30-09-2020, 11:20 PM
পর্ব বারো (#8)
আদি কথা না বাড়িয়ে এক্সেলেটারে পা চেপে দিল। গাড়ি হুহু করে হাওয়া কেটে শহর ছাড়িয়ে হাইওয়ে ধরে অনির্দিষ্টের পানে ধেয়ে চলল। ঘন কালো আঁধার কেটে ঝড়ের গতিতে গাড়ি ধেয়ে চলে সেই সাথে ঋতুপর্ণা আর আদির বুকের অসীম চাহিদা বেড়ে চলে। এই আঁধার রাত যেন শেষ না হয়। আদির ঊরু জোড়া টানটান হয়ে যায়, পায়ের মাঝের পুরুষাঙ্গ অনেক আগেই ফনা তুলে ভীষণ ভাবে ফুঁসছে, জাঙ্গিয়া প্যান্ট ফাটিয়ে বেড়িয়ে আসতে চাইছে। পাশে বসা সুন্দরীর ক্রোড়ে হারিয়ে যেতে বড্ড ইচ্ছে করছে। মা গো তোমার ছেলে একবারের জন্য তোমার কোলে ফিরতে চায়। ওর নাকে ভেসে আসে মায়ের গায়ের তীব্র মাদকতাময় ঘ্রান। রক্তের উথাল পাথাল তরঙ্গে নিজেকে আর শান্ত করতে পারে না আদির দেহ। সামনে একটা ছোট বসতির দেখা পেতেই ঋতুপর্ণা আদিকে গ্রামের মধ্যে গাড়ি নিয়ে যেতে অনুরোধ করে। মায়ের কথা ফেলতে পারে না আদি, বড় রাস্তা ছাড়িয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই কাঁচা রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়ল।
রাত তখন দশটা বাজে, গ্রামের পুজো মন্ডপে তখন লোকজনের ভিড়। ওদের গাড়ি থেকে নামতে দেখে অনেকের চোখ ওদের দিকে চলে যায়। নাম না জানা এক গ্রামের মধ্যে শহর থেকে কেউ পুজো দেখতে আসবে সেটা হয়ত গ্রামের লোকজন ভাবতে পারে নি। নবমীর ঠাণ্ডা রাত্রে আদির হাত ধরে ঋতুপর্ণা গাড়ি থেকে বেড়িয়ে মন্ডপে ঢুকে পরে। আশে পাশের কিছু বাচ্চা ছেলে মেয়েদের চোখে অপরিসীম জিজ্ঞাস্য। ঋতুপর্ণা একটা বাচ্চাকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস গ্রামের নাম জিজ্ঞেস করাতে লজ্জা পেয়ে সেই বাচ্চাটা পালিয়ে যায়। ওদের দেখে আদি আর ঋতুপর্ণা দুইজনেই হেসে ফেলে।
গ্রামের ছোট প্যান্ডালের মূর্তি, একচালা ঢাকের সাজে শোলা দিয়ে সজ্জিত মহামায়া দেবী দুর্গার মূর্তি। অনেকক্ষণ ধরে ঋতুপর্ণা সেই দেবী দুর্গার মূর্তির মুখ মন্ডলের দিকে তাকিয়ে রইল। চোখের কোল ধিরে ধিরে ঝাপসা হয়ে উঠল। পাশে দাঁড়িয়ে ছেলেটার দিকে তাকাতে দ্বিধাবোধ করে। ওকে? আদির মাতৃময়ী স্নেহভরা জননী না এই সুঠাম পুরুষের নিশা যামিনীর সঙ্গিনী অপরূপা প্রণয়িনী। উত্তর জানা নেই ঋতুপর্ণার। দেবী প্রতিমার সামনে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না ঋতুপর্ণা, বুক ছাপিয়ে নিষিদ্ধ প্রেমের বিষাক্ত দংশন ওকে ছিঁড়ে ফেলে।
আদি চুপচাপ মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে। এই নারী ওকে জন্ম দেয়নি, আসল জননী যে ওকে জন্ম দিয়েছিল সে জন্ম দিয়েই ওকে ছেড়ে চলে গেছে। এই অকাঠ সত্য ওর মা জানে না। ওর পাশে দাঁড়িয়ে স্নেহভরা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে যে রমণী সে ওর মা, বুকের দুধ খাইয়ে, নিজের আঁচলের তলায় সর্বদা ওর রক্ষণাবেক্ষণ করে গেছে সারা জীবন ধরে। এই নারী নিজের আগে ওকে কথা চিন্তা করেছে। এমনকি হস্পিটালের বেডে শুয়ে চোখ খুলেই ওর কথাই চেঁচিয়ে উঠেছিল। যদি এই নারী কোনোদিন জানতে পারে যে আদি ওর ছেলে নয় তাহলে কি মায়ের বুক ভরা ভালোবাসা হারিয়ে যাবে। তাই বলে সেই মাকে নিজের প্রণয়িনীর মতন সাজিয়ে, নিজের প্রেমিকার মতন করে ক্রোড়ে নিয়ে ভালোবাসার রঙ্গে রঞ্জিত করে তুলবে।
ধিরে ধিরে দেবী প্রতিমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে আদিকে নিচু গলায় ঋতুপর্ণা বলে, “চল এইবারে বাড়ি ফিরি। অনেক রাত হল।” ছেলের কথা ভাবতে ভাবতে আর নিজেদের এই নিষিদ্ধ ঘন সম্পর্কের কথা ভাবতে ভাবতে বিষাক্ত হয়ে উঠল ওর মন। থমথমে মুখ করে আদির দিকে না তাকিয়ে গাড়ির দিকে পা বাড়িয়ে দিল।
আদি মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দিল এইবারে বাড়ির দিকে যাত্রা করা উচিত। কথা না বাড়িয়ে দুইজনে গাড়িতে উঠে গেল। আদিও ঘড়ি দেখল, রাত এগারোটা বাজে। মায়ের হটাত করে থমথমে চেহারা দেখে আদি কি বলবে কিছুই ভেবে পেল না। একটু আগেই কত হাসি খুশি ছিল, কত গল্প করতে করতে ওর হাত জড়িয়ে, নাক মুখ বেঁকিয়ে সারা রাস্তা এলো। হটাত করে এই প্রতিমা দেখে এমন কি হয়ে গেল যে মা কথা বলতে ভুলে গেল। আদি মাথা নিচু করে ড্রাইভারের সিটে বসে পরে। রাস্তা ঠিকঠাক থাকলে বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে আরো আড়াই ঘন্টা লেগে যাবে।
অন্যমনস্ক হয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে গ্রাম থেকে বেড়িয়ে অন্ধকার রাস্তা ধরে কিছুদুর এগিয়ে গেল। বেশ কিছুদুর এগিয়ে যাওয়ার পরে আদি বুঝতে পারল যে রাস্তা ধরে ওরা গ্রামে ঢুকেছে এই রাস্তা সেই রাস্তা নয়। এর মাঝে কত ছোট ছোট রাস্তা কত বাঁক পেরিয়ে এসেছে সঠিক জানা নেই। দুইপাশে ধুধু করছে খেত, তার মাঝে কাঁচা গ্রামের রাস্তা। রাস্তা এক নদীর তিরে এসে শেষ হয়ে গেছে। সামনে বয়ে চলেছে গঙ্গা নদী।
আদি গাড়ি দাঁড় করিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখল। ঋতুপর্ণা জানালায় হাত রেখে তার ওপরে মাথা রেখে অনেক আগেই চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ক্লান্তিটা শরীরের নয়, ক্লেদটা মনের গহীন কোনায় উপচে উঠে এসেছিল।
অন্ধকারে গাড়ি দাঁড় করাতেই ঋতুপর্ণার ঘুম ভেঙ্গে গেল। আদির দিকে ঘুম জড়ানো চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কিরে হাইওয়ে এসে গেছি নাকি?”
আদি মুখ ব্যাজার করে উত্তর দিল, “না মা রাস্তা গুলিয়ে ফেলেছি।”
হটাত এক দমকা ঠাণ্ডা হাওয়ায় ঋতুপর্ণার দেহ কেঁপে উঠল। মাকে ঠাণ্ডায় কাঁপতে দেখে আদি নিজের ব্লেজার খুলে মায়ের দেহে জড়িয়ে দিল। বাইশ বছরে সেই প্রথম বার ছেলের হাতের ছোঁয়ায় বিষাক্ত দংশনের ছোবল অনুভব করল ঋতুপর্ণা। আদির ব্লেজার গায়ে যেন কাঁটার পরিধানের মতন লাগলো ঋতুপর্ণার। তাও সেই অনুভুতি লুকিয়ে চোখ কচলে ম্লান হাসি দিয়ে আদিকে বলল, “আর কি হবে, গাড়ি ব্যাক কর। গ্রামে ফিরে কাউকে জিজ্ঞেস করে নেব।”
আদি ঘড়ি দেখল, এগারোটা প্রায় বাজে। আঁকা বাঁকা পথে গাড়ি পেছনে কোনোমতে ঘুরিয়ে আবার গ্রামের দিকে যাত্রা শুরু করে দিল। কিছু দুর যাওয়ার পরে পথ হারিয়ে মায়ের দিকে অসহায় অবস্থায় তাকিয়ে বলল, “মা মনে পড়ছে না কোন বাঁকে টার্ন নিয়েছিলাম।”
বুকের ধুকপুকানি বেড়ে উঠল ঋতুপর্ণার, শেষ পর্যন্ত এই নিরালা নির্জনে রাত কাটাতে হবে নাকি? কোথায় আছে কিছুই জানা নেই। ম্লান হেসে আদির মাথার চুলে বিলি কেটে বলল, “পথ কেউই হারায় না রে পাগল। হয়ত এটাই আমাদের কপালে লেখা ছিল।”
ওর মা ঠিক কি কথা বলতে চাইছে ঠিক বোধগম্য হল না আদির। ঋতুপর্ণা ভালো ভাবেই জানে এর অর্থ কি। হয়ত এই পথ হারিয়েই এক নতুন পথের সন্ধান খুঁজে পাবে। হয়ত এটাই ওদের অদৃষ্টে লেখা, হয়ত এই নিরালা নির্জনে অন্ধকার রাতের আকাশের জ্বলন্ত তারা ওদের এই নিষিদ্ধ সম্পর্কের সাথী হবে। ম্লান হেসে ছলছল নিস্পলক চোখে ছেলের দিকে একভাবে তাকিয়ে রইল ঋতুপর্ণা। আদি মায়ের চোখের কোলের অশ্রুকণার ঝিলিক দেখে ভুরু কুঁচকে ইশারায় প্রশ্ন করে, কি হয়েছে। ম্লান হেসে মাথা দুলিয়ে ঋতুপর্ণা জানায়, কিছু না এমনি।
গাড়ির দরজা খুলে বেড়িয়ে এলো ঋতুপর্ণা। নদীর থেকে ভেসে আসা ঠান্ডা জোলো বাতাস ওর চিত্ত সিঞ্চন করে দেয়। হুহু করে বয়ে আসা ঠাণ্ডা বাতাসে কেঁপে ওঠে রমণীর নধর অঙ্গ। মায়ের মুখের অচেনা ম্লান হাসির অর্থ হাতড়ে খুঁজতে চেষ্টা করে আদি। কিন্তু মায়ের ওই ঝাপসা দৃষ্টি, নরম ঠোঁটের স্মিত হাসি আর থমথমে চেহারার অব্যাক্ত বানী ওর ছোট মস্তিকে বোধগম্য হয় না।
আদি নেমে পরে গাড়ি থেকে। ধিরে ধিরে মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে নরম গলায় জিজ্ঞেস করে, “তোমার কি হয়েছে, মা?”
ঠাণ্ডা নদীর বাতাস ঋতুপর্ণার শরীর কাঁপিয়ে দেয়। ছেলের দেওয়া ব্লেজার কোনরকমে গায়ের সাথে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে নিল ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার জন্য। ছেলে পাশে দাঁড়াতেই যেন গরম বিষাক্ত ছ্যাকা খেল। চোয়াল চেপে অতি কষ্টে বিচলিত চিত্ত লুকিয়ে মিষ্টি হেসে আদিকে বলল, “তাহলে এই গাড়িতেই রাত কাটাতে হবে মনে হচ্ছে।”
আদি মাথা চুলকে এদিক ওদিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে বলল, “জানি না মা, সরি ভুল করে ফেলেছি।”
নদীর কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস আদিকেও ভীষণ ভাবে কাঁপিয়ে তোলে। মায়ের আদর পাওয়ার আকাঙ্খায় মায়ের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পরে আদি। এতক্ষণ ঋতুপর্ণার বুকের ভেতরটা বিশাল এক শুন্যতায় ভরে উঠেছিল। গাড়িতে দম বন্ধ হয়ে আসছিল। ছেলেকে পাশে দাঁড়াতে দেখে সেই শূন্যতা ছাপিয়ে এক মাতৃত্বের আবেশ ভরে উঠল ওর বুকে। দুই হাত বাড়িয়ে ছেলেকে কাছে ডেকে নিল ঋতুপর্ণা। স্নেহময়ী মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা গুঁজে দিল আদি। মায়ের কাঁধে মাথা গুঁজে আদি খুঁজে বেড়ায় শীতের রাতের উত্তাপ। কত রাত জেগে ওর মা ওকে বুকে করে ঘুমিয়েছে, সেই কনকনে ঠাণ্ডার রাতের কথা ভেবে আদির বুকের মাঝে প্রশান্তির দেখা দেয়।
ছেলের চুলের মধ্যে বিলি কেটে মিষ্টি করে স্বান্তনা দিয়ে ঋতুপর্ণা উত্তর দিল, “ছাড় সোনা, হয়ত এটাই একটা এডভেঞ্চার।” ওর যেন খুব হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছিল আর হটাত করেই নিয়তি যেন সেই সুযোগ ওর হাতের মধ্যে নিয়ে ফেলে দিল। “জানিস বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়ে খুব হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছিল।” বুকের উচ্ছ্বাস এইবারে চেপে রাখল না ঋতুপর্ণা। আদির হাতখানি বুকের কাছে জড়িয়ে বলল, “সুভাষের সাথে শেষের দিকে মনে হত যেন আমি এক বন্দিনী। এই বন্দি জীবন থেকে অনেকবার ভেবেছি পালিয়ে যাবো, কিন্তু তোর মুখ চেয়ে কিছুতেই পালাতে পারলাম না। কি করব বল, নাড়ির টান যে ভীষণ টান রে বাবা।”
আদি মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “মা গো প্লিস, ওই পুরানো দিনের দুঃখের কথা কি এখন না বললেই নয়? এই ত মা আর ছেলে মিলে ভালোই আছি।”
মিষ্টি হেসে উত্তর দিল ঋতুপর্ণা, “তা আছি তবে এইভাবে নদীর তিরে দাঁড়িয়ে থাকলে সকালে গ্রামের লোকজন আমাদের লাশ পাবে।”
হিহি করে হেসে দিল আদি। দুইহাতে আস্টেপিস্টে মাকে জড়িয়ে বলে, “ইসস মা, তুমি থাকতে কেন মরতে যাবো।”
সামনে বিশাল চওড়া গঙ্গা নদীর কালো জল কুলুকুলু অনবরত বয়ে চলেছে মোহনার পানে। দুর দিগন্তে অন্য পাড়ে কালো কালো জঙ্গল পিচাশের মতন মাথা উঁচিয়ে। দুর থেকে কখন কোন শেয়ালের অথবা অন্য কোন বন্য প্রাণীর ডাক শোনা যায়। কালো আকাশে অসংখ্য তারার ঝিকিমিকি, মিটমিট করে নদীর তিরে ঘন আলিঙ্গনে বদ্ধ দুই নর নারীর দিকে চেয়ে চেয়ে দেখছে।
ঋতুপর্ণা আদির হাত খানা নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে শক্ত করে ধরে গায়ের চারপাশে জড়িয়ে নিল। কনকনে ঠান্ডা হাওয়া থেকে নিস্তার পেতে না ওর ক্লান্ত জীবন থেকে অব্যাহতি পেতে, সঠিক ভাবে ওর মন জানে না। মাকে জড়িয়ে ধরে ফাঁকা নদীর তিরে আদি যেন পুরানো ছোট বেলা খুঁজে পেল। আদির প্রচন্ড ইচ্ছে করে মায়ের ভেতরে সেঁধিয়ে যেতে, এই নির্মল প্রশান্ত ক্রোড়ে আবার নিজেকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। কালের চক্র কোনোদিন পেছনে চলে না কিন্তু আদি মন প্রান দিয়ে চাইছিল এই রাত যেন শেষ না হয়, মায়ের কোলেই মাথা রেখে বাকিটা সময় কাটিয়ে দেওয়ার।
ঋতুপর্ণা আদিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে স্নেহভরা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “কি রে বাবা ঠাণ্ডা লাগছে?”
আদির বাচ্চা ছেলের মতন ঠোঁট বেঁকিয়ে বলে মাথা দুলিয়ে বলে, “হ্যাঁ মা খুব ঠাণ্ডা লাগছে।”
নদীর তিরে এইভাবে দাঁড়িয়ে কনকনে ঠাণ্ডায় ওরা জমে যাবে। ঋতুপর্ণা এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখল। অনেক দূরে বেশ কয়েকটা ঘরের মতন জায়গায় আলো জ্বলছে। আদিকে ওই দুরের বাড়ি গুলো দেখিয়ে বলে, “ওই দেখ দূরে মনে হয় কিছু আছে। চল একবার ওইখানে গিয়ে দেখি, হয়ত রাস্তা পাওয়া যাবে কিম্বা হয়ত থাকার জায়গা পাওয়া যাবে।”
মায়ের দৃষ্টি অনুসরন করে আদি দেখল দূরে একটা রিসোর্টের মতন জায়গা। কনকনে ঠাণ্ডা থেকে নিস্তার পাবে এইবারে ভেবেই মন খুশিতে ভরে উঠল। মাকে হেসে বলল, “মনে হচ্ছে কোন রিসোর্ট।”
ঋতুপর্ণাও স্বস্তির শ্বাস নিল, এই ঠাণ্ডায় এইভাবে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা আর যাচ্ছে না, “যদি রিসোর্ট হয় তাহলে খুব ভালো কথা। ওইখানে তাহলে অন্তত রাতে থাকা যাবে।”
আদিও নেচে উঠল, “হুম, চল।”
গাড়ি নিয়ে এবড়ো খেবড়ো রাস্তা দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ চালিয়ে দুর রিসোর্টে গিয়ে পৌছাল ওরা। বেশি বড় নয়, নদীর তিরে ছিমছাম ছোট একটা রিসোর্ট। গেটে তালা দেওয়া, কে এই রাত বারোটায় এই গন্ড গ্রামের রিসোর্টে আসবে ভেবে হয়ত লোকেরা তালা লাগিয়ে এতখনে ঘুমিয়ে পড়েছে। আদি বেশ কয়েকবার হরন বাজালও। ঋতুপর্ণা বারন করার আগেই কেউ খুলছে না দেখে অগত্যা শেষ পর্যন্ত দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে গেল। ছেলের কান্ড দেখে ঋতুপর্ণা আর হাসি থামাতে পারে না। গাড়ি থেকে বেড়িয়ে চুপচাপ ছোট ছেলের কান্ড কারখানা দেখতে দেখতে মনে মনে হাসে। এই ছেলে কয়েকদিন আগে পর্যন্ত মা ছাড়া এক পা চলত না, হটাত করে ওর এক্সিডেন্ট ছেলেকে কত বড় করে তুলেছে। আদি দরজা ধাক্কাধাক্কি শুরু করে দিল। দরজার আওয়াজ পেয়ে একজন লোক বেড়িয়ে এলো। সেই লোকটাকে জিজ্ঞাসাবাদ করাতে জানিয়ে দিল যে রুম খালি পরে আছে। আদিকে সঙ্গে নিয়ে মেন গেট খুলে দিল লোকটা।
মেন গেট খুলতেই মায়ের কাছে দৌড়ে গেল আদি, “রুম পাওয়া গেছে।”
ঋতুপর্ণা মুচকি হেসে পেছনের লোকটাকে জিজ্ঞেস করে, “রুম ভালো ত, নাকি সব নোংরা?”
লোকটা ইনিয়ে বিনিয়ে হাত কচলে বলল, “না না ম্যাডাম খুব ভালো রুম একদম পরিষ্কার।” বলেই গাড়ির পেছনের দিকে চলে গেল, ভেবেছিল হয়ত এদের সাথে কোন জিনিস পত্রের ব্যাগ থাকবে।
আদি ওকে জানিয়ে দিল ওদের সাথে কোন ব্যাগ নেই। লোকটা একটু চমকে যেতেই ঋতুপর্ণা বলে, “আমরা আসলে গ্রামের ঠাকুর দেখতে এসে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি। তা বড় রাস্তা এখান থেকে কতদুরে।”
উত্তরে লোকটা অন্যদিকের একটা রাস্তা দেখিয়ে হাইওয়ে ধরার দিক বলে দেয়।
লোকটা রুম দেখিয়ে দিয়ে চলে যেতে উদ্যত হতেই ঋতুপর্ণা জিজ্ঞেস করে কিছু খাবারের বন্ডবস্ত করা যাবে কি না। প্রতিউত্তরে একটু হেসে হাত কচলে লোকটা জানায়, শুধু মাত্র নুডুলস, অমলেট, চিকেন সুপ আর কোল্ড ড্রিঙ্কস ছাড়া এত রাতে আর কিছুই পাওয়া যাবে না। ঋতুপর্ণা একবার আদির দিকে তাকিয়ে লোকটাকে সব কিছুই আনতে অনুরোধ করে। অনেকক্ষণ ধরেই পেটে কিছুই পড়েনি আর নদীর কনকনে বাতাসে হাড় পর্যন্ত কাঁপিয়ে তুলেছে। এই রাতে অন্তত চিকেন সুপ আর ডিম খেলে একটু শরীর গরম হয়ে যাবে। লোকটা মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দেয় আধা ঘন্তার মধ্যে খাবার তৈরি করে নিয়ে আসবে।
হোটেলের রুমটা বেশি বড় নয় তবে বেশি ছোট নয়, ছিমছাম ছোট রিসোর্ট। ঢোকার সময়ে দেখেছে, আশে পাশে আরো দুটো রিসোর্ট আছে। গঙ্গার তিরে আজকাল লোকেরা সঙ্গিনীদের নিয়ে সময় কাটাতে আসে, তবে বেশির ভাগ সকালে এসে বিকেলে ফিরে যায়। রাত কাটাতে খুব কম সংখ্যক লোক আসে এই নির্জন নিরালায়। ধবধবে সাদা নরম বিছানা দেখে ঋতুপর্ণার ঘুমের আবেশ জেগে ওঠে। রাতের পোশাক কিছুই নেই, কি করা যাবে, হটাত করেই পথ ভুলে এই নির্জন রিসোর্টে এসে পড়েছে। আদি রুমে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে নিল, এই সব ছোট খাটো রিসোর্টে মাঝে মাঝে লুকানো ক্যামেরা থাকে, সেটা একটা বড় ভয়। আদি আগেও কয়েকবার তনিমাকে নিয়ে এমন রিসোর্টে গেছে তবে রুমে ঢুকেই আগে সব জায়গা মোবাইল ঘুরিয়ে নিরীক্ষণ করে নেয়।
ঋতুপর্ণা কিছু বুঝতে না পেরে ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি দেখছিস রে?”
অনেকক্ষণ এদিকে ওদিকে মোবাইল নিয়ে নিরীক্ষণ করে আদি মাকে উত্তর দেয়, “না মানে একটু চেক করছিলাম।” কি করে বলে মাকে যে তনিমাকে নিয়ে একবার একটা রিসোর্টে গিয়ে এই ধরনের ঝামেলায় পড়েছিল। তখুনি সেই রিসোর্ট ছেড়ে অন্য একটা রিসোর্টে চলে গিয়েছিল।
ঋতুপর্ণা কিছু না বুঝেই আচ্ছা বলে মাথা দুলিয়ে বড় জানালার দিকে এগিয়ে গেল। আদি পেছন থেকে মায়ের দেহ বল্লরীর দিকে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে দেখল। শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে ওর অসামান্য রূপসী মায়ের তীব্র আকাঙ্ক্ষিত দেহ পল্লব। মনে হল একটু জড়িয়ে ধরে, ওই দেহের ভাঁজে নিজেকে লুকিয়ে ফেলে। খোঁপার মধ্যে নাক ডূবিয়ে মায়ের গায়ের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে।
পা টিপে টিপে মায়ের পেছনে দাঁড়িয়ে নিচু গলায় জিজ্ঞেস করে, “তোমার কি হয়েছে গো? অমন থমথমে কেন?”
লাল নরম ঠোঁটে মিষ্টি মোহিনী হাসি টেনে ঋতুপর্ণা উত্তর দেয়, “কিছুই হয়নি।”
আসলে ওর হৃদয় দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে। আদি কি ইচ্ছে করেই ওর সাথে রাত কাটাতে পথ ভুল করেছে না সত্যি সত্যি নিয়তি ওদের পথ ভুলিয়ে এই নির্জনে একান্তে ওদেরকে এনে ফেলেছে। ছেলের চোখের দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। ছেলের চোখের ভাষায় ঋতুপর্ণা দেখে যে ছেলে সত্যি সত্যি নিয়তির কাছে হার মেনে এইখানে এসে পড়েছে। নিয়তির পরিহাসের কাছে নিজেকে বিসর্জন দেওয়া ছাড়া আর কোন গতি নেই ওর।
আদির বুকে হাত দিয়ে একটু ঠেলে বলে, “তুই শুয়ে পর আমি একটু হাত মুখ ধুয়ে আসছি।”
বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখল ঋতুপর্ণা, একটাই বড় কম্বল। মনে মনে হেসে ফেলল, এই একটা বড় কম্বলের মধ্যে এক প্রাপ্ত বয়স্ক নর নারী একসাথে নিভৃত রাত কাটাবে। ভাবতেই ওর শরীর বেয়ে ভীষণ ভাবে শিহরন খেলে যায়। আদির দিকে তাকিয়ে দেখে ঋতুপর্ণা। আদি মাথা চুলকে বিছানার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দেয়। ঋতুপর্ণা দাঁতের মাঝে কড়ে আঙ্গুল কেটে আদির গালে আলতো চাপড় মেরে দূরে সরিয়ে দেয়। মায়ের ঠোঁটের মিষ্টি হাসি আর চোখের ঝিলিক আদিকে উন্মত্ত প্রায় করে তোলে।
ঋতুপর্ণা আনত লাজুক নয়নে আদিকে বলে, “সর, সর, তুই বাথরুমে না গেলে অন্তত আমাকে যেতে দে।”
আদি বুক চাপড়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “না না আমি আগে যাচ্ছি, বড্ড পেচ্ছাপ পেয়েছে।” বলেই এক দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে পরে।
আদি কথা না বাড়িয়ে এক্সেলেটারে পা চেপে দিল। গাড়ি হুহু করে হাওয়া কেটে শহর ছাড়িয়ে হাইওয়ে ধরে অনির্দিষ্টের পানে ধেয়ে চলল। ঘন কালো আঁধার কেটে ঝড়ের গতিতে গাড়ি ধেয়ে চলে সেই সাথে ঋতুপর্ণা আর আদির বুকের অসীম চাহিদা বেড়ে চলে। এই আঁধার রাত যেন শেষ না হয়। আদির ঊরু জোড়া টানটান হয়ে যায়, পায়ের মাঝের পুরুষাঙ্গ অনেক আগেই ফনা তুলে ভীষণ ভাবে ফুঁসছে, জাঙ্গিয়া প্যান্ট ফাটিয়ে বেড়িয়ে আসতে চাইছে। পাশে বসা সুন্দরীর ক্রোড়ে হারিয়ে যেতে বড্ড ইচ্ছে করছে। মা গো তোমার ছেলে একবারের জন্য তোমার কোলে ফিরতে চায়। ওর নাকে ভেসে আসে মায়ের গায়ের তীব্র মাদকতাময় ঘ্রান। রক্তের উথাল পাথাল তরঙ্গে নিজেকে আর শান্ত করতে পারে না আদির দেহ। সামনে একটা ছোট বসতির দেখা পেতেই ঋতুপর্ণা আদিকে গ্রামের মধ্যে গাড়ি নিয়ে যেতে অনুরোধ করে। মায়ের কথা ফেলতে পারে না আদি, বড় রাস্তা ছাড়িয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই কাঁচা রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়ল।
রাত তখন দশটা বাজে, গ্রামের পুজো মন্ডপে তখন লোকজনের ভিড়। ওদের গাড়ি থেকে নামতে দেখে অনেকের চোখ ওদের দিকে চলে যায়। নাম না জানা এক গ্রামের মধ্যে শহর থেকে কেউ পুজো দেখতে আসবে সেটা হয়ত গ্রামের লোকজন ভাবতে পারে নি। নবমীর ঠাণ্ডা রাত্রে আদির হাত ধরে ঋতুপর্ণা গাড়ি থেকে বেড়িয়ে মন্ডপে ঢুকে পরে। আশে পাশের কিছু বাচ্চা ছেলে মেয়েদের চোখে অপরিসীম জিজ্ঞাস্য। ঋতুপর্ণা একটা বাচ্চাকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস গ্রামের নাম জিজ্ঞেস করাতে লজ্জা পেয়ে সেই বাচ্চাটা পালিয়ে যায়। ওদের দেখে আদি আর ঋতুপর্ণা দুইজনেই হেসে ফেলে।
গ্রামের ছোট প্যান্ডালের মূর্তি, একচালা ঢাকের সাজে শোলা দিয়ে সজ্জিত মহামায়া দেবী দুর্গার মূর্তি। অনেকক্ষণ ধরে ঋতুপর্ণা সেই দেবী দুর্গার মূর্তির মুখ মন্ডলের দিকে তাকিয়ে রইল। চোখের কোল ধিরে ধিরে ঝাপসা হয়ে উঠল। পাশে দাঁড়িয়ে ছেলেটার দিকে তাকাতে দ্বিধাবোধ করে। ওকে? আদির মাতৃময়ী স্নেহভরা জননী না এই সুঠাম পুরুষের নিশা যামিনীর সঙ্গিনী অপরূপা প্রণয়িনী। উত্তর জানা নেই ঋতুপর্ণার। দেবী প্রতিমার সামনে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না ঋতুপর্ণা, বুক ছাপিয়ে নিষিদ্ধ প্রেমের বিষাক্ত দংশন ওকে ছিঁড়ে ফেলে।
আদি চুপচাপ মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে। এই নারী ওকে জন্ম দেয়নি, আসল জননী যে ওকে জন্ম দিয়েছিল সে জন্ম দিয়েই ওকে ছেড়ে চলে গেছে। এই অকাঠ সত্য ওর মা জানে না। ওর পাশে দাঁড়িয়ে স্নেহভরা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে যে রমণী সে ওর মা, বুকের দুধ খাইয়ে, নিজের আঁচলের তলায় সর্বদা ওর রক্ষণাবেক্ষণ করে গেছে সারা জীবন ধরে। এই নারী নিজের আগে ওকে কথা চিন্তা করেছে। এমনকি হস্পিটালের বেডে শুয়ে চোখ খুলেই ওর কথাই চেঁচিয়ে উঠেছিল। যদি এই নারী কোনোদিন জানতে পারে যে আদি ওর ছেলে নয় তাহলে কি মায়ের বুক ভরা ভালোবাসা হারিয়ে যাবে। তাই বলে সেই মাকে নিজের প্রণয়িনীর মতন সাজিয়ে, নিজের প্রেমিকার মতন করে ক্রোড়ে নিয়ে ভালোবাসার রঙ্গে রঞ্জিত করে তুলবে।
ধিরে ধিরে দেবী প্রতিমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে আদিকে নিচু গলায় ঋতুপর্ণা বলে, “চল এইবারে বাড়ি ফিরি। অনেক রাত হল।” ছেলের কথা ভাবতে ভাবতে আর নিজেদের এই নিষিদ্ধ ঘন সম্পর্কের কথা ভাবতে ভাবতে বিষাক্ত হয়ে উঠল ওর মন। থমথমে মুখ করে আদির দিকে না তাকিয়ে গাড়ির দিকে পা বাড়িয়ে দিল।
আদি মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দিল এইবারে বাড়ির দিকে যাত্রা করা উচিত। কথা না বাড়িয়ে দুইজনে গাড়িতে উঠে গেল। আদিও ঘড়ি দেখল, রাত এগারোটা বাজে। মায়ের হটাত করে থমথমে চেহারা দেখে আদি কি বলবে কিছুই ভেবে পেল না। একটু আগেই কত হাসি খুশি ছিল, কত গল্প করতে করতে ওর হাত জড়িয়ে, নাক মুখ বেঁকিয়ে সারা রাস্তা এলো। হটাত করে এই প্রতিমা দেখে এমন কি হয়ে গেল যে মা কথা বলতে ভুলে গেল। আদি মাথা নিচু করে ড্রাইভারের সিটে বসে পরে। রাস্তা ঠিকঠাক থাকলে বাড়ি পৌঁছাতে পৌঁছাতে আরো আড়াই ঘন্টা লেগে যাবে।
অন্যমনস্ক হয়ে গাড়ি চালাতে চালাতে গ্রাম থেকে বেড়িয়ে অন্ধকার রাস্তা ধরে কিছুদুর এগিয়ে গেল। বেশ কিছুদুর এগিয়ে যাওয়ার পরে আদি বুঝতে পারল যে রাস্তা ধরে ওরা গ্রামে ঢুকেছে এই রাস্তা সেই রাস্তা নয়। এর মাঝে কত ছোট ছোট রাস্তা কত বাঁক পেরিয়ে এসেছে সঠিক জানা নেই। দুইপাশে ধুধু করছে খেত, তার মাঝে কাঁচা গ্রামের রাস্তা। রাস্তা এক নদীর তিরে এসে শেষ হয়ে গেছে। সামনে বয়ে চলেছে গঙ্গা নদী।
আদি গাড়ি দাঁড় করিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখল। ঋতুপর্ণা জানালায় হাত রেখে তার ওপরে মাথা রেখে অনেক আগেই চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ক্লান্তিটা শরীরের নয়, ক্লেদটা মনের গহীন কোনায় উপচে উঠে এসেছিল।
অন্ধকারে গাড়ি দাঁড় করাতেই ঋতুপর্ণার ঘুম ভেঙ্গে গেল। আদির দিকে ঘুম জড়ানো চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কিরে হাইওয়ে এসে গেছি নাকি?”
আদি মুখ ব্যাজার করে উত্তর দিল, “না মা রাস্তা গুলিয়ে ফেলেছি।”
হটাত এক দমকা ঠাণ্ডা হাওয়ায় ঋতুপর্ণার দেহ কেঁপে উঠল। মাকে ঠাণ্ডায় কাঁপতে দেখে আদি নিজের ব্লেজার খুলে মায়ের দেহে জড়িয়ে দিল। বাইশ বছরে সেই প্রথম বার ছেলের হাতের ছোঁয়ায় বিষাক্ত দংশনের ছোবল অনুভব করল ঋতুপর্ণা। আদির ব্লেজার গায়ে যেন কাঁটার পরিধানের মতন লাগলো ঋতুপর্ণার। তাও সেই অনুভুতি লুকিয়ে চোখ কচলে ম্লান হাসি দিয়ে আদিকে বলল, “আর কি হবে, গাড়ি ব্যাক কর। গ্রামে ফিরে কাউকে জিজ্ঞেস করে নেব।”
আদি ঘড়ি দেখল, এগারোটা প্রায় বাজে। আঁকা বাঁকা পথে গাড়ি পেছনে কোনোমতে ঘুরিয়ে আবার গ্রামের দিকে যাত্রা শুরু করে দিল। কিছু দুর যাওয়ার পরে পথ হারিয়ে মায়ের দিকে অসহায় অবস্থায় তাকিয়ে বলল, “মা মনে পড়ছে না কোন বাঁকে টার্ন নিয়েছিলাম।”
বুকের ধুকপুকানি বেড়ে উঠল ঋতুপর্ণার, শেষ পর্যন্ত এই নিরালা নির্জনে রাত কাটাতে হবে নাকি? কোথায় আছে কিছুই জানা নেই। ম্লান হেসে আদির মাথার চুলে বিলি কেটে বলল, “পথ কেউই হারায় না রে পাগল। হয়ত এটাই আমাদের কপালে লেখা ছিল।”
ওর মা ঠিক কি কথা বলতে চাইছে ঠিক বোধগম্য হল না আদির। ঋতুপর্ণা ভালো ভাবেই জানে এর অর্থ কি। হয়ত এই পথ হারিয়েই এক নতুন পথের সন্ধান খুঁজে পাবে। হয়ত এটাই ওদের অদৃষ্টে লেখা, হয়ত এই নিরালা নির্জনে অন্ধকার রাতের আকাশের জ্বলন্ত তারা ওদের এই নিষিদ্ধ সম্পর্কের সাথী হবে। ম্লান হেসে ছলছল নিস্পলক চোখে ছেলের দিকে একভাবে তাকিয়ে রইল ঋতুপর্ণা। আদি মায়ের চোখের কোলের অশ্রুকণার ঝিলিক দেখে ভুরু কুঁচকে ইশারায় প্রশ্ন করে, কি হয়েছে। ম্লান হেসে মাথা দুলিয়ে ঋতুপর্ণা জানায়, কিছু না এমনি।
গাড়ির দরজা খুলে বেড়িয়ে এলো ঋতুপর্ণা। নদীর থেকে ভেসে আসা ঠান্ডা জোলো বাতাস ওর চিত্ত সিঞ্চন করে দেয়। হুহু করে বয়ে আসা ঠাণ্ডা বাতাসে কেঁপে ওঠে রমণীর নধর অঙ্গ। মায়ের মুখের অচেনা ম্লান হাসির অর্থ হাতড়ে খুঁজতে চেষ্টা করে আদি। কিন্তু মায়ের ওই ঝাপসা দৃষ্টি, নরম ঠোঁটের স্মিত হাসি আর থমথমে চেহারার অব্যাক্ত বানী ওর ছোট মস্তিকে বোধগম্য হয় না।
আদি নেমে পরে গাড়ি থেকে। ধিরে ধিরে মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে নরম গলায় জিজ্ঞেস করে, “তোমার কি হয়েছে, মা?”
ঠাণ্ডা নদীর বাতাস ঋতুপর্ণার শরীর কাঁপিয়ে দেয়। ছেলের দেওয়া ব্লেজার কোনরকমে গায়ের সাথে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে নিল ঠাণ্ডা থেকে বাঁচার জন্য। ছেলে পাশে দাঁড়াতেই যেন গরম বিষাক্ত ছ্যাকা খেল। চোয়াল চেপে অতি কষ্টে বিচলিত চিত্ত লুকিয়ে মিষ্টি হেসে আদিকে বলল, “তাহলে এই গাড়িতেই রাত কাটাতে হবে মনে হচ্ছে।”
আদি মাথা চুলকে এদিক ওদিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে বলল, “জানি না মা, সরি ভুল করে ফেলেছি।”
নদীর কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস আদিকেও ভীষণ ভাবে কাঁপিয়ে তোলে। মায়ের আদর পাওয়ার আকাঙ্খায় মায়ের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পরে আদি। এতক্ষণ ঋতুপর্ণার বুকের ভেতরটা বিশাল এক শুন্যতায় ভরে উঠেছিল। গাড়িতে দম বন্ধ হয়ে আসছিল। ছেলেকে পাশে দাঁড়াতে দেখে সেই শূন্যতা ছাপিয়ে এক মাতৃত্বের আবেশ ভরে উঠল ওর বুকে। দুই হাত বাড়িয়ে ছেলেকে কাছে ডেকে নিল ঋতুপর্ণা। স্নেহময়ী মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা গুঁজে দিল আদি। মায়ের কাঁধে মাথা গুঁজে আদি খুঁজে বেড়ায় শীতের রাতের উত্তাপ। কত রাত জেগে ওর মা ওকে বুকে করে ঘুমিয়েছে, সেই কনকনে ঠাণ্ডার রাতের কথা ভেবে আদির বুকের মাঝে প্রশান্তির দেখা দেয়।
ছেলের চুলের মধ্যে বিলি কেটে মিষ্টি করে স্বান্তনা দিয়ে ঋতুপর্ণা উত্তর দিল, “ছাড় সোনা, হয়ত এটাই একটা এডভেঞ্চার।” ওর যেন খুব হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছিল আর হটাত করেই নিয়তি যেন সেই সুযোগ ওর হাতের মধ্যে নিয়ে ফেলে দিল। “জানিস বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময়ে খুব হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছিল।” বুকের উচ্ছ্বাস এইবারে চেপে রাখল না ঋতুপর্ণা। আদির হাতখানি বুকের কাছে জড়িয়ে বলল, “সুভাষের সাথে শেষের দিকে মনে হত যেন আমি এক বন্দিনী। এই বন্দি জীবন থেকে অনেকবার ভেবেছি পালিয়ে যাবো, কিন্তু তোর মুখ চেয়ে কিছুতেই পালাতে পারলাম না। কি করব বল, নাড়ির টান যে ভীষণ টান রে বাবা।”
আদি মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “মা গো প্লিস, ওই পুরানো দিনের দুঃখের কথা কি এখন না বললেই নয়? এই ত মা আর ছেলে মিলে ভালোই আছি।”
মিষ্টি হেসে উত্তর দিল ঋতুপর্ণা, “তা আছি তবে এইভাবে নদীর তিরে দাঁড়িয়ে থাকলে সকালে গ্রামের লোকজন আমাদের লাশ পাবে।”
হিহি করে হেসে দিল আদি। দুইহাতে আস্টেপিস্টে মাকে জড়িয়ে বলে, “ইসস মা, তুমি থাকতে কেন মরতে যাবো।”
সামনে বিশাল চওড়া গঙ্গা নদীর কালো জল কুলুকুলু অনবরত বয়ে চলেছে মোহনার পানে। দুর দিগন্তে অন্য পাড়ে কালো কালো জঙ্গল পিচাশের মতন মাথা উঁচিয়ে। দুর থেকে কখন কোন শেয়ালের অথবা অন্য কোন বন্য প্রাণীর ডাক শোনা যায়। কালো আকাশে অসংখ্য তারার ঝিকিমিকি, মিটমিট করে নদীর তিরে ঘন আলিঙ্গনে বদ্ধ দুই নর নারীর দিকে চেয়ে চেয়ে দেখছে।
ঋতুপর্ণা আদির হাত খানা নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে শক্ত করে ধরে গায়ের চারপাশে জড়িয়ে নিল। কনকনে ঠান্ডা হাওয়া থেকে নিস্তার পেতে না ওর ক্লান্ত জীবন থেকে অব্যাহতি পেতে, সঠিক ভাবে ওর মন জানে না। মাকে জড়িয়ে ধরে ফাঁকা নদীর তিরে আদি যেন পুরানো ছোট বেলা খুঁজে পেল। আদির প্রচন্ড ইচ্ছে করে মায়ের ভেতরে সেঁধিয়ে যেতে, এই নির্মল প্রশান্ত ক্রোড়ে আবার নিজেকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে। কালের চক্র কোনোদিন পেছনে চলে না কিন্তু আদি মন প্রান দিয়ে চাইছিল এই রাত যেন শেষ না হয়, মায়ের কোলেই মাথা রেখে বাকিটা সময় কাটিয়ে দেওয়ার।
ঋতুপর্ণা আদিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে স্নেহভরা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “কি রে বাবা ঠাণ্ডা লাগছে?”
আদির বাচ্চা ছেলের মতন ঠোঁট বেঁকিয়ে বলে মাথা দুলিয়ে বলে, “হ্যাঁ মা খুব ঠাণ্ডা লাগছে।”
নদীর তিরে এইভাবে দাঁড়িয়ে কনকনে ঠাণ্ডায় ওরা জমে যাবে। ঋতুপর্ণা এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখল। অনেক দূরে বেশ কয়েকটা ঘরের মতন জায়গায় আলো জ্বলছে। আদিকে ওই দুরের বাড়ি গুলো দেখিয়ে বলে, “ওই দেখ দূরে মনে হয় কিছু আছে। চল একবার ওইখানে গিয়ে দেখি, হয়ত রাস্তা পাওয়া যাবে কিম্বা হয়ত থাকার জায়গা পাওয়া যাবে।”
মায়ের দৃষ্টি অনুসরন করে আদি দেখল দূরে একটা রিসোর্টের মতন জায়গা। কনকনে ঠাণ্ডা থেকে নিস্তার পাবে এইবারে ভেবেই মন খুশিতে ভরে উঠল। মাকে হেসে বলল, “মনে হচ্ছে কোন রিসোর্ট।”
ঋতুপর্ণাও স্বস্তির শ্বাস নিল, এই ঠাণ্ডায় এইভাবে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা আর যাচ্ছে না, “যদি রিসোর্ট হয় তাহলে খুব ভালো কথা। ওইখানে তাহলে অন্তত রাতে থাকা যাবে।”
আদিও নেচে উঠল, “হুম, চল।”
গাড়ি নিয়ে এবড়ো খেবড়ো রাস্তা দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ চালিয়ে দুর রিসোর্টে গিয়ে পৌছাল ওরা। বেশি বড় নয়, নদীর তিরে ছিমছাম ছোট একটা রিসোর্ট। গেটে তালা দেওয়া, কে এই রাত বারোটায় এই গন্ড গ্রামের রিসোর্টে আসবে ভেবে হয়ত লোকেরা তালা লাগিয়ে এতখনে ঘুমিয়ে পড়েছে। আদি বেশ কয়েকবার হরন বাজালও। ঋতুপর্ণা বারন করার আগেই কেউ খুলছে না দেখে অগত্যা শেষ পর্যন্ত দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে গেল। ছেলের কান্ড দেখে ঋতুপর্ণা আর হাসি থামাতে পারে না। গাড়ি থেকে বেড়িয়ে চুপচাপ ছোট ছেলের কান্ড কারখানা দেখতে দেখতে মনে মনে হাসে। এই ছেলে কয়েকদিন আগে পর্যন্ত মা ছাড়া এক পা চলত না, হটাত করে ওর এক্সিডেন্ট ছেলেকে কত বড় করে তুলেছে। আদি দরজা ধাক্কাধাক্কি শুরু করে দিল। দরজার আওয়াজ পেয়ে একজন লোক বেড়িয়ে এলো। সেই লোকটাকে জিজ্ঞাসাবাদ করাতে জানিয়ে দিল যে রুম খালি পরে আছে। আদিকে সঙ্গে নিয়ে মেন গেট খুলে দিল লোকটা।
মেন গেট খুলতেই মায়ের কাছে দৌড়ে গেল আদি, “রুম পাওয়া গেছে।”
ঋতুপর্ণা মুচকি হেসে পেছনের লোকটাকে জিজ্ঞেস করে, “রুম ভালো ত, নাকি সব নোংরা?”
লোকটা ইনিয়ে বিনিয়ে হাত কচলে বলল, “না না ম্যাডাম খুব ভালো রুম একদম পরিষ্কার।” বলেই গাড়ির পেছনের দিকে চলে গেল, ভেবেছিল হয়ত এদের সাথে কোন জিনিস পত্রের ব্যাগ থাকবে।
আদি ওকে জানিয়ে দিল ওদের সাথে কোন ব্যাগ নেই। লোকটা একটু চমকে যেতেই ঋতুপর্ণা বলে, “আমরা আসলে গ্রামের ঠাকুর দেখতে এসে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি। তা বড় রাস্তা এখান থেকে কতদুরে।”
উত্তরে লোকটা অন্যদিকের একটা রাস্তা দেখিয়ে হাইওয়ে ধরার দিক বলে দেয়।
লোকটা রুম দেখিয়ে দিয়ে চলে যেতে উদ্যত হতেই ঋতুপর্ণা জিজ্ঞেস করে কিছু খাবারের বন্ডবস্ত করা যাবে কি না। প্রতিউত্তরে একটু হেসে হাত কচলে লোকটা জানায়, শুধু মাত্র নুডুলস, অমলেট, চিকেন সুপ আর কোল্ড ড্রিঙ্কস ছাড়া এত রাতে আর কিছুই পাওয়া যাবে না। ঋতুপর্ণা একবার আদির দিকে তাকিয়ে লোকটাকে সব কিছুই আনতে অনুরোধ করে। অনেকক্ষণ ধরেই পেটে কিছুই পড়েনি আর নদীর কনকনে বাতাসে হাড় পর্যন্ত কাঁপিয়ে তুলেছে। এই রাতে অন্তত চিকেন সুপ আর ডিম খেলে একটু শরীর গরম হয়ে যাবে। লোকটা মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দেয় আধা ঘন্তার মধ্যে খাবার তৈরি করে নিয়ে আসবে।
হোটেলের রুমটা বেশি বড় নয় তবে বেশি ছোট নয়, ছিমছাম ছোট রিসোর্ট। ঢোকার সময়ে দেখেছে, আশে পাশে আরো দুটো রিসোর্ট আছে। গঙ্গার তিরে আজকাল লোকেরা সঙ্গিনীদের নিয়ে সময় কাটাতে আসে, তবে বেশির ভাগ সকালে এসে বিকেলে ফিরে যায়। রাত কাটাতে খুব কম সংখ্যক লোক আসে এই নির্জন নিরালায়। ধবধবে সাদা নরম বিছানা দেখে ঋতুপর্ণার ঘুমের আবেশ জেগে ওঠে। রাতের পোশাক কিছুই নেই, কি করা যাবে, হটাত করেই পথ ভুলে এই নির্জন রিসোর্টে এসে পড়েছে। আদি রুমে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে নিল, এই সব ছোট খাটো রিসোর্টে মাঝে মাঝে লুকানো ক্যামেরা থাকে, সেটা একটা বড় ভয়। আদি আগেও কয়েকবার তনিমাকে নিয়ে এমন রিসোর্টে গেছে তবে রুমে ঢুকেই আগে সব জায়গা মোবাইল ঘুরিয়ে নিরীক্ষণ করে নেয়।
ঋতুপর্ণা কিছু বুঝতে না পেরে ওকে জিজ্ঞেস করে, “কি দেখছিস রে?”
অনেকক্ষণ এদিকে ওদিকে মোবাইল নিয়ে নিরীক্ষণ করে আদি মাকে উত্তর দেয়, “না মানে একটু চেক করছিলাম।” কি করে বলে মাকে যে তনিমাকে নিয়ে একবার একটা রিসোর্টে গিয়ে এই ধরনের ঝামেলায় পড়েছিল। তখুনি সেই রিসোর্ট ছেড়ে অন্য একটা রিসোর্টে চলে গিয়েছিল।
ঋতুপর্ণা কিছু না বুঝেই আচ্ছা বলে মাথা দুলিয়ে বড় জানালার দিকে এগিয়ে গেল। আদি পেছন থেকে মায়ের দেহ বল্লরীর দিকে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে দেখল। শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে ওর অসামান্য রূপসী মায়ের তীব্র আকাঙ্ক্ষিত দেহ পল্লব। মনে হল একটু জড়িয়ে ধরে, ওই দেহের ভাঁজে নিজেকে লুকিয়ে ফেলে। খোঁপার মধ্যে নাক ডূবিয়ে মায়ের গায়ের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে।
পা টিপে টিপে মায়ের পেছনে দাঁড়িয়ে নিচু গলায় জিজ্ঞেস করে, “তোমার কি হয়েছে গো? অমন থমথমে কেন?”
লাল নরম ঠোঁটে মিষ্টি মোহিনী হাসি টেনে ঋতুপর্ণা উত্তর দেয়, “কিছুই হয়নি।”
আসলে ওর হৃদয় দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে। আদি কি ইচ্ছে করেই ওর সাথে রাত কাটাতে পথ ভুল করেছে না সত্যি সত্যি নিয়তি ওদের পথ ভুলিয়ে এই নির্জনে একান্তে ওদেরকে এনে ফেলেছে। ছেলের চোখের দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। ছেলের চোখের ভাষায় ঋতুপর্ণা দেখে যে ছেলে সত্যি সত্যি নিয়তির কাছে হার মেনে এইখানে এসে পড়েছে। নিয়তির পরিহাসের কাছে নিজেকে বিসর্জন দেওয়া ছাড়া আর কোন গতি নেই ওর।
আদির বুকে হাত দিয়ে একটু ঠেলে বলে, “তুই শুয়ে পর আমি একটু হাত মুখ ধুয়ে আসছি।”
বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখল ঋতুপর্ণা, একটাই বড় কম্বল। মনে মনে হেসে ফেলল, এই একটা বড় কম্বলের মধ্যে এক প্রাপ্ত বয়স্ক নর নারী একসাথে নিভৃত রাত কাটাবে। ভাবতেই ওর শরীর বেয়ে ভীষণ ভাবে শিহরন খেলে যায়। আদির দিকে তাকিয়ে দেখে ঋতুপর্ণা। আদি মাথা চুলকে বিছানার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে দেয়। ঋতুপর্ণা দাঁতের মাঝে কড়ে আঙ্গুল কেটে আদির গালে আলতো চাপড় মেরে দূরে সরিয়ে দেয়। মায়ের ঠোঁটের মিষ্টি হাসি আর চোখের ঝিলিক আদিকে উন্মত্ত প্রায় করে তোলে।
ঋতুপর্ণা আনত লাজুক নয়নে আদিকে বলে, “সর, সর, তুই বাথরুমে না গেলে অন্তত আমাকে যেতে দে।”
আদি বুক চাপড়ে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, “না না আমি আগে যাচ্ছি, বড্ড পেচ্ছাপ পেয়েছে।” বলেই এক দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে পরে।