Thread Rating:
  • 31 Vote(s) - 3.19 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
পাপ কাম ভালবাসা
ছেলেরা অগ্নিহোত্রী আর বিনয়কে নিয়ে রাতের ঘন অন্ধকারে, বিনয়ের বাড়ির দিকে রওনা দেয়। রাত প্রায় তিনটে বাজে। তখন পর্যন্ত ধিমানের ফোন পায়নি। দেবায়ন একটু চিন্তিত, কি হল ওদের সাথে। কিন্তু গাড়িতে কারুর কাছে ফোন নেই যে একবার ফোন করে জিজ্ঞেস করে কত দূর পৌঁছেছে। দলের সব থেকে আগে, দেবাশিস হাঁটে খাঁড়া নিয়ে হাঁটছে, মাঝখানে বাকি ছেলেরা বিনয় আর অগ্নিহোত্রীর মুখ হাত বেঁধে একরকম টানতে টানতে নিয়ে চলেছে। রুদ্র, রূপক আর দেবায়ন দলের সব থেকে পেছনে।

রূপক আর থাকতে না পেরে দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “তুই মাদারচোদ শেষ পর্যন্ত টাকার জন্য ওদের ছেড়ে দিবি? তুই শালা আরো জাত শয়তান।”
দেবায়ন রূপকের কাঁধে হাত রেখে শান্ত করে বলে, “আমি ছেড়ে দেব বলেছি। কিন্তু পায়েল তোর বান্ধবী, তুই ছেড়ে দিবি বা রুদ্র ছেড়ে দেবে, সেই কথা কি কেউ ওদের বলেছে?”
রুদ্র হেসে বলে, “তোর শালা শকুনের মাথা।”
রূপক বলে, “না রে। এই ছেলেটা না হলে অনেক কিছুই হত না। এর মাথা শকুনের নয়, এ শালা অনেক বুদ্ধি ধরে। যাই হোক, টাকা গুলোর কি হবে?”
দেবায়ন রুদ্রকে বলে, “দেখো, বিনয় আর অগ্নিহোত্রী পায়েলকে ধরে রেখেছে। আইনের চোখে ওদের এমন কিছু বড় সাজা হবে না। ওদের সাজা আমরাই দেব। কাছেই গঙ্গা তাই ত?”
রুদ্র মাথা নাড়ায়, “হ্যাঁ।”
দেবায়ন বলে, “ওর পাশে নিশ্চয় পুরনো কোন কারখানা থাকবে। যেমন ইট ভাটা অথবা লোহার কারখানা অথবা পাটের কারখানা?”
রুদ্র মাথা নাড়িয়ে জানায়, গঙ্গার পাড়ে বেশ কয়েকটা খালি পুরনো কারখানা আছে। সেখানে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।
দেবায়ন পরবর্তী পরিকল্পনা জানায়, “ওই দুইজনকে ওইখানে নিয়ে গিয়ে দুই জনের হাতে ছুরি দিয়ে বলা হবে পরস্পরকে খুন কর। যদি ওরা পরস্পরকে খুন না করে তাহলে ওদের গলায় পাথর বেঁধে নিয়ে যাওয়া হবে ব্যারাকপুর। ওইখানে ওদেরকে গঙ্গায় ডুবিয়ে দেব আর টাকা ডুবিয়ে দেব। আর যদি এখানে খুন করে তাহলে সব টাকা জ্বালিয়ে দেব সেখানে। কেউ যদি দেখে তাহলে এই ভাববে, যে টাকার জন্য একে অপরকে খুন করেছে। সকালে এক বাড়ির লোক জেগে দেখবে যে পায়েলের বাবা খুন হয়েছে। অন্য বাড়ি জেগে দেখবে যে পাঁচ লাখ টাকা চুরি গেছে। বাড়ির দুই ছেলেই নেই, পুলিস আসবে। ছেলেদের খোঁজ করা হবে। খুঁজে পাবে গঙ্গার ধারে দুটি লাশ আর পোড়া টাকা। অগ্নিহোত্রীর মোবাইলে পেয়ে যাবে পায়েলের বাবাকে কি ভাবে খুন করা হয়েছে। কেমন লাগলো আমার পরিকল্পনা?”
রূপক, দেবায়ন কে জড়িয়ে ধরে বলে, “গুরু, তোর পোঁদ মেরে একদিন তোকে সুখ দেব বাঞ্চোত।”
দেবায়ন বলে, “সমস্যা এখানেই শেষ নয় গুরু। পায়েলের বাবার খুন হবার পরে, পায়েলের পিসি পায়েলকে খুঁজতে কোলকাতা আসবে। এইখানে ততক্ষণে পুলিস কেস হয়ে যাবে। পায়েলের বাবা নিশ্চয় পায়েলের পিসিকে অনুপমা আর অঙ্কনের কথা বলেছে। সুতরাং পুলিস পায়েলের খোঁজে অনুপমার বাড়িতে আসতে পারে। সুতরাং পায়েলকে কোলকাতা থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। শেষ সম্বল আমাদের এই রেকর্ড করা ভিডিও। পায়েল কে নিয়ে আর টানাটানি নয়। ওর পিসিকে বলব যে পায়েলের ধারে কাছে আসলে এই ভিডিও পুলিসের হাতে তুলে দেব। পায়েলের জীবনে কেউ আর বাধা হয়ে আসবে না।”
কল্যাণী হাইওয়ের কাছে আসতেই রুদ্রের ফোন বেজে ওঠে। ওপাশে পরাশরের গলা পেয়ে দেবায়ন জিজ্ঞেস করে কি ব্যাপার।
পরাশর বলে, “হ্যাঁ সব ঠিক আছে। আমি ওদের পেয়ে গেছি। পায়েলকে আব্বাজান একটা প্রাইভেট নার্সিং হোমে নিয়ে গেছে। স্যালাইন চলছে। অবস্থা একটু সঙ্গিন তবে বেঁচে যাবে।”
পরাশরের কথা শুনে দেবায়নার রূপকের মনে শান্তি হয়।
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “অনু কোথায়?”
পরাশর, “অনুপমা পায়েলের পাশে বসে। কিছুতেই বেডের পাশ থেকে ওঠানো যাচ্ছে না। তোর মা, মানে কাকিমা ফোন করে করে হয়রান। আমি জানিয়ে দিয়েছিলাম যে সব ঠিক আছে, তাও কাকিমা জেদ করে। শেষ পর্যন্ত কাকিমাকে নারসিং হোমে নিয়ে আসতে হল। কাকিমাকে পেয়ে অনুপমা এখন একটু ঠিক আছে। অঙ্কন বেশ ভেঙ্গে পড়েছে।”
পরাশর তারপরে গলা নিচু করে বলে, “শালা কেস খেয়ে গেছি।”
দেবায়ন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “বাল, কি করেছিস তুই?”
পরাশর, “শালা এত রাতে বাড়ি থেকে বার হওয়াতে বাবা মায়ের সন্দেহ হয়। জিজ্ঞেস করে কারন, আমি আমতা আমতা করি। ততক্ষণে কাকা চলে আসে। কাকা চেপে ধরে আমাকে।”
পরাশরের হাত থেকে ফোন নিয়ে ওর কাকা, ইন্সপেক্টর নিরঞ্জন বলে, “শোনো দেবায়ন, এমন কিছু করবে না যাতে তোমরা মুশকিলে পরো। তুমি ওদের ধরে থাক, আমি এক ঘন্টার মধ্যে ফোর্স নিয়ে পৌঁছে যাবো। আমি ধিমান আর ঋতুপর্ণার মুখ থেকে সব ঘটনা শুনেছি, পায়েলেকে দেখেছি। তুমি চিন্তা করো না, এটা পুলিস কেস। এখান থেকে পুলিস কে হ্যান্ডেল করতে দাও।”
দেবায়ন চিবিয়ে বলে, “এতদিন পায়েল যখন বেপাত্তা ছিল তখন পুলিস কিছু করেনি। পুলিসের কাছে গেলে পায়েলের কিছুই হত না। সুজাতা কাকিমা আজ বেঁচে থাকতেন আর পায়েলের এই দুর্দশা হত না। সব শেষ হয়ে যাবার পরে পুলিস কি করবে? আমি পুলিস চাই না, এইখানে এদের খুন করব আমি। আপনার যা করার আছে করে নিন।”
নিরঞ্জন বাবু কড়া কণ্ঠে ধমকে বলেন, “কিছু করবে না। আমি নৈহাটি থানার ওসিকে ফোন করে দিয়েছি, ওরা এতক্ষণে বিনয়ের বাড়ি ঘিরে ফেলেছে। তোমরা এক পা এগোলে তোমাদের ধরবে। তোমরা কোথায় আছো সেটা বল?”
দেবায়ন আসেপাশের সবাইকে চুপ করতে নির্দেশ দিয়ে পরাশরের কাকাকে বলে, “কেন বলব আমরা কোথায় আছি? আমরা অনুপমার বাড়িতে আড্ডা মারছি। কোন প্রমান আছে আপনার কাছে যে আমরা নৈহাটিতে? আমি জানি আপনার কাছে কোন প্রমান নেই। বাড়ির সবাই এক কথায় বলবে যে আমরা অনুপমার বাড়িতে আড্ডা মারছি। আমাদের আলিবাই আছে, আপনার পুলিস আমাদের চুলের ডগা ধরতে পারবে না। কয়জনকে ধরবেন আপনি?”
ইন্সপেটর নিরঞ্জন আহত কণ্ঠে বলেন, “আমি জানি, তোমার বিরুদ্ধে কোন প্রমান আমি পাবো না তবে তুমি কেন একজনের রক্তে নিজের হাত নোংরা করতে চাও। আমি আসছি ওইখানে, তোমার যেখানে আছো সেখানে দয়া করে দাঁড়িয়ে থাক। আমি এসে সব ঠিক করে দেব।”
দেবায়ন কিছুতেই মানতে নারাজ, চিবিয়ে চিবিয়ে পরাশরের কাকুকে বলে, “পায়েলের দিকে একবার তাকিয়ে দেখেছেন? কি করে বলেন এর পরে যে এদের আমি ছেড়ে দেব? আমি পায়েলের বাবাকে পর্যন্ত খুন করব। সুজাতা কাকিমার কাছে ক্ষমা চাইতে পাঠাবো ওকে আর এই বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে।”
ইন্সপেক্টর নিরঞ্জন আহত কণ্ঠে বলে, “তুমি কিছুতেই শুনবে না তাহলে?”
দেবায়ন চাপা গর্জন করে ওঠে, “আপনার একটা ছোটো মেয়ে আছে তাই না? একবার ভেবে দেখুন এই অত্যাচার আপনার মেয়ের সাথে হয়েছে? কি করতেন আপনি? পুলিসের অপেক্ষা করতেন, না পাপীদের শাস্তি দিতেন?”
দেবায়ন মানতে নারাজ কিছুতেই, মাথায় রক্ত চড়ে যায় পুলিসের কথা শুনে। অগ্নিহোত্রীকে এক লাথি মেরে রাস্তায় ফেলে গলার উপরে পা বসিয়ে দিয়ে ফোনে গর্জন করে ওঠে, “আপনার পুলিসকে বলবেন বড় রাস্তার ধারে দুটি লাশ পরে আছে, যেন তুলে নিয়ে যায়। পায়েলের বাবাকে মারতে পারলাম না বলে দুঃখ হচ্ছে তবে যেদিন জেল থেকে ছাড়া পাবে সেদিন খুন করব আমি। তার জন্য যদি আমাকে চোদ্দ বছর অপেক্ষা করতে হয় রাজি আছি।”
অগত্যা নিরঞ্জন বাবু কিছুতেই দেবায়নকে শান্ত করতে পারে না। পুলিসের হস্তখেপের খবরে দেবায়নের মাথায় রক্ত চড়ে যায়। ফোন রূপককে ধরিয়ে এলোপাথাড়ি মারতে শুরু করে দেয় বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে। বিনয়ের নাক ফেটে রক্ত বের হয় আর অগ্নিহোত্রী দেবায়নের লাথি খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। দেবায়নের রুদ্র মূর্তি দেখে দেবাশিস, রুদ্র আর বাকি ছেলেরা ঘাবড়ে যায়। ওরা খুনের মতলব করে আসেনি। ওরা ভেবেছিল এই সব কান্ডের পরে ছেলেগুলোকে পুলিসের হাতে তুলে দেবে। কিন্তু দেবায়ন তখন কারুর কথা শোনার মতন অবস্থায় নেই। দেবাশিস আর রুদ্র জড়িয়ে ধরে দেবায়নকে। রাগে ক্ষোভে দুঃখে দেবায়নের শরীরে শত অসুরের শক্তি ভর করে।
দেবায়ন চাপা গর্জন করে ওঠে, “পুলিস আসার আগে তোদের মেরেই ফেলব। শালা, শুয়োরের বাচ্চা, তোদের বাঁচিয়ে রাখলে আমি কোনদিন পায়েলের সামনে দাঁড়াতে পারবো না।”
নিরঞ্জন বাবুর সাথে রূপকের কথা হয়। রূপক, দেবাশিস আর রুদ্রকে নির্দেশ দেয় যে দেবায়নকে ওইখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে। দেবাশিস কোনোরকমে দেবায়নকে টেনে অগ্নিহোত্রী আর বিনয়ের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়। রূপক কিছু পরে ওর কাছে এসে বলে যে দেবায়নের মা একবার দেবায়নের সাথে কথা বলতে চায়।
দেবশ্রী ফোন ধরে বলে, “বাবা, আমার কথা একবার শোন মন দিয়ে। নিরঞ্জন বাবু যাচ্ছেন যখন তখন আর এই সব উলটোপালটা কাজ করিস না। উনি বলেছেন যে উনি সব দেখে নেবেন, কি করতে হয় বিচার করে করবেন। নিরঞ্জন বাবু বিচক্ষণ ব্যাক্তি, ক্রাইম ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর, পরাশরের কাকু, একবার অন্তত তাঁর কথা শুনে দ্যাখ।”
দেবায়নের চোখের সামনে ভেসে ওঠে পায়েলের অর্ধনগ্ন ক্ষত বিক্ষত দেহ। কানে বাজে অঙ্কনের কাতর আর্তনাদ, “মিষ্টি, আমি এসে গেছি সোনা। একবার চোখ খোলো।”
প্রেয়সী অনুপমার চোখের জল, “তুমি শুধু আমার কাছে ওকে ফিরিয়ে নিয়ে আস।”
ঋতুপর্ণার ডাক, “এরা যেন কালকের সূর্য না দেখতে পায়।”
দেবায়ন মাকে বলে, “পরাশর ওর কাকাকে বলেছিল পায়েলের কথা। তখন কোথায় ছিল ওর কাকা? কার পেছনে পুলিসের রুল ঢুকাচ্ছিল? ওর কাকা যা পারবে করে নিক আমার। আমাকে পুলিস দেখাতে যেও না, আমি আজকে এদের খুন করবই।”
দেবশ্রী ছেলেকে ধমক দেয়, “পায়েল ফিরে এসেছে, পায়েলের সাথে রেপ হয়নি। ওর মায়ের জন্য সত্যি খারাপ লাগছে। কিন্তু তুই কিছু করবি না। ওদের যা করার আইন করবে, এই আমার শেষ কথা।”
রুদ্র বেগতিক দেখে, দেবাশিস আর বাকি বন্ধুদের বলে অগ্নিহোত্রী আর বিনয়কে নিয়ে মাঠের দিকে চলে যেতে। রূপক আর রুদ্র ক্ষুব্ধ, রুদ্ররুপী দেবায়নের কাছে দাঁড়িয়ে থাকে। ঋজু দেবায়ন শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে পরে, অন্ধকার মাঠের মধ্যে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে আসে পায়েলের জন্য। এক ভালো বান্ধবীর এই সর্বনাশের প্রতিশোধ নিতে পারল না। সময় চলে যায়, দুরে মাঠের মধ্যে ছেলেরা বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে। রাস্তার পাশে দেবায়ন বসে। রূপক আর রুদ্র নিরুত্তর হয়ে চুপচাপ বসে থাকে নিরঞ্জন বাবুর অপেক্ষায়।
 
বিংশ পর্ব (#10)
রুদ্র বেগতিক দেখে, দেবাশিস আর বাকি বন্ধুদের বলে অগ্নিহোত্রী আর বিনয়কে নিয়ে মাঠের দিকে চলে যেতে। রূপক আর রুদ্র ক্ষুধ, রুদ্ররুপী দেবায়নের কাছে দাঁড়িয়ে থাকে। ঋজু দেবায়ন শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে পরে, অন্ধকার মাঠের মধ্যে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখ ফেটে জল বেড়িয়ে আসে পায়েলের জন্য। এক ভালো বান্ধবীর এই সর্বনাশের প্রতিশোধ নিতে পারল না। সময় চলে যায়, দুরে মাঠের মধ্যে ছেলেরা বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে। রাস্তার পাশে দেবায়ন বসে। রূপক আর রুদ্র নিরুত্তর হয়ে চুপচাপ বসে থাকে নিরঞ্জন বাবুর অপেক্ষায়।
সময়ের কেটে যায় বন্যার জলের মতন, সবাই নিস্তব্ধ। দুরে দুটি জিপ, লাল আলো জ্বালিয়ে দ্রুত গতিতে ধেয়ে আসে। রূপক রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে হাত নাড়াতে থাকে। দুটি জিপ ওদের দেখে ওদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পরে। সঙ্গে সঙ্গে বেশ কয়েকজন পুলিস গাড়ি থেকে নেমে ওদের ঘিরে দাঁড়ায়। নিরঞ্জন বাবু এগিয়ে এসে রূপককে জিজ্ঞেস করে দেবায়নের কথা। দেবায়ন মাথা নিচু করে রাস্তার পাশে, মাটিতে বসে।
নিরঞ্জন বাবু কাছে এসে দেবায়নের কাঁধে হাত রাখে। দেবায়ন জল ভরা ক্লান্ত চোখে নিরঞ্জন বাবুর দিকে তাকায়। সেই চোখের চাহনি দেখে নিরঞ্জন বাবু বুঝতে পারে যে দেবায়ন ফোনে যা বলেছিল এক বিন্দু বানিয়ে বলেনি, নিজের মনের কথাই বলেছিল। রুদ্র মাঠের মাঝে ওর বন্ধুদের দেখিয়ে বলে যে ওই খানে বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে ধরে রাখা হয়েছে।
নিরঞ্জন বাবু দেবায়নকে আসস্থ করে বলে, “দেখো দেবায়ন, এইখানে পুলিসের হাত পা বাধা ছিল। কোন কমপ্লেন ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারতাম না। ওর বাবা মা কেউ কমপ্লেন করেনি। ছেলে মেয়েদের উপরে বাবা মায়ের অধিকার বেশি। কি করতে পারে আইন? আইন কানুন যে অন্ধ দেবায়ন।”
দেবায়ন চিবিয়ে বলে, “সর্বনাশ হয়ে যাবার পরে আইনের চোখ খোলে? রেপিস্টদের ধরে ধরে সবার সামনে ফাসি দেওয়ায় উচিত, তাহলে দেখবেন যে দেশে রেপ কমে যাবে, মেয়েদের ওপরে যে অত্যাচার হয় সব কমে যাবে। আর সুজাতা কাকিমা? তাঁর আত্মার কি হবে? আপনি পায়েলকে দেখেছেন? কথা বলেছে আপনার সাথে? কি বলেছে শুনি একবার?”
নিরঞ্জন বাবু চুপ করে মাথা নিচু করে বসে থাকে। পায়েলকে দেখে তাঁর মনের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছিল, শরীরে শুধু হাড় ছাড়া কিছু বেঁচে নেই পায়েলের, কথা বলার শক্তি নেই পায়েলের। ততক্ষণে পুলিস টিমের বাকিরা অগ্নিহোত্রী আর বিনয়কে ধরে জিপের কাছে নিয়ে আসে। নিরঞ্জন বাবু রেডিওতে খবর নিয়ে জেনে নেন যে বিনয়দের বাড়ি থেকে পায়েলের বাবা আর বিনয়ের মাকে গ্রেফতার করেছে নৈহাটি পুলিস। ওইখানে খুব হইচই চলছে। বিনয়ের বাবা আর সমীর বাবু লোকজন জড় করে পুলিসকে বাধা দিচ্ছে। নিরঞ্জন বাবু সঙ্গে সঙ্গে ব্যারাকপুরে কথা বলে পুলিস ফোর্সের ব্যাবস্থা করেন। বুঝে যান যে, অগ্নিহোত্রী আর বিনয়কে নিয়ে পাড়ার মধ্যে ঢুকলে চলবে না। একটা গাড়িতে বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে তুলে দিয়ে ওইখানে অপেক্ষা করতে বলে। অন্য একটা গাড়িতে, রুদ্র রূপক আর দেবায়নকে নিয়ে নিরঞ্জন বাবু, মীরা বাগানের দিকে যাত্রা শুরু করেন। পথে যেতে যেতে, রূপকের কাছে সব ঘটনা জানতে চান। রূপক, দেবায়নের মোবাইলে তোলা ভিডিও নিরঞ্জন বাবুকে দেখায়। ভিডিও দেখে নিরঞ্জন বাবু স্তব্ধ হয়ে যায়, চোয়াল বারেবারে শক্ত হয়ে আসে। মীরা বাগানে ঢুকতেই ওদের বেশ বেগ পেতে হয়। রাত চারটে বাজে, কিন্তু প্রায় সারা মীরা বাগান জেগে উঠেছে। পুলিস হিমসিম খাচ্ছে লোকজন সামলাতে। নৈহাটি থানার ওসি, নিরঞ্জন বাবুদের গাড়ি দেখতে পেয়ে এগিয়ে আসেন। নৈহাটি থানার ওসি বলেন যে, ডক্টর কমলেশ আর তাঁর দিদিকে গ্রেফতার করা হয়েছে কিন্তু কেউ মানতে চাইছে না।
নিরঞ্জন বাবু গাড়ি থেকে নেমে, পায়েলের বাবা আর পায়েলের পিসিকে দেখে। সমীর বাবু আর বিনয়ের বাবা এগিয়ে এসে নিরঞ্জন বাবুকে বলেন যে এরা নির্দোষ। দেবায়ন গাড়ি থেকে নামতে চায় কিন্তু বাকিরা ওকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে দেয়। নিরঞ্জন বাবু ওদের বলে যে, সমীর বাবুর ছেলে অগ্নিহোত্রী আর বিনয় ধরা পড়েছে পুলিসের কাছে। ওরা সব কবুল করেছে এবং তার প্রমান আছে নিরঞ্জন বাবুর কাছে। নিরঞ্জন বাবু ওদের কে দেবায়নের মোবাইলে তোলা ভিডিও দেখিয়ে বলে যে এরপরে যা কিছু বলার, থানায় গিয়ে বলতে পারে। নিরঞ্জন বাবুর কথা শুনে আর ভিডিও দেখে স্তব্ধ হয়ে লোকেরা। পায়েলের বাবা আর পায়েলের পিসি ভেঙ্গে পরে তখন। নিরঞ্জন বাবু, নৈহাটি থানার ওসিকে নির্দেশ দেন যে এটা ক্রাইম ব্রাঞ্চের কেস, সুতরাং এদের লাল বাজারে নিয়ে যেতে হবে। পুলিসের একটা জিপে, পায়েলের বাবা আর পায়েলের পিসিকে নিয়ে পুলিস কোলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। রুদ্রকে নামিয়ে দেওয়া হয় ওর বাড়িতে। সঙ্গীতা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে দাদাকে সব ঘটনা জিজ্ঞেস করে। দেবায়ন আর রূপকের সাথে দেখা করে সঙ্গীতা। নিরঞ্জন বাবু সঙ্গীতাকে জিজ্ঞেস করে যদি ওদের সাথে কোলকাতা ফিরতে চায় তাহলে বাড়ি পৌঁছে দেবে, সঙ্গীতাকে। রুদ্র জানিয়ে দেয় যে ওর বোনকে পরের দিন কোলকাতা পৌঁছে দেবে।
নিরঞ্জন বাবু গাড়িতে উঠে দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “এবারে একটু শান্ত হবে? সবাই গ্রেফতার হয়ে গেছে। ওদের বিরুদ্ধে সব সাক্ষ্য প্রমান আমাদের কাছে আছে। পায়েলের বাবার যাতে যাবজ্জীবন হয় সেই মতন চার্জসিট ফাইল করা হবে।”
দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে ছেড়ে দেবেন? কত বছর জেল হয় একটা মেয়েকে এমন ভাবে ধরে রেখে কষ্ট দিলে? আপনার আইন কি বলে?”
নিরঞ্জন বাবু গাড়ির ড্রাইভারকে গাড়ি চালাতে নির্দেশ দিয়ে চুপচাপ বসে থাকেন। দেবায়ন রাগে গজগজ করতে থাকে, রূপক চুপচাপ পাশে বসে থাকে। দেবায়নের চোখে মুখে হেরে যাওয়ার ছাপ পরিষ্কার ফুটে ওঠে।
রূপক ওকে বলে, “দ্যাখ ভাই, পায়েলকে শেষ পর্যন্ত বাঁচিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি এটা বড় কথা নয় কি? তুই কেন তোর হাত কারুর খুনে নোংরা করতে চাস। একবার নিরঞ্জন কাকুর কথা মেনে দ্যাখ, আমার মন বলছে যা হবে ঠিক হবে। পায়েলের বাবা গ্রেফতার হয়েছে, আইন তাকে উচিত সাজা দেবে। আইন আমাদের হাতে তুলে নেওয়া একদম উচিত নয়। একটু বুঝতে চেষ্টা কর। আমাদের সামনে অনেক বড় একটা জীবন পরে আছে, কেন ফালতু ফালতু পুলিসের খাতায় নিজের নাম লিখিয়ে বদনাম নিতে চাস তুই? একবার ভেবে দ্যাখ, সায়ন্তন কাকুর কথা। তুই কি ভাবছিস, কাকুর আত্মা শান্তি পাবে কোনদিন? কাকিমার কথা ভাব, তোর নাম পুলিসের খাতায় উঠলে সারা জীবন একটা খুনের অপবাদ তোর সাথে থেকে যাবে।”
দেবায়ন চুপ করে শুনে যায় রূপকের কথা। বিচার করার শক্তি লোপ পেয়েছে দেবায়নের, তাও মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় যে চুপচাপ থাকবে। গাড়ি বড় রাস্তায় দাঁড় করায় নিরঞ্জন বাবু। সামনের গাড়িতে, অগ্নিহোত্রী আর বিনয় বসে। পেছনে পুলিসের দুটো জিপ, একটাতে বিনয়ের মা আর পায়েলের বাবা। নিরঞ্জন বাবু পেছনের পুলিসদের নির্দেশ দেয় যে সোজা লাল বাজারে নিয়ে চলে যেতে। বিনয়ের মা আর পায়েলের বাবাকে নিয়ে রওনা দেয় পুলিসের জিপ। নিরঞ্জন বাবু অন্য জিপ থেকে একজন ইন্সপেক্টর কে ডেকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করেন। পাশের ইন্সপেক্টর একটা রিভলভার নিরঞ্জন বাবুকে দেয়। নিরঞ্জন বাবু আবার চুপচাপ গাড়িতে বসে গাড়ি চালাতে নির্দেশ দেয়। গাড়ি আবার কল্যাণী হাইওয়ে ধরে কোলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
দুই পাশে ফাঁকা মাঠ, রাতের অন্ধকার কেটে দুটি গাড়ি দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলে। ব্যারাকপুর পেরিয়ে যাবার কিছুপরে নিরঞ্জন বাবু গাড়ি দাঁড় করাতে নির্দেশ দেয়। রূপক আর দেবায়নকে নিরঞ্জন বাবু গাড়ি থেকে নামতে অনুরোধ করেন। রূপক আর দেবায়ন, গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ায়।
নিরঞ্জন বাবু দেবায়নকে বলে, “আইন ওদের শাস্তি দেবে আমি জানি।”
দেবায়ন আর রূপকের কাঁধে হাত রেখে বলে, “পায়েলকে আমি দেখেছি। অঙ্কনের কান্না আমি দেখেছি। পরাশর আমাকে আগেই বলেছিল এই সব কিন্তু আইনের হাত পা বাধা ছিল সেই সময়ে। আইন পুলিস তখন নিরুপায় ছিল, কিছু করার ছিল না আমাদের। পায়েলের আগের জীবন আমি ফিরিয়ে দিতে পারবো না, দেবায়ন আমাকে ক্ষমা করে দাও।”
নিরঞ্জন বাবু, অন্য ইন্সপেক্টরকে বলেন, “ওই দুটো কে নিয়ে মাঠের মধ্যে যাও, আর দৌড়াতে বল।”
ইন্সপেক্টর বিনয় আর অগ্নিহোত্রীর হাতকড়া খুলে মাঠের মধ্যে দৌড়াতে বলে, বলে ওদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিনয় আর অগ্নিহোত্রী দাঁড়িয়ে থাকে, পা নিঃসাড় হয়ে আসে ওদের। নিরঞ্জন বাবু গর্জে ওঠে, “যা পালা, কত জোরে পালাতে পারিস পালা। তোদের ছেড়ে দিলাম। তোদের বিরুদ্ধে এমন কিছু প্রমান নেই আমার কাছে, যা বলেছিস সব পায়েলের বাবার বিরুদ্ধে। তোদের ধরে নিয়ে গিয়ে কিছু করার নেই।”
অগ্নিহোত্রীকে বলে, “তোর বাবা সব ব্যাবস্থা করে দিয়েছে। হাবড়ার দিকে একটা গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। এই মাঠ ধরে দৌড়াতে থাক।”
অগ্নিহোত্রী আর বিনয়, এক বার পরস্পরের দিকে তাকায়। নিরঞ্জন বাবু আবার বলেন, “তোর বাবা আমাকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছে তোদের ছেড়ে দেবার জন্য।”
একটু থেমে ম্লান হেসে বলেন, “কি করতে পারি বল, সমীর বাবুর কথা রাখতে হয় যে।”
হতভম্ব হয়ে দেবায়ন চেঁচিয়ে ওঠে নিরঞ্জন বাবুর দিকে, “কি করলেন আপনি? শালা পুলিস কে একদম বিশ্বাস করতে নেই।”
Like Reply


Messages In This Thread
RE: পাপ কাম ভালবাসা - by Mr Fantastic - 29-09-2020, 12:37 AM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)