28-09-2020, 10:31 PM
কিছু পরে ঋতুপর্ণা রুম ছেড়ে বেড়িয়ে এলো। মাকে দেখে আদির মাথা চুলকে বড় বড় চোখ করে নিস্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। গায়ে গোলাপি রঙের চাপা কামিজ, মায়ের দেহের প্রতিটি আঁকি বুকির সাথে ওতপ্রোত ভাবে লেপটে। হাতা দুটো ছোট, মায়ের পেলব মসৃণ বাহু জোড়া সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। বুকের দিকে গভীর কাটা, ভারি নরম ফর্সা স্তনের খাঁজের বেশ খানিকটা দেখা যাচ্ছে। আঁটো কামিজের ফলে স্তন জোড়া সামনের দিকে ঠিকরে উঁচিয়ে রয়েছে। ওড়না খানি কাঁধের একপাশে ঝুলিয়ে রেখেছে। ঘন কালো চুল একটা লম্বা বেনুনি করা, পিঠের ওপরে সাপের মতন দুলছে। ঠোঁটে গোলাপি রঙ, চোখের কোলে কাজল রেখা, দুই চাবুকের মতন ভুরু জরার মাঝে ছোট লাল টিপ। সব মিলিয়ে মাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন মর্তধামে স্বর্গের কোন নর্তকী নেমে এসেছে। গোলাপি কামিজের সাথে মিলিয়ে একটা সাদা লেগিন্স পড়েছে। লেগিন্স দেখে মনে হল মায়ের কোমরের নিচ থেকে রঙ করা, পায়ের গুলি, সুগোল মোটা মোটা ঊরু জোড়া ভারি নিতম্ব সবকিছু যেন ওর চোখের সামনে উন্মুক্ত।
বেশ খানিকক্ষণ মায়ের দিকে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে দেখে আদি মস্করা করে জিজ্ঞেস করে, “কি হল কোন পারটিতে যাচ্ছ নাকি?”
ছেলের চোখের আগুনে দৃষ্টি দেখে ঋতুপর্ণার বুকের রক্তে দোলা দেয়। ছেলের চোখের দিকে কিছুতেই তাকাতে পারছে না, যেন ওই জোড়া চোখের আগুন ওকে ঝলসে দিচ্ছে। চোখের পাতা নামিয়ে ছেলের কাছে এসে পেটের ওপরে ছোট্ট ঘুসি মেরে বলে, “তুই ওই ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে কিন্তু আমি আর তোর সাথে কোথাও বের হব না।”
মায়ের গালের রক্তিমাভা দেখে আদি মায়ের কাঁধে হাত রেখে কাছে টেনে নিল, “ইসস, লাজুক লাজবতি লতা আমার।”
উফফফ, ছেলেরা কি সত্যি এইভাবে মায়েদের সাথে কথা বলে নাকি। গলে পড়তে ইচ্ছে করছে ঋতুপর্ণার। নিচের ঠোঁট দাঁতে কেটে আদির বুকের পেশিতে চিমটি কেটে মিহি কণ্ঠে বলে, “কোন দুষ্টুমি না করে ডাক্তারের কাছে চল।”
বুকে চিমটির মিষ্টি আদর খেয়েই আদির রক্তে আগুন লেগে যায়, “দেখলে ত, আমি কিছু না করতেই আগে থেকে দুষ্টুমি করতে বারন করে দিলে।” মায়ের কানের কাছে মুখ নামিয়ে মাকে উত্যক্ত করে ফিস ফিস করে বলে, “ইচ্ছে নাকি একটু দুষ্টুমি করার...”
ঋতুপর্ণার সারা চেহারা লজ্জায় লাল হয়ে যায়। ইসস, কি বলতে কি বলে ফেলল। হ্যাঁ এটা সত্যি, ওর বুকের এক গহীন কোণে সুপ্ত ইচ্ছে ছিল যে ছেলে ওর এই মোহ ময়ী রূপ দেখে একটু দুষ্টুমি করুক। শরীর বেয়ে শিক্ত ধারা বয়ে গেল। দরজার দিকে পা বাড়িয়ে কোনরকমে ছেলেকে বলল, “তুই না যা... এর পরে আমি আর কিন্তু তোর সাথে কোথাও বের হব না। দিনে দিনে বড্ড অসভ্য হয়ে যাচ্ছিস কিন্তু।”
মায়ের হাত ধরে আদুরে গলায় বলে, “আচ্ছা বাবা আচ্ছা। কিন্তু সত্যি বলছি আজকে তোমার পুরানো রূপ দেখে পাগল হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।”
নিচের ঠোঁট দাঁতে কেটে ছেলের দিকে কাজল কালো আয়ত চোখ মেলে তাকায়। ওর বাম হাতখানি ছেলের হাতের মুঠোতে, একটু যদি টান মারে তাহলে অনায়াসে ঝাপিয়ে পরে লুকিয়ে যাবে ওই প্রসস্থ বুকের মধ্য। হোক না ছেলে তাই বলে ওই চওড়া লোমশ বুকের মাঝে নিজের নিরাপত্তা আর ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছে। লাজবতী লতার মতন কুঁকড়ে যাচ্ছে ধিরে ধিরে ঋতুপর্ণার সারা শরীর, এইভাবে বেশিক্ষণ যদি ছেলে ওর হাত খানি শক্ত করে ধরে থাকে তাহলে যেকোনো মুহূর্তে মধুর মতন গলে যাবে।
কবজি একটু মোচর দিয়ে শিক্ত কম্পিত গলায় ছেলেকে বলে, “এই বাবা প্লিস সোনা আমার, হাত ছাড়, দেরি হয়ে যাবে। সময়ে না পৌঁছালে...”
আদির হাতের মুঠোতে মায়ের নরম হাত গলতে শুরু করে দেয়। একবারের জন্য ইচ্ছে হল টগবগে অথচ লাজুক কোমল মাকে টেনে নিজের চওড়া বুকের ওপরে আছড়ে ফেলে, চটকে ধরে আদর করে দেয় সুকোমল রমণীয় দেহ। কিন্তু এই ঘন আদরে যদি হিতে বিপরিত হয়ে নিজের প্যান্ট ভিজে যায়। ইসস, না না। একটু মোচর দিয়ে মাকে দুষ্টুমি করে উত্যক্ত করে হাত ছেড়ে দেয়।
ছোট ত্রস্ত পায়ে দরজা খুলে দাঁড়িয়ে পরে ঋতুপর্ণা, শিক্ত মননা চঞ্চল বুকের রক্ত ভাবে এইবারে ছেলে আর দুষ্টুমি করতে পারবে না। চোখের ভাষায় অদৃশ্য প্রেমের চুম্বকীয় টান। নিচের ঠোঁট দাঁতের মাঝে কেটে ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখে মুখে এমন ভাব, এইবারে কি করবি দেখি।
“কেমন আছেন বৌদি” সামনের ফ্লাটের পার্থ ঋতুপর্ণাকে দেখে জিজ্ঞেস করে।
বুকে এমন ভাবে হিল্লোল দেখা দিয়েছিল যে একটু হলেই হাঁপিয়ে যাচ্ছিল। ভিন্ন একজনের গলার স্বর শুনে আসস্থ হয়ে উত্তর দেয়, “ভালো আছি তোমরা কেমন আছো?”
পার্থ ঋতুপর্ণাকে আপাদমস্তক জরিপ করে দেখে একটা ঢোঁক গিলে বলে, “বড় চিন্তায় ছিলাম আপনার এই অবস্থা শুনে। যাক ভালো হল আপনি ফিরে এসেছেন।” দুই পা ঋতুপর্ণার দিকে এগিয়ে আসতেই আদি মায়ের পেছনে এসে দাঁড়িয়ে পরে। আদিকে ঋতুপর্ণার পেছনে দাঁড়াতে দেখে পার্থ দুই পা আবার পিছিয়ে যায়। একটু হেসে বলে, “কোথাও যাচ্ছেন নাকি?”
আদি মুচকি হেসে গম্ভির গলায় উত্তর দেয়, “এই একটু বাইরে যাচ্ছি। তোমার অফিস ঠিকঠাক?” এই সব লোক হল বসন্তের কোকিল। সামনের ফ্লাটে থাকে কিন্তু এতদিন একবারের জন্যেও খোঁজ খবর নিতে আসেনি। যদি কোনোদিন সকালে অথবা বিকেলে দেখা হয়ে যেত তখন ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞেস করত ওর মায়ের ব্যাপারে।
পার্থ আদির চোখ দেখে বেশি কিছু বলার সাহস পেল না। ঋতুপর্ণার পেছন পেছন আদি বেড়িয়ে এলো। ট্যাক্সিতে ওঠার আগে একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে নিল, বৃষ্টি হবে না ত। না, আকাশে শরতের পোজা পোজা তুলোর মতন ভাসমান মেঘের ভেলা। ঋতুপর্ণার বুকের কোন এক গহীন কোণ হয়ত চাইছিল আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা হোক। এমনিতেই কামিজটা দেহের পরতে পরতে আঠার মতন লেগে রয়েছে, লেগিন্সটাও ভীষণ অসভ্যের মতন কোমরের নিচের প্রতিটি অঙ্গে প্রত্যঙ্গের সাথে লেপটে। যদি বৃষ্টি হয় তাহলে সেই দিনের মতন অবস্থায় পড়তে হবে।
ট্যাক্সিতে দুইজনে একটু তফাতে চুপচাপ বসে। আদি বারেবারে আড় চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে, অন্য পাশে ঋতুপর্ণা একমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে কিন্তু বাম হাত পরে থাকে সিটের ওপরে। মনটা ককিয়ে উঠছিল যাতে ছেলে একটুর জন্য ওর হাতের ওপরে নিজের হাত রাখে। মাঝে মাঝে নিস্তব্ধতা বড় নিষ্ঠুর বলে মনে হয়। একটু কথা বলতে কি হয়েছে। ছেলের দিকে না তাকিয়েও ঋতুপর্ণা বেশ বুঝতে পারে যে ছেলের চোখ বারেবারে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে। বুকের মাঝে হাসির দমকা হাওয়া বারেবারে উথালি পাথালি করে নাড়া দেয়, কিন্তু দাঁতের মাঝে কড়ে আঙ্গুল কেটে সেই দমকা হাসিটাকে বদ্ধ করে রাখে।
গাড়ির গো গো শব্দ ছাড়া কিছুই কানে যায় না। বেশিক্ষণ এই ভাবে চুপচাপ থাকতে পারল না আদি, “কাল থেকে কি কলেজ জয়েন করতে চাও।”
হাঁফ ছেড়ে বাঁচল ঋতুপর্ণার বুক। ছেলের গলা শুনে ছলাত করে নেচে উঠল বুকের রক্ত, “জানিনা দেখি, তুই কি বলিস। কাল থেকে জয়েন করব না আরো কিছু দিন রেস্ট নেবো।”
আদি বুক ভরে শ্বাস নিয়ে উত্তর দেয়, “দেখো আগে ডাক্তারে কি বলে, তারপরে ডিসিসান নেওয়া যাবে।”
ঋতুপর্ণা একটু চুপ করে আদিকে বলে, “আচ্ছা একটা কথা আমাকে সত্যি করে বলবি?” আদি মাথা দোলায়, ঋতুপর্ণা জিজ্ঞেস করে, “তোর পাপা কত টাকা দিয়েছে?”
আদি জানে এর উত্তর শুনলে মা আবার রেগ যাবে তাই মায়ের কাছে সরে এসে আদুরে গলায় বলে, “আরে মা ওই নিয়ে এত টেন্সান নিচ্ছ কেন। ছাড়ো না পাপা কি করেছে না করেছে।” মায়ের কোমল হাতের ওপরে হাত রেখে চাপ দিয়ে আসস্থ করে বলে, “তুমি না হয় পাপার টাকা ফেরত দিয়ে দিও হয়েছে।”
বুকের গভীর থেকে এক ক্রন্দন যেন এই ঠিকরে বেড়িয়ে আসবে। ছেলের মানসিকতা বোঝার জন্য ঋতুপর্ণা ভুরু কুঁচকে ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে, “রিসেন্টলি তোর পাপার সাথে খুব মিল হয়ে গেছে মনে হচ্ছে।”
মায়ের ছলছল চোখ দেখে আদি বুঝতে পারে যে এই টাকা নেওয়াটা মা কিছুতেই ভুলতে পারছে না। পারতপক্ষে মা চায় না আদি ওর পাপার সাথে বেশি সম্পর্ক রাখুক কিন্তু আদি জানে, মায়ের অত ক্ষমতা নেই ওকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িয়ে বাকি সব কিছুর খরচা বহন করবে। ওর মা পারলে আচলের তলায় লুকিয়ে রাখে আদিকে, যদি মায়ের ক্ষমতা থাকত তাহলে হয়ত এই বাড়িটাও নিত না পাপার কাছ থেকে।
ট্যাক্সিতে বসে ছিল বলে বেশি কিছু বলল না আদি, শুধু মৃদু ধমকের সুরে মাকে শান্ত করে বলে, “আরে মা প্লিস ওই সব চিন্তাভাবনা মাথা থেকে দূর করে দাও। ওই একটা কথা নিয়ে কেন যে গত কাল থেকে পরে রয়েছ বুঝতে পারছি না। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার কথা উঠালে কিন্তু একদম ভালো হবে না।”
ছেলের এই প্রভুত্ত্ব ফলানো দেখে ঋতুপর্ণা একটু থমকে গিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলে, “যখন থেকে জানতে পেরেছি যে আমার চিকিৎসার টাকা সুভাষ দিয়েছে তখন থেকে আমার গা হাত পা জ্বলছে। তুই কি করে বুঝবি ও আমার জীবনে...” কথা শেষ করতে পারল না ঠিক ভাবে, তার আগেই একজোড়া অজানা হাত যেন ওর বুক চেপে ধরল।
মায়ের কষ্ট সব কিছুই বোঝে আদি। বাবার কাছ থেকে সব শুনেছে। বাবার প্রতি ঘৃণা যে হয়নি সেটা নয় তবে এই দুর্দিনে বাবা মুম্বাই থেকে দৌড়ে এসেছিল হয়ত পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে এসেছিল। কিন্তু মায়ের চোখের বাঁধ ভাঙ্গা জল দেখে আদি বুঝে যায় বাবার প্রতারনা মায়ের বুকে কত ভীষণ ভাবে বেজে উঠেছে। ট্যাক্সি না হলে মাকে জড়িয়ে ধরে নিজের মধ্যে লুকিয়ে নিত।
আদি মায়ের পাশ ঘেঁষে বসে, কাঁধে হাত রেখে নিজের দিকে টেনে স্বান্তনা দিয়ে বলে, “ছাড়ো অইসব কথা। এই দেখো না, তুমি আবার ফিরে এসেছ, আমি তোমার পাশে বসে আছি।”
হাতের উলটো পিঠ দিয়ে চোখের কোল মুছে ছেলের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, “তুই সত্ত্যি পাগল ছেলে, না হলে কেউ এই ভাবে রাতের পর রাত মাথার কাছে জেগে বসে থাকে।”
আদি মায়ের নরম হাত নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে ধরে বুকের কাছে টেনে চেপে ধরে বলে, “তুমি ছাড়া আমার যে আর কেউ নেই মা।”
ছেলের বুকের ধুকপুকানি হাতের তালুর ওপরে ভীষণ ভাবে অনুভব করে। নিজের বুকটা যেকোনো মুহূর্তে ফেটে পড়বে। একবার মনে হয় ছেলেকে জড়িয়ে ধরে, ভালোবাসা মায়া মমতা স্নেহ দিয়ে ভরিয়ে তোলে একমাত্র পুত্রের জীবন। হসপিটাল আসা পর্যন্ত মা আর ছেলে পাশাপাশি ঘন হয়ে চুপচাপ বসে রয়। এইবারের নিস্তব্ধতা ওদের বুকে মধুর সুর নিয়ে বেজে ওঠে, যেন বহুকাল পরে এক মা তাঁর ছেলেকে ফিরে পেয়েছে আর আদির মনে হয় সব শান্তি, সকল নিরাপত্তা, স্নেহের শিতল ছায়া সবকিছু এই মায়ের আঁচলের তলায়।
ডক্টর তৃষার চেম্বারে পা রাখতেই ডক্টর হেসে জিজ্ঞেস করেন, “কেমন আছেন মিসেস সান্যাল? দেখে বেশ ভালো মনে হচ্ছে।”
আদি একটা চেয়ার টেনে বসে পরে, ডক্টর তৃষা ঋতুপর্ণাকে পাশে রাখা একটা বড় ডিভানে আরাম করে বসতে বলে। ডক্টরের প্রশ্নের উত্তরে, আদি সবিস্তারে গত কালের ঘটনা জানায়। ওর মা কিভাবে ছোট্ট আদির খোঁজে পাগলিনীর মতন একা একা দারজিলিং চলে গিয়েছিল, তারপরে আদি দারজিলিং যায় মায়ের খোঁজে। রাতের বেলা মায়ের স্মৃতি ফিরে আসে।
সব শুনে ডক্টর তৃষা ঋতুপর্ণার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে এখন কেমন ফিল করছেন?”
ঋতুপর্ণা মাথা দুলিয়ে উত্তর দিল, “এখন শারীরিক দিক থেকে ঠিক আছি কিন্তু কিছু অন্য প্রবলেম আছে।” বলে আদির দিকে তাকাল। “মানে গত কাল রাত থেকে মাঝে মাঝেই মাথাটা হটাত করে ঝিম ঝিম করছে, আর বুকের মাঝে ভীষণ ভাবে ধড়ফড় করে ওঠে সেই সময়ে।”
তৃষা একটু খানি চিন্তামগ্ন হয়ে উত্তর দেয়, “এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এতদিন যে মেডিসিন গুলো দিয়েছিলাম সেই গুলো বেশ হাই ডোজের ছিল, এইবারে ডোজ কমিয়ে দেব আশা করি মাথার ঝিম ঝিমানি বুকের ধড়ফড়ানি কমে যাবে।”
ঋতুপর্ণা নিচু গলায় বলে, “আপনার সাথে একান্তে কিছু কথা ছিল।” এই বলে আদির দিকে তাকায়।
আদি বুঝতে পারে যে এইবারে তৃষা আর মাকে একা ছেড়ে দিতে হবে। সামনে বসা রমণী যতই হোক ওর মা, অনেক কিছু আলোচনা মায়েরা ছেলের সামনে করতে পারে না। এই ভেবে আদি মায়ের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বাইরে চলে গেল।
বেশ খানিকক্ষণ মায়ের দিকে নিস্পলক চোখে তাকিয়ে দেখে আদি মস্করা করে জিজ্ঞেস করে, “কি হল কোন পারটিতে যাচ্ছ নাকি?”
ছেলের চোখের আগুনে দৃষ্টি দেখে ঋতুপর্ণার বুকের রক্তে দোলা দেয়। ছেলের চোখের দিকে কিছুতেই তাকাতে পারছে না, যেন ওই জোড়া চোখের আগুন ওকে ঝলসে দিচ্ছে। চোখের পাতা নামিয়ে ছেলের কাছে এসে পেটের ওপরে ছোট্ট ঘুসি মেরে বলে, “তুই ওই ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে কিন্তু আমি আর তোর সাথে কোথাও বের হব না।”
মায়ের গালের রক্তিমাভা দেখে আদি মায়ের কাঁধে হাত রেখে কাছে টেনে নিল, “ইসস, লাজুক লাজবতি লতা আমার।”
উফফফ, ছেলেরা কি সত্যি এইভাবে মায়েদের সাথে কথা বলে নাকি। গলে পড়তে ইচ্ছে করছে ঋতুপর্ণার। নিচের ঠোঁট দাঁতে কেটে আদির বুকের পেশিতে চিমটি কেটে মিহি কণ্ঠে বলে, “কোন দুষ্টুমি না করে ডাক্তারের কাছে চল।”
বুকে চিমটির মিষ্টি আদর খেয়েই আদির রক্তে আগুন লেগে যায়, “দেখলে ত, আমি কিছু না করতেই আগে থেকে দুষ্টুমি করতে বারন করে দিলে।” মায়ের কানের কাছে মুখ নামিয়ে মাকে উত্যক্ত করে ফিস ফিস করে বলে, “ইচ্ছে নাকি একটু দুষ্টুমি করার...”
ঋতুপর্ণার সারা চেহারা লজ্জায় লাল হয়ে যায়। ইসস, কি বলতে কি বলে ফেলল। হ্যাঁ এটা সত্যি, ওর বুকের এক গহীন কোণে সুপ্ত ইচ্ছে ছিল যে ছেলে ওর এই মোহ ময়ী রূপ দেখে একটু দুষ্টুমি করুক। শরীর বেয়ে শিক্ত ধারা বয়ে গেল। দরজার দিকে পা বাড়িয়ে কোনরকমে ছেলেকে বলল, “তুই না যা... এর পরে আমি আর কিন্তু তোর সাথে কোথাও বের হব না। দিনে দিনে বড্ড অসভ্য হয়ে যাচ্ছিস কিন্তু।”
মায়ের হাত ধরে আদুরে গলায় বলে, “আচ্ছা বাবা আচ্ছা। কিন্তু সত্যি বলছি আজকে তোমার পুরানো রূপ দেখে পাগল হয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।”
নিচের ঠোঁট দাঁতে কেটে ছেলের দিকে কাজল কালো আয়ত চোখ মেলে তাকায়। ওর বাম হাতখানি ছেলের হাতের মুঠোতে, একটু যদি টান মারে তাহলে অনায়াসে ঝাপিয়ে পরে লুকিয়ে যাবে ওই প্রসস্থ বুকের মধ্য। হোক না ছেলে তাই বলে ওই চওড়া লোমশ বুকের মাঝে নিজের নিরাপত্তা আর ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছে। লাজবতী লতার মতন কুঁকড়ে যাচ্ছে ধিরে ধিরে ঋতুপর্ণার সারা শরীর, এইভাবে বেশিক্ষণ যদি ছেলে ওর হাত খানি শক্ত করে ধরে থাকে তাহলে যেকোনো মুহূর্তে মধুর মতন গলে যাবে।
কবজি একটু মোচর দিয়ে শিক্ত কম্পিত গলায় ছেলেকে বলে, “এই বাবা প্লিস সোনা আমার, হাত ছাড়, দেরি হয়ে যাবে। সময়ে না পৌঁছালে...”
আদির হাতের মুঠোতে মায়ের নরম হাত গলতে শুরু করে দেয়। একবারের জন্য ইচ্ছে হল টগবগে অথচ লাজুক কোমল মাকে টেনে নিজের চওড়া বুকের ওপরে আছড়ে ফেলে, চটকে ধরে আদর করে দেয় সুকোমল রমণীয় দেহ। কিন্তু এই ঘন আদরে যদি হিতে বিপরিত হয়ে নিজের প্যান্ট ভিজে যায়। ইসস, না না। একটু মোচর দিয়ে মাকে দুষ্টুমি করে উত্যক্ত করে হাত ছেড়ে দেয়।
ছোট ত্রস্ত পায়ে দরজা খুলে দাঁড়িয়ে পরে ঋতুপর্ণা, শিক্ত মননা চঞ্চল বুকের রক্ত ভাবে এইবারে ছেলে আর দুষ্টুমি করতে পারবে না। চোখের ভাষায় অদৃশ্য প্রেমের চুম্বকীয় টান। নিচের ঠোঁট দাঁতের মাঝে কেটে ছেলের দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখে মুখে এমন ভাব, এইবারে কি করবি দেখি।
“কেমন আছেন বৌদি” সামনের ফ্লাটের পার্থ ঋতুপর্ণাকে দেখে জিজ্ঞেস করে।
বুকে এমন ভাবে হিল্লোল দেখা দিয়েছিল যে একটু হলেই হাঁপিয়ে যাচ্ছিল। ভিন্ন একজনের গলার স্বর শুনে আসস্থ হয়ে উত্তর দেয়, “ভালো আছি তোমরা কেমন আছো?”
পার্থ ঋতুপর্ণাকে আপাদমস্তক জরিপ করে দেখে একটা ঢোঁক গিলে বলে, “বড় চিন্তায় ছিলাম আপনার এই অবস্থা শুনে। যাক ভালো হল আপনি ফিরে এসেছেন।” দুই পা ঋতুপর্ণার দিকে এগিয়ে আসতেই আদি মায়ের পেছনে এসে দাঁড়িয়ে পরে। আদিকে ঋতুপর্ণার পেছনে দাঁড়াতে দেখে পার্থ দুই পা আবার পিছিয়ে যায়। একটু হেসে বলে, “কোথাও যাচ্ছেন নাকি?”
আদি মুচকি হেসে গম্ভির গলায় উত্তর দেয়, “এই একটু বাইরে যাচ্ছি। তোমার অফিস ঠিকঠাক?” এই সব লোক হল বসন্তের কোকিল। সামনের ফ্লাটে থাকে কিন্তু এতদিন একবারের জন্যেও খোঁজ খবর নিতে আসেনি। যদি কোনোদিন সকালে অথবা বিকেলে দেখা হয়ে যেত তখন ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞেস করত ওর মায়ের ব্যাপারে।
পার্থ আদির চোখ দেখে বেশি কিছু বলার সাহস পেল না। ঋতুপর্ণার পেছন পেছন আদি বেড়িয়ে এলো। ট্যাক্সিতে ওঠার আগে একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে নিল, বৃষ্টি হবে না ত। না, আকাশে শরতের পোজা পোজা তুলোর মতন ভাসমান মেঘের ভেলা। ঋতুপর্ণার বুকের কোন এক গহীন কোণ হয়ত চাইছিল আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা হোক। এমনিতেই কামিজটা দেহের পরতে পরতে আঠার মতন লেগে রয়েছে, লেগিন্সটাও ভীষণ অসভ্যের মতন কোমরের নিচের প্রতিটি অঙ্গে প্রত্যঙ্গের সাথে লেপটে। যদি বৃষ্টি হয় তাহলে সেই দিনের মতন অবস্থায় পড়তে হবে।
ট্যাক্সিতে দুইজনে একটু তফাতে চুপচাপ বসে। আদি বারেবারে আড় চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে, অন্য পাশে ঋতুপর্ণা একমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে কিন্তু বাম হাত পরে থাকে সিটের ওপরে। মনটা ককিয়ে উঠছিল যাতে ছেলে একটুর জন্য ওর হাতের ওপরে নিজের হাত রাখে। মাঝে মাঝে নিস্তব্ধতা বড় নিষ্ঠুর বলে মনে হয়। একটু কথা বলতে কি হয়েছে। ছেলের দিকে না তাকিয়েও ঋতুপর্ণা বেশ বুঝতে পারে যে ছেলের চোখ বারেবারে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে। বুকের মাঝে হাসির দমকা হাওয়া বারেবারে উথালি পাথালি করে নাড়া দেয়, কিন্তু দাঁতের মাঝে কড়ে আঙ্গুল কেটে সেই দমকা হাসিটাকে বদ্ধ করে রাখে।
গাড়ির গো গো শব্দ ছাড়া কিছুই কানে যায় না। বেশিক্ষণ এই ভাবে চুপচাপ থাকতে পারল না আদি, “কাল থেকে কি কলেজ জয়েন করতে চাও।”
হাঁফ ছেড়ে বাঁচল ঋতুপর্ণার বুক। ছেলের গলা শুনে ছলাত করে নেচে উঠল বুকের রক্ত, “জানিনা দেখি, তুই কি বলিস। কাল থেকে জয়েন করব না আরো কিছু দিন রেস্ট নেবো।”
আদি বুক ভরে শ্বাস নিয়ে উত্তর দেয়, “দেখো আগে ডাক্তারে কি বলে, তারপরে ডিসিসান নেওয়া যাবে।”
ঋতুপর্ণা একটু চুপ করে আদিকে বলে, “আচ্ছা একটা কথা আমাকে সত্যি করে বলবি?” আদি মাথা দোলায়, ঋতুপর্ণা জিজ্ঞেস করে, “তোর পাপা কত টাকা দিয়েছে?”
আদি জানে এর উত্তর শুনলে মা আবার রেগ যাবে তাই মায়ের কাছে সরে এসে আদুরে গলায় বলে, “আরে মা ওই নিয়ে এত টেন্সান নিচ্ছ কেন। ছাড়ো না পাপা কি করেছে না করেছে।” মায়ের কোমল হাতের ওপরে হাত রেখে চাপ দিয়ে আসস্থ করে বলে, “তুমি না হয় পাপার টাকা ফেরত দিয়ে দিও হয়েছে।”
বুকের গভীর থেকে এক ক্রন্দন যেন এই ঠিকরে বেড়িয়ে আসবে। ছেলের মানসিকতা বোঝার জন্য ঋতুপর্ণা ভুরু কুঁচকে ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে, “রিসেন্টলি তোর পাপার সাথে খুব মিল হয়ে গেছে মনে হচ্ছে।”
মায়ের ছলছল চোখ দেখে আদি বুঝতে পারে যে এই টাকা নেওয়াটা মা কিছুতেই ভুলতে পারছে না। পারতপক্ষে মা চায় না আদি ওর পাপার সাথে বেশি সম্পর্ক রাখুক কিন্তু আদি জানে, মায়ের অত ক্ষমতা নেই ওকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়িয়ে বাকি সব কিছুর খরচা বহন করবে। ওর মা পারলে আচলের তলায় লুকিয়ে রাখে আদিকে, যদি মায়ের ক্ষমতা থাকত তাহলে হয়ত এই বাড়িটাও নিত না পাপার কাছ থেকে।
ট্যাক্সিতে বসে ছিল বলে বেশি কিছু বলল না আদি, শুধু মৃদু ধমকের সুরে মাকে শান্ত করে বলে, “আরে মা প্লিস ওই সব চিন্তাভাবনা মাথা থেকে দূর করে দাও। ওই একটা কথা নিয়ে কেন যে গত কাল থেকে পরে রয়েছ বুঝতে পারছি না। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার কথা উঠালে কিন্তু একদম ভালো হবে না।”
ছেলের এই প্রভুত্ত্ব ফলানো দেখে ঋতুপর্ণা একটু থমকে গিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলে, “যখন থেকে জানতে পেরেছি যে আমার চিকিৎসার টাকা সুভাষ দিয়েছে তখন থেকে আমার গা হাত পা জ্বলছে। তুই কি করে বুঝবি ও আমার জীবনে...” কথা শেষ করতে পারল না ঠিক ভাবে, তার আগেই একজোড়া অজানা হাত যেন ওর বুক চেপে ধরল।
মায়ের কষ্ট সব কিছুই বোঝে আদি। বাবার কাছ থেকে সব শুনেছে। বাবার প্রতি ঘৃণা যে হয়নি সেটা নয় তবে এই দুর্দিনে বাবা মুম্বাই থেকে দৌড়ে এসেছিল হয়ত পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে এসেছিল। কিন্তু মায়ের চোখের বাঁধ ভাঙ্গা জল দেখে আদি বুঝে যায় বাবার প্রতারনা মায়ের বুকে কত ভীষণ ভাবে বেজে উঠেছে। ট্যাক্সি না হলে মাকে জড়িয়ে ধরে নিজের মধ্যে লুকিয়ে নিত।
আদি মায়ের পাশ ঘেঁষে বসে, কাঁধে হাত রেখে নিজের দিকে টেনে স্বান্তনা দিয়ে বলে, “ছাড়ো অইসব কথা। এই দেখো না, তুমি আবার ফিরে এসেছ, আমি তোমার পাশে বসে আছি।”
হাতের উলটো পিঠ দিয়ে চোখের কোল মুছে ছেলের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বলে, “তুই সত্ত্যি পাগল ছেলে, না হলে কেউ এই ভাবে রাতের পর রাত মাথার কাছে জেগে বসে থাকে।”
আদি মায়ের নরম হাত নিজের হাতের মুঠোর মধ্যে ধরে বুকের কাছে টেনে চেপে ধরে বলে, “তুমি ছাড়া আমার যে আর কেউ নেই মা।”
ছেলের বুকের ধুকপুকানি হাতের তালুর ওপরে ভীষণ ভাবে অনুভব করে। নিজের বুকটা যেকোনো মুহূর্তে ফেটে পড়বে। একবার মনে হয় ছেলেকে জড়িয়ে ধরে, ভালোবাসা মায়া মমতা স্নেহ দিয়ে ভরিয়ে তোলে একমাত্র পুত্রের জীবন। হসপিটাল আসা পর্যন্ত মা আর ছেলে পাশাপাশি ঘন হয়ে চুপচাপ বসে রয়। এইবারের নিস্তব্ধতা ওদের বুকে মধুর সুর নিয়ে বেজে ওঠে, যেন বহুকাল পরে এক মা তাঁর ছেলেকে ফিরে পেয়েছে আর আদির মনে হয় সব শান্তি, সকল নিরাপত্তা, স্নেহের শিতল ছায়া সবকিছু এই মায়ের আঁচলের তলায়।
ডক্টর তৃষার চেম্বারে পা রাখতেই ডক্টর হেসে জিজ্ঞেস করেন, “কেমন আছেন মিসেস সান্যাল? দেখে বেশ ভালো মনে হচ্ছে।”
আদি একটা চেয়ার টেনে বসে পরে, ডক্টর তৃষা ঋতুপর্ণাকে পাশে রাখা একটা বড় ডিভানে আরাম করে বসতে বলে। ডক্টরের প্রশ্নের উত্তরে, আদি সবিস্তারে গত কালের ঘটনা জানায়। ওর মা কিভাবে ছোট্ট আদির খোঁজে পাগলিনীর মতন একা একা দারজিলিং চলে গিয়েছিল, তারপরে আদি দারজিলিং যায় মায়ের খোঁজে। রাতের বেলা মায়ের স্মৃতি ফিরে আসে।
সব শুনে ডক্টর তৃষা ঋতুপর্ণার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে এখন কেমন ফিল করছেন?”
ঋতুপর্ণা মাথা দুলিয়ে উত্তর দিল, “এখন শারীরিক দিক থেকে ঠিক আছি কিন্তু কিছু অন্য প্রবলেম আছে।” বলে আদির দিকে তাকাল। “মানে গত কাল রাত থেকে মাঝে মাঝেই মাথাটা হটাত করে ঝিম ঝিম করছে, আর বুকের মাঝে ভীষণ ভাবে ধড়ফড় করে ওঠে সেই সময়ে।”
তৃষা একটু খানি চিন্তামগ্ন হয়ে উত্তর দেয়, “এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এতদিন যে মেডিসিন গুলো দিয়েছিলাম সেই গুলো বেশ হাই ডোজের ছিল, এইবারে ডোজ কমিয়ে দেব আশা করি মাথার ঝিম ঝিমানি বুকের ধড়ফড়ানি কমে যাবে।”
ঋতুপর্ণা নিচু গলায় বলে, “আপনার সাথে একান্তে কিছু কথা ছিল।” এই বলে আদির দিকে তাকায়।
আদি বুঝতে পারে যে এইবারে তৃষা আর মাকে একা ছেড়ে দিতে হবে। সামনে বসা রমণী যতই হোক ওর মা, অনেক কিছু আলোচনা মায়েরা ছেলের সামনে করতে পারে না। এই ভেবে আদি মায়ের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বাইরে চলে গেল।