হবে।”
অনুপমা হেসে গলা জড়িয়ে বলে, “ওকে ডান পুচ্চু সোনা।”
প্রেয়সীর গজ দাঁতের মোহিনী হাসি দেখে অফিস ভুলে ওই খানে গোলাপি নরম অধরে চুম্বন একে দেয়। অনুপমা স্থান কাল ভুলে দেবায়নের গলা জড়িয়ে সেই সুমধুর চুম্বনে হারিয়ে যায়। দেবায়ন ঠোঁট ছেড়ে কানে কানে বলে, “রাতে একটা লাল লঞ্জারি পরে এস। তোমাকে অনেকদিন কাছে পাইনি, রাতে তোমাকে চটকে একাকার করে দেব।”
দেবায়নের প্রসস্থ ছাতির ওপরে নরম স্তন জোড়া চেপে, নিজেকে কঠিন কাঠামোর সাথে মিশিয়ে দিয়ে প্রেমঘন মিহি কণ্ঠে বলে, “রাতের জন্য তর সইছে না পুচ্চু সোনা।”
দেবায়ন ওর কোমর জড়িয়ে বলে, “তর আমারো সইছে না পুচ্চি। কতদিন হয়ে গেল তোমাকে ঠিক ভাবে চুমু খাইনি, তোমাকে প্রান ভরে দেখিনি। তোমার শরীরের রস খাওয়া হয়নি।”
অনুপমা দেবায়নের আগুন চোখ দেখে লজ্জা পেয়ে বুকে মুখ লুকিয়ে বলে, “প্লিস সোনা এখানে ওই ভাবে দেখো না। আমি গলে যাচ্ছি, তোমার ওই চোখের সামনে দাঁড়ানোর শক্তি হারিয়ে ফেলছি সোনা।”
এমন সময়ে ফোন বেজে ওঠাতে ওদের প্রেমের স্রোতে বাধাপ্রাপ্তি হয়।
রোজ বিকেলের মতন অফিসের পরে বাইকে চেপে দেবায়ন আর অনুপমা বাড়িতে পৌঁছায়। অন্যদিন অনুপমাকে বাড়িতে নামিয়ে চা খেয়ে তারপরে লেকটাউন চলে যায়। অনুপমা ওর মামনিকে ফোনে জানিয়ে দিয়েছিল যে দেবায়ন ওদের বাড়িতে রাতে থাকবে।
নিচে বসার ঘরে পারমিতা আর পায়েল বসে টিভি দেখছিল। অঙ্কনের সামনে ক্লাস টুয়েল্ভের পরীক্ষা, তাই নিজের রুমে পড়াশুনায় ব্যাস্ত। বেশির ভাগ দিন দেবায়নের সাথে পায়েলের দেখা হয় না। অনুপমাকে নামিয়ে বাড়ি ফেরার একটু তারা থাকে। পায়েল উপরে অনুপমার রুমে বসে টিভি দেখে। আগের থেকে পায়েলের মানসিক অবস্থা বেশ স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এই বাড়িটাকে নিজের বাড়ির মতন করে নিয়েছে। অনুপমার দেখাদেখি পায়েল পারমিতাকে মামনি বলে ডাকে। দেবায়নকে দেখে মৃদু হাসে পায়েল। সবাই বসার ঘরে বসে গল্প করে, পায়েল চুপচাপ সবার কথা শোনে।
দেবায়ন একবার পায়েলকে জিজ্ঞেস করে, “তুই একবারের জন্য আমাদের অফিসে গেলি না।”
পায়েল মৃদু হেসে বলে, “পরে যাবো।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “তোর কলেজ কেমন চলছে?”
পায়েল, “ভালো।”
দেবায়ন, “বেড়াতে যাবি কোথাও?”
পায়েল, “অঙ্কনের পরীক্ষা শেষ হোক তারপরে ভেবে দেখব।”
অনুপমা হেসে জিজ্ঞেস করে, “আমাদের সাথে যেতে দোষ আছে নাকি?”
পায়েল কিছু উত্তর দেয় না। চুপচাপ বসে থাকে। দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “কি হল তোর? একটু বাইরে বের হতে পারিস ত। অন্তত কাকিমার সাথে শপিং করতে যেতে পারিস। তাতে তোর মন ভালো হবে।”
পায়েল নিচু গলায় বলে, “ভেবে দেখব।”
অনুপমা দেবায়নকে ইশারায় জানায়, থাক আর বেশি বলতে যেও না। যা করার ভাই করবে খানে।
কিছু পরেই মিস্টার সেন বাড়ি পৌঁছে যান। দেবায়নকে দেখে খুশি হয়ে বলেন যে ওর সাথে কথা ছিল। অনুপমা আগে থেকেই জানিয়ে দিয়েছিল কিছুটা। দেবায়ন মিস্টার সেনকে বলে যে অনুপমার সাথে ওই বিষয়ে একটু কথাবার্তা হয়ে গেছে। মিস্টার সেন বলেন রাতে খাবার পরে কথা বলবেন।
রাতে খাবার পরে বসার ঘরে মিস্টার সেন, অনুপমা আর দেবায়ন বসে ওদের আলোচনা নিয়ে। পারমিতা, পায়েল আর অঙ্কনকে নিয়ে ওপরে চলে যায়। পারমিতা আজকাল আর এই সব বিষয়ে বিশেষ মাথা ঘামায় না। গত কয়েক মাসে, অফিসের কাজ করতে করতে অনুপমার মাথা অনেক খুলে গেছে।
অনুপমা কথা শুরু করে, বাবাকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি ইন্দ্রনীলের কথা বলছিলে আমাকে। হটাত ইন্দ্রনীল কেন? বাইরে অনেক ভালো ভালো কোম্পানি পাবে চাকরি করতে সেই সব ছেড়ে এখানে কেন?”
মিস্টার সেন, অনুপমা আর দেবায়নের দিকে একবার দেখে বলেন, “অনিমেশের ইচ্ছে কোলকাতা ফিরে আসার। অনিমেশ চাইছিল যে ইন্দ্রনীল কোন দেশি একটা কোম্পানিতে চাকরি করুক। ওদিকে ইন্দ্রনীল ফ্রাংকফুর্ট ছেড়ে আসতে নারাজ। একটা বাইরের প্রোজেক্ট তোমাদের ফার্মে এলে খুব ভালো। অনিমেশের সাথে মিস্টার হেরজোগের ভালো সম্পর্ক আছে। আর মিস্টার হেরজোগের অনেক চেনাজানা আছে আছে সারা ইউরোপে। সব মিলিয়ে আমি দেখলাম যে ইন্দ্রনীল একদম উপযুক্ত ছেলে। ইন্দ্রনীল ওকে দিয়ে ইউরোপের কিছু কাজ উঠাতে পারবে।”
দেবায়ন অনুপমার দিকে তাকায়। অনুপমা ওর বাবাকে বলে, “বাইরের প্রোজেক্ট এলে খুব ভালো। তবে আমার মনে হয় এখানের কাউকে নিযুক্ত করলে ভালো হত।”
মিস্টার সেন, “ইন্দ্রনীল ইউরোপে বড় হয়েছে, ওখানে পড়াশুনা করেছে। অইখানের মানসিকতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভাবে ওয়াকিবহাল। ওর হাত দিয়ে ব্যবসা আসা বেশি সুবিধাজনক। সবকিছু ভেবেই আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি।”
অনুপমা, “কিন্তু বাবা, এই ফার্ম আমাদের। এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে একবার আমাদের জানালে বড় ভালো হত।”
মিস্টার সেন, “জানি সেটা। বলতাম তোদের। আমি আর দেবায়ন পরের মাসে হোটেলের কাজে বের হতাম। সেই সময়ে ওর সাথে এই সব নিয়ে আলোচনা করতাম। আমি সব কিছু ভেবে চিন্তেই পদক্ষেপ নেই, আর দেবায়নের আশা করি কোন অমত নেই।”
দেবায়ন মিস্টার সেনকে আহত না করে অনুপমাকে বলে, “ঠিক আছে, কাকু যখন বলছেন তখন সেটাই হবে। আর তুমি যেটা বলেছ সেটা আমরা করব।”
মিস্টার সেনকে বলে, “কাকু, আমাদের একটা কথা আছে এখানে। ওকে নিযুক্ত করা নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই তবে ওকে এক মাসের মধ্যে বিজনেস নিয়ে আসতে হবে।”
মিস্টার সেন হেসে বললেন, “হুম বুঝতে পারছি। ইন্দ্রনীলের ব্যাপারে আমার এইটুকু খবর তোমাদের দেবার ছিল। এরপরে তোমরা কি করে ওকে কাজে লাগাবে সেটা তোমাদের ব্যাপার।”
আলোচনা পর্ব শেষে দেবায়ন গেস্টরুমে চুপচাপ বসে চিন্তায় মগ্ন। মিস্টার সেনের কপালের রেখা ওকে বলছে যে মিস্টার সেন কিছু লুকিয়ে গেছেন ওদের কাছ থেকে। অনুপমার সামনে সরাসরি প্রশ্ন করতে চায়নি, হয়ত আবার কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেড়িয়ে আসবে সেই দ্বিধায়। ঠাণ্ডা বেশ ভালোই পড়েছে। দেবায়ন একটা সিগারেট জ্বালিয়ে অনুপমার অপেক্ষা করে। সেদিন আর উপরে অনুপমার রুমে যায় না। ওইখানে অনুপমার সাথে পায়েল থাকে। পায়েল আর সেই আগের মেয়েটা নেই, যে এক সাথে দুই রমণীর সাথে খেলায় মেতে উঠতে পারবে।