30-09-2020, 11:35 PM
দ্বাবিংশ পর্ব (#06)
পরমিত আর দেবায়নের কথাবার্তা আলোচনায় ডিনারের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অনন্যা টেবিলের তলা দিয়ে দেবায়নের থাইয়ের ওপরে নরম হাত চেপে ঠাণ্ডা করে। দেবায়নের দিকে আলতো হেসে বলে, “এই তোমরা অনেকক্ষণ ধরে শুধু বিজনেসের প্যাঁচ নিয়ে কথা বলে যাচ্ছ। একটু থামবে? আমাদের মাথায় কিছু ঢুকছে না এই সব ব্যাপার।”
পরমিতের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “চিন্তা করবেন না মিস্টার ধিলন, আমি আপনার কাছে ফাইল নিয়ে চলে যাব।”
দেবায়ন কাষ্ঠ হেসে বলে, “মিস্টার ধিলনের এখানকার কাবাব কি আর ভালো লাগবে? খোদ দিল্লীর মানুষ, পুরানো দিল্লীতে দারুন কাবাব পাওয়া যায় নিশ্চয়। কি বলেন মিস্টার ধিলন?”
পরমিত দেবায়নকে বলে, “হ্যাঁ, একবার দিল্লীতে এস। লাল কিলার কাছে পরাঠে ওয়ালা গলিতে ভালো পারাঠা আর কাবাব খাওয়াব তোমাকে।”
দেবায়ন বলে, “হ্যাঁ এবারে যেতে হবে দিল্লী।”
ডিনার দিয়ে যায় অয়েটার। ব্যাবসা ছেড়ে কথার মোড় অন্যদিকে ঘুরে যায়, অনন্যার সিনেমার কথা হয়। মিস্টার ধিলনের মেয়ে একজন ক্যানাডিয়ান এন.আর.আই কে বিয়ে করেছে, সেই নিয়ে কথা হয়। উত্তপ্ত পরিবেশ শান্ত হয়ে যায়। খাওয়া শেষে, মিস্টার ধিলন জিজ্ঞেস করেন সাক্ষর করার কথা। দেবায়ন অনন্যার হাতে ফাইল ধরিয়ে দেয়। পরমিত একটু হাসে সেই দেখে। অনন্যাকে বলে, একটু টিয়া মারিয়াতে গিয়ে ড্রিঙ্কস নেবে তারপরে রুমে চলে যাবে। অনন্যা বলে, রুমে পৌঁছে গেলে একবার যেন দেবায়নকে ফোনে জানিয়ে দেয়, তাহলে সেই মতন ফাইল নিয়ে চলে যাবে। অনন্যা আর পারমিতা কটেজে চলে যায়। দেবায়ন আর পরমিত বারের দিকে হাঁটা দেয়। পরমিত বারে ঢুকে যায়।
দেবায়ন একটা বিয়ারের বোতল হাতে নিয়ে সমুদ্র তটের দিকে হাঁটতে শুরু করে। ঠাণ্ডা কনকনে হাওয়া বইতে থাকে সমুদ্রের দিক থেকে। ঘন কালো অন্ধকারে সমুদ্রের ঢেউ মাঝে মাঝে চিকচিক করে, সাদা ঢেউয়ের ফেনা আছড়ে পরে পায়ের কাছে। কোন এক ছোটো বেলায় মায়ের সাথে দিঘা ঘুরতে গেছিল, সে কথা মনে নেই। একা নির্জন সমুদ্র তটে হাঁটতে হাঁটতে সব কিছু কেমন স্বপ্নের মতন মনে হয়। স্বপ্নের মতন এক সুন্দরী ওর হাতে ধরা দিল, সেই সুন্দরীর হাত ধরে লক্ষ্মী একসময়ে ধরা দিল। এই টাকা পয়সা প্রতিপত্তি ওকে কোথায় নিয়ে যাবে সেই চিন্তা করে। অনুপমার কথা মনে পরতেই, প্রেয়সীকে ফোন করে। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পরে মাকে ফোন করে দেবায়ন। মন খুশিতে ভরে ওঠে, অনুপমার গলা শুনে।
পরমিত কিছু পরে দেবায়নকে ফোন করে জানিয়ে দেয় রুমে পৌঁছে গেছে। পরমিত দেবায়নকে বলে, “মিস্টার বসাক, তোমার যখন জন্ম হয়নি তখন থেকে আমি ব্যাবসা করি। টাকা কি ভাবে অর্জন করতে হয় তোমার থেকে ভালো ভাবে জানি, কিন্তু তুমি একজন মানুষকে কি ভাবে তাঁর সন্মান তাঁর সমাদর করতে হয় সেটা জানো। আমি বুঝি, একশো কোটি টাকার মধ্যে পাঁচ কোটি টাকার কত মুল্য। আমার দূরদৃষ্টি বলে, তুমি টাকার সাথে সাথে মানুষের মন জয় করবে। হ্যাঁ, তুমি হয়ত আমার মতন উপায়ে টাকা অর্জন করবে না কিন্তু ভবিষ্যতে তুমি যেটা অর্জন করবে সেটা অমুল্য। সেই জিনিস কোটি টাকা দিয়ে কেনা যায়না। আজকে আমি যদি চোখ বন্ধ করি, তাহলে কেউ আমার পরিবারের পাশে নিঃস্বার্থে এসে কেউ দাঁড়াবে না। যারা দাঁড়াবে তারা আমার সম্পত্তির লোভে এসে দাঁড়াবে। কিন্তু তোমার অবর্তমানে তোমার পরিবারের পাশে এসে অনেকে দাঁড়াবে সেটা তুমি কোটি টাকার বিনিময়ে কিনতে পারবে না। ভগবান তোমার সাথে থাকুক এটাই আমার কাম্য।”
দেবায়ন হেসে ধন্যবাদ জানায় মিস্টার ধিলনকে। অনন্যাকে ফোনে বলে দেয়, পরমিত রুমে পৌঁছে গেছে। কথাটা বলার সময়ে দেবায়নের গলা কেঁপে ওঠে। মনেপ্রানে মেনে নিতে কষ্ট হয় এক মেয়েকে পাঠাতে হবে পরমিতের কাছে। অনন্যার সাথে কথা বলার পরে, রাগে বিতৃষ্ণায় ফোন ছুঁড়ে ফেলে বালিতে। ধুপ কর ঠাণ্ডা বালিতে বসে হাতের বোতল সমুদ্রের দিকে ছুঁড়ে দেয়। অন্ধকার কালো সমুদ্রের জলে হারিয়ে যায় বিয়ারের বোতল। অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে বালির ওপরে। অনন্যাকে পাঠানো উচিত হয়নি পরমিতের কাছে। ডিনারের সময় সাক্ষর করিয়ে নিলে ভালো হত।
চুপচাপ রুমের দিকে পা বাড়ায় দেবায়ন। ওর জামাকাপড় সব কটেজে রাখা। পারমিতা সেই রাতে কাছে আসতে বারন করে দিয়েছে। এত রাতে কটেজে যাওয়া ঠিক হবে না। এই রুমটা অনন্যার জন্যে বুক করা হয়েছিল। আলমারিতে অনন্যার জামা কাপড় রাখা। আলমারি খুলে অনন্যার গন্ধে মাখা পোশাক গুলোর দিকে চোখ যায়। অন্য সময় হলে, দেবায়ন ওর কাপড় নিয়ে নাকে মুখে চেপে হস্ত মৈথুন করত হয়ত। কিন্তু অনন্যার জামা কাপড় দেখে ওর মন আরও ভারী হয়ে যায়। রুমে ঢুকে জামা কাপড় খুলে, কোমরে তোয়ালে জড়িয়ে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে থাকে। মাথা একদম খালি হয়ে যায়, যেন অসীম শূন্য আকাশে বিচরন করছে। চোখের সামনে রুমের ছাদ, কিন্তু দেবায়নের চোখ যেন ছাদ ফুঁড়ে, মাথার অপরের কালো আকাশে বিচরন করছে। চোখের সামনে অসংখ্য তারা, নক্ষত্র জ্বল জ্বল করছে। অনেকক্ষণ না অল্পক্ষণ, সময়ের খেয়াল থাকে না, একসময়ে ঘুমিয়ে পরে দেবায়ন।
কত রাত হবে ঠিক জানে না, এমন সময়ে দরজায় বেশ জোরে জোরে ধাক্কার আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে যায়। এত রাতে কে হতে পারে? পারমিতা আসবে না। অনন্যাকে পেয়ে পরমিত মজে গেছে এতক্ষণে। গোয়াতে আর কাউকে চেনেনা দেবায়ন। চোখ কচলাতে কচলাতে বিছানা ছেড়ে উঠে ঘড়ির দিকে তাকায়, বেশি সময় ঘুমাতে পারেনি। বাইরে সমুদ্র থেকে ভেসে আসা হাওয়ার আওয়াজ। দরজা খুলে সামনে অনন্যাকে দেখে ঘুম উবে যায় নিমেষের মধ্যে।
সামনে দাঁড়িয়ে অনন্যা। সুন্দরীর সৌন্দর্য বিদ্ধস্থ, মাথার চুল বেনুনি করা ছিল, সেটা একটা হাত খোঁপায় ঘাড়ের কাছে দুলছে। চোখের কোনের কাজল একটু লেপে গেছে, ঠোঁটের লিপস্টিক নেই, কপালে টিপ নেই। গোলাপি শাড়িটা কোনোরকমে শরীরের সাথে জড়ানো। দেবায়ন ওই চেহারা দেখে মাথা নিচু করে নেয়। অনন্যার চোখের দিকে তাকানোর ক্ষমতা নেই ওর। ইচ্ছে করেই, নিজের কার্যসিদ্ধির জন্য অনন্যাকে পাঠিয়েছিল পরমিতের কাছে। সেই অনন্যা, ওর সামনে দাঁড়িয়ে ওর দিকে বাদামি রঙের ফাইল বাড়িয়ে দেয়। দেবায়ন কে চুপ দেখে ধির পায়ে রুমে ঢুকে পরে। হাতের ফাইলটা ছুঁড়ে ফেলে বিছানার ওপরে। হাঁটার সময়ে পা একটু টলে যায়। দেবায়ন দৌড়ে অনন্যাকে ধরতে যায়। অনন্যা ওর দিকে হাত দেখিয়ে দাঁড়িয়ে যেতে ইঙ্গিত করে।
অনন্যা ওর দিকে ছলছল চাহনি নিয়ে বলে, “কাজ হয়ে গেছে দেবায়ন।”
দেবায়ন চুপ, মাথা চিন্তা শূন্য হয়ে যায়। সারা শরীরে মৌমাছি যেন হুল ফুটিয়ে দিয়েছে।
অনন্যা টলতে টলতে বাথরুমের দিকে এগিয়ে যায়। বুকের থেকে আঁচল খসে মেঝেতে লুটিয়ে পরে। একটানে গা থেকে শাড়িটা খুলে ফেলে। শাড়ির প্যাঁচে খুলে যেতেই অনন্যার চওড়া পিঠ দেখা দেয়। পেছনে দুটো পাতলা দড়ি দিয়ে বাঁধা ব্লাউস। চওড়া পিঠে আঙ্গুলের দাগ দেখে দেবায়নের কান গরম হয়ে যায়। আগে থেকে জানত যে পরমিত, সঙ্গম খেলার সময়ে উন্মাদ হয়ে ওঠে। অনন্যা, গা থেকে ব্লাউস খুলে একদিকে ছুঁড়ে মারে। এমন ভাব দেখায় যেন রুমের মধ্যে একা। অতি ক্ষুদ্র ব্রাটা কোনোরকমে বুকের ওপরে ঝুলে আছে। অনন্যা ওর দিকে একটু বেঁকে তাকায়। দেবায়নের চোখ যায় অনন্যার স্তনের ওপরে। স্তনের বোঁটার চারপাশে লাল ছোপ ছোপ দাগ। স্তনের ওপর দিকে দাঁতের দাগ। পরমিত ক্ষুধার্ত হায়নার মতন অনন্যাকে পিষে কচলে সম্ভোগ করেছে। ব্রা খুলে খালি সায়া পরে দেবায়নের দিকে ঘুরে তাকায়। দেবায়ন কি করবে ভেবে পায় না। অনন্যা বাথরুমের দরজা ধরে টলে যায়। দেবায়ন হাত বাড়িয়ে অনন্যাকে ধরতে যায়।
অনন্যা ওকে বলে, “কাপবোর্ড থেকে আমার একটা স্লিপ বের করে দিতে পারো?”
দেবায়ন সঙ্গে সঙ্গে আলমারি খুলে একটা স্লিপ বের করে অনন্যার হাতে দেয়। ততক্ষণে অনন্যা, সায়ার দড়ি খুলে দিয়েছে। নিচে প্যান্টি নেই। পায়ের ফাঁকে, দুই নধর জঙ্গায় দৃষ্টি যায় দেবায়নের। দুই মসৃণ জঙ্ঘায় আঁচরের দাগ। যোনির পাপড়ি যোনির চেরা থেকে বেড়িয়ে এসেছে।
দেবায়ন অনন্যাকে বলে, “চল তোমাকে স্নান করিয়ে দিচ্ছি।”
অনন্যা ওর হাত থেকে স্লিপ নিয়ে বলে, “না থাক। তুমি বরং ফাইল চেক করে নাও। সব ঠিক আছে কিনা একবার দেখে নাও। কাল সকালে পরমিত চলে যাবে দিল্লী আর তোমরা চলে যাবে কোলকাতা। যাও নিজের কাজ ঠিকঠাক হয়েছে কিনা দেখে নাও।”
দেবায়নের মানসিকতা সেই ফাইল দেখার মতন নেই। হাত বাড়িয়ে অনন্যার হাত ছোঁয়। অনন্যা ওর হাত টেনে বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। দেবায়ন চুপচাপ মাথা ধরে জানালার পাশে একটা কাউচে এসে বসে পরে। সত্যি দেবায়ন এত নিচে নেমে গেছে? না, ও চেয়েছিল পঁয়তাল্লিশ কোটি টাকা দিতে। ও ভেবেছিল যে পরমিত হয়ত অনন্যার গায়ে হাত দেবে না। দেবায়নের একবার মনে হয় যে পরমিতের রুমে ঢুকে এক ঘুসিতে নাক ফাটিয়ে দেয়। কিন্তু আসল দোষী কে? দেবায়ন নিজে।
রুমের মধ্যে মৃদু হলদে আলো। সামনের বড় কাঁচের জানালার পাশে বসে এক দৃষ্টে কালো অন্ধকারের দিকে চেয়ে থাকে। খুট করে একটা আওয়াজে পেছন ফিরে তাকায়। অনন্যা বাথরুম থেকে বেড়িয়ে চুপচাপ বিছানায় উঠে একটা কম্বল টেনে শুয়ে পরে। দেবায়ন কি করবে ভেবে পায় না। ওর পাশে শোয়া উচিত? কি ভাববে অনন্যা? বড় ইচ্ছে করে একবার ওকে জড়িয়ে ধরে একটু প্রবোধ দিতে। কিন্তু কি প্রবোধ দেবে দেবায়ন? এটা যে কর্ম, এটাই ভবিতব্য। অনন্যা এখানে এসেছিল পরমিতের সাথে শুতে। অনন্যাকে এখানে ডাকার পরিকল্পনা দেবায়নের। যদি পারমিতা আর দেবায়ন আসত তাহলে ওই ডাইনিং টেবিলে বসে সই করিয়ে নিত। দেবায়ন একটা সিগারেট জ্বালায়। বুক ভরে ধোয়া টানতেই মাথা ভোঁভোঁ করে ওঠে।
“তুমি কি সারা রাত ওইখানে বসে সিগারেট খাবে?”
অনন্যা ওকে জিজ্ঞেস করে। দেবায়ন ঘাড় ঘুরিয়ে অনন্যার দিকে তাকায়। বিছানায় একপাসে শুয়ে পুরো কম্বলে মুড়ি দিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করে কথা গুলো।
দেবায়ন আমতা আমতা করে বলে, “না মানে আমি কাউচে শুয়ে পড়ব। তুমি আরাম করে বিছানায় ঘুমাও।”
অনন্যা তির্যক হেসে বলে, “কেন, একটা কলগার্লের সাথে এক বিছানায় শুতে ঘৃণা বোধ হচ্ছে, মিস্টার দেবায়ন বসাক? আমি একটু আগে পরমিতের সাথে সেক্স করে এসেছি আর তোমার সাথে করিনি তাই তোমার ঘৃণা করছে? র্যাডিসন ফোরটে তোমার সেই রকম কিছু মনে হয় নি। আমার সাথে তখন দিব্যি রাত কাটিয়েছিলে। পারলে সারা রাত ধরে সেক্স করতে, শুধু সময় ছিল না বলে।”
দেবায়ন কান গরম হয়ে যায় অনন্যার কথা শুনে, চাপা স্বরে বলে, “না, সে কথা নয় অনন্যা। তুমি আমাকে ভুল বুঝছ।”
অনন্যা, “কি ভুল এখানে দেবায়ন? কে ভুল এখানে? তুমি আমার সাথে সেক্স করতে চাও, চলে এস। পারমিতা ম্যাম আমাকে দুই লাখ টাকা দিয়েছে এবারে। একটু আগে পরমিত যা করেছে তাতে দুই লাখ পূরণ হয়নি। এস বিছানায়, আমার শরীর দিয়ে বাকি টাকাটা উসুল করবে না?”
দেবায়ন চোয়াল চেপে বলে, “তুমি বিশ্বাস কর আমি ভাবিনি যে পরমিত তোমার সাথে সেক্স করবে।”
অনন্যা অট্টহাসিতে ফেটে পরে, “রাত এগারোটার সময়ে একটা বেশ্যা, বিজনেস ডিলের ফাইল নিয়ে একজনের রুমে যাবে। এর মানে আর কি হতে পারে মিস্টার বসাক? আমার সাথে কি পরীর গল্প করার জন্যে আমাকে দুই লাখ টাকা দিয়ে এখানে ডেকেছ?”
দেবায়ন অনন্যার পাশে এসে বসে বলে, “অনন্যা প্লিস ভুল বুঝ না আমাকে। আমি ওই টেবিলে ডিল সাইন করতে চেয়েছিলাম। পাঁচ কোটি টাকার চেয়ে তুমি আমার কাছে অনেক দামী।”
তির্যক হাসে অনন্যা, “তাহলে দুই লাখ টাকা দিয়ে এখানে কেন ডেকেছ আমাকে? গল্প করার জন্য? কেউ আমার সাথে গল্প করতে আসে না মিস্টার বসাক। যে টাকা দেয় সে আমার শরীর ব্যাবহার করতে আসে।”
দেবায়ন অনন্যার হাতের ওপরে হাত রেখে বলে, “প্লিস তুমি একটু ঘুমাবে? আমি জানি তুমি আমার ওপরে প্রচন্ড রেগে।”
একটা হাত গালের ওপরে নিয়ে আলতো করে নরম গালে হাত বুলিয়ে দেয়। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
দেবায়নের উষ্ণ হাতের পরশ পেয়ে অনন্যার চোখ ছলছল কর ওঠে, “প্রচুর মানুষ দেখলাম দেবায়ন। কত জনের সাথে সেক্স করেছি গুনতে ভুলে গেছি। এই রকম বিজনেস ডিল আমাদের দিয়েই হয়। আগেও প্রচুর হয়েছে। সবাই নিজের টাকা উসুল করতে ব্যাস্ত। পরমিত সেটাই করেছে। আমি জেনেই এসেছিলাম যে পরমিতের সাথে আমাকে শুতে হবে। পারমিতা ম্যাম আমাকে আগেই বলে রেখেছিল ক্লায়েন্টের ব্যাপারে। শুধু এইটুকু বলেনি যে, পরমিত আসলে ম্যামের সাথে সেক্স করতে চায়। পরমিত বড় ক্ষুণ্ণ হয়ে যায় আমাকে দেখে। মুখে কিছু না বললেও আমার সাথে পাশবিক ব্যাবহার করার সময়ে আমি ওর মনের অভিপ্রায় বুঝতে পেরেছিলাম। তুমি জানতে মিস্টার ধিলন ম্যামের জন্য অপেক্ষা করে বসেছিলেন। তুমি চাইছিলে না যে ম্যাম যাক তাই আমাক এখানে এনেছ, তাই না?”
দেবায়ন অনন্যাকে জড়িয়ে ধরে। অনন্যা ওর বুকের ওপরে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ওঠে, “আমার কান্না সেখানে নয় দেবায়ন। রুমে তোমাকে দেখে আমার চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে এল। আমি জানিনা আমার কি হচ্ছে… দেবায়ন।”
দেবায়ন ওর মাথা বুকের ওপরে চেপে, দুই হাতে অনন্যাকে জড়িয়ে বলে, “চুপচাপ ঘুমাও। কাল সকালে আমি আর তুমি এই সি বিচে বেশ আনন্দ করব।”
অনন্যা চোখের জল মুছে, দেবায়নের বুকে ঠোঁট চেপে বলে, “আজ রাতে একটু জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকো। কাল সকালে আমি চলে যাবো। এখানে দিনের বেলা আমি তোমার সাথে বের হতে পারব না। কত মানুষের কত রকমের মতলব থাকে। কেউ একটা ছবি তুলে যদি কোন ম্যাগাজিনে দিয়ে দেয় তাহলে আবার বদনামের ভয় আছে। কত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে, আপনার সাথের এই ছেলেটা কে? আপনার নতুন প্রেমিক? ইত্যাদি। শুধু আজকের রাতটা আমাকে জড়িয়ে ধরে থাক।”
দেবায়ন অনন্যাকে জড়িয়ে ধরে। অনন্যা দেবায়নের প্রসস্থ বুকের ওপরে মাথা রেখে, একটা পা দিয়ে দেবায়নকে জড়িয়ে ধরে। বুকের ওপরে নখের আঁচর কেটে দেয়।
দেবায়ন ওর ঘন কালো রেশমি চুলের মধ্যে বিলি কেটে আদর করে জিজ্ঞেস করে, “কি ভাবছ এত?”
অনন্যার সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়, “উম্মম্মম এই ঠাণ্ডায় এইরকম ভাবে জড়িয়ে ধরে থাকলে আর কি ঘুম আসে? মনে হয় সারা রাত এই ভাবে বুকে মাথা রেখে জেগে কাটিয়ে দেই।”
দেবায়ন বুঝতে পারে যে অনন্যার বুকে এই অন্য টান জেগেছে। দেবায়ন সেই চুম্বকের টানে সারা দেয় না। নিস্তেজ হয়ে আলিঙ্গন শিথিল করে নেয় অনন্যার শরীর থেকে। অনন্যা বুঝতে পেরে যায় দেবায়নের মনের দ্বন্দ। হেসে বলে, “না গো, অনুর জায়গা আমি চাইছি না।”
দেবায়ন হেসে ফেলে, “তাহলে কি চাও।”
অনন্যা, “আমাকে কিছু টাকা দেবে, আমি একটা বিজনেস করতে চাই।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “তোমার অনেক টাকা, তুমি আবার আমার কাছ থেকে টাকা চাইছ?”
অনন্যা ম্লান হেসে বলে, “আমার কাছে টাকা নেই। যে রকম আয় হয়, সেই রকমের খরচ হয়। আমাদের এই চকমকে সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে অনেক টাকা বেড়িয়ে যায়। সবসময়ে কাজ থাকে না, সেই দিন গুলতেও আমাকে চলতে হয়। আমার কাছে তেমন কিছু ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স নেই, দেবায়ন।”
দেবায়ন, “টাকা এখন আমার কাছে নেই।”
অনন্যা মৃদু হেসে বলে, “তুমি মিথ্যে কথা বলছ। তুমি এত বড় একটা বিজনেস ম্যান, তোমাকে সব বিজনেস ডিলে দেখা যায় আর তুমি বলছ যে তোমার কাছে টাকা নেই? তুমি আমাকে টাকা দেবে না সেটা পরিষ্কার বলে দিলেই পারো।”
দেবায়ন অনন্যাকে বুঝাবে কি করে, এই সব মিস্টার সেনের জন্য হচ্ছে। দেবায়ন বলে, “তোমাকে এক বছর অপেক্ষা করতে হবে।”
অনন্যা জিজ্ঞেস করে, “কেন এক বছর কেন?”
দেবায়ন নিজের আসল পরিচয় লুকিয়ে বলে, “একটা বড় প্রোজেক্টে অনেক টাকা চলে গেছে। এক বছর অপেক্ষা কর, তারপরে তোমাকে টাকা দেব। কিন্তু তুমি কি বিজনেস করতে চাও?”
অনন্যা, “জানি না। তবে ভাবছি জামশেদপুর ফিরে যাবো। ওখানে গিয়ে কিছু একটা খুলব।”
দেবায়ন, “জামশেদপুর ফিরে কেন যাবে? এই কোলকাতায় কোন বিজনেস করতে পারো। রেস্টুরেন্ট খুলতে পারো, বুটিক করতে পারো, চাইলে মডেলিং এজেন্সি করতে পারো।”
অনন্যা মডেলিং এজেন্সির নাম শুনে হেসে বলল, “না গো এই আলোর ঝকমকি থেকে দুরে যেতে চাই। মডেলিং এজেন্সি খুলব না। ওই রকম এজেন্সি শেষ পর্যন্ত হাই প্রোফাইল পিম্প হয়ে যায়। আমি ওই সব থেকে বেড়িয়ে আসতে চাই। তোমার এই রেস্তুরেন্টের আইডিয়া বেশ ভালো।”
দেবায়ন, “ঠিক আছে, আমি তোমাকে টাকা দেব।”
অনন্যা, “আমি তোমাকে সব শোধ করে দেব ধিরে ধিরে। টাকা দিয়ে যদি শোধ না করতে পারি তাহলে তুমি যখন যেখানে আমাকে আসতে বলবে সেখানে আমি চলে আসব।”
দেবায়ন হেসে বলল, “তোমাকে শোধ করতে হবে না। আমি তোমাকে প্রেসেন্ট করব তোমার রেস্টুরেন্ট।”
কথাটা শুনে অনন্যার বুক খালি হয়ে যায়, বিশ্বাস করতে পারে না নিজের কান কে, “তুমি সত্যি বলছ?”
দেবায়ন ওর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বলে, “হ্যাঁ সত্যি বলছি।”
দেবায়নের বুকে মাথা রেখে একসময়ে অনন্যা চোখ বন্ধ করে নেয়। সারা রাত দেবায়নের চোখে ঘুম আসে না। অনন্যার মাথা বুকের ওপরে রেখে সারা রাত জেগে কাটিয়ে দেয়। সকালের দিকে চোখ একটু লেগে যায়।
ঘুম ভাংলে দেখে যে রুমে অনন্যা নেই। সকাল গড়িয়ে অনেক সময় কেটে গেছে। ঘড়িতে দেখে দশটা বাজে। ঠিক সেই সময়ে অনুপমার ফোন আসে। অনুপমা জিজ্ঞেস করে গত রাতের কথা। দেবায়নের মাথায় তখন অনন্যার চিন্তা ছিল। কোনোরকমে অনুপমার সাথে ফোনে কথা বলে ফোন রেখে দেয়। ফোন রেখে সঙ্গে সঙ্গে বাথরুমের দিকে চোখ যায়। বাথরুম খালি, আলমারি দেখে, আলমারিতে অনন্যার ব্যাগ না দেখতে পেয়ে দেবায়ন বুঝে যায় যে অনন্যা বেড়িয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে অনন্যাকে ফোন করে কিন্তু অনন্যার ফোন বন্ধ। শেষ বারের মতন কথা বলে যেতে পারল না দেবায়ন। সাইড টেবিলে রাখা একটা সাদা কাগজে চোখ পড়ে দেবায়নের। একটা চিঠি লিখে গেছে অনন্যা, ছোটো দুই তিনটে লাইন।
“ডিয়ার দেবায়ন, তোমাকে ঘুমাতে দেখে আর জাগাতে ইচ্ছে করল না, তাই না বলেই বেড়িয়ে গেলাম। তোমার কাছে থাকতে ইচ্ছে করছিল খুব। কিন্তু কি করা যাবে, ইচ্ছে করলেও থাকা দায়। কে কখন দেখে ফেলে, নামের চেয়ে বদনাম আগুনের মতন দাউদাউ করে ছরায় বেশি। ব্রেকফাস্টের কথা ভুলে যেও না যেন, আমি অপেক্ষা করে থাকব। পাঁচ বছর পরে গতরাতে বেশ ভালো ঘুম হয়েছে। ইতি, সুলেখা।”
একটু পরে পারমিতাকে দেখে দেবায়ন অনন্যার কথা ভুলে যায়। দুইদিন দুইরাত পারমিতা আর দেবায়ন মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। পারমিতা যেন শেষবারের মতন দেবায়নকে পাচ্ছে এমন ভাবে শেষ রাতে দেবায়নের সাথে মিলিত হয়। আসার দিন পারমিতার চেহারায় এক অন্য ধরনের আলোক ছটা দেখতে পায় দেবায়ন।
প্লেনে বসে পারমিতা নিচু গলায় ওকে বলে, “কোলকাতা গিয়ে আমাদের মনে হয় না আর দেখা হবে।”
দেবায়ন জানে, একজনের সাথে ক্রমশ শরীরের খেলা চলতে চলতে মনের টান আসা স্বাভাবিক। দেবায়ন চায় না, অনুপমা ছাড়া আর কাউকে ভালবাসতে। প্রচন্ড কাম লালসার চুম্বকীয় টানে পারমিতার সাথে মিলিত হয়েছিল। দেবায়ন চুপ করে থাকে, অনেকদিন আগে ভেবেছিল পারমিতাকে সারা জীবন ওর মেয়ের সাথে সাথে উপভোগ করে যাবে। কিন্তু একরাতে পারমিতার ক্রন্দন ভরা ডাক শুনে দেবায়ন পিছিয়ে গেছিল। আবার এই গোয়াতে এসে পরপর বেশ কয়েক বার মিলিত হয়ে পারমিতার বুকে সেই পুরানো টান ফিরে আসে।
দেবায়নকে চুপ থাকতে দেখে পারমিতা ম্লান হেসে বলে, “হ্যান্ডসাম অত চিন্তা করো না। শুধু মজা করছিলাম তোমার সাথে। আমার কিছু হয়নি। আমি জানি, সোমেশকে আগের মতন পাবো না। তবে যত টুকু পাবো সেই নিয়ে থাকব। তোমাকে কথা দিচ্ছি, সোমেশ ছাড়া আর কেউ আমাকে আর ছোঁবে না।”
দেবায়ন চুপচাপ পারমিতার কথা শুনে যায়। পারমিতা বলে, “অনু কখনই আমাকে ভালো চোখে দেখত না। ওর বোঝার শক্তি অনেক আগে থেকেই জন্মে গেছিল। তখন ছেলের জন্য বাঁচতাম। তোমার একরাতের জাদুর কাঠির ছোঁয়ায়, অনুকে ফিরে পেলাম। বর্তমানে আমার বাড়িতে পায়েলের আগমন। এবারে মনে হয় এই সব ছেড়ে ওদের জন্য বাঁচি। অনুকে দেখার জন্য তুমি আছো, দেবশ্রীদি আছে। পায়েল আর অঙ্কনকে আমাকেই দেখতে হবে।”
পারমিতার এক নতুন রুপ দেখতে পায় দেবায়ন। পারমিতার নরম হাত নিজের হাতের মুঠিতে নিয়ে বলে, “তুমি একা নও মিমি। আমি আর অনু তোমার সাথে থাকব সবসময়ে।”
পরমিত আর দেবায়নের কথাবার্তা আলোচনায় ডিনারের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অনন্যা টেবিলের তলা দিয়ে দেবায়নের থাইয়ের ওপরে নরম হাত চেপে ঠাণ্ডা করে। দেবায়নের দিকে আলতো হেসে বলে, “এই তোমরা অনেকক্ষণ ধরে শুধু বিজনেসের প্যাঁচ নিয়ে কথা বলে যাচ্ছ। একটু থামবে? আমাদের মাথায় কিছু ঢুকছে না এই সব ব্যাপার।”
পরমিতের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “চিন্তা করবেন না মিস্টার ধিলন, আমি আপনার কাছে ফাইল নিয়ে চলে যাব।”
দেবায়ন কাষ্ঠ হেসে বলে, “মিস্টার ধিলনের এখানকার কাবাব কি আর ভালো লাগবে? খোদ দিল্লীর মানুষ, পুরানো দিল্লীতে দারুন কাবাব পাওয়া যায় নিশ্চয়। কি বলেন মিস্টার ধিলন?”
পরমিত দেবায়নকে বলে, “হ্যাঁ, একবার দিল্লীতে এস। লাল কিলার কাছে পরাঠে ওয়ালা গলিতে ভালো পারাঠা আর কাবাব খাওয়াব তোমাকে।”
দেবায়ন বলে, “হ্যাঁ এবারে যেতে হবে দিল্লী।”
ডিনার দিয়ে যায় অয়েটার। ব্যাবসা ছেড়ে কথার মোড় অন্যদিকে ঘুরে যায়, অনন্যার সিনেমার কথা হয়। মিস্টার ধিলনের মেয়ে একজন ক্যানাডিয়ান এন.আর.আই কে বিয়ে করেছে, সেই নিয়ে কথা হয়। উত্তপ্ত পরিবেশ শান্ত হয়ে যায়। খাওয়া শেষে, মিস্টার ধিলন জিজ্ঞেস করেন সাক্ষর করার কথা। দেবায়ন অনন্যার হাতে ফাইল ধরিয়ে দেয়। পরমিত একটু হাসে সেই দেখে। অনন্যাকে বলে, একটু টিয়া মারিয়াতে গিয়ে ড্রিঙ্কস নেবে তারপরে রুমে চলে যাবে। অনন্যা বলে, রুমে পৌঁছে গেলে একবার যেন দেবায়নকে ফোনে জানিয়ে দেয়, তাহলে সেই মতন ফাইল নিয়ে চলে যাবে। অনন্যা আর পারমিতা কটেজে চলে যায়। দেবায়ন আর পরমিত বারের দিকে হাঁটা দেয়। পরমিত বারে ঢুকে যায়।
দেবায়ন একটা বিয়ারের বোতল হাতে নিয়ে সমুদ্র তটের দিকে হাঁটতে শুরু করে। ঠাণ্ডা কনকনে হাওয়া বইতে থাকে সমুদ্রের দিক থেকে। ঘন কালো অন্ধকারে সমুদ্রের ঢেউ মাঝে মাঝে চিকচিক করে, সাদা ঢেউয়ের ফেনা আছড়ে পরে পায়ের কাছে। কোন এক ছোটো বেলায় মায়ের সাথে দিঘা ঘুরতে গেছিল, সে কথা মনে নেই। একা নির্জন সমুদ্র তটে হাঁটতে হাঁটতে সব কিছু কেমন স্বপ্নের মতন মনে হয়। স্বপ্নের মতন এক সুন্দরী ওর হাতে ধরা দিল, সেই সুন্দরীর হাত ধরে লক্ষ্মী একসময়ে ধরা দিল। এই টাকা পয়সা প্রতিপত্তি ওকে কোথায় নিয়ে যাবে সেই চিন্তা করে। অনুপমার কথা মনে পরতেই, প্রেয়সীকে ফোন করে। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পরে মাকে ফোন করে দেবায়ন। মন খুশিতে ভরে ওঠে, অনুপমার গলা শুনে।
পরমিত কিছু পরে দেবায়নকে ফোন করে জানিয়ে দেয় রুমে পৌঁছে গেছে। পরমিত দেবায়নকে বলে, “মিস্টার বসাক, তোমার যখন জন্ম হয়নি তখন থেকে আমি ব্যাবসা করি। টাকা কি ভাবে অর্জন করতে হয় তোমার থেকে ভালো ভাবে জানি, কিন্তু তুমি একজন মানুষকে কি ভাবে তাঁর সন্মান তাঁর সমাদর করতে হয় সেটা জানো। আমি বুঝি, একশো কোটি টাকার মধ্যে পাঁচ কোটি টাকার কত মুল্য। আমার দূরদৃষ্টি বলে, তুমি টাকার সাথে সাথে মানুষের মন জয় করবে। হ্যাঁ, তুমি হয়ত আমার মতন উপায়ে টাকা অর্জন করবে না কিন্তু ভবিষ্যতে তুমি যেটা অর্জন করবে সেটা অমুল্য। সেই জিনিস কোটি টাকা দিয়ে কেনা যায়না। আজকে আমি যদি চোখ বন্ধ করি, তাহলে কেউ আমার পরিবারের পাশে নিঃস্বার্থে এসে কেউ দাঁড়াবে না। যারা দাঁড়াবে তারা আমার সম্পত্তির লোভে এসে দাঁড়াবে। কিন্তু তোমার অবর্তমানে তোমার পরিবারের পাশে এসে অনেকে দাঁড়াবে সেটা তুমি কোটি টাকার বিনিময়ে কিনতে পারবে না। ভগবান তোমার সাথে থাকুক এটাই আমার কাম্য।”
দেবায়ন হেসে ধন্যবাদ জানায় মিস্টার ধিলনকে। অনন্যাকে ফোনে বলে দেয়, পরমিত রুমে পৌঁছে গেছে। কথাটা বলার সময়ে দেবায়নের গলা কেঁপে ওঠে। মনেপ্রানে মেনে নিতে কষ্ট হয় এক মেয়েকে পাঠাতে হবে পরমিতের কাছে। অনন্যার সাথে কথা বলার পরে, রাগে বিতৃষ্ণায় ফোন ছুঁড়ে ফেলে বালিতে। ধুপ কর ঠাণ্ডা বালিতে বসে হাতের বোতল সমুদ্রের দিকে ছুঁড়ে দেয়। অন্ধকার কালো সমুদ্রের জলে হারিয়ে যায় বিয়ারের বোতল। অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে বালির ওপরে। অনন্যাকে পাঠানো উচিত হয়নি পরমিতের কাছে। ডিনারের সময় সাক্ষর করিয়ে নিলে ভালো হত।
চুপচাপ রুমের দিকে পা বাড়ায় দেবায়ন। ওর জামাকাপড় সব কটেজে রাখা। পারমিতা সেই রাতে কাছে আসতে বারন করে দিয়েছে। এত রাতে কটেজে যাওয়া ঠিক হবে না। এই রুমটা অনন্যার জন্যে বুক করা হয়েছিল। আলমারিতে অনন্যার জামা কাপড় রাখা। আলমারি খুলে অনন্যার গন্ধে মাখা পোশাক গুলোর দিকে চোখ যায়। অন্য সময় হলে, দেবায়ন ওর কাপড় নিয়ে নাকে মুখে চেপে হস্ত মৈথুন করত হয়ত। কিন্তু অনন্যার জামা কাপড় দেখে ওর মন আরও ভারী হয়ে যায়। রুমে ঢুকে জামা কাপড় খুলে, কোমরে তোয়ালে জড়িয়ে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে থাকে। মাথা একদম খালি হয়ে যায়, যেন অসীম শূন্য আকাশে বিচরন করছে। চোখের সামনে রুমের ছাদ, কিন্তু দেবায়নের চোখ যেন ছাদ ফুঁড়ে, মাথার অপরের কালো আকাশে বিচরন করছে। চোখের সামনে অসংখ্য তারা, নক্ষত্র জ্বল জ্বল করছে। অনেকক্ষণ না অল্পক্ষণ, সময়ের খেয়াল থাকে না, একসময়ে ঘুমিয়ে পরে দেবায়ন।
কত রাত হবে ঠিক জানে না, এমন সময়ে দরজায় বেশ জোরে জোরে ধাক্কার আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে যায়। এত রাতে কে হতে পারে? পারমিতা আসবে না। অনন্যাকে পেয়ে পরমিত মজে গেছে এতক্ষণে। গোয়াতে আর কাউকে চেনেনা দেবায়ন। চোখ কচলাতে কচলাতে বিছানা ছেড়ে উঠে ঘড়ির দিকে তাকায়, বেশি সময় ঘুমাতে পারেনি। বাইরে সমুদ্র থেকে ভেসে আসা হাওয়ার আওয়াজ। দরজা খুলে সামনে অনন্যাকে দেখে ঘুম উবে যায় নিমেষের মধ্যে।
সামনে দাঁড়িয়ে অনন্যা। সুন্দরীর সৌন্দর্য বিদ্ধস্থ, মাথার চুল বেনুনি করা ছিল, সেটা একটা হাত খোঁপায় ঘাড়ের কাছে দুলছে। চোখের কোনের কাজল একটু লেপে গেছে, ঠোঁটের লিপস্টিক নেই, কপালে টিপ নেই। গোলাপি শাড়িটা কোনোরকমে শরীরের সাথে জড়ানো। দেবায়ন ওই চেহারা দেখে মাথা নিচু করে নেয়। অনন্যার চোখের দিকে তাকানোর ক্ষমতা নেই ওর। ইচ্ছে করেই, নিজের কার্যসিদ্ধির জন্য অনন্যাকে পাঠিয়েছিল পরমিতের কাছে। সেই অনন্যা, ওর সামনে দাঁড়িয়ে ওর দিকে বাদামি রঙের ফাইল বাড়িয়ে দেয়। দেবায়ন কে চুপ দেখে ধির পায়ে রুমে ঢুকে পরে। হাতের ফাইলটা ছুঁড়ে ফেলে বিছানার ওপরে। হাঁটার সময়ে পা একটু টলে যায়। দেবায়ন দৌড়ে অনন্যাকে ধরতে যায়। অনন্যা ওর দিকে হাত দেখিয়ে দাঁড়িয়ে যেতে ইঙ্গিত করে।
অনন্যা ওর দিকে ছলছল চাহনি নিয়ে বলে, “কাজ হয়ে গেছে দেবায়ন।”
দেবায়ন চুপ, মাথা চিন্তা শূন্য হয়ে যায়। সারা শরীরে মৌমাছি যেন হুল ফুটিয়ে দিয়েছে।
অনন্যা টলতে টলতে বাথরুমের দিকে এগিয়ে যায়। বুকের থেকে আঁচল খসে মেঝেতে লুটিয়ে পরে। একটানে গা থেকে শাড়িটা খুলে ফেলে। শাড়ির প্যাঁচে খুলে যেতেই অনন্যার চওড়া পিঠ দেখা দেয়। পেছনে দুটো পাতলা দড়ি দিয়ে বাঁধা ব্লাউস। চওড়া পিঠে আঙ্গুলের দাগ দেখে দেবায়নের কান গরম হয়ে যায়। আগে থেকে জানত যে পরমিত, সঙ্গম খেলার সময়ে উন্মাদ হয়ে ওঠে। অনন্যা, গা থেকে ব্লাউস খুলে একদিকে ছুঁড়ে মারে। এমন ভাব দেখায় যেন রুমের মধ্যে একা। অতি ক্ষুদ্র ব্রাটা কোনোরকমে বুকের ওপরে ঝুলে আছে। অনন্যা ওর দিকে একটু বেঁকে তাকায়। দেবায়নের চোখ যায় অনন্যার স্তনের ওপরে। স্তনের বোঁটার চারপাশে লাল ছোপ ছোপ দাগ। স্তনের ওপর দিকে দাঁতের দাগ। পরমিত ক্ষুধার্ত হায়নার মতন অনন্যাকে পিষে কচলে সম্ভোগ করেছে। ব্রা খুলে খালি সায়া পরে দেবায়নের দিকে ঘুরে তাকায়। দেবায়ন কি করবে ভেবে পায় না। অনন্যা বাথরুমের দরজা ধরে টলে যায়। দেবায়ন হাত বাড়িয়ে অনন্যাকে ধরতে যায়।
অনন্যা ওকে বলে, “কাপবোর্ড থেকে আমার একটা স্লিপ বের করে দিতে পারো?”
দেবায়ন সঙ্গে সঙ্গে আলমারি খুলে একটা স্লিপ বের করে অনন্যার হাতে দেয়। ততক্ষণে অনন্যা, সায়ার দড়ি খুলে দিয়েছে। নিচে প্যান্টি নেই। পায়ের ফাঁকে, দুই নধর জঙ্গায় দৃষ্টি যায় দেবায়নের। দুই মসৃণ জঙ্ঘায় আঁচরের দাগ। যোনির পাপড়ি যোনির চেরা থেকে বেড়িয়ে এসেছে।
দেবায়ন অনন্যাকে বলে, “চল তোমাকে স্নান করিয়ে দিচ্ছি।”
অনন্যা ওর হাত থেকে স্লিপ নিয়ে বলে, “না থাক। তুমি বরং ফাইল চেক করে নাও। সব ঠিক আছে কিনা একবার দেখে নাও। কাল সকালে পরমিত চলে যাবে দিল্লী আর তোমরা চলে যাবে কোলকাতা। যাও নিজের কাজ ঠিকঠাক হয়েছে কিনা দেখে নাও।”
দেবায়নের মানসিকতা সেই ফাইল দেখার মতন নেই। হাত বাড়িয়ে অনন্যার হাত ছোঁয়। অনন্যা ওর হাত টেনে বাথরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। দেবায়ন চুপচাপ মাথা ধরে জানালার পাশে একটা কাউচে এসে বসে পরে। সত্যি দেবায়ন এত নিচে নেমে গেছে? না, ও চেয়েছিল পঁয়তাল্লিশ কোটি টাকা দিতে। ও ভেবেছিল যে পরমিত হয়ত অনন্যার গায়ে হাত দেবে না। দেবায়নের একবার মনে হয় যে পরমিতের রুমে ঢুকে এক ঘুসিতে নাক ফাটিয়ে দেয়। কিন্তু আসল দোষী কে? দেবায়ন নিজে।
রুমের মধ্যে মৃদু হলদে আলো। সামনের বড় কাঁচের জানালার পাশে বসে এক দৃষ্টে কালো অন্ধকারের দিকে চেয়ে থাকে। খুট করে একটা আওয়াজে পেছন ফিরে তাকায়। অনন্যা বাথরুম থেকে বেড়িয়ে চুপচাপ বিছানায় উঠে একটা কম্বল টেনে শুয়ে পরে। দেবায়ন কি করবে ভেবে পায় না। ওর পাশে শোয়া উচিত? কি ভাববে অনন্যা? বড় ইচ্ছে করে একবার ওকে জড়িয়ে ধরে একটু প্রবোধ দিতে। কিন্তু কি প্রবোধ দেবে দেবায়ন? এটা যে কর্ম, এটাই ভবিতব্য। অনন্যা এখানে এসেছিল পরমিতের সাথে শুতে। অনন্যাকে এখানে ডাকার পরিকল্পনা দেবায়নের। যদি পারমিতা আর দেবায়ন আসত তাহলে ওই ডাইনিং টেবিলে বসে সই করিয়ে নিত। দেবায়ন একটা সিগারেট জ্বালায়। বুক ভরে ধোয়া টানতেই মাথা ভোঁভোঁ করে ওঠে।
“তুমি কি সারা রাত ওইখানে বসে সিগারেট খাবে?”
অনন্যা ওকে জিজ্ঞেস করে। দেবায়ন ঘাড় ঘুরিয়ে অনন্যার দিকে তাকায়। বিছানায় একপাসে শুয়ে পুরো কম্বলে মুড়ি দিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করে কথা গুলো।
দেবায়ন আমতা আমতা করে বলে, “না মানে আমি কাউচে শুয়ে পড়ব। তুমি আরাম করে বিছানায় ঘুমাও।”
অনন্যা তির্যক হেসে বলে, “কেন, একটা কলগার্লের সাথে এক বিছানায় শুতে ঘৃণা বোধ হচ্ছে, মিস্টার দেবায়ন বসাক? আমি একটু আগে পরমিতের সাথে সেক্স করে এসেছি আর তোমার সাথে করিনি তাই তোমার ঘৃণা করছে? র্যাডিসন ফোরটে তোমার সেই রকম কিছু মনে হয় নি। আমার সাথে তখন দিব্যি রাত কাটিয়েছিলে। পারলে সারা রাত ধরে সেক্স করতে, শুধু সময় ছিল না বলে।”
দেবায়ন কান গরম হয়ে যায় অনন্যার কথা শুনে, চাপা স্বরে বলে, “না, সে কথা নয় অনন্যা। তুমি আমাকে ভুল বুঝছ।”
অনন্যা, “কি ভুল এখানে দেবায়ন? কে ভুল এখানে? তুমি আমার সাথে সেক্স করতে চাও, চলে এস। পারমিতা ম্যাম আমাকে দুই লাখ টাকা দিয়েছে এবারে। একটু আগে পরমিত যা করেছে তাতে দুই লাখ পূরণ হয়নি। এস বিছানায়, আমার শরীর দিয়ে বাকি টাকাটা উসুল করবে না?”
দেবায়ন চোয়াল চেপে বলে, “তুমি বিশ্বাস কর আমি ভাবিনি যে পরমিত তোমার সাথে সেক্স করবে।”
অনন্যা অট্টহাসিতে ফেটে পরে, “রাত এগারোটার সময়ে একটা বেশ্যা, বিজনেস ডিলের ফাইল নিয়ে একজনের রুমে যাবে। এর মানে আর কি হতে পারে মিস্টার বসাক? আমার সাথে কি পরীর গল্প করার জন্যে আমাকে দুই লাখ টাকা দিয়ে এখানে ডেকেছ?”
দেবায়ন অনন্যার পাশে এসে বসে বলে, “অনন্যা প্লিস ভুল বুঝ না আমাকে। আমি ওই টেবিলে ডিল সাইন করতে চেয়েছিলাম। পাঁচ কোটি টাকার চেয়ে তুমি আমার কাছে অনেক দামী।”
তির্যক হাসে অনন্যা, “তাহলে দুই লাখ টাকা দিয়ে এখানে কেন ডেকেছ আমাকে? গল্প করার জন্য? কেউ আমার সাথে গল্প করতে আসে না মিস্টার বসাক। যে টাকা দেয় সে আমার শরীর ব্যাবহার করতে আসে।”
দেবায়ন অনন্যার হাতের ওপরে হাত রেখে বলে, “প্লিস তুমি একটু ঘুমাবে? আমি জানি তুমি আমার ওপরে প্রচন্ড রেগে।”
একটা হাত গালের ওপরে নিয়ে আলতো করে নরম গালে হাত বুলিয়ে দেয়। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
দেবায়নের উষ্ণ হাতের পরশ পেয়ে অনন্যার চোখ ছলছল কর ওঠে, “প্রচুর মানুষ দেখলাম দেবায়ন। কত জনের সাথে সেক্স করেছি গুনতে ভুলে গেছি। এই রকম বিজনেস ডিল আমাদের দিয়েই হয়। আগেও প্রচুর হয়েছে। সবাই নিজের টাকা উসুল করতে ব্যাস্ত। পরমিত সেটাই করেছে। আমি জেনেই এসেছিলাম যে পরমিতের সাথে আমাকে শুতে হবে। পারমিতা ম্যাম আমাকে আগেই বলে রেখেছিল ক্লায়েন্টের ব্যাপারে। শুধু এইটুকু বলেনি যে, পরমিত আসলে ম্যামের সাথে সেক্স করতে চায়। পরমিত বড় ক্ষুণ্ণ হয়ে যায় আমাকে দেখে। মুখে কিছু না বললেও আমার সাথে পাশবিক ব্যাবহার করার সময়ে আমি ওর মনের অভিপ্রায় বুঝতে পেরেছিলাম। তুমি জানতে মিস্টার ধিলন ম্যামের জন্য অপেক্ষা করে বসেছিলেন। তুমি চাইছিলে না যে ম্যাম যাক তাই আমাক এখানে এনেছ, তাই না?”
দেবায়ন অনন্যাকে জড়িয়ে ধরে। অনন্যা ওর বুকের ওপরে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে ওঠে, “আমার কান্না সেখানে নয় দেবায়ন। রুমে তোমাকে দেখে আমার চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে এল। আমি জানিনা আমার কি হচ্ছে… দেবায়ন।”
দেবায়ন ওর মাথা বুকের ওপরে চেপে, দুই হাতে অনন্যাকে জড়িয়ে বলে, “চুপচাপ ঘুমাও। কাল সকালে আমি আর তুমি এই সি বিচে বেশ আনন্দ করব।”
অনন্যা চোখের জল মুছে, দেবায়নের বুকে ঠোঁট চেপে বলে, “আজ রাতে একটু জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকো। কাল সকালে আমি চলে যাবো। এখানে দিনের বেলা আমি তোমার সাথে বের হতে পারব না। কত মানুষের কত রকমের মতলব থাকে। কেউ একটা ছবি তুলে যদি কোন ম্যাগাজিনে দিয়ে দেয় তাহলে আবার বদনামের ভয় আছে। কত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে, আপনার সাথের এই ছেলেটা কে? আপনার নতুন প্রেমিক? ইত্যাদি। শুধু আজকের রাতটা আমাকে জড়িয়ে ধরে থাক।”
দেবায়ন অনন্যাকে জড়িয়ে ধরে। অনন্যা দেবায়নের প্রসস্থ বুকের ওপরে মাথা রেখে, একটা পা দিয়ে দেবায়নকে জড়িয়ে ধরে। বুকের ওপরে নখের আঁচর কেটে দেয়।
দেবায়ন ওর ঘন কালো রেশমি চুলের মধ্যে বিলি কেটে আদর করে জিজ্ঞেস করে, “কি ভাবছ এত?”
অনন্যার সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়, “উম্মম্মম এই ঠাণ্ডায় এইরকম ভাবে জড়িয়ে ধরে থাকলে আর কি ঘুম আসে? মনে হয় সারা রাত এই ভাবে বুকে মাথা রেখে জেগে কাটিয়ে দেই।”
দেবায়ন বুঝতে পারে যে অনন্যার বুকে এই অন্য টান জেগেছে। দেবায়ন সেই চুম্বকের টানে সারা দেয় না। নিস্তেজ হয়ে আলিঙ্গন শিথিল করে নেয় অনন্যার শরীর থেকে। অনন্যা বুঝতে পেরে যায় দেবায়নের মনের দ্বন্দ। হেসে বলে, “না গো, অনুর জায়গা আমি চাইছি না।”
দেবায়ন হেসে ফেলে, “তাহলে কি চাও।”
অনন্যা, “আমাকে কিছু টাকা দেবে, আমি একটা বিজনেস করতে চাই।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “তোমার অনেক টাকা, তুমি আবার আমার কাছ থেকে টাকা চাইছ?”
অনন্যা ম্লান হেসে বলে, “আমার কাছে টাকা নেই। যে রকম আয় হয়, সেই রকমের খরচ হয়। আমাদের এই চকমকে সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে অনেক টাকা বেড়িয়ে যায়। সবসময়ে কাজ থাকে না, সেই দিন গুলতেও আমাকে চলতে হয়। আমার কাছে তেমন কিছু ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স নেই, দেবায়ন।”
দেবায়ন, “টাকা এখন আমার কাছে নেই।”
অনন্যা মৃদু হেসে বলে, “তুমি মিথ্যে কথা বলছ। তুমি এত বড় একটা বিজনেস ম্যান, তোমাকে সব বিজনেস ডিলে দেখা যায় আর তুমি বলছ যে তোমার কাছে টাকা নেই? তুমি আমাকে টাকা দেবে না সেটা পরিষ্কার বলে দিলেই পারো।”
দেবায়ন অনন্যাকে বুঝাবে কি করে, এই সব মিস্টার সেনের জন্য হচ্ছে। দেবায়ন বলে, “তোমাকে এক বছর অপেক্ষা করতে হবে।”
অনন্যা জিজ্ঞেস করে, “কেন এক বছর কেন?”
দেবায়ন নিজের আসল পরিচয় লুকিয়ে বলে, “একটা বড় প্রোজেক্টে অনেক টাকা চলে গেছে। এক বছর অপেক্ষা কর, তারপরে তোমাকে টাকা দেব। কিন্তু তুমি কি বিজনেস করতে চাও?”
অনন্যা, “জানি না। তবে ভাবছি জামশেদপুর ফিরে যাবো। ওখানে গিয়ে কিছু একটা খুলব।”
দেবায়ন, “জামশেদপুর ফিরে কেন যাবে? এই কোলকাতায় কোন বিজনেস করতে পারো। রেস্টুরেন্ট খুলতে পারো, বুটিক করতে পারো, চাইলে মডেলিং এজেন্সি করতে পারো।”
অনন্যা মডেলিং এজেন্সির নাম শুনে হেসে বলল, “না গো এই আলোর ঝকমকি থেকে দুরে যেতে চাই। মডেলিং এজেন্সি খুলব না। ওই রকম এজেন্সি শেষ পর্যন্ত হাই প্রোফাইল পিম্প হয়ে যায়। আমি ওই সব থেকে বেড়িয়ে আসতে চাই। তোমার এই রেস্তুরেন্টের আইডিয়া বেশ ভালো।”
দেবায়ন, “ঠিক আছে, আমি তোমাকে টাকা দেব।”
অনন্যা, “আমি তোমাকে সব শোধ করে দেব ধিরে ধিরে। টাকা দিয়ে যদি শোধ না করতে পারি তাহলে তুমি যখন যেখানে আমাকে আসতে বলবে সেখানে আমি চলে আসব।”
দেবায়ন হেসে বলল, “তোমাকে শোধ করতে হবে না। আমি তোমাকে প্রেসেন্ট করব তোমার রেস্টুরেন্ট।”
কথাটা শুনে অনন্যার বুক খালি হয়ে যায়, বিশ্বাস করতে পারে না নিজের কান কে, “তুমি সত্যি বলছ?”
দেবায়ন ওর মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বলে, “হ্যাঁ সত্যি বলছি।”
দেবায়নের বুকে মাথা রেখে একসময়ে অনন্যা চোখ বন্ধ করে নেয়। সারা রাত দেবায়নের চোখে ঘুম আসে না। অনন্যার মাথা বুকের ওপরে রেখে সারা রাত জেগে কাটিয়ে দেয়। সকালের দিকে চোখ একটু লেগে যায়।
ঘুম ভাংলে দেখে যে রুমে অনন্যা নেই। সকাল গড়িয়ে অনেক সময় কেটে গেছে। ঘড়িতে দেখে দশটা বাজে। ঠিক সেই সময়ে অনুপমার ফোন আসে। অনুপমা জিজ্ঞেস করে গত রাতের কথা। দেবায়নের মাথায় তখন অনন্যার চিন্তা ছিল। কোনোরকমে অনুপমার সাথে ফোনে কথা বলে ফোন রেখে দেয়। ফোন রেখে সঙ্গে সঙ্গে বাথরুমের দিকে চোখ যায়। বাথরুম খালি, আলমারি দেখে, আলমারিতে অনন্যার ব্যাগ না দেখতে পেয়ে দেবায়ন বুঝে যায় যে অনন্যা বেড়িয়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে অনন্যাকে ফোন করে কিন্তু অনন্যার ফোন বন্ধ। শেষ বারের মতন কথা বলে যেতে পারল না দেবায়ন। সাইড টেবিলে রাখা একটা সাদা কাগজে চোখ পড়ে দেবায়নের। একটা চিঠি লিখে গেছে অনন্যা, ছোটো দুই তিনটে লাইন।
“ডিয়ার দেবায়ন, তোমাকে ঘুমাতে দেখে আর জাগাতে ইচ্ছে করল না, তাই না বলেই বেড়িয়ে গেলাম। তোমার কাছে থাকতে ইচ্ছে করছিল খুব। কিন্তু কি করা যাবে, ইচ্ছে করলেও থাকা দায়। কে কখন দেখে ফেলে, নামের চেয়ে বদনাম আগুনের মতন দাউদাউ করে ছরায় বেশি। ব্রেকফাস্টের কথা ভুলে যেও না যেন, আমি অপেক্ষা করে থাকব। পাঁচ বছর পরে গতরাতে বেশ ভালো ঘুম হয়েছে। ইতি, সুলেখা।”
একটু পরে পারমিতাকে দেখে দেবায়ন অনন্যার কথা ভুলে যায়। দুইদিন দুইরাত পারমিতা আর দেবায়ন মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। পারমিতা যেন শেষবারের মতন দেবায়নকে পাচ্ছে এমন ভাবে শেষ রাতে দেবায়নের সাথে মিলিত হয়। আসার দিন পারমিতার চেহারায় এক অন্য ধরনের আলোক ছটা দেখতে পায় দেবায়ন।
প্লেনে বসে পারমিতা নিচু গলায় ওকে বলে, “কোলকাতা গিয়ে আমাদের মনে হয় না আর দেখা হবে।”
দেবায়ন জানে, একজনের সাথে ক্রমশ শরীরের খেলা চলতে চলতে মনের টান আসা স্বাভাবিক। দেবায়ন চায় না, অনুপমা ছাড়া আর কাউকে ভালবাসতে। প্রচন্ড কাম লালসার চুম্বকীয় টানে পারমিতার সাথে মিলিত হয়েছিল। দেবায়ন চুপ করে থাকে, অনেকদিন আগে ভেবেছিল পারমিতাকে সারা জীবন ওর মেয়ের সাথে সাথে উপভোগ করে যাবে। কিন্তু একরাতে পারমিতার ক্রন্দন ভরা ডাক শুনে দেবায়ন পিছিয়ে গেছিল। আবার এই গোয়াতে এসে পরপর বেশ কয়েক বার মিলিত হয়ে পারমিতার বুকে সেই পুরানো টান ফিরে আসে।
দেবায়নকে চুপ থাকতে দেখে পারমিতা ম্লান হেসে বলে, “হ্যান্ডসাম অত চিন্তা করো না। শুধু মজা করছিলাম তোমার সাথে। আমার কিছু হয়নি। আমি জানি, সোমেশকে আগের মতন পাবো না। তবে যত টুকু পাবো সেই নিয়ে থাকব। তোমাকে কথা দিচ্ছি, সোমেশ ছাড়া আর কেউ আমাকে আর ছোঁবে না।”
দেবায়ন চুপচাপ পারমিতার কথা শুনে যায়। পারমিতা বলে, “অনু কখনই আমাকে ভালো চোখে দেখত না। ওর বোঝার শক্তি অনেক আগে থেকেই জন্মে গেছিল। তখন ছেলের জন্য বাঁচতাম। তোমার একরাতের জাদুর কাঠির ছোঁয়ায়, অনুকে ফিরে পেলাম। বর্তমানে আমার বাড়িতে পায়েলের আগমন। এবারে মনে হয় এই সব ছেড়ে ওদের জন্য বাঁচি। অনুকে দেখার জন্য তুমি আছো, দেবশ্রীদি আছে। পায়েল আর অঙ্কনকে আমাকেই দেখতে হবে।”
পারমিতার এক নতুন রুপ দেখতে পায় দেবায়ন। পারমিতার নরম হাত নিজের হাতের মুঠিতে নিয়ে বলে, “তুমি একা নও মিমি। আমি আর অনু তোমার সাথে থাকব সবসময়ে।”