Thread Rating:
  • 31 Vote(s) - 3.19 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
পাপ কাম ভালবাসা
বিনয় আর অগ্নিহোত্রী, পাঁচ লাখ টাকার কথা শুনে নিরঞ্জন বাবুর কথা বিশ্বাস করে নেয়। মাঠে নেমে প্রানপন দৌড়াতে শুরু করে দেয়। দৌড়াতে দৌড়াতে মাঠের একপাশে একটা জঙ্গলের দিকে যায় অগ্নিহোত্রী আর বিনয়। রাতের নিস্তব্ধতা খান খান করে দুই খানা রিভলভার গর্জে ওঠে, দুম দুম দুম দুম দুম দুম… পর পর বেশ কয়েকটা গুলি। নিরঞ্জন বাবু আর অন্য ইন্সপেক্টর একসাথে গুলি চালায় অগ্নিহোত্রী আর বিনয়ের দিকে। দেবায়ন আর রূপক পরস্পরের মুখ চাওয়াচায়ি করে। বাকি পুলিসেরা দৌড়ে যায় বিনয় আর অগ্নিহোত্রীর দিকে। অন্ধকারে ঠিক বোঝা যায় না ওরা মরেছে না বেঁচে আছে। আরও দুটো গুলির আওয়াজ শুনতে পায় দেবায়ন। তারপরে নিস্তব্ধতা নেমে আসে হাইওয়েতে। দুরে কয়েকটা লরি দেখা যাচ্ছিল। তারা দুরেই দাঁড়িয়ে পরে পুলিসের লাল বাতি দেখে। নিরঞ্জন বাবু দেবায়নের দিকে তাকিয়ে ম্লান হেসে রেডিওতে খবর দেয় এম্বুলেন্স পাঠাতে। খবরে বলেন দুই কিডন্যাপিং কেসের আসামি পালাতে গিয়ে পুলিসের গুলিতে মারা গেছে তাদের লাশ পরে আছে ব্যারাকপুরের কাছে একটা জঙ্গলে।

ওদের গাড়িতে উঠিয়ে নিরঞ্জন বাবু দেবায়নকে বলে, “আমার মেয়ের সাথে এই রকম হলে আমি কারুর অপেক্ষা করতাম না। নিজে হাতে সব কটাকে গুলি করে মারতাম। সুজাতাদির আত্মার আর পায়েলের মুক কান্নার জন্য করেছি। এরা তোমাদের নার্সিং হোমে পৌঁছে দেবে। দুপুরে আমি আসব, তখন সব বুঝিয়ে বলে দেব।”
বাকি পুলিস দল আসার আগেই অন্য গাড়িতে করে দেবায়ন আর রূপককে কোলকাতায় পাঠিয়ে দেয় নিরঞ্জন বাবু। কোলকাতা পৌঁছাতে ওদের সকাল হয়ে যায়। গাড়ি সোজা ডক্টর মিসবাহুলের নার্সিং হোমের সামনে নামিয়ে দেয় ওদের।
নামিয়ে দেবার আগে একজন ইন্সপেক্টর ওদের বলে, “তোমরা একটা কথা মনে রাখবে। তোমরা কিছু দেখো নি তোমরা কিছু জানো না। তোমরা খবর পেয়ে পায়েল কে বাঁচাতে গেছিলে। পায়েলকে বাঁচিয়ে তোমরা অগ্নিহোত্রী আর বিনয়কে ধরে রেখেছিলে আর পুলিসকে খবর দিয়েছিলে। বিনয়ের কথা মতন, ওর মাকে আর মামাকে গ্রেফতার করে পুলিস। তারপরে তোমাদের নিয়ে আমরা চলে আসি।”
রূপক আর দেবায়ন মাথা নেড়ে জানিয়ে দেয় ওরা সব বুঝে গেছে।
নার্সিং হোমে ঢুকে দেখে সবাই দাঁড়িয়ে। দেবায়নের মা, মিস্টার সেন, অনুপমা, শ্রেয়া, পরাশর, জারিনা আর ধিমান। শ্রেয়া দৌড়ে এসে রূপকের হাত ধরে জিজ্ঞেস করে নৈহাটির ঘটনা। রূপক সংক্ষেপে সবাইকে নৈহাটির কথা জানায়, সেই সাথে জানায় যে পায়েলের বাবা আর পিসিকে পরাশরের কাকু গ্রেফতার করেছে। ওদের বিরুদ্ধে সুজাতা কাকিমাকে খুনের মামলা চলবে। রূপক পায়েলের কথা জিজ্ঞেস করে। ঋতুপর্ণা, আই.সি.ইউ বেড়িয়ে এসে জানায় যে পায়েল এই যাত্রায় বেঁচে যাবে। জ্ঞান ফেরা পর্যন্ত ওর মানসিক অবস্থা বলা কঠিন। দেবায়ন অনুপমাকে অঙ্কনের কথা জিজ্ঞেস করে। অনুপমা জানায় যে ভাই পায়েলের পাশেই বসে, ওকে ওইখান থেকে নড়ানো যাচ্ছে না একদম। সবাই চেষ্টা করে দেখেছে, কিন্তু ভাই বলেছে যে যতক্ষণ না পায়েল চোখ খুলবে ততক্ষণ ও ওর পাশে বসে থাকবে।
বারো ঘণ্টা পরে পায়েল চোখ খোলে। পারমিতা সকালেই নার্সিং হোমে চলে এসেছিল। অঙ্কন সারা সময়ে পায়েলের পাশেই বসে ছিল। সেদিনের রাতে বন্দুকের গুলিতে বিনয় আর অগ্নিহোত্রীর মৃত্যু হয় সেই কথা শুধু মাত্র দেবায়ন আর রূপক জানে। ইন্সপেক্টর নিরঞ্জন, ডক্টর মিসবাহুলের কাছে পায়েলের মানসিক অবস্থার কথা জানতে চায়। ডক্টর মিসবাহুল জানান যে পায়েলের মানসিক অবস্থা খুব সঙ্গিন, স্টেটমেন্ট দেবার মতন অবস্থায় পৌঁছায়নি তখন। নিরঞ্জন বাবু চিন্তায় পরে যান, চার্জশীট ফাইল করতে হলে পায়েলের স্টেট্মেন্টের খুব দরকার।
নিরঞ্জন বাবু, দেবায়ন ধিমান আর রূপককে থানায় ডাকেন। নিরঞ্জন বাবু এবং বাকি পুলিসের সামনে দেবায়ন আর রূপক সব কথা জানায়। মোবাইলের ভিডিও এবং রূপক আর দেবায়নের কথা মতন স্টেটমেন্ট তৈরি করা হয়। পায়েলের বাবা আর পায়েলের পিসি, ক্রাইম ব্রাঞ্চের কাছে সব কথা স্বীকার করে সেই মতন চার্জসিট তৈরি হয়। নিরঞ্জন বাবু সবাইকে নিয়ে পায়েলের বাড়িতে যায়। দরজার তালা ভেঙ্গে ঢুকে বাথরুমের জরিপ করে। পায়েলের বাবা দেখিয়ে দেয় যেখানে পায়েলকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। একতলার চেম্বারের পেছনে একটা ছোটো বাথরুম, বাথরুমের অবস্থা দেখে বোঝা যায় ওইখানে বিশেষ কারুর যাতায়াত নেই। প্রমান স্বরুপ সেখানে একটা দড়ি আর একটা গ্লাস পাওয়া যায়। তারপরে উপরে সুজাতা কাকিমার ঘরে ঢুকে তদারকি করে বাকি তথ্য প্রমান যোগাড় করে নিয়ে চলে যায় পুলিস। পুলিস ইতিমধ্যে পায়েলের মামা বাড়িতে খবর দেয়। পায়েলের মামা মামী এবং মামাতো দাদা নার্সিং হোমে পৌঁছে যান।
ডক্টর মিসবাহুল পায়েলের মানসিক অবস্থা নিয়ে একটু চিন্তিত হয়ে পড়েন। পায়েল একটু সুস্থ হওয়ার পরে নিরঞ্জন বাবুকে খবর দেওয়া হয়। নিরঞ্জন বাবু নার্সিং হোমে চলে আসেন পায়েলের স্টেটমেন্ট নিতে। পায়েল ওর মায়ের কথা জিজ্ঞেস করে, কারুর মুখে কোন কথা নেই সবাই পরস্পরের মুখ চাওচায়ি করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।
পায়েল বড় বড় ক্লান্ত চোখে জিজ্ঞেস করে, “মা কোথায়?”
পারমিতা, পায়েলের পাশে বসে জড়িয়ে ধরে বলে, “তুই ভালো হয়ে যা, তারপরে সব কথা বলব।”
পায়েল, পারমিতার কোল ঘেঁষে জড়সড় হয়ে জিজ্ঞেস করে, “সত্যি বল, আমার মা কোথায়?”
পারমিতা, দেবায়ন আর অনুপমার দিকে তাকিয়ে বলে, “দেবশ্রীদিকে একবার ডাকলে বড় ভালো হত।”
অনুপমা ওর মামনিকে ফোন করে। দেবায়নের মা অফিস থেকে কয়েক ঘণ্টার ছুটি নিয়ে নার্সিং হোমে চলে আসে। পায়েল দেবায়নের মাকে আগে কোনদিন দেখেনি। অনুপমা পরিচয় করিয়ে দেয় দেবায়নের মায়ের সাথে। নিরঞ্জন বাবু দেবায়নের মাকে ডেকে বলেন যে ওর স্টেটমেন্ট নেওয়া দরকার।
দেবশ্রী, পায়েলের পাশে বসে জিজ্ঞেস করে, “তোমার শরীর কেমন আছে এখন?”
পায়েল মাথা নাড়ায়, আগের থেকে একটু ভালো। দেবশ্রী ধিরে ধিরে পায়েলের কাছে সব কিছু জানতে চায়। পায়েল অঙ্কনের দিকে তাকিয়ে থাকে জল ভরা চোখে। অঙ্কন ওকে সাহস দিয়ে সব কিছু বলতে বলে। পায়েল এক এক করে সব কথা দেবশ্রীকে জানায়। পায়েলের বেদনা ভরা কাহিনী শুনে সবাই স্থম্ভিত হয়ে যায়। জন্মদাতা পিতা এত নিষ্ঠুর হতে পারে, সেটা ওকে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। পিঠে বেল্টের কালসিটে দাগ দেখায়, কব্জিতে দড়ির দাগ। দিনে একটা রুটি আর এক গ্লাস জল ছাড়া কিছু খেতে দেওয়া হয়নি ওকে। ওর বাবা বলেছিল যেদিন অঙ্কনের চিন্তা ছেড়ে দেবে সেদিন ওকে বাথরুম থেকে মুক্তি দেবে। পায়েল জানত ওর পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে তাই জেদ ধরে বসে ছিল। অঙ্কনের চোখে জল চলে আসে সেই সব কথা শুনতে শুনতে। নিরঞ্জন বাবুর চোয়াল রাগে শক্ত হয়ে ওঠে, তিনি জানিয়ে দেন যে একটা স্টেটমেন্ট তিনি পরে তৈরি করে নিয়ে আসবেন সেখানে পায়েলের সই দিয়ে দিলে হয়ে যাবে। পায়েল বারেবারে ওর মায়ের কথা জিজ্ঞেস করে। দেবায়নের মা শেষ পর্যন্ত পায়েলের মায়ের মৃত্যুর কথা জানায়। পায়েল ডুকরে কেঁদে ওঠে তারপরে অজ্ঞান হয়ে যায়।
জ্ঞান ফেরার পরে পায়েল মামা, মামীর দিকে তাকিয়ে থাকে নিরুপায় হয়ে। পায়েলের অবস্থা দেখে ওর মামা ওকে তার সাথে নিয়ে যেতে চান। অনুপমা আর শ্রেয়া, পায়েলকে তার আত্মীয় সজ্জনের সাথে ছাড়তে নারাজ। নিজের বাবা আর নিজের পিসি যদি ওর সাথে এমন অত্যাচার করতে পারে তাহলে বাকিরা কেন পারবে না। অনুপমা আর শ্রেয়া কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না। ওর মামা বলেন যে নিকট আত্মীয় হিসাবে পায়েলের ওপরে তার অধিকার আছে। নিরঞ্জন বাবু অবস্থার সামাল দেবার জন্য বলেন যে পায়েল, সাবালিকা হয়ে গেছে। পায়েলের মতামত ছাড়া কেউ ওকে নিয়ে যেতে পারে না। সবার চাপে পড়ে ওর মামা বিরক্ত হয়ে বলেন যে তারা পায়েলের দায়িত্ব গ্রহন করতে চায় না ভবিষ্যতে।
কলেজ শুরু হয়ে যায়। প্রতিদিন কেউ না কেউ পায়েলের সাথে নার্সিং হোমে থাকে। কোনদিন অনুপমা, কোনদিন সঙ্গীতা, কোনদিন শ্রেয়া। পায়েলকে ফিরে পেয়ে সবাই বেশ খুশি। পায়েল মানসিক ভাবে খুব ভেঙ্গে পড়ে। বারেবারে মায়ের কথা বলতে বলতে অজ্ঞান হয়ে যেত। ডক্টর খুব চিন্তায় পড়ে যায়। এইমত অবস্থায় পায়েলের দায়িত্ব গ্রহনের জন্য কে এগিয়ে আসবে সেই চিন্তায় পড়ে যায় সবাই। সেই সময়ে পারমিতা বলে যে, পায়েলের সব দায়িত্ব গ্রহন করতে রাজি আছে। অনুপমা আর অঙ্কন খুব খুশি হয় মায়ের কথা শুনে। মিস্টার সেন স্ত্রীর আর কন্যের কথা মেনে নিয়ে পায়েলকে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
অনুপমার রুমেই পায়েলের থাকার ব্যাবস্থা করা হয়। অনুপমাই ওর সব দেখাশনার ভার নেয়। রাতের পর রাত অনুপমা ওর জন্য জেগে কাটিয়ে দেয়। পায়েল শারীরিক দিক দিয়ে সুস্থ হয়ে উঠলেও, কিছুতেই মেনে নিতে পারে না যে ওর বাবা ওর মাকে হত্যা করেছে। ওর মন মানতে চায় না যে ওর মা ইহলোকে আর নেই। রাতে ঘুম আসে না পায়েলের, ছোটো বাচ্চা যেমন থেকে থেকে মাকে খোঁজে, বিছানায় শুয়ে পায়েল মাকে খোঁজে। সারা রাত অনুপমা ওকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকে। অঙ্কন পায়েলের মানসিক অবস্থা দেখে খুব চিন্তিত হয়ে পরে। পায়েল শরীর ঠিক হলেও ওর মানসিক পরিবর্তন ঘটে। উচ্ছল, চঞ্চল পায়েল আর সেই মেয়ে নয়। পায়েল খুব চুপচাপ এবং স্তিমিত হয়ে যায়। পায়েল আর নিজেদের বাড়িতে ফিরে যায় না, পারমিতা ওকে যেতে দিতে চায় না। জানে পায়েল নিজের বাড়িতে ফিরে গেলে ওর মায়ের কথা মনে পরে যাবে, একা অত বড় বাড়িতে থাকা অসম্ভব পায়েলের পক্ষে। পায়েলের বাড়িতে তালা বন্ধ, মাঝে মাঝে পায়েলের মামা ফোনে পায়েলের খবরাখবর নেয় তবে ধিরে ধিরে সেটাও কমে আসে।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: পাপ কাম ভালবাসা - by Mr Fantastic - 29-09-2020, 12:40 AM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)