29-09-2020, 12:32 AM
বিংশ পর্ব (#08)
ঋতুপর্ণা ভালো ভাবে পায়েলকে দেখার পরে ধিমানকে বলে, “যার বেশি ভয় ছিল সেটা হয় নি, ওরা এখন রেপ করেনি পায়েলকে। তবে পায়েলের শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ। এতদিন হয়ত ঠিক ভাবে খেতে পায়নি। শরীরে কিছু বেঁচে নেই, প্রচন্ড ডিহাইড্রেট হয়ে গেছে। প্রচন্ড ট্রমাতে ভুগছে। এখুনি ওকে স্যালাইন দিতে হবে, ওকে নিয়ে আমাদের বেড়িয়ে পড়া উচিত না হলে শেষ রক্ষা করতে বড় মুশকিল হয়ে যাবে।”
অঙ্কন পারলে বুকের মধ্যে লুকিয়ে ফেলে পায়েলকে। সব শক্তি দিয়ে আগলে ধরে থাকে, এমন কি ধিমানের উপরেও যেন ওর আর বিশ্বাস নেই। চোখে মুখে করুন ছাপ, বারেবারে পায়েলের মাথায় গালে হাত বুলিয়ে কানের কাছে বিড়বিড় করে চোখ খুলতে অনুরোধ করে। পায়েল অজ্ঞান, অঙ্কনের কাতর ডাক পায়েলের কানে পৌঁছায় না।
দেবায়ন চোখ বন্ধ করে একবার ভগবানের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা জানায়। তারপরে ধিমানকে বলে, “তুই এদের নিয়ে বেড়িয়ে যা। রুদ্রের ফোন থেকে একবার পরাশরকে ফোন করে দে। জারিনার বাবাকে এমনিতে বলা আছে, সোজা জারিনার বাড়িতে নিয়ে চলে যাবি। একটা কথা মনে রাখিস, পুলিসে খবর একদম দিবি না।”
ধিমান জিজ্ঞেস করে, “কেন? এটা পুলিস কেস।”
অঙ্কন হুঙ্কার দিয়ে ওঠে, “পুলিস শালা কিছুই করতো না। ওর বাবা মা যে কমপ্লেইন করে নি। কেন যাবো পুলিসের কাছে? আমি ওদের খুন করে তবে যাবো।”
দেবায়ন অঙ্কনকে শান্ত করে বলে, “তুই তোর মিষ্টিকে পেয়ে গেছিস। এবারে তুই ওকে নিয়ে বেড়িয়ে যা এখান থেকে। বাকিদের কি করতে হয় আমি দেখে নেব।”
রুদ্রের ফোন থেকে অনুপমাকে ফোন করে দেবায়ন, “পায়েল কে পাওয়া গেছে। ভাই আর ঋতুপর্ণা পায়েল কে নিয়ে এখুনি রওনা দিচ্ছে। তুমি শ্রেয়াকে নিয়ে জারিনার বাড়িতে চলে যাও। পরাশরকে বলবে পার্ক সার্কাসের মোড়ে দাঁড়াতে। ওইখানে থেকে এদের নিয়ে জারিনার বাড়িতে চলে যায় যেন। পরাশরকে বলে দেবে যেন ওর কাকা এইসবের কিছু জানতে না পারে।”
অনুপমা কেঁদে ফেলে দেবায়নের কথা শুনে, “তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো আমার কাছে। বড় দেখতে ইচ্ছে করছে ওকে।”
শ্রেয়া বলে, “তুই চিন্তা করিস না, আমি ঠিক করে নেব খানে। তুই কখন আসবি?”
দেবায়ন, “এখানে এখন কাজ বাকি তারপরে আমি আসব। আর হ্যাঁ এক বার আমার মাকে জানিয়ে দিস যে পায়েল কে পাওয়া গেছে।”
ঋতুপর্ণা বেড়িয়ে যাবার আগে ছেলে গুলোর দিকে তাকিয়ে দেবায়ন আর রূপককে বলে, “এরা যেন কালকের সূর্য না দেখতে পারে সেই ব্যাবস্থা করবে।”
দেবায়ন বলে, “তুমি শুধু পায়েলকে একটু দেখো, প্লিস। আমরা ছাড়া ওর আর কেউ দেখার নেই মনে হয়।”
রুদ্র ওর কয়েক জন বন্ধুকে বলে অঙ্কনদের গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে। ধিমান থাকতে চাইলে দেবায়ন বলে যে গাড়িতে ওকে দরকার। একা ঋতুপর্ণা আর অঙ্কন হয়ত পায়েলকে সামলাতে পারবে না। পায়েলের নিস্বার দেহ, অঙ্কন কোলে তুলে নেয়। ধিমান বেড়িয়ে যাবার আগে, রাগের বশে বিনয়কে খান পাঁচেক সজোরে লাথি মেরে বেড়িয়ে পরে। দেবায়ন বলে, কোলকাতা পৌঁছে যেন রুদ্রের ফোনে একবার ফোন করে জানিয়ে দেয় ওদের সংবাদ। ধিমান মাথা নেড়ে জানিয়ে দেয় যে সব সংবাদ দিয়ে দেবে। পায়েল কে নিয়ে বেড়িয়ে যায় সবাই।
দেবায়ন অন্য ঘরে ঢোকে, একটা হ্যারিকেন ছাড়া আর কোন আলো নেই। বিনয় আর অগ্নিহোত্রীর মুখ হাত পা বাঁধা। রুদ্র রূপক আর বাকিরা, ছেলে দুটোকে বেঁধে বেশ মার মেরেছে। শুধু গোঙ্গানো ছাড়া আর কোন আওয়াজ বের হয় না ছেলে গুলোর মুখ থেকে। দুটো ছেলে দেবায়নের দিকে রোষ ভরা চাহনি নিয়ে দেখে।
ছেলে গুলোর দিকে তাকিয়ে দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “তোদের মধ্যে বিনয় কে আর অগ্নিহোত্রী কে?” রুদ্র দেখিয়ে দেয় বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে।
দেবায়ন, রূপককে বলে, “বিনয়ের মুখ খুলে দে। ওর সাথে আমার কথা আছে।”
রূপক, বিনয়ের মুখ খুলে দিতেই বিনয় চাপা স্বরে চেঁচিয়ে ওঠে, “শালা আমার গায়ে হাত তুলেছিস তুই। তোকে এইখানে পুঁতে ফেলব। তুই আমাকে চিনিস না।”
রুদ্র গর্জন করে বলে, “তুই বাঞ্চোত জাত শয়তান। তোকে সবাই চেনে।”
দেবায়ন তির্যক হেসে বলে, “সকালের সূর্য দেখতে পেলে তবে না আমাকে পুঁতবি।”
দেবায়ন নিজের মোবাইল ফোন রূপকের হাতে ধরিয়ে বলে, “ভিডিও করতে শুরু করে দে। ওদের কাছে আমার অনেক কিছু জানার আছে তারপরে আমি ওদের বিচার করব।”
রুদ্রকে বলে, “বাকিদের বাইরে অপেক্ষা করতে বল। এই কথা শুধু তুমি আমি আর রূপকের মাঝে থাকবে।”
রুদ্র বাকি ছেলেদের বাইরে অপেক্ষা করতে বলে দেয়। রুদ্রের বন্ধুরা ঘরের বাইরে চলে যায়। রূপক দেবায়নের পেছনে দাঁড়িয়ে মোবাইলে ভিডিও রেকর্ড করতে শুরু করে। দেবায়ন বিনয়ের চুলের মুঠি ধরে গালে একটা সপাটে চড় কষিয়ে দেয়। ঠোঁটের কষ ফেটে গিয়ে রক্ত বের হয়। বিনয় কিছু বলার আগেই আরো একটা চড় গালে কষায় দেবায়ন। দেবায়নের কঠিন হাতের চড় খেয়ে বিনয় বুঝতে পারে যে এই বারে সুন্দরবনের বাঘের কবলে পড়েছে।
বিনয় বলে, “বড্ড পাপ করে ফেলেছি। দয়া করে ছেড়ে দাও আমাদের। আমি সত্যি বলছি, কোনদিন পায়েলের দিকে তাকাবো না।”
রুদ্র অগ্নিহোত্রীর মাথার পেছনে সজোরে এক লাথি মেরে বিনয়কে বলে, “বোকাচোদা ছেলে, করার আগে ভাবতে পারিস নি?”
দেবায়ন বিনয়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে জিজ্ঞেস করে, “পায়েলকে এই ভাবে ধরে রাখার পেছনে কে?”
বিনয়, পাশে পরে থাকা অগ্নিহোত্রীর দিকে দেখিয়ে বলে, “আমি কিছু করিনি, আমি কিছু জানিনা। যা করার ওই করেছে পায়েলকে।”
গা জ্বলে ওঠে দেবায়নের। রুদ্র, মেঝেতে পরে থাকা অগ্নিহোত্রীকে বেশ কয়েকটা লাথি মেরে বলে, “মাদারচোদ আজকে তোর বাড়া কেটে তোকে খাওয়াব। একটা মেয়েকে এমন ভাবে ধরে রেখে কষ্ট দেওয়া বের করে দেব।”
দেবায়ন বলে, “সব কথা শুরু থেকে বল আমাকে। অগ্নিহোত্রী পায়েলের সাথে প্রেমের নাটক করেছিল কেন? পায়েলের বাবা কোথায়? পায়েলের মায়ের মৃত্যু কি করে হয়েছে? পায়েল এত দিন কোথায় ছিল? সব কথা বল। এমনিতেও তোরা আজকে মরবি, বলে মরলে তোদের ভালো। পায়েল কোলকাতা চলে গেছে। আমার এক বন্ধুর কাকা ক্রাইম ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর। তুই না বললেও, কি করে বলাতে হয় সব কিছু জানা আছে আমাদের কাছে।”
বিনয় কোন রকমে কাতর মিনতি করে বলে, “আমি বলছি, সব বলছি। আসলে, আমার আর অগ্নিহোত্রীর অনেকদিন থেকেই পায়েলের ওপরে নজর ছিল। গত গরমের ছুটিতে পায়েল আমাদের বাড়িতে আসে। পায়েল শয়তানি করে অগ্নিহোত্রীর সাথে মিশে আমাদের মাঝে ঝগড়া বাঁধাতে চেয়েছিল। কিন্তু আমার আর অগ্নিহোত্রীর প্লান অন্য ছিল। আমরা নাটক করলাম যে আমাদের মধ্যে মনমালিন্য হয়ছে। অগ্নিহোত্রী পায়েলকে খেলিয়ে উঠাতে চেয়েছিল। আমাদের মতলব ছিল যে একবার পায়েলকে এই খানে উঠিয়ে নিয়ে চলে আসব আর ধরে রাখব। অগ্নিহোত্রী পায়েলকে ভোগ করবে পারলে ওকে বিক্রি করে দেওয়া হবে কোথাও। আমার মতলব ছিল মামাকে ব্লাকমেল করে মামার কোটি টাকার বাড়ি নিজের নামে করে নেওয়া। কিন্তু বাধ সাধল কপাল। যেদিন পায়েলকে উঠিয়ে নিয়ে আসার কথা, সেদিন কি করে পায়েল আমাদের দেখে ফেলে আর অইখান থেকে চলে যায়। সবার সামনে আমাদের সাহস হল না পায়েলকে জোর করে গাড়িতে তোলার। ইতিমধ্যে দেখলাম একটা ছেলে ট্যাক্সিতে এসে পায়েলকে নিয়ে চলে গেল।”
রূপক আর দেবায়নের গা চিড়বিড় করে জ্বলতে শুরু করে দেয়। রুদ্র অগ্নিহোত্রীর চুলের মুঠি ধরে ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কোথায় বিক্রি করার মতলবে ছিলিস তোরা?”
রুদ্র, অগ্নিহোত্রীর মুখ খুলে দিতেই, অগ্নিহোত্রী কেঁদে দেয় হাউহাউ করে।
অগ্নিহোত্রী বলে, “আমি ওকে বিক্রি করতে চাইনি। আমি ওকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। বিনয় সব মিথ্যে কথা বলছে।”
বিনয়, অগ্নিহোত্রীর দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে, “মাদারচোদ ছেলে এখন মিথ্যে বলছিস? এখন মনে হয় তোর অন্য কিছু মতলব ছিল পায়েলকে নিয়ে।”
অগ্নিহোত্রী আর বিনয়ের মাঝে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে যায়। দেবায়ন দুইজনের মাথা একসাথে ঠুকে দিয়ে গর্জন করে ওঠে, “চুপ শালা বোকাচোদা ছেলে। বিক্রি করেছিস কি করিস নি, সেটা পরের কথা।” বিনয়কে বলে, “তুই বাকি কথা বল।”
বিনয় বলে, “আমাদের প্লান ভন্ডুল হয়ে গেল। এর বেশ কয়েক মাস পরে একদিন মামা মাকে ফোন করে বলে যে পায়েল নাকি একটা ছেলেকে ভালোবাসে। যে ছেলেটাকে ভালোবাসে সে নাকি পায়েলের বান্ধবীর ভাই। সেই শুনে মা সঙ্গে সঙ্গে সেই রাতেই কোলকাতায় মামার বাড়িতে চলে গেল। মা প্রথমে পায়েলকে বুঝাতে চেষ্টা করে যে এই সব ছেলেদের সাথে মেলা মেশা করা খারাপ। পায়েল কোন কথা শুনতে চায় না, ও বাড়ি থেকে চলে যাবার কথা বলে। সেই কথা শুনে মামা পায়েলকে বেধরক মারে। মামী বাধা দিতে এলে মামা মামীকে খুব মারধোর করে। মা ও মামীর উপরে খুব তোলপাড় করে, মামীকে বলে যে মামীর জন্য পায়েল খারাপ হয়ে গেছে। মারধোর করার পরে, মামা পায়েলকে একতলায় মামার চেম্বারের পেছনে একটা ছোটো বাথরুমে বন্ধ করে দেয়। মা, মামাকে বুদ্ধি দেয় পায়েলের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে দিয়ে দিতে। আমি অনেক দিন আগেই মায়ের কান ভাঙ্গিয়ে রেখেছিলাম অগ্নিহোত্রীর কথা বলে। জানতাম একবার যদি অগ্নিহোত্রীর সাথে পায়েলের বিয়ে হয় তাহলে আমিও একটু সুখ পাবো, সেই সাথে কোটি টাকার বাড়ি পেয়ে যাবো।”
দেবায়ন দাঁত পিষে চুপচাপ শুনে যায় ওর কথাবার্তা। রূপক দেবায়নের পেছনে দাঁড়িয়ে সবকিছু মোবাইলে রেকর্ড করে। রুদ্র, অগ্নিহোত্রী আর বিনয়ের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে।
বিনয় বলে ওর কথা, “সেদিনের পর থেকে পায়েল নিচের বাথরুমে বন্দি হয়ে থাকে। মামা ওকে জোর করে, আর পায়েল জেদ ধরে বসে থাকে সেই অঙ্কন নামের ছেলেটার কাছে যাবে। মামা ওকে বাথরুম থেকে বের হতে দেয় না। ওই দিকে মামী কেঁদে কেঁদে সারা। শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে একদিন মামাকে মারতে যায়। মামা বেগতিক দেখে মামীকে ঘুমের ইঞ্জেকশান দেয় বা ওইরকম কিছু একটার ইঞ্জেকশান দেয়। সেদিনের পর থেকে মামীকে কিছু একটা ইঞ্জেকশান দিয়ে নিস্তেজ করে রেখে দেয় মামা। বাড়িতে বাইরের কারুর প্রবেশ বন্ধ করে দেয়, বাড়ির পুরানো চাকরকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়। আমি মামাকে একদিন ফোন করে সব কথা জিজ্ঞেস করলাম, মামা আমাকে খুব ভালবাসত, মামা আমাকে সব কথা খুলে বলল। আমি মামাকে বুদ্ধি দিলাম, যে পায়েলকে যেন মামীর সামনে না আসতে দেওয়া হয়। আমি মামাকে বললাম যে এর মাঝে একদিন রাতে পায়েলকে নৈহাটি নিয়ে চলে আসব। কিন্তু এর মধ্যে একটা গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়লাম আমি, তাই আর সময় মতন কোলকাতা যাওয়া হল না। ওইদিকে অগ্নিহোত্রী আমাকে রোজ দিন পায়েলের কথা জিজ্ঞেস করত। আমি ওকে বলতাম যে পায়েল আর মামা এখন আমাদের হাতের পুতুল। যখন খুশি পায়েলকে নিয়ে আসা যায়। আমি জানতাম যে মামা ওকে বাথরুম থেকে কিছুতেই ছারবে না। একবার ছাড়া পেলে পায়েল পালিয়ে যাবে। মামা পায়েলের খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ করে দিল যাতে পায়েলের পালাবার মতন শক্তি না বাঁচে। ওইদিকে মামা রোজদিন মামীকে কোন ইঞ্জেকশান দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখে দিত।”
“কিছুদিন আগে, এক রাতে মামার ফোন। মা চমকে ওঠেন খবর শুনে। মামিমা মারা গেছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে মাকে নিয়ে মামাবাড়ি চলে গেলাম। মামা মাকে বললেন যে মামিমাকে রোজ দিন যে ওষুধ বা বিষ দিচ্ছিল সেই কারনে মামিমা মারা গেছেন। কোলকাতায় মামিমার দেহের শেষকৃত্য করতে হলে পুলিস কেস হয়ে যাবে, সবাই আমরা ফেসে যাবো। মা মামাকে বলল মামিমার দেহ নৈহাটি নিয়ে চলে আসতে। আমি মামাকে একদিকে ডেকে বললাম যে মামা যদি ওই বাড়ি আমার নামে করে দেয় তাহলে আমি সবকিছু ঠিক করে দেব। মামা আমাকে বাড়ির দলিল হাতে ধরিয়ে বলে যে আমি এই বাড়ি আমার হয়ে গেল। আমি, মা আর মামা, মামিমার মৃতদেহ সেই রাতে মামার গাড়িতে করে আমাদের বাড়িতে নিয়ে চলে এলাম। রাতের অন্ধকারে এই খানে বলা হল যে মামীর হার্ট এটাকে মৃত্যু হয়েছে। এইখানে মানুষকে বোঝানো সহজ, ওইখানে মারা গেলে তোরা পুলিস নিয়ে আসতিস সেটাও একটা ভয় ছিল মামার। তাই এইখানে মামীর শেষকৃত্য করা হয়। পায়েল এই ব্যাপারে কিছুই জানে না। পায়েল জানেই না যে ওর বাবা ওর মাকে ওষুধ দিয়ে মেরে ফেলেছে।”
বিনয়ের কথা শুনে দেবায়ন রাগে কাঁপতে শুরু করে দেয়। গর্জন করে ওঠে বিনয়ের দিকে, “পায়েলের বাবা এখন কোথায়?”
বিনয় বলে, “আমাদের বাড়িতে।”
দেবায়ন, “তার মানে এতদিন ধরে পায়েল ওই বাথরুমে বন্ধ ছিল। কেউ খেতে পড়তে দেয় নি। কি রকম মানুষ ওই ডাক্তার? ওই শালা তোদের বাড়ি চলে আসার পড়ে পায়েলের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেনি?”
বিনয়, “হ্যাঁ করেছিল। আমি বলেছি যে অগ্নিহোত্রী পায়েলকে নিয়ে দিঘা বেড়াতে গেছে। আসলে পায়েলকে ততদিন ওই বাড়িতেই আটকে রাখা হয়েছিল। দুই দিন আগে আমি আর অগ্নিহোত্রী রাতের অন্ধকারে, কোলকাতা গিয়ে পায়েলকে নিয়ে এইখানে রাখি। অগ্নিহোত্রীর প্লান ছিল বেশ কয়েক মাস ওকে রেপ করবে আর তারপরে একদিন ওকে বিক্রি করে দেবে।”
অগ্নিহোত্রী বলে, “বিনয় আমার নামে মিথ্যে বলছে। আমি কিছুই চাই নি ওর কাছ থেকে।”
রুদ্র, অগ্নিহোত্রীর চুলের মুঠি ধরে মেঝেতে মুখ ঘষতে ঘষতে জিজ্ঞেস করে, “শালা সত্যি কথা বল, না হলে এখুনি মেরে ফেলে দেব।”
রূপক রেগে গিয়ে মোবাইল ছেড়ে, ছুরি বসাতে যায় বিনয়ের গলায়। দেবায়ন বাধা দেয় রূপককে। রূপক কাঁপতে কাঁপতে গর্জে ওঠে, “এই দুটোকে মেরে ফেলা ভালো।”
দেবায়ন বলে, “দাঁড়া আমার কাজ এখন শেষ হয়নি।”
রুদ্র আর রূপক, দেবায়নের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোর কি মতলব?”
দেবায়ন বড় এক শ্বাস নিয়ে বলে, “দাঁড়া, সময় হলেই জানতে পারবি। এবারে অগ্নিহোত্রীর কথা শুনতে হবে। ওর শুধু মাত্র পায়েলকে বিয়ে করার মতলবে ছিল না, অন্য কিছুর মতলব ছিল।”
অগ্নিহোত্রী শেষ পর্যন্ত সত্যি কথা বলে, “আসলে আমি পায়েলকে ভুলিয়ে বিয়ে করার মতলবে ছিলাম। বিনয়ের মুখে শুনেছিলাম ওদের বিশাল বাড়ি, সেই বাড়ির দাম প্রায় এক কোটির মতন। আমি বিয়ে করার পরে পায়েলকে বেশ কয়েক মাস ভোগ করতাম আর তারপরে বাড়ি পেয়ে গেলে পায়েলকে বিক্রি করার মতলবে ছিলাম। আমরা পায়েল কে এখানে এনে ওকে খাবার দাবার দিয়ে সুস্থ করে তারপরে একটু ভোগ করার মতলবে ছিলাম। কারন পায়েলের যা অবস্থা ছিল তাতে ওকে ভোগ করার মতন কিছু ছিল না, হয়ত মরেই যেত। ওকে এত তাড়াতাড়ি আমরা মারতে চাইনি।”
দেবায়ন ঘুরিয়ে এক ঘুসি মারে অগ্নিহোত্রীর মুখে। ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয় অগ্নিহোত্রীর মুখ থেকে। রুদ্র রাগে কাঁপতে কাঁপতে, অগ্নিহোত্রীর গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে গর্জে ওঠে, “অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছিস তুই। কালকের সূর্য দেখতে পাবি না, এটা আমি বলছি। তোকে মেরে ফেললে ভাববো যে পৃথিবী থেকে একটা পাপ কম হয়েছে।”
প্রচন্ড মার খেয়ে মেঝেতে পরে কুঁকড়ে যায় অগ্নিহোত্রী। দেবায়ন অগ্নিহোত্রী আর বিনয়কে বলে, “তোরা অনেক পাপ করেছিস। পায়েলকে অনেক কষ্ট দিয়েছিস এমন কি খুন করতে চেষ্টা করেছিস। তবে একজন আরও আছে যার সাজা পাওয়া উচিত। পায়েলের বাবা, ডক্টর কমলেশ সান্যাল।”
রূপক আর রুদ্র জিজ্ঞাসু চোখে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে। দেবায়ন বলে, “ওর বাবা, সুজাতা কাকিমাকে মেরেছে। পুলিস খুঁজে কোন প্রমান পাবে না কেননা তোরা কাকিমাকে পুড়িয়ে দিয়েছিস আর সব প্রমান শেষ করে দিয়েছিস।”
বিনয় মাথা নাড়িয়ে বলে, “হ্যাঁ। মামিমার ডেথ সারটিফিকেটে হার্ট এটাক লেখা।”
বিংশ পর্ব (#09)
দেবায়ন বলে, “পায়েলের বাবাকে মারতে হবে তোদের।”
রুদ্র আর রূপক হাঁ করে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “সেটা কি করে সম্ভব?”
দেবায়ন বলে, “সব সম্ভব হবে। তার আগে পায়েলের বাড়ির দলিল আমার চাই। পায়েলের ভবিষ্যৎ আমার চাই।”
বিনয়, “পায়েলের বাড়ির দলিল আমি নিয়ে আসছি এখুনি, আমাদের ছেড়ে দে। আমরা কথা দিচ্ছি কোনদিন পায়েল কেন, মামাবাড়ির মুখ দেখব না।”
দেবায়ন, “উঁহু, তোদের ছেড়ে দিলে পাপ হবে। সুজাতা কাকিমার আত্মা শান্তি পাবে না।”
রূপক গর্জে ওঠে, “তোদের ছেড়ে দেবার কোন প্রশ্ন ওঠে না। পায়েলকে যেমন ভাবে কষ্ট দিয়েছিস, তারপরে তোদের মরে যাওয়া উচিত।”
দেবায়ন, “বিনয় আমাদের কাছে বাঁধা থাকবে। অগ্নিহোত্রী ঢুকবে বিনয়ের বাড়িতে, আগে ওই দলিল এনে আমাকে দেবে, তারপরে পায়েলের বাবাকে খুন করবে অগ্নিহোত্রী।”
বিনয় আর অগ্নিহোত্রী হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে, “না খুন আমাদের দ্বারা হবে না।”
রূপক বিনয়কে এক লাথি মেরে বলে, “খুনের চেয়ে বড় পাপ, এমন ভাবে ধরে রেখে একজনকে কষ্ট দেওয়া। জ্যান্ত একটা মেয়েকে কষ্ট দিয়ে তার আত্মাকে মেরে ফেলা। তোরা পায়েলকে এক রকম মেরেই ফেলেছিলিস, ওই দিকে তোর মামা তোর মামীকে মেরে ফেলেছে। তোরা সবাই দোষী। দেবায়ন যা বলছে সেটা কর। এমনিতেও তোরা ধরা পড়বি, কেননা পায়েলকে দেখে পুলিস কেস হবে। পায়েল পুলিসকে সব বলে দেবে।”
অগ্নিহোত্রী বলে, “আচ্ছা যদি খুন করি ওর মামাকে তাহলে আমাদের ছেড়ে দেবে তোমরা।”
দেবায়ন হেসে বলে, “আমি ছেড়ে দেব।”
রূপক আর রুদ্র, রেগে যায় দেবায়নের ওপরে, “তুই কি বলছিস? এদের ছেড়ে কেন দেব? না মারলেও পুলিসের হাতে দেব।”
দেবায়ন, রূপক আর রুদ্রকে শান্ত করে বলে, “আগে আমার কাজ শেষ হোক তারপরে দেখছি।”
অগ্নিহোত্রীকে দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে, তোর বাবা বেশ বড়োলোক। তার মানে তোদের বাড়িতে নগদ টাকা আছে?”
অগ্নিহোত্রী, “হ্যাঁ আছে, তোমাদের কত টাকা চাই বল, আমি দেব। এক লাখ, দুই লাখ পাঁচ লাখ? এই পুজোর মরশুমে কাপড়ের ব্যাবসা দারুন চলেছে। বাড়িতে পাঁচ লাখ টাকা ক্যাস পড়ে আছে, আমি বাবার দেরাজ খুলে সব টাকা চুরি করে আনতে পারি এখুনি। সব টাকা তোমাকে দিয়ে দেব যদি আমাদের ছেড়ে দাও।”
দেবায়ন হাসতে হাসতে বলে, “হ্যাঁ, আমার টাকা চাই। বিনয় যাবে তোর বাড়িতে টাকা চুরি করতে আর অগ্নিহোত্রী যাবে বিনয়ের বাড়িতে পায়েলের বাবাকে মারতে। তারপরে তোদের ছেড়ে দেব আমি। এবারে বল, কার বাড়িতে কি করে ঢুকতে হয়?”
অগ্নিহোত্রী বিনয়কে বুঝিয়ে বলে, “ওই দু’তলার আমার রুমের জানালার একটা শিক খুলে যায়। সেই শিক সরিয়ে আমার রুমে ঢুকে যাবি। তারপরে নিচে চলে যাবি সিঁড়ি বেয়ে। বাবার রুম দেখেছিস তুই, বাবার কোমরে দেরাজের চাবি থাকে একটা দড়িতে বাঁধা। বাবা এখন আফিং মেরে মরার মতন ঘুমাচ্ছে। আমার টেবিলে কাঁচি পেয়ে যাবি, সেই কাঁচি দিয়ে খুব সহজে ওই দড়ি কেটে চাবি নিয়ে নিবি। বাবার মাথার কাছে যে দেরাজ আছে, তার নিচের তাকে একটা সিন্দুক দেখতে পাবি। চাবির থোকায়, সব থেকে বড় চাবিটা ওই সিন্দুকের। ওর মধ্যে পেয়ে যাবি পাঁচ লাখ টাকা।”
বিনয় দেবায়নকে বলে, “ওই টাকা দিলে আমাদের ছেড়ে দেবে তো?”
দেবায়ন বলে, “আগে অগ্নিহোত্রী পায়েলের বাবাকে খুন করে আসুক তারপরে।”
অগ্নিহোত্রীকে বলে, “তুই আগে বিনয়ের বাড়িতে ঢুকে পায়েলের বাড়ির দলিল আমার হাতে এনে দিবি। তারপরে আবার ঢুকে পায়েলের বাবাকে খুন করে বেড়িয়ে আসবি। পায়েলের বাবাকে যে খুন করেছিস তার প্রমান স্বরুপ ওইর মৃতদেহের ছবি তুই তোর মোবাইলে তুলে আনবি। ছুরি মারিস না, তাতে চেঁচামেচি হবে তুই ধরা পড়ে যাবি। পায়েলের বাবার মুখের উপরে বালিস চাপা দিয়ে মারবি। আর সব ঘটনা মোবাইলে রেকর্ড করে নিয়ে আসবি।”
অগ্নিহোত্রী, “ঠিক আছে তাই হবে, কিন্তু আমাদের ছেড়ে দিতে হবে তারপরে।”
দেবায়ন বিনয়কে বলে, “আগে বল কি করে তোর বাড়িতে ঢোকা যায়? কোথায় পায়েলের বাড়ির দলিল? কোথায় পায়েলের বাবা ঘুমিয়ে আছে?”
বিনয় বলে, “মামা, নিচের ঘরে ধুমিয়ে। মামার ঘরের পাশেই আমার ঘর। দলিল আমার আলমারিতে রাখা, আলমারিতে কোন তালা দেওয়া নেই, সুতরাং দলিল আনতে কোন কষ্ট হবে না। মামা ঘরের দরজা ভেজান থাকে, সহজে খুলে যাবে। আমার বাড়িতে ঢুকতে হলে পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকতে হবে। পেছনের দরজায় শুধু খিল দেওয়া আছে, তালা মারা নেই। একটা তার দরজায় ঢুকিয়ে দিয়ে, একটু উপরের দিকে টান মারলে খিল খুলে যাবে আর অতি সহজে বাড়িতে ঢোকা যাবে।”
পরিকল্পনা মতন রুদ্র আর রূপক, বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে আবার বেঁধে ফেলে। রুদ্র ওর বন্ধুদের ঘরের ভেতরে ডেকে নিয়ে আসে। ওর বন্ধুরা রুদ্রকে জিজ্ঞেস করে কি ব্যাপার। রুদ্র সংক্ষেপে সব ঘটনা বলে, দেবায়নের পরিকল্পনার কথা বলে। রুদ্রের বন্ধুরা, ওদের ছেড়ে দেওয়ার কথা শুনে দেবায়নের ওপরে রেগে যায়। ওদের মধ্যে রুদ্রের এক বন্ধু, দেবাশিস, সে একটা খাঁড়া হাতে নিয়ে এসেছিল। তার রাগ অগ্নিহোত্রীর ওপরে বেশি ছিল। সে বলে, অগ্নিহোত্রীকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না, ওকে খুন করবে। দেবায়ন সবাইকে ঠাণ্ডা করে বলে ওর কাজ এখন শেষ হয়নি। পরে জানাবে ওর পরিকল্পনা।
ঋতুপর্ণা ভালো ভাবে পায়েলকে দেখার পরে ধিমানকে বলে, “যার বেশি ভয় ছিল সেটা হয় নি, ওরা এখন রেপ করেনি পায়েলকে। তবে পায়েলের শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ। এতদিন হয়ত ঠিক ভাবে খেতে পায়নি। শরীরে কিছু বেঁচে নেই, প্রচন্ড ডিহাইড্রেট হয়ে গেছে। প্রচন্ড ট্রমাতে ভুগছে। এখুনি ওকে স্যালাইন দিতে হবে, ওকে নিয়ে আমাদের বেড়িয়ে পড়া উচিত না হলে শেষ রক্ষা করতে বড় মুশকিল হয়ে যাবে।”
অঙ্কন পারলে বুকের মধ্যে লুকিয়ে ফেলে পায়েলকে। সব শক্তি দিয়ে আগলে ধরে থাকে, এমন কি ধিমানের উপরেও যেন ওর আর বিশ্বাস নেই। চোখে মুখে করুন ছাপ, বারেবারে পায়েলের মাথায় গালে হাত বুলিয়ে কানের কাছে বিড়বিড় করে চোখ খুলতে অনুরোধ করে। পায়েল অজ্ঞান, অঙ্কনের কাতর ডাক পায়েলের কানে পৌঁছায় না।
দেবায়ন চোখ বন্ধ করে একবার ভগবানের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা জানায়। তারপরে ধিমানকে বলে, “তুই এদের নিয়ে বেড়িয়ে যা। রুদ্রের ফোন থেকে একবার পরাশরকে ফোন করে দে। জারিনার বাবাকে এমনিতে বলা আছে, সোজা জারিনার বাড়িতে নিয়ে চলে যাবি। একটা কথা মনে রাখিস, পুলিসে খবর একদম দিবি না।”
ধিমান জিজ্ঞেস করে, “কেন? এটা পুলিস কেস।”
অঙ্কন হুঙ্কার দিয়ে ওঠে, “পুলিস শালা কিছুই করতো না। ওর বাবা মা যে কমপ্লেইন করে নি। কেন যাবো পুলিসের কাছে? আমি ওদের খুন করে তবে যাবো।”
দেবায়ন অঙ্কনকে শান্ত করে বলে, “তুই তোর মিষ্টিকে পেয়ে গেছিস। এবারে তুই ওকে নিয়ে বেড়িয়ে যা এখান থেকে। বাকিদের কি করতে হয় আমি দেখে নেব।”
রুদ্রের ফোন থেকে অনুপমাকে ফোন করে দেবায়ন, “পায়েল কে পাওয়া গেছে। ভাই আর ঋতুপর্ণা পায়েল কে নিয়ে এখুনি রওনা দিচ্ছে। তুমি শ্রেয়াকে নিয়ে জারিনার বাড়িতে চলে যাও। পরাশরকে বলবে পার্ক সার্কাসের মোড়ে দাঁড়াতে। ওইখানে থেকে এদের নিয়ে জারিনার বাড়িতে চলে যায় যেন। পরাশরকে বলে দেবে যেন ওর কাকা এইসবের কিছু জানতে না পারে।”
অনুপমা কেঁদে ফেলে দেবায়নের কথা শুনে, “তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো আমার কাছে। বড় দেখতে ইচ্ছে করছে ওকে।”
শ্রেয়া বলে, “তুই চিন্তা করিস না, আমি ঠিক করে নেব খানে। তুই কখন আসবি?”
দেবায়ন, “এখানে এখন কাজ বাকি তারপরে আমি আসব। আর হ্যাঁ এক বার আমার মাকে জানিয়ে দিস যে পায়েল কে পাওয়া গেছে।”
ঋতুপর্ণা বেড়িয়ে যাবার আগে ছেলে গুলোর দিকে তাকিয়ে দেবায়ন আর রূপককে বলে, “এরা যেন কালকের সূর্য না দেখতে পারে সেই ব্যাবস্থা করবে।”
দেবায়ন বলে, “তুমি শুধু পায়েলকে একটু দেখো, প্লিস। আমরা ছাড়া ওর আর কেউ দেখার নেই মনে হয়।”
রুদ্র ওর কয়েক জন বন্ধুকে বলে অঙ্কনদের গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিতে। ধিমান থাকতে চাইলে দেবায়ন বলে যে গাড়িতে ওকে দরকার। একা ঋতুপর্ণা আর অঙ্কন হয়ত পায়েলকে সামলাতে পারবে না। পায়েলের নিস্বার দেহ, অঙ্কন কোলে তুলে নেয়। ধিমান বেড়িয়ে যাবার আগে, রাগের বশে বিনয়কে খান পাঁচেক সজোরে লাথি মেরে বেড়িয়ে পরে। দেবায়ন বলে, কোলকাতা পৌঁছে যেন রুদ্রের ফোনে একবার ফোন করে জানিয়ে দেয় ওদের সংবাদ। ধিমান মাথা নেড়ে জানিয়ে দেয় যে সব সংবাদ দিয়ে দেবে। পায়েল কে নিয়ে বেড়িয়ে যায় সবাই।
দেবায়ন অন্য ঘরে ঢোকে, একটা হ্যারিকেন ছাড়া আর কোন আলো নেই। বিনয় আর অগ্নিহোত্রীর মুখ হাত পা বাঁধা। রুদ্র রূপক আর বাকিরা, ছেলে দুটোকে বেঁধে বেশ মার মেরেছে। শুধু গোঙ্গানো ছাড়া আর কোন আওয়াজ বের হয় না ছেলে গুলোর মুখ থেকে। দুটো ছেলে দেবায়নের দিকে রোষ ভরা চাহনি নিয়ে দেখে।
ছেলে গুলোর দিকে তাকিয়ে দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “তোদের মধ্যে বিনয় কে আর অগ্নিহোত্রী কে?” রুদ্র দেখিয়ে দেয় বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে।
দেবায়ন, রূপককে বলে, “বিনয়ের মুখ খুলে দে। ওর সাথে আমার কথা আছে।”
রূপক, বিনয়ের মুখ খুলে দিতেই বিনয় চাপা স্বরে চেঁচিয়ে ওঠে, “শালা আমার গায়ে হাত তুলেছিস তুই। তোকে এইখানে পুঁতে ফেলব। তুই আমাকে চিনিস না।”
রুদ্র গর্জন করে বলে, “তুই বাঞ্চোত জাত শয়তান। তোকে সবাই চেনে।”
দেবায়ন তির্যক হেসে বলে, “সকালের সূর্য দেখতে পেলে তবে না আমাকে পুঁতবি।”
দেবায়ন নিজের মোবাইল ফোন রূপকের হাতে ধরিয়ে বলে, “ভিডিও করতে শুরু করে দে। ওদের কাছে আমার অনেক কিছু জানার আছে তারপরে আমি ওদের বিচার করব।”
রুদ্রকে বলে, “বাকিদের বাইরে অপেক্ষা করতে বল। এই কথা শুধু তুমি আমি আর রূপকের মাঝে থাকবে।”
রুদ্র বাকি ছেলেদের বাইরে অপেক্ষা করতে বলে দেয়। রুদ্রের বন্ধুরা ঘরের বাইরে চলে যায়। রূপক দেবায়নের পেছনে দাঁড়িয়ে মোবাইলে ভিডিও রেকর্ড করতে শুরু করে। দেবায়ন বিনয়ের চুলের মুঠি ধরে গালে একটা সপাটে চড় কষিয়ে দেয়। ঠোঁটের কষ ফেটে গিয়ে রক্ত বের হয়। বিনয় কিছু বলার আগেই আরো একটা চড় গালে কষায় দেবায়ন। দেবায়নের কঠিন হাতের চড় খেয়ে বিনয় বুঝতে পারে যে এই বারে সুন্দরবনের বাঘের কবলে পড়েছে।
বিনয় বলে, “বড্ড পাপ করে ফেলেছি। দয়া করে ছেড়ে দাও আমাদের। আমি সত্যি বলছি, কোনদিন পায়েলের দিকে তাকাবো না।”
রুদ্র অগ্নিহোত্রীর মাথার পেছনে সজোরে এক লাথি মেরে বিনয়কে বলে, “বোকাচোদা ছেলে, করার আগে ভাবতে পারিস নি?”
দেবায়ন বিনয়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে জিজ্ঞেস করে, “পায়েলকে এই ভাবে ধরে রাখার পেছনে কে?”
বিনয়, পাশে পরে থাকা অগ্নিহোত্রীর দিকে দেখিয়ে বলে, “আমি কিছু করিনি, আমি কিছু জানিনা। যা করার ওই করেছে পায়েলকে।”
গা জ্বলে ওঠে দেবায়নের। রুদ্র, মেঝেতে পরে থাকা অগ্নিহোত্রীকে বেশ কয়েকটা লাথি মেরে বলে, “মাদারচোদ আজকে তোর বাড়া কেটে তোকে খাওয়াব। একটা মেয়েকে এমন ভাবে ধরে রেখে কষ্ট দেওয়া বের করে দেব।”
দেবায়ন বলে, “সব কথা শুরু থেকে বল আমাকে। অগ্নিহোত্রী পায়েলের সাথে প্রেমের নাটক করেছিল কেন? পায়েলের বাবা কোথায়? পায়েলের মায়ের মৃত্যু কি করে হয়েছে? পায়েল এত দিন কোথায় ছিল? সব কথা বল। এমনিতেও তোরা আজকে মরবি, বলে মরলে তোদের ভালো। পায়েল কোলকাতা চলে গেছে। আমার এক বন্ধুর কাকা ক্রাইম ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর। তুই না বললেও, কি করে বলাতে হয় সব কিছু জানা আছে আমাদের কাছে।”
বিনয় কোন রকমে কাতর মিনতি করে বলে, “আমি বলছি, সব বলছি। আসলে, আমার আর অগ্নিহোত্রীর অনেকদিন থেকেই পায়েলের ওপরে নজর ছিল। গত গরমের ছুটিতে পায়েল আমাদের বাড়িতে আসে। পায়েল শয়তানি করে অগ্নিহোত্রীর সাথে মিশে আমাদের মাঝে ঝগড়া বাঁধাতে চেয়েছিল। কিন্তু আমার আর অগ্নিহোত্রীর প্লান অন্য ছিল। আমরা নাটক করলাম যে আমাদের মধ্যে মনমালিন্য হয়ছে। অগ্নিহোত্রী পায়েলকে খেলিয়ে উঠাতে চেয়েছিল। আমাদের মতলব ছিল যে একবার পায়েলকে এই খানে উঠিয়ে নিয়ে চলে আসব আর ধরে রাখব। অগ্নিহোত্রী পায়েলকে ভোগ করবে পারলে ওকে বিক্রি করে দেওয়া হবে কোথাও। আমার মতলব ছিল মামাকে ব্লাকমেল করে মামার কোটি টাকার বাড়ি নিজের নামে করে নেওয়া। কিন্তু বাধ সাধল কপাল। যেদিন পায়েলকে উঠিয়ে নিয়ে আসার কথা, সেদিন কি করে পায়েল আমাদের দেখে ফেলে আর অইখান থেকে চলে যায়। সবার সামনে আমাদের সাহস হল না পায়েলকে জোর করে গাড়িতে তোলার। ইতিমধ্যে দেখলাম একটা ছেলে ট্যাক্সিতে এসে পায়েলকে নিয়ে চলে গেল।”
রূপক আর দেবায়নের গা চিড়বিড় করে জ্বলতে শুরু করে দেয়। রুদ্র অগ্নিহোত্রীর চুলের মুঠি ধরে ঝাঁকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কোথায় বিক্রি করার মতলবে ছিলিস তোরা?”
রুদ্র, অগ্নিহোত্রীর মুখ খুলে দিতেই, অগ্নিহোত্রী কেঁদে দেয় হাউহাউ করে।
অগ্নিহোত্রী বলে, “আমি ওকে বিক্রি করতে চাইনি। আমি ওকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম। বিনয় সব মিথ্যে কথা বলছে।”
বিনয়, অগ্নিহোত্রীর দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে, “মাদারচোদ ছেলে এখন মিথ্যে বলছিস? এখন মনে হয় তোর অন্য কিছু মতলব ছিল পায়েলকে নিয়ে।”
অগ্নিহোত্রী আর বিনয়ের মাঝে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে যায়। দেবায়ন দুইজনের মাথা একসাথে ঠুকে দিয়ে গর্জন করে ওঠে, “চুপ শালা বোকাচোদা ছেলে। বিক্রি করেছিস কি করিস নি, সেটা পরের কথা।” বিনয়কে বলে, “তুই বাকি কথা বল।”
বিনয় বলে, “আমাদের প্লান ভন্ডুল হয়ে গেল। এর বেশ কয়েক মাস পরে একদিন মামা মাকে ফোন করে বলে যে পায়েল নাকি একটা ছেলেকে ভালোবাসে। যে ছেলেটাকে ভালোবাসে সে নাকি পায়েলের বান্ধবীর ভাই। সেই শুনে মা সঙ্গে সঙ্গে সেই রাতেই কোলকাতায় মামার বাড়িতে চলে গেল। মা প্রথমে পায়েলকে বুঝাতে চেষ্টা করে যে এই সব ছেলেদের সাথে মেলা মেশা করা খারাপ। পায়েল কোন কথা শুনতে চায় না, ও বাড়ি থেকে চলে যাবার কথা বলে। সেই কথা শুনে মামা পায়েলকে বেধরক মারে। মামী বাধা দিতে এলে মামা মামীকে খুব মারধোর করে। মা ও মামীর উপরে খুব তোলপাড় করে, মামীকে বলে যে মামীর জন্য পায়েল খারাপ হয়ে গেছে। মারধোর করার পরে, মামা পায়েলকে একতলায় মামার চেম্বারের পেছনে একটা ছোটো বাথরুমে বন্ধ করে দেয়। মা, মামাকে বুদ্ধি দেয় পায়েলের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে দিয়ে দিতে। আমি অনেক দিন আগেই মায়ের কান ভাঙ্গিয়ে রেখেছিলাম অগ্নিহোত্রীর কথা বলে। জানতাম একবার যদি অগ্নিহোত্রীর সাথে পায়েলের বিয়ে হয় তাহলে আমিও একটু সুখ পাবো, সেই সাথে কোটি টাকার বাড়ি পেয়ে যাবো।”
দেবায়ন দাঁত পিষে চুপচাপ শুনে যায় ওর কথাবার্তা। রূপক দেবায়নের পেছনে দাঁড়িয়ে সবকিছু মোবাইলে রেকর্ড করে। রুদ্র, অগ্নিহোত্রী আর বিনয়ের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে।
বিনয় বলে ওর কথা, “সেদিনের পর থেকে পায়েল নিচের বাথরুমে বন্দি হয়ে থাকে। মামা ওকে জোর করে, আর পায়েল জেদ ধরে বসে থাকে সেই অঙ্কন নামের ছেলেটার কাছে যাবে। মামা ওকে বাথরুম থেকে বের হতে দেয় না। ওই দিকে মামী কেঁদে কেঁদে সারা। শেষ পর্যন্ত থাকতে না পেরে একদিন মামাকে মারতে যায়। মামা বেগতিক দেখে মামীকে ঘুমের ইঞ্জেকশান দেয় বা ওইরকম কিছু একটার ইঞ্জেকশান দেয়। সেদিনের পর থেকে মামীকে কিছু একটা ইঞ্জেকশান দিয়ে নিস্তেজ করে রেখে দেয় মামা। বাড়িতে বাইরের কারুর প্রবেশ বন্ধ করে দেয়, বাড়ির পুরানো চাকরকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়। আমি মামাকে একদিন ফোন করে সব কথা জিজ্ঞেস করলাম, মামা আমাকে খুব ভালবাসত, মামা আমাকে সব কথা খুলে বলল। আমি মামাকে বুদ্ধি দিলাম, যে পায়েলকে যেন মামীর সামনে না আসতে দেওয়া হয়। আমি মামাকে বললাম যে এর মাঝে একদিন রাতে পায়েলকে নৈহাটি নিয়ে চলে আসব। কিন্তু এর মধ্যে একটা গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়লাম আমি, তাই আর সময় মতন কোলকাতা যাওয়া হল না। ওইদিকে অগ্নিহোত্রী আমাকে রোজ দিন পায়েলের কথা জিজ্ঞেস করত। আমি ওকে বলতাম যে পায়েল আর মামা এখন আমাদের হাতের পুতুল। যখন খুশি পায়েলকে নিয়ে আসা যায়। আমি জানতাম যে মামা ওকে বাথরুম থেকে কিছুতেই ছারবে না। একবার ছাড়া পেলে পায়েল পালিয়ে যাবে। মামা পায়েলের খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ করে দিল যাতে পায়েলের পালাবার মতন শক্তি না বাঁচে। ওইদিকে মামা রোজদিন মামীকে কোন ইঞ্জেকশান দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখে দিত।”
“কিছুদিন আগে, এক রাতে মামার ফোন। মা চমকে ওঠেন খবর শুনে। মামিমা মারা গেছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে মাকে নিয়ে মামাবাড়ি চলে গেলাম। মামা মাকে বললেন যে মামিমাকে রোজ দিন যে ওষুধ বা বিষ দিচ্ছিল সেই কারনে মামিমা মারা গেছেন। কোলকাতায় মামিমার দেহের শেষকৃত্য করতে হলে পুলিস কেস হয়ে যাবে, সবাই আমরা ফেসে যাবো। মা মামাকে বলল মামিমার দেহ নৈহাটি নিয়ে চলে আসতে। আমি মামাকে একদিকে ডেকে বললাম যে মামা যদি ওই বাড়ি আমার নামে করে দেয় তাহলে আমি সবকিছু ঠিক করে দেব। মামা আমাকে বাড়ির দলিল হাতে ধরিয়ে বলে যে আমি এই বাড়ি আমার হয়ে গেল। আমি, মা আর মামা, মামিমার মৃতদেহ সেই রাতে মামার গাড়িতে করে আমাদের বাড়িতে নিয়ে চলে এলাম। রাতের অন্ধকারে এই খানে বলা হল যে মামীর হার্ট এটাকে মৃত্যু হয়েছে। এইখানে মানুষকে বোঝানো সহজ, ওইখানে মারা গেলে তোরা পুলিস নিয়ে আসতিস সেটাও একটা ভয় ছিল মামার। তাই এইখানে মামীর শেষকৃত্য করা হয়। পায়েল এই ব্যাপারে কিছুই জানে না। পায়েল জানেই না যে ওর বাবা ওর মাকে ওষুধ দিয়ে মেরে ফেলেছে।”
বিনয়ের কথা শুনে দেবায়ন রাগে কাঁপতে শুরু করে দেয়। গর্জন করে ওঠে বিনয়ের দিকে, “পায়েলের বাবা এখন কোথায়?”
বিনয় বলে, “আমাদের বাড়িতে।”
দেবায়ন, “তার মানে এতদিন ধরে পায়েল ওই বাথরুমে বন্ধ ছিল। কেউ খেতে পড়তে দেয় নি। কি রকম মানুষ ওই ডাক্তার? ওই শালা তোদের বাড়ি চলে আসার পড়ে পায়েলের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেনি?”
বিনয়, “হ্যাঁ করেছিল। আমি বলেছি যে অগ্নিহোত্রী পায়েলকে নিয়ে দিঘা বেড়াতে গেছে। আসলে পায়েলকে ততদিন ওই বাড়িতেই আটকে রাখা হয়েছিল। দুই দিন আগে আমি আর অগ্নিহোত্রী রাতের অন্ধকারে, কোলকাতা গিয়ে পায়েলকে নিয়ে এইখানে রাখি। অগ্নিহোত্রীর প্লান ছিল বেশ কয়েক মাস ওকে রেপ করবে আর তারপরে একদিন ওকে বিক্রি করে দেবে।”
অগ্নিহোত্রী বলে, “বিনয় আমার নামে মিথ্যে বলছে। আমি কিছুই চাই নি ওর কাছ থেকে।”
রুদ্র, অগ্নিহোত্রীর চুলের মুঠি ধরে মেঝেতে মুখ ঘষতে ঘষতে জিজ্ঞেস করে, “শালা সত্যি কথা বল, না হলে এখুনি মেরে ফেলে দেব।”
রূপক রেগে গিয়ে মোবাইল ছেড়ে, ছুরি বসাতে যায় বিনয়ের গলায়। দেবায়ন বাধা দেয় রূপককে। রূপক কাঁপতে কাঁপতে গর্জে ওঠে, “এই দুটোকে মেরে ফেলা ভালো।”
দেবায়ন বলে, “দাঁড়া আমার কাজ এখন শেষ হয়নি।”
রুদ্র আর রূপক, দেবায়নের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তোর কি মতলব?”
দেবায়ন বড় এক শ্বাস নিয়ে বলে, “দাঁড়া, সময় হলেই জানতে পারবি। এবারে অগ্নিহোত্রীর কথা শুনতে হবে। ওর শুধু মাত্র পায়েলকে বিয়ে করার মতলবে ছিল না, অন্য কিছুর মতলব ছিল।”
অগ্নিহোত্রী শেষ পর্যন্ত সত্যি কথা বলে, “আসলে আমি পায়েলকে ভুলিয়ে বিয়ে করার মতলবে ছিলাম। বিনয়ের মুখে শুনেছিলাম ওদের বিশাল বাড়ি, সেই বাড়ির দাম প্রায় এক কোটির মতন। আমি বিয়ে করার পরে পায়েলকে বেশ কয়েক মাস ভোগ করতাম আর তারপরে বাড়ি পেয়ে গেলে পায়েলকে বিক্রি করার মতলবে ছিলাম। আমরা পায়েল কে এখানে এনে ওকে খাবার দাবার দিয়ে সুস্থ করে তারপরে একটু ভোগ করার মতলবে ছিলাম। কারন পায়েলের যা অবস্থা ছিল তাতে ওকে ভোগ করার মতন কিছু ছিল না, হয়ত মরেই যেত। ওকে এত তাড়াতাড়ি আমরা মারতে চাইনি।”
দেবায়ন ঘুরিয়ে এক ঘুসি মারে অগ্নিহোত্রীর মুখে। ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয় অগ্নিহোত্রীর মুখ থেকে। রুদ্র রাগে কাঁপতে কাঁপতে, অগ্নিহোত্রীর গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে গর্জে ওঠে, “অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছিস তুই। কালকের সূর্য দেখতে পাবি না, এটা আমি বলছি। তোকে মেরে ফেললে ভাববো যে পৃথিবী থেকে একটা পাপ কম হয়েছে।”
প্রচন্ড মার খেয়ে মেঝেতে পরে কুঁকড়ে যায় অগ্নিহোত্রী। দেবায়ন অগ্নিহোত্রী আর বিনয়কে বলে, “তোরা অনেক পাপ করেছিস। পায়েলকে অনেক কষ্ট দিয়েছিস এমন কি খুন করতে চেষ্টা করেছিস। তবে একজন আরও আছে যার সাজা পাওয়া উচিত। পায়েলের বাবা, ডক্টর কমলেশ সান্যাল।”
রূপক আর রুদ্র জিজ্ঞাসু চোখে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে। দেবায়ন বলে, “ওর বাবা, সুজাতা কাকিমাকে মেরেছে। পুলিস খুঁজে কোন প্রমান পাবে না কেননা তোরা কাকিমাকে পুড়িয়ে দিয়েছিস আর সব প্রমান শেষ করে দিয়েছিস।”
বিনয় মাথা নাড়িয়ে বলে, “হ্যাঁ। মামিমার ডেথ সারটিফিকেটে হার্ট এটাক লেখা।”
বিংশ পর্ব (#09)
দেবায়ন বলে, “পায়েলের বাবাকে মারতে হবে তোদের।”
রুদ্র আর রূপক হাঁ করে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “সেটা কি করে সম্ভব?”
দেবায়ন বলে, “সব সম্ভব হবে। তার আগে পায়েলের বাড়ির দলিল আমার চাই। পায়েলের ভবিষ্যৎ আমার চাই।”
বিনয়, “পায়েলের বাড়ির দলিল আমি নিয়ে আসছি এখুনি, আমাদের ছেড়ে দে। আমরা কথা দিচ্ছি কোনদিন পায়েল কেন, মামাবাড়ির মুখ দেখব না।”
দেবায়ন, “উঁহু, তোদের ছেড়ে দিলে পাপ হবে। সুজাতা কাকিমার আত্মা শান্তি পাবে না।”
রূপক গর্জে ওঠে, “তোদের ছেড়ে দেবার কোন প্রশ্ন ওঠে না। পায়েলকে যেমন ভাবে কষ্ট দিয়েছিস, তারপরে তোদের মরে যাওয়া উচিত।”
দেবায়ন, “বিনয় আমাদের কাছে বাঁধা থাকবে। অগ্নিহোত্রী ঢুকবে বিনয়ের বাড়িতে, আগে ওই দলিল এনে আমাকে দেবে, তারপরে পায়েলের বাবাকে খুন করবে অগ্নিহোত্রী।”
বিনয় আর অগ্নিহোত্রী হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে, “না খুন আমাদের দ্বারা হবে না।”
রূপক বিনয়কে এক লাথি মেরে বলে, “খুনের চেয়ে বড় পাপ, এমন ভাবে ধরে রেখে একজনকে কষ্ট দেওয়া। জ্যান্ত একটা মেয়েকে কষ্ট দিয়ে তার আত্মাকে মেরে ফেলা। তোরা পায়েলকে এক রকম মেরেই ফেলেছিলিস, ওই দিকে তোর মামা তোর মামীকে মেরে ফেলেছে। তোরা সবাই দোষী। দেবায়ন যা বলছে সেটা কর। এমনিতেও তোরা ধরা পড়বি, কেননা পায়েলকে দেখে পুলিস কেস হবে। পায়েল পুলিসকে সব বলে দেবে।”
অগ্নিহোত্রী বলে, “আচ্ছা যদি খুন করি ওর মামাকে তাহলে আমাদের ছেড়ে দেবে তোমরা।”
দেবায়ন হেসে বলে, “আমি ছেড়ে দেব।”
রূপক আর রুদ্র, রেগে যায় দেবায়নের ওপরে, “তুই কি বলছিস? এদের ছেড়ে কেন দেব? না মারলেও পুলিসের হাতে দেব।”
দেবায়ন, রূপক আর রুদ্রকে শান্ত করে বলে, “আগে আমার কাজ শেষ হোক তারপরে দেখছি।”
অগ্নিহোত্রীকে দেবায়ন জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে, তোর বাবা বেশ বড়োলোক। তার মানে তোদের বাড়িতে নগদ টাকা আছে?”
অগ্নিহোত্রী, “হ্যাঁ আছে, তোমাদের কত টাকা চাই বল, আমি দেব। এক লাখ, দুই লাখ পাঁচ লাখ? এই পুজোর মরশুমে কাপড়ের ব্যাবসা দারুন চলেছে। বাড়িতে পাঁচ লাখ টাকা ক্যাস পড়ে আছে, আমি বাবার দেরাজ খুলে সব টাকা চুরি করে আনতে পারি এখুনি। সব টাকা তোমাকে দিয়ে দেব যদি আমাদের ছেড়ে দাও।”
দেবায়ন হাসতে হাসতে বলে, “হ্যাঁ, আমার টাকা চাই। বিনয় যাবে তোর বাড়িতে টাকা চুরি করতে আর অগ্নিহোত্রী যাবে বিনয়ের বাড়িতে পায়েলের বাবাকে মারতে। তারপরে তোদের ছেড়ে দেব আমি। এবারে বল, কার বাড়িতে কি করে ঢুকতে হয়?”
অগ্নিহোত্রী বিনয়কে বুঝিয়ে বলে, “ওই দু’তলার আমার রুমের জানালার একটা শিক খুলে যায়। সেই শিক সরিয়ে আমার রুমে ঢুকে যাবি। তারপরে নিচে চলে যাবি সিঁড়ি বেয়ে। বাবার রুম দেখেছিস তুই, বাবার কোমরে দেরাজের চাবি থাকে একটা দড়িতে বাঁধা। বাবা এখন আফিং মেরে মরার মতন ঘুমাচ্ছে। আমার টেবিলে কাঁচি পেয়ে যাবি, সেই কাঁচি দিয়ে খুব সহজে ওই দড়ি কেটে চাবি নিয়ে নিবি। বাবার মাথার কাছে যে দেরাজ আছে, তার নিচের তাকে একটা সিন্দুক দেখতে পাবি। চাবির থোকায়, সব থেকে বড় চাবিটা ওই সিন্দুকের। ওর মধ্যে পেয়ে যাবি পাঁচ লাখ টাকা।”
বিনয় দেবায়নকে বলে, “ওই টাকা দিলে আমাদের ছেড়ে দেবে তো?”
দেবায়ন বলে, “আগে অগ্নিহোত্রী পায়েলের বাবাকে খুন করে আসুক তারপরে।”
অগ্নিহোত্রীকে বলে, “তুই আগে বিনয়ের বাড়িতে ঢুকে পায়েলের বাড়ির দলিল আমার হাতে এনে দিবি। তারপরে আবার ঢুকে পায়েলের বাবাকে খুন করে বেড়িয়ে আসবি। পায়েলের বাবাকে যে খুন করেছিস তার প্রমান স্বরুপ ওইর মৃতদেহের ছবি তুই তোর মোবাইলে তুলে আনবি। ছুরি মারিস না, তাতে চেঁচামেচি হবে তুই ধরা পড়ে যাবি। পায়েলের বাবার মুখের উপরে বালিস চাপা দিয়ে মারবি। আর সব ঘটনা মোবাইলে রেকর্ড করে নিয়ে আসবি।”
অগ্নিহোত্রী, “ঠিক আছে তাই হবে, কিন্তু আমাদের ছেড়ে দিতে হবে তারপরে।”
দেবায়ন বিনয়কে বলে, “আগে বল কি করে তোর বাড়িতে ঢোকা যায়? কোথায় পায়েলের বাড়ির দলিল? কোথায় পায়েলের বাবা ঘুমিয়ে আছে?”
বিনয় বলে, “মামা, নিচের ঘরে ধুমিয়ে। মামার ঘরের পাশেই আমার ঘর। দলিল আমার আলমারিতে রাখা, আলমারিতে কোন তালা দেওয়া নেই, সুতরাং দলিল আনতে কোন কষ্ট হবে না। মামা ঘরের দরজা ভেজান থাকে, সহজে খুলে যাবে। আমার বাড়িতে ঢুকতে হলে পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকতে হবে। পেছনের দরজায় শুধু খিল দেওয়া আছে, তালা মারা নেই। একটা তার দরজায় ঢুকিয়ে দিয়ে, একটু উপরের দিকে টান মারলে খিল খুলে যাবে আর অতি সহজে বাড়িতে ঢোকা যাবে।”
পরিকল্পনা মতন রুদ্র আর রূপক, বিনয় আর অগ্নিহোত্রীকে আবার বেঁধে ফেলে। রুদ্র ওর বন্ধুদের ঘরের ভেতরে ডেকে নিয়ে আসে। ওর বন্ধুরা রুদ্রকে জিজ্ঞেস করে কি ব্যাপার। রুদ্র সংক্ষেপে সব ঘটনা বলে, দেবায়নের পরিকল্পনার কথা বলে। রুদ্রের বন্ধুরা, ওদের ছেড়ে দেওয়ার কথা শুনে দেবায়নের ওপরে রেগে যায়। ওদের মধ্যে রুদ্রের এক বন্ধু, দেবাশিস, সে একটা খাঁড়া হাতে নিয়ে এসেছিল। তার রাগ অগ্নিহোত্রীর ওপরে বেশি ছিল। সে বলে, অগ্নিহোত্রীকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না, ওকে খুন করবে। দেবায়ন সবাইকে ঠাণ্ডা করে বলে ওর কাজ এখন শেষ হয়নি। পরে জানাবে ওর পরিকল্পনা।