30-09-2020, 01:55 PM
পর্ব ১০
১০ (খ)
পরদিন সকালে তুলিকে কলেজে দিয়েই তড়িঘড়ি করে একটা রিক্সা খুজছিল শান্তা। তখনই পেছন থেকে নারী গলায় ডাক শুনে একদম চমকে উঠলো। ওমনিতেই তাড়াহুড়া তার আজ। ফয়সাল আজ একটু দেরি করেই বেড়িয়েছে। শান্তা ভেবেছিলো গোসল করেই তারপর বের হবে মেয়েকে নিয়ে। কিন্তু আর সময় ছিল না হাতে। বাড়ি ফিরে চট করে একবার গোসল করে নিতে চায় শান্তা। এসব ভাবতে ভাবতেই শান্তা যখন ফিরে চাইলো, তখন একদম বরফ এর মত জমে গেলো। ঠিক পেছনে হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে এক ভদ্রমহিলা। তাকে ভুলে নি শান্তা একদমই। চেহারারটা কাল রাতেও একবার চোখের সামনে ভেসেছে তার। রাজীব এর বাসা থেকে বের হয়ে সিড়ি বেয়ে নামার সময় এই মহিলার সামনেই পড়েছিল শান্তা। ইনি এখানে কি করছে!
“আপনাকে না ওদিন রাজীব এর বাসায় দেখলাম?” মহিলা হাসিমুখেই তাকিয়ে আছে। তবে গলা শুকিয়ে গেছে শান্তার। থম্থম করছে ওর মগজ। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। পাক্কা আধ মিনিট যেন ঠাই দাড়িয়ে রইলো শান্তা। তারপর যখন কথা বলে উঠলো, তখন ওর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ফুটেছে।
“জি…চিনতে পেড়েছি আপনাকে - তাই চেনা চেনা লাগছিল… মানে… আর কি...”
“রাজীব কিছু হয় নাকি আপনার?” মহিলার হাসি ধিরে ধিরে মিলিয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে চোখ দুটো সরু হচ্ছে। শান্তা চট করে মাথা নাড়ে।
“নাহ...”
“ওহ।” হাসিটা আবার ফিরে আসে মহিলার মুখে। “মেয়েকে কলেজে দিতে এলেন বোধহয়! দেখলাম...”
“হ্যাঁ,” ঢোক গিলে শান্তা। “আপ... নি?”
“আমিও,” মহিলাটি জবাব দেয়। “আমার মেয়ে অবশ্য একা একাই আসে। ভেনে করে আর কি। আজ ভেনটা আসে নি, তাই নিজেই নিয়ে এলাম।”
“ওহ...” শান্তা বড় করে দম নেয়। “আমার একটু তাড়া আছে...”
“হ্যাঁ হ্যাঁ, আরেকদিন কথা হবে নি,” মহিলা নাছোড়বান্দা যেন। “রাজীব এর ওখানে এলে আমার বাসা থেকে ঘুরে যাবেন একদিন,”
“আচ্ছা ঠিক আছে,” শান্তা আর রিক্সা নেয় না। হনহন করে হাটা দেয়। অন্য দিনের তুলনায় একটু দ্রুতই হাটে ও। চোখ মুখ থম্থম করছে তার। পথে একবারও থামে না শান্তা। সোজা বাসায় ফিরে দরজা খুলে ফ্রিজ এর সামনে দাড়ায়।
ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা পানি বের করে খেতে খেতে শান্তা যেন বাস্তবে ফিরে। এ নিতান্তই একটা কাকতালীয় ব্যাপার। হয়তো ওই মহিলা আগেও শান্তাকে দেখেছে কলেজে। তাই ওদিন তাকিয়ে ছিল ওমন করে। এভাবে রাজীব এর কথা বলে ফেলা উচিৎ হয় নি শান্তার। ওর অন্য কিছু একটা বানিয়ে বলে দেয়া উচিৎ ছিল। শান্তা আর দাড়ায় না। গ্লাসটা রেখে সোজা নিজের ঘরে চলে আসে। তারপর তোয়ালেটা নিয়ে ঢুকে পড়ে বাথরুমে।
কাপড় খুলে ঝর্না ছেড়ে দিয়ে তার নিচে দাড়াতে দাড়াতে শান্ত হয় শান্তা। শীতল পানির ধারা ওর উষ্ণ কোমল চামড়া গড়িয়ে নেমে যায়। সঙ্গে করে শুষে নিয়ে যায় সমগ্র দুশ্চিন্তা। এখন আর ওসব ভেবে লাভ নেই। যা হবার - তা তো হয়েই গেছে। কিছুক্ষনের মধ্যেই রাজীব চলে আসবে। আর রাজীব এর কথা মনে এলেই মনটা যেন হাল্কা হয়ে উঠে শান্তার। মনে হয় ওর পুরুষালী বুকে মুখ চেপে ধরে নিজেকে সপে দিলেই সব ঝামেলার অবসান হয়ে যাবে। সব কিছু সামলে নেবে রাজীব। ওকে আর ভাবতে হবে না।
দ্রুত গোসল সেরে ফেলে শান্তা। শরীর মুছে তোয়ালেটা জড়িয়ে বেড়িয়ে আসে বাথরুম থেকে। আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল গুলো ঝাড়ে, গালে - হাতে মুখে খানিকটা লশন আর ক্রিম লাগায়। তারপর ওয়ারড্রব খুলে কাপড় বার করে খাটে রাখতে না রাখতেই বেল বেজে উঠে ওদিকে। শান্তা ঘড়ির দিকে তাকায়। রাজীব নিশ্চয়ই চলে এসেছে। একটু দেরিই হয়ে গেলো ওর আসতে। হাতে ঘণ্টা দুয়েকের মত সময় আছে শান্তার। রাজীবকে অপেক্ষা করিয়ে রাখবে? ভাবতে ভাবতেই আয়নায় চোখ পড়লো শান্তার। নিজের ওমন সদ্য গোসল করে বের হওয়া রূপটা দেখে নিজেকি চমকে উঠলো। বুকের উপর জড়িয়ে রাখা তোয়ালে, মসৃণ ফর্সা চামড়া - মাংসল উরু; সব মিলিয়ে দারুণ আকর্ষণীয় লাগছে তাকে। ঠোঁটের কোণে শান্তার ফুটে উঠলো দুষ্টুমির হাসি। কাপড় এর দিকে আর হাত বাড়াল না শান্তা। এগিয়ে গেলো দরজা খুলতে।
রিয়ান খান