30-09-2020, 12:17 AM
দ্বাবিংশ পর্ব (#01)
কিছুক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকে দেবায়ন। সকালের কাম সম্ভোগের রেশ ঠিক ভাবে উপভোগ করার আগেই কেমন যেন পাখীর মতন উড়ে পালিয়ে গেল অনন্যা। দুষ্টু মিষ্টি রমণী চলে যাবার পরে, মোবাইল খুলে অনন্যার ফোন নাম্বার দেখে। সেই সাথে ওর সাথে তোলা ছবিটা দেখে।
কিছুপরে অনুপমার ফোন আসে, কি হল গত রাতে?
দেবায়ন বলে, কি আর হবে, বিজনেস উইথ প্লেসার হল।
অনুপমা হেসে জিজ্ঞেস করে, বাপরে তুমি একদম পাক্কা ব্যবসাদারের মতন কথা বলছ।
দেবায়ন বলে, তোমার জন্য একটা খবর আছে, তুমি যদি রাগ না করো তাহলে বলতে পারি।
অনুপমা হেসে বলে, বলতে দ্বিধা বোধ করছ যে তুমিও নিজের প্লেসার খুঁজে পেয়েছিলে এই তো?
দেবায়ন বলে, হ্যাঁ, কিন্তু যার সাথে ছিলাম তাঁর কথা শুনলে তুমি বিশ্বাস করবে না।
অনুপমা, কি বলতে চাও? কে ছিল তোমার সাথে?
দেবায়ন, অনন্যা বাসু।
অনুপমা অবাক হয়ে বলে, অনন্যাদি তোমার সাথে, ধুত আমি বিশ্বাস করি না।
দেবায়ন বলে, ওকে বিশ্বাস করতে হবে না। আমি বাড়িতে গিয়ে ফটো দেখাবো।
অনুপমা অবাক, সত্যি বলছ? বেশ নাম করেছে অনন্যাদি। কিন্তু…
দেবায়ন, সে অনেক কথা বাকি পরে বলব।
অনুপমা দেবায়নকে খুঁচিয়ে বলে, সারা রাত দুইজনে তাহলে চুটিয়ে সেক্স করে গেছ। কেমন লাগলো?
দেবায়ন, না গো সারা রাত আর পেলাম না। শুধু মাত্র সকালের দিকে একবার হল তবে বেশ সুন্দর হল।
কথাগুলো বলতে বলতে নগ্ন অনন্যার দেহপল্লবের ছবি চোখের সামনে ফুটে ওঠে আর সেই সাথে সম্ভোগ সঙ্গমের কথা মনে পরে লিঙ্গ শক্ত হয়ে যায়। অনুপমা জিজ্ঞেস করে, বাকি রাত কি করছিল, আঙুল চুষছিল। দেবায়ন বলে বাকি কথা বাড়িতে গিয়ে সামনা সামনি জানাবে।
স্নান সেরে ফেলে দেবায়ন। স্নানের পরে ব্রেকফাস্টে দেখা হয় বাকিদের সাথে। মিস্টার সেনের চোখের দিকে তাকাতে লজ্জা পায় দেবায়ন। মিস্টার সেন বুঝতে পারেন দেবায়নের লজ্জা পাওয়ার কারন। তাই ইচ্ছে করেই দেবায়নকে নিজের মতন থাকতে দেয়, বিশেষ কথা বলে না। ব্রেকফাস্টের সময়ে দেবায়ন অন্য একটা টেবিলে গিয়ে বসে। মিস্টার হারজোগ, মিস্টার মেরকেল আর অনিমেশকে নিয়ে মিস্টার সেন অন্য টেবিলে বসেন। নিবেদিতা ব্রেকফাস্ট প্লেট নিয়ে দেবায়নের সাথে বসে। গতরাতে বিজনেস সুট পরেছিল, সকালে স্নান সেরে একটা সুন্দর চাপা সালোয়ার কামিজ আর আকাশী নীল রঙের শাল গায়ে জড়িয়ে। নিবেদিতার শরীরের মিষ্টি গন্ধে দেবায়ন চোখ তুলে ওর দিকে তাকায়।
নিবেদিতা হেসে ওকে বলে, “গত রাতে তোমার সাথে ঠিক ভাবে পরিচয় করা হল না। মানে ঠিক ভাবে তোমাকে জানা হল না।”
দেবায়ন খেতে খেতে হেসে বলে, “আপনি আমার ব্যাপারে সব জানেন ম্যাম, কেন মজা করছেন আমার সাথে।”
নিবেদিতা বলে, “হ্যাঁ, তা একটু জানি বৈকি। তুমি অনুপমার ফিয়ন্সে, পারমিতাদির চোখের মণি, সোমেশ তোমাকে বিশ্বাস করে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিল।”
দেবায়ন চুপচাপ মিস্টি ব্রেডের সাথে মাখন লাগিয়ে মুখের মধ্যে পুরে চিবোতে চিবোতে নিবেদিতার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে, “এই ত অনেক কিছু জানেন আবার কি জানতে চান।”
নিবেদিতা বাঁকা হাসি হেসে বলে, “এই জানা কি সব জানা? একদিন অফিসে এস, দুইজনে লাঞ্চ করব। তোমার এই পরিকল্পনার ব্যাপারে একটা বিস্তারিত জানা যাবে তাহলে।”
দেবায়ন, “কাকুর সাথে বিস্তারিত আলোচনা না করে ঠিক বলতে পারছি না।”
নিবেদিতা হেসে বলে, “জানি তুমি সোমেশের সাথে কথা না বলে কিছু জানাবে না। তবে তোমাকে একটা কথা বলি, এই কম্পানিকে আমি আমার বারো বছর দিয়েছি। এই কোম্পানি আমার ধমনীতে রক্তের মতন চলে। তোমার সিদ্ধান্তে মিস্টার হেরজোগ লাভের পঁয়তাল্লিশ শতাংশ পেয়ে গেলেন।”
নিবেদিতা খাওয়া শেষ করে বলে, “কোলকাতা ফিরে একদিন গ্রান্ডে লাঞ্চ করব কেমন? আমাদের অফিস রাসেল স্ট্রিটে, একদিন অফিসে এস দেখা হবে।”
দেবায়ন বলে, “আচ্ছা কোলকাতা ফিরে সে দেখা যাবে।”
ব্রেকফাস্ট সেরে চেক আউট করে সবাই বেড়িয়ে পরে। দেবায়ন আর মিস্টার সেন কিছুতেই চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারছে না। শত হোক, দেবায়নের মনে অনুপমার বাবা হিসাবে চিত্রিত মিস্টার সেন। রাতে অনন্যার সাথে কাটিয়ে মিস্টার সেনের সামনে যেতে লজ্জা করে। নিবেদিতা মিস্টার সেন আর দেবায়নের দুরে দাঁড়ানো দেখে বুঝতে পারে দুইজনের মনের অবস্থা। নিবেদিতা বলে যে দেবায়ন ওর গাড়িতে সোজা বাড়িতে যেতে পারে। মিস্টার সেনের সাথে নিবেদিতা কোলকাতা ফিরে যাবে। মিস্টার সেন আড় চোখে দেবায়নের দিকে তাকায়। নিরুত্তর দেবায়ন আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। মিস্টার সেন অন্যদিকে তাকিয়ে দেবায়নকে বলে সোজা ওদের বাড়িতে যেতে। মিস্টার সেন পরে পৌঁছে যাবে। নিবেদিতার গাড়ি নিয়ে দেবায়ন রওনা দেয়। পেছনে মিস্টার সেনের গাড়িতে নিবেদিতা আর মিস্টার সেন। গাড়িতে যেতে যেতে ঘুমিয়ে পরে দেবায়ন। চোখ যখন খোলে তখন গাড়ি বেহালা পার করছে। ড্রাইভার জিজ্ঞেস করে কোথায় যাবে, দেবায়ন অনুপমার বাড়ির রাস্তা বলে দেয়। ড্রাইভার ওদের বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দেয়।
কোলকাতা পৌঁছে মাকে ফোনে জানিয়ে দেয় যে বিকেলে বাড়িতে ফিরবে। দেবশ্রী কিছু বলে না চুপ করে ছেলের কথা শুনে ফোন রেখে দেয়। মায়ের গম্ভির কণ্ঠ স্বর শুনে দেবায়ন অনুধাবন করে যে এক বিশাল ঝঞ্ঝা ওকে পোহাতে হবে বাড়িতে ফিরে।
দেবায়ন অনুপমাকে গত রাতের সব কথা জানায়। মিটিঙ্গের কিছু ব্যাপার রেকর্ড করেছিল আর মোবাইলে সবার ছবি তুলেছিল। সেইগুলো দেখায় অনুপমাকে। অনুপমা সেইসব ছেড়ে অনন্যার কথা জানতে উৎসুক। দেবায়ন বেশ রসিয়ে রসিয়ে রাতের গল্প করে, সেই শুনে অনুপমা অভিমান করে বসে থাকে। মানিনীর মান ভাঙ্গাতে আবার দেবায়নকে ওর ভালোবাসা দেখাতে হয়। অনুপমা, জানে দেবায়ন একটা ঘুড়ি, যতই আকাশে উড়ুক, সুতো সবসময়ে ওর হাতে থাকবে, লাটাইয়ের টানে ওর কাছে আসতে বাধ্য।
পায়েলের অবস্থা এক রকমের। পায়েলের চোখ দুটি সবসময়ে যেন ছলছল করে। খেতে বসে পায়েলকে জিজ্ঞেস করে দেবায়ন, কি রে পরের সপ্তাহে তোর জন্মদিন? পার্টি দিবি না? অনুপমা দেবায়নকে ধমক দিয়ে বলে, কি কথা বলছ একটু ভেবে বলবে ত? দেবায়ন বলে, দাঁড়াও না, একটা পার্টি করলে পায়েল ঠিক হয়ে যাবে। অনুপমা জানায়, মায়ের সাথে কথা বলবে পায়েলের জন্মদিনের ব্যাপারে। পায়েল একটা মৃদু হেসে ওর গত রাতের মিটিঙ্গের কথা জিজ্ঞেস করে। দেবায়ন জানায় সেসব ভালোই হয়েছে।
বিকেলে বাড়িতে ফেরার পরে, দেবশ্রী ছেলেকে জিজ্ঞেস করে, কি হল তোদের এই বিজনেস মিটিঙ্গে? পড়াশুনা তাকে তুলে রাখলে হয়। কলেজে গিয়ে কি হবে আর? ঝোলা হাতে বেড়িয়ে পরো। মায়ের কণ্ঠস্বর শুনে দেবায়ন বুঝে যায় যে প্রবল ঝঞ্ঝা এগিয়ে এসেছে। দেবায়ন মাকে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলে, মা, ব্যাস এক রাতের জন্য গেছিলাম। পড়াশুনা ঠিক ভাবেই চলছে ত। দেবশ্রী বলে, হ্যাঁ সেটা দেখতে পাচ্ছি। দেবায়ন বলে, মা দেখো, আমি কম্পিউটারে ভালো মার্কস এনেছি। দেবশ্রী জিজ্ঞেস করে, আর গ্রাজুয়েশানের কি হবে? আগামী এপ্রিলে মে মাসে পরীক্ষা। ডিসেম্বরে শুধু ছাড় দেব আমি। জানুয়ারি থেকে যদি কলেজ আর বাড়ি ছাড়া কোথাও গেছিস তাহলে ঠ্যাঙ ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দেব। মায়ের দেবী চন্ডির মূর্তি দেখে দেবায়ন আদুরে কণ্ঠে বলে, না মা, পরের মাস থেকে একদম বাড়ি আর কলেজ। তিন মাস পড়লেই তোমার ছেলে ভালো মার্কসে উতরে যাবে। দেবশ্রী দেবায়নের কান টেনে বলে, না হলে কান টেনে ছিঁড়ে ফেলব আর আমি অন্য কোন শহরে ট্রান্সফার নিয়ে নেব। দেবায়ন জানিয়ে দেয় যে জানুয়ারি থেকে শুধু পড়াশুনা ছাড়া আর কোনদিকে মন দেবে না।
ঠাণ্ডা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে সেই ডিসেম্বরে। রাতে একা বিছানায় শোয়া বড় কষ্টকর, এই সময়ে যদি কাউকে কাছে পেত দেবায়ন তাহলে বড় ভালো হত। খাবার পরে বিছানায় লেপের মধ্যে শুয়ে পরাশুনার বই পড়াতে ব্যাস্ত। মায়ের রান্না ঘরের কাজ শেষ। চারদিক নিস্তব্ধ। মায়ের গলার আওয়াজ পায় দেবায়ন, ফোনে কারুর সাথে কথা বলছে। কয়েকটা কথা কানে এল, “এই সময়ে ঘুরতে যাওয়া? …… এই ঠাণ্ডায় কোথায় ঘুরতে যাবে? আচ্ছা, মত দিলাম… পারমিতা যাচ্ছে নাকি? … (হাসি)বুঝলাম… আমি ছেলে বৌমা নিয়ে গেছি তাই এবারে মেয়ে জামাই নিয়ে ভ্রমন। না মানে? …শুধু দেবায়ন … আচ্ছা… আপনি বলছেন যখন তাহলে ঠিক আছে…”
সকালে যথারীতি ব্যায়াম সেরে দৌড়ে ফিরে দেখে মা ওর জন্য চা বানিয়ে তৈরি। মা সকালে উঠে, বাড়ির কাজ সেরে অফিসের জন্য তৈরি। এই এয়ারলাইন্সের অফিসের গাড়ি এসে মাকে নিয়ে যায়। আগের মতন বাস ট্যাক্সির জন্য দাঁড়াতে হয় না।
চা খেতে খেতে দেবশ্রী ছেলেকে বলে, “গত রাতে, মিস্টার সেন ফোন করেছিলেন। তোর সাথে কিছু কথা আছে।”
হেসে বলেন, “আমি মেয়ে জামাই নিয়ে বেড়াতে গেছিলাম, এবারে তোকে নিয়ে ওরা গোয়া যাবে।”
দেবায়ন ভুরু কুঁচকে তাকায়, ওর কাছে এই বিষয়ে কোন সংবাদ নেই। মিস্টার সেনের সাথে সেই র*্যাডিসন ফোরটের মিটিঙ্গের পরে আর কোন কথা হয়নি। নিবেদিতার সাথেও আর দেখা করা হয়ে ওঠেনি ওর কলেজ আর ক্লাসের ব্যাস্ততার কারনে। দেবায়ন মাকে জিজ্ঞেস করে, “আর কি বলল কাকু?”
দেবশ্রী হেসে বলে, “আর কিছু বলেনি। পারমিতা যাবে, মিস্টার সেন যাবে এই আর কি। আমি পাহাড়ে নিয়ে গেছিলাম, এবারে তোকে নিয়ে সমুদ্রে যাবে। তোকে ওদের বাড়িতে ডেকেছে।”
দেবায়ন মিচকি হেসে বলে, “হুম বুঝলাম… ”
দেবায়নের মানসচক্ষে ভেসে ওঠে, সমুদ্র তীরে দাঁড়িয়ে অনুপমা, পরনে ছোটো ব্রা আর প্যান্টি। সাগর জলে আগুন লাগিয়ে ঢেউয়ের মাঝখান ঠেকে উঠে এসে ওর বাহু বন্ধনে ধরা দিয়েছে। গভীর রাতে, খোলা আকাশের নিচে, সমুদ্র তটে দুইজনে পরস্পরের মাঝে বিলীন হয়ে যায়। ভাবতে ভাবতে শরীরের রক্ত চনমন করে ওঠে দেবায়নের।
কলেজে পৌঁছেই দেখে যে অনুপমা ওর জন্যে অপেক্ষা করছে। সাদা একটা ফারের জ্যাকেট যেটা মুসৌরি থেকে মা কিনে দিয়েছিল সেটা পরে এসেছে আর নীল রঙের জিন্সে দারুন দেখাচ্ছে সুন্দরীকে। গজ দাঁতের মিষ্টি হাসি দেবায়নকে পাগল করে তোলে। দেবায়ন মনে মনে একে নেয় সকালে যে চিত্র দেখেছিল। লাল রঙের ক্ষুদ্র একটা বিকিনি পরে ওর প্রেয়সী, ফর্সা ত্বকের সাথে জলে ভিজে লেপটে আছে সেই বিকিনি। শুধু মাত্র যেটুকু ঢাকা না থাকলে সভ্য সমাজ অসভ্য বলে শুধু সেই অঙ্গ টুকু ঢাকা। দেবায়নের চোখের রক্তিম আভা দেখে অনুপমা লজ্জায় পরে যায়।
কাছে এসে বাজু ধরে জিজ্ঞেস করে, “কি গো তুমি? সবসময়ে আমার দিকে ওইরকম ভাবে তাকিয়ে থাক?”
দেবায়ন ওর কাঁধে হাত দিয়ে কাছে টেনে বলে, “উম্মম্ম তুমি আর আমি, গোয়ার সি বিচে বসে।”
অনুপমা শুকনো মুখে বলে, “তুমি গোয়া দেখছ, ওদিকে গতকাল রাতে বাবা মায়ের ভীষণ ঝগড়া হয়েছে। বাবার গলা শুনে পায়েল ডুকরে কেঁদে উঠেছিল। গত রাতে বাড়ি রিতিমতন রণক্ষেত্র হয়ে গিয়েছিল। অঙ্কন পায়েলকে জড়িয়ে ধরে বসেছিল। আমি কোন রকমে বাবা আর মাকে থামিয়েছি। সারা রাত পায়েল ঘুমাতে পারেনি। চোখ খুললেই বলে বাবা ওর মাকে মারছে। কি সাংঘাতিক অবস্থা তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না।”
দেবায়ন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কেন? কি হল।”
অনুপমা, “আমি ভেবেছিলাম যে মা হয়ত সব জানে এই কোম্পানির কেনা কাটা এইসব বিষয়ে। কিন্তু মাকে কিছুই জানানো হয়নি। বাবা নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়েছে। সেই নিয়ে মায়ের খুব রাগ। বাবা রাগের বশে অনেক উলট পাল্টা কথা বলে মাকে। বাবাকে রাতের বেলা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে বলে মা।”
কথা শুনতেই দেবায়নের চোয়াল শক্ত হয়ে যায় “আমিও সেটা ভেবেছিলাম। কিন্তু তোমার বাবা আমাকে বলল, যে মিমিকে বুঝিয়ে দেবে। আমি তাই আর কথা বলিনি।”
অনুপমা মুখ বেঁকিয়ে বলে, “হ্যাঁ, জানি। আজকে রাতে তোমাকে আমার বাড়িতে যেতে হবে। বাবা ডেকেছে, সেইসাথে মা তোমার সাথে কথা বলার জন্য বসে আছে।”
দেবায়ন ভাবনায় পরে যায়, “বুঝলাম সব, কিন্তু আমি এর মাঝে কি করব বলতে পারো?”
অনুপমা, “জানিনা আমাকে শুধু বলল তোমাকে ক্লাসের পরে বাড়িতে নিয়ে আসতে। বাবা মা দুইজনে তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চায়। আমি জিজ্ঞেস করলাম কি কথা, কেউ আমাকে কিছু খুলে বলল না।”
কলেজ শেষে দুইজনে কম্পিউটার ক্লাস করে অনুপমার বাড়িতে পৌঁছায় রাতে। দেবায়নের মা আগে থেকেই জানতেন যে রাতে দেবায়ন অনুপমার বাড়িতে থাকবে, তাই সেই বিষয়ে বিশেষ কোন কথা বলেন নি। অনুপমার বাড়িতে ঢুকে বুঝতে পারে যে বাড়ির পরিবেশ বেশ থমথমে। পারমিতা আর পায়েল নিচের বসার ঘরে বসে টিভি দেখছিল। দেবায়নকে ঢুকতে দেখে, পায়েল মৃদু হাসে। পারমিতা, তির্যক দৃষ্টিতে দেবায়নকে দেখে নিজের ঘরে চলে যায়। অনুপমা আর দেবায়নের চোখে চোখে কথা হয়। ইঙ্গিতে জানায় যে মা একদম ক্ষেপে আছে। দেবায়ন পায়েলের কুশল জিজ্ঞেস করে। কিছুক্ষণ গল্প করার পরে অনুপমা পায়েলকে নিয়ে উপরে চলে যায়। পায়েল আর অনুপমা উপরে চলে যাবার বেশ কিছুপরে মিস্টার সেন বাড়ি ফেরেন। দেবায়নকে দেখে একটু হেসে, কুশল জিজ্ঞাসাবাদ করেন। দেবায়ন মিস্টার সেনকে জিজ্ঞেস করে ওকে ডাকার কারন। মিস্টার সেন মিচকি হেসে বলেন, ডিনারের পরে কথা বলবেন। রাতে খাবার সময়, পারমিতার থমথমে মুখ দেখে দেবায়নের বলার কিছু থাকে না। দেবায়ন অনুপমা প্রমাদ গোনে, পারমিতা কি করবে সেই চিন্তায়। দেবায়ন, অনুপমাকে আসস্থ করে বলে দেখা যাক কি হয় সেই মতন পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। খাবার পরে বসার ঘরে বসতে বলে মিস্টার সেন।
অনুপমা একবার মিস্টার সেনকে জিজ্ঞেস করে, “আমি কি থাকতে পারি এই আলোচনায়?”
মিস্টার সেন মেয়েকে বলেন, “না। তোর থাকার কোন প্রয়োজন নেই। তুই শুতে যা।”
অনুপমা জানে, এই সব কথা দেবায়ন সকাল হলেই ওকে জানিয়ে দেবে, তাই বিশেষ কথা না বাড়িয়ে ভাই আর পায়েলকে নিয়ে উপরে চলে যায়। পারমিতা বড় কাউচে চুপচাপ বসে দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে। দেবায়ন বুঝতে পারে যে এই কথাবার্তা অনেক মহত্বপূর্ণ তাই পকেটের মোবাইলে শব্দ রেকর্ড করার বোতাম টিপে দেয়। ওর কাছে মিস্টার সেনের এই আলোচনার প্রমান থাকা দরকার।
ছেলে মেয়েদের চলে যাবার পরে মিস্টার সেন দুটো গ্লাসে হুইস্কি এনে একটা দেবায়নের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, “তোমার কাকিমাকে একটু বুঝাও।”
পারমিতা ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “ওকি বুঝাবে? তুমি গত মে মাসে সবার সামনে বললে যে কোম্পানি বিক্রি করে দেবে। এখন তুমি বলছ যে কোম্পানি বিক্রি হবে না? র্যাডিসন ফোর্টের কথা জিজ্ঞেস করলাম সেদিন, তুমি কথা এড়িয়ে গেলে। তুমি আমাকে মিথ্যে বললে, কোম্পানি দেখতে নাকি একজন বিদেশী এসেছে। এটা জেনে রাখো, ওই কোম্পানি আমার নামে, আমি যা চাই তাই করতে পারি।”
কিছুক্ষণ বিছানায় শুয়ে থাকে দেবায়ন। সকালের কাম সম্ভোগের রেশ ঠিক ভাবে উপভোগ করার আগেই কেমন যেন পাখীর মতন উড়ে পালিয়ে গেল অনন্যা। দুষ্টু মিষ্টি রমণী চলে যাবার পরে, মোবাইল খুলে অনন্যার ফোন নাম্বার দেখে। সেই সাথে ওর সাথে তোলা ছবিটা দেখে।
কিছুপরে অনুপমার ফোন আসে, কি হল গত রাতে?
দেবায়ন বলে, কি আর হবে, বিজনেস উইথ প্লেসার হল।
অনুপমা হেসে জিজ্ঞেস করে, বাপরে তুমি একদম পাক্কা ব্যবসাদারের মতন কথা বলছ।
দেবায়ন বলে, তোমার জন্য একটা খবর আছে, তুমি যদি রাগ না করো তাহলে বলতে পারি।
অনুপমা হেসে বলে, বলতে দ্বিধা বোধ করছ যে তুমিও নিজের প্লেসার খুঁজে পেয়েছিলে এই তো?
দেবায়ন বলে, হ্যাঁ, কিন্তু যার সাথে ছিলাম তাঁর কথা শুনলে তুমি বিশ্বাস করবে না।
অনুপমা, কি বলতে চাও? কে ছিল তোমার সাথে?
দেবায়ন, অনন্যা বাসু।
অনুপমা অবাক হয়ে বলে, অনন্যাদি তোমার সাথে, ধুত আমি বিশ্বাস করি না।
দেবায়ন বলে, ওকে বিশ্বাস করতে হবে না। আমি বাড়িতে গিয়ে ফটো দেখাবো।
অনুপমা অবাক, সত্যি বলছ? বেশ নাম করেছে অনন্যাদি। কিন্তু…
দেবায়ন, সে অনেক কথা বাকি পরে বলব।
অনুপমা দেবায়নকে খুঁচিয়ে বলে, সারা রাত দুইজনে তাহলে চুটিয়ে সেক্স করে গেছ। কেমন লাগলো?
দেবায়ন, না গো সারা রাত আর পেলাম না। শুধু মাত্র সকালের দিকে একবার হল তবে বেশ সুন্দর হল।
কথাগুলো বলতে বলতে নগ্ন অনন্যার দেহপল্লবের ছবি চোখের সামনে ফুটে ওঠে আর সেই সাথে সম্ভোগ সঙ্গমের কথা মনে পরে লিঙ্গ শক্ত হয়ে যায়। অনুপমা জিজ্ঞেস করে, বাকি রাত কি করছিল, আঙুল চুষছিল। দেবায়ন বলে বাকি কথা বাড়িতে গিয়ে সামনা সামনি জানাবে।
স্নান সেরে ফেলে দেবায়ন। স্নানের পরে ব্রেকফাস্টে দেখা হয় বাকিদের সাথে। মিস্টার সেনের চোখের দিকে তাকাতে লজ্জা পায় দেবায়ন। মিস্টার সেন বুঝতে পারেন দেবায়নের লজ্জা পাওয়ার কারন। তাই ইচ্ছে করেই দেবায়নকে নিজের মতন থাকতে দেয়, বিশেষ কথা বলে না। ব্রেকফাস্টের সময়ে দেবায়ন অন্য একটা টেবিলে গিয়ে বসে। মিস্টার হারজোগ, মিস্টার মেরকেল আর অনিমেশকে নিয়ে মিস্টার সেন অন্য টেবিলে বসেন। নিবেদিতা ব্রেকফাস্ট প্লেট নিয়ে দেবায়নের সাথে বসে। গতরাতে বিজনেস সুট পরেছিল, সকালে স্নান সেরে একটা সুন্দর চাপা সালোয়ার কামিজ আর আকাশী নীল রঙের শাল গায়ে জড়িয়ে। নিবেদিতার শরীরের মিষ্টি গন্ধে দেবায়ন চোখ তুলে ওর দিকে তাকায়।
নিবেদিতা হেসে ওকে বলে, “গত রাতে তোমার সাথে ঠিক ভাবে পরিচয় করা হল না। মানে ঠিক ভাবে তোমাকে জানা হল না।”
দেবায়ন খেতে খেতে হেসে বলে, “আপনি আমার ব্যাপারে সব জানেন ম্যাম, কেন মজা করছেন আমার সাথে।”
নিবেদিতা বলে, “হ্যাঁ, তা একটু জানি বৈকি। তুমি অনুপমার ফিয়ন্সে, পারমিতাদির চোখের মণি, সোমেশ তোমাকে বিশ্বাস করে এত বড় একটা সিদ্ধান্ত নিল।”
দেবায়ন চুপচাপ মিস্টি ব্রেডের সাথে মাখন লাগিয়ে মুখের মধ্যে পুরে চিবোতে চিবোতে নিবেদিতার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে, “এই ত অনেক কিছু জানেন আবার কি জানতে চান।”
নিবেদিতা বাঁকা হাসি হেসে বলে, “এই জানা কি সব জানা? একদিন অফিসে এস, দুইজনে লাঞ্চ করব। তোমার এই পরিকল্পনার ব্যাপারে একটা বিস্তারিত জানা যাবে তাহলে।”
দেবায়ন, “কাকুর সাথে বিস্তারিত আলোচনা না করে ঠিক বলতে পারছি না।”
নিবেদিতা হেসে বলে, “জানি তুমি সোমেশের সাথে কথা না বলে কিছু জানাবে না। তবে তোমাকে একটা কথা বলি, এই কম্পানিকে আমি আমার বারো বছর দিয়েছি। এই কোম্পানি আমার ধমনীতে রক্তের মতন চলে। তোমার সিদ্ধান্তে মিস্টার হেরজোগ লাভের পঁয়তাল্লিশ শতাংশ পেয়ে গেলেন।”
নিবেদিতা খাওয়া শেষ করে বলে, “কোলকাতা ফিরে একদিন গ্রান্ডে লাঞ্চ করব কেমন? আমাদের অফিস রাসেল স্ট্রিটে, একদিন অফিসে এস দেখা হবে।”
দেবায়ন বলে, “আচ্ছা কোলকাতা ফিরে সে দেখা যাবে।”
ব্রেকফাস্ট সেরে চেক আউট করে সবাই বেড়িয়ে পরে। দেবায়ন আর মিস্টার সেন কিছুতেই চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পারছে না। শত হোক, দেবায়নের মনে অনুপমার বাবা হিসাবে চিত্রিত মিস্টার সেন। রাতে অনন্যার সাথে কাটিয়ে মিস্টার সেনের সামনে যেতে লজ্জা করে। নিবেদিতা মিস্টার সেন আর দেবায়নের দুরে দাঁড়ানো দেখে বুঝতে পারে দুইজনের মনের অবস্থা। নিবেদিতা বলে যে দেবায়ন ওর গাড়িতে সোজা বাড়িতে যেতে পারে। মিস্টার সেনের সাথে নিবেদিতা কোলকাতা ফিরে যাবে। মিস্টার সেন আড় চোখে দেবায়নের দিকে তাকায়। নিরুত্তর দেবায়ন আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। মিস্টার সেন অন্যদিকে তাকিয়ে দেবায়নকে বলে সোজা ওদের বাড়িতে যেতে। মিস্টার সেন পরে পৌঁছে যাবে। নিবেদিতার গাড়ি নিয়ে দেবায়ন রওনা দেয়। পেছনে মিস্টার সেনের গাড়িতে নিবেদিতা আর মিস্টার সেন। গাড়িতে যেতে যেতে ঘুমিয়ে পরে দেবায়ন। চোখ যখন খোলে তখন গাড়ি বেহালা পার করছে। ড্রাইভার জিজ্ঞেস করে কোথায় যাবে, দেবায়ন অনুপমার বাড়ির রাস্তা বলে দেয়। ড্রাইভার ওদের বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে দেয়।
কোলকাতা পৌঁছে মাকে ফোনে জানিয়ে দেয় যে বিকেলে বাড়িতে ফিরবে। দেবশ্রী কিছু বলে না চুপ করে ছেলের কথা শুনে ফোন রেখে দেয়। মায়ের গম্ভির কণ্ঠ স্বর শুনে দেবায়ন অনুধাবন করে যে এক বিশাল ঝঞ্ঝা ওকে পোহাতে হবে বাড়িতে ফিরে।
দেবায়ন অনুপমাকে গত রাতের সব কথা জানায়। মিটিঙ্গের কিছু ব্যাপার রেকর্ড করেছিল আর মোবাইলে সবার ছবি তুলেছিল। সেইগুলো দেখায় অনুপমাকে। অনুপমা সেইসব ছেড়ে অনন্যার কথা জানতে উৎসুক। দেবায়ন বেশ রসিয়ে রসিয়ে রাতের গল্প করে, সেই শুনে অনুপমা অভিমান করে বসে থাকে। মানিনীর মান ভাঙ্গাতে আবার দেবায়নকে ওর ভালোবাসা দেখাতে হয়। অনুপমা, জানে দেবায়ন একটা ঘুড়ি, যতই আকাশে উড়ুক, সুতো সবসময়ে ওর হাতে থাকবে, লাটাইয়ের টানে ওর কাছে আসতে বাধ্য।
পায়েলের অবস্থা এক রকমের। পায়েলের চোখ দুটি সবসময়ে যেন ছলছল করে। খেতে বসে পায়েলকে জিজ্ঞেস করে দেবায়ন, কি রে পরের সপ্তাহে তোর জন্মদিন? পার্টি দিবি না? অনুপমা দেবায়নকে ধমক দিয়ে বলে, কি কথা বলছ একটু ভেবে বলবে ত? দেবায়ন বলে, দাঁড়াও না, একটা পার্টি করলে পায়েল ঠিক হয়ে যাবে। অনুপমা জানায়, মায়ের সাথে কথা বলবে পায়েলের জন্মদিনের ব্যাপারে। পায়েল একটা মৃদু হেসে ওর গত রাতের মিটিঙ্গের কথা জিজ্ঞেস করে। দেবায়ন জানায় সেসব ভালোই হয়েছে।
বিকেলে বাড়িতে ফেরার পরে, দেবশ্রী ছেলেকে জিজ্ঞেস করে, কি হল তোদের এই বিজনেস মিটিঙ্গে? পড়াশুনা তাকে তুলে রাখলে হয়। কলেজে গিয়ে কি হবে আর? ঝোলা হাতে বেড়িয়ে পরো। মায়ের কণ্ঠস্বর শুনে দেবায়ন বুঝে যায় যে প্রবল ঝঞ্ঝা এগিয়ে এসেছে। দেবায়ন মাকে জড়িয়ে ধরে আদুরে গলায় বলে, মা, ব্যাস এক রাতের জন্য গেছিলাম। পড়াশুনা ঠিক ভাবেই চলছে ত। দেবশ্রী বলে, হ্যাঁ সেটা দেখতে পাচ্ছি। দেবায়ন বলে, মা দেখো, আমি কম্পিউটারে ভালো মার্কস এনেছি। দেবশ্রী জিজ্ঞেস করে, আর গ্রাজুয়েশানের কি হবে? আগামী এপ্রিলে মে মাসে পরীক্ষা। ডিসেম্বরে শুধু ছাড় দেব আমি। জানুয়ারি থেকে যদি কলেজ আর বাড়ি ছাড়া কোথাও গেছিস তাহলে ঠ্যাঙ ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দেব। মায়ের দেবী চন্ডির মূর্তি দেখে দেবায়ন আদুরে কণ্ঠে বলে, না মা, পরের মাস থেকে একদম বাড়ি আর কলেজ। তিন মাস পড়লেই তোমার ছেলে ভালো মার্কসে উতরে যাবে। দেবশ্রী দেবায়নের কান টেনে বলে, না হলে কান টেনে ছিঁড়ে ফেলব আর আমি অন্য কোন শহরে ট্রান্সফার নিয়ে নেব। দেবায়ন জানিয়ে দেয় যে জানুয়ারি থেকে শুধু পড়াশুনা ছাড়া আর কোনদিকে মন দেবে না।
ঠাণ্ডা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে সেই ডিসেম্বরে। রাতে একা বিছানায় শোয়া বড় কষ্টকর, এই সময়ে যদি কাউকে কাছে পেত দেবায়ন তাহলে বড় ভালো হত। খাবার পরে বিছানায় লেপের মধ্যে শুয়ে পরাশুনার বই পড়াতে ব্যাস্ত। মায়ের রান্না ঘরের কাজ শেষ। চারদিক নিস্তব্ধ। মায়ের গলার আওয়াজ পায় দেবায়ন, ফোনে কারুর সাথে কথা বলছে। কয়েকটা কথা কানে এল, “এই সময়ে ঘুরতে যাওয়া? …… এই ঠাণ্ডায় কোথায় ঘুরতে যাবে? আচ্ছা, মত দিলাম… পারমিতা যাচ্ছে নাকি? … (হাসি)বুঝলাম… আমি ছেলে বৌমা নিয়ে গেছি তাই এবারে মেয়ে জামাই নিয়ে ভ্রমন। না মানে? …শুধু দেবায়ন … আচ্ছা… আপনি বলছেন যখন তাহলে ঠিক আছে…”
সকালে যথারীতি ব্যায়াম সেরে দৌড়ে ফিরে দেখে মা ওর জন্য চা বানিয়ে তৈরি। মা সকালে উঠে, বাড়ির কাজ সেরে অফিসের জন্য তৈরি। এই এয়ারলাইন্সের অফিসের গাড়ি এসে মাকে নিয়ে যায়। আগের মতন বাস ট্যাক্সির জন্য দাঁড়াতে হয় না।
চা খেতে খেতে দেবশ্রী ছেলেকে বলে, “গত রাতে, মিস্টার সেন ফোন করেছিলেন। তোর সাথে কিছু কথা আছে।”
হেসে বলেন, “আমি মেয়ে জামাই নিয়ে বেড়াতে গেছিলাম, এবারে তোকে নিয়ে ওরা গোয়া যাবে।”
দেবায়ন ভুরু কুঁচকে তাকায়, ওর কাছে এই বিষয়ে কোন সংবাদ নেই। মিস্টার সেনের সাথে সেই র*্যাডিসন ফোরটের মিটিঙ্গের পরে আর কোন কথা হয়নি। নিবেদিতার সাথেও আর দেখা করা হয়ে ওঠেনি ওর কলেজ আর ক্লাসের ব্যাস্ততার কারনে। দেবায়ন মাকে জিজ্ঞেস করে, “আর কি বলল কাকু?”
দেবশ্রী হেসে বলে, “আর কিছু বলেনি। পারমিতা যাবে, মিস্টার সেন যাবে এই আর কি। আমি পাহাড়ে নিয়ে গেছিলাম, এবারে তোকে নিয়ে সমুদ্রে যাবে। তোকে ওদের বাড়িতে ডেকেছে।”
দেবায়ন মিচকি হেসে বলে, “হুম বুঝলাম… ”
দেবায়নের মানসচক্ষে ভেসে ওঠে, সমুদ্র তীরে দাঁড়িয়ে অনুপমা, পরনে ছোটো ব্রা আর প্যান্টি। সাগর জলে আগুন লাগিয়ে ঢেউয়ের মাঝখান ঠেকে উঠে এসে ওর বাহু বন্ধনে ধরা দিয়েছে। গভীর রাতে, খোলা আকাশের নিচে, সমুদ্র তটে দুইজনে পরস্পরের মাঝে বিলীন হয়ে যায়। ভাবতে ভাবতে শরীরের রক্ত চনমন করে ওঠে দেবায়নের।
কলেজে পৌঁছেই দেখে যে অনুপমা ওর জন্যে অপেক্ষা করছে। সাদা একটা ফারের জ্যাকেট যেটা মুসৌরি থেকে মা কিনে দিয়েছিল সেটা পরে এসেছে আর নীল রঙের জিন্সে দারুন দেখাচ্ছে সুন্দরীকে। গজ দাঁতের মিষ্টি হাসি দেবায়নকে পাগল করে তোলে। দেবায়ন মনে মনে একে নেয় সকালে যে চিত্র দেখেছিল। লাল রঙের ক্ষুদ্র একটা বিকিনি পরে ওর প্রেয়সী, ফর্সা ত্বকের সাথে জলে ভিজে লেপটে আছে সেই বিকিনি। শুধু মাত্র যেটুকু ঢাকা না থাকলে সভ্য সমাজ অসভ্য বলে শুধু সেই অঙ্গ টুকু ঢাকা। দেবায়নের চোখের রক্তিম আভা দেখে অনুপমা লজ্জায় পরে যায়।
কাছে এসে বাজু ধরে জিজ্ঞেস করে, “কি গো তুমি? সবসময়ে আমার দিকে ওইরকম ভাবে তাকিয়ে থাক?”
দেবায়ন ওর কাঁধে হাত দিয়ে কাছে টেনে বলে, “উম্মম্ম তুমি আর আমি, গোয়ার সি বিচে বসে।”
অনুপমা শুকনো মুখে বলে, “তুমি গোয়া দেখছ, ওদিকে গতকাল রাতে বাবা মায়ের ভীষণ ঝগড়া হয়েছে। বাবার গলা শুনে পায়েল ডুকরে কেঁদে উঠেছিল। গত রাতে বাড়ি রিতিমতন রণক্ষেত্র হয়ে গিয়েছিল। অঙ্কন পায়েলকে জড়িয়ে ধরে বসেছিল। আমি কোন রকমে বাবা আর মাকে থামিয়েছি। সারা রাত পায়েল ঘুমাতে পারেনি। চোখ খুললেই বলে বাবা ওর মাকে মারছে। কি সাংঘাতিক অবস্থা তোমাকে বলে বুঝাতে পারব না।”
দেবায়ন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কেন? কি হল।”
অনুপমা, “আমি ভেবেছিলাম যে মা হয়ত সব জানে এই কোম্পানির কেনা কাটা এইসব বিষয়ে। কিন্তু মাকে কিছুই জানানো হয়নি। বাবা নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়েছে। সেই নিয়ে মায়ের খুব রাগ। বাবা রাগের বশে অনেক উলট পাল্টা কথা বলে মাকে। বাবাকে রাতের বেলা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে বলে মা।”
কথা শুনতেই দেবায়নের চোয়াল শক্ত হয়ে যায় “আমিও সেটা ভেবেছিলাম। কিন্তু তোমার বাবা আমাকে বলল, যে মিমিকে বুঝিয়ে দেবে। আমি তাই আর কথা বলিনি।”
অনুপমা মুখ বেঁকিয়ে বলে, “হ্যাঁ, জানি। আজকে রাতে তোমাকে আমার বাড়িতে যেতে হবে। বাবা ডেকেছে, সেইসাথে মা তোমার সাথে কথা বলার জন্য বসে আছে।”
দেবায়ন ভাবনায় পরে যায়, “বুঝলাম সব, কিন্তু আমি এর মাঝে কি করব বলতে পারো?”
অনুপমা, “জানিনা আমাকে শুধু বলল তোমাকে ক্লাসের পরে বাড়িতে নিয়ে আসতে। বাবা মা দুইজনে তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চায়। আমি জিজ্ঞেস করলাম কি কথা, কেউ আমাকে কিছু খুলে বলল না।”
কলেজ শেষে দুইজনে কম্পিউটার ক্লাস করে অনুপমার বাড়িতে পৌঁছায় রাতে। দেবায়নের মা আগে থেকেই জানতেন যে রাতে দেবায়ন অনুপমার বাড়িতে থাকবে, তাই সেই বিষয়ে বিশেষ কোন কথা বলেন নি। অনুপমার বাড়িতে ঢুকে বুঝতে পারে যে বাড়ির পরিবেশ বেশ থমথমে। পারমিতা আর পায়েল নিচের বসার ঘরে বসে টিভি দেখছিল। দেবায়নকে ঢুকতে দেখে, পায়েল মৃদু হাসে। পারমিতা, তির্যক দৃষ্টিতে দেবায়নকে দেখে নিজের ঘরে চলে যায়। অনুপমা আর দেবায়নের চোখে চোখে কথা হয়। ইঙ্গিতে জানায় যে মা একদম ক্ষেপে আছে। দেবায়ন পায়েলের কুশল জিজ্ঞেস করে। কিছুক্ষণ গল্প করার পরে অনুপমা পায়েলকে নিয়ে উপরে চলে যায়। পায়েল আর অনুপমা উপরে চলে যাবার বেশ কিছুপরে মিস্টার সেন বাড়ি ফেরেন। দেবায়নকে দেখে একটু হেসে, কুশল জিজ্ঞাসাবাদ করেন। দেবায়ন মিস্টার সেনকে জিজ্ঞেস করে ওকে ডাকার কারন। মিস্টার সেন মিচকি হেসে বলেন, ডিনারের পরে কথা বলবেন। রাতে খাবার সময়, পারমিতার থমথমে মুখ দেখে দেবায়নের বলার কিছু থাকে না। দেবায়ন অনুপমা প্রমাদ গোনে, পারমিতা কি করবে সেই চিন্তায়। দেবায়ন, অনুপমাকে আসস্থ করে বলে দেখা যাক কি হয় সেই মতন পদক্ষেপ নেওয়া যাবে। খাবার পরে বসার ঘরে বসতে বলে মিস্টার সেন।
অনুপমা একবার মিস্টার সেনকে জিজ্ঞেস করে, “আমি কি থাকতে পারি এই আলোচনায়?”
মিস্টার সেন মেয়েকে বলেন, “না। তোর থাকার কোন প্রয়োজন নেই। তুই শুতে যা।”
অনুপমা জানে, এই সব কথা দেবায়ন সকাল হলেই ওকে জানিয়ে দেবে, তাই বিশেষ কথা না বাড়িয়ে ভাই আর পায়েলকে নিয়ে উপরে চলে যায়। পারমিতা বড় কাউচে চুপচাপ বসে দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে। দেবায়ন বুঝতে পারে যে এই কথাবার্তা অনেক মহত্বপূর্ণ তাই পকেটের মোবাইলে শব্দ রেকর্ড করার বোতাম টিপে দেয়। ওর কাছে মিস্টার সেনের এই আলোচনার প্রমান থাকা দরকার।
ছেলে মেয়েদের চলে যাবার পরে মিস্টার সেন দুটো গ্লাসে হুইস্কি এনে একটা দেবায়নের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, “তোমার কাকিমাকে একটু বুঝাও।”
পারমিতা ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “ওকি বুঝাবে? তুমি গত মে মাসে সবার সামনে বললে যে কোম্পানি বিক্রি করে দেবে। এখন তুমি বলছ যে কোম্পানি বিক্রি হবে না? র্যাডিসন ফোর্টের কথা জিজ্ঞেস করলাম সেদিন, তুমি কথা এড়িয়ে গেলে। তুমি আমাকে মিথ্যে বললে, কোম্পানি দেখতে নাকি একজন বিদেশী এসেছে। এটা জেনে রাখো, ওই কোম্পানি আমার নামে, আমি যা চাই তাই করতে পারি।”