Thread Rating:
  • 31 Vote(s) - 3.19 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
পাপ কাম ভালবাসা
একুবিংশ পর্ব (#04)

দেবায়ন হেসে ফেলে, “মিস্টার হারজোগ, কালকের সকালকে দেখেছে। আপনি সময় নিন তবে বেশি সময় নিলে কিন্তু হাত থেকে প্রফিট বেড়িয়ে যাবে।”
মিস্টার সেন আর থাকতে না পেরে দেবায়নকে বলে, “তুমি একটু আমার সাথে বাইরে এসো।”
মিস্টার মেরকেল হেসে বলেন, “ওকে, তুমি আমাদের একটু সময় দাও। একটু পরে জানাচ্ছি।”
মিস্টার সেন, দেবায়নকে লনের একদিকে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি ভেবে ওই প্রোপোসাল দিলে? একবার আমাকে জিজ্ঞেস করার দরকার মনে করলে না? এটা খুব বড় ঔদ্ধত্য দেবায়ন। তুমি কি ভাবো নিজেকে? আমি তোমাকে ছাড় দিয়েছি বলে তুমি যা ইচ্ছে তাই করবে?”
দেবায়ন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে কিছুক্ষণ তারপরে বলে, “সরি কাকু, খুব সরি। আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করতাম ঠিক, কিন্তু সময়ের অভাবে নিজেই বলে ফেলেছি। জানি আপনাকে আঘাত করেছি তবে একবার আমার পরিকল্পনা শুনুন। রিস্ক না নিলে প্রফিট করা যায় না, এটা আপনি আসার সময়ে শিখিয়েছেন। আর নিবেদিতা যা হ্যান্ডেল করতো সেটা নিজের জন্যেই করতো।”
মিস্টার সেন কিছুক্ষণ চুপ থাকার পরে জিজ্ঞেস করেন, “তুমি ঠিক কি ভাবছ? আমি যা ভাবছি তুমি কি সেটাই ভাবছ?”
দেবায়ন, “আপনি কি ভাবছেন সেটা জানা নেই তবে আমার পরিকল্পনা আপনাকে জানাই। আপনি দুশো টাকা আয় করলেন, নব্বুই চলে গেলে পরে থাকে একশো দশ। সেখানে দুই জায়গায় একশো একশো টাকা রোজগার করুন। মিস্টার হারজোগ পাবে শুধু পঁয়তাল্লিশ, আপনার কাছে পরে থাকবে একশো পঞ্চান্ন।”
মিস্টার সেন খুশি হয়ে বলে, “সত্যি শুনে বড় খুশি হয়েছি। এতদিন পরে মনে হল একদম মনের মতন মানুষ পেলাম যে আমার মতন করে ভাবে।”
দেবায়ন, “একটা নতুন সিস্টার কন্সট্রাক্সান কোম্পানি খোলা হবে। বর্তমান কোম্পানির লাভের থেকে পঁয়তাল্লিশ পারসেন্ট পেলে মিস্টার হারজোগ খুশি। নতুন কোম্পানির সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিবেদিতা ম্যাডামকে দিয়ে দিন, সেও খুশি। দ্বিতীয় কোম্পানির লাভের টাকা পুরটাই আপনার আর এই কোম্পানির লাভের টাকার পঞ্চান্ন শতাংশ আপনার থাকল। কেমন লাগলো আমার পরিকল্পনা?”
মিস্টার সেন, দেবায়নকে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুমি একজন বাঘ, তুমি পারবে সব সামলাতে। আমার আর চিন্তা নেই।”
দেবায়ন বলে, “এটা শুধু আপনার আর আমার মধ্যে। পরে ভালো ভাবে এই নিয়ে বিচার আলোচনা করা যাবে।”
মিস্টার সেন, দেবায়নকে জড়িয়ে ধরে বলে, “নিবেদিতাকে আমি বুঝিয়ে বলে দেব। তোমার পরিকল্পনা শুনে খুব খুশি হবে। অনেক করেছে নিবেরিতা, অনেক খেটেছে এই কোম্পানির জন্য। ওর অনেকদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়ে যাবে।”
মিস্টার সেন আর দেবায়ন টেবিলে ফিরে আসে। নিবেদিতা মিস্টার সেনকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করে। মিস্টার সেন দেবায়নকে দেখিয়ে বলে, বাকি কথা পরে জানিয়ে দেবে, তবে ওর এই প্রোপসালে মত আছে। মিস্টার হেরজোগ বলেন ওদের মত আছে এই ডিলে। বাকি ব্যাবস্থার কথা জিজ্ঞেস করে মিস্টার মেরকেল। নিবেদিতা হেসে বলে, সব ব্যাবস্থা একদম ঠিকঠাক। ব্যাবসার কথা শেষে সবার হাতে উঠে আসে শ্যাম্পেনের গ্লাস। নিবেদিতা বলে, মিস্টার হারজোগের জন্য বিশেষ ব্যাবস্থা, দামী ক্যাভিয়ার আনা হয়েছে কোলকাতা থেকে। মিস্টার মেরকেল হেসে বলেন একবার জ্যান্ত ক্যাভিয়ারের দর্শন করতে চান। নিবেদিতা ফোনে কারুর সাথে কথা বলে জানিয়ে দেয়, জ্যান্ত ক্যাভিয়ার ঠিক সময় মতন পৌঁছে যাবে। আলোচনা ছেড়ে সবাই বিভিন্ন গল্পে মেতে ওঠে। শ্যাম্পেন শেষে সবার হাতে স্কচের গ্লাস, একমাত্র দেবায়ন এক ছোটো বোতল বিয়ার নিয়ে একদিকে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছু পরে মিস্টার হেরজোগ ওকে কাছে ডাকে। দেবায়নের ভারতীয় ইংরাজি আর মিস্টার হেরজোগের বিদেশি ইংরাজিতে দুইজনে কথা বলে।
মিস্টার হেরজোগ দেবায়নকে ডেকে বলে, “তুমি ফ্রাংকফুর্টে এসো, ওখানে তোমার দরকার।”
দেবায়ন হেসে ফেলে মিস্টার হেরজোগের কথা শুনে, উত্তর বলে, “না, মিস্টার হেরজোগ। আমি কোলকাতা ছেড়ে দিল্লী যেতে চাই না, ফ্রাংকফুর্ট কখনই নয়।”
মিস্টার হেরজোগ বলেন, “তাও আমার নিমন্ত্রন রইল। ঘুরতে এসো কোনদিন, জার্মানি বেশ ভালো দেশ। অনেক সুন্দর সুন্দর শহর আছে ঘুরে দেখার। তোমার এখানে গঙ্গা আমার ওখানে রাইন নদী, এক রকম সুন্দর। কখন কোন সাহায্য চাইলে দ্বিধা করো না।”
দেবায়ন, “হ্যাঁ নিশ্চয় আপনাকে মনে রাখব। এবারে ত আসা যাওয়া হবেই। কোলকাতা আর ফ্রাংকফুর্ট বেশি দূর মনে হবে না।”
নিবেদিতা কিছু পরে বেড়িয়ে গিয়ে মেয়েদের নিয়ে লনে আসে। দেবায়ন আড় চোখে অনন্যা আর তনুজাকে দেখে। ওদের সাথে আরও দুটো মেয়ে, তাদের দেবায়ন দেখেছে কোন বিজ্ঞাপনে। তনুজা আর বাকি মেয়েদের পরনে চাপা ইভিনিং পার্টি পোশাক। অনন্যা একটু অন্য সাজে সজ্জিত, গোলাপি রঙের পাতলা ফিনফিনে শাড়ি। হাতকাটা ব্লাউস, পিঠের দিকে শুধু মাত্র একটা গিঁট দিয়ে বাধা। নাভির বেশ কিছু নিচে শাড়ির গিঁট। নাভির চারপাশে ঈষৎ ফুলে থাকায় তীব্র যৌন আবেদনের ছটা নির্গত হচ্ছে ওর শরীর থেকে। নিবেদিতা, মেয়েদের সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দেয়। সবাই বুফে ডাইনিঙ্গে মেতে ওঠে। খাবার সাথে গল্প, হাসি কথা বার্তা। মাঝে মাঝে নিবেদিতা আড় চোখে দেবায়নকে জরিপ করে আর মিস্টার সেনের সাথে কিছু নিয়ে কথা বলে। দেবায়ন একপাশে চুপচাপ নিজের থালা নিয়ে একটু খেতে ব্যাস্ত আর নিজের খেয়ালে ব্যাস্ত।
এই নিবেদিতার পরিচয় কি? মিস্টার সেনের সাথে এত হৃদ্যতা কেন? নিবেদিতা আর মিস্টার সেনের কথা বার্তায় বেশ একটা নিবিড় ভাব। অনন্যা আর তনুজা একদিকে খেতে খেতে গল্প করে। বাকি দুই মেয়ের এক জন মিস্টার অনিমেশের সাথে একজন মিস্টার মেরকেলের সাথে। দেবায়ন বুঝে যায় যে নিজেদের রাতের সঙ্গিনী বাছাই করা হয়ে গেছে।
খাবার পরে নিবেদিতা দেবায়নের কাছে এসে ওর রুমের কার্ড দেয়। রুমের কার্ড দেবার সময়ে নিবেদিতার হাত দেবায়নের হাতের উপরে বেশ কিছুক্ষণ থাকে। নরম হাতের স্পর্শে দেবায়ন নিবেদিতার দিকে তাকায়। নিবেদিতা মিষ্টি হেসে বলে ঠিক সময়ে রুমে চলে যেতে। গঙ্গার কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়ায় সবাই কাঁপতে শুরু করে খাওয়ার পরে। কিছুপরে সবাই নিজের নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। মিস্টার সেন ওকে বলেন তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়তে। দেবায়ন হেসে জানিয়ে দেয় একটা ফোন করে রুমে চলে যাবে।
সবে এগারোটা বাজে কিন্তু চারদিকে নেমে আসে ঘন কালো আঁধার। শীতের কারনে হোটেলের লোকজন সবাই হোটেলের মধ্যে। সবাই চলে যাবার পরে, দেবায়ন অয়েটারকে ডেকে একটা স্কচের অর্ডার দেয়। স্কচ আর একটা সিগারেট জ্বালিয়ে অনুপমাকে ফোন করে দেবায়ন। ওর মন বেশ খুশি, মিস্টার সেনকে অবিভুত করে দিয়েছে ওর এই পরিকল্পনা। কি করে এই কথা ওর মাথায় এসেছিল সেটা নিজেই জানে না।
অনুপমাকে সব কথা বলতেই, প্রেয়সী ওকে বলে, “তুমি ঠিক আছো? খাওয়া দাওয়া হয়েছে? মামনিকে পারলে একটা ফোন করে দিও। আর হ্যাঁ বেশি স্কচ মারাতে হবে না। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরবে। কাল মনে হয় না তুমি কলেজ যেতে পারবে। আমি কালকে তোমার জন্য ওয়েট করব বাড়িতে। শ্রেয়া এসেছে, সঙ্গীতা এসেছে, রাতে থাকবে। ওদের দেখে পায়েল বেশ খুশি আজকে।”
দেবায়ন, “দাও একটু ডারলিংয়ের সাথে একটু কথা বলি।”
অনুপমা, পায়েলকে ফোন দেয়। দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “কি রে তোর কি খবর? ঠাণ্ডায় জমে গেছিস নাকি?”
পায়েলের কণ্ঠস্বরে সেই পুরানো তেজ, পুরানো উচ্ছলতা আর নেই, মৃদু হেসে জিজ্ঞেস করে, “তুই নাকি আজকে সুট পড়েছিস?”
দেবায়ন বলে, “হ্যাঁ, ছাই রঙের সুট। তুই ত উঠে একবার দেখলি না। হ্যাঁরে, আমার শালা কোথায়?”
পায়েল, “পাশেই আছে। তোরা কেউ কি আমাকে একবিন্দুর জন্য চোখের আড়াল করিস? অনুকে, কাকিমাকে যত বলি আমি ঠিক আছি, কিন্তু কেউ শুনতে চায় না। শুধু অঙ্কনের সাথে ঘুরতে বের হলে একটু মনে হয় বাঁধন থেকে ছাড়া পেলাম।”
দেবায়ন বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে, “অনুর আর কাকিমার ব্যাপারে আমি নাক গলাব না।”
পায়েল হেসে বলে, “তুই না বুঝালে কে বুঝাবে? আমার কথা শোনে না কেউ। দিদির সামনে অঙ্কনের মুখ ফোটে না। একা একদম ছাড়তে চায় না দেখে। আজকে আবার শ্রেয়া আর সঙ্গীতাকে ডেকেছে। প্লিস একটু কাকিমা আর তোর বউকে বুঝিয়ে বলিস।”
দেবায়ন, “এই ব্যাপারে আমি দুঃখিত ডারলিং। অনুর সেদিনে কাতর ডাক আজও আমার কানে বাজে আর ঋতুর কথাগুলো। আমি দুঃখিত পায়েল।”
পায়েল ম্লান হেসে বলে, “ঠিক আছে, তুই সাবধানে থাকিস। গুড নাইট।”
ফোন রেখে দিয়ে, অনুপমার কথা চিন্তা করছিল দেবায়ন। সত্যি কথা না বললে একসময়ে প্রেয়সীর কাছে ধরা পরে যেত, আবার বলে দিলে মিস্টার সেনের কাছে অসুবিধেতে পড়তে হত। কিন্তু ওর প্রেয়সী ওর চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধি রাখে।
“হ্যালো, একা একা দাঁড়িয়ে এখানে? আমি ওপরে তোমাকে খুঁজতে গেছিলাম।”
মিষ্টি একটা কণ্ঠ স্বর শুনে দেবায়ন ঘুরে দাঁড়ায়। পেছনে হাসি হাসি মুখে, গায়ে একটা শাল জড়িয়ে অনন্যা দাঁড়িয়ে।
দেবায়নের হাতের গ্লাস হাতে থেকে যায়। অনন্যার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে, এত কাছে এত সুন্দরী একজনকে দেখতে পাবে ঠিক মানতে পারে না। এতদিন টি.ভি স্ক্রিনে দেখেছে ওকে। কোন সময়ে নায়িকার বোন, কোথাও নায়িকার বান্ধবী। ছোটো বাজেটের কয়েকটা সিনেমা করেছে, তবে সেই গুলো দেখে নি দেবায়ন। তাও দেবায়নের অনন্যাকে ভালো লাগত ওর বড় বড় চোখের জন্য আর একটু উজ্জ্বল শ্যামলা ত্বকের জন্য।
দেবায়নের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, “তোমার সাথে আবার দেখা হয়ে বড় ভালো লাগলো।”
অনন্যার কথা শুনে দেবায়ন আকাশ থেকে পড়ল, বলে কি মেয়েটা। এই অসামান্য লাস্যময়ী তরুণী, নামকরা এক অভিনেত্রী আর মডেল। দেবায়ন, সিগারেটে বড় একটা টান মেরে মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, “পাগল হলে নাকি? আমি ধন্য তোমার সাথে কথা বলতে পারছি। তুমি কি জানো, তুমি যদি একটা রুমাল ফেল সেটা তুলে ধরার জন্য হাজার লোক দৌড়ে আসবে।”
অনন্যা হেসে ওঠে খিলখিল করে, ওর মিষ্টি হাসির কলতানে হারিয়ে যায় দেবায়ন। অনন্যা দেবায়নের গায়ে ঢলে পরে বলে, “ধুর বাবা। যে লোক আমার রুমাল তুলে দেবে সে ত চিরকাল আমার রুমাল তুলতে ব্যাস্ত থাকবে, আমার দিকে দেখার সময় তাঁর কাছে কখন হবে তাহলে? আমি চাই আমার রুমাল না তুলে যে অদুরে দাঁড়িয়ে আমার দিকে দেখবে সে।”
দেবায়নের নাকে ভেসে আসে অনন্যার শরীরের মাদকতা ময় মিষ্টি গন্ধ। শীতের রাতে অনন্যার শরীরের ছোঁয়ায় দেবায়নের শরীর উত্তপ্ত হতে শুরু করে। দেবায়ন ওকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি এখন জেগে কেন?”
অনন্যা হাতের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলে, “একটা সিগারেট দাও ত আগে। একা একা টান মেরে যাচ্ছও একটু দাও।”
দেবায়ন প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে ওর হাতে দেয়। গাড় বাদামি রঙ মাখা ঠোঁটের মাঝে সাদা সিগারেট চেপে দেবায়নের দিকে ঝুঁকে পরে। দেবায়ন, লাইটার দিয়ে ওর সিগারেট জ্বালিয়ে বলে, “বেশ জমে ঠাণ্ডা পড়বে এবারে।”
অনন্যা, “সেন স্যার কেন যে র‍্যাডিসন চুজ করল বুঝে পেলাম না। এই সময়ে কেউ গঙ্গার ধারে আসে? এখানে আসতে হয় গ্রীষ্ম কালে গঙ্গার ঠাণ্ডা হাওয়া খেতে। এখন হাড় কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে, শুধু রুমে বসে গরম হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।”
অনন্যা কথাটা বলেই হেসে ফেলে।
দেবায়ন হেসে বলে, “তাহলে যাও এখানে দাঁড়িয়ে কেন?”
অনন্যা হেসে বলে, “যাঃ বাবা। আমি তনুজাকে ওই জার্মান ভদ্রলোকের সাথে পাঠিয়ে দিলাম ইচ্ছে করে আর তুমি জিজ্ঞেস করছ আমি এখানে কেন? দাও দাও, তোমার রুমের কার্ডটা দাও। আর তাড়াতাড়ি সিগারেট শেষ করে চলে এস।”
দেবায়ন যেন হাতে চাঁদ পায়। স্বপ্নে ভাবেনি অনন্যার মতন এক অভিনেত্রী ওর এত কাছে এসে কোনদিন এই সব কথা বলবে। অনন্যা দেবায়নের অবাক চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি ভাবছ এত? নিবেদিতা ম্যাডাম নিজে বলল আমাকে যে তোমাকে একটু দেখতে। তুমি সামান্য বিজনেস পার্টনার নয়। তোমার পরিচয় তার থেকে বেশি কিছু। যাই হোক অত শত আমার জেনে কি লাভ।”
দেবায়ন, পকেট থেকে রুমের কার্ড বের করে অনন্যার হাতে দেয়। কার্ড দেবার সময়ে ইচ্ছে করেই দেবায়ন অনন্যার হাত খানা নিজের হাতের মধ্যে ধরে রাখে। অনন্যা হাত ছাড়িয়ে দুষ্টুমি হাসি দিয়ে চলে যায়। হাতের গ্লাসের বাকি স্কচ এক ঢোকে গলায় ঢেলে নেয়। মাথা একটু ঝিম ঝিম করে ওঠে, সেই সাথে বাকি বেঁচে থাকা সিগারেটে লম্বা এক টান দিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায় দেবায়ন। কি হবে রাতে, একা নিভৃতে একটা রুমের মধ্যে এক সুন্দরী অভিনেত্রীর সাথে রাত কাটাবে। হাঁটতে হাঁটতে নিজের হাতে চিমটি কাটে দেবায়ন। না, ব্যাথা লাগলো, সত্যি ব্যাথা লাগলো, স্বপ্ন দেখছে না তাহলে। একবার অনুপমাকে জানালে হয়। কি বলবে প্রেয়সীকে? পায়েলের সাথে সেই রাতের পরে অনুর অঙ্ক ছাড়া অন্য কারুর কোলে মাথা রাখেনি। অনেকদিন পরে এক অন্য তরুণীর রুপ সুধা আকণ্ঠ পান করবে, ভাবতে পারছে না। বলা কি উচিত? না থাক, আগামী কাল সকালে বলবে। আগে দেখা যাক, অনন্যা কি করে।
দেবায়ন কলিং বেল বাজিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে ভেতর থেকে কোন আওয়াজ আসে না। একটু ভাবনায় পরে যায়, কি হল। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে আরেকবার কলিং বেল বাজায়। কিছুপরে দরজা খোলে অনন্যা। পোশাক বদলে একটা পাতলা স্লিপের উপরে একটা ড্রেসিং গাউন পরে। অনন্যা দরজা খুলে ইশারায় ওকে চুপ থাকতে বলে। দেবায়নের চোখ যায়, বিছানার সাইড টেবিলে। ওখানে একটা গ্লাসে মদ রাখা, একটা এশট্রেতে একটা সিগারেট জ্বলে জ্বলে অর্ধেক হয়ে গেছে। হয়ত দুটো কি তিনটে টান মারা হয়েছে তার বেশি নয়।
অনন্যা কণ্ঠস্বর বেশ চিন্তিত শোনায়, “এটা কি করে হল? কথা ছিল দশটা এপিসোডের সেটা কি করে কমিয়ে ছটা এপিসোড হয়?…… ম্যানেজার তুমি না আমি? …… কি? মোটে একুশ দিন শুটিং? ……… ওই এডের কি হল? সেই মার্চে? থাক এখন আর ডিস্টার্ব করো না আমি একটু ব্যাস্ত। কালকে ফিরে আমি নিজেই দেখব একবার।”
দেবায়ন রুমে ঢুকে সোফার উপরে বসে অনন্যাকে দেখে। অনন্যা, ফোন ছেড়ে চুপচাপ বিছানায় বসে সাইড টেবিলের গ্লাস উঠিয়ে পুরো মদ গলায় ঢেলে দেয়। ফোনের উপরে সব রাগ ঢেলে বিছানার একপাশে ফোন ছুঁড়ে দেয়। দেবায়ন গলা খ্যাঁকরে উঠতেই অনন্যা ওর দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে হাসি টেনে মনের ভাব বদলে ফেলে।
অনন্যা হেসে ওর সোফার হাতলে বসে বলে, “সরি। কিছু মনে করো না।”
দেবায়ন বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বলে, “তোমার মুড মনে হয় ভালো নেই? কি হয়েছে, আপত্তি না থাকলে জানতে পারি কি?”
অনন্যা, “ছাড়ো অইসব। নিত্যদিনের ব্যাপার আর নিত্যদিনের কাজকারবার। তুমি ড্রেস চেঞ্জ করবে না?”
দেবায়ন, “একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি কি?”
অনন্যা দুম করে হেসে বলে, “না জিজ্ঞেস করতে পারো না।” তারপরে দেবায়নের গায়ের ওপরে ঢলে পরে বলে, “কি কথা?”
দেবায়ন, “কি নিয়ে কথা হচ্ছিল? তোমার প্রোফেশনাল কিছু মনে হল। না জানাতে চাইলে আমি জানতে চাইব না।”
অনন্যা, “এই মাসে শুধু একুশ দিন কাজ আছে। পরের তিন মাসে কিছু নেই, সেই একটা এডের কথা ছিল সেটা মার্চে, তাই একটু চিন্তায় আছি। যাই হোক সে সব নিয়ে মাথা ঘামিয় না।”
দেবায়ন, “তুমি মিস্টার সেনকে আগে থেকে চেন।”
অনন্যা, “হ্যাঁ, পারমিতা ম্যামের দৌলতে আগে থেকে চিনি। পারমিতা ম্যাম আমার জন্য করেছে।”
দেবায়ন ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, “মানে?”
অনন্যা দেবায়নের গায়ে ঢলে বলে, “ছাড়ো না ওই সব কথা। এত ব্যাক্তিগত কথাবার্তা জানতে নেই। বিজনেস আগেই শেষ হয়ে গেছে, নাউ জাস্ট প্লেসার, বেবি। শুধু তুমি আর আমি।”
 
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: পাপ কাম ভালবাসা - by Mr Fantastic - 29-09-2020, 04:14 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)