Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.18 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
পাপ কাম ভালবাসা
[/size][/color]

 
একুবিংশ পর্ব (#01)
কম্পিউটার ক্লাসের প্রথম সেমেস্টার পার হয়ে যায়। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি, শীতকাল কোলকাতায় বেশ জাঁকিয়ে নেমে আসে। অনুপমাদের কম্পিউটারের প্রথম সেমেস্টার পরীক্ষা শেষ। ভালো অঙ্কে দুই জনে উত্তীর্ণ হয়।
ছেলের কঠিন পরিশ্রমের ফল দেখে দেবশ্রী বেশ খুশি হয়। দেবশ্রী, দিল্লী হেড অফিসে জানিয়ে দেয় যে তিনি দিল্লীতে জয়েন করতে পারবে না। দেবশ্রী বুঝতে পারে যে এই সিদ্ধান্তের জন্য মিস্টার ঠাকুর আর মিস্টার ব্রিজেশ ত্রিপাঠি বেশ আহত হবেন। তাই দেবশ্রী আগে থেকেই নতুন কাজ খুঁজছিল। দেবশ্রী পুরানো চাকরি ছেড়ে এক এয়ারলাইন্স অফিসে ডি.জি.এম এইচ.আর হিসাবে জয়েন করেন। নতুন অফিস, খুব বড় এবং দেশের নামকরা এয়ারলাইন্স কোম্পানি। কাজের ভার অনেক কম, তবে যে কাজ গুলো তাঁর কাছে আসে সেই গুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দেবায়নের ফাইনাল পরীক্ষার আর কয়েক মাস বাকি। তার পড়াশুনা, তার খাওয়া দাওয়া, তার শরীর, সব দিকে দেবশ্রীর কড়া নজর। দেবশ্রী বারেবারে ছেলেকে বলে যে সব কিছু মাথা থেকে বের করে দিয়ে শুধু কলেজের পড়াশুনায় মন দিতে। স্নাতক না হলে, এই বাজারে চাকরি পাওয়া বেশ কঠিন ব্যাপার।
পায়েল আর বাড়ি থেকে বের হয় না। অনুপমার রুমে নিজেকে বন্দি করে রেখে দেয় সারাদিন। কলেজে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। পারমিতার দুশিন্তা দিনে দিনে বেড়ে ওঠে পায়েলের মানসিক অবস্থা দেখে। সাইকিয়েট্রিস্টের ওষুধ আর কাউন্সিলিং নিয়মিত চলে। কিন্তু পায়েলের মানসিক অবস্থার পরিবর্তন খুব ক্ষীণ। অঙ্কন ওকে নিয়ে বাইরে যেতে বললে কিছুতেই বাড়ির বাইরে যেতে চায় না। পারমিতা বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছে পায়েলের জন্য। অনুপমার কলেজ, ক্লাস ইতাদ্যির জন্য শুধু রাত ছাড়া পায়েলের সাথে দেখা হয় না। শুধু মাত্র ওকে আর অঙ্কনকে দেখলেই পায়েল একটু হাসে তাছাড়া আর কারুর সাথে কথা বলে না। প্রায় বন্ধু বান্ধবীরা এসে খবর নেয়, কিন্তু পায়েল পারমিতার আঁচলের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে চুপ করে।
একদিন রাতে খাবার সময়ে, মিস্টার সেন অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে, “তোদের কম্পিউটার ক্লাসের কি খবর?”
এতদিন পরে ওর বাবা ওর পড়াশুনা, ওর কলেজ ইতাদ্যি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে দেখে অনুপমার খুব ভালো লাগে, “প্রথম সেমেস্টার শেষ হয়ে গেছে। ভালো মার্কস পেয়েছি আমরা।”
মিস্টার সেন, “কলেজের ফাইনাল পরীক্ষা কবে?”
অনুপমা, “আগামী বছর, গরমের ছুটির আগেই আশা করি।”
মিস্টার সেন, “পড়াশুনা কেমন চলছে আজকাল?”
অনুপমা হেসে বলে, “তুমি সত্যি জানতে চাও না মজা করছ?”
মিস্টার সেন হেসে ফেলেন মেয়ের কথা শুনে, “না রে মা। আমি সত্যি জিজ্ঞেস করছি। আর হ্যাঁ, একবার দেবায়নের ফোন নাম্বার দিস আমাকে। ওর সাথে কিছু কথা আছে।”
অনুপমা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি এমন কথা যেটা তুমি আমাকে বলতে পারবে না?”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “বাঃ রে, শ্বশুর জামাইয়ে কি নিজেস্ব কিছু কথাবার্তা হতে পারে না।”
অনুপমা হেসে ফেলে বাবার কথা শুনে, “ঠিক আছে কালকে আমি ওকে কলেজে বলে দেব বাড়িতে আসতে।”
মিস্টার সেন বলেন, “না না তুই ওর ফোন নাম্বার আমাকে দে। আমি কথা বলে নেব।”
সবার খাওয়া দাওয়া হয়ে যাবার পরে। বসার ঘরে বসে থাকেন মিস্টার সেন। পায়েলকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে অনুপমা নিচে নেমে আসে। অনুপমা ওর বাবার সামনে একটা সোফায় বসে পরে।
মিস্টার সেন ড্রিঙ্কের গ্লাস টেবিলে রেখে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার তুই ঘুমাতে যাস নি এখন?”
অনুপমা বাবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোমার সাথে আমার কথা আছে।”
মিস্টার সেন, “কি কথা? তুই কি কোম্পানির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে চাস?”
অনুপমা মাথা নাড়িয়ে বলে, “হ্যাঁ। তুমি বলেছিলে, এই বছরে কোম্পানি বিক্রি করে দেবে আর তুমি তোমার চাকরি বদলে অন্য চাকরি নেবে। কিছুই হয়নি, বাবা।”
মিস্টার সেন হুইস্কির গ্লাসে ছোটো চুমুক দিয়ে হেসে বলে, “কোম্পানির একটা গতি করব আমি। সেই সাথে অনেক কিছু ভেবেছি এই কয় মাসে। নতুন বছর, নতুন দিগন্তে পা রাখতে চাই আমি। তুই এত চিন্তা করছিস কেন? তুই কলেজের পড়াশুনা নিয়ে থাক। তুই ভাবছিস তোদের আই.টি কোম্পানির কথা, তাই ত? তার জন্য পয়সা চলে আসবে। আমি একবার দেবায়নের সাথে কথা বলতে চাই। তোর কি আমার অথবা দেবায়নের ওপরে বিশ্বাস নেই?”
কি উত্তর দেবে অনুপমা, ম্লান হেসে বলে, “ঠিক আছে, তুমি আর দেবায়ন যা ভালো বুঝবে তাই করো। এরপরে আমার আর কিছু বলার নেই।”
বিছানায় শুয়ে নিত্যদিনের মতন দেবায়নকে ফোন করে অনুপমা। ফোনে জানায় যে ওর বাবা ওর সাথে দেখা করতে চায়। দেবায়ন একটু চিন্তিত হয়ে যায়, সেই সাথে অনুপমা বলে যে বাবার কথায় সে নিজেও বেশ চিন্তিত। অনুপমা বলে দেয় যে, যাই করুক নিজের বিবেক বুদ্ধিকে সামনে রেখে যেন পা বাড়ায়।
পরের দিন দুপুর বেলা মিস্টার সেন দেবায়ন কে ফোন করে। মিস্টার সেনের ফোন পাবে সেটা দেবায়নের জানা ছিল। আগে থেকে প্রস্তুত ছিল উত্তরের জন্য। দেবায়ন অনুধাবন করেছিল যে ওর সাথে নিশ্চয় ব্যাবসা নিয়েই কথা হবে। মিস্টার সেন বলেন যে আগামী শনিবার, কম্পিউটার ক্লাসের পরে হোটেল * স্তান ইন্টারনেশানালে চলে আসতে। বিকেলে দুইজনে ওইখানে ডিনার করতে চায় সেই সাথে মিস্টার সেন কিছু কথা বলতে চান।
শনিবার কম্পিউটার ক্লাসের পরে বিকেলে হোটেল * স্তান ইন্টারন্যাসানালে চলে যায় দেবায়ন। অনুপমাকে আগে জানিয়ে দিয়েছিল যে ওর বাবা ওর সাথে দেখা করতে চায়। সেই মতন অনুপমা হেসে বলে যে বাবা ওকে বলেছে, আর বাবার কথা একটু বুঝে শুনে যেন পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়। আগে থেকে একটা টেবিল রিসার্ভ করে রেখেছিলেন মিস্টার সেন। দেবায়নের আগেই মিস্টার সেন হোটেলে পৌঁছে ওর জন্য লবিতে অপেক্ষা করে।
মিস্টার সেন, দেবায়নকে দেখে হাত বাড়িয়ে অভিবাদন জানিয়ে বলে, “বেশ ঝড় গেল আমাদের সবার উপর দিয়ে তাই না?”
দেবায়ন হেসে বলে, “তা গেল। কিসের জন্য আমাকে ডাকা?”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “কেন? আমাদের মাঝে কিছু কথা থাকতে পারে না?”
দেবায়ন, “হ্যাঁ নিশ্চয় পারে, তবে বাড়িতে হতে পারত সেই সব কথা।”
মিস্টার সেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ বাড়িতে হতে পারত। এখানের শেফ আমার চেনা জানা। আমি লবস্টার আর সার্ক ফিন সুপের অর্ডার দিয়েছিলাম। পারমিতা আর অনুপমা, সার্ক ফিন সুপ খেতে ভালোবাসে না একদম। আমি ভাবলাম আমি একা কেন টেস্ট করব, তোমাকে ডেকে একবার টেস্ট করাই।”
দেবায়ন, “সার্ক ফিন সুপ! বাপরে যে হাঙ্গর আমাদের খায়, আমরা এখন তাকেই খাবো?”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “জীবন অনেকটা সেই রকম। আজকে যে তোমাকে খেল, সময় পেলে তুমি তাকে খাবে। বসো বসো।”
দেবায়ন চেয়ারে বসে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার বললেন না ত? কি কারনে আমাকে ডাকা হয়েছে?”
মিস্টার সেন, “তুমি কি এখন পর্যন্ত কারুর সাথে তোমার আই টি কোম্পানির ব্যাপারে কথা বলেছ? মানে তুমি এক বার বলছিলে, যে রূপক যাদবপুরে আই.টি তে বি.টেক করছে?”
দেবায়ন, “না, শ্রেয়া আর রূপকের সাথে এখন পর্যন্ত কোন কথা হয়নি। তবে মায়ের সাথে আর অনুপমার সাথে কথা হয়েছে।”
মিস্টার সেন, “এই কয়দিনে রূপককে দেখলাম। বেশ ভালো ছেলে, মনের দিক থেকে বেশ ভালো। বন্ধুবতসল, ওর সাথে কাজ করতে ভালোই লাগবে। শ্রেয়া মেয়েটা বেশ শক্ত, আমার মেয়ের চেয়ে বেশি বুদ্ধি রাখে। অনু হৃদয় থেকে ভাবে আর শ্রেয়া মাথা খাটিয়ে ভাবে। তোমার কি মনে হয়?”
দেবায়ন হেসে ফেলে সেই সাথে মিস্টার সেন হেসে ফেলেন। মিস্টার সেন জিজ্ঞেস করেন, “দেবশ্রীদি কি বলল তোমাকে?”
দেবায়ন, “মা একবার আপনার সাথে কথা বলতে চান এই সফটওয়্যার কোম্পানির বিষয়ে।”
ততক্ষণে অয়েটার সার্ক ফিন সুপ দিয়ে যায়। মিস্টার সেন, দেবায়নকে সার্ক ফিন সুপ চেখে দেখতে বলে, বলে, “হ্যাঁ হ্যাঁ, সময় হলে কথা বলে নেব দেবশ্রীদি’র সাথে। এখন সব বাড়ির ব্যাপার স্যাপার, দেবশ্রীদি’কে না জানিয়ে ত কিছু করা যাবে না। হয়ত ভবিষ্যতে দেবশ্রীদির সাহায্য লাগতে পারে।”
দেবায়ন, “হ্যাঁ, মায়ের সাহায্য লাগবে। একা আমি সফটওয়্যার কোম্পানি তৈরি করতে পারবো না। আমি শুধু মাত্র টেকনিকাল দিক হয়ত দেখতে পারব বাকি দিক দেখার আছে।”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “আমাকেই ভুলে গেলে নাকি?”
দেবায়ন লজ্জায় পরে যায়, যে টাকা দিচ্ছেন তার কথা প্রথমে মাথায় আসেনি। দেবায়ন লজ্জিত মুখে বলে, “না না, মানে আপনি বলছিলেন যে এই সব ছেড়ে দেবেন তাই মানে।”
মিস্টার সেন বলেন, “দেখো, তোমাকে একটা কথা আজকে জানাতে চাই। আমি ভাবছি, আমার এই বিজনেসের গন্ডী একটু বড় করতে। ভালো ভাবে শোনো, তারপরে তোমার মতামত জানাবে।”
দেবায়ন সুপ খেতে খেতে মন দিয়ে শোনে মিস্টার সেনের কথা। মিস্টার সেন বলেন, “তোমার আই.টি কোম্পানি তৈরি করতে প্রাথমিক ইনভেস্টমেন্ট কুড়ি কোটি টাকার মতন লাগবে। তারপরে যতদিন না ব্রেক ইভেনে পৌঁছাবে ততদিন, ওই টাকা শুধু খরচার খাতায় যাবে। ব্রেক ইভেনে পৌঁছাতে একটা কম্পানিকে প্রায় পাঁচ সাত বছর লেগে যায়। ততদিনে এই টাকার পাহাড় কমে আসবে, আয় বিশেষ কিছুই হয়তো হবে না। সেই সব কথা কি একবার চিন্তা করেছ?”
দেবায়ন এতসব কথা চিন্তা করার সময় পায়নি। আসলে দেবায়ন এইসব ব্যাপার জানেই না, ওর পরিবারে কেউ কোনদিন ব্যাবসা করেনি অথবা কেউ অত বড়োলোক নয় যার নিজের একটা কোম্পানি থাকবে। দেবায়ন মাথা নাড়িয়ে জানায়, এই সব ব্যাপার কোনদিন চিন্তা করে দেখেনি।
মিস্টার সেন বলেন, “আমাদের কন্সট্রাকশন কোম্পানি অনেক দিনের। আগে বাবার কাছে ছিল, সেইখান থেকে আমার দাদা পায়। তারপরে সেটা আমাদের হাতে এসে পরে। সুতরাং এই কোম্পানি এখন অনেক টাকা লাভ করে। এক একটা প্রোজেক্টে পঞ্চাস থেকে ষাট শতাংশ লাভ হয়। সেই টাকা দিয়ে আরও একটা প্রোজেক্টে বিনিয়োগ করা হয়। এই ভাবে এই লাইনে টাকা ঘোরে। কন্সট্রাকশানে প্রচুর কাঁচা টাকা উড়ে বেড়ায়। কোলকাতার বাইরে অনেক কাজ করেছে আমাদের কোম্পানি। এই কোম্পানি সোনার ডিম দেওয়া হাঁস, এই কোম্পানি বিক্রি করা বোকামোর কাজ।”
দেবায়ন, মিস্টার সেনের কথা শুনে বলে, “কাকু, আপনি কিন্তু কাকিমা আর অনুপমার কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে কোম্পানি বিক্রি করে দেবেন।”
মিস্টার সেন হেসে ফেলেন, “আরে বাবা, সেটা না হয় একটু ঝোঁকের বশে বলে ফেলেছিলাম। কিন্তু একটা সোনার ডিম দেওয়া হাঁসকে মেরে ফেলা সম্পূর্ণ বোকামো। তোমার ব্রেক ইভেনে পৌঁছাতে যদি দেরি হয় আর তার মাঝে তোমার টাকার দরকার পরে তখন তুমি কোথায় যাবে? কন্সট্রাক্সান কোম্পানি পুরদমে লাভে চলছে। তোমার কোম্পানিতে টাকার দরকার পড়লে খুব সহজে এই কোম্পানি থেকে টাকা নিয়ে তোমার কোম্পানিতে লাগানো যাবে।”
দেবায়ন চুপ করে ভাবতে শুরু করে এই ব্যাবসার মারপ্যাঁচ। তারপরে মাথা দুলিয়ে বলে, “হ্যাঁ তা সত্যি, কিন্তু আপনার মেয়ের চোখে আর কাকিমার চোখে আপনি যে অনেক নিচু হয়ে যাবেন। আপনি তাদের কথা দিয়েছিলেন। আর যদি কোম্পানি বিক্রি না করেন তাহলে সফটওয়্যার কোম্পানি যে খুলতে টাকা দেবেন, সেই টাকা কোথা থেকে আসবে?”
মিস্টার সেন দেবায়নের চোখে চোখ রেখে বলে, “দেবায়ন, কাকে কি ভাবে বুঝাতে হয় সেটা ভালো ভাবে জানি। তোমার আর অনুর স্বপ্নের আই.টি কোম্পানির ইনিসিয়াল ইনভেস্টমেন্ট, সেই টাকা আমার কাছে আছে। কুড়ি ত্রিশ কোটি টাকা বাজারে ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন দিকে। আমার কন্সট্রাক্সান কোম্পানি বিক্রি না করলেও চলবে। আমি চাইছি নতুন বছরে নতুন কিছু করার, আমার ব্যাবসার দিগন্ত একটু একটু করে বাড়াতে চাই। একা পেরে ওঠা সম্ভব নয়, বাইরের কাউকে বিশ্বাস করা সম্ভব নয়। অঙ্কন অনেক ছোটো, মিতা আর অনুকে এত বড় পরিকল্পনার ব্যাপারে কিছুই জানাই নি। তুমি আমার এক মাত্র ভরসা।”
দেবায়ন একটু চিন্তায় পরে যায়। মিস্টার সেন হেসে জিজ্ঞেস করেন দেবায়নকে, “তুমি কি ভাবছ দেবায়ন? দেবশ্রীদি কিন্তু আমার কাছে জিজ্ঞেস করবে এই আই.টি কোম্পানির টাকার ব্যাপারে। এতদিনে দেবশ্রীদি কে যতটা বুঝেছি, আমার কাছ থেকে টাকা নেওয়াটা দেবশ্রীদি যে খুব সহজে মেনে নেবেন সেটা মনে হয় না। তাঁকে বোঝানোর দায়িত্ব আমার ওপরে ছেড়ে দাও, কেমন? তুমি আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাও না শুধু নিজের সফটওয়্যার কোম্পানি নিয়ে থাকতে চাও?”
দেবায়ন মহা ফাঁপরে পরে যায়। মা নিশ্চয় মিস্টার সেনের সাথে কথা বলবেন, সেই সময়ে যদি মিস্টার সেন বেঁকে বসেন তাহলে ওর সফটওয়্যার কোম্পানি তৈরি করার স্বপ্ন স্বপ্ন হয়েই থেকে যাবে। অনুপমাকে কি বুঝাবে, অথবা পারমিতা কি মিস্টার সেনের এই ব্যাপারে সম্মতি দেবে সেই নিয়ে প্রবল সংশয়ে ভোগে দেবায়ন। মিস্টার সেন দেবায়নের মুখের অভিব্যাক্তি দেখে অমনের কোথা বুঝে যায়। দেবায়ন চুপ করে সার্ক ফিন সুপ শেষ করে আর ভাবতে থাকে পরবর্তী পদক্ষেপ। না চাইতেই, ধন লক্ষ্মী ওর সামনে হেঁটে এসেছে। অনুপমার সাথে প্রেম করেছিল কারন অনুপমাকে খুব ভালবাসত, তার বাবার সম্পত্তির ওপরে কোনদিন ওর নজর ছিল না। কারন সেই সময়ে অনুপমা নিজেই জানত না যে ওদের একটা কন্সট্রাকশান কোম্পানি আছে। সাত পাঁচ ভেবে অবশেষে দেবায়ন মনস্থির করে যে মিস্টার সেনের সাথে হাত মিলিয়ে নেওয়া শ্রেয়। ওর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
দেবায়ন সার্ক ফিন সুপ শেষ করে মিস্টার সেনকে হেসে বলেন, “আপনি তাহলে নতুন বছরে একটা বিজনেস এম্পায়ার গড়তে চলেছেন? তার মানে শুধু এই কন্সট্রাক্সান আর সফটওয়্যার ছাড়াও অন্য কিছু নিশ্চয় আপনার মনের মধ্যে আছে। আমাকে কি করতে হবে তার জন্য?”
মিস্টার সেন, অয়েটারকে ডেকে বলে লবস্টার আর রেড ওয়াইন নিয়ে আসতে। দেবায়ন হাঁ করে মিস্টার সেনের দিকে তাকিয়ে থাকে। মিস্টার সেন হেসে বলেন, “তুমি ওই রকম ভাবে দেখছ কেন আমার দিকে? আমি জানতাম তুমি আমার কথা মেনে নেবে, তাই আগে থেকেই লবস্টার অর্ডার করেছিলাম আর এবারে রেড ওয়াইনের সাথে লবস্টারের মজা নিতে নিতে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপের আলোচনা করব। কাল রবিবার, বাড়িতে যাবার আশা করি তাড়া নেই আর তোমার বাইক আছে। তুমি ত আর অন্য কারুর সাথে নেই। তুমি আমার সাথে আছো। অত চিন্তা কিসের?”
দেবায়ন, “কিন্তু কাকু, আমি বিজনেসের ব্যাপারে সত্যি কিছু জানি না। সত্যি বলতে, আমি সফটওয়্যার কোম্পানি খুললে শুধু টেকনিকাল দিকটাই হয়ত দেখতাম।”
মিস্টার সেন হেসে বলেন, “না, এই রকম করলে চলবে না। তুমি আমার এম্পায়ারের উত্তরাধিকারী। তুমি একটা আনকোরা হীরে, আমি তোমাকে কাটবো, তোমাকে পলিশ করব। তুমি আমার চেয়ে বেশি চকচক করবে।”
দেবায়ন, “মানে?”
মিস্টার সেন, “আদব কায়দা, ব্যাবসার প্যাঁচ, কোথায় কার সাথে কি ভাবে কথা ববে, এই সব। তাহলে এবারে আমার পরিকল্পনা খুলে তোমাকে বলি।”
লবস্টার আর রাসিয়ান স্যালাডের সাথে, অয়েটার রেড ওয়াইন দিয়ে চলে যায়। মিস্টার সেন বলেন, “পরের বছর একটা নতুন বছর হবে আমাদের জন্য। তোমার হবে সফটওয়্যার কম্পনি, সেই সাথে কন্সট্রাক্সান আছেই। আমি হসপিটালিটি সেক্টর মানে হোটেল বিজনেসে ঢুকতে চাই। কন্সট্রাক্সানের লাভের অনেক টাকা সরিয়ে আমি হোটেল বিজনেসে লাগিয়ে দিয়েছি, কেউ জানে না এই বিষয়ে কারন সব ব্লাক মানি। ছয় খানা খুব ভালো ভালো রিসোর্টে আর হোটেলে আমার শেয়ার আছে তবে কারুর মালিকানা নেই। উত্তরাখন্ডের বিন্সারে একটা, একটা হিমাচলের ডালহৌসিতে, একটা মানালির কাছে সোলাং ভ্যালিতে, একটা ব্যাঙ্গালোরে বেশ বড় থ্রি স্টার হোটেল, একটা উটিতে রিসোর্ট এবং পুনেতে বড় থ্রী স্টার হোটেলে।”
দেবায়ন থ বনে যায় মিস্টার সেনের কথা শুনে। সামনে বসা ভদ্রলোক আর কোথায় কোথায় কি কি লুকিয়ে রেখেছে সেটা ভাবতে চেষ্টা করে। মিস্টার সেন হেসে বলেন, “তুমি অবাক হয়ে গেলে নাকি? এই গুলোতে শুধু আমার বেনামে শেয়ার কেনা ছিল তাই আর পারমিতাকে বলিনি।”
 
Like Reply


Messages In This Thread
RE: পাপ কাম ভালবাসা - by Mr Fantastic - 29-09-2020, 08:49 AM



Users browsing this thread: 11 Guest(s)