28-09-2020, 10:33 PM
আদি বাইরে চলে যেতেই ঋতুপর্ণাকে তৃষা প্রশ্ন করল, “আপনার কি মুড সুইং হয়েছে এর মাঝে?”
ঋতুপর্ণা মাথা দোলায়, “হ্যাঁ, আর সেটা প্রচন্ড ভাবেই হয়েছে। আচমকা এসে যায়। এই সকালেই রান্না করে বের হলাম, দাঁড়িয়ে আছি হটাত করেই এসে গেল। মাথাটা প্রচন্ড ভাবে ঝিম ঝিম করতেই সারা শরীর জুড়ে কেমন এক জ্বালা করতে শুরু করে দিল আর তারপরে...” এতটুকু বলে থেমে যায়, কি ভাবে নিজের শরীরের কাম যাতনার কথা বাইরের কাউকে বলবে।
তৃষা ঋতুপর্ণার চোখের চাহনি দেখে বুঝতে পারে যে ওর মনে একটা দ্বন্দ চলছে, তাই আসস্থ করে বলে, “দেখুন ডাক্তারের কাছে অকপটে খুলে বললে কোন অসুবিধে হবে না তাতে আপনার এই মানসিক দ্বন্দের অবসান হবে। আমি এই টুকু বুঝতে পেরেছি যে আপনার ডিভোর্স হয়ে গেছে। আপনি যখনি আপনার এক্স হাজবেন্ড কে দেখেছিলেন তখনি আপনি খুব চিৎকার চেঁচামেচি করেছিলেন।”
ঋতুপর্ণা মাথা দোলায়, “সেটা বটেই কিন্তু সেটা ছাড়াও আরো কিছু হচ্ছে। আসলে কি জানেন ডিভোর্সের পরে কয়েক বছর আগে আমি একজনের সাথে জড়িয়ে পড়ি। মানে সম্পর্কটা বেশ কিছু শারীরিক হয়ত মানসিক চাহিদাও ছিল। এই এক্সিডেন্টের মূলে ওই লোকটা। আসলে সেইদিন প্রদীপ অর্থাৎ যার সাথে আমি জড়িয়ে পরেছিলাম সে আমাকে রেপ করতে চেষ্টা করে, আর দুই তিন বন্ধুদের ডেকে আমার সাথে সেক্স করতে চেষ্টা করে।” বলতে বলতে গলা ধরে আসে ঋতুপর্ণার। সারা পৃথিবীর পুরুষের ওপরে ভীষণ বিতৃষ্ণায় শরীর জ্বলে ওঠে। “ঘৃণা আর ধিক্কার নিয়ে ওর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলাম। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা এমন সময়ে আমার এক্সিডেন্ট হল।” তৃষা চুপচাপ ঋতুপর্ণার ঘটনা আর মানসিক অবস্থার কথা শুনে যায়। ঋতুপর্ণা বলে চলে, “কিন্তু গত কাল রাতে যখন আমি নিজের স্মৃতি শক্তি ফিরে পেলাম তারপরে বুকের মধ্যে এক অসীম ক্ষুধা আই মিন, ভীষণ যৌন তৃষ্ণা জেগে উঠল। যদিও পুরুষের প্রতি এক অনিহা ছিল মনের মধ্যে তাও সারা শরীর জুড়ে ভীষণ কামুক যৌন তৃষ্ণা অনুভব করি। বারেবারে মন চাইছিল, যেন কেউ আমাকে একটু জড়িয়ে ধরুক, ভালবাসুক তবে সেই মানুষ যেন আমার থেকে বয়সে ছোট হয়। কিছুতেই ভেবে পাচ্ছিলাম না কি করব। নিজের শরীরের বিবেক বুদ্ধির ওপরে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলি।” এত কিছু বলার পরে ঋতুপর্ণা চুপ করে গেল।
তৃষা একটু ভাবুক হয়ে উত্তর দেয়, “এটা অসধারন কিছু নয়, আসলে সব মানুষ যখন কোন এক ধরনের মানুষের কাছ থেকে প্রতারিত হয় তখন সে নিজের শান্তি নিজের ভালোবাসা ভিন্ন ধরনের মানুষের মধ্যে খোঁজে। অনেক সময়ে দেখা গেছে যে, নারী যখন পুরুষের কাছ থেকে প্রতারিত হয় তখন সে তাঁর যৌন ক্ষুধা অথবা ভালোবাসা অন্য নারীর মধ্যে খোঁজে। সোজা কথায় সে সমকামী অর্থাৎ লেসবিয়ান হয়ে যায়। কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে যেটা ঘটেছে সেটাও অনেকের মধ্যে দেখা যায়। নিজের থেকে বয়সে বড় কোন পুরুষের কাছ থেকে ধাক্কা খাওয়ার পরে অনেকেই নিজের দোসর নিজের থেকে কম বয়সী কারুর মধ্যে খোঁজে। তা আপনার মনে কি কোন পারটিকুলার পুরুষের ছবি আঁকা আছে।”
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে ঋতুপর্ণা। কি করে বলে যে এই শুন্য বুক মাঝেই মাঝেই ছেলেকে দেখে অথবা ছেলের হাতের পরশ অথবা ওর শরীরের পরশ পেয়ে রক্ত উথাল পাথাল করে ওঠে। ঋতুপর্ণা এই অনুভুতি গুলো লুকিয়ে গেল। এইরকম অনুভুতির কথা শুনলে সবাই ওকে নষ্টা ব্যাভিচারিনি বলেই ধরে নেবে। কেউই বুঝতে চেষ্টা করবে না ওর হৃদয়ের ব্যাথা, কেন ঋতুপর্ণা বারেবারে নিজের ছেলের প্রতি এতটাই আকৃষ্ট। ছেলের বাহুডোরে বাঁধা পরে বুকের মাঝে যে শান্তির বাতাস বয়ে যায় এটা কেউই বুঝবে না।
ঋতুপর্ণা মাথা নাড়ায়, “না সেই রকম কোন পুরুষের ছবি বুকে আঁকা নেই তবে চোখ বন্ধ করলেই আমি দেখতে পাই এক স্বাস্থ্যবান সুঠাম দেহী সুপুরুষ।” শেষের দিকে বলতে বলতে ঋতুপর্ণার নিজেরই লজ্জা পেয়ে যায়। মাথা নিচু করে নিচু গলায় বলে, “আমার থেকে বয়স কম আমাকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতন ভালবাসছে। অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন আশা করি। গত কাল রাতে এবং আজ সকালেও এই অবস্থা আমার ঘটেছে। শেষ পর্যন্ত নিজের হাত দিয়েই আত্মরতির পথ অবলম্বন করি। তা ছাড়া শরীরের এই ভীষণ জ্বালা নিবারন করার আর কোন উপায় ছিল না।”
তৃষার কপালে কয়েকটা ভাঁজ দেখা দেয়, কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে, “এখুনি আপনাকে উপদেশ দিতে পারিনা যে আবার আপনি নিজের সম বয়সী কারুর সাথেন মেলা মেশা করুন কারন আপনার অতীতে যা ঘটনা ঘটে গেছে তাতে পুরুষের প্রতি অনিহা জন্মানো অবশ্যাম্ভাবি। কিন্তু চিন্তার বিষয়, পুরুষের প্রতি অনিহা স্বত্তেও আপনার এই বরতমান মানসিকতা। পুরুষের ছোঁয়া চাই কিন্তু পুরুষের প্রতি আপনার চরম অনিহা।” খানিক খন গভীর ভাবনা চিন্তা করে বলে, “আচ্ছা আপনার ছেলের সাথে কি রুকম সম্পর্ক?”
প্রশ্নটা শুনে এক ধাক্কা খেল ঋতুপর্ণা, তৃষা কি বলতে চায়, সত্যি সত্যি কি নিজের ছেলের সাথে জড়িয়ে পড়ার উপদেশ দেবে নাকি? না না, এটা কখনই নয়। কপালে ভ্রূকুটির রেখা দেখা দেয় ঋতুপর্ণার, তৃষাকে প্রশ করে, “এর মানে আপনি কি বলতে চান? এক মায়ের সাথে এক ছেলের যা সম্পর্ক সেটাই আমাদের মাঝে।”
তৃষা ঋতুপর্ণার মনের গভীর ভাব আচ করতে পারল না, “না মানে অনেক সময়ে দেখা গেছে ডিভোর্সের পরে সন্তানেরা বাবা মাকে দোষারোপ করে। সেই ক্ষেত্রে অনেক সময়ে দেখা গেছে যে ছেলে মায়ের ওপরে রেগে যায়, মা ছেলের মধ্যে সম্পর্কে বিশাল এক চিড় দেখা দেয়। অনেক সময়ে ছেলে বাবার কাছে যেতে চায় আর যদি সেইখানে বাঁধা পায় তখনি বেপরোয়া হয়ে ওঠে, মাকে কথায় কথায় অপমান করে ইত্যাদি। সেই জন্যেই আমি জিজ্ঞেস করলাম মিসেস সান্যাল যে ছেলের সাথে আপনার কেমন সম্পর্ক।”
ঋতুপর্ণা হাঁফ ছেড়ে হেসে উত্তর দেয়, “না না, আদি আমার সব আমার চোখের মণি। সুভাষ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে ওর সাথে বরাবর এক বান্ধবীর মতন ব্যাবহার করে এসেছি।”
তৃষা বড় এক নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “তাহলে বেশ ভালো কথা। আপনার এই দ্বিধা দ্বন্দ সব কিছু আপনার ছেলেই অবসান ঘটাবে। আপনি ছেলের সাথে মা হিসাবে নয় এক বান্ধবীর মতন মিশে দেখুন। পুরুষের প্রতি যে অনিহা আপনার রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে গেছে সেটা অচিরে ঘুচে যাবে। আপনি আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠবেন।”
ঋতুপর্ণা লাজুক হেসে বলে, “ছেলের সাথে বন্ধুত্ত্বের কথা আর বলবেন না। আমার ছেলে বড্ড দুষ্টু। ছেলে নিজেই আমাকে নিজের বান্ধবী বানিয়ে মাঝে মাঝে এমন দুষ্টুমি শুরু করে দেয় যে আর কি বলি।”
তৃষা ঠিক ধরতে পারে না কি অর্থে ঋতুপর্ণা এই কথা গুলো বলছে তাই জিজ্ঞেস করে, “অর্থাৎ?”
ঋতুপর্ণা লাজুক হেসে বলে, “কি করে বলি আপনাকে। ছেলে আমাকে জিন্সে হাত কাটা টপে এই সব পোশাকে দেখতে চায়। মাঝে মাঝে এমন ভাব করে যেন আমি ওর খেলার পুতুল।”
হেসে ফেলে তৃষা, “আপনার ছেলে অনেক বড় হয়ে গেছে আর সেই তুলনায় আপনাকে দেখে কেউ বলবে না যে আপনি অত বড় এক ছেলের মা। হয়ত আপনার ছেলে ...”
ঋতুপর্ণা হেসে উত্তর দেয়, “জানি, আমিও বুঝতে পারি যে কিন্তু এটা কি কিছু অস্বাভাবিক নয়?”
তৃষা হেসে ফেলে, “আচ্ছা আপনি বলুন, এই যে এত নায়ক নায়িকা সিনেমা টিভিতে ছোট ছোট কাপড় চোপড় পরে নাচ গান করে। তাতে কি ভাবছেন তাদের ছেলে মেয়ে নিজের মায়ের ছবি দেখে না? ছেলেরাও মাঝে মাঝে মাকে বলে, ওই ড্রেসে তোমাকে দারুন দেখাচ্ছিল, ওই গানে তোমাকে ভীষণ সুন্দরী দেখাচ্ছিল। এটা স্বাভাবিক মিসেস সান্যাল, এতে অস্বাভাবিকের কিছু নেই। আপনি ছেলের সাথে মন খুলে এক বান্ধবীর মতন মেলা মেশা শুরু করুন দেখবেন অচিরে আপনি স্বাভাবিক হয়ে গেছেন। এই যে পুরুষের প্রতি আপনার প্রবল অনিহা, সেটাও কেটে যাবে। অচিরে দেখবেন নিজের বয়সের অথবা সমবয়সী কারুর সাথে মনের মিল ঘটে যাবে।”
ঋতুপর্ণা হেসে মাথা দুলিয়ে বলে, “আপনি বলছেন তাহলে যে ছেলের সাথে এক বান্ধবীর মতন করে মিশবো।”
তৃষা হেসে বলে, “হ্যাঁ। কারন আপনার আশে পাশে ওই একমাত্র পুরুষ। যদি আপনার ছেলে না হয়ে মেয়ে হত তাহলে অসুবিধেটা প্রবল হয়ে দেখা দিত। এইখানে আপনার ঠিক হওয়ার ওষুধ আপনার ঘরেই রয়েছে।” মুচকি হেসে ঋতুপর্ণাকে বলে, “একটু না হয় ছেলের মনের মতন সেজেই দেখুন। আপনাকে দেখে ওর মা বলে কখনই মনে হয় না বরঞ্চ বড় দিদি বলেই মনে হয়। আর সাজলে ত...” হেসে ফেলে তৃষা। ঋতুপর্ণাও হেসে ফেলে তৃষার কথা শুনে। তৃষা বলে, “এইবারে আপনার ওষুধ কমিয়ে দেবো।”
তৃষার উপদেশ এক ভিন্ন অর্থে কিন্তু ঋতুপর্ণার বুক যেন থই পেয়ে গেল। অধরা আকাঙ্খাটা অধরা রেখেই ভালোবাসার নির্যাসে যেটুকু ছেলের ছোঁয়াতে পাওয়া যায় ততটুকুতেই নিজের দেহ মন শিক্ত করে নেবে। কিন্তু সেই সাথে ভেবে নিল যে একটা দেয়াল একটা গন্ডি রেখেই ছেলের সাথে মেলামেশা করবে। ছেলের বান্ধবী হতে আপত্তি নেই কিন্তু মাঝে মাঝে আদি যেভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে অথবা যে ভাবে ওকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে গালে ঘাড়ে চুমু খায় তাতে ওর শুন্য হৃদয় গলে যায়, দেহের প্রতিটা স্নায়ু আকুলি বিকুলি করে ওঠে ওই পেশি বহুল শরীর মাঝে গলে পড়তে। এই তীব্র আকাঙ্খা ওকে দমন করেই ছেলের সাথে মেলামেশা করতে হবে, কিন্তু কতখন এই হৃদয়কে আটকে রাখবে সেটাই চিন্তার বিষয়। এইসব কথা ত বাইরের কাউকে বলা যায় না তাহলে সবাই ছি ছি করবে। নষ্টা, ব্যাভিচারিনি বলবে, কোন নারী কি নিজের ছেলের সাথে প্রেমের অলি গলিতে বিচরন করে। তবে বান্ধবী হতেই পারে। দেখা যাক, ডক্টরের এই উপদেশে হৃদয় মাঝে সমবয়সী কোন পুরুষের প্রতি আবার করে কোন অনুভুতি জাগে কি না। হৃদয় দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পরে, আবার তৃতীয় কাউকে এই মা ছেলের সংসারের মধ্যে টেনে আনতে নারাজ ঋতুপর্ণা, কিন্তু হৃদয়ের এই তীব্র আকাঙ্খা শরীরের এই ভীষণ খিধে এই সব কি করে মেটান যায়। এটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায় ঋতুপর্ণার কাছে।
তৃষাকে জিজ্ঞেস করে ঋতুপর্ণা, “কিন্তু ম্যাডাম, আমি যে শরীর মন থেকে কিছুতেই তৃতীয় কোন ব্যাক্তিকে আর মেনে নিতে পারব না। এমনিতেই আমার ছেলে এই প্রদীপকে ভালো চোখে দেখতে পারত না তারপরে আবার অন্য কাউকে আমাদের জীবনের মাঝে টেনে আনা...” জোরে জোরে মাথা নাড়ায় ঋতুপর্ণা, “এটা সম্ভব হবে না ম্যাডাম।”
তৃষা ভাবনায় পরে যায়। ঋতুপর্ণার দিকে এক গেলাস জল বাড়িয়ে দিয়ে বলে, “মিসেস সান্যাল একটু জল খেয়ে শান্ত হন।”
বুকের মধ্যে ভীষণ জ্বালা ধরা শুরু করে দিয়েছে ঋতুপর্ণার। আবার সেই এক পুরুষের ছোঁয়া, এই পুরুষ জাতি শুধু মাত্র শরীর বোঝে নারীর মন একদম বোঝে না। সুভাষকে মন প্রান দিয়ে ভালবেসেছিল, কিন্তু তাঁর প্রতিদানে সুভাষ কি দিল, প্রতারনা। ভালোবাসা ওর থাকুক, শরীরের চাহিদা মেটাতে যদি সুভাষ ওকে জানিয়ে অন্য কারুর সাথে এক বিছানায় রাত কাটাত তাহলে হয়ত ঋতুপর্ণা ক্ষমা করে দিতে পারত। কিন্তু না, ওর বুক ভেঙ্গে দিয়ে এক কচি মডেলের সাথে সেক্স করেছিল ওর বিছানায়। কেন হোটেল ছিল না, কেন সুভাষ ওর বিছানা ওর হৃদয় কেই ভেঙ্গে চুরমার করে দিল। বড় আঘাত পেয়েছিল ঋতুপর্ণা সেইদিন। এই আঘাত কাটিয়ে অনেক সঞ্জত হয়েই দিন যাপন করেছিল। আবার সেই গতে বাঁধা জীবনে ফিরে আসতে চেয়েছিল, চেয়েছিল এক পুরুষের সানিধ্য, কিন্তু তাতেও বাধ সাদে ওর নিয়তি। আদিকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে হয়ত প্রদীপকে হয়ত বিয়ে করত, কিন্তু কি হল ফল।
তৃষা ঋতুপর্ণার চেহারা দিকে তাকিয়ে অনায়াসে বুঝতে পারে যে এই নারী ভীষণ ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। তৃষা খানিক ভেবে চিন্তে ঋতুপর্ণাকে বলে, “আচ্ছা, এখুনি আপনাকে কারুর সাথে মেলামেশা করতে পরামর্শ দিচ্ছি না। শুধু এইটুকু পরামর্শ দিচ্ছি যে আপনি আপনার ছেলের সাথেই মেলা মেশা করুন। কারন আপনার এখন যে রকম মানসিক অবস্থা তাতে বাইরের কোন পুরুষ দেখলে আপানার মনে বিতৃষ্ণা জাগবেই। আর সেটা কাটাতেই এই পরামর্শ। দেখুন আপনি নিশ্চয় নিজের ছেলের প্রতি অনিহা দেখাতে পারবেন না।”
একদম নয়, ওর ছেলে আদি ওর জীবনের সব। বুকের পাঁজর কেটে হোস্টেলে পড়তে পাঠিয়েছিল। অতীতের সব কথা এক এক করে চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ছোট বেলায় কিছুতেই সুভাষকে ওর কাছে আসতে দিত না। হোস্টেল থেকে বাড়িতে এলে সব সময়ে মায়ের পায়ের ধারে ঘুর ঘুর করত। বড় হয়েও যখন ফিরে এলো তখন সেই ছোট বেলার মতন ওর কাছে কাছেই ঘুর ঘুর করত। সুভাষের অনুপস্থিতি নিজের বুক ভরা ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছিল। সেই ছেলের প্রতি কি ভাবে অনিহা জন্মাবে এক মায়ের। এটা কি কখন সম্ভব নাকি?
ঋতুপর্ণা অবাক হয়ে বলে, “এটা কি বলছেন, নিজের ছেলের প্রতি কখন কোন মায়ের অনিহা জন্মায় নাকি।”
তৃষা হেসে উত্তর দেয়, “আমিও ত সেটাই আপনাকে বলছি। ছেলেকে একটু বন্ধুর চোখে দেখুন একটু পুত্র সন্তান স্নেহে দেখুন। ধিরে ধিরে আপনার মনের গভীরে যে বিষ জমে আছে সব কিছু এক সময়ে কেটে যাবে।”
ঋতুপর্ণা ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, “আর আমার দেহে যে এই হটাত হটাত করে ভীষণ যৌন তৃষ্ণা জেগে ওঠে সেই মাননিকতার কি হবে?”
তৃষা হাসে, “সেই গুলো দেখবেন আপনা থেকেই কমে যাবে।” তৃষা উত্তর টা স্বাভাবিক ভাবেই দেয়, কারন কোন মায়ের সাথে নিজের পুত্র সন্তানের মধ্যে গভীর অপার প্রেম জাগতে পারে না। মায়ের সাথে ছেলের সম্পর্ক সব সময়ে স্নেহ মায়া মমতা শাসন বাঁধন এই সবের মধ্যেই সীমিত থাকে।
গভীর এক শ্বাস ফেলে ঋতুপর্ণা। খানিক খন জানালার বাইরে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “বেশ তাহলে আপনার পরামর্শ অনুযায়ী চলতে চেষ্টা করব।”
তৃষা হেসে উত্তর দেয়, “করে দেখুন, ধিরে ধিরে সব দ্বিধা দ্বন্দ কেটে যাবে। খুব তাড়াতাড়ি আপনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন।”
ঋতুপর্ণা একটু হেসে উঠে পরে, “তাহলে এইবারে আসি।”
তৃষা এগিয়ে গিয়ে গালে গাল ঠেকিয়ে অভিবাদন জানিয়ে বলে, “কোন অসুবিধে হলে আমাকে ফোন করবেন। আর হ্যাঁ, আপনি এখন ভীষণ সুন্দরী।” বলেই একটু চোখ টিপে হেসে বলে, “সামনে পুজো, পুজোর শপিং করুন, বাইরে যান, নিজেকে সাজান, দেখবেন দেহ আর মন দুটোই চনমনে থাকবে। আর আপনি ত কলেজে নাচ শেখান তাই না?” ঋতুপর্ণা মাথা দোলায়, হ্যাঁ। “তাহলে ত কথাই নেই, তাই আপনার বডি এত ফিট।”
ঋতুপর্ণা মাথা দোলায়, “হ্যাঁ, আর সেটা প্রচন্ড ভাবেই হয়েছে। আচমকা এসে যায়। এই সকালেই রান্না করে বের হলাম, দাঁড়িয়ে আছি হটাত করেই এসে গেল। মাথাটা প্রচন্ড ভাবে ঝিম ঝিম করতেই সারা শরীর জুড়ে কেমন এক জ্বালা করতে শুরু করে দিল আর তারপরে...” এতটুকু বলে থেমে যায়, কি ভাবে নিজের শরীরের কাম যাতনার কথা বাইরের কাউকে বলবে।
তৃষা ঋতুপর্ণার চোখের চাহনি দেখে বুঝতে পারে যে ওর মনে একটা দ্বন্দ চলছে, তাই আসস্থ করে বলে, “দেখুন ডাক্তারের কাছে অকপটে খুলে বললে কোন অসুবিধে হবে না তাতে আপনার এই মানসিক দ্বন্দের অবসান হবে। আমি এই টুকু বুঝতে পেরেছি যে আপনার ডিভোর্স হয়ে গেছে। আপনি যখনি আপনার এক্স হাজবেন্ড কে দেখেছিলেন তখনি আপনি খুব চিৎকার চেঁচামেচি করেছিলেন।”
ঋতুপর্ণা মাথা দোলায়, “সেটা বটেই কিন্তু সেটা ছাড়াও আরো কিছু হচ্ছে। আসলে কি জানেন ডিভোর্সের পরে কয়েক বছর আগে আমি একজনের সাথে জড়িয়ে পড়ি। মানে সম্পর্কটা বেশ কিছু শারীরিক হয়ত মানসিক চাহিদাও ছিল। এই এক্সিডেন্টের মূলে ওই লোকটা। আসলে সেইদিন প্রদীপ অর্থাৎ যার সাথে আমি জড়িয়ে পরেছিলাম সে আমাকে রেপ করতে চেষ্টা করে, আর দুই তিন বন্ধুদের ডেকে আমার সাথে সেক্স করতে চেষ্টা করে।” বলতে বলতে গলা ধরে আসে ঋতুপর্ণার। সারা পৃথিবীর পুরুষের ওপরে ভীষণ বিতৃষ্ণায় শরীর জ্বলে ওঠে। “ঘৃণা আর ধিক্কার নিয়ে ওর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলাম। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা এমন সময়ে আমার এক্সিডেন্ট হল।” তৃষা চুপচাপ ঋতুপর্ণার ঘটনা আর মানসিক অবস্থার কথা শুনে যায়। ঋতুপর্ণা বলে চলে, “কিন্তু গত কাল রাতে যখন আমি নিজের স্মৃতি শক্তি ফিরে পেলাম তারপরে বুকের মধ্যে এক অসীম ক্ষুধা আই মিন, ভীষণ যৌন তৃষ্ণা জেগে উঠল। যদিও পুরুষের প্রতি এক অনিহা ছিল মনের মধ্যে তাও সারা শরীর জুড়ে ভীষণ কামুক যৌন তৃষ্ণা অনুভব করি। বারেবারে মন চাইছিল, যেন কেউ আমাকে একটু জড়িয়ে ধরুক, ভালবাসুক তবে সেই মানুষ যেন আমার থেকে বয়সে ছোট হয়। কিছুতেই ভেবে পাচ্ছিলাম না কি করব। নিজের শরীরের বিবেক বুদ্ধির ওপরে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলি।” এত কিছু বলার পরে ঋতুপর্ণা চুপ করে গেল।
তৃষা একটু ভাবুক হয়ে উত্তর দেয়, “এটা অসধারন কিছু নয়, আসলে সব মানুষ যখন কোন এক ধরনের মানুষের কাছ থেকে প্রতারিত হয় তখন সে নিজের শান্তি নিজের ভালোবাসা ভিন্ন ধরনের মানুষের মধ্যে খোঁজে। অনেক সময়ে দেখা গেছে যে, নারী যখন পুরুষের কাছ থেকে প্রতারিত হয় তখন সে তাঁর যৌন ক্ষুধা অথবা ভালোবাসা অন্য নারীর মধ্যে খোঁজে। সোজা কথায় সে সমকামী অর্থাৎ লেসবিয়ান হয়ে যায়। কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে যেটা ঘটেছে সেটাও অনেকের মধ্যে দেখা যায়। নিজের থেকে বয়সে বড় কোন পুরুষের কাছ থেকে ধাক্কা খাওয়ার পরে অনেকেই নিজের দোসর নিজের থেকে কম বয়সী কারুর মধ্যে খোঁজে। তা আপনার মনে কি কোন পারটিকুলার পুরুষের ছবি আঁকা আছে।”
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে ঋতুপর্ণা। কি করে বলে যে এই শুন্য বুক মাঝেই মাঝেই ছেলেকে দেখে অথবা ছেলের হাতের পরশ অথবা ওর শরীরের পরশ পেয়ে রক্ত উথাল পাথাল করে ওঠে। ঋতুপর্ণা এই অনুভুতি গুলো লুকিয়ে গেল। এইরকম অনুভুতির কথা শুনলে সবাই ওকে নষ্টা ব্যাভিচারিনি বলেই ধরে নেবে। কেউই বুঝতে চেষ্টা করবে না ওর হৃদয়ের ব্যাথা, কেন ঋতুপর্ণা বারেবারে নিজের ছেলের প্রতি এতটাই আকৃষ্ট। ছেলের বাহুডোরে বাঁধা পরে বুকের মাঝে যে শান্তির বাতাস বয়ে যায় এটা কেউই বুঝবে না।
ঋতুপর্ণা মাথা নাড়ায়, “না সেই রকম কোন পুরুষের ছবি বুকে আঁকা নেই তবে চোখ বন্ধ করলেই আমি দেখতে পাই এক স্বাস্থ্যবান সুঠাম দেহী সুপুরুষ।” শেষের দিকে বলতে বলতে ঋতুপর্ণার নিজেরই লজ্জা পেয়ে যায়। মাথা নিচু করে নিচু গলায় বলে, “আমার থেকে বয়স কম আমাকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতন ভালবাসছে। অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন আশা করি। গত কাল রাতে এবং আজ সকালেও এই অবস্থা আমার ঘটেছে। শেষ পর্যন্ত নিজের হাত দিয়েই আত্মরতির পথ অবলম্বন করি। তা ছাড়া শরীরের এই ভীষণ জ্বালা নিবারন করার আর কোন উপায় ছিল না।”
তৃষার কপালে কয়েকটা ভাঁজ দেখা দেয়, কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলে, “এখুনি আপনাকে উপদেশ দিতে পারিনা যে আবার আপনি নিজের সম বয়সী কারুর সাথেন মেলা মেশা করুন কারন আপনার অতীতে যা ঘটনা ঘটে গেছে তাতে পুরুষের প্রতি অনিহা জন্মানো অবশ্যাম্ভাবি। কিন্তু চিন্তার বিষয়, পুরুষের প্রতি অনিহা স্বত্তেও আপনার এই বরতমান মানসিকতা। পুরুষের ছোঁয়া চাই কিন্তু পুরুষের প্রতি আপনার চরম অনিহা।” খানিক খন গভীর ভাবনা চিন্তা করে বলে, “আচ্ছা আপনার ছেলের সাথে কি রুকম সম্পর্ক?”
প্রশ্নটা শুনে এক ধাক্কা খেল ঋতুপর্ণা, তৃষা কি বলতে চায়, সত্যি সত্যি কি নিজের ছেলের সাথে জড়িয়ে পড়ার উপদেশ দেবে নাকি? না না, এটা কখনই নয়। কপালে ভ্রূকুটির রেখা দেখা দেয় ঋতুপর্ণার, তৃষাকে প্রশ করে, “এর মানে আপনি কি বলতে চান? এক মায়ের সাথে এক ছেলের যা সম্পর্ক সেটাই আমাদের মাঝে।”
তৃষা ঋতুপর্ণার মনের গভীর ভাব আচ করতে পারল না, “না মানে অনেক সময়ে দেখা গেছে ডিভোর্সের পরে সন্তানেরা বাবা মাকে দোষারোপ করে। সেই ক্ষেত্রে অনেক সময়ে দেখা গেছে যে ছেলে মায়ের ওপরে রেগে যায়, মা ছেলের মধ্যে সম্পর্কে বিশাল এক চিড় দেখা দেয়। অনেক সময়ে ছেলে বাবার কাছে যেতে চায় আর যদি সেইখানে বাঁধা পায় তখনি বেপরোয়া হয়ে ওঠে, মাকে কথায় কথায় অপমান করে ইত্যাদি। সেই জন্যেই আমি জিজ্ঞেস করলাম মিসেস সান্যাল যে ছেলের সাথে আপনার কেমন সম্পর্ক।”
ঋতুপর্ণা হাঁফ ছেড়ে হেসে উত্তর দেয়, “না না, আদি আমার সব আমার চোখের মণি। সুভাষ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর থেকে ওর সাথে বরাবর এক বান্ধবীর মতন ব্যাবহার করে এসেছি।”
তৃষা বড় এক নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, “তাহলে বেশ ভালো কথা। আপনার এই দ্বিধা দ্বন্দ সব কিছু আপনার ছেলেই অবসান ঘটাবে। আপনি ছেলের সাথে মা হিসাবে নয় এক বান্ধবীর মতন মিশে দেখুন। পুরুষের প্রতি যে অনিহা আপনার রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে গেছে সেটা অচিরে ঘুচে যাবে। আপনি আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠবেন।”
ঋতুপর্ণা লাজুক হেসে বলে, “ছেলের সাথে বন্ধুত্ত্বের কথা আর বলবেন না। আমার ছেলে বড্ড দুষ্টু। ছেলে নিজেই আমাকে নিজের বান্ধবী বানিয়ে মাঝে মাঝে এমন দুষ্টুমি শুরু করে দেয় যে আর কি বলি।”
তৃষা ঠিক ধরতে পারে না কি অর্থে ঋতুপর্ণা এই কথা গুলো বলছে তাই জিজ্ঞেস করে, “অর্থাৎ?”
ঋতুপর্ণা লাজুক হেসে বলে, “কি করে বলি আপনাকে। ছেলে আমাকে জিন্সে হাত কাটা টপে এই সব পোশাকে দেখতে চায়। মাঝে মাঝে এমন ভাব করে যেন আমি ওর খেলার পুতুল।”
হেসে ফেলে তৃষা, “আপনার ছেলে অনেক বড় হয়ে গেছে আর সেই তুলনায় আপনাকে দেখে কেউ বলবে না যে আপনি অত বড় এক ছেলের মা। হয়ত আপনার ছেলে ...”
ঋতুপর্ণা হেসে উত্তর দেয়, “জানি, আমিও বুঝতে পারি যে কিন্তু এটা কি কিছু অস্বাভাবিক নয়?”
তৃষা হেসে ফেলে, “আচ্ছা আপনি বলুন, এই যে এত নায়ক নায়িকা সিনেমা টিভিতে ছোট ছোট কাপড় চোপড় পরে নাচ গান করে। তাতে কি ভাবছেন তাদের ছেলে মেয়ে নিজের মায়ের ছবি দেখে না? ছেলেরাও মাঝে মাঝে মাকে বলে, ওই ড্রেসে তোমাকে দারুন দেখাচ্ছিল, ওই গানে তোমাকে ভীষণ সুন্দরী দেখাচ্ছিল। এটা স্বাভাবিক মিসেস সান্যাল, এতে অস্বাভাবিকের কিছু নেই। আপনি ছেলের সাথে মন খুলে এক বান্ধবীর মতন মেলা মেশা শুরু করুন দেখবেন অচিরে আপনি স্বাভাবিক হয়ে গেছেন। এই যে পুরুষের প্রতি আপনার প্রবল অনিহা, সেটাও কেটে যাবে। অচিরে দেখবেন নিজের বয়সের অথবা সমবয়সী কারুর সাথে মনের মিল ঘটে যাবে।”
ঋতুপর্ণা হেসে মাথা দুলিয়ে বলে, “আপনি বলছেন তাহলে যে ছেলের সাথে এক বান্ধবীর মতন করে মিশবো।”
তৃষা হেসে বলে, “হ্যাঁ। কারন আপনার আশে পাশে ওই একমাত্র পুরুষ। যদি আপনার ছেলে না হয়ে মেয়ে হত তাহলে অসুবিধেটা প্রবল হয়ে দেখা দিত। এইখানে আপনার ঠিক হওয়ার ওষুধ আপনার ঘরেই রয়েছে।” মুচকি হেসে ঋতুপর্ণাকে বলে, “একটু না হয় ছেলের মনের মতন সেজেই দেখুন। আপনাকে দেখে ওর মা বলে কখনই মনে হয় না বরঞ্চ বড় দিদি বলেই মনে হয়। আর সাজলে ত...” হেসে ফেলে তৃষা। ঋতুপর্ণাও হেসে ফেলে তৃষার কথা শুনে। তৃষা বলে, “এইবারে আপনার ওষুধ কমিয়ে দেবো।”
তৃষার উপদেশ এক ভিন্ন অর্থে কিন্তু ঋতুপর্ণার বুক যেন থই পেয়ে গেল। অধরা আকাঙ্খাটা অধরা রেখেই ভালোবাসার নির্যাসে যেটুকু ছেলের ছোঁয়াতে পাওয়া যায় ততটুকুতেই নিজের দেহ মন শিক্ত করে নেবে। কিন্তু সেই সাথে ভেবে নিল যে একটা দেয়াল একটা গন্ডি রেখেই ছেলের সাথে মেলামেশা করবে। ছেলের বান্ধবী হতে আপত্তি নেই কিন্তু মাঝে মাঝে আদি যেভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে অথবা যে ভাবে ওকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে গালে ঘাড়ে চুমু খায় তাতে ওর শুন্য হৃদয় গলে যায়, দেহের প্রতিটা স্নায়ু আকুলি বিকুলি করে ওঠে ওই পেশি বহুল শরীর মাঝে গলে পড়তে। এই তীব্র আকাঙ্খা ওকে দমন করেই ছেলের সাথে মেলামেশা করতে হবে, কিন্তু কতখন এই হৃদয়কে আটকে রাখবে সেটাই চিন্তার বিষয়। এইসব কথা ত বাইরের কাউকে বলা যায় না তাহলে সবাই ছি ছি করবে। নষ্টা, ব্যাভিচারিনি বলবে, কোন নারী কি নিজের ছেলের সাথে প্রেমের অলি গলিতে বিচরন করে। তবে বান্ধবী হতেই পারে। দেখা যাক, ডক্টরের এই উপদেশে হৃদয় মাঝে সমবয়সী কোন পুরুষের প্রতি আবার করে কোন অনুভুতি জাগে কি না। হৃদয় দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পরে, আবার তৃতীয় কাউকে এই মা ছেলের সংসারের মধ্যে টেনে আনতে নারাজ ঋতুপর্ণা, কিন্তু হৃদয়ের এই তীব্র আকাঙ্খা শরীরের এই ভীষণ খিধে এই সব কি করে মেটান যায়। এটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায় ঋতুপর্ণার কাছে।
তৃষাকে জিজ্ঞেস করে ঋতুপর্ণা, “কিন্তু ম্যাডাম, আমি যে শরীর মন থেকে কিছুতেই তৃতীয় কোন ব্যাক্তিকে আর মেনে নিতে পারব না। এমনিতেই আমার ছেলে এই প্রদীপকে ভালো চোখে দেখতে পারত না তারপরে আবার অন্য কাউকে আমাদের জীবনের মাঝে টেনে আনা...” জোরে জোরে মাথা নাড়ায় ঋতুপর্ণা, “এটা সম্ভব হবে না ম্যাডাম।”
তৃষা ভাবনায় পরে যায়। ঋতুপর্ণার দিকে এক গেলাস জল বাড়িয়ে দিয়ে বলে, “মিসেস সান্যাল একটু জল খেয়ে শান্ত হন।”
বুকের মধ্যে ভীষণ জ্বালা ধরা শুরু করে দিয়েছে ঋতুপর্ণার। আবার সেই এক পুরুষের ছোঁয়া, এই পুরুষ জাতি শুধু মাত্র শরীর বোঝে নারীর মন একদম বোঝে না। সুভাষকে মন প্রান দিয়ে ভালবেসেছিল, কিন্তু তাঁর প্রতিদানে সুভাষ কি দিল, প্রতারনা। ভালোবাসা ওর থাকুক, শরীরের চাহিদা মেটাতে যদি সুভাষ ওকে জানিয়ে অন্য কারুর সাথে এক বিছানায় রাত কাটাত তাহলে হয়ত ঋতুপর্ণা ক্ষমা করে দিতে পারত। কিন্তু না, ওর বুক ভেঙ্গে দিয়ে এক কচি মডেলের সাথে সেক্স করেছিল ওর বিছানায়। কেন হোটেল ছিল না, কেন সুভাষ ওর বিছানা ওর হৃদয় কেই ভেঙ্গে চুরমার করে দিল। বড় আঘাত পেয়েছিল ঋতুপর্ণা সেইদিন। এই আঘাত কাটিয়ে অনেক সঞ্জত হয়েই দিন যাপন করেছিল। আবার সেই গতে বাঁধা জীবনে ফিরে আসতে চেয়েছিল, চেয়েছিল এক পুরুষের সানিধ্য, কিন্তু তাতেও বাধ সাদে ওর নিয়তি। আদিকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে হয়ত প্রদীপকে হয়ত বিয়ে করত, কিন্তু কি হল ফল।
তৃষা ঋতুপর্ণার চেহারা দিকে তাকিয়ে অনায়াসে বুঝতে পারে যে এই নারী ভীষণ ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। তৃষা খানিক ভেবে চিন্তে ঋতুপর্ণাকে বলে, “আচ্ছা, এখুনি আপনাকে কারুর সাথে মেলামেশা করতে পরামর্শ দিচ্ছি না। শুধু এইটুকু পরামর্শ দিচ্ছি যে আপনি আপনার ছেলের সাথেই মেলা মেশা করুন। কারন আপনার এখন যে রকম মানসিক অবস্থা তাতে বাইরের কোন পুরুষ দেখলে আপানার মনে বিতৃষ্ণা জাগবেই। আর সেটা কাটাতেই এই পরামর্শ। দেখুন আপনি নিশ্চয় নিজের ছেলের প্রতি অনিহা দেখাতে পারবেন না।”
একদম নয়, ওর ছেলে আদি ওর জীবনের সব। বুকের পাঁজর কেটে হোস্টেলে পড়তে পাঠিয়েছিল। অতীতের সব কথা এক এক করে চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ছোট বেলায় কিছুতেই সুভাষকে ওর কাছে আসতে দিত না। হোস্টেল থেকে বাড়িতে এলে সব সময়ে মায়ের পায়ের ধারে ঘুর ঘুর করত। বড় হয়েও যখন ফিরে এলো তখন সেই ছোট বেলার মতন ওর কাছে কাছেই ঘুর ঘুর করত। সুভাষের অনুপস্থিতি নিজের বুক ভরা ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছিল। সেই ছেলের প্রতি কি ভাবে অনিহা জন্মাবে এক মায়ের। এটা কি কখন সম্ভব নাকি?
ঋতুপর্ণা অবাক হয়ে বলে, “এটা কি বলছেন, নিজের ছেলের প্রতি কখন কোন মায়ের অনিহা জন্মায় নাকি।”
তৃষা হেসে উত্তর দেয়, “আমিও ত সেটাই আপনাকে বলছি। ছেলেকে একটু বন্ধুর চোখে দেখুন একটু পুত্র সন্তান স্নেহে দেখুন। ধিরে ধিরে আপনার মনের গভীরে যে বিষ জমে আছে সব কিছু এক সময়ে কেটে যাবে।”
ঋতুপর্ণা ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, “আর আমার দেহে যে এই হটাত হটাত করে ভীষণ যৌন তৃষ্ণা জেগে ওঠে সেই মাননিকতার কি হবে?”
তৃষা হাসে, “সেই গুলো দেখবেন আপনা থেকেই কমে যাবে।” তৃষা উত্তর টা স্বাভাবিক ভাবেই দেয়, কারন কোন মায়ের সাথে নিজের পুত্র সন্তানের মধ্যে গভীর অপার প্রেম জাগতে পারে না। মায়ের সাথে ছেলের সম্পর্ক সব সময়ে স্নেহ মায়া মমতা শাসন বাঁধন এই সবের মধ্যেই সীমিত থাকে।
গভীর এক শ্বাস ফেলে ঋতুপর্ণা। খানিক খন জানালার বাইরে তাকিয়ে উত্তর দেয়, “বেশ তাহলে আপনার পরামর্শ অনুযায়ী চলতে চেষ্টা করব।”
তৃষা হেসে উত্তর দেয়, “করে দেখুন, ধিরে ধিরে সব দ্বিধা দ্বন্দ কেটে যাবে। খুব তাড়াতাড়ি আপনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবেন।”
ঋতুপর্ণা একটু হেসে উঠে পরে, “তাহলে এইবারে আসি।”
তৃষা এগিয়ে গিয়ে গালে গাল ঠেকিয়ে অভিবাদন জানিয়ে বলে, “কোন অসুবিধে হলে আমাকে ফোন করবেন। আর হ্যাঁ, আপনি এখন ভীষণ সুন্দরী।” বলেই একটু চোখ টিপে হেসে বলে, “সামনে পুজো, পুজোর শপিং করুন, বাইরে যান, নিজেকে সাজান, দেখবেন দেহ আর মন দুটোই চনমনে থাকবে। আর আপনি ত কলেজে নাচ শেখান তাই না?” ঋতুপর্ণা মাথা দোলায়, হ্যাঁ। “তাহলে ত কথাই নেই, তাই আপনার বডি এত ফিট।”