Thread Rating:
  • 31 Vote(s) - 3.19 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
পাপ কাম ভালবাসা
একুবিংশ পর্ব (#03)

পথে যেতে যেতে মিস্টার সেন বলেন, “কি ব্যাপার, টেন্সান নিচ্ছ কেন? এবারে একটু ফ্রাংক হও আমার সাথে। তুমি আমার উত্তরাধিকারী, আমার হবু জামাই। সবসময়ে আমার এক হাতের মধ্যে থাকবে তার বাইরে একদম যাবে না। সবসময়ে চোখ কান খোলা রেখে দেবে, এই রকম বিজনেস পার্টিতে খুব জরুরি। যদিও খুব কম সংখ্যক লোক আসবে।”
দেবায়ন, “কে কে আসছে?”
মিস্টার সেন, “জার্মানিতে আমার এক বন্ধু থাকে অনিমেশ সাহা, সে আসছে। আসলে এই ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট সেই যোগাড় করে দিয়েছে। মিস্টার ড্যানিয়েল হারজোগ আর তার সি.এফ.ও মিস্টার হেল্মুট মেরকেল। নিবেদিতা থাকবে আমার তরফ থেকে। আসল প্রেসেন্টেসান আর বেশির ভাগ আলোচনা আগেই হয়ে গেছে। শুধু একবার কোম্পানি দেখতে চায় আর ভবিষ্যতের রোডম্যাপ জানতে চায় এই আর কি। আমার চাহিদা পাঁচশো মিলিয়ন ইউরো, চারশো কোটি টাকার ভেঞ্চার দেখা যাক কোথায় গিয়ে ঠেকে।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “কিন্তু কোম্পানি ত আরাইশো কোটি টাকার?”
মিস্টার সেন, “হ্যাঁ জানি, তবে ওই সেদিন তোমাকে বলেছিলাম না, তিন ধরনের অডিট রিপোর্ট তৈরি করতে হয়। যাই হোক, ভদ্রলোক বেশ ঘাঘু মনে হয় না দেবে। ওদের ফাইনাল অফার সাড়ে তিনশো মিলিয়ন ইউরো, আজকের পার্টি তার জন্য দেখা যাক কতদুর কি হয়।”
দেবায়ন, “আমি এখানে কি করব, বলতে পারেন?”
মিস্টার সেন, “তুমি কিছু করবে না, তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি শুধু মাত্র অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য। এরপরে মানুষকে কি করে সামলাতে হয় সেটা এখন থেকেই জানা উচিত তোমার। কার সাথে কি ভাবে কথা বলবে, সামনের মানুষকে কি হিসাবে চিনবে। বুঝলে দেবায়ন, ব্যাবসায় মানুষ চার প্রকারের হয়। গরু, কুকুর, বাঘ আর শেয়াল। এই গরু প্রকৃতির মানুষ হচ্ছে নিরীহ, বুদ্ধিমান এবং আসল শিক্ষিত যাকে বলে। এই সব মানুষের সাথে ভালো ভাবে কথা বলবে, ভালো কাজ দেখাবে, ওদের মন জুগিয়ে চলবে দেখবে ওরা তোমার কাজ করে দেবে অথবা তোমাকে কাজ দিয়ে দেবে। তোমার কর্ম দক্ষতাকে ওরা সন্মান দেবে। দ্বিতীয় প্রকৃতির মানুষ হচ্ছে, কুকুর। ওরা সব সময়ে একটু কিছু চায়, কাজের চেয়ে বেশি চায় একটু তোষামোদি একটু উপহার। ওদের সামনে হাড্ডি রাখলেই ওরা লেজ নাড়াতে নাড়াতে তোমার কাছে চলে আসবে। মানে ওদের কে শুধু টাকা দেখিয়ে বশে আনতে পারবে। এদের চেনা বেশ সহজ, কেউ যদি তোমাকে বেশি স্যার স্যার করে, তাহলে বুঝবে সে কুকুর। তাকে টাকা দিয়ে, উপহার দিয়ে সহজে কাজ হাসিল করতে পারবে। সব থেকে কঠিন হচ্ছে এই বাঘ প্রকৃতির মানুষ। এরা শিক্ষিত, এরা পয়সাওয়ালা এরা আদব কায়দা জানা লোক। এরা সহজে গলে না, এদের সাথে মেপে কথা বলতে হয়, ডিপ্লমেটিক হতে হয়, মন জুগিয়ে চলতে হয় আর ভালো সংগ দিতে হয়। এরা প্রতিপত্তি সম্পন্ন ব্যাক্তি। মডেল অথবা হাই ক্লাসের মেয়েদের দিকে এদের নজর নয়, এদের নজর অন্য দিকে। যেটা সহজে পাওয়া যায় না তার দিকে এদের নজর থাকে, সেটাই তারা চায়। বুঝলে কিছু?”
দেবায়ন বুঝতে পারে, কেন মিস্টার সেন পারমিতাকে কাজে লাগিয়েছিল। মনের ভেতরে হাসে দেবায়ন, পাশে বসার মানুষটার মুখোশ অনেকদিন আগেই খুলে গেছে, তাও সচক্ষে প্রত্যক্ষ করে কিঞ্চিত ঘৃণা বোধ জন্মায়। এই মানুষকে দিয়েই ওর কাজ হাসিল হবে, তাই মাথা দুলিয়ে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ, কিছু বুঝতে পেরেছি। সম্পন্ন বাড়ির ঘরোয়া মহিলা অথবা কোন নামি অভিনেত্রী চাই এদের।”
মিস্টার সেন বাঁকা হেসে বলেন, “খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পেরে গেছ তুমি। শেষে শেয়াল প্রকৃতির মানুষ। এরা হটাত করে বিত্ত আর শক্তি হাতে পেয়ে যায়। এরা খুব ধূর্ত কুটিল নেতা গোচরের মানুষ। এরা আগে ঠিক ভাবে খেতেই পেত না, কথাবার্তা ঠিক মতন বলতে জানে না, কিন্তু ওই শক্তি হাতে পাওয়ার পরে নিজেদের খুব বড় মনে করে। এদের যা দেবে তাই খাবে, এরা টাকা পয়সা খাবেই তাঁর সাথে মেয়ে দিতেও হয়। যে রকম মেয়ে দাও এদের চলে যায়। শুধু একটু গা গরম করা চাই এদের।”
দেবায়ন বাঁকা হেসে বলে, “হুম বুঝলাম। বেশ প্যাঁচ আছে এই ব্যাবসায় নামতে।”
মিস্টার সেন একটু চিন্তিত হয়ে বললেন, “জানো, নিবেদিতাকে নিয়ে একটু চিন্তায় পরে গেছি।”
দেবায়ন, “আপনি বলেছিলেন যে পরমিতকে সরিয়ে দেবেন, নিবেদিতাকে ও তাহলে সরিয়ে দেওয়া যায়।”
মিস্টার সেনের চোয়াল শক্ত হয়ে যায় দেবায়নের কথা শুনে, “না ব্যাপারটা সেরকম নয়। ঠিক তোমাকে বুঝিয়ে উঠাতে পারছি না। পরমিত দিল্লীতে থাকে, বোর্ড মিটিঙের সময়ে মাঝে মাঝে আসে কিন্তু প্রফিট নেবার সময়ে একদম ঠিক। নিবেদিতা কিছুতেই পরমিতকে দেখতে পারে না। নিবেদিতা কোম্পানির সব দেখা শুনা করে আর পঁচিশ পারসেন্ট। বেশ কয়েক বছর ধরে বলে আসছে ওর শেয়ার বাড়ানোর জন্য, কিন্তু তখন আমার কাছে অত টাকা ছিল না যে পরমিতের শেয়ার কিনে ফেলি। নিজের শেয়ার দিতে রাজি নয় মিতা। মিতার সাথেও বনে না নিবেদিতার। মিতা, কোম্পানির জন্য প্রচুর ক্লায়েন্ট যোগাড় করেছে, কিন্তু অফিসে যায় না, অফিসের গণ্ডগোলে মাথা ঘামায় না। সেই বুদ্ধি মিতার নেই। মিতা হচ্ছে গরু, ওকে একটু ভালোবেসে কথা বললে, একটু আদর দিলেই গলে যায়। তুমি সেদিন বলার পরে আমি ফিরে পেলাম ওকে। তাই এইসব থেকে ওকে দুরে সরিয়ে রাখার জন্য এবারের বিজনেস মিটিঙে ওকে আনিনি। ওইদিকে নিবেদিতা একটু রেগেই আছে। ও যে ফাইন্যান্সিয়ার এনেছিল তাকে আমি ইচ্ছে করেই নাকচ করে দিয়েছিলাম। ওকে পরমিতের শেয়ার দিলেও ওর মন একটু কেমন কেমন করে থাকবে। দেখা যাক আজকে কিছু বুঝিয়ে উঠতে পারি কিনা। নিবেদিতা একা ছোটো ছেলে কে নিয়ে থাকে, ওকে কোম্পানি থেকে সরিয়ে দেবার কোন প্রশ্ন ওঠে না।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা, এই জার্মান ভদ্রলোক কেন, মানে বিদেশি ফাইন্যান্সিয়ার কেন?”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “অনেক দুরের চিন্তা করেই আমি অনিমেশকে একটা ক্যাপিটালিস্ট খুঁজতে বলি। তোমার সফটওয়্যার কোম্পানিতে কাজে দেবে। বাইরের বড় বড় প্রোজেক্ট আসবে ওর হাত ধরে, তুমি একটু মিস্টার হারজোগকে হাতে করার চেষ্টা কর। দেশে যে সব প্রোজেক্ট পাবে তাতে মাসের খরচ, দৈনন্দিন খরচ উঠে আসবে। যতক্ষণ না কোন বড় প্রোজেক্ট হাতে পাবে ততক্ষণ তোমার কোম্পানির নাম হবে না। বড় প্রোজেক্ট মানে বেশি লাভ, বেশি টাকা। বাইরের বড় প্রোজেক্ট পাওয়ার জন্য একজন বাইরের মানুষের দরকার। ইউরোপে আমার বিশেষ জানাশোনা নেই আমার। অনুর মেসো ডাক্তার, ছেলে ডাক্তার ওদের দিয়ে এইসব কাজ হবে না। অনিমেশ ফ্রাংকফুর্টে বেশ বড় একটা ইউরোপিয়ান ব্যাঙ্কে চাকরি করে, বেশ বড় পোস্টে। অনেক চেনা জানা আছে, সেই সুত্রে বেড়িয়ে গেল এই হারজোগের কথা। আর এই হারজোগ হচ্ছে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার। অনেক কিছুতে হাত ডুবিয়ে টাকা কামিয়েছে। ওর অনেক চেনাজানা আছে ইউরোপে।”
দেবায়ন, “আপনি এত কিছু এত আগে থেকে ভেবে রেখেছেন?”
মিস্টার সেন, “ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে রাখতে হয় না হলে কি করে হবে। যদি আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন না দেখি তাহলে উড়তে পারবো কি করে, মিস্টার বসাক।”
শীত কাল, তাড়াতাড়ি সন্ধ্যে নেমে আসে গঙ্গাবক্ষে। মিস্টার সেন, নিবেদিতা আর বেশ কয়েক জনকে ফোন করে জেনে নিলেন তারা কোথায়। নিবেদিতা জানাল তিনি পৌঁছে গেছে, অনিমেশ রাস্তায়, বাকিদের নিয়ে আসছে। বাকিরা পরে রওনা দেবে কোলকাতা থেকে। সন্ধ্যের একটু পরেই মিস্টার সেন আর দেবায়ন রায়চক, গঙ্গার ধারে র‍্যাডিসন ফোর্ট রিসোর্টে পৌঁছে যায়। ওদের নামে ছয় খানা রুম বুক করাছিল আগে থেকে। ম্যানেজার নিজে এসে, ডাইনিং আর মিটিঙের জায়গা দেখিয়ে দেয়। গঙ্গার পাশেই বেশ বড় হোটেল, উঁচু দেয়ালের পাশে সবুজ ঘাসে ঢাকা লন। তার একপাশে খোলা আকাশের নিচে মিটিঙের ব্যাবস্থা আর ডিনার। মিস্টার সেন, দেবায়নকে বলে একবার ম্যানেজারের সাথে গিয়ে রুম গুলো দেখে আসতে আর মিটিঙের জায়গা দেখে আসতে।
দেবায়ন এগিয়ে যেতেই এক মহিলা হাসি হাসি মুখে মিস্টার সেনের দিকে এগিয়ে আসে। ফর্সা সুন্দরী, আকর্ষণীয়, চোখে মুখে বুদ্ধিদিপ্তের ছটা। বয়স পয়ত্রিশের ওপারে নয়, দেহের গঠন বেশ আকর্ষণীয়। ঘিয়ে রঙের বিজনেস সুট আর খোঁপাতে দারুন দেখাচ্ছে মহিলাকে। মহিলার আদব কায়দা দেখে দেবায়ন বুঝতে পারে এই নিবেদিতা।
নিবেদিতা মিস্টার সেনকে দেখে মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করে, “তুমি এত দেরি করে দিলে? শরীর কেমন আছে তোমার?”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “হ্যাঁ শরীর ঠিক আছে। দুই দিনে আর নতুন কি হবে। অঙ্কুশ আসতে চায় নি?”
নিবেদিতা একগাল হেসে বলে, “হ্যাঁ, বায়না ধরেছিল। বাবার মাথার বাকি চুল ছিঁড়ে ফেলেছে আর কি। আমি বাবাকে আর চাকরকে বলে এসেছি যে বেশি কান্না কাটি করলে টিভি চালিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিতে।”
মিস্টার সেন, “নিয়ে আসলে পারতে। একদম ছোটবেলা থেকেই বিজনেস করা শিখে যেত আর কি।”
কথাটা বলেই হেসে ফেলেন মিস্টার সেন।
নিবেদিতা মিস্টার সেনের বাজুতে ছোটো একটা চাঁটি মেরে বলে, “তুমি না যাতা। এখন অনেক ছোটো আছে।”
মিস্টার সেন, দেবায়নের সাথে পরিচয় করিয়ে বলে হেসে বলে, “অনুর ফিয়ান্সে, বাকি টা নিজেই পরিচয় সেরে ফেল।”
নিবেদিতা দেবায়নেকে আপাদমস্তক জরিপ করে হেসে বলে, “আচ্ছা এই দেবায়ন। সোমেশের মুখে তোমার নাম শোনার পর খুব দেখার ইচ্ছে ছিল তোমাকে।”
মিস্টার সেনকে বলে, “চল কফি শপে গিয়ে বসি। অনিমেশদা একটু পরেই চলে আসবে। তোমাদের পেছনেই মনে হয় ওদের গাড়ি ছিল।”
মিস্টার সেন আর নিবেদিতার মেলা মেশার মধ্যে দেবায়ন বেশ একটা আন্তরিকতা খুঁজে পায়। এই আন্তরিকতা কি শুধু ব্যবসা সংক্রান্ত না তাঁর চেয়ে কিছু বেশি, এই প্রশ্ন জাগে দেবায়নের মাথায়। এর উত্তর এখন নয়, শুধু পর্যবেক্ষণ করে যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। নিবেদিতা, মিস্টার সেনের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বেশ হাত মুখ নেড়ে হেসে হেসে কথা বলে। দেবায়ন কফি শপে না গিয়ে, সিগারেট ধরানোর আছিলায় বাইরে যায়। লনে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে অনুপমাকে আর মাকে ফোনে জানিয়ে দেয় যে ঠিক মতন রায়চকে পৌঁছে গেছে। অনুপমা, হেসে বলে যে বেশি যেন মদ না খায় আর নিজের চোখ কান যেন সর্বদা খোলা রাখে। সময় মতন পেছনে সরতে যেন পিছপা হয় না। দেবায়ন জানিয়ে দেয় যে বেশ সতর্ক থাকবে সব বিষয়ে।
কিছুপরে মিস্টার সেন বাকিদের নিয়ে লনে আসেন। মিস্টার সেন দেবায়নকে ডেকে মিস্টার ড্যানিয়েল হারজোগ, মিস্টার হেলমুট মেরকেল আর পুরানো বন্ধু, মিস্টার অনিমেশ সাহার সাথে আলাপ করিয়ে দেয়। অনিমেশ, দেবায়নের সাথে হাত মেলানর সময়ে একটু বাঁকা হেসে মিস্টার সেনের দিকে তাকায়। মিস্টার সেন মৃদু মাথা নাড়িয়ে কিছু একটা ইশারা করে, সেই ইশারা দেবায়নের চোখ এড়াতে পারে না।
কিছুক্ষণের মধ্যে, ড্রিঙ্কের আর স্টারটারের সাথে ওদের আলোচনা সভা শুরু হয়। মিস্টার হারজোগ বলেন কোম্পানির ব্যালেন্স সিট, কোম্পানি প্রোফাইল ইত্যাদি আগেই দেখে নিয়েছেন আর সেই সাথে এই কয়দিনে কোম্পানি দেখা আর বিভিন্ন কাজের সাইটে গিয়ে তদারকি করে দেখা হয়ে গেছে। সব ব্যাপারে বেশ সন্তুষ্ট তিনি, তবে ভবিষ্যতের রোডম্যাপ একবার জানতে চায় মিস্টার হারজোগ। মিস্টার সেন নিবেদিতাকে বলে ওদের রোডম্যাপের প্রেসেন্টেশান দিতে। নিবেদিতা ল্যাপটপ খুলে সব প্রেসেন্টেশান দেয়। সেই মতন জানায় যে আগামী দিনে ওরা চায় নতুন ভারটিকাল তৈরি করতে। এতকাল শুধু মাত্র হাউস বিল্ডিং কন্সট্রাক্সানে ছিল ওদের কোম্পানি, এবারে দুটি নতুন ভারটিকাল তৈরি করতে চায়। এক, রাস্তার কাজ, সেই জন্য বেশ কয়েকটা হাইওয়ের টেন্ডার ওরা পেয়েছে এবং অভার ব্রিজের কাজ, তাঁর টেন্ডার ওরা পেয়েছে। অন্য একটা ভারটিকালে ওরা বড় বিল্ডিং কন্সট্রাক্সানে হাত দিতে চায় যেমন বড় বড় হোটেল, বড় বড় মল। মিস্টার হারজোগ আর মিস্টার মেরকেল মন দিয়ে সব শোনার পরে বলেন, সব ঠিক আছে কিন্তু সাড়ে তিনশো মিলিয়নের উপরে ইনভেস্ট করা এখুনি সম্ভব নয়। দেবায়ন সব কথা মন দিয়ে শোনে। নিবেদিতা বলে যে দুটি নতুন ভারটিকাল তৈরি করতে অনেক খরচ আছে আর সরকারি কাজে একটু খরচ করে লাভের মাপ অনেক বেশি। সুতরাং বিনিয়গের যে রিটার্ন তিনি পাবেন সেটা মোটা অঙ্কের হবে। মিস্টার মেরকেল, ইনভেস্টমেন্টের রিটারনের ব্যাপারে কিঞ্চিত দ্বিমত প্রকাশ করে। তিনি বলেন, যে কুড়ি, পঁচিশ, তিরিশ এই ছকে রিটার্নে রাজি নন। রিটার্ন পারসেন্ট খুব কম। আগামী দশ বছরের জন্য টাকা ইনভেস্ট করবেন কিন্তু সেই তুলনায় রিটার্ন একটু বেশি দেওয়া উচিত। মিস্টার সেন বলেন, সাড়ে তিনশোর জায়গায় যদি চারশো মিলিয়ন ইউরো হয় তাহলে তিনি কুড়ি, সাতাশ, বত্রিশ হিসাবে রিটার্ন দিতে রাজি আছেন। সেই কথা শুনে, নিবেদিতা একটু দমে যায় কিন্তু মিস্টার সেনের কথার উপরে কথা বলতে পারে না। ওদের সামনে বসচা করা ঠিক নয়। মিস্টার মেরকেল বলেন যে অন্তিম অফার, তিনশো সত্তর মিলিয়ন ইউরো এবং রিটার্ন পারসেন্ট কুড়ি তিরিশ পঁয়ত্রিশ হিসাবে দিতে হবে। এই ডিলে রাজি থাকলে ডিল ফাইনাল করতে রাজি। মিস্টার সেন আর নিবেদিতা বিষণ্ণ হয়েও মানতে রাজি হয়ে যায়। ওদের টাকার খুব দরকার, কিন্তু লাভের অনেক অংশ মিস্টার হেরজোগ নিয়ে চলে যাবেন। মিস্টার সেন চান এই টাকায় হোটেল কেনার আর নিবেদিতা চায় পরমিতের শেয়ার কেনার। রায়চকে আসার সময়ে মিস্টার সেন দেবায়নকে সব ফাইল দেখিয়েছিল, সেই মতন লাভের কথা ওর মাথার মধ্যে আঁকা আছে। দেবায়ন চুপচাপ বসে একটা কাগজে কিছু একটা অঙ্ক কষে।
হটাত সবাইকে অবাক করে দিয়ে দেবায়ন বলে, “আই হ্যাভ অ্যা প্রোপোসাল। আমার একটা বক্তব্য আছে, মনে হয় সবার ভালো লাগবে এবং সবাই খুশি হবে।”
মিস্টার মেরকেলের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি যদি ফ্লাট পঁয়তাল্লিশ পারসেন্ট দেই আপনাকে তাহলে আপনি চারশো মিলিয়ন ইউরো ইনভেস্ট করবেন?”
মিস্টার সেন আর নিবেদিতা, অবাক হয়ে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে। মিস্টার সেন চাপা গলায় বাংলায়, ওকে কথা বলতে বারন করে। দেবায়ন মিস্টার সেনকে আসস্থ করে বলে সব ঠিক করে দেবে।
মিস্টার মেরকেল আর মিস্টার হেরজোগ একটু ভেবে জিজ্ঞেস করে, “হোয়াট ইজ দা ক্যাচ? এখানে কিছু লুকানো শর্ত আছে মনে হচ্ছে, সেটা কি?”
দেবায়ন বলে, “পঁয়তাল্লিশ পারসেন্ট, প্রফিট শেয়ারিং আগামী দশ বছর। এটা এক মাত্র প্রযোজ্য যদি আপনি চারশো মিলিয়ন ইউরো ইনভেস্ট করেন তবেই। রাজি তাহলে ডিল… ভেবে দেখুন একবার।”
টেবিলে বসে পাঁচ জনেই দেবায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে, সবাই বুঝতে চেষ্টা করে কি বলতে চাইছে এই কালকের ছেলেটা।
মিস্টার সেন চাপা ধমক দিয়ে দেবায়নকে বলে, “তোমাকে মুখ খুলতে বারন করেছিলাম। তুমি কি জানো তুমি কি প্রোপোসাল দিয়েছ?”
নিবেদিতা রেগে গিয়ে মিস্টার সেনকে জিজ্ঞেস করে, “এই রকম একটা মানুষকে সত্যি তোমাকে আনতে হত?”
দেবায়ন চাপা হেসে মিস্টার হারজোগের দিকে তাকায়। মিস্টার হারজোগ বলেন, “প্রপসাল ভেরি গুড, কিন্তু একটু সময় দিতে হবে। কাল সকালে ডিল ফাইনাল করলে কেমন হয়।”
 
Like Reply


Messages In This Thread
RE: পাপ কাম ভালবাসা - by Mr Fantastic - 29-09-2020, 09:03 AM



Users browsing this thread: