30-09-2020, 07:05 PM
দ্বাবিংশ পর্ব (#05)
দেবায়ন, অনুপমাকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে ওরা গোয়াতে ভালো ভাবে পৌঁছে গেছে। অনুপমা দেবায়নকে খোঁচা মেরে জিজ্ঞেস করে যে মিমি কে একা পেয়ে কি হল। অনুপমার কথা শুনে, দেবায়নের কান ঈষৎ লাল হয়ে ওঠে লজ্জায়। অনুপমা হেসে বলে, গোয়াতে যেন বেশ মজা করে আর সেই সাথে অনন্যাকে কাছে পেয়ে যাবে ওর সাথেও যেন চুটিয়ে আনন্দ ফুর্তি করে নেয়। দেবায়ন ফোনে অনুপমাকে চুমু খেয়ে বলে ওর মনে যদি কাউকে ধরে তাহলে তাঁর সাথে আনন্দ করতে পারে। অনুপমা বলে সময় হলে জানিয়ে দেবে। পায়েলের প্রেমিকের ওপরে নজর ছিল অনুপমার তখন জানত না যে পায়েলের প্রেমিক ওর ভাই হবে তাই বর্তমানে, রূপক ছাড়া কারুর ওপরে তেমন নজর নেই। হেসে দেয় দেবায়ন, বলে পরীক্ষার পড়ে চারজন মিলে গোয়াতে বেড়াতে আসবে তখন রূপক আর অনুপমাকে ছেড়ে দেবে।
পারমিতা স্নান সেরে বেড়িয়ে আসে শুধু ব্রা আর প্যান্টি পরে। ফর্সা নধর দেহে, গোলাপি লেস ব্রা আর ক্ষুদ্র গোলাপি প্যান্টি। দেবায়নের লিঙ্গ আবার জেগে ওঠে। তোয়ালের নিচে দেবায়নের লিঙ্গের নড়াচড়া দেখে পারমিতা হেসে দেয়। সুটকেস থেকে একটা বডিস বের করে পরে নেয় সেই সাথে কোমরে পেঁচিয়ে নেয় একটা সারঙ। দেবায়নকে ঠেলে স্নানে ঢুকিয়ে দেয় পারমিতা। দেবায়ন স্নান সেরে বেড়িয়ে একটা টি শার্ট আর বারমুডা গলিয়ে নেয়।
অনন্যার ফোন আসে, গোয়া এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রিসোর্টে চলে আসবে। পারমিতা পরমিতকে ফোন করে জেনে নেয় ওর অবস্থান। পরমিত মুম্বাই পৌঁছে গেছে, সন্ধ্যের মধ্যে রিসোর্টে পৌঁছে যাবে। পারমিতা আর দেবায়ন লাউঞ্জে দিয়ে অনন্যার জন্য অপেক্ষা করে। কিছু পরে অনন্যা রিসোর্টে পৌঁছে যায়। দেবায়ন অনন্যাকে দেখে, পরনে একটা জিন্সের কাপ্রি আর টপের ওপরে ব্লেজার। পোশাকের ধরন দেখে বোঝা যায় বেশ দামী। অভিনেত্রী বলে ওইখানে কেউ ওকে চেনে না, তাই বিশেষ মাথাব্যাথ নেই ওদের। পারমিতাকে দেখে অনন্যা প্রায় দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বলে, ভারী সুন্দরী দেখাচ্ছে পারমিতাকে। দুই সুন্দরী রমণীর আলিঙ্গন দৃশ্য বেশ উপভোগ করে দেবায়ন। পারমিতা, অনন্যার কপালে চুমু খেয়ে কুশল ইত্যাদি জিজ্ঞেস করে। পাশে দেবায়নকে দেখে একটু অবাক হয়ে যায় অনন্যা। পারমিতা আসল সম্পর্ক জানায় না, অনন্যাকে বলে বিজনেস ডিল করার জন্য দেবায়নকে আনা হয়েছে। পারমিতা অনন্যাকে ওর রুমে নিয়ে যায়। অনন্যা, ক্লায়েন্টের কথা জিজ্ঞেস করলে বলে ওদের এক ডাইরেক্টর, মিস্টার পরমিত সিংহ ধিলন, পাঞ্জাবী ভদ্রলোক, দিল্লীতে থাকেন, সন্ধ্যের আগে পৌঁছে যাবেন।
অনন্যা জামাকাপড় বদলে নেয়, একটা ঢিলে বারমুডা আর হাতকাটা টপ পরে। চাপা টপের ভেতর দিয়ে দুই ভারী স্তন ফেটে বেড়িয়ে আসার যোগাড়। তিনজনে সমুদ্রতটের দিকে হাঁটতে শুরু করে। রিসোর্ট থেকে একটা ছোটো পথ কাভেলসসিম বিচের দিকে গেছে। অনন্যা ইচ্ছে করে দেবায়নের পাশে পাশে হাটে। অনন্যার সামনে পারমিতাকে একটু সম্ভ্রম করে চলে দেবায়ন। তৃতীয় কোন ব্যাক্তির সামনে ওদের গোপন সম্পর্ক খোলসা করতে নারাজ।
অনন্যা পারমিতাকে জিজ্ঞেস করে, “ম্যাম, তোমার জামাই বেশ ভালো।”
পারমিতা হেসে জিজ্ঞেস করে, “কেন? তুই কি করে জানলি ওর কথা?”
পারমিতা আড় চোখে দেবায়নের দিকে তাকায়। দেবায়নের শরীর দুই রমণীর উত্তেজক দৃশ্যে আর অনন্যার নরম হাতের ছোঁয়ায় উত্তপ হয়ে ওঠে।
অনন্যা দুষ্টু হেসে বলে, “আর বল না ম্যাম, তুমি যেন কিছুই জানো না। র্যাডিসন ফোরটের পার্টিতে দেখা হল, কথা হল। ছাড়ো অসব কথা। এত বিজনেস ডিল হচ্ছে কি ব্যাপার? কয় খানা ফার্ম খুলবে তোমরা?”
পারমিতা অনন্যার থুতনি নাড়িয়ে আদর করে বলে, “পাগলি, সত্যি বলছি আমি কিছু জানিনা। ওই দেবায়ন আর সোমেশ জানে এইসব ব্যাপার। আমাকে শুধু বলে দেওয়া হয় যে এই কাগজে সই কর আমি সই করে দেই।”
বিকেলের পড়ন্ত বেলায়, সমুদ্রের ধারে বেশ কয়েক জোড়া ভারতীয় আর বিদেশী পর্যটকের দেখা মেলে। বিদেশী মেয়েদের পোশাক আশাক একটু খোলামেলা, তবে কেউ বিকিনি পরে নেই। অনেকের পরনে সিঙ্গেল পিস সুইমসুট। এক ভারতীয় যুগল, অদুরে সমুদ্রের জলে খেলায় মেতে। মেয়েটার পরনে লাল রঙের ব্রা আর লাল প্যান্টি, একটা সারঙ কোমরে জড়ানো ছিল কিন্তু সমুদ্রের ঢেউ আর সাথীর টানাটানিতে সারঙ খুলে গেছে। প্যান্টিটা বেশ ক্ষুদ্র, একটা ছোটো ত্রিকোণ কাপড়ে যোনিদেশ ঢাকা, পেছনের দড়ি দুই পাছার খাঁজে হারিয়ে গেছে। ছেলেটার ঊর্ধ্বাঙ্গ খালি, জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে মেয়েটাকে জল ছিটিয়ে, আদর করে জড়িয়ে ধরে ব্যাতিব্যাস্ত করে তুলেছে। সেই যুগলকে দেখে মনে হল সদ্য বিয়ে করে হানিমুনে এসেছে।
অনন্যা দেবায়নের হাতে চিমটি কেটে চোখের ইঙ্গিতে ওই যুগলের দিকে দেখায়। দেবায়ন অনন্যার কাঁধে হাত দিয়ে কাছে টেনে কানেকানে বলে, “যাবে নাকি জলে?”
অনন্যা, “ইসসস… শখ দেখো ছেলের। তুমি ম্যামের সামনে আমাকে নিয়ে যাবে? ম্যাম কি ভাববে বল ত?”
দেবায়ন, “তোমার ম্যাম কিছু ভাববে না। আমি তোমাকে বলেছিলাম না অনু আমাকে ছাড় দিয়েছে।”
অনন্যা, “তোমরা দুইজনে সত্যি কত বোঝো পরস্পরকে। তুমি অনুকে ছাড় দিয়েছ আবার অনু তোমাকে ছাড় দিয়েছে।”
পারমিতা হাঁটতে হাঁটতে একটু এগিয়ে চলে গেছিল। পেছন ফিরে দেবায়ন আর অনন্যাকে নিবিড় ভাবে হাত ধরে হাঁটতে দেখে হেসে জিজ্ঞেস করে, “এই তোরা কি করছিস রে?”
পারমিতার দিকে তাকায় দেবায়ন, গাড় নীল রঙের বডিস, স্তনের নীচ থেকে পেটের অধিকাংশ খালি। সারঙটা বেশ ভালো ভাবে জড়ানো কোমরে। হাঁটার সময়ে সারঙ্গের চেরা দিক থেকে ফর্সা পা বেড়িয়ে আসে। মনে হয় যেন এক জলপরী এই মাত্র উঠে এল সমুদ্র থেকে। দেবায়ন অনন্যার দৃষ্টি লুকিয়ে পারমিতার দিকে একটা ছোট্ট চুমু ছুঁড়ে দেয়। পারমিতার কান লাল হয়ে যায় লজ্জায়। পশ্চিম আকাশে সূর্য পাটে বসতে চলেছে। পরমিতের ফোন আসে সেইসময়ে, পরমিত পারমিতাকে জানায় যে গোয়া পৌঁছে গেছে কিছুক্ষণের মধ্যেই রিসোর্টে পৌঁছে যাবে। পারমিতা, দেবায়ন আর অনন্যাকে বলে ওদের রিসোর্টে ফিরে যাওয়া উচিত, কিছুক্ষণের মধ্যে পরমিত এসে যাবে। তারপরে ডিনারের সময়ে ওদের বসতে হবে এই ডিলের ব্যাপারে। রিসোর্টের দিকে হাঁটতে হাঁটতে অনন্যাকে বলে যে পরমিত দুই রাতের জন্য গোয়া থাকবে, সেই সময় টুকু ওকে পরমিতের সাথে কাটাতে হবে। অনন্যা একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে সেটা বুঝে নেবে। দেবায়নের বুক ছ্যাঁত করে ওঠে, দুইজনের কাউকে অন্য কারুর সাথে ভাবতে পারে না।
রিসোর্টে ফিরে সবাই পোশাক আশাক বদলে নেয়। পরমিতের সাথে লাউঞ্জে দেখা হয়। পরমিতের বয়স পঞ্চাশের নিচে নয়। পাঞ্জাবী ভদ্রলোক, পাঞ্জাবী হিসাবে যে রকমের লম্বা চওড়া বলে দেবায়ন ধারনা করেছিল তেমন লম্বা নয় তবে একটু চওড়া। পারমিতাকে দেখে হেসে হাত বাড়িয়ে অভিবাদন জানায়। পারমিতা বলে যে ডিনারে কথা হবে। অনন্যা আর দেবায়ন অদুরে দাঁড়িয়ে ছিল। অনন্যা দেবায়নকে বলে, এই লোক খুব জ্বালাবে রাতে। দেবায়ন হেসে ফেলে কথা শুনে, পারমিতা ওকে বলেছিল যে পরমিত সম্ভোগ সঙ্গমে বেশ পটু, সারা রাত ধরে কামখেলা খেলে যাবার মতন ক্ষমতা রাখে। দেবায়ন অনন্যাকে জিজ্ঞেস করে কি দেখে পরমিতের সম্বন্ধে ওই ধারনা হল ওর। অনন্যা বলে যেমন ভাবে পারমিতার হাত ধরে আছে তাতে মনে হয়না সহজে হাত ছাড়বে, পারলে পারমিতাকে ওই লাউঞ্জে দাঁড়িয়ে করে ফেলে। কিন্তু সে সাথে পরমিতের চোখ আশেপাশে যেমন ভাবে ঘোরাফেরা করছে তাতে বেশ বোঝা যায় যে যেরকম মেয়ে পেলেই ওর হল। কিছু পরে পারমিতা, দেবায়নকে আর অনন্যাকে ডেকে পরমিতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
অনন্যার সাথে হাত মেলানোর সময়ে হাত ধরে হেসে ফেলে, “আমি বাংলা সিরিয়াল দেখিনা বটে তবে আপনাকে এখানে দেখে বেশ ভালো লাগছে।”
অনন্যা হাত ছাড়িয়ে হেসে বলে, “শুনে বেশ খুশি হলাম।”
পারমিতা দেবায়নকে দেখিয়ে বলে, “আমার মেয়ের ফিয়ন্সে, মিস্টার দেবায়ন বসাক।”
পরমিত ওর সাথে হাত মিলিয়ে বলে, “তুমি তাহলে এম্পায়ারের মালিক হতে চলেছ। কিসের বিজনেস তোমার?”
দেবায়ন বলতে যাচ্ছিল এখন পর্যন্ত কলেজে পড়ে, পারমিতা ওর কথা কেড়ে নিয়ে বলে, “সোমেশের সাথেই বিজনেসে আছে। আচ্ছা তুমি রুমে যাও, কিছুপরে দেখা হবে। কোথায় বসতে চাও, মামা মিয়া না টিয়া মারিয়াতে? দুটোই পুল সাইড।”
পরমিত বলল, “তোমাদের যেমন ইচ্ছে। আমাকে ফোন করে দিও, আমি চলে আসব।”
পরমিত চলে যাবার পরে, পারমিতা দেবায়নকে বলে, “কাউকে বলার দরকার নেই তুমি কলেজে পড়।”
অনন্যা হাঁ করে তাকিয়ে থাকে পারমিতা আর দেবায়নের দিকে। দেবায়ন কলেজে পড়ে সেটা বিশ্বাস করতে পারে না। অনন্যার অবাক চাহনি দেখে পারমিতা হেসে বলে, “তুই কি ভেবেছিলি, এ সোমেশের সাথে বিজনেসে? হ্যাঁ বটে, আবার নাও বটে!”
দেবায়নের পিঠ থপথপিয়ে বলে, “বিজনেসে নেই তবে এই আমাদের ম্যান ফ্রাইডে, অনুর ফিয়ন্সে।”
অনন্যা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে বলে, “আর কি লুকিয়েছ আমার কাছ থেকে? আমি সেদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম তুমি কে, তুমি ঠিক উত্তর দাও নি।”
দেবায়ন হেসে বলে, “আমি মিথ্যে বলিনি ডিয়ার।”
পারমিতা জিজ্ঞেস করে, “কোথায় বসতে চাও?”
অনন্যা বলে, “পুল সাইড ওপেন কিছুতে নয়, অন্য কোথাও। পরমিতের যা স্বভাব তাতে মনে হয় খাবার চেয়ে বেশি আমাকে খেতে চাইবে। একটু ঢাকা জায়গা হলে ভালো হয়।”
পারমিতা হেসে বলে, “তাহলে কাবাবস এন্ড কারিসে বসা যাবে। হ্যাঁরে তুই, শাড়ি এনেছিস? রাতে ডিনারের সময় একটু বাঙালি বউদের মতন সেজে আসিস। পরমিতের ফ্যান্টাসি, বাঙালি মেয়েকে কাছে পাওয়া।”
অনন্যা মাথা নেড়ে জানিয়ে দেয় যে কথা মতন সেজে আসবে। অনন্যা চলে যাবার পড়ে পারমিতা দেবায়নকে বলে, “তুমি রাতে রুমে থেকে যেও, আমি কটেজে চলে যাবো। অনন্যার সামনে একটু সাবধানে ব্যাবহার করা ভালো।”
দেবায়ন হেসে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, “আমি জানি মিমি।”
পারমিতা, “চল, ড্রেস চেঞ্জ করে ফেলি আর তুমি একবার ফাইল গুলো গুছিয়ে নাও। আমি সোমেশকে ফোনে জিজ্ঞেস করে দেখি কিছু বলে কি না।”
কটেজে ঢুকে দেবায়ন জিন্সের ওপরে একটা সাদা টি শার্ট পরে আর তার ওপরে ছাই রঙের একটা ব্লেজার চড়িয়ে নেয়। পারমিতা একটা গাড় নীল রঙের শাড়ি নিজের নধর দেহপল্লবে জড়িয়ে নেয়। শাড়ির পরতে পরতে যেন আগুন চাপা। দেবায়ন সোফায় বসে দেখে পারমিতার সাজ। ছোটো হাতার ব্লাউজ, বুকের দিকে বেশ গভীর কাটা, স্তনের খাঁজের অনেকটা দেখা যায় ব্লাউজের সামনে থেকে। পিঠের দিকে দুটি দড়ি দিয়ে বাধা, সম্পূর্ণ ফর্সা মসৃণ পিঠ অনাবৃত। নাভির বেশ নিচে শাড়ির গিঁট। পারমিতার রুপ সুধা পান করতে করতে দেবায়ন উত্তেজিত হয়ে ওঠে। পারমিতা ওর দিকে তাকিয়ে হেসে ইশারায় জানায় চুপচাপ বসে থাকতে, যেন দুষ্টুমি না করে। সাজার পরে কটেজ থেকে বেড়িয়ে আসে। পারমিতা, অনন্যাকে ডেকে নেয়। উজ্জ্বল শ্যামলা ত্বকের সাথে অনন্যার আকাশী নীল রঙের শিফনের শাড়ি বেশ মানিয়েছে। শাড়িটা বেশ পাতলা, দেহের আঁকিবুঁকি সব পরিস্ফুটিত। হাতকাটা আকাশী নীল রঙের ব্লাউজ পরনে, কপালে একটা ছোটো টিপ, ঠোঁটে লাল রঙ, চোখের কোলে কাজল। অন্ধকারের রানী, যামিনী সুন্দরী অনন্যার শরীর থেকে মাদকতার ছটা বিচ্ছুরিত হয়। দেবায়ন, অনন্যাকে দেখে বলে ওকে বেশ সুন্দরী দেখাচ্ছে। পারমিতা, পরমিতকে ফোনে জানিয়ে দেয় ওরা কাবাবসে বসবে। কাবাবসে চারজনে বসে একটা কোনার টেবিল দেখে। চৌক টেবিলের চারদিকে চারজন। অনন্যা আর পারমিতা মুখোমুখি, পরমিত আর দেবায়ন মুখোমুখি। ড্রিঙ্কের সাথে কথাবার্তা শুরু হয়।
পরমিত একটা গ্লাসে চুমুক দিয়ে অনন্যাকে জিজ্ঞেস করে, “আপনি বেশ সুন্দরী, শাড়িতে আরো ভালো লাগছে। বাঙালি মেয়েরা শাড়ি না পড়লে মনে হয় গোলাপ ফুলে যেন গন্ধ নেই।”
পারমিতা আর অনন্যা ওর কথা শুনে হেসে ফেলে। দেবায়ন হেসে বলে, “একদম যথার্থ কথা বলেছেন। তবে পাঞ্জাবী মেয়েরা ঘি দুধ খেয়ে একদম সিমলার আপেল হয়ে যায়।”
পরমিত হেসে বলে, “হ্যাঁ, তা হবেই যে। পাঞ্জাবের কাছেই হিমাচল, আপেল সোজা পাহাড় বেয়ে নেমে আসে।”
অনন্যা, পরমিতকে জিজ্ঞেস করে, “কিসের বিজনেস আপনার?”
পরমিত হেসে বলে, “জামা কাপড়ের এক্সপোর্ট আছে, একটা মোটর পার্টসের কারখানা খুলেছিলাম ওই গুরগাওয়ের দিকে কিন্তু মারুতির প্লান্টে গণ্ডগোল দেখে সেই ব্যাবসায় বড় ধাক্কা খেলাম। রিয়াল এস্টেটে এইবারে কিছু টাকা বিনিয়োগ করেছি। এই সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনেক কিছু আছে।”
অনন্যা, “দিল্লীর কোথায় থাকেন?”
পরমিত, “লাজপত নগরে, অনেক দিনের পুরানো বাড়ি আমাদের। আমি দিল্লীতে আসতে বলতাম আপনাদের কিন্তু এই সময়ে দিল্লীতে নামলে কোলকাতার লোক জমে কুলফি হয়ে যেত।” সবাই ওর কথা শুনে হেসে ফেলে। পরমিত অনন্যাকে জিজ্ঞেস করে, “আপনি কবে নায়িকা হচ্ছেন একবার জানাবেন। বাংলা বুঝি না তবে আপনার সেই সিনেমার ডিভিডি কিনে বাড়িতে দেখব।”
অনন্যা হেসে ফেলে পরমিতের কথায়, “তাহলে আপনাকে আরও অপেক্ষা করে থাকতে হবে মিস্টার ধিলন।”
পারমিতা পরমিতকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি বলছিলে একবার যে, ট্রান্সপোর্টে টাকা ঢালবে তার কি হল?”
পরমিত একটু অবাক হয়ে বলে, “আরে মিসেস সেন? সেই কথা তোমার মনে আছে নাকি? সে ত অনেকদিন আগেকার কথা।”
পারমিতা লাজুক হেসে বলে, “তারপরে দেখা আর হল কই সেই রকম ভাবে।”
পরমিত একটা গ্লাসে চুমুক দিয়ে পারমিতাকে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার মিসেস সেন, আমার শেয়ার কিনে কি করতে চলেছ?”
পারমিতা অতশত জানে না, র্যাডিসনের বিজনেস মিটিঙ্গে পারমিতা ছিল না, এবং মিস্টার সেন এইসব কথার কিছুই পারমিতাকে জানায় নি। পারমিতা দেবায়নের দিকে তাকায়। দেবায়ন উত্তর দেয়, “সেই ব্যাপারে নিশ্চয় কাকুর সাথে আপনার বিস্তারিত কথাবার্তা হয়ে গেছে।”
দেবায়ন আসল খবর চেপে যায়, পরমিতের ভুল ভাঙ্গান বোকামোর কাজ।
পরমিত বুদ্ধিমানের মতন মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “হ্যাঁ হয়ে গেছে, যাই হোক। তোমাকে তুমি বলছি কিছু মনে করো না। তোমার কিসের বিজনেস?”
দেবায়ন পারমিতার দিকে তাকিয়ে বলে, “বিজনেসে ঢুকব এবারে।”
পরমিত হেসে বলে, “হ্যাঁ, সেটা বুঝতে পারছি। মিস্টার সেনের মতন বড়োলোক শ্বশুর, বেশ ভালো।”
দেবায়নের চোয়াল শক্ত হয়ে যায় পরমিতের কোথা শুনে। পারমিতা টেবিলের তলা দিয়ে দেবায়নের হাত চেপে শান্ত হতে বলে। দেবায়ন মাথা ঠাণ্ডা করে মজা করে, “এক সাথে রাজকন্যে আর রাজত্ব পেয়ে গেলাম আর কি।”
পরমিত, “ভালো বলেছ।” পারমিতার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “ফাইল দেখে কি কাজ হবে? মেমরেন্ডাম আমাকে অনেক আগেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে আর সেই মতন কথাবার্তা, আলোচনা সব সারা। তোমার কি মত, মিসেস সেন?”
পারমিতা, “দেখো পরমিত, এই বিষয়ে আমার কোন মত নেই। আগেও ছিল না এবারেও নেই। তোমার শেয়ারের যা বর্তমান দাম, সেটা কত? কত পেলে তুমি খুশি?”
পরমিত, “কোম্পানির কুড়ি শতাংশের মালিক আমি। সেই অনুযায়ী পঁয়তাল্লিশ কোটি টাকা হয়। সব মিস্টার সেন জানে, আবার এই সব প্রশ্ন কেন?”
দেবায়ন খানিক ক্ষণ চোখ বন্ধ করে ভাবতে চেষ্টা করে একাউন্টসের হিসেব নিকেশ, তারপরে গম্ভির কণ্ঠে বলে, “না মিস্টার ধিলন, আপনার অঙ্কে ভুল আছে। চল্লিশ কোটি হয়। আপনি যত টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন, তার পাঁচ গুন লাভ আপনি এতদিনে পেয়ে গেছেন। গত কুড়ি বছরে, আপনাকে কবে কত দেওয়া হয়েছে তার পুরো হিসাব আমার কাছে আছে। সেই হিসাব যদি এখানে খুলে বসি তাহলে চল্লিশের চেয়ে কম পাওনা হয় আপনার।”
পরমিত জানত যে পারমিতা এইসবের ব্যাপারে কোনদিন কিছু বলেনা তাই সে প্রশ্নটা পারমিতাকে করেছিল। কিন্তু দেবায়ন ওর হয়ে উত্তর দেবে সেটা ঠিক ভাবে নি। দেবায়নের মুখের উত্তর শুনে পরমিত বাঁকা হেসে বলে, “যদি কাগজে স্বাক্ষর না করি?”
পারমিতা আবার টেবিলের তলা দিয়ে দেবায়নের হাত চেপে ধরে। ইঙ্গিতে জানায় কোন বসচায় না যেতে। দেবায়ন পরমিতকে বলে, “আমি ছোটো, আমি এই খেলায় নতুন। কিন্তু কাকুর সাথে থেকে একটু খেলা আমি শিখে গেছি। কোম্পানি ডিসলভ করে দেব। এই চল্লিশের এক টাকাও আপনি পাবেন না। আর বাকি অংশ নিয়ে আমি কি করব সেটা আমি আপনাকে কেন বলতে যাবো?”
অনন্যার মাথার ওপর দিয়ে এইসব কথাবার্তা বেড়িয়ে যায়, পারমিতার দিকে চেয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি ব্যাপারে কথাবার্তা হচ্ছে। পারমিতা চোখের ইশারায় চুপ করে থাকতে বলে।
পরমিত হেসে ফেলে, “আরে না না, মিস্টার বসাক। আমি এমনি জানতে চাইছিলাম যে দুশো কোটি টাকা নিয়ে তুমি কিসে বিনিয়োগ করতে চলেছ। হে হে… মানে আমাকেও তাহলে একটু সুযোগ দিও ভবিষ্যতে এই আর কি।”
দেবায়ন বুঝে যায়, কোন প্রকৃতির মানুষ মিস্টার পরমিত সিং ধিলন। এতক্ষণ ওর কণ্ঠে সম্ভ্রমের ছোঁয়া ছিলনা, দেবায়নের কথা শুনে পরমিতের গলার স্বর পালটে গেছে। দেবায়ন বাঁকা হেসে বলে, “আমি জানি আপনি মজা করছিলেন। তবে আপনাকে চল্লিশ আর মিসেস চৌধুরীকে পঞ্চাস দেবার পরে এমন কিছু বাঁচবে না যাতে একটা বড় কোম্পানি খোলা যাবে। আগে টাকা আসুক তারপরে রোডম্যাপ তৈরি করব।”
পরমিত, “তোমার মতন মানুষ, কখন টাকার জন্য অপেক্ষা করে না, মিস্টার বসাক। তুমি পরবর্তী পদক্ষেপ ভেবেই রেখেছ, বলতে চাইছ না সেটা আলাদা ব্যাপার।”
ড্রিঙ্ক আর স্টারটার শেষে, দেবায়ন ফাইল এগিয়ে দেয় পরমিতের দিকে। পরমিত হেসে বলে, “ডিনার শেষ হোক, তুমি ম্যাডামের হাতে ফাইল পাঠিয়ে দিও আমি সই করে দেব।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “দুটো কাগজ আছে ওইখানে। একটা চল্লিশ একটা পঁয়তাল্লিশ, কোনটা সই করবেন?”
পরমিত হেসে বলে, “আরে বাবা মিস্টার বসাক, সি.এম.ডি বসে আছে, একটু আলাপ করব না? তুমি মিসেস সেনের হাতে ফাইল দিয়ে দিও, আমি একদম ঠিক কাগজে সই করে দেব। তুমি চিন্তা করো না।”
দেবায়ন চিবিয়ে বলে, “আপনাকে চল্লিশে সই করতে হবে না। আমার সামনে আপনি পয়তাল্লিশে সই করে দিন, সেই সাথে কাকিমাও সই করে দেবে ট্র্যান্সফার কাগজ। দুটো কপি করা আছে, একটা আপনার কাছে থাকবে, আসলটা আমার কাছে।”
পরমিত হতভম্ব হয়ে যায় দেবায়নের কথা শুনে। তিনি পাক্কা ব্যাবসাদার। নারী মাংসের চেয়ে টাকা বেশি চেনে, তবে শেষ বারের মতন পারমিতাকে ভোগ করার লোভ ছাড়তে পারে না। পরমিত মানতে পারে না, যে কালকের একটা ছেলে ওকে নেস্তানাবুদ করে দেবে। পরমিত বুঝে যায় যে দেবায়ন ঘাসে মুখ দিয়ে চলে না, পরমিতের আসল উদ্দেশ্য ধরে ফেলেছে আর তাই পাঁচ কোটি টাকা ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে। পরমিত ম্লান হেসে বলে, “দাও কোথায় সই করতে হবে দেখি।”
পারমিতা, দেবায়নের শক্ত চোয়াল দেখে মনের অবস্থা বুঝে যায়। দেবায়ন এক দৃষ্টে পরমিতের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। এযেন দুইজনের মুক যুদ্ধ। পারমিতা অবস্থার সামাল দেওয়ার জন্য দুইজনকে হেসে বলে, “আরে বাবা, থাম তোমরা। ডিনার করে ফেলি। কাবাবসে এসেছি এখানকার গলোটি কাবাব খেয়ে দেখো, জীবে দিলেই গলে যাবে এমন দারুন বানায়।”
পারমিতা অনন্যাকে ইশারায় কথা বলতে বলে, দেবায়নকে শান্ত করতে ইশারা করে।
দেবায়ন, অনুপমাকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে ওরা গোয়াতে ভালো ভাবে পৌঁছে গেছে। অনুপমা দেবায়নকে খোঁচা মেরে জিজ্ঞেস করে যে মিমি কে একা পেয়ে কি হল। অনুপমার কথা শুনে, দেবায়নের কান ঈষৎ লাল হয়ে ওঠে লজ্জায়। অনুপমা হেসে বলে, গোয়াতে যেন বেশ মজা করে আর সেই সাথে অনন্যাকে কাছে পেয়ে যাবে ওর সাথেও যেন চুটিয়ে আনন্দ ফুর্তি করে নেয়। দেবায়ন ফোনে অনুপমাকে চুমু খেয়ে বলে ওর মনে যদি কাউকে ধরে তাহলে তাঁর সাথে আনন্দ করতে পারে। অনুপমা বলে সময় হলে জানিয়ে দেবে। পায়েলের প্রেমিকের ওপরে নজর ছিল অনুপমার তখন জানত না যে পায়েলের প্রেমিক ওর ভাই হবে তাই বর্তমানে, রূপক ছাড়া কারুর ওপরে তেমন নজর নেই। হেসে দেয় দেবায়ন, বলে পরীক্ষার পড়ে চারজন মিলে গোয়াতে বেড়াতে আসবে তখন রূপক আর অনুপমাকে ছেড়ে দেবে।
পারমিতা স্নান সেরে বেড়িয়ে আসে শুধু ব্রা আর প্যান্টি পরে। ফর্সা নধর দেহে, গোলাপি লেস ব্রা আর ক্ষুদ্র গোলাপি প্যান্টি। দেবায়নের লিঙ্গ আবার জেগে ওঠে। তোয়ালের নিচে দেবায়নের লিঙ্গের নড়াচড়া দেখে পারমিতা হেসে দেয়। সুটকেস থেকে একটা বডিস বের করে পরে নেয় সেই সাথে কোমরে পেঁচিয়ে নেয় একটা সারঙ। দেবায়নকে ঠেলে স্নানে ঢুকিয়ে দেয় পারমিতা। দেবায়ন স্নান সেরে বেড়িয়ে একটা টি শার্ট আর বারমুডা গলিয়ে নেয়।
অনন্যার ফোন আসে, গোয়া এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই রিসোর্টে চলে আসবে। পারমিতা পরমিতকে ফোন করে জেনে নেয় ওর অবস্থান। পরমিত মুম্বাই পৌঁছে গেছে, সন্ধ্যের মধ্যে রিসোর্টে পৌঁছে যাবে। পারমিতা আর দেবায়ন লাউঞ্জে দিয়ে অনন্যার জন্য অপেক্ষা করে। কিছু পরে অনন্যা রিসোর্টে পৌঁছে যায়। দেবায়ন অনন্যাকে দেখে, পরনে একটা জিন্সের কাপ্রি আর টপের ওপরে ব্লেজার। পোশাকের ধরন দেখে বোঝা যায় বেশ দামী। অভিনেত্রী বলে ওইখানে কেউ ওকে চেনে না, তাই বিশেষ মাথাব্যাথ নেই ওদের। পারমিতাকে দেখে অনন্যা প্রায় দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে বলে, ভারী সুন্দরী দেখাচ্ছে পারমিতাকে। দুই সুন্দরী রমণীর আলিঙ্গন দৃশ্য বেশ উপভোগ করে দেবায়ন। পারমিতা, অনন্যার কপালে চুমু খেয়ে কুশল ইত্যাদি জিজ্ঞেস করে। পাশে দেবায়নকে দেখে একটু অবাক হয়ে যায় অনন্যা। পারমিতা আসল সম্পর্ক জানায় না, অনন্যাকে বলে বিজনেস ডিল করার জন্য দেবায়নকে আনা হয়েছে। পারমিতা অনন্যাকে ওর রুমে নিয়ে যায়। অনন্যা, ক্লায়েন্টের কথা জিজ্ঞেস করলে বলে ওদের এক ডাইরেক্টর, মিস্টার পরমিত সিংহ ধিলন, পাঞ্জাবী ভদ্রলোক, দিল্লীতে থাকেন, সন্ধ্যের আগে পৌঁছে যাবেন।
অনন্যা জামাকাপড় বদলে নেয়, একটা ঢিলে বারমুডা আর হাতকাটা টপ পরে। চাপা টপের ভেতর দিয়ে দুই ভারী স্তন ফেটে বেড়িয়ে আসার যোগাড়। তিনজনে সমুদ্রতটের দিকে হাঁটতে শুরু করে। রিসোর্ট থেকে একটা ছোটো পথ কাভেলসসিম বিচের দিকে গেছে। অনন্যা ইচ্ছে করে দেবায়নের পাশে পাশে হাটে। অনন্যার সামনে পারমিতাকে একটু সম্ভ্রম করে চলে দেবায়ন। তৃতীয় কোন ব্যাক্তির সামনে ওদের গোপন সম্পর্ক খোলসা করতে নারাজ।
অনন্যা পারমিতাকে জিজ্ঞেস করে, “ম্যাম, তোমার জামাই বেশ ভালো।”
পারমিতা হেসে জিজ্ঞেস করে, “কেন? তুই কি করে জানলি ওর কথা?”
পারমিতা আড় চোখে দেবায়নের দিকে তাকায়। দেবায়নের শরীর দুই রমণীর উত্তেজক দৃশ্যে আর অনন্যার নরম হাতের ছোঁয়ায় উত্তপ হয়ে ওঠে।
অনন্যা দুষ্টু হেসে বলে, “আর বল না ম্যাম, তুমি যেন কিছুই জানো না। র্যাডিসন ফোরটের পার্টিতে দেখা হল, কথা হল। ছাড়ো অসব কথা। এত বিজনেস ডিল হচ্ছে কি ব্যাপার? কয় খানা ফার্ম খুলবে তোমরা?”
পারমিতা অনন্যার থুতনি নাড়িয়ে আদর করে বলে, “পাগলি, সত্যি বলছি আমি কিছু জানিনা। ওই দেবায়ন আর সোমেশ জানে এইসব ব্যাপার। আমাকে শুধু বলে দেওয়া হয় যে এই কাগজে সই কর আমি সই করে দেই।”
বিকেলের পড়ন্ত বেলায়, সমুদ্রের ধারে বেশ কয়েক জোড়া ভারতীয় আর বিদেশী পর্যটকের দেখা মেলে। বিদেশী মেয়েদের পোশাক আশাক একটু খোলামেলা, তবে কেউ বিকিনি পরে নেই। অনেকের পরনে সিঙ্গেল পিস সুইমসুট। এক ভারতীয় যুগল, অদুরে সমুদ্রের জলে খেলায় মেতে। মেয়েটার পরনে লাল রঙের ব্রা আর লাল প্যান্টি, একটা সারঙ কোমরে জড়ানো ছিল কিন্তু সমুদ্রের ঢেউ আর সাথীর টানাটানিতে সারঙ খুলে গেছে। প্যান্টিটা বেশ ক্ষুদ্র, একটা ছোটো ত্রিকোণ কাপড়ে যোনিদেশ ঢাকা, পেছনের দড়ি দুই পাছার খাঁজে হারিয়ে গেছে। ছেলেটার ঊর্ধ্বাঙ্গ খালি, জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে মেয়েটাকে জল ছিটিয়ে, আদর করে জড়িয়ে ধরে ব্যাতিব্যাস্ত করে তুলেছে। সেই যুগলকে দেখে মনে হল সদ্য বিয়ে করে হানিমুনে এসেছে।
অনন্যা দেবায়নের হাতে চিমটি কেটে চোখের ইঙ্গিতে ওই যুগলের দিকে দেখায়। দেবায়ন অনন্যার কাঁধে হাত দিয়ে কাছে টেনে কানেকানে বলে, “যাবে নাকি জলে?”
অনন্যা, “ইসসস… শখ দেখো ছেলের। তুমি ম্যামের সামনে আমাকে নিয়ে যাবে? ম্যাম কি ভাববে বল ত?”
দেবায়ন, “তোমার ম্যাম কিছু ভাববে না। আমি তোমাকে বলেছিলাম না অনু আমাকে ছাড় দিয়েছে।”
অনন্যা, “তোমরা দুইজনে সত্যি কত বোঝো পরস্পরকে। তুমি অনুকে ছাড় দিয়েছ আবার অনু তোমাকে ছাড় দিয়েছে।”
পারমিতা হাঁটতে হাঁটতে একটু এগিয়ে চলে গেছিল। পেছন ফিরে দেবায়ন আর অনন্যাকে নিবিড় ভাবে হাত ধরে হাঁটতে দেখে হেসে জিজ্ঞেস করে, “এই তোরা কি করছিস রে?”
পারমিতার দিকে তাকায় দেবায়ন, গাড় নীল রঙের বডিস, স্তনের নীচ থেকে পেটের অধিকাংশ খালি। সারঙটা বেশ ভালো ভাবে জড়ানো কোমরে। হাঁটার সময়ে সারঙ্গের চেরা দিক থেকে ফর্সা পা বেড়িয়ে আসে। মনে হয় যেন এক জলপরী এই মাত্র উঠে এল সমুদ্র থেকে। দেবায়ন অনন্যার দৃষ্টি লুকিয়ে পারমিতার দিকে একটা ছোট্ট চুমু ছুঁড়ে দেয়। পারমিতার কান লাল হয়ে যায় লজ্জায়। পশ্চিম আকাশে সূর্য পাটে বসতে চলেছে। পরমিতের ফোন আসে সেইসময়ে, পরমিত পারমিতাকে জানায় যে গোয়া পৌঁছে গেছে কিছুক্ষণের মধ্যেই রিসোর্টে পৌঁছে যাবে। পারমিতা, দেবায়ন আর অনন্যাকে বলে ওদের রিসোর্টে ফিরে যাওয়া উচিত, কিছুক্ষণের মধ্যে পরমিত এসে যাবে। তারপরে ডিনারের সময়ে ওদের বসতে হবে এই ডিলের ব্যাপারে। রিসোর্টের দিকে হাঁটতে হাঁটতে অনন্যাকে বলে যে পরমিত দুই রাতের জন্য গোয়া থাকবে, সেই সময় টুকু ওকে পরমিতের সাথে কাটাতে হবে। অনন্যা একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে সেটা বুঝে নেবে। দেবায়নের বুক ছ্যাঁত করে ওঠে, দুইজনের কাউকে অন্য কারুর সাথে ভাবতে পারে না।
রিসোর্টে ফিরে সবাই পোশাক আশাক বদলে নেয়। পরমিতের সাথে লাউঞ্জে দেখা হয়। পরমিতের বয়স পঞ্চাশের নিচে নয়। পাঞ্জাবী ভদ্রলোক, পাঞ্জাবী হিসাবে যে রকমের লম্বা চওড়া বলে দেবায়ন ধারনা করেছিল তেমন লম্বা নয় তবে একটু চওড়া। পারমিতাকে দেখে হেসে হাত বাড়িয়ে অভিবাদন জানায়। পারমিতা বলে যে ডিনারে কথা হবে। অনন্যা আর দেবায়ন অদুরে দাঁড়িয়ে ছিল। অনন্যা দেবায়নকে বলে, এই লোক খুব জ্বালাবে রাতে। দেবায়ন হেসে ফেলে কথা শুনে, পারমিতা ওকে বলেছিল যে পরমিত সম্ভোগ সঙ্গমে বেশ পটু, সারা রাত ধরে কামখেলা খেলে যাবার মতন ক্ষমতা রাখে। দেবায়ন অনন্যাকে জিজ্ঞেস করে কি দেখে পরমিতের সম্বন্ধে ওই ধারনা হল ওর। অনন্যা বলে যেমন ভাবে পারমিতার হাত ধরে আছে তাতে মনে হয়না সহজে হাত ছাড়বে, পারলে পারমিতাকে ওই লাউঞ্জে দাঁড়িয়ে করে ফেলে। কিন্তু সে সাথে পরমিতের চোখ আশেপাশে যেমন ভাবে ঘোরাফেরা করছে তাতে বেশ বোঝা যায় যে যেরকম মেয়ে পেলেই ওর হল। কিছু পরে পারমিতা, দেবায়নকে আর অনন্যাকে ডেকে পরমিতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
অনন্যার সাথে হাত মেলানোর সময়ে হাত ধরে হেসে ফেলে, “আমি বাংলা সিরিয়াল দেখিনা বটে তবে আপনাকে এখানে দেখে বেশ ভালো লাগছে।”
অনন্যা হাত ছাড়িয়ে হেসে বলে, “শুনে বেশ খুশি হলাম।”
পারমিতা দেবায়নকে দেখিয়ে বলে, “আমার মেয়ের ফিয়ন্সে, মিস্টার দেবায়ন বসাক।”
পরমিত ওর সাথে হাত মিলিয়ে বলে, “তুমি তাহলে এম্পায়ারের মালিক হতে চলেছ। কিসের বিজনেস তোমার?”
দেবায়ন বলতে যাচ্ছিল এখন পর্যন্ত কলেজে পড়ে, পারমিতা ওর কথা কেড়ে নিয়ে বলে, “সোমেশের সাথেই বিজনেসে আছে। আচ্ছা তুমি রুমে যাও, কিছুপরে দেখা হবে। কোথায় বসতে চাও, মামা মিয়া না টিয়া মারিয়াতে? দুটোই পুল সাইড।”
পরমিত বলল, “তোমাদের যেমন ইচ্ছে। আমাকে ফোন করে দিও, আমি চলে আসব।”
পরমিত চলে যাবার পরে, পারমিতা দেবায়নকে বলে, “কাউকে বলার দরকার নেই তুমি কলেজে পড়।”
অনন্যা হাঁ করে তাকিয়ে থাকে পারমিতা আর দেবায়নের দিকে। দেবায়ন কলেজে পড়ে সেটা বিশ্বাস করতে পারে না। অনন্যার অবাক চাহনি দেখে পারমিতা হেসে বলে, “তুই কি ভেবেছিলি, এ সোমেশের সাথে বিজনেসে? হ্যাঁ বটে, আবার নাও বটে!”
দেবায়নের পিঠ থপথপিয়ে বলে, “বিজনেসে নেই তবে এই আমাদের ম্যান ফ্রাইডে, অনুর ফিয়ন্সে।”
অনন্যা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে বলে, “আর কি লুকিয়েছ আমার কাছ থেকে? আমি সেদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম তুমি কে, তুমি ঠিক উত্তর দাও নি।”
দেবায়ন হেসে বলে, “আমি মিথ্যে বলিনি ডিয়ার।”
পারমিতা জিজ্ঞেস করে, “কোথায় বসতে চাও?”
অনন্যা বলে, “পুল সাইড ওপেন কিছুতে নয়, অন্য কোথাও। পরমিতের যা স্বভাব তাতে মনে হয় খাবার চেয়ে বেশি আমাকে খেতে চাইবে। একটু ঢাকা জায়গা হলে ভালো হয়।”
পারমিতা হেসে বলে, “তাহলে কাবাবস এন্ড কারিসে বসা যাবে। হ্যাঁরে তুই, শাড়ি এনেছিস? রাতে ডিনারের সময় একটু বাঙালি বউদের মতন সেজে আসিস। পরমিতের ফ্যান্টাসি, বাঙালি মেয়েকে কাছে পাওয়া।”
অনন্যা মাথা নেড়ে জানিয়ে দেয় যে কথা মতন সেজে আসবে। অনন্যা চলে যাবার পড়ে পারমিতা দেবায়নকে বলে, “তুমি রাতে রুমে থেকে যেও, আমি কটেজে চলে যাবো। অনন্যার সামনে একটু সাবধানে ব্যাবহার করা ভালো।”
দেবায়ন হেসে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, “আমি জানি মিমি।”
পারমিতা, “চল, ড্রেস চেঞ্জ করে ফেলি আর তুমি একবার ফাইল গুলো গুছিয়ে নাও। আমি সোমেশকে ফোনে জিজ্ঞেস করে দেখি কিছু বলে কি না।”
কটেজে ঢুকে দেবায়ন জিন্সের ওপরে একটা সাদা টি শার্ট পরে আর তার ওপরে ছাই রঙের একটা ব্লেজার চড়িয়ে নেয়। পারমিতা একটা গাড় নীল রঙের শাড়ি নিজের নধর দেহপল্লবে জড়িয়ে নেয়। শাড়ির পরতে পরতে যেন আগুন চাপা। দেবায়ন সোফায় বসে দেখে পারমিতার সাজ। ছোটো হাতার ব্লাউজ, বুকের দিকে বেশ গভীর কাটা, স্তনের খাঁজের অনেকটা দেখা যায় ব্লাউজের সামনে থেকে। পিঠের দিকে দুটি দড়ি দিয়ে বাধা, সম্পূর্ণ ফর্সা মসৃণ পিঠ অনাবৃত। নাভির বেশ নিচে শাড়ির গিঁট। পারমিতার রুপ সুধা পান করতে করতে দেবায়ন উত্তেজিত হয়ে ওঠে। পারমিতা ওর দিকে তাকিয়ে হেসে ইশারায় জানায় চুপচাপ বসে থাকতে, যেন দুষ্টুমি না করে। সাজার পরে কটেজ থেকে বেড়িয়ে আসে। পারমিতা, অনন্যাকে ডেকে নেয়। উজ্জ্বল শ্যামলা ত্বকের সাথে অনন্যার আকাশী নীল রঙের শিফনের শাড়ি বেশ মানিয়েছে। শাড়িটা বেশ পাতলা, দেহের আঁকিবুঁকি সব পরিস্ফুটিত। হাতকাটা আকাশী নীল রঙের ব্লাউজ পরনে, কপালে একটা ছোটো টিপ, ঠোঁটে লাল রঙ, চোখের কোলে কাজল। অন্ধকারের রানী, যামিনী সুন্দরী অনন্যার শরীর থেকে মাদকতার ছটা বিচ্ছুরিত হয়। দেবায়ন, অনন্যাকে দেখে বলে ওকে বেশ সুন্দরী দেখাচ্ছে। পারমিতা, পরমিতকে ফোনে জানিয়ে দেয় ওরা কাবাবসে বসবে। কাবাবসে চারজনে বসে একটা কোনার টেবিল দেখে। চৌক টেবিলের চারদিকে চারজন। অনন্যা আর পারমিতা মুখোমুখি, পরমিত আর দেবায়ন মুখোমুখি। ড্রিঙ্কের সাথে কথাবার্তা শুরু হয়।
পরমিত একটা গ্লাসে চুমুক দিয়ে অনন্যাকে জিজ্ঞেস করে, “আপনি বেশ সুন্দরী, শাড়িতে আরো ভালো লাগছে। বাঙালি মেয়েরা শাড়ি না পড়লে মনে হয় গোলাপ ফুলে যেন গন্ধ নেই।”
পারমিতা আর অনন্যা ওর কথা শুনে হেসে ফেলে। দেবায়ন হেসে বলে, “একদম যথার্থ কথা বলেছেন। তবে পাঞ্জাবী মেয়েরা ঘি দুধ খেয়ে একদম সিমলার আপেল হয়ে যায়।”
পরমিত হেসে বলে, “হ্যাঁ, তা হবেই যে। পাঞ্জাবের কাছেই হিমাচল, আপেল সোজা পাহাড় বেয়ে নেমে আসে।”
অনন্যা, পরমিতকে জিজ্ঞেস করে, “কিসের বিজনেস আপনার?”
পরমিত হেসে বলে, “জামা কাপড়ের এক্সপোর্ট আছে, একটা মোটর পার্টসের কারখানা খুলেছিলাম ওই গুরগাওয়ের দিকে কিন্তু মারুতির প্লান্টে গণ্ডগোল দেখে সেই ব্যাবসায় বড় ধাক্কা খেলাম। রিয়াল এস্টেটে এইবারে কিছু টাকা বিনিয়োগ করেছি। এই সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনেক কিছু আছে।”
অনন্যা, “দিল্লীর কোথায় থাকেন?”
পরমিত, “লাজপত নগরে, অনেক দিনের পুরানো বাড়ি আমাদের। আমি দিল্লীতে আসতে বলতাম আপনাদের কিন্তু এই সময়ে দিল্লীতে নামলে কোলকাতার লোক জমে কুলফি হয়ে যেত।” সবাই ওর কথা শুনে হেসে ফেলে। পরমিত অনন্যাকে জিজ্ঞেস করে, “আপনি কবে নায়িকা হচ্ছেন একবার জানাবেন। বাংলা বুঝি না তবে আপনার সেই সিনেমার ডিভিডি কিনে বাড়িতে দেখব।”
অনন্যা হেসে ফেলে পরমিতের কথায়, “তাহলে আপনাকে আরও অপেক্ষা করে থাকতে হবে মিস্টার ধিলন।”
পারমিতা পরমিতকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি বলছিলে একবার যে, ট্রান্সপোর্টে টাকা ঢালবে তার কি হল?”
পরমিত একটু অবাক হয়ে বলে, “আরে মিসেস সেন? সেই কথা তোমার মনে আছে নাকি? সে ত অনেকদিন আগেকার কথা।”
পারমিতা লাজুক হেসে বলে, “তারপরে দেখা আর হল কই সেই রকম ভাবে।”
পরমিত একটা গ্লাসে চুমুক দিয়ে পারমিতাকে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার মিসেস সেন, আমার শেয়ার কিনে কি করতে চলেছ?”
পারমিতা অতশত জানে না, র্যাডিসনের বিজনেস মিটিঙ্গে পারমিতা ছিল না, এবং মিস্টার সেন এইসব কথার কিছুই পারমিতাকে জানায় নি। পারমিতা দেবায়নের দিকে তাকায়। দেবায়ন উত্তর দেয়, “সেই ব্যাপারে নিশ্চয় কাকুর সাথে আপনার বিস্তারিত কথাবার্তা হয়ে গেছে।”
দেবায়ন আসল খবর চেপে যায়, পরমিতের ভুল ভাঙ্গান বোকামোর কাজ।
পরমিত বুদ্ধিমানের মতন মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “হ্যাঁ হয়ে গেছে, যাই হোক। তোমাকে তুমি বলছি কিছু মনে করো না। তোমার কিসের বিজনেস?”
দেবায়ন পারমিতার দিকে তাকিয়ে বলে, “বিজনেসে ঢুকব এবারে।”
পরমিত হেসে বলে, “হ্যাঁ, সেটা বুঝতে পারছি। মিস্টার সেনের মতন বড়োলোক শ্বশুর, বেশ ভালো।”
দেবায়নের চোয়াল শক্ত হয়ে যায় পরমিতের কোথা শুনে। পারমিতা টেবিলের তলা দিয়ে দেবায়নের হাত চেপে শান্ত হতে বলে। দেবায়ন মাথা ঠাণ্ডা করে মজা করে, “এক সাথে রাজকন্যে আর রাজত্ব পেয়ে গেলাম আর কি।”
পরমিত, “ভালো বলেছ।” পারমিতার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “ফাইল দেখে কি কাজ হবে? মেমরেন্ডাম আমাকে অনেক আগেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে আর সেই মতন কথাবার্তা, আলোচনা সব সারা। তোমার কি মত, মিসেস সেন?”
পারমিতা, “দেখো পরমিত, এই বিষয়ে আমার কোন মত নেই। আগেও ছিল না এবারেও নেই। তোমার শেয়ারের যা বর্তমান দাম, সেটা কত? কত পেলে তুমি খুশি?”
পরমিত, “কোম্পানির কুড়ি শতাংশের মালিক আমি। সেই অনুযায়ী পঁয়তাল্লিশ কোটি টাকা হয়। সব মিস্টার সেন জানে, আবার এই সব প্রশ্ন কেন?”
দেবায়ন খানিক ক্ষণ চোখ বন্ধ করে ভাবতে চেষ্টা করে একাউন্টসের হিসেব নিকেশ, তারপরে গম্ভির কণ্ঠে বলে, “না মিস্টার ধিলন, আপনার অঙ্কে ভুল আছে। চল্লিশ কোটি হয়। আপনি যত টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন, তার পাঁচ গুন লাভ আপনি এতদিনে পেয়ে গেছেন। গত কুড়ি বছরে, আপনাকে কবে কত দেওয়া হয়েছে তার পুরো হিসাব আমার কাছে আছে। সেই হিসাব যদি এখানে খুলে বসি তাহলে চল্লিশের চেয়ে কম পাওনা হয় আপনার।”
পরমিত জানত যে পারমিতা এইসবের ব্যাপারে কোনদিন কিছু বলেনা তাই সে প্রশ্নটা পারমিতাকে করেছিল। কিন্তু দেবায়ন ওর হয়ে উত্তর দেবে সেটা ঠিক ভাবে নি। দেবায়নের মুখের উত্তর শুনে পরমিত বাঁকা হেসে বলে, “যদি কাগজে স্বাক্ষর না করি?”
পারমিতা আবার টেবিলের তলা দিয়ে দেবায়নের হাত চেপে ধরে। ইঙ্গিতে জানায় কোন বসচায় না যেতে। দেবায়ন পরমিতকে বলে, “আমি ছোটো, আমি এই খেলায় নতুন। কিন্তু কাকুর সাথে থেকে একটু খেলা আমি শিখে গেছি। কোম্পানি ডিসলভ করে দেব। এই চল্লিশের এক টাকাও আপনি পাবেন না। আর বাকি অংশ নিয়ে আমি কি করব সেটা আমি আপনাকে কেন বলতে যাবো?”
অনন্যার মাথার ওপর দিয়ে এইসব কথাবার্তা বেড়িয়ে যায়, পারমিতার দিকে চেয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি ব্যাপারে কথাবার্তা হচ্ছে। পারমিতা চোখের ইশারায় চুপ করে থাকতে বলে।
পরমিত হেসে ফেলে, “আরে না না, মিস্টার বসাক। আমি এমনি জানতে চাইছিলাম যে দুশো কোটি টাকা নিয়ে তুমি কিসে বিনিয়োগ করতে চলেছ। হে হে… মানে আমাকেও তাহলে একটু সুযোগ দিও ভবিষ্যতে এই আর কি।”
দেবায়ন বুঝে যায়, কোন প্রকৃতির মানুষ মিস্টার পরমিত সিং ধিলন। এতক্ষণ ওর কণ্ঠে সম্ভ্রমের ছোঁয়া ছিলনা, দেবায়নের কথা শুনে পরমিতের গলার স্বর পালটে গেছে। দেবায়ন বাঁকা হেসে বলে, “আমি জানি আপনি মজা করছিলেন। তবে আপনাকে চল্লিশ আর মিসেস চৌধুরীকে পঞ্চাস দেবার পরে এমন কিছু বাঁচবে না যাতে একটা বড় কোম্পানি খোলা যাবে। আগে টাকা আসুক তারপরে রোডম্যাপ তৈরি করব।”
পরমিত, “তোমার মতন মানুষ, কখন টাকার জন্য অপেক্ষা করে না, মিস্টার বসাক। তুমি পরবর্তী পদক্ষেপ ভেবেই রেখেছ, বলতে চাইছ না সেটা আলাদা ব্যাপার।”
ড্রিঙ্ক আর স্টারটার শেষে, দেবায়ন ফাইল এগিয়ে দেয় পরমিতের দিকে। পরমিত হেসে বলে, “ডিনার শেষ হোক, তুমি ম্যাডামের হাতে ফাইল পাঠিয়ে দিও আমি সই করে দেব।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “দুটো কাগজ আছে ওইখানে। একটা চল্লিশ একটা পঁয়তাল্লিশ, কোনটা সই করবেন?”
পরমিত হেসে বলে, “আরে বাবা মিস্টার বসাক, সি.এম.ডি বসে আছে, একটু আলাপ করব না? তুমি মিসেস সেনের হাতে ফাইল দিয়ে দিও, আমি একদম ঠিক কাগজে সই করে দেব। তুমি চিন্তা করো না।”
দেবায়ন চিবিয়ে বলে, “আপনাকে চল্লিশে সই করতে হবে না। আমার সামনে আপনি পয়তাল্লিশে সই করে দিন, সেই সাথে কাকিমাও সই করে দেবে ট্র্যান্সফার কাগজ। দুটো কপি করা আছে, একটা আপনার কাছে থাকবে, আসলটা আমার কাছে।”
পরমিত হতভম্ব হয়ে যায় দেবায়নের কথা শুনে। তিনি পাক্কা ব্যাবসাদার। নারী মাংসের চেয়ে টাকা বেশি চেনে, তবে শেষ বারের মতন পারমিতাকে ভোগ করার লোভ ছাড়তে পারে না। পরমিত মানতে পারে না, যে কালকের একটা ছেলে ওকে নেস্তানাবুদ করে দেবে। পরমিত বুঝে যায় যে দেবায়ন ঘাসে মুখ দিয়ে চলে না, পরমিতের আসল উদ্দেশ্য ধরে ফেলেছে আর তাই পাঁচ কোটি টাকা ছেড়ে দিতে রাজি হয়েছে। পরমিত ম্লান হেসে বলে, “দাও কোথায় সই করতে হবে দেখি।”
পারমিতা, দেবায়নের শক্ত চোয়াল দেখে মনের অবস্থা বুঝে যায়। দেবায়ন এক দৃষ্টে পরমিতের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। এযেন দুইজনের মুক যুদ্ধ। পারমিতা অবস্থার সামাল দেওয়ার জন্য দুইজনকে হেসে বলে, “আরে বাবা, থাম তোমরা। ডিনার করে ফেলি। কাবাবসে এসেছি এখানকার গলোটি কাবাব খেয়ে দেখো, জীবে দিলেই গলে যাবে এমন দারুন বানায়।”
পারমিতা অনন্যাকে ইশারায় কথা বলতে বলে, দেবায়নকে শান্ত করতে ইশারা করে।