30-09-2020, 11:13 PM
পর্ব এগারো (#14)
অন্য রুমে তখন সুপর্ণা আর তিস্তা, ঋতুপর্ণাকে সাজাতে ব্যাস্ত। ঋতুপর্ণা সোনালি পাড়ের সাদা রঙের সাউথ সিল্কের শাড়ি পরে তৈরি।
তিস্তা ওর শাড়ি পড়ার ধরন দেখে হাঁ হাঁ করে ওঠে, “এই ঋতুদি একি করেছ। না না, শকুন্তলা কি শাড়ির আঁচল নিত নাকি? না না, শাড়ির আঁচল দিও না।” সুপর্ণাও তিস্তার কথায় সায় দেয়, শাড়ির আঁচল দিতে হবে না।
লজ্জিত হয়ে ঋতুপর্ণা ওদের ধমক দিয়ে বলে, “ধ্যাত আঁচল ছাড়া শাড়ি কি করে পড়ব?”
সুপর্ণা ওর দিকে এগিয়ে এসে বলে, “খুলে ফেল আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।” বলে ওর আঁচল টেনে বুকের ওপর থেকে সরিয়ে দিয়ে ঘাগরার মতন শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে বলল, “এইভাবে শাড়ি পরত শকুন্তলা।”
ঋতুপর্ণা নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখে, ইসসস, ঘর ভর্তি লোকের সামনে এইভাবে যাবে নাকি? ওর উদ্ধত স্তন জোড়া আঁটো সাদা কাঁচুলির মধ্যে হাঁসফাঁস করে উঠছে, শাড়ির কুঁচি নাভির বেশ নিচে, ছেলের দেওয়া কোমর বিছা ওর কোমরের সাথে ওতপ্রোত ভাবে পেঁচিয়ে রয়েছে। মা ছেলের নামের আদ্যাখরের লকেটটা নাভির একটু নিচের দিক থেকে ঝুলছে। লাস্যময়ী উদ্ভিন্ন যৌবনবতী রূপসীকে দেখে মুনি ঋষিদের আসন টলে যাওয়ার উপক্রম। তিস্তা ওর পেছনে দাঁড়িয়ে কাঁচুলির গিঁটটা আরো শক্ত করে টেনে বেঁধে দিল।
সুপর্ণা মুচকি হেসে ওকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ গো তোমার সেই নতুন পুরুষকে আজকে ডাকো নি?”
তিস্তা সেই কথা শুনে হাঁ হাঁ করে উঠল, “কি কে গো?” ঋতুপর্ণাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে, “কই আমাকে ত জানাও নি যে তুমি প্রেমে পড়েছ?” বাচ্চা মেয়ের মতন আব্দার করে ওঠে, “এই প্লিস বল না কে?”
ঋতুপর্ণা মুচকি হেসে ওদের প্রশ্নের জাল কাটিয়ে উত্তর দেয়, “কেউ না সেদিন মজা করছিলাম সুপর্ণার সাথে।”
সুপর্ণা চোখ টিপে বলে, “মোটেই নয়। সেদিন তোমার লাজুক ব্লাসিং দেখেই বুঝে গেছিলাম তোমার বুকের মধ্যে নতুন কেউ এসে গেছে।” সুপর্ণা জোর করে চেপে ধরে ঋতুপর্ণাকে, “এই ঋতুদি বল না সেই মানুষ কে।”
তিস্তা ওকে আরো উত্যক্ত করে বলে, “বলো না হলে কিন্তু আমার হাত থেকে রেহাই পাবে না।”
নিরুপায় ঋতুপর্ণা কি করবে খানিকক্ষণ ভেবে অতি সুকৌশলে উত্তর দেয়, “আছে একজন তবে এখুনি বলতে পারছি না।”
তিস্তা চোখ বড় বড় করে বলে, “বাপরে তাহলে অবশেষে নটে গাছ মুরল। লজ্জায় ত চেহারা লাল হয়ে গেছে, তা কতদুর এগিয়েছে তোমাদের সম্পর্ক।” চোখ টিপে ঋতুপর্ণার গাল টিপে জিজ্ঞেস করে, “কিছু খোলা খুলি চটকা চটকি হল না খালি শুকনো গাল গল্প। আর কতদিন একা একা বিছানা কামড়ে পরে থাকবে?” বলেই আলতো করে ঋতুপর্ণার পায়ের মাঝে হাত বুলিয়ে দেয়।
ঋতুপর্ণা কিলবিল করে উঠে তিস্তার হাত সরিয়ে দিয়ে মৃদু বকুনি দিয়ে বলে, “সর এখান থেকে। আমি অন্তত তোর মতন হ্যাঙলা নই, যাকে তাকে দেখেই গাছে চড়ে যাবো।”
সুপর্ণা ঠোঁট চেপে হেসে বলে, “আচ্ছা বাবা আচ্ছা। তবে ঋতুদি গাছের দর্শন না করে কিন্তু গাছে চড়তে যেও না।” বলেই একগাল হেসে দিল। “সেদিন যে তোমাকে এত সাজিয়ে দিলাম তার কি কোন ফল হল?”
সলজ্জ আনত নয়নে মুখমন্ডলে রক্তিমাভা ফুটিয়ে মাথা দুলিয়ে বলে, “তা একটু হয়েছে।” তিস্তা আর সুপর্ণার বাক্যবাণে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে ঋতুপর্ণা। পরখনেই হাসি থামিয়ে একটু গম্ভির হয়ে বলে, “এই তোমরা আর ওই নিয়ে ঘাটাঘাটি কর না ত।” কিন্তু ওদের এই দুষ্টু মিষ্টি কথাবার্তা বারেবারে ঋতুপর্ণাকে ওর ছেলের কথা মনে করিয়ে দেয়। সাজ গোজ এক উপলখ্য মাত্র, মা আর ছেলের মধ্যে নিবিড় চিরন্তন প্রেমের টান আগেই জেগে উঠেছে। হৃদয়ের বাঁধনের সাথে সাথে দেহের বাঁধন হতেই বাকি।
সুপর্ণা হেসে বলে, “যাক বাবা আমার এত পরিশ্রম তাহলে বৃথা যায়নি।”
তিস্তা চোখ টিপে হেসে বলে, “এই ঋতুদি তাড়াতাড়ি চার হাত এক করে নাও। আদি কে কি জানিয়েছ?”
ছেলের নাম কানে আসতেই সারা অঙ্গ জুড়ে তৃষ্ণার্ত প্রেমের হিল্লোল দেখা দেয়, তবে ওর প্রেমের ব্যাখান এর বেশি করতে সক্ষম নয় বলেই মুখ চেপে হেসে বলে, “ছেলে বড় হয়েছে যখন জানানোর সময় হবে তখন ঠিক জানিয়ে দেব।”
আদি ফুল নিয়ে বাড়িতে ঢুকে দেখে অনেকেই পৌঁছে গেছে। ততক্ষণে রুদ্র, কৌশিক আর আদির বেশ কয়েকজন বন্ধু মিলে বসার ঘর সাজিয়ে তৈরি করে ফেলেছে। ক্যাটারার মধুদা, বিকেলের খাবারের জিনিস পত্র নিয়ে চলে এসেছে। তবলা বাদক সুকোমলদা অনেক আগেই তবলায় তাল ঠুকে তৈরি। আদিকে দেখে একগাল হেসে জিজ্ঞেস করে, আয়োজন কতদুর। মায়ের কলেজের টিচারদের মধ্যে অনেকেই হাজির হয়ে গেছে, সোসাইটির বেশ কয়েকজন কে নিমন্ত্রন করা হয়েছিল তারাও উপস্থিত। চৈতালি আর মণিমালা ওদের আপায়ন করতে ব্যাস্ত।
মনিমালার দিকে দেখিয়ে কৌশিক ওকে চোখ টিপে বলে, “দেখো দেখো এই ঘরে জায়গা করে নিচ্ছে কিন্তু।”
তিস্তা ওকে দেখেই চেঁচিয়ে ওঠে, “ফুল আনতে এত দেরি লাগে নাকি? তুমি কি ফুলের গাছ লাগিয়ে ফুল তুলে নিয়ে আসছ?”
তিস্তার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে, “যা বাবা, কথা হয়েছিল একটা ফুলের মালা আর সাজ। দোকানে যাওয়ার পরে মা ফোন করে বলল, আরো চারখানা চাই, টাইম ত লাগবেই।”
মণিমালা কটাক্ষ দৃষ্টি হেনে তিস্তাকে বলে, “ম্যাডাম, আদিদার তেরো মাসে বছর হয় বুঝলে।”
তিস্তা একবার মনিমালার দিকে তাকায় একবার আদির দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি ঘটনা ঘটেছে। আদিও ভুরু নাচিয়ে ইশারায় জানিয়ে দেয় ওর কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। ফুলের সাজ তিস্তার হাতে দিয়ে জিজ্ঞেস করে ওর মায়ের সাজতে আর কত বাকি। তিস্তা হেসে উত্তর দেয়, ঠিক সময়ে ওর মাকে ওর সামনে প্রস্তুত করে দেবে, খেয়ে ফেলবে না। সাতটা প্রায় বাজতে চলল, এইবারে অনুষ্ঠান শুরু করা উচিত যাদের আসার তারা সকলেই এসে পড়েছে, কিন্তু তখন গৃহকত্রি ঋতুপর্ণার দেখা নেই। কৌশিক উসখুস হয়ে আদিকে এক সময়ে জিজ্ঞেস করে ফেলল ওর মায়ের ব্যাপারে। আদি ভুরু কুঁচকে উত্তর দিল সে নিজেও জানে না কখন ওর মায়ের সাজ হবে। কৌতুক চ্ছলে জানিয়ে দেয় ওর মা এখন কৌশিকের গার্ল ফ্রেন্ডের হাতে সমর্পিত।
বেশ কিছুপরে সুপর্ণা, ঋতুপর্ণার রুম থেকে বেড়িয়ে এসে আদিকে ডেকে বলে, “আদি তোমার মা একবার তোমাকে ডাকছে।”
মায়ের রুমের পর্দা সরিয়ে ঘরে ঢুকে মায়ের রূপ দেখে বিহ্বল হয়ে থমকে দাঁড়িয়ে পরে। সাক্ষাৎ এক স্বর্গ থেকে নেমে আসা অপ্সরা ওর সামনে দাঁড়িয়ে, ঠিক যেন বন বিহারিণী নন্দন কাননের শকুন্তলা। ফুলের সাজে সজ্জিত অতীব রূপসী মমতাময়ী মা। সোনালি পাড়ের সাদা শাড়িটা কোমরের নিচে ওতপ্রোত ভাবে এঁটে বসে। ঋতুপর্ণার ঊর্ধ্বাঙ্গ শুধু মাত্র একটা ছোট সাদা কাঁচুলিতে ঢাকা, পেলব মসৃণ বাহু যুগল অনাবৃত, কাঁধ অনাবৃত। পানপাতার আকারের মুখবয়াবে চাঁদের কিরনের অনির্বাণ দীপ্তি ছড়িয়ে। সুপর্ণা কাকিমা আবার ইচ্ছে করেই মায়ের উপরের ঠোঁটের একটু উপরে একটা তিল এঁকে মায়ের মুখবয়াবের সৌন্দর্য শতধিক জাগিয়ে তুলেছে। ডাগর চোখের কোণে কাজল রেখা। দুই কোমল অধর টকটকে লাল রঙ্গে রাঙ্গানো। পীনোন্নত স্তনের নিচে পাঁজরের মাঝখান থেকে মধ্যচ্ছদা নেমে এসেছে ছোট সুগোল নরম ফুলো পেটে। সুগোল নরম পেটের মাঝখানে গভীর নাভিদেশের চারপাশে নরম মাংসের পরত। ঋতুপর্ণা ইচ্ছে করেই ওর কোমর বিছাটা শাড়ির কুঁচির ওপরে টেনে নিয়েছে আর লকেটখানি ইচ্ছে করেই সামনে ঝুলিয়ে দিয়েছে। বাজুতে, কব্জিতে, মাথার চুড়ে, গলায় ফুলের সাজ। মায়ের দুই হাতের মেহেন্দির রঙ তখন পর্যন্ত মুছে যায়নি। পেলব নরম আঙ্গুল গুলোতে ছোট একটা আংটি জ্বলজ্বল করছে।
এই বিমোহিত সৌন্দর্য খর্ব করার শক্তি ওর নেই, ওর সামনে দাঁড়িয়ে যে নারী তাকে কিছুতেই আর নিজের প্রেমিকা অথবা বান্ধবী বলে ওর হৃদয় মানতে পারছে না। এ রূপ যেন আগুনে ঝলসানো মুরতিময়ি মায়ের রূপ। মায়ের প্রশান্ত অসামান্য রূপ ওর বুকের মধ্যে ভক্তি জাগিয়ে তুলল। ধিক্কার দিল ওর হৃদয়, এই রমণীকে কি করে নিজের ক্রোড়ে করবে, এযে সাক্ষাৎ দেবী।
আদি ধির পায়ে মায়ের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে ভাসা ভাসা চাহনি নিয়ে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে। মায়ের সোনা গলানো রূপের দর্শনে গলা কেঁপে ওঠে আদির, “মা গো আমাকে ক্ষমা করে দাও।” বলেই ওর দুই চোখ জলে ভরে গেল।
ঋতুপর্ণা ছেলের চেহারার অভিব্যাক্তি অনেক আগেই অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিল। আদির নিথর নিস্তব্ধ চেহারা দেখে বুঝতে পেরেছিল ঠিক এইরকম কিছু একটা ঘটবে। দুই হাত বাড়িয়ে ছেলেকে বুকের ওপরে চেপে ধরে কেঁদে ফেলল ঋতুপর্ণা, “ছি সোনা এইভাবে বলতে নেই।”
আদি মায়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসতেই ঋতুপর্ণা বিছানায় বসে ওর মাথা কোলের ওপরে টেনে নিল। আদি মাকে জড়িয়ে ধরে কোলের মধ্যে মাথা গুঁজে ফুঁপিয়ে উঠল, “না মা, বড় পাপ করে ফেলেছি মা।”
কোনটা পাপ, কোন কর্ম পুন্য, কি বৈধ কোন কি অবৈধ কিছুই মাথায় ঢোকে না ঋতুপর্ণার। ঋতুপর্ণা ছেলের মাথা কোলে গুঁজে অশ্রুশিক্ত চোখে বলে, “বাড়ি ভর্তি লোক আছে সোনা, এইভাবে কাঁদে না। আমি ত আর তোকে ছেড়ে যাচ্ছি না তাহলে হটাত কাঁদছিস কেন রে?”
আদি কিছুতেই মায়ের কোল থেকে মাথা উঠাতে নারাজ, “না মা, তোমার এই নিষ্কলঙ্ক রূপ দেখে সব গুলিয়ে যাচ্ছে।”
হয়ত খুব বড় পাপ ওরা করেছে। কোন মা তার নিজের ছেলের সাথে ওদের মতন ভালোবাসার বন্ধনে বাঁধে না তবে সমাজের বৈধতার জাল ওদের এই ভালোবাসা কোনোদিন বুঝে উঠতে পারবে না। ওদের নিকৃষ্ট প্রাণী হিসাবে সকলে গন্য করবে সমাজ থেকে বহিরভুত করে দেবে। কখন কি সমাজ বুঝতে চেষ্টা করবে ওদের বুকের ব্যাথা। যখন সুভাষ ওকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল তখন আদিকে কে দেখেছিল। ঋতুপর্ণা ছাড়া আর কেউ আসেনি, কারন ঋতুপর্ণা ওর মা। যখন হস্পিটালে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করছিল ঋতুপর্ণা তখন ওর মাথার কাছে রাতের পর রাত কে বসে কাটিয়েছিল, ওর একমাত্র সন্তান আদিত্য।
বুকের প্লাবন শক্ত করে বেঁধে ঋতুপর্ণা আদির মাথা কোল থেকে উঠিয়ে বলে, “তুই আমার সব, এখন কাঁদিস না এই নিয়ে পরে আমরা কথা বলব। তবে হ্যাঁ সোনা, একটা কথা মনে রাখ, প্রেম ভালোবাসা জীবনেরই এক অপরিহার্য অঙ্গ। মানুষ কোনোদিন প্রেম ভালোবাসা ছাড়া বাঁচতে পারে না। তোর নিঃসঙ্গ জীবনে আমিই একমাত্র নারী আর আমার নিঃসঙ্গ জীবনে তুই একমাত্র পুরুষ। এছাড়া আমাদের জীবনে কেউ কোনোদিন আসেনি আর আসতে পারবে না। আমরাই একে ওপরের পরিপূরক। এটাই আমাদের জীবনের এক অটুট বন্ধন, তাই ত এই সম্পর্কএর শুরুতে বাধা দিলেও আমাদের কেউই কিন্তু এর থেকে দূরে সরে থাকতে পারিনি। সুপ্ত অবচেতন মনে হয়ত আমিও তোর প্রতি কিছুটা ঝুঁকে গেছিলাম। দোষ তোর একার নয় রে আদি, শুধু আগুনের ফুলকি অথবা কাঠে আগুন জ্বলে না। আগুন জ্বালাতে হলে কাঠ আর আগুনের ফুলকি দুটোর প্রয়োজন হয়। তুই আমাকে কোনদিন জোর করিস নি, আমিও তোকে কোনদিন জোর করিনি। এই অমোঘ টান আমরা দুজনেই সমান ভাবে অনুভব করেছি বলেই এগোতে পেরেছি না হলে কি তুই আমার ওপরে জোর করতিস?”
মায়ের কথা শুনে আদি স্বস্তির শ্বাস নিয়ে ছলছল চোখে ঋতুপর্ণার ছলছল চেহারার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে দেয়, “তোমার ওপরে জোর” জোরে জোরে মাথা নাড়িয়ে বলে, “আমার গলা কেটে ফেললেও করতে পারব না মাগো।”
ঋতুপর্ণা স্মিত হেসে আদির গালে আলতো চাঁটি মেরে বলে, “কেন করতে পারবি না রে শয়তান। আমি না তোর মা, আমার ওপরে তোর সব থেকে আগে অধিকার।”
আদি চোখ মুছে মুচকি হেসে বলে, “আচ্ছা তাই নাকি। তাহলে সেই অধিকার কবে পাচ্ছি।”
এমন সময়ে সুপর্ণা ঘরে ঢুকে দেখে আদি ঋতুপর্ণার কোলে মাথা রেখে বসে। সুপর্ণার চোখের সামনে এক মা তার ছেলেকে আদর করছে এই দৃশ্য ভেসে ওঠে। সুপর্ণা মুচকি হেসে ঋতুপর্ণার ছলছল চোখ দেখে জিজ্ঞেস করে, “কি গো হটাত করে তোমাদের একি হল? একি আদি...”
ঋতুপর্ণা স্মিত হেসে উত্তর দেয়, “কিছু না, একমাত্র আদুরে ছেলে ত তাই এই সাজে মাকে দেখে একটু ইমোশানাল হয়ে পড়েছে।”
আদি মায়ের সামনে থেকে উঠে পরে। সুপর্ণা ওর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে হেসে বলে, “তোমার জন্য একটা সুন্দরী মেয়ে দেখে দেব।”
আদি চোখ বড় বড় করে সুপর্ণাকে বলে, “আচ্ছা তাই নাকি? কাউকে কি অলরেডি দেখে রেখেছ?”
সুপর্ণা ঋতুপর্ণার হাত ধরে বলে, “আমার মেয়ের ভাগ্য খুলে যাবে যদি ঋতুদির মতন সুন্দরী মমতাময়ী এক শ্বাসুরি পায়।”
অবাক হয়ে ঋতুপর্ণা একবার আদির দিকে তাকায় একবার সুপর্ণার দিকে তাকায়। আদিও এই কথা শুনে হতবাক হয়ে সুপর্ণা আর মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওদের বুঝতে অসুবিধে হয় না সুপর্ণা কি বলতে চাইছে। আদি তাই মস্করা করে সুপর্ণার কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে বলে, “আগে গাছ দেখি তার পরে না হয় ফল খাবো” বলেই ঠোঁট টিপে হেসে দেয়।
আদির কথা শুনে সুপর্ণার কান গাল লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে, “ধ্যাত আদিত্য তুমি না বড্ড শয়তান।”
আদি সুপর্ণার সারা অঙ্গে চোখ বুলিয়ে মুচকি হেসে বলে, “আকন্দ গাছে ত আর আম ফলে না কাকিমা। আগে গাছটা ভালো করে দেখতে হবে তবেই না ঠিক ভাবে বোঝা যাবে কি ফল কেমন হবে?”
ঋতুপর্ণা মুখ বেঁকিয়ে আদির পিঠে আলতো চাপড় মেরে বলে, “হ্যাঁ অনেক হয়েছে তোর গাছ দেখা। এইবারে চল, দেরি হয়ে গেছে হয়ত সবাই...”
আদিও মাথা দুলিয়ে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ সবাই এসে গেছে।”
মাকে সঙ্গে নিয়ে আদি ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো লোক ভর্তি হল ঘরে। ওকে দেখে সবাই সমস্বরে ঋতুপর্ণার সাজের তারিফ করল। বিশেষ করে রুদ্র আর কৌশিক একটু বেশি করে তারিফ করল। আদি নিজের ক্যামেরা নিয়ে তৈরি হয়ে গেল ওদের অনুষ্ঠানের ফটো তোলার জন্য। এর আগেও মাকে বহুবার নাচতে দেখেছে আদি কিন্তু সেই নাচের মহত্ত্ব আর আজকের নিজের বাড়িতে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানের মহত্ত্ব আলাদা। মায়ের কলিগরা মায়ের শারীরিক সুস্থতা আর ভালোবাসা দিয়েই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ঋতুপর্ণা যেদিন তিস্তাকে এই অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জানিয়েছিল সেইদিন তিস্তা বাকিদের সাথে আলোচনা করে ঠিক করে ফেলে যে এই অনুষ্ঠানের যাবতীয় খরচ, সাজ গোজ সব কিছুই ওরা কয়েকজন মিলে করবে আর ঋতুপর্ণাকে উপহার স্বরুপ দেবে। আদিকেও সেই কথা সকালে জানিয়েছিল তাই আদি চুপিচুপি গাড়ি বের করার আগে গার্ডকে বাড়ির চাবি দিয়ে গিয়েছিল।
লোকজনের ভিড় ঋতুপর্ণাকে ছেঁকে ধরে, “কেমন আছো এখন?” “বাপরে সুপর্ণা বেশ সুন্দর সাজিয়েছে দেখছি।” “তুমি একদম আর চিন্তা করবে না বুঝলে, আমরা সবাই তোমার সঙ্গে আছি।” ইত্যাদি। আদি ধিরে ধিরে একপাশে সরে যায়। একটু দুর থেকে মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে। ঠিক যেন শ্বেত শুভ্র রাজমাতাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে অনেক দাস দাসী আর রাজকন্যে।
অন্য রুমে তখন সুপর্ণা আর তিস্তা, ঋতুপর্ণাকে সাজাতে ব্যাস্ত। ঋতুপর্ণা সোনালি পাড়ের সাদা রঙের সাউথ সিল্কের শাড়ি পরে তৈরি।
তিস্তা ওর শাড়ি পড়ার ধরন দেখে হাঁ হাঁ করে ওঠে, “এই ঋতুদি একি করেছ। না না, শকুন্তলা কি শাড়ির আঁচল নিত নাকি? না না, শাড়ির আঁচল দিও না।” সুপর্ণাও তিস্তার কথায় সায় দেয়, শাড়ির আঁচল দিতে হবে না।
লজ্জিত হয়ে ঋতুপর্ণা ওদের ধমক দিয়ে বলে, “ধ্যাত আঁচল ছাড়া শাড়ি কি করে পড়ব?”
সুপর্ণা ওর দিকে এগিয়ে এসে বলে, “খুলে ফেল আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।” বলে ওর আঁচল টেনে বুকের ওপর থেকে সরিয়ে দিয়ে ঘাগরার মতন শাড়ি পড়িয়ে দিয়ে বলল, “এইভাবে শাড়ি পরত শকুন্তলা।”
ঋতুপর্ণা নিজের দিকে একবার তাকিয়ে দেখে, ইসসস, ঘর ভর্তি লোকের সামনে এইভাবে যাবে নাকি? ওর উদ্ধত স্তন জোড়া আঁটো সাদা কাঁচুলির মধ্যে হাঁসফাঁস করে উঠছে, শাড়ির কুঁচি নাভির বেশ নিচে, ছেলের দেওয়া কোমর বিছা ওর কোমরের সাথে ওতপ্রোত ভাবে পেঁচিয়ে রয়েছে। মা ছেলের নামের আদ্যাখরের লকেটটা নাভির একটু নিচের দিক থেকে ঝুলছে। লাস্যময়ী উদ্ভিন্ন যৌবনবতী রূপসীকে দেখে মুনি ঋষিদের আসন টলে যাওয়ার উপক্রম। তিস্তা ওর পেছনে দাঁড়িয়ে কাঁচুলির গিঁটটা আরো শক্ত করে টেনে বেঁধে দিল।
সুপর্ণা মুচকি হেসে ওকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ গো তোমার সেই নতুন পুরুষকে আজকে ডাকো নি?”
তিস্তা সেই কথা শুনে হাঁ হাঁ করে উঠল, “কি কে গো?” ঋতুপর্ণাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে, “কই আমাকে ত জানাও নি যে তুমি প্রেমে পড়েছ?” বাচ্চা মেয়ের মতন আব্দার করে ওঠে, “এই প্লিস বল না কে?”
ঋতুপর্ণা মুচকি হেসে ওদের প্রশ্নের জাল কাটিয়ে উত্তর দেয়, “কেউ না সেদিন মজা করছিলাম সুপর্ণার সাথে।”
সুপর্ণা চোখ টিপে বলে, “মোটেই নয়। সেদিন তোমার লাজুক ব্লাসিং দেখেই বুঝে গেছিলাম তোমার বুকের মধ্যে নতুন কেউ এসে গেছে।” সুপর্ণা জোর করে চেপে ধরে ঋতুপর্ণাকে, “এই ঋতুদি বল না সেই মানুষ কে।”
তিস্তা ওকে আরো উত্যক্ত করে বলে, “বলো না হলে কিন্তু আমার হাত থেকে রেহাই পাবে না।”
নিরুপায় ঋতুপর্ণা কি করবে খানিকক্ষণ ভেবে অতি সুকৌশলে উত্তর দেয়, “আছে একজন তবে এখুনি বলতে পারছি না।”
তিস্তা চোখ বড় বড় করে বলে, “বাপরে তাহলে অবশেষে নটে গাছ মুরল। লজ্জায় ত চেহারা লাল হয়ে গেছে, তা কতদুর এগিয়েছে তোমাদের সম্পর্ক।” চোখ টিপে ঋতুপর্ণার গাল টিপে জিজ্ঞেস করে, “কিছু খোলা খুলি চটকা চটকি হল না খালি শুকনো গাল গল্প। আর কতদিন একা একা বিছানা কামড়ে পরে থাকবে?” বলেই আলতো করে ঋতুপর্ণার পায়ের মাঝে হাত বুলিয়ে দেয়।
ঋতুপর্ণা কিলবিল করে উঠে তিস্তার হাত সরিয়ে দিয়ে মৃদু বকুনি দিয়ে বলে, “সর এখান থেকে। আমি অন্তত তোর মতন হ্যাঙলা নই, যাকে তাকে দেখেই গাছে চড়ে যাবো।”
সুপর্ণা ঠোঁট চেপে হেসে বলে, “আচ্ছা বাবা আচ্ছা। তবে ঋতুদি গাছের দর্শন না করে কিন্তু গাছে চড়তে যেও না।” বলেই একগাল হেসে দিল। “সেদিন যে তোমাকে এত সাজিয়ে দিলাম তার কি কোন ফল হল?”
সলজ্জ আনত নয়নে মুখমন্ডলে রক্তিমাভা ফুটিয়ে মাথা দুলিয়ে বলে, “তা একটু হয়েছে।” তিস্তা আর সুপর্ণার বাক্যবাণে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে ঋতুপর্ণা। পরখনেই হাসি থামিয়ে একটু গম্ভির হয়ে বলে, “এই তোমরা আর ওই নিয়ে ঘাটাঘাটি কর না ত।” কিন্তু ওদের এই দুষ্টু মিষ্টি কথাবার্তা বারেবারে ঋতুপর্ণাকে ওর ছেলের কথা মনে করিয়ে দেয়। সাজ গোজ এক উপলখ্য মাত্র, মা আর ছেলের মধ্যে নিবিড় চিরন্তন প্রেমের টান আগেই জেগে উঠেছে। হৃদয়ের বাঁধনের সাথে সাথে দেহের বাঁধন হতেই বাকি।
সুপর্ণা হেসে বলে, “যাক বাবা আমার এত পরিশ্রম তাহলে বৃথা যায়নি।”
তিস্তা চোখ টিপে হেসে বলে, “এই ঋতুদি তাড়াতাড়ি চার হাত এক করে নাও। আদি কে কি জানিয়েছ?”
ছেলের নাম কানে আসতেই সারা অঙ্গ জুড়ে তৃষ্ণার্ত প্রেমের হিল্লোল দেখা দেয়, তবে ওর প্রেমের ব্যাখান এর বেশি করতে সক্ষম নয় বলেই মুখ চেপে হেসে বলে, “ছেলে বড় হয়েছে যখন জানানোর সময় হবে তখন ঠিক জানিয়ে দেব।”
আদি ফুল নিয়ে বাড়িতে ঢুকে দেখে অনেকেই পৌঁছে গেছে। ততক্ষণে রুদ্র, কৌশিক আর আদির বেশ কয়েকজন বন্ধু মিলে বসার ঘর সাজিয়ে তৈরি করে ফেলেছে। ক্যাটারার মধুদা, বিকেলের খাবারের জিনিস পত্র নিয়ে চলে এসেছে। তবলা বাদক সুকোমলদা অনেক আগেই তবলায় তাল ঠুকে তৈরি। আদিকে দেখে একগাল হেসে জিজ্ঞেস করে, আয়োজন কতদুর। মায়ের কলেজের টিচারদের মধ্যে অনেকেই হাজির হয়ে গেছে, সোসাইটির বেশ কয়েকজন কে নিমন্ত্রন করা হয়েছিল তারাও উপস্থিত। চৈতালি আর মণিমালা ওদের আপায়ন করতে ব্যাস্ত।
মনিমালার দিকে দেখিয়ে কৌশিক ওকে চোখ টিপে বলে, “দেখো দেখো এই ঘরে জায়গা করে নিচ্ছে কিন্তু।”
তিস্তা ওকে দেখেই চেঁচিয়ে ওঠে, “ফুল আনতে এত দেরি লাগে নাকি? তুমি কি ফুলের গাছ লাগিয়ে ফুল তুলে নিয়ে আসছ?”
তিস্তার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে, “যা বাবা, কথা হয়েছিল একটা ফুলের মালা আর সাজ। দোকানে যাওয়ার পরে মা ফোন করে বলল, আরো চারখানা চাই, টাইম ত লাগবেই।”
মণিমালা কটাক্ষ দৃষ্টি হেনে তিস্তাকে বলে, “ম্যাডাম, আদিদার তেরো মাসে বছর হয় বুঝলে।”
তিস্তা একবার মনিমালার দিকে তাকায় একবার আদির দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি ঘটনা ঘটেছে। আদিও ভুরু নাচিয়ে ইশারায় জানিয়ে দেয় ওর কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না। ফুলের সাজ তিস্তার হাতে দিয়ে জিজ্ঞেস করে ওর মায়ের সাজতে আর কত বাকি। তিস্তা হেসে উত্তর দেয়, ঠিক সময়ে ওর মাকে ওর সামনে প্রস্তুত করে দেবে, খেয়ে ফেলবে না। সাতটা প্রায় বাজতে চলল, এইবারে অনুষ্ঠান শুরু করা উচিত যাদের আসার তারা সকলেই এসে পড়েছে, কিন্তু তখন গৃহকত্রি ঋতুপর্ণার দেখা নেই। কৌশিক উসখুস হয়ে আদিকে এক সময়ে জিজ্ঞেস করে ফেলল ওর মায়ের ব্যাপারে। আদি ভুরু কুঁচকে উত্তর দিল সে নিজেও জানে না কখন ওর মায়ের সাজ হবে। কৌতুক চ্ছলে জানিয়ে দেয় ওর মা এখন কৌশিকের গার্ল ফ্রেন্ডের হাতে সমর্পিত।
বেশ কিছুপরে সুপর্ণা, ঋতুপর্ণার রুম থেকে বেড়িয়ে এসে আদিকে ডেকে বলে, “আদি তোমার মা একবার তোমাকে ডাকছে।”
মায়ের রুমের পর্দা সরিয়ে ঘরে ঢুকে মায়ের রূপ দেখে বিহ্বল হয়ে থমকে দাঁড়িয়ে পরে। সাক্ষাৎ এক স্বর্গ থেকে নেমে আসা অপ্সরা ওর সামনে দাঁড়িয়ে, ঠিক যেন বন বিহারিণী নন্দন কাননের শকুন্তলা। ফুলের সাজে সজ্জিত অতীব রূপসী মমতাময়ী মা। সোনালি পাড়ের সাদা শাড়িটা কোমরের নিচে ওতপ্রোত ভাবে এঁটে বসে। ঋতুপর্ণার ঊর্ধ্বাঙ্গ শুধু মাত্র একটা ছোট সাদা কাঁচুলিতে ঢাকা, পেলব মসৃণ বাহু যুগল অনাবৃত, কাঁধ অনাবৃত। পানপাতার আকারের মুখবয়াবে চাঁদের কিরনের অনির্বাণ দীপ্তি ছড়িয়ে। সুপর্ণা কাকিমা আবার ইচ্ছে করেই মায়ের উপরের ঠোঁটের একটু উপরে একটা তিল এঁকে মায়ের মুখবয়াবের সৌন্দর্য শতধিক জাগিয়ে তুলেছে। ডাগর চোখের কোণে কাজল রেখা। দুই কোমল অধর টকটকে লাল রঙ্গে রাঙ্গানো। পীনোন্নত স্তনের নিচে পাঁজরের মাঝখান থেকে মধ্যচ্ছদা নেমে এসেছে ছোট সুগোল নরম ফুলো পেটে। সুগোল নরম পেটের মাঝখানে গভীর নাভিদেশের চারপাশে নরম মাংসের পরত। ঋতুপর্ণা ইচ্ছে করেই ওর কোমর বিছাটা শাড়ির কুঁচির ওপরে টেনে নিয়েছে আর লকেটখানি ইচ্ছে করেই সামনে ঝুলিয়ে দিয়েছে। বাজুতে, কব্জিতে, মাথার চুড়ে, গলায় ফুলের সাজ। মায়ের দুই হাতের মেহেন্দির রঙ তখন পর্যন্ত মুছে যায়নি। পেলব নরম আঙ্গুল গুলোতে ছোট একটা আংটি জ্বলজ্বল করছে।
এই বিমোহিত সৌন্দর্য খর্ব করার শক্তি ওর নেই, ওর সামনে দাঁড়িয়ে যে নারী তাকে কিছুতেই আর নিজের প্রেমিকা অথবা বান্ধবী বলে ওর হৃদয় মানতে পারছে না। এ রূপ যেন আগুনে ঝলসানো মুরতিময়ি মায়ের রূপ। মায়ের প্রশান্ত অসামান্য রূপ ওর বুকের মধ্যে ভক্তি জাগিয়ে তুলল। ধিক্কার দিল ওর হৃদয়, এই রমণীকে কি করে নিজের ক্রোড়ে করবে, এযে সাক্ষাৎ দেবী।
আদি ধির পায়ে মায়ের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করে ভাসা ভাসা চাহনি নিয়ে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে থাকে। মায়ের সোনা গলানো রূপের দর্শনে গলা কেঁপে ওঠে আদির, “মা গো আমাকে ক্ষমা করে দাও।” বলেই ওর দুই চোখ জলে ভরে গেল।
ঋতুপর্ণা ছেলের চেহারার অভিব্যাক্তি অনেক আগেই অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিল। আদির নিথর নিস্তব্ধ চেহারা দেখে বুঝতে পেরেছিল ঠিক এইরকম কিছু একটা ঘটবে। দুই হাত বাড়িয়ে ছেলেকে বুকের ওপরে চেপে ধরে কেঁদে ফেলল ঋতুপর্ণা, “ছি সোনা এইভাবে বলতে নেই।”
আদি মায়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসতেই ঋতুপর্ণা বিছানায় বসে ওর মাথা কোলের ওপরে টেনে নিল। আদি মাকে জড়িয়ে ধরে কোলের মধ্যে মাথা গুঁজে ফুঁপিয়ে উঠল, “না মা, বড় পাপ করে ফেলেছি মা।”
কোনটা পাপ, কোন কর্ম পুন্য, কি বৈধ কোন কি অবৈধ কিছুই মাথায় ঢোকে না ঋতুপর্ণার। ঋতুপর্ণা ছেলের মাথা কোলে গুঁজে অশ্রুশিক্ত চোখে বলে, “বাড়ি ভর্তি লোক আছে সোনা, এইভাবে কাঁদে না। আমি ত আর তোকে ছেড়ে যাচ্ছি না তাহলে হটাত কাঁদছিস কেন রে?”
আদি কিছুতেই মায়ের কোল থেকে মাথা উঠাতে নারাজ, “না মা, তোমার এই নিষ্কলঙ্ক রূপ দেখে সব গুলিয়ে যাচ্ছে।”
হয়ত খুব বড় পাপ ওরা করেছে। কোন মা তার নিজের ছেলের সাথে ওদের মতন ভালোবাসার বন্ধনে বাঁধে না তবে সমাজের বৈধতার জাল ওদের এই ভালোবাসা কোনোদিন বুঝে উঠতে পারবে না। ওদের নিকৃষ্ট প্রাণী হিসাবে সকলে গন্য করবে সমাজ থেকে বহিরভুত করে দেবে। কখন কি সমাজ বুঝতে চেষ্টা করবে ওদের বুকের ব্যাথা। যখন সুভাষ ওকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল তখন আদিকে কে দেখেছিল। ঋতুপর্ণা ছাড়া আর কেউ আসেনি, কারন ঋতুপর্ণা ওর মা। যখন হস্পিটালে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করছিল ঋতুপর্ণা তখন ওর মাথার কাছে রাতের পর রাত কে বসে কাটিয়েছিল, ওর একমাত্র সন্তান আদিত্য।
বুকের প্লাবন শক্ত করে বেঁধে ঋতুপর্ণা আদির মাথা কোল থেকে উঠিয়ে বলে, “তুই আমার সব, এখন কাঁদিস না এই নিয়ে পরে আমরা কথা বলব। তবে হ্যাঁ সোনা, একটা কথা মনে রাখ, প্রেম ভালোবাসা জীবনেরই এক অপরিহার্য অঙ্গ। মানুষ কোনোদিন প্রেম ভালোবাসা ছাড়া বাঁচতে পারে না। তোর নিঃসঙ্গ জীবনে আমিই একমাত্র নারী আর আমার নিঃসঙ্গ জীবনে তুই একমাত্র পুরুষ। এছাড়া আমাদের জীবনে কেউ কোনোদিন আসেনি আর আসতে পারবে না। আমরাই একে ওপরের পরিপূরক। এটাই আমাদের জীবনের এক অটুট বন্ধন, তাই ত এই সম্পর্কএর শুরুতে বাধা দিলেও আমাদের কেউই কিন্তু এর থেকে দূরে সরে থাকতে পারিনি। সুপ্ত অবচেতন মনে হয়ত আমিও তোর প্রতি কিছুটা ঝুঁকে গেছিলাম। দোষ তোর একার নয় রে আদি, শুধু আগুনের ফুলকি অথবা কাঠে আগুন জ্বলে না। আগুন জ্বালাতে হলে কাঠ আর আগুনের ফুলকি দুটোর প্রয়োজন হয়। তুই আমাকে কোনদিন জোর করিস নি, আমিও তোকে কোনদিন জোর করিনি। এই অমোঘ টান আমরা দুজনেই সমান ভাবে অনুভব করেছি বলেই এগোতে পেরেছি না হলে কি তুই আমার ওপরে জোর করতিস?”
মায়ের কথা শুনে আদি স্বস্তির শ্বাস নিয়ে ছলছল চোখে ঋতুপর্ণার ছলছল চেহারার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে দেয়, “তোমার ওপরে জোর” জোরে জোরে মাথা নাড়িয়ে বলে, “আমার গলা কেটে ফেললেও করতে পারব না মাগো।”
ঋতুপর্ণা স্মিত হেসে আদির গালে আলতো চাঁটি মেরে বলে, “কেন করতে পারবি না রে শয়তান। আমি না তোর মা, আমার ওপরে তোর সব থেকে আগে অধিকার।”
আদি চোখ মুছে মুচকি হেসে বলে, “আচ্ছা তাই নাকি। তাহলে সেই অধিকার কবে পাচ্ছি।”
এমন সময়ে সুপর্ণা ঘরে ঢুকে দেখে আদি ঋতুপর্ণার কোলে মাথা রেখে বসে। সুপর্ণার চোখের সামনে এক মা তার ছেলেকে আদর করছে এই দৃশ্য ভেসে ওঠে। সুপর্ণা মুচকি হেসে ঋতুপর্ণার ছলছল চোখ দেখে জিজ্ঞেস করে, “কি গো হটাত করে তোমাদের একি হল? একি আদি...”
ঋতুপর্ণা স্মিত হেসে উত্তর দেয়, “কিছু না, একমাত্র আদুরে ছেলে ত তাই এই সাজে মাকে দেখে একটু ইমোশানাল হয়ে পড়েছে।”
আদি মায়ের সামনে থেকে উঠে পরে। সুপর্ণা ওর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে হেসে বলে, “তোমার জন্য একটা সুন্দরী মেয়ে দেখে দেব।”
আদি চোখ বড় বড় করে সুপর্ণাকে বলে, “আচ্ছা তাই নাকি? কাউকে কি অলরেডি দেখে রেখেছ?”
সুপর্ণা ঋতুপর্ণার হাত ধরে বলে, “আমার মেয়ের ভাগ্য খুলে যাবে যদি ঋতুদির মতন সুন্দরী মমতাময়ী এক শ্বাসুরি পায়।”
অবাক হয়ে ঋতুপর্ণা একবার আদির দিকে তাকায় একবার সুপর্ণার দিকে তাকায়। আদিও এই কথা শুনে হতবাক হয়ে সুপর্ণা আর মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। ওদের বুঝতে অসুবিধে হয় না সুপর্ণা কি বলতে চাইছে। আদি তাই মস্করা করে সুপর্ণার কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে বলে, “আগে গাছ দেখি তার পরে না হয় ফল খাবো” বলেই ঠোঁট টিপে হেসে দেয়।
আদির কথা শুনে সুপর্ণার কান গাল লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে, “ধ্যাত আদিত্য তুমি না বড্ড শয়তান।”
আদি সুপর্ণার সারা অঙ্গে চোখ বুলিয়ে মুচকি হেসে বলে, “আকন্দ গাছে ত আর আম ফলে না কাকিমা। আগে গাছটা ভালো করে দেখতে হবে তবেই না ঠিক ভাবে বোঝা যাবে কি ফল কেমন হবে?”
ঋতুপর্ণা মুখ বেঁকিয়ে আদির পিঠে আলতো চাপড় মেরে বলে, “হ্যাঁ অনেক হয়েছে তোর গাছ দেখা। এইবারে চল, দেরি হয়ে গেছে হয়ত সবাই...”
আদিও মাথা দুলিয়ে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ সবাই এসে গেছে।”
মাকে সঙ্গে নিয়ে আদি ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো লোক ভর্তি হল ঘরে। ওকে দেখে সবাই সমস্বরে ঋতুপর্ণার সাজের তারিফ করল। বিশেষ করে রুদ্র আর কৌশিক একটু বেশি করে তারিফ করল। আদি নিজের ক্যামেরা নিয়ে তৈরি হয়ে গেল ওদের অনুষ্ঠানের ফটো তোলার জন্য। এর আগেও মাকে বহুবার নাচতে দেখেছে আদি কিন্তু সেই নাচের মহত্ত্ব আর আজকের নিজের বাড়িতে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানের মহত্ত্ব আলাদা। মায়ের কলিগরা মায়ের শারীরিক সুস্থতা আর ভালোবাসা দিয়েই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। ঋতুপর্ণা যেদিন তিস্তাকে এই অনুষ্ঠানের ব্যাপারে জানিয়েছিল সেইদিন তিস্তা বাকিদের সাথে আলোচনা করে ঠিক করে ফেলে যে এই অনুষ্ঠানের যাবতীয় খরচ, সাজ গোজ সব কিছুই ওরা কয়েকজন মিলে করবে আর ঋতুপর্ণাকে উপহার স্বরুপ দেবে। আদিকেও সেই কথা সকালে জানিয়েছিল তাই আদি চুপিচুপি গাড়ি বের করার আগে গার্ডকে বাড়ির চাবি দিয়ে গিয়েছিল।
লোকজনের ভিড় ঋতুপর্ণাকে ছেঁকে ধরে, “কেমন আছো এখন?” “বাপরে সুপর্ণা বেশ সুন্দর সাজিয়েছে দেখছি।” “তুমি একদম আর চিন্তা করবে না বুঝলে, আমরা সবাই তোমার সঙ্গে আছি।” ইত্যাদি। আদি ধিরে ধিরে একপাশে সরে যায়। একটু দুর থেকে মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে। ঠিক যেন শ্বেত শুভ্র রাজমাতাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে অনেক দাস দাসী আর রাজকন্যে।