29-09-2020, 08:58 AM
একুবিংশ পর্ব (#02)
দেবায়ন হেসে ফেলে, “আরো কিছু আছে নাকি কাকু? বলেই ফেলুন আজকে।”
মিস্টার সেন, “না না, আর নেই। এবারে আসল কথায় আসি। আমি চাই পরমিতকে কোম্পানি থেকে সরিয়ে দিতে। আর সেই শেয়ার নিবেদিতাকে দিতে। নিবেদিতা কিছু ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট যোগাড় করেছিল, তবে কেউ পঁচাত্তর শতাংশের জন্য রাজি হয়নি। আসলে আমি চাইনি তখন। পরমিতের শেয়ার নিবেদিতাকে দিয়ে দিলে আশা করি শান্ত হয়ে যাবে। এমনিতে নিবেদিতার আর পারমিতার একদম বনে না। কিন্তু তোমার কাকিমা অনেক করেছে, আর নয়। এবারে ওকে কন্সট্রাক্সান থেকে সরিয়ে নিয়ে পরিষ্কার কাজে লাগিয়ে দেব, হোটেলে। আর নিবেদিতা আমাদের এই কন্সট্রাক্সান দেখবে। তবে ওর কাছে থাকবে পঁয়তাল্লিশ শতাংশ, বাকিটা তোমার কাকিমার নামেই থাকবে। তবে তোমার কাকিমা আর কাজ করবে না। এবারে আসি হোটেলের কথায়। এই যে নতুন প্লান করেছি, সেই খানে অনেক টাকার দরকার। কিছু হোটেল বেশ ভালো চলে, কিছু হোটেল ঠিক চলে না। সব হোটেল গুলো আমি মালিকানা মানে একান্ন শতাংশ কিনতে চাই। কিন্তু এই মালিকানা সত্তা কিনতে গেলে টাকার দরকার পড়বে। আমি কন্সট্রাসানের জন্য ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট যোগাড় করেছি। সেই টাকা আমি সাইফন করব এই হোটেল গুলোর শেয়ার কেনার জন্য। তোমার সফটঅয়ারের টাকা বাজারে পরে আছে, যে কোন সময়ে তোলা যাবে।”
দেবায়ন মন দিয়ে সব কথা শুনে বলে, “আমি এখানে কোথায়?”
মিস্টার সেন হেলে বলেন, “তুমি আমার পাশে থাকবে, আবার কোথায়? অঙ্কনের এই কাজে মন লাগবে কি না সন্দেহ আর অঙ্কন এখন অনেক ছোটো। অনুপমা সফটওয়্যার দেখবে, শ্রেয়া আর রূপকের সাথে। পারমিতা, হোটেলে ইন্ডাস্ট্রি সামলাবে, নিবেদিতা কন্সট্রাক্সান সামলাবে। আমি আর তুমি, এই গ্রুপের মাথায় থাকব, তুমি এই গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তাই একবার বলছিলাম যে গ্রাজুয়েশানের পরে এম.বি.এ করে নাও। অবশ্য আজকাল ডিস্টান্সে এম.বি.এ করা যায়। পরের বৃহস্পতিবার, রায়চকের র্যাডিসন ফোর্টে একটা বিজনেস পার্টি আছে। সেখানে একজন ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট আসবে, জার্মান ভদ্রলোক। তিনশ কোটি টাকার ইনভেস্টমেন্ট। নিবেদিতা ওইখানে থাকবে, তখন পরিচয় করিয়ে দেব নিবেদিতার সাথে। আর বাকি কথা তোমাকে পরে বলব।”
দেবায়ন মাথা নাড়ায়, “সব ঠিক আছে কাকু। কিন্তু আমার একটা কিন্তু আছে। এতো কিছু বলছেন, আমি পারব তো?”
মিস্টার সেন বলেন, “আজকে তুমি লবস্টার আর ওয়াইনের স্বাদ নাও। পরের বৃহস্পতিবার গাড়িতে যেতে যেতে বাকি কথা বলব। আর হ্যাঁ, অনুপমাকে এত কিছু আবার বলতে যেও না। একটু মাথা খাটাও, তুমি সব কিছুতে বড্ড হৃদয় লাগিয়ে ফেল। সেটা করলে কি আর বিজনেস করা যায়, মিস্টার বসাক?”
দেবায়ন লাজুক হাসে, “আপনি যা বলবেন করতে রাজি আছি।”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “তুমি আমার উত্তরাধিকারী। আমার একমাত্র জামাই যার ওপরে চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়।”
মিস্টার সেন আর দেবায়ন, ডিনার শেষ করে। বাকি কথা, ওর পড়াশুনা আর কম্পিউটার শিক্ষা দিক্ষা নিয়ে হয়। ওরা টেবিল ছেড়ে উঠতে যাবে এমন সময়ে একটি সুন্দরী মেয়ের সাথে দেখা হয়। দেবায়ন বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে মেয়েটার দিকে, কোথায় যেন দেখেছে মেয়েটাকে। মেয়েটা বেশ সুন্দরী, চোখ দুটি বড় বড়, ভুরু জোড়া ধনুকের মতন বাঁকা, নাক টিকালো, মুখবয়াব অতি মধুর আকর্ষণীয়। মাথার চুল একপাশে ছাড়া বাম ঘাড়ের উপর দিয়ে সামনে এলিয়ে এসেছে। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণা, ঠোঁট দুটো গাড় বাদামি লিপ্সটিকে মাখা। বাম কব্জিতে একটা সোনার ব্রেসলেট। পরনে হাত কাটা, হাঁটু পর্যন্ত কালো রঙের চাপা পোশাক। শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সাথে লেপটে। বুকের দিকে তাকাতেই দেবায়নের বুক ছ্যাঁক করে ওঠে, চাপা পোশাকের ভেতরে সুউন্নত দুই স্তন জোড়া মুক্তি পাবার জন্য যেন ছটফট করছে। বুকের দিকে গভীর খাঁজ, স্তনের ভেতরের নরম ফর্সা ত্বকের উপরে রেস্টুরেন্টের হলদে আলো পিছল খেয়ে যায়। শরীরের ঘঠন অতি লোভনীয়। নরম তুলতুলে পাছা জোড়া দেখে দেবায়নের শরীরের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে। দেবায়ন আড় চোখে মেয়েটার দিকে বারেবারে তাকায়। বয়সে ওর থেকে বছর তিন চার বড়ই হবে। কিন্তু কোথায় যেন দেখেছে মেয়েটাকে।
মেয়েটা মিস্টার সেনের দিকে এগিয়ে হেসে বলে, “কি ব্যাপার সেন স্যার আজকে ম্যামকে ছাড়াই ডিনার করছেন?”
মিস্টার সেন মেয়েটার দিকে হাত বাড়িয়ে অভিবাদন করে বলে, “তুমি এখানে, কি ব্যাপার। কারুর সাথে ডিনারের নিমন্ত্রন নাকি?”
মেয়েটা হেসে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে মিস্টার সেনকে নিচু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “আজকে হটাত আপনার নেচার বদলে গেল বলে মনে হচ্ছে? কি ব্যাপার। পারমিতা ম্যাম জানে তো?”
মিস্টার সেন হেসে ফেলেন, “আরে না না। তোমাদের পরিচয় করিয়ে দেই, আমার বিজনেস পার্টনার, মিস্টার দেবায়ন বসাক।” আর মেয়েটাকে দেখিয়ে দেবায়নকে বলে, “একে চিনতে পারছ না? টি.ভি সিরিয়াল করে, অনন্যা বাসু।”
দেবায়ন এবারে চিনতে পারে মেয়েটাকে। অনন্যা বাসু, বাংলা টি.ভিতে বেশ কয়েকটা সিরিয়াল করেছে, সেই সাথে গোটা দুই সিনেমাতেও নায়িকার বোন, বান্ধবীর পার্ট করেছে। হাত বাড়িয়ে হাত মেলায় অনন্যার সাথে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, তাই আপনাকে দেখে তখন থেকে মনে হচ্ছে কোথায় যেন দেখেছি।”
অনন্যা, দেবায়নের হাতে হাত মিলিয়ে বলে, “আপনার সাথে দেখা হয়ে বড় ভালো লাগলো। গ্ল্যাড টু মিট সাচ অ্যা হ্যান্ডসাম এন্ড ড্যাসিং ইয়াং ম্যান। কিসের বিজনেস আপনার?”
দেবায়ন হেসে বলে, “আমাকে কেন আর আপনি বলে ডেকে কষ্ট দিচ্ছেন…”
মিস্টার সেন সঙ্গে সঙ্গে দেবায়নের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলে, “আমার সাথে বিজনেসে আছে, মিস্টার বসাক। আচ্ছা, তুমি তাহলে বৃহস্পতিবারে ঠিক সময়ে পৌঁছে যেও র্যাডিসন ফোরটে। তনুজার কি খবর? কালকে তনুজা কেও নিয়ে এসো।”
দুষ্টুমি ভরা ভুরু নাচিয়ে অনন্যা, মিস্টার সেনকে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ আমারও তাই মনে হচ্ছে। আমি রাত নটার মধ্যে পৌঁছে যাবো। বাকি দুইজনকে বলা আছে ওরা আমার আগেই পৌঁছে যাবে। তনুজার সাথে না হয় আমি কথা বলে নেব, আপনি চিন্তা করবেন না। ওকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমার।”
দেবায়নের দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আপনি আসছেন কি র্যাডিসন ফোরটে?”
মিস্টার সেন, দেবায়নের হয়ে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ ও আসবে। যাই হোক ওই কথা রইল, বাকি কথা ফোনে বলে নেব।”
হোটেল * স্তান ইন্টারনেশানাল থেকে বেড়িয়ে মিস্টার সেন দেবায়নকে বলে, “এবারে রাতে ভালো করে ঘুমাবে, বুঝেছ? রাত পোহালে বুদ্ধি বাড়ে। আর এখুনি সব কথা সবাইকে জানাতে হবে না। আগে এক এক করে পদক্ষেপ নেই আমরা। ধিরে ধিরে সিঁড়িতে চড়ি। সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক হয়ে গেলে সবাইকে জানাব। দেবশ্রীদি কে সময় হলে আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেব। ভালো কথা, তোমার সুট আছে?”
দেবায়নের কোনদিন সুটের দরকার পড়েনি, তাই মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে সুট নেই। মিস্টার সেন বলেন, “আমি অনুকে বলে দেব। আগামী কাল ক্লাসের পরে তোমাকে নিয়ে পার্ক স্ট্রিটের রেমন্ড শপে কিম্বা রেইড এন্ড টেলরে নিয়ে যাবে। বেশ পছন্দ মতন দুটি ভালো সুট কিনে নিও। আবার এটা ভেবে বস না যে শশুর দিচ্ছে বলে নেবে না।”
হেসে ফেলে দেবায়ন, “না না। সেই রকম কিছু নয়। ওকে তাহলে গুড নাইট।”
মিস্টার সেন চলে যাবার পরে দেবায়ন বাইকে চেপে ফিরে আসে বাড়িতে। বাড়িতে ঢোকা মাত্রই ওর মা জিজ্ঞেস করে, হ্যাঁরে এতক্ষণ মিস্টার সেনের সাথে কি কথা বলছিল? মায়ের প্রশ্ন যথাসম্ভব এড়িয়ে উত্তর দেয় যে, ওদের সফটওয়্যার কোম্পানির ব্যাপারে কথা বলার জন্য ডেকেছিলেন মিস্টার সেন। দেবশ্রী দেবায়নের কথা শুনে আহত হয়ে বলেন যে আগে পড়াশুনা তারপরে বাকি সব। তিনি মিস্টার সেনের সাথে কথা বলার অভিপ্রায় ব্যাক্ত করেন। মাকে বুঝিয়ে বলে দেবায়ন যে এখুনি কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছায় নি, তবে আগামী বৃহস্পতিবার মিস্টার সেনের সাথে এক জায়গায় যেতে হবে কিছু কাজের জন্য। রাতে বাড়ি ফিরবে না। দেবশ্রীর সন্দেহ হয়, বলে যে অনুপমার সাথে কথা বলবে, সত্যি কি মিস্টার সেনের সাথে যাবে না অন্য কারুর সাথে। দেবায়ন হেসে বলে, সোজা মিস্টার সেনকে ফোনে জিজ্ঞেস করতে পারে।
দেবশ্রী ছেলের গালে আদর করে হাত বুলিয়ে বলে, “বাবা, যাই করিস। নিজের মান সন্মান বজায় রেখে করিস। তোকে এইখানে নিয়ে আসতে আমার বুকের রক্ত জল হয়ে গেছে।”
দেবায়ন মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “এত ভেব না মা। একবার আমার সফটওয়্যার কোম্পানি দাঁড়িয়ে যাক, তোমাকে মাথায় করে রাখব আমি আর অনু।”
দেবশ্রী, “দেখিস বাবা। যা শুতে যা। কাল আবার কম্পিউটার ক্লাস আছে তোদের।”
রাতের বেলা বিছানায় পরতেই, চোখের সামনে ভেসে ওঠে কালো চাপা পোশাকে পরিহিত অনন্যার দুষ্টু মিষ্টি মুখ। নধর গোলগাল বাঙালি ছাপে ভরা সুন্দরী। স্তন জোড়া বেশ বড় বড়, হাঁটা চলায় এক মত্ততার ছন্দ। মাথায় প্রশ্ন ঢোকে দেবায়নের, একটা বিজনেস মিটিঙয়ে এক জন অভিনেত্রীর কি দরকার? আর যে তনুজার কথা বলছিল অনন্যা সে কি নামকরা বাঙালি মডেল, তনুজা রায়? চোখ বুজে তনুজার নধর দেহপল্লবের স্বপ্ন দেখে দেবায়ন। একটা সাবানের বিজ্ঞাপন করেছে, মসৃণ খোলা পিঠের উপর দিয়ে জলের ফোঁটা গড়িয়ে পরে কোমর পর্যন্ত, কোমরের নিচে ফোলা নিতম্ব তোয়ালেতে ঢাকা। ভেজা চুল এলোমেলো হয়ে ডিম্বাকৃতি মুখবয়াবের কিছু অংশে দোল খায়। ফ্যাকাসে গোলাপি ঠোঁট জোড়া ঈষৎ খোলা, এক তীব্র যৌন আবেদন মাখা হাসি নিয়ে টি.ভি স্ক্রিনের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় শেষে। মনে পরে যেতেই প্যান্টের ভেতরে শিথিল লিঙ্গ শক্ত হয়ে ওঠে। আপনা হতেই প্যান্টের ভেতরে হাত চলে যায়, লিঙ্গ মুঠি করে ধরে নাড়াতে শুরু করে।
বাধ সাধে অনুপমার ফোন, “কি গো তুমি। বাড়ি ফিরে একটা ফোন পর্যন্ত করতে ভুলে গেলে? কি ব্যাপার তোমার? বাবার সাথে এত কি কথা হল?”
ধরমর করে বিছানায় উঠে বসে দেবায়ন, “না মানে, আমি তোমার বাবার কথা গুলো ভাবছিলাম।”
অনুপমা, “কি কথা হল তোমাদের?”
দেবায়ন, “কিছু না এমনি ওই সফটওয়্যার কোম্পানি নিয়েই কথা হল। কাকু জিজ্ঞেস করছিলেন যে এখন পর্যন্ত আমরা রূপক শ্রেয়ার সাথে কথা বললাম না বলিনি। আমি বলেছি, এখন পর্যন্ত কোন কথা হয়নি। এই সব আর কি। তোমার কি খবর? পায়েল ঘুমিয়ে পড়েছে?”
অনুপমা, “হ্যাঁ, পায়েল অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। আজকে ভাইয়ের সাথে একটু সামনের পার্কে বেড়াতে গেছিল, তাই মনটা অনেকদিন পরে বেশ ভালো আছে। আচ্ছা একটা কথা বল, বাবা বলল কালকে তোমাকে নিয়ে রেমন্ড শপে না হয় রেইড এন্ড টেলর যেতে। কি ব্যাপার হটাত সুটের কি প্রয়োজন পড়ল যে বাবা নিজে থেকে বলল?”
দেবায়ন, “পরের বৃহস্পতিবার একটা বিজনেস মিটিং আছে সেখানে যেতে হবে কাকুর সাথে তাই সুটের দরকার।”
অনুপমা, “তোমার সাথে কাল বিস্তারিত ভাবে কথা বলব। কিছু লুকাবে না, তাহলে মাথা ফাটিয়ে দেব একদম।”
দেবায়ন হেসে বলে, “না মা লক্ষ্মী তোমার কাছে কিছুই লুকাব না। কালকে ক্লাসের আগে সব বলব।”
পরের দিন কম্পিউটার ক্লাসে আসার পরেই অনুপমা দেবায়নকে গত রাতের আলচনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। দেবায়ন ক্লাসের পরে অনুপমাকে সব কথা খুলে বলে। অনুপমা বেশ চিন্তিত হয়ে পরে ওর বাবার কথা শুনে। সব বলার পরে দেবায়ন অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে ওদের করনীয় কি।
অনুপমা বলে, “বাবা ঠিক যে রকম বলছে, ঠিক সেই রকম করে যাও। দেখা যাক বাবা কি করতে চান। আমাকে কিছুই জানাওনি তুমি। আমি আর এই ব্যাপারে বাবার সাথে কথা বলব না। ঠিক সময়ে ব্রেক লাগিয়ে বেড়িয়ে আসাটা জরুরি। এই সময়ে বাবার কথা না মানলে, মামনিকে বলে দেবে বাবা আর মামনি খুব আহত হয়ে পরবে, খুব ভেঙ্গে পরবে। আমার মনে হয়, মা এই সব জানে তাই বাবা বলেছে যে মাকে ঠিক করে বুঝিয়ে নেবে। জানো, সত্যি বলছি বড় কষ্ট পেলাম। এখন মনে হচ্ছে তাড়াতাড়ি মামনির কাছে যেতে পারলে বেঁচে যাই।”
দেবায়ন অনুপমার কাঁধে হাত দিয়ে সান্ত্বনা দেয়, “এই কয়দিনে ঠিক যেমন চলেছে ঠিক তেমনি তুমি ব্যাবহার করবে।”
অনুপমা একটা বুদ্ধি দেয় দেবায়নকে, “বাবার সাথে গাড়িতে যাবে, সব কথাবার্তা আর ওখানে যা হবে তার কিছু কিছু ছবি অথবা ভি.ডি.ও করে রাখবে। আমি একবার দেখতে চাই। শেষ পর্যন্ত পুরাতন পন্থিতে চলতে হবে, দল ভেঙ্গে রাজত্ব করা।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “মানে?”
অনুপমা হেসে বলে, “কোথাও একটা ভাঙ্গন ধরিয়ে এদের আসল অভিসন্ধি জানতে হবে। এখন শুধু অপেক্ষা করা আর চোখ কান খোলা রাখা ছাড়া উপায় নেই। কলেজ শেষ হোক, আমাদের সফটওয়্যার কোম্পানির কি করছে সেটা দেখা যাক। তারপরে সবার আচার ব্যাবহার দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবার কথা ভাবা যাবে।”
দেবায়ন মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে অনুপমার কথা মেনে চলবে। রেইড এন্ড টেলরের দোকানে ঢুকে দুটো দামী সুট কেনা হল দেবায়নের জন্য, একটা ছাই রঙের অন্যটা ঘিয়ে রঙের। রঙ দুটো অনুপমার পছন্দ মতন কেনা হল, সেই সাথে দুটো শার্ট আর দুটো টাই। অনুপমা বলল যে এই সব যদি বাড়িতে নিয়ে যায় তাহলে ওর মামনি দেবায়নের ওপরে সন্দেহ করবে এবং বকাবকি শুরু করে দেবে। তাই অনুপমা বলল আগামী বৃহস্পতিবারে সোজা বাড়িতে চলে আসতে। সেখানে ড্রেস করে বাবার সাথে বেড়িয়ে যেতে। ও বাবাকে বলে রাখবে যে দেবায়ন বাড়িতেই আসবে। দেবায়ন অনুপমাকে নিবেদিতার কথা জিজ্ঞেস করে। অনুপমা জানায় যে নিবেদিতাকে ভালো চেনে না। কয়েক বার বাবার পার্টিতে এসেছে কিন্তু কোনদিন বাড়িতে আসেনি নিবেদিতা চৌধুরী।
মিস্টার সেন দেবশ্রীকে ফোনে বলেন যে দেবায়নের সাথে বিশেষ কিছু কাজের জন্য একটা রাতের জন্য চাই। দেবশ্রী সেদিন রাতে দেবায়নকে প্রশ্ন করে এই কাজের ব্যাপারে। দেবায়ন মাকে বলে ওদের সফটঅয়ার কোম্পানির ব্যাপারে একটা বিজনেস মিটিং রাখতে চান মিস্টার সেন তাই তাদের সাথে দেখা করার জন্য র*্যাডিসন ফোরট হোটেলে যাওয়া। দেবশ্রী বিশেষ ঘাঁটায় না ছেলেকে, শুধু একবার বলে যে পড়াশুনা মাথায় রেখে তবে যেন বাকি কাজ করে।
বৃহস্পতিবারে দুপুরের একটু আগেই দেবায়ন, অনুপমার বাড়িতে পৌঁছে যায়। অনুপমা সেদিন আর কলেজে যায় নি। দেবায়ন উপরে অনুপমার রুমে ঢুকে দেখে পায়েল বিছানায় লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে। কিছুক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে শুকনো পায়েলকে দেখে। ওকে দেখে বড় কষ্ট হয় দেবায়নের। অনুপমা ওকে ডেকে নিচে নিয়ে যায়।
পারমিতা দেবায়নকে দেখে বলে, “তুমি বেশ বড় হয়ে গেছ এই কয়দিনে। ব্যাবসা সামলাতে শিখে গেছ। অনুর পছন্দ করা সুট গুলো দেখলাম। বেশ দারুন মানাবে তোমাকে।”
একসময়ে একটু একান্ত পেয়ে কাছে এসে বলে, “আমাকে কি সত্যি ভুলে গেলে? এই কয় মাসে একবারের জন্য আমাকে মনে পড়েনি?”
দেবায়ন মৃদু হেসে বলে, “মিমি, তোমাকে ভুলি কি করে। তুমি কি ভোলার? সময় হাতে বড় কম, মিমি তাই কারুর দিকে ঠিক নজর দিতে পারছি না। সত্যি বলছি, সময় পেলেই তোমার কাছে আসব।”
পারমিতা, দেবায়নের গা ঘেঁষে চোখে দুষ্টুমি ভরা হাসি মাখিয়ে বলে, “আমি ঠিক সময় চুরি করে নেব তোমার জন্য। অনেকদিন তোমাকে পাইনি। মিষ্টি মিমি কিন্তু এখন শুধু তোমার কাছেই মিমি আছে।”
দেবায়ন পারমিতার চোখের দিকে তাকায়। পারমিতা নিচের ঠোঁট কামড়ে এক আবেদন মাখা হাসি দিয়ে বলে, “আজকে যেখানে যাচ্ছও সেখানে বেশ মজা করতে পারবে। দেখো বাবা, সেখানে এক সুন্দরী আসবে মন ভুলাতে।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “কার কথা বলছ, অনন্যা?”
পারমিতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমার সাথে অনন্যার কবে দেখা হল?”
দেবায়ন, “গত শনিবার, হোটেল * স্তানে।”
পারমিতা, “না না অনন্যা নয়। গেলেই জানতে পারবে কে সেই চোর। একটু সাবধানে থেকো।”
অনুপমার ইচ্ছেতে দেবায়ন ছাই রঙের দামী সুট খানা পরে। কোনদিন টাই বাঁধেনি তাই অনুপমা ওর টাই বাঁধতে সাহায্য করে দেয়। মিস্টার সেন তৈরি, অনুপমা তখন দেবায়নকে সাজিয়ে যাচ্ছে। সামনের দিকে চুলের একটা গোছা কপালে একটু নামিয়ে দেয় কোনসময়ে তারপরে হেসে ফেলে আবার সেটা ঠিক করে দেয়। দেবায়ন বিরক্ত হয়ে বলে তাড়াতাড়ি করতে। অনুপমা দেবায়নের গালে চুমু খেয়ে একটা পেন জামার পকেটে গুঁজে দেয়। দেবায়ন জিজ্ঞেস করে এই পেন আবার কোন কাজে লাগবে। অনুপমা বলে এই পেনটা, ক্যামেরা ওয়ালা পেন, সাথে থাকলে দরকার পরবে। দুপুরের কিছু পরেই গাড়িতে করে মিস্টার সেন আর দেবায়ন রায়চকের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
দেবায়ন হেসে ফেলে, “আরো কিছু আছে নাকি কাকু? বলেই ফেলুন আজকে।”
মিস্টার সেন, “না না, আর নেই। এবারে আসল কথায় আসি। আমি চাই পরমিতকে কোম্পানি থেকে সরিয়ে দিতে। আর সেই শেয়ার নিবেদিতাকে দিতে। নিবেদিতা কিছু ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট যোগাড় করেছিল, তবে কেউ পঁচাত্তর শতাংশের জন্য রাজি হয়নি। আসলে আমি চাইনি তখন। পরমিতের শেয়ার নিবেদিতাকে দিয়ে দিলে আশা করি শান্ত হয়ে যাবে। এমনিতে নিবেদিতার আর পারমিতার একদম বনে না। কিন্তু তোমার কাকিমা অনেক করেছে, আর নয়। এবারে ওকে কন্সট্রাক্সান থেকে সরিয়ে নিয়ে পরিষ্কার কাজে লাগিয়ে দেব, হোটেলে। আর নিবেদিতা আমাদের এই কন্সট্রাক্সান দেখবে। তবে ওর কাছে থাকবে পঁয়তাল্লিশ শতাংশ, বাকিটা তোমার কাকিমার নামেই থাকবে। তবে তোমার কাকিমা আর কাজ করবে না। এবারে আসি হোটেলের কথায়। এই যে নতুন প্লান করেছি, সেই খানে অনেক টাকার দরকার। কিছু হোটেল বেশ ভালো চলে, কিছু হোটেল ঠিক চলে না। সব হোটেল গুলো আমি মালিকানা মানে একান্ন শতাংশ কিনতে চাই। কিন্তু এই মালিকানা সত্তা কিনতে গেলে টাকার দরকার পড়বে। আমি কন্সট্রাসানের জন্য ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট যোগাড় করেছি। সেই টাকা আমি সাইফন করব এই হোটেল গুলোর শেয়ার কেনার জন্য। তোমার সফটঅয়ারের টাকা বাজারে পরে আছে, যে কোন সময়ে তোলা যাবে।”
দেবায়ন মন দিয়ে সব কথা শুনে বলে, “আমি এখানে কোথায়?”
মিস্টার সেন হেলে বলেন, “তুমি আমার পাশে থাকবে, আবার কোথায়? অঙ্কনের এই কাজে মন লাগবে কি না সন্দেহ আর অঙ্কন এখন অনেক ছোটো। অনুপমা সফটওয়্যার দেখবে, শ্রেয়া আর রূপকের সাথে। পারমিতা, হোটেলে ইন্ডাস্ট্রি সামলাবে, নিবেদিতা কন্সট্রাক্সান সামলাবে। আমি আর তুমি, এই গ্রুপের মাথায় থাকব, তুমি এই গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তাই একবার বলছিলাম যে গ্রাজুয়েশানের পরে এম.বি.এ করে নাও। অবশ্য আজকাল ডিস্টান্সে এম.বি.এ করা যায়। পরের বৃহস্পতিবার, রায়চকের র্যাডিসন ফোর্টে একটা বিজনেস পার্টি আছে। সেখানে একজন ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট আসবে, জার্মান ভদ্রলোক। তিনশ কোটি টাকার ইনভেস্টমেন্ট। নিবেদিতা ওইখানে থাকবে, তখন পরিচয় করিয়ে দেব নিবেদিতার সাথে। আর বাকি কথা তোমাকে পরে বলব।”
দেবায়ন মাথা নাড়ায়, “সব ঠিক আছে কাকু। কিন্তু আমার একটা কিন্তু আছে। এতো কিছু বলছেন, আমি পারব তো?”
মিস্টার সেন বলেন, “আজকে তুমি লবস্টার আর ওয়াইনের স্বাদ নাও। পরের বৃহস্পতিবার গাড়িতে যেতে যেতে বাকি কথা বলব। আর হ্যাঁ, অনুপমাকে এত কিছু আবার বলতে যেও না। একটু মাথা খাটাও, তুমি সব কিছুতে বড্ড হৃদয় লাগিয়ে ফেল। সেটা করলে কি আর বিজনেস করা যায়, মিস্টার বসাক?”
দেবায়ন লাজুক হাসে, “আপনি যা বলবেন করতে রাজি আছি।”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “তুমি আমার উত্তরাধিকারী। আমার একমাত্র জামাই যার ওপরে চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়।”
মিস্টার সেন আর দেবায়ন, ডিনার শেষ করে। বাকি কথা, ওর পড়াশুনা আর কম্পিউটার শিক্ষা দিক্ষা নিয়ে হয়। ওরা টেবিল ছেড়ে উঠতে যাবে এমন সময়ে একটি সুন্দরী মেয়ের সাথে দেখা হয়। দেবায়ন বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে মেয়েটার দিকে, কোথায় যেন দেখেছে মেয়েটাকে। মেয়েটা বেশ সুন্দরী, চোখ দুটি বড় বড়, ভুরু জোড়া ধনুকের মতন বাঁকা, নাক টিকালো, মুখবয়াব অতি মধুর আকর্ষণীয়। মাথার চুল একপাশে ছাড়া বাম ঘাড়ের উপর দিয়ে সামনে এলিয়ে এসেছে। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণা, ঠোঁট দুটো গাড় বাদামি লিপ্সটিকে মাখা। বাম কব্জিতে একটা সোনার ব্রেসলেট। পরনে হাত কাটা, হাঁটু পর্যন্ত কালো রঙের চাপা পোশাক। শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সাথে লেপটে। বুকের দিকে তাকাতেই দেবায়নের বুক ছ্যাঁক করে ওঠে, চাপা পোশাকের ভেতরে সুউন্নত দুই স্তন জোড়া মুক্তি পাবার জন্য যেন ছটফট করছে। বুকের দিকে গভীর খাঁজ, স্তনের ভেতরের নরম ফর্সা ত্বকের উপরে রেস্টুরেন্টের হলদে আলো পিছল খেয়ে যায়। শরীরের ঘঠন অতি লোভনীয়। নরম তুলতুলে পাছা জোড়া দেখে দেবায়নের শরীরের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে। দেবায়ন আড় চোখে মেয়েটার দিকে বারেবারে তাকায়। বয়সে ওর থেকে বছর তিন চার বড়ই হবে। কিন্তু কোথায় যেন দেখেছে মেয়েটাকে।
মেয়েটা মিস্টার সেনের দিকে এগিয়ে হেসে বলে, “কি ব্যাপার সেন স্যার আজকে ম্যামকে ছাড়াই ডিনার করছেন?”
মিস্টার সেন মেয়েটার দিকে হাত বাড়িয়ে অভিবাদন করে বলে, “তুমি এখানে, কি ব্যাপার। কারুর সাথে ডিনারের নিমন্ত্রন নাকি?”
মেয়েটা হেসে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে মিস্টার সেনকে নিচু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “আজকে হটাত আপনার নেচার বদলে গেল বলে মনে হচ্ছে? কি ব্যাপার। পারমিতা ম্যাম জানে তো?”
মিস্টার সেন হেসে ফেলেন, “আরে না না। তোমাদের পরিচয় করিয়ে দেই, আমার বিজনেস পার্টনার, মিস্টার দেবায়ন বসাক।” আর মেয়েটাকে দেখিয়ে দেবায়নকে বলে, “একে চিনতে পারছ না? টি.ভি সিরিয়াল করে, অনন্যা বাসু।”
দেবায়ন এবারে চিনতে পারে মেয়েটাকে। অনন্যা বাসু, বাংলা টি.ভিতে বেশ কয়েকটা সিরিয়াল করেছে, সেই সাথে গোটা দুই সিনেমাতেও নায়িকার বোন, বান্ধবীর পার্ট করেছে। হাত বাড়িয়ে হাত মেলায় অনন্যার সাথে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, তাই আপনাকে দেখে তখন থেকে মনে হচ্ছে কোথায় যেন দেখেছি।”
অনন্যা, দেবায়নের হাতে হাত মিলিয়ে বলে, “আপনার সাথে দেখা হয়ে বড় ভালো লাগলো। গ্ল্যাড টু মিট সাচ অ্যা হ্যান্ডসাম এন্ড ড্যাসিং ইয়াং ম্যান। কিসের বিজনেস আপনার?”
দেবায়ন হেসে বলে, “আমাকে কেন আর আপনি বলে ডেকে কষ্ট দিচ্ছেন…”
মিস্টার সেন সঙ্গে সঙ্গে দেবায়নের মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলে, “আমার সাথে বিজনেসে আছে, মিস্টার বসাক। আচ্ছা, তুমি তাহলে বৃহস্পতিবারে ঠিক সময়ে পৌঁছে যেও র্যাডিসন ফোরটে। তনুজার কি খবর? কালকে তনুজা কেও নিয়ে এসো।”
দুষ্টুমি ভরা ভুরু নাচিয়ে অনন্যা, মিস্টার সেনকে বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ আমারও তাই মনে হচ্ছে। আমি রাত নটার মধ্যে পৌঁছে যাবো। বাকি দুইজনকে বলা আছে ওরা আমার আগেই পৌঁছে যাবে। তনুজার সাথে না হয় আমি কথা বলে নেব, আপনি চিন্তা করবেন না। ওকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আমার।”
দেবায়নের দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আপনি আসছেন কি র্যাডিসন ফোরটে?”
মিস্টার সেন, দেবায়নের হয়ে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ ও আসবে। যাই হোক ওই কথা রইল, বাকি কথা ফোনে বলে নেব।”
হোটেল * স্তান ইন্টারনেশানাল থেকে বেড়িয়ে মিস্টার সেন দেবায়নকে বলে, “এবারে রাতে ভালো করে ঘুমাবে, বুঝেছ? রাত পোহালে বুদ্ধি বাড়ে। আর এখুনি সব কথা সবাইকে জানাতে হবে না। আগে এক এক করে পদক্ষেপ নেই আমরা। ধিরে ধিরে সিঁড়িতে চড়ি। সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক হয়ে গেলে সবাইকে জানাব। দেবশ্রীদি কে সময় হলে আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেব। ভালো কথা, তোমার সুট আছে?”
দেবায়নের কোনদিন সুটের দরকার পড়েনি, তাই মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে সুট নেই। মিস্টার সেন বলেন, “আমি অনুকে বলে দেব। আগামী কাল ক্লাসের পরে তোমাকে নিয়ে পার্ক স্ট্রিটের রেমন্ড শপে কিম্বা রেইড এন্ড টেলরে নিয়ে যাবে। বেশ পছন্দ মতন দুটি ভালো সুট কিনে নিও। আবার এটা ভেবে বস না যে শশুর দিচ্ছে বলে নেবে না।”
হেসে ফেলে দেবায়ন, “না না। সেই রকম কিছু নয়। ওকে তাহলে গুড নাইট।”
মিস্টার সেন চলে যাবার পরে দেবায়ন বাইকে চেপে ফিরে আসে বাড়িতে। বাড়িতে ঢোকা মাত্রই ওর মা জিজ্ঞেস করে, হ্যাঁরে এতক্ষণ মিস্টার সেনের সাথে কি কথা বলছিল? মায়ের প্রশ্ন যথাসম্ভব এড়িয়ে উত্তর দেয় যে, ওদের সফটওয়্যার কোম্পানির ব্যাপারে কথা বলার জন্য ডেকেছিলেন মিস্টার সেন। দেবশ্রী দেবায়নের কথা শুনে আহত হয়ে বলেন যে আগে পড়াশুনা তারপরে বাকি সব। তিনি মিস্টার সেনের সাথে কথা বলার অভিপ্রায় ব্যাক্ত করেন। মাকে বুঝিয়ে বলে দেবায়ন যে এখুনি কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছায় নি, তবে আগামী বৃহস্পতিবার মিস্টার সেনের সাথে এক জায়গায় যেতে হবে কিছু কাজের জন্য। রাতে বাড়ি ফিরবে না। দেবশ্রীর সন্দেহ হয়, বলে যে অনুপমার সাথে কথা বলবে, সত্যি কি মিস্টার সেনের সাথে যাবে না অন্য কারুর সাথে। দেবায়ন হেসে বলে, সোজা মিস্টার সেনকে ফোনে জিজ্ঞেস করতে পারে।
দেবশ্রী ছেলের গালে আদর করে হাত বুলিয়ে বলে, “বাবা, যাই করিস। নিজের মান সন্মান বজায় রেখে করিস। তোকে এইখানে নিয়ে আসতে আমার বুকের রক্ত জল হয়ে গেছে।”
দেবায়ন মাকে জড়িয়ে ধরে বলে, “এত ভেব না মা। একবার আমার সফটওয়্যার কোম্পানি দাঁড়িয়ে যাক, তোমাকে মাথায় করে রাখব আমি আর অনু।”
দেবশ্রী, “দেখিস বাবা। যা শুতে যা। কাল আবার কম্পিউটার ক্লাস আছে তোদের।”
রাতের বেলা বিছানায় পরতেই, চোখের সামনে ভেসে ওঠে কালো চাপা পোশাকে পরিহিত অনন্যার দুষ্টু মিষ্টি মুখ। নধর গোলগাল বাঙালি ছাপে ভরা সুন্দরী। স্তন জোড়া বেশ বড় বড়, হাঁটা চলায় এক মত্ততার ছন্দ। মাথায় প্রশ্ন ঢোকে দেবায়নের, একটা বিজনেস মিটিঙয়ে এক জন অভিনেত্রীর কি দরকার? আর যে তনুজার কথা বলছিল অনন্যা সে কি নামকরা বাঙালি মডেল, তনুজা রায়? চোখ বুজে তনুজার নধর দেহপল্লবের স্বপ্ন দেখে দেবায়ন। একটা সাবানের বিজ্ঞাপন করেছে, মসৃণ খোলা পিঠের উপর দিয়ে জলের ফোঁটা গড়িয়ে পরে কোমর পর্যন্ত, কোমরের নিচে ফোলা নিতম্ব তোয়ালেতে ঢাকা। ভেজা চুল এলোমেলো হয়ে ডিম্বাকৃতি মুখবয়াবের কিছু অংশে দোল খায়। ফ্যাকাসে গোলাপি ঠোঁট জোড়া ঈষৎ খোলা, এক তীব্র যৌন আবেদন মাখা হাসি নিয়ে টি.ভি স্ক্রিনের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় শেষে। মনে পরে যেতেই প্যান্টের ভেতরে শিথিল লিঙ্গ শক্ত হয়ে ওঠে। আপনা হতেই প্যান্টের ভেতরে হাত চলে যায়, লিঙ্গ মুঠি করে ধরে নাড়াতে শুরু করে।
বাধ সাধে অনুপমার ফোন, “কি গো তুমি। বাড়ি ফিরে একটা ফোন পর্যন্ত করতে ভুলে গেলে? কি ব্যাপার তোমার? বাবার সাথে এত কি কথা হল?”
ধরমর করে বিছানায় উঠে বসে দেবায়ন, “না মানে, আমি তোমার বাবার কথা গুলো ভাবছিলাম।”
অনুপমা, “কি কথা হল তোমাদের?”
দেবায়ন, “কিছু না এমনি ওই সফটওয়্যার কোম্পানি নিয়েই কথা হল। কাকু জিজ্ঞেস করছিলেন যে এখন পর্যন্ত আমরা রূপক শ্রেয়ার সাথে কথা বললাম না বলিনি। আমি বলেছি, এখন পর্যন্ত কোন কথা হয়নি। এই সব আর কি। তোমার কি খবর? পায়েল ঘুমিয়ে পড়েছে?”
অনুপমা, “হ্যাঁ, পায়েল অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। আজকে ভাইয়ের সাথে একটু সামনের পার্কে বেড়াতে গেছিল, তাই মনটা অনেকদিন পরে বেশ ভালো আছে। আচ্ছা একটা কথা বল, বাবা বলল কালকে তোমাকে নিয়ে রেমন্ড শপে না হয় রেইড এন্ড টেলর যেতে। কি ব্যাপার হটাত সুটের কি প্রয়োজন পড়ল যে বাবা নিজে থেকে বলল?”
দেবায়ন, “পরের বৃহস্পতিবার একটা বিজনেস মিটিং আছে সেখানে যেতে হবে কাকুর সাথে তাই সুটের দরকার।”
অনুপমা, “তোমার সাথে কাল বিস্তারিত ভাবে কথা বলব। কিছু লুকাবে না, তাহলে মাথা ফাটিয়ে দেব একদম।”
দেবায়ন হেসে বলে, “না মা লক্ষ্মী তোমার কাছে কিছুই লুকাব না। কালকে ক্লাসের আগে সব বলব।”
পরের দিন কম্পিউটার ক্লাসে আসার পরেই অনুপমা দেবায়নকে গত রাতের আলচনার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। দেবায়ন ক্লাসের পরে অনুপমাকে সব কথা খুলে বলে। অনুপমা বেশ চিন্তিত হয়ে পরে ওর বাবার কথা শুনে। সব বলার পরে দেবায়ন অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে ওদের করনীয় কি।
অনুপমা বলে, “বাবা ঠিক যে রকম বলছে, ঠিক সেই রকম করে যাও। দেখা যাক বাবা কি করতে চান। আমাকে কিছুই জানাওনি তুমি। আমি আর এই ব্যাপারে বাবার সাথে কথা বলব না। ঠিক সময়ে ব্রেক লাগিয়ে বেড়িয়ে আসাটা জরুরি। এই সময়ে বাবার কথা না মানলে, মামনিকে বলে দেবে বাবা আর মামনি খুব আহত হয়ে পরবে, খুব ভেঙ্গে পরবে। আমার মনে হয়, মা এই সব জানে তাই বাবা বলেছে যে মাকে ঠিক করে বুঝিয়ে নেবে। জানো, সত্যি বলছি বড় কষ্ট পেলাম। এখন মনে হচ্ছে তাড়াতাড়ি মামনির কাছে যেতে পারলে বেঁচে যাই।”
দেবায়ন অনুপমার কাঁধে হাত দিয়ে সান্ত্বনা দেয়, “এই কয়দিনে ঠিক যেমন চলেছে ঠিক তেমনি তুমি ব্যাবহার করবে।”
অনুপমা একটা বুদ্ধি দেয় দেবায়নকে, “বাবার সাথে গাড়িতে যাবে, সব কথাবার্তা আর ওখানে যা হবে তার কিছু কিছু ছবি অথবা ভি.ডি.ও করে রাখবে। আমি একবার দেখতে চাই। শেষ পর্যন্ত পুরাতন পন্থিতে চলতে হবে, দল ভেঙ্গে রাজত্ব করা।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “মানে?”
অনুপমা হেসে বলে, “কোথাও একটা ভাঙ্গন ধরিয়ে এদের আসল অভিসন্ধি জানতে হবে। এখন শুধু অপেক্ষা করা আর চোখ কান খোলা রাখা ছাড়া উপায় নেই। কলেজ শেষ হোক, আমাদের সফটওয়্যার কোম্পানির কি করছে সেটা দেখা যাক। তারপরে সবার আচার ব্যাবহার দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবার কথা ভাবা যাবে।”
দেবায়ন মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে অনুপমার কথা মেনে চলবে। রেইড এন্ড টেলরের দোকানে ঢুকে দুটো দামী সুট কেনা হল দেবায়নের জন্য, একটা ছাই রঙের অন্যটা ঘিয়ে রঙের। রঙ দুটো অনুপমার পছন্দ মতন কেনা হল, সেই সাথে দুটো শার্ট আর দুটো টাই। অনুপমা বলল যে এই সব যদি বাড়িতে নিয়ে যায় তাহলে ওর মামনি দেবায়নের ওপরে সন্দেহ করবে এবং বকাবকি শুরু করে দেবে। তাই অনুপমা বলল আগামী বৃহস্পতিবারে সোজা বাড়িতে চলে আসতে। সেখানে ড্রেস করে বাবার সাথে বেড়িয়ে যেতে। ও বাবাকে বলে রাখবে যে দেবায়ন বাড়িতেই আসবে। দেবায়ন অনুপমাকে নিবেদিতার কথা জিজ্ঞেস করে। অনুপমা জানায় যে নিবেদিতাকে ভালো চেনে না। কয়েক বার বাবার পার্টিতে এসেছে কিন্তু কোনদিন বাড়িতে আসেনি নিবেদিতা চৌধুরী।
মিস্টার সেন দেবশ্রীকে ফোনে বলেন যে দেবায়নের সাথে বিশেষ কিছু কাজের জন্য একটা রাতের জন্য চাই। দেবশ্রী সেদিন রাতে দেবায়নকে প্রশ্ন করে এই কাজের ব্যাপারে। দেবায়ন মাকে বলে ওদের সফটঅয়ার কোম্পানির ব্যাপারে একটা বিজনেস মিটিং রাখতে চান মিস্টার সেন তাই তাদের সাথে দেখা করার জন্য র*্যাডিসন ফোরট হোটেলে যাওয়া। দেবশ্রী বিশেষ ঘাঁটায় না ছেলেকে, শুধু একবার বলে যে পড়াশুনা মাথায় রেখে তবে যেন বাকি কাজ করে।
বৃহস্পতিবারে দুপুরের একটু আগেই দেবায়ন, অনুপমার বাড়িতে পৌঁছে যায়। অনুপমা সেদিন আর কলেজে যায় নি। দেবায়ন উপরে অনুপমার রুমে ঢুকে দেখে পায়েল বিছানায় লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে। কিছুক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে শুকনো পায়েলকে দেখে। ওকে দেখে বড় কষ্ট হয় দেবায়নের। অনুপমা ওকে ডেকে নিচে নিয়ে যায়।
পারমিতা দেবায়নকে দেখে বলে, “তুমি বেশ বড় হয়ে গেছ এই কয়দিনে। ব্যাবসা সামলাতে শিখে গেছ। অনুর পছন্দ করা সুট গুলো দেখলাম। বেশ দারুন মানাবে তোমাকে।”
একসময়ে একটু একান্ত পেয়ে কাছে এসে বলে, “আমাকে কি সত্যি ভুলে গেলে? এই কয় মাসে একবারের জন্য আমাকে মনে পড়েনি?”
দেবায়ন মৃদু হেসে বলে, “মিমি, তোমাকে ভুলি কি করে। তুমি কি ভোলার? সময় হাতে বড় কম, মিমি তাই কারুর দিকে ঠিক নজর দিতে পারছি না। সত্যি বলছি, সময় পেলেই তোমার কাছে আসব।”
পারমিতা, দেবায়নের গা ঘেঁষে চোখে দুষ্টুমি ভরা হাসি মাখিয়ে বলে, “আমি ঠিক সময় চুরি করে নেব তোমার জন্য। অনেকদিন তোমাকে পাইনি। মিষ্টি মিমি কিন্তু এখন শুধু তোমার কাছেই মিমি আছে।”
দেবায়ন পারমিতার চোখের দিকে তাকায়। পারমিতা নিচের ঠোঁট কামড়ে এক আবেদন মাখা হাসি দিয়ে বলে, “আজকে যেখানে যাচ্ছও সেখানে বেশ মজা করতে পারবে। দেখো বাবা, সেখানে এক সুন্দরী আসবে মন ভুলাতে।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “কার কথা বলছ, অনন্যা?”
পারমিতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমার সাথে অনন্যার কবে দেখা হল?”
দেবায়ন, “গত শনিবার, হোটেল * স্তানে।”
পারমিতা, “না না অনন্যা নয়। গেলেই জানতে পারবে কে সেই চোর। একটু সাবধানে থেকো।”
অনুপমার ইচ্ছেতে দেবায়ন ছাই রঙের দামী সুট খানা পরে। কোনদিন টাই বাঁধেনি তাই অনুপমা ওর টাই বাঁধতে সাহায্য করে দেয়। মিস্টার সেন তৈরি, অনুপমা তখন দেবায়নকে সাজিয়ে যাচ্ছে। সামনের দিকে চুলের একটা গোছা কপালে একটু নামিয়ে দেয় কোনসময়ে তারপরে হেসে ফেলে আবার সেটা ঠিক করে দেয়। দেবায়ন বিরক্ত হয়ে বলে তাড়াতাড়ি করতে। অনুপমা দেবায়নের গালে চুমু খেয়ে একটা পেন জামার পকেটে গুঁজে দেয়। দেবায়ন জিজ্ঞেস করে এই পেন আবার কোন কাজে লাগবে। অনুপমা বলে এই পেনটা, ক্যামেরা ওয়ালা পেন, সাথে থাকলে দরকার পরবে। দুপুরের কিছু পরেই গাড়িতে করে মিস্টার সেন আর দেবায়ন রায়চকের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।