28-09-2020, 06:46 PM
একটা ছোটো চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করে এই বারে পুজোতে কোথায় বেড়াতে যেতে চায়। অনুপমা হেসে জানিয়ে দেয় যে এবারে কোথাও বেড়াতে যাবার পরিকল্পনা নেই, সবাই মিলে এইবারে পুজোতে আনন্দ হই হুল্লোড় করবে। অনুপমা জানায় যে, ওদের বাড়ির অদুরে ম্যাডক্স স্কয়ার, বলা যেতে পারে ওদের পাড়ার পুজো। ওর বাবা ওই পুজোতে অনেক টাকা চাদা দেয় সেই সাথে ক্লাবের সভাপতি। এবারে সারাদিন পুজোর প্যান্ডেলে বসবে আর সব বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা মারবে। অনুপমা বলে একটা গাড়ি করে অষ্টমীর দিনে সব বন্ধু বান্ধবী ঠাকুর দেখতে বের হলে বেশ ভালো হয়। সেই শুনে দেবায়ন বেশ খুশি। পুজোর সময়ে সবার বাড়িতে একটু ছাড় পাওয়া যায়, দেবায়ন আর অনুপমার বাড়ি থেকে কোন রকমের অসুবিধে হবে না।
বাইক পন্ডিতিয়া থেকে ঘুরে অনুপমাদের বাড়ির দিকে ঢোকে। অনুপমা অনুরোধ করে একবার ম্যাডক্স স্কয়ারে নিয়ে যেতে, মাঠের মাঝে দুর্গা পুজোর প্যান্ডেল বানানো শুরু হয়ে গেছে। অনুপমাকে সবাই চেনে, ওই খানে। দেবায়নের সাথে অনুপমাকে দেখে একটা লোক হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে আসে। অনুপমা সেই ভদ্রলোককে হাঁপাতে দেখে কারন জিজ্ঞেস করে।
আগন্তুক, রঞ্জিত দাস, ক্লাবের মেম্বার, হাঁপাতে হাঁপাতে অনুপমাকে বলে, “হ্যাঁ রে, বিশাল কান্ড ঘটে গেছে। তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি যা। আজকে মনে হয় সোমেশদা র কপালে দুঃখ আছে।”
অনুপমা আর দেবায়ন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কেন? কার কি হয়েছে?”
বিংশ পর্ব (#02)
রঞ্জিত বলে, “আরে আর বলিস কেন। তোর ভাই, অঙ্কন আর ওই সান্যাল ডাক্তারের মেয়ে পায়েল। কিছুক্ষণ আগে ওরা দুইজনে এখানে বসে গল্প করছিল। তোর ভাই আর পায়েল, দুইজনকে সেই ছোটো বেলা থেকে দেখে এসেছি। এই ত প্রেম করার বয়স, করুক না কে মানা করেছে। কিন্তু শালা, ওই বকাটে বাঞ্চোত শরত দে, সান্যাল ডাক্তারের পোঁদে তেল মারার জন্য ডাক্তারকে সব বলে দিয়েছে। তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি যা, কমলেশ মেয়েকে ধমক ধামক দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে আর তোদের বাড়ি গেছে। আজকে মনে হয়, সোমেশদাকে পারলে খেয়ে ফেলবে।”
অনুপমা আর দেবায়ন সব কিছু বুঝে যায়। দেবায়ন বাইকে চড়া মাত্রই অনুপমার কাছে ওর মায়ের ফোন আসে, তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসার জন্য বলে। দেবায়ন তাড়াতাড়ি বাড়ির দিকে বাইক ছুটিয়ে দেয়। অনুপমা রাগে দুঃখে দেবায়নের কাঁধ খামচে ধরে থাকে। কোনোরকমে বাইক দাঁড় করিয়ে দেবায়ন দৌড় লাগায় বাড়ির দিকে। অনুপমা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যায় বসার ঘরে। বসার ঘরে ঢোকা মাত্র চোখ যায় সোফায় বসা বাবার দিকে। পারমিতা এক দিকে ছেলের হাত ধরে দাঁড়িয়ে। সবার চোখ মুখ থমথমে, কমলেশ নামের ঝড় বয়ে চলে গেছে ওদের বাড়ি ঢোকার আগেই।
দেবায়ন আর অনুপমাকে দেখে, মিস্টার সেন গর্জে ওঠেন, “দ্যাখ তোর ভাইয়ের আর বান্ধবীর কান্ড। সাড়া পাড়ায় আমার মুখ ডুবিয়ে তবে ছাড়ল। এইবারে পুজোতে ভেবেছিলাম কোলকাতায় থাকব, কিন্তু ক্লাবের সবাই জেনে যাবে। কমলেশ যাতা বলে গেল আমাকে। আর কি বলি বল, আমি কি মানা করেছিলাম ওকে? শেষ পর্যন্ত কি না নিজের থেকে পাঁচ বছরের বড় একটা মেয়েকে প্রেম করেছে? পিটিয়ে ছাল খুলে দেওয়া উচিত। বাইক চাই, বাইক চাই, নাচানাচি দেখো ছেলের। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে, কোচিং ফাঁকি দিয়ে শুধু প্রেম করে বেড়িয়েছে।”
অঙ্কন চুপ করে ওর মায়ের পেছনে দাঁড়িয়ে। দেবায়ন মিস্টার সেনকে শান্ত করে বলে, “আপনি একটু শান্ত হন, আগে বলুন পায়েলের বাবা কি বলেছে আপনাকে?”
মিস্টার সেন, “আচ্ছা তুমি বল, আমি কি তোমাদের কোনদিন মানা করেছি? তুমি আর অনু তোমার মায়ের সাথে মুসৌরি বেড়াতে গেলে, আমি মানা করেছিলাম? একবার অন্তত ওর মাকে জানাতে পারত যে ছেলে প্রেম করছে। প্রেম করেছে, সেটা বড় কথা নয় কিন্তু একটু দেখে শুনে করবে ত? অত বড় মেয়ে তার উপরে কমলেশ। আমি কমলেশকে অনেক দিন ধরে চিনি। একদম ইতর মনোবৃত্তির মানুষ। ডাক্তার হলে কি হবে মুখের ভাষা, মানসিকতা একদম ভালো নয়।”
অনুপমা অঙ্কনকে জিজ্ঞেস করে, “কি রে তোদের এতদিন ধরে জিজ্ঞেস করে গেলাম তোরা একটা উচ্চবাচ্চ পর্যন্ত করলি না।”
অঙ্কন চুপ করে পারমিতার পেছনে দাঁড়িয়ে ওর মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। পারমিতা মেয়ের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলে, “কি বলছিস তুই? পায়েল আর অঙ্কনের ব্যাপারে তুই জানতিস না?”
অনুপমা কাষ্ঠ হেসে উত্তর দেয়, “জানলে কি আর তোমার কাছে গরিমার কথা বলতাম?”
অনুপমা অঙ্কনকে বলে, “তুই উপরে যা, পরে তোর সাথে কথা হবে।”
অঙ্কন উপরে না গিয়ে অদুরে দাঁড়িয়ে থেকে ওদের কথা শোনে।
মিস্টার সেন বলেন, “কমলেশ খুব রেগে মেগে ঘরে ঢুকে তোলপাড়। আমার ছেলে নীচ, আমার ছেলে ইতর, আমরা ব্যাভিচারি। আমাদের নাকি আত্মসন্মান বোধ কিছু নেই, টাকা পয়সা আছে বলে সব কিছু করতে পারি আমরা। আমার মেয়ে ওর মেয়ের মাথা খেয়েছে। অঙ্কনকে ত প্রায় কান ধরে টানতে টানতে বাড়িতে নিয়ে এসেছিল। আমি কিছু বলার আগেই যাতা বলতে শুরু করে দেয়।”
পারমিতা মাথায় হাত দিয়ে সোফার উপরে বসে পরে, “সব ঠিক আছে, ছেলে প্রেম করেছে পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু পায়েল?”
দেবায়নের দিকে তাকিয়ে বলে, “না পায়েল নয়। তুমি ওকে কিছু করে বুঝাতে চেষ্টা কর দেবায়ন। পায়েল নয়, পায়েলকে মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।”
অনুপমা আর দেবায়ন পরস্পরের মুখ চাওয়াচায়ি করে। পারমিতার কথার অন্তর্নিহিত অর্থ ওদের অজানা নয়। দেবায়নের সাথে পায়েলের আর অনুপমার সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত পারমিতা। সেই মেয়েকে বাড়ির বউমা হিসাবে মানতে বড় কষ্ট হয়।
নিরুপায় অনুপমা পারমিতাকে প্রবোধ দিয়ে বলে, “মা, আমাদের একটু ভাবতে দাও। সময় সব ঠিক করে দেবে, দাঁড়াও দেখি আগে পায়েল আর অঙ্কনের সাথে কথা বলে।”
পারমিতা, দেবায়ন আর অনুপমার দিকে কাতর কণ্ঠে বলে, “যাই কর, অঙ্কন প্রেম করেছে ভালো কথা কিন্তু আমি পায়েলকে ঠিক অঙ্কনের জন্য মেনে নিতে পারছি না। পায়েল ওর চেয়ে অনেক বড় আর পায়েলের ব্যাপার আমি সব জানি।”
অঙ্কন এগিয়ে এসে মাথা নিচু করে বলে, “দেখো তোমাদের জানাই নি সেটা আমার ভুল, তার ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। তবে পায়েলকে আমি ভালোবাসি আর পায়েল আমাকে ভালোবাসে। আমি জানতাম মা, দিদি, দেবায়নদা কেউ আমাদের এই সব মেনে নেবে না। তাই আমরা ঠিক করে নিয়েছিলাম যে আগামী পাঁচ বছরের জন্য দুইজনে লুকিয়ে রাখব আমাদের সম্পর্ক। এত তাড়াতাড়ি যে ধরা পরে যাবো সেটা স্বপ্নেও ভাবিনি।”
অঙ্কনের কথা শুনে মিস্টার সেন রেগে যান, “তুই একটা নচ্ছার ছেলে। পড়াশুনার নাম নেই তোর। রক্তের দোষ আর কোথায় যাবে। ভালো হত যদি …”
কথাটা শেষ করল না মিস্টার সেন, চোখে মুখে ফুটে ওঠে এক অব্যক্ত বেদনা। সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পেরে চুপ করে যান, কথাটা বলে খুব ভুল করেছে মিস্টার সেন।
পারমিতার চোখ ছলছল করে ওঠে মিস্টার সেনের সেই অব্যাক্ত বাক্য ভেবে। অনুপমা ওর বাবাকে ধমকে ওঠে, “তুমি কি বলছ ভাইকে? একটু ভেবে চিন্তে কথা বল।”
পারমিতা ছলছল চোখে মিস্টার সেনকে বলে, “এতোদিন তোমার ছেলে খুব ভালো ছিল তাই না? আর একটা কথা বলবে না তুমি আমার ছেলের সম্বন্ধে।”
মিস্টার সেন বুঝে যান যে অব্যাক্ত ওই বাক্যবাণ বড় নিষ্ঠুর, মুখ থেকে বের হয়ে যায়নি সেটাই বড় কথা। অঙ্কনের দিকে তাকিয়ে মিস্টার সেন গম্ভির কণ্ঠে বলেন, “তোকে উপরে যেতে বলা হয়েছে তুই এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস?”
অঙ্কন মাথা নিচু করে বলে, “বাবা কি বলতে চাইছে আমার রক্তের ব্যাপারে আমি জানতে চাই।”
সবাই নির্বাক হয়ে অঙ্কনের দিকে তাকিয়ে থাকে। পরিস্থিতির সামাল দেওয়ার জন্য দেবায়ন অঙ্কনকে বলে, “আরে বাবা কিছু না, রক্তের কথা কিছু না। তুই জানিস কাকু রাগের মাথায় মাঝে মাঝে উলটো পাল্টা বলে ফেলে। ব্যাপার হচ্ছে, তুই যখন খুব ছোটো ছিলিস, তখন তোর ব্লাডে হিমোগ্লোবিন কম হয়ে যায় একবার। সেই সময়ে বেশ কয়েক বোতল রক্ত চড়াতে হয়েছিল। সেসব কথা তোর মনে নেই। ওই রক্তের কথা বলা হচ্ছে আর কিছু না।”
অঙ্কন চুপ করে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে বলে, “মা বাবাকে বলতে আমার কোন ভয় ছিল না। শুধু মাত্র দিদিকে ভয় ছিল বলে আমরা লুকিয়ে ছিলাম। আমি ভেবেছিলাম ওর কলেজ শেষ হলে আর আমার কলেজ শুরু হলে তারপরে আমরা তোমাদের আমাদের ব্যাপারে বলব। আমি পায়েলকে ভালোবাসি, ওকে ছাড়া আমি থাকবো না।”
ভাইয়ের থমথমে মুখ দেখে অনুপমা বলে, “তুই নিজের ঘরে যা, না হলে তুই আজকে দেবায়নের সাথে ওর বাড়ি চলে যা। আমরা আগে এই ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করে দেখি। আমি জানি কমলেশ কাকু যখন জেনে গেছে পায়েলের এই ব্যাপার তখন ওর ওপরে খুব অত্যাচার হবে। দেখি কি করা যায়।”
মিস্টার সেন অঙ্কনের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলেন, “তুই উপরে যা। পরে তোর সাথে কথা বলব।”
মিস্টার সেন মাথায় হাত দিয়ে চুপ করে বসে থাকেন। পারমিতা, মিস্টার সেনের পাশে বসে শান্ত হতে অনুরোধ করে। অনুপমা অথবা দেবায়নের মাথা কিছু কাজ করছে না, কি করবে কিছুই ভেবে পায় না দুইজনে। আগমনীর ঢাকের বাদ্যির জায়গায় বাড়ির পরিবেশ থমথমে হয়ে যায়। দেবায়ন, অঙ্কনকে বলে নিজের কাপড় গুছিয়ে নিতে। পারমিতা আর অনুপমা করুন চোখে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে। অঙ্কন উপরে নিজের ঘরে চলে যাবার পরে দেবায়ন বলে, অঙ্কনের সাথে কথা বলে বিচার করে ওদের জানিয়ে দেবে। পারমিতা কিছুতেই পায়েলকে বাড়ির বউমা করতে নারাজ। অনুপমা মাথায় হাত দিয়ে বসে। মিস্টার সেন চুপ করে সোফায় বসে ড্রিঙ্ক করতে শুরু করে দেন।
দেবায়ন কিছু পরে অঙ্কনকে নিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। অনুপমা আর পারমিতা দুইজনে দেবায়নকে বারবার বলে যে করে হোক অঙ্কনকে বুঝাতে। দেবায়ন বলে যে চেষ্টা করবে, আগে অঙ্কনের কাছে সম্পূর্ণ গল্প শুনতে চায় দেবায়ন। অনুপমাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে দেবায়ন ওর মাকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে সাথে অঙ্কন আসছে। অঙ্কনের কথা শুনে দেবশ্রী একটু অবাক হয়ে কারন জিজ্ঞেস করে। উত্তরে দেবায়ন জানায় যে বাড়িতে ফিরে সব কিছু মাকে খুলে বলবে।
কয়েকদিন পরেই মহালয়া আর তার আগেই এই রকম একটা কান্ড ঘটে যাওয়াতে দেবায়ন বেশ চিন্তিত। অঙ্কন চুপ করে পেছনে বসে, দেবায়নকে বেশ সমিহ করে চলে তাই বুকের মধ্যে দুরুদুরু শুরু হয়ে যায় ওর। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কি জিজ্ঞেস করবে, কি করবে কিছুই ভেবে পায় না।
বাড়িতে ঢুকতেই দেবশ্রী জানিয়ে দেয় যে পারমিতা ফোনে সব কিছু জানিয়ে দিয়েছে। দেবশ্রী একবার দেবায়নের দিকে তাকায় একবার অঙ্কনের দিকে। অঙ্কন চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। দেবশ্রী ওর মনের অবস্থা সামাল দেবার জন্য হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসতে বলে। অঙ্কনকে দেবায়নের রুমের মধ্যে পাঠিয়ে দিয়ে দেবশ্রী দেবায়নকে পায়েলের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। উত্তরে দেবায়ন জানায় যে পায়েল ওদের কলেজের বান্ধবী। দেবশ্রী বলে যে পারমিতা খুব আহত হয়েছে পায়েল আর অঙ্কনের ব্যাপারে জেনে। বারবার বলে দিয়েছে যে ছেলেকে কোন ভাবে বুঝিয়ে যেন পায়েলের থেকে দুরে সরিয়ে রাখে। দেবায়ন নিজের ঘরের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে যে অঙ্কন ওখানে দাঁড়িয়ে। অঙ্কনের থমথমে চেহারা দেখে দেবায়ন ভাবনায় পরে যায়। মাকে বলে, আগে অঙ্কনের সাথে কথা বলে তারপরে কোন এক সিদ্ধান্ত নেবে। অঙ্কন জানিয়ে দেয় যে কোন রকম উলটো সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ। দেবায়নের চোয়াল শক্ত হয়ে যায় অঙ্কনের কথা শুনে। অঙ্কনের অবস্থা সঙ্গিন দেখে দেবশ্রী বলে যে আগে খাওয়া দাওয়া সারতে তারপরে সব কিছু জেনে বুঝে একটা বিচার করা যাবে।
খাওয়ার পরে দেবায়ন অঙ্কনকে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। ঠিক সেই সময়ে অনুপমার ফোন আসে। চিন্তিত অনুপমা জানায় যে পায়েলের ফোন বন্ধ, পায়েলের বাড়ির ফোনে ফোন করেছিল কিন্তু কেউ ফোন তোলে নি। ওইদিকে মিস্টার সেন আর পারমিতা বেঁকে বসেছেন পায়েলের ব্যাপারে। অনুপমা, ওর মাকে অনেক বুঝাতে চেষ্টা করেছে, যে পায়েল মেয়ে হিসাবে খারাপ নয়। মন ভালো, মিষ্টি মেয়ে। বাড়ির প্রবল চাপে ওকে বাড়ির বাইরে উশ্রিঙ্খল করে দিয়েছে। বাড়িতে ওর বাবা মায়ের কাছে একটু ছাড় পেলে হয়ত পায়েল এতটা উশৃঙ্খল হয়ে উঠত না। কিন্তু পারমিতা কিছুই মানতে রাজি নয়। অঙ্কনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে, দেবায়ন জানায় যে অঙ্কনের সাথে এখন কথা বলা হয়ে ওঠেনি।
রাতে অঙ্কনকে দেবায়ন জিজ্ঞেস করে পায়েলের কথা। অঙ্কন চুপ করে থাকে, দেবায়নের বাঘের মতন কণ্ঠ স্বর শুনে গলা শুকিয়ে যায়। দেবায়ন স্বর নরম করে আশস্ত করে জানিয়ে দেয় যে ওর বাবা মা সবাই পায়েলের বিরুদ্ধে। অঙ্কন কি বলবে ভেবে পায় না। দেবায়ন ওদের গল্প শোনার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে, অঙ্কনকে বলে যে পুরো কাহিনী জানালে ওর জন্য কিছু করতে পারে।
বুক ভরে শ্বাস নেয় অঙ্কন, “তুমি সত্যি বলছো?”
দেবায়ন, “তোর গার্লফ্রেন্ড গরিমা, কেউ আছে কি ওই নামে? আর পায়েল যে আমাদের অগ্নিহোত্রীর কথা বলে বেড়াতো, কে সে লোক? সঙ্গীতার কাছে শুনেছি যে পায়েলের পিসতুতো দাদার বন্ধু, মানে অগ্নিহোত্রী আছে।”
অঙ্কন বলে, “অগ্নিহোত্রী আর গরিমা, দুই জনেই বর্তমান। তবে আমার গার্লফ্রেন্ড গরিমা নয়। গরিমা আমার ভালো বান্ধবী, প্রনবেশের গার্ল ফ্রেন্ড। আমাদের কাজে সাহায্য করার জন্য ওকে আমি সব কথা জানিয়েছিলাম। তোমাদের সামনে কাউকে প্রস্তুত করতে হত তাই গরিমা আমার গার্ল ফ্রেন্ড সাজতে রাজি হয়। আমি ওকে জানিয়েছিলাম যে এই খেলা হয়ত বেশ কিছুদিন খেলতে হবে। গরিমাকে সন্তুষ্ট করতে ওকে একটা ল্যাপটপ কিনে দিতে হয়েছে। দিদি আমাকে সেই টাকা দিয়েছিল।”
দেবায়ন, “হুম, গরিমার কথা বুঝলাম। কিন্তু তুই কি করে পায়েলের প্রেমে পড়লি? একটু খোলসা করে বল, কিছু লুকাস না।”
দেবায়নের ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে, “আমি জানি তুই বড় হয়ে গেছিস, আর পায়েল কি রকম মেয়ে সেটাও আমার অজানা নয়।”
অঙ্কন বলতে শুরু করে ওদের গল্প। পায়েল পাড়ার মেয়ে, ছোটো বেলা থেকে অঙ্কন দেখে আসছে তবে আগে কোনদিন পায়েলকে দেখে ওর মনে কিছু হয়নি। প্রথম যেদিন পায়েল ওর দিদির সাথে ওদের বাড়িতে আসে সেদিনও পায়েলকে দেখে ওর কিছু মনে হয়নি। দিদির বাকি বান্ধবীরা বাড়িতে আসত, গল্প করত কিন্তু তাদের মধ্যে পায়েলকে ওর বড় ভালো লাগে। ভালো লাগার কারন, পায়েলের খোলামেলা পোশাক আর নধর দেহের গঠন। হাঁটতে চলতে যেন এক ঝঙ্কার বেজে উঠত অঙ্কনের চোখের সামনে। ওই ঝঙ্কারের আর মত্ত চালে পায়েলের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যায় অঙ্কন। কিন্তু পায়েল ওর চেয়ে বয়সে অনেক বড় আর দিদির বান্ধবী তাই কোনদিন মুখ ফুটে পায়েলকে নিজের মনের কথা জানায় নি। দিদির সাথে মাঝে মাঝে পায়েল ওদের বাড়িতে থেকে যেত, রাতে গল্প করার সময়ে অথবা কোন আছিলায় পায়েলের সাথে গল্প করত। তখন পায়েলের হাবভাবে অঙ্কন বুঝতে পারত যে ওর প্রতি পায়েলের একটু সংবেদনশীল। কিন্তু বহুদিন ধরে দুই জনে শুধু চোখের দেখা আর কথা বলা ছাড়া নিজেদের মনের কথা কাউকে ব্যাক্ত করেনি।
বিংশ পর্ব (#03)
পায়েলের বাবা, ডক্টর কমলেশ সান্যাল খুব বদরাগী প্রকৃতির লোক। পায়েলের মা, সুজাতা, সেই তুলনায় অনেক নিরীহ আর রক্ষণশীল মহিলা। পায়েল অনেক বড় বয়স পর্যন্ত বাবা মাকে ঝগড়া করতে দেখেছে, এমনকি ওর বাবা ওর মায়ের গায়ে হাত তোলে, সেও দেখেছে। বাবাকে বাধা দিতে গেলে পায়েল অনেক বার মার খেয়েছে। কোন কারন ছাড়াই ওর বাবা ওর মাকে মারত, তরকারিতে নুন হলেও মারত, নুন না হলেও মারত। টাকা পয়সা সব কিছুই ছিল, কিন্তু কেন ওর মাকে ওর বাবা প্রায়দিন মারধোর করত সেই কারন ওর অজানা। একদিন পায়েল ওর মাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ওর মা বলেছিল যে ওর বাবা বদরাগী, বাইরের কারুর কথা বলা, মেলা মেশা পছন্দ করে না, কোন কিছুতেই ভালো দেখে না। পায়েল কলেজে পড়ার সময় থেকেই আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখত, বাড়ির চার দেয়ালের বাইরে উন্মুক্ত পৃথিবীতে বিচরন করার স্বপ্ন দেখত। কিন্তু ওর বাবার ভয়ে কলেজে থাকতে কোনদিন সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি। কোন ছেলের সাথে কথা বলা দুরের কথা, কারুর দিকে তাকালেই ওর বাবা যেন ওকে গিলে ফেলবে এমন করত। তাও পায়েল সেই সময়ে লুকিয়ে চুরিয়ে প্রেম করেছে। অচেনা ছোঁয়ার কিছু স্বাদ নিয়েছে। পায়েল ছোটবেলা থেকে মেয়েদের কলেজ, মহাদেবী বিড়লাতে দিদির সাথে পড়াশুনা করেছে। সেই সময় থেকেই দিদির আর পায়েলের চেনাজানা। কলেজে পড়ার সময়ে থেকে দিদি, অনুপমার সাথে পায়েলের বন্ধুত্ত প্রগাড় হয়ে ওঠে। দিদির খোলামেলা পোশাক আশাক দেখে পায়েল উন্মুক্ত আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখে। দিদির সাহায্যে পায়েল প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ পায়, প্রথম ডিস্কো থেকে যাওয়া, প্রথম কোন বড় রেস্টুরেন্টে খাওয়া, মন খুলে কেনাকাটা করা সব দিদির জন্য করে। পায়েলের এই খোলামেলা পোশাক, নধর গঠনের জন্য অনেক ছেলেরা ওকে কাছে পেতে চেয়েছে। পায়েল সেই সময়ে উড়তে উড়তে অনেকের কাছে ধরা দিয়েছে। পায়েল জানত ওর বাবা যদি এই স্বভাবের কথা জানতে পারে তাহলে ওকে আস্ত রাখবে না, তাই পায়েলের বেশির ভাগ পোশাক দিদির আলমারিতে রেখে দিত। কলেজে যাবার আগে ওদের বাড়িতে এসে পোশাক পালটে তবে দিদির সাথে কলেজ যেত। বাধা অবস্থায় থাকতে থাকতে পায়েল হটাত করে মুক্তির স্বাদ পায় দিদির হাত ধরে, তাই পায়েল একটু বেশি রকমের উশ্রিঙ্খল হয়ে যায়। যদিও অঙ্কন ওর সব উশ্রিঙ্খলতার কথা জানে না, তবে জানে যে পায়েল মাঝে মাঝে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে বাড়িতে ফিরত দিদির সাথে। সেদিন আর পায়েল নিজের বাড়িতে যেত না, দিদি ওকে নিজের কাছে রেখে দিত। এক পাড়ায় বাড়ি, তাই দিদির সাথে মেলামেশা করাতে ওর বাবা ওকে বিশেষ কিছু বলত না। পায়েল বলেছিল যে কোনদিন যদি কাউকে ওর মনে ধরে তাহলে তার সাথে বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে যাবে আর ওর মাকে সাথে নিয়ে যাবে। বাড়ির ওই লোহার খাঁচা থেকে মুক্ত হতে চেয়েছিল কিন্তু ওর অদৃষ্টে মনের মতন মানুষ জুটল না। সবাই ওকে শুধু ভোগের বস্তু হিসাবে ব্যাবহার করে গেছে।
দেবায়ন চুপ করে অঙ্কনের কথা শুনে যায়। পায়েলের এই কাহিনী অনুপমা ওকে আগেই বলেছিল। অঙ্কনের মুখে সব শুনে একটু দমে যায়, অঙ্কন কি জানে যে ওর দিদির সাথে আর দেবায়নের সাথে পায়েলের শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে? অঙ্কনের কথা শুনে মনে হল, পায়েল এই ঘটনা লুকিয়ে রেখেছে অঙ্কনের কাছ থেকে। দেবায়ন, অগ্নিহোত্রীর কথা জিজ্ঞেস করে।
অঙ্কন অগ্নিহোত্রীর কথা বলতে শুরু করে। পায়েল যত বড় হয়েছে, ওর দেহের গঠন তত সুন্দর আর লাস্যময়ী হয়ে উঠেছে। ওর পিসির বাড়ি নৈহাটি, পায়েলের যেতে ইচ্ছে করে না ওর পিসতুতো দাদার জন্য কিন্তু বাবার জন্য যেতে হয় পিসির বাড়িতে। ওর পিসতুতো দাদার কুনজর ছিল পায়েলের উপরে। পিসির বাড়িতে গেলে ওর পিসতুতো দাদা, বিনয়, কোন আছিলায় পায়েলের গায়ে হাত দিত, মাঝে মাঝে ওর বুকে পাছায় হাত দিত। আগে পায়েল কিছু বলত না, কিন্তু পরের দিকে পায়েলের এই সব ভালো লাগত না। পায়েল এই সব কথা কাউকে জানায়নি। এমনকি ওর পিসতুতো দাদা ওকে একদিন একা বাড়িতে পেয়ে, চুমু খেয়ে, স্তন টিপে পাছা টিপে আদর করেছিল। রাগে দুঃখে পায়েল কেঁদেছিল সারারাত, কিন্তু কাউকে বলতে পারে নি।
দিদি আর দেবায়ন গরমের ছুটিতে মুসউরি ভ্রমনে যায়। পায়েলের বাবা, ওকে কয়েক দিনের জন্য ওর পিসির বাড়ি নৈহাটিতে রেখে আসে। পায়েল প্রমাদ গোনে, বুঝতে পারে যে ওর দাদার হাতে ওর ;., হওয়া ছাড়া আর কোন গতি নেই। পায়েল এক মতলব আঁটে তখন, বিনয়ের বন্ধু অগ্নিহোত্রীর সাথে প্রেমের নাটক করে। পায়েল ভেবেছিল যে দুই বন্ধুর ভেতরে দ্বন্দ লাগিয়ে দেবে আর এই ভাবে ও বিনয়ের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে যাবে আর যদি অগ্নিহোত্রীকে ভালো লেগে যায় তাহলে অগ্নিহোত্রীর সাথে পালিয়ে যাবে। নারীর লাস্যময়ী রুপ সব কিছু করতে পারে, সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক হয়েছিল। অগ্নিহোত্রীর সাথে বিনয়ের মনমালিন্য ঘটিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল পায়েল। পায়েল অগ্নিহোত্রীকে নিজের প্রেমের জালে জড়িয়ে নিয়েছিল। কোলকাতা ফিরে আসার পরে, অগ্নিহোত্রীর সাথে বেশ কয়েকবার দেখা হয়।
দেবায়ন মন দিয়ে অঙ্কনের কাছে এই কাহিনী শুনতে শুনতে জিজ্ঞেস করে পায়েলের ব্যাপারে এত কিছু জানল কি করে? অঙ্কন বলে যে পরে এই সব ঘটনা এক এক করে পায়েল ওকে জানিয়েছে। অগ্নিহোত্রীর সাথে প্রেমের কথা পায়েল ওর দিদিকে কিছুটা বলেছিল কিন্তু সম্পূর্ণ বলেনি। পায়েল আর অঙ্কনের মাঝে আগে থেকেই একটু হৃদ্যতা ছিল কিন্তু প্রেম প্রীতি পর্যায় ছিল না। মাঝে মাঝেই দুইজনে ফোনে বেশ গল্প করত। সেই গল্পের আওয়াজ, একদিন ওর দিদি শুনে ফেলেছিল আর সেই নিয়ে প্রশ্ন করেছিল। তখন সেই কথা ঢাকার জন্য গরিমার নাম নেয় অঙ্কন। দেবায়নের কাছে এবারে চিত্র বেশ পরিষ্কার হতে শুরু করে।
প্রথম যেদিন অঙ্কন পায়েলকে ফোন করেছিল তখন পায়েলের সাথে অগ্নিহোত্রীর দেখা হয়নি। একদিন রাতে সাহস জুগিয়ে দিদির ফোন থেকে পায়েলের ফোন নাম্বার নিয়ে পায়েলকে ফোন করেছিল। কাঁপা গলার আওয়াজ শুনে পায়েল রেগে নাম জিজ্ঞেস করেছিল। অঙ্কন ভয় পেয়ে ফোন কেটে দিয়েছিল। কিছু পরে আবার ফোন করেছিল অঙ্কন, তখন কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করেছিল কেমন আছে পায়েল।
পায়েল দ্বিতীয় বার ফোন পেয়ে আরও রেগে যায়, অঙ্কন নিজের পরিচয় দিতে দ্বিধা বোধ করে আবার ফোন কেটে দেয়। রাতে ঘুমাতে পারেনা অঙ্কন, বারে বারে শুধু পায়েলের মুখ ভেসে ওঠে ওর চোখের সামনে। অনেক রাতে ওর ফোনে ফোন আসে পায়েলের। এবারে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে অঙ্কন উত্তর দেয়, “আমি মানে তোমার সাথে একটু কথা বলতে চাইছিলাম, পায়েল দি।”
“পায়েল দি” শুনে পায়েল হেসে ফেলে, “হি হি, তুই? আমি ভাবছিলাম কে না কে আমাকে এত রাতে ফোন করে জ্বালাতন করছে। হটাত করে ফোন করলি? ঘুম আসছে না তোর?”
অঙ্কন পায়েলের হাসির কলতান শুনে খুশি হয়ে বলে, “না গো পায়েল দি, একদম ঘুম আসছে না।”
পায়েল, “কেন আসছে না? গার্ল ফ্রেন্ডের কথা মনে পড়ছে?”
অঙ্কন, “হ্যাঁ বটে আবার না বটে। ঠিক জানিনা কেন ঘুম আসছে না, তবে মনে হল তোমার সাথে একটু কথা বলি।”
পায়েল, “বাঃবা এত রাতে ছেলের প্রেম জেগেছে নাকি? তোর দিদি জানতে পারলে কিন্তু ছাল ছাড়িয়ে দেবে।”
অঙ্কন, “আমার ঘরের দরজা সবসময়ে বন্ধ থাকে। দিদি এত রাতে দেবায়নদা র সাথে হয়ত আড্ডা মারছে, আমার কথা শুনতেই পাবে না।”
পায়েল, “তোর কলেজ কেমন চলছে? সামনে পরীক্ষা, পড়াশুনা করছিস ঠিক ভাবে?”
অঙ্কন, “যা বাবা, তুমি দেখি আমার পড়াশুনা নিয়ে বসে গেলে। দিদির মতন কথা বলতে শুরু করে দিলে দেখি। আমি ভাবলাম একটু গল্প করব।”
পায়েল হেসে বলেছিল, “আচ্ছা বাবা, বল কি বলতে চাস।”
অঙ্কন তোতলায় একটু, কি বলবে ঠিক ভেবে পায় না। ওর মনের মাধুরী যাকে দূর থেকে দেখে এসেছে, ফোনে তার গলার আওয়াজ বড় মধুর শোনায়। অঙ্কনকে চুপ থাকতে দেখে পায়েল নিজেই বলে, “তোর কলেজের বান্ধবীদের কথা বল না হয়।”
অঙ্কন, “না গো পায়েল দি, সেইরকম কোন মনের মতন গার্ল ফ্রেন্ড খুঁজে পেলাম না।”
পায়েল খেলায় অঙ্কনকে, “কেমন গার্ল ফ্রেন্ড পছন্দ তোর?”
অঙ্কন মন বলতে শুরু করে “তোমার মতন সুন্দরী আর সেক্সি গার্ল ফ্রেন্ড পছন্দ আমার। তোমাকে আমার চাই”
সেই কথা গলা পর্যন্ত এসেছিল কিন্তু ঠোঁটে আনতে পারেনি অঙ্কন। তার বদলে বলে, “এই একটু বেশ সুন্দরী হবে। কলেজে সবাই যেন আমার উপরে হুমড়ি খেয়ে পরে। সবার নজর আমার টাকা উড়ানো আর দামী দামী গিফট পাওয়ার প্রতি। ঠিক মনের মতন কাউকে পাচ্ছি না।”
পায়েল, “আচ্ছা বাবা, একদিন দেখিস তোর মনের মতন কাউকে পেয়ে যাবি।”
অঙ্কন মনমরা হয়ে বলে, “জানিনা, তার সাথে দেখা হলে মুখ ফুটে বলতে পারব কি না?”
পায়েল, “কেন, কেন? এমন কে সে যে তাকে তুই মুখ ফুটে বলতে পারবি না?”
অঙ্কন, “না মানে, এখন দেখা পাইনি সেই রকম কাউকে তবে জানি না। ছাড়ো ওই সব, তোমার কথা বল।”
পায়েল হেসে দেয় অঙ্কনের আব্দার শুনে, “আমার কথা কি বলব তোকে? তুই কি আমার বন্ধু নাকি?”
অঙ্কন একটু আহত হয় পায়েলের কথায়, “তা যখন বলতে চাইছ না তাহলে ফোন রাখছি।”
পায়েল হেসে বলে, “বাপ রে ছেলের অভিমান কত। ফোন রাখলে কিন্তু কালকে বাড়ি গিয়ে নাক ফাটিয়ে দেব।”
বাইক পন্ডিতিয়া থেকে ঘুরে অনুপমাদের বাড়ির দিকে ঢোকে। অনুপমা অনুরোধ করে একবার ম্যাডক্স স্কয়ারে নিয়ে যেতে, মাঠের মাঝে দুর্গা পুজোর প্যান্ডেল বানানো শুরু হয়ে গেছে। অনুপমাকে সবাই চেনে, ওই খানে। দেবায়নের সাথে অনুপমাকে দেখে একটা লোক হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে আসে। অনুপমা সেই ভদ্রলোককে হাঁপাতে দেখে কারন জিজ্ঞেস করে।
আগন্তুক, রঞ্জিত দাস, ক্লাবের মেম্বার, হাঁপাতে হাঁপাতে অনুপমাকে বলে, “হ্যাঁ রে, বিশাল কান্ড ঘটে গেছে। তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি যা। আজকে মনে হয় সোমেশদা র কপালে দুঃখ আছে।”
অনুপমা আর দেবায়ন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কেন? কার কি হয়েছে?”
বিংশ পর্ব (#02)
রঞ্জিত বলে, “আরে আর বলিস কেন। তোর ভাই, অঙ্কন আর ওই সান্যাল ডাক্তারের মেয়ে পায়েল। কিছুক্ষণ আগে ওরা দুইজনে এখানে বসে গল্প করছিল। তোর ভাই আর পায়েল, দুইজনকে সেই ছোটো বেলা থেকে দেখে এসেছি। এই ত প্রেম করার বয়স, করুক না কে মানা করেছে। কিন্তু শালা, ওই বকাটে বাঞ্চোত শরত দে, সান্যাল ডাক্তারের পোঁদে তেল মারার জন্য ডাক্তারকে সব বলে দিয়েছে। তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি যা, কমলেশ মেয়েকে ধমক ধামক দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে আর তোদের বাড়ি গেছে। আজকে মনে হয়, সোমেশদাকে পারলে খেয়ে ফেলবে।”
অনুপমা আর দেবায়ন সব কিছু বুঝে যায়। দেবায়ন বাইকে চড়া মাত্রই অনুপমার কাছে ওর মায়ের ফোন আসে, তাড়াতাড়ি বাড়িতে আসার জন্য বলে। দেবায়ন তাড়াতাড়ি বাড়ির দিকে বাইক ছুটিয়ে দেয়। অনুপমা রাগে দুঃখে দেবায়নের কাঁধ খামচে ধরে থাকে। কোনোরকমে বাইক দাঁড় করিয়ে দেবায়ন দৌড় লাগায় বাড়ির দিকে। অনুপমা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যায় বসার ঘরে। বসার ঘরে ঢোকা মাত্র চোখ যায় সোফায় বসা বাবার দিকে। পারমিতা এক দিকে ছেলের হাত ধরে দাঁড়িয়ে। সবার চোখ মুখ থমথমে, কমলেশ নামের ঝড় বয়ে চলে গেছে ওদের বাড়ি ঢোকার আগেই।
দেবায়ন আর অনুপমাকে দেখে, মিস্টার সেন গর্জে ওঠেন, “দ্যাখ তোর ভাইয়ের আর বান্ধবীর কান্ড। সাড়া পাড়ায় আমার মুখ ডুবিয়ে তবে ছাড়ল। এইবারে পুজোতে ভেবেছিলাম কোলকাতায় থাকব, কিন্তু ক্লাবের সবাই জেনে যাবে। কমলেশ যাতা বলে গেল আমাকে। আর কি বলি বল, আমি কি মানা করেছিলাম ওকে? শেষ পর্যন্ত কি না নিজের থেকে পাঁচ বছরের বড় একটা মেয়েকে প্রেম করেছে? পিটিয়ে ছাল খুলে দেওয়া উচিত। বাইক চাই, বাইক চাই, নাচানাচি দেখো ছেলের। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে, কোচিং ফাঁকি দিয়ে শুধু প্রেম করে বেড়িয়েছে।”
অঙ্কন চুপ করে ওর মায়ের পেছনে দাঁড়িয়ে। দেবায়ন মিস্টার সেনকে শান্ত করে বলে, “আপনি একটু শান্ত হন, আগে বলুন পায়েলের বাবা কি বলেছে আপনাকে?”
মিস্টার সেন, “আচ্ছা তুমি বল, আমি কি তোমাদের কোনদিন মানা করেছি? তুমি আর অনু তোমার মায়ের সাথে মুসৌরি বেড়াতে গেলে, আমি মানা করেছিলাম? একবার অন্তত ওর মাকে জানাতে পারত যে ছেলে প্রেম করছে। প্রেম করেছে, সেটা বড় কথা নয় কিন্তু একটু দেখে শুনে করবে ত? অত বড় মেয়ে তার উপরে কমলেশ। আমি কমলেশকে অনেক দিন ধরে চিনি। একদম ইতর মনোবৃত্তির মানুষ। ডাক্তার হলে কি হবে মুখের ভাষা, মানসিকতা একদম ভালো নয়।”
অনুপমা অঙ্কনকে জিজ্ঞেস করে, “কি রে তোদের এতদিন ধরে জিজ্ঞেস করে গেলাম তোরা একটা উচ্চবাচ্চ পর্যন্ত করলি না।”
অঙ্কন চুপ করে পারমিতার পেছনে দাঁড়িয়ে ওর মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। পারমিতা মেয়ের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলে, “কি বলছিস তুই? পায়েল আর অঙ্কনের ব্যাপারে তুই জানতিস না?”
অনুপমা কাষ্ঠ হেসে উত্তর দেয়, “জানলে কি আর তোমার কাছে গরিমার কথা বলতাম?”
অনুপমা অঙ্কনকে বলে, “তুই উপরে যা, পরে তোর সাথে কথা হবে।”
অঙ্কন উপরে না গিয়ে অদুরে দাঁড়িয়ে থেকে ওদের কথা শোনে।
মিস্টার সেন বলেন, “কমলেশ খুব রেগে মেগে ঘরে ঢুকে তোলপাড়। আমার ছেলে নীচ, আমার ছেলে ইতর, আমরা ব্যাভিচারি। আমাদের নাকি আত্মসন্মান বোধ কিছু নেই, টাকা পয়সা আছে বলে সব কিছু করতে পারি আমরা। আমার মেয়ে ওর মেয়ের মাথা খেয়েছে। অঙ্কনকে ত প্রায় কান ধরে টানতে টানতে বাড়িতে নিয়ে এসেছিল। আমি কিছু বলার আগেই যাতা বলতে শুরু করে দেয়।”
পারমিতা মাথায় হাত দিয়ে সোফার উপরে বসে পরে, “সব ঠিক আছে, ছেলে প্রেম করেছে পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু পায়েল?”
দেবায়নের দিকে তাকিয়ে বলে, “না পায়েল নয়। তুমি ওকে কিছু করে বুঝাতে চেষ্টা কর দেবায়ন। পায়েল নয়, পায়েলকে মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে।”
অনুপমা আর দেবায়ন পরস্পরের মুখ চাওয়াচায়ি করে। পারমিতার কথার অন্তর্নিহিত অর্থ ওদের অজানা নয়। দেবায়নের সাথে পায়েলের আর অনুপমার সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত পারমিতা। সেই মেয়েকে বাড়ির বউমা হিসাবে মানতে বড় কষ্ট হয়।
নিরুপায় অনুপমা পারমিতাকে প্রবোধ দিয়ে বলে, “মা, আমাদের একটু ভাবতে দাও। সময় সব ঠিক করে দেবে, দাঁড়াও দেখি আগে পায়েল আর অঙ্কনের সাথে কথা বলে।”
পারমিতা, দেবায়ন আর অনুপমার দিকে কাতর কণ্ঠে বলে, “যাই কর, অঙ্কন প্রেম করেছে ভালো কথা কিন্তু আমি পায়েলকে ঠিক অঙ্কনের জন্য মেনে নিতে পারছি না। পায়েল ওর চেয়ে অনেক বড় আর পায়েলের ব্যাপার আমি সব জানি।”
অঙ্কন এগিয়ে এসে মাথা নিচু করে বলে, “দেখো তোমাদের জানাই নি সেটা আমার ভুল, তার ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। তবে পায়েলকে আমি ভালোবাসি আর পায়েল আমাকে ভালোবাসে। আমি জানতাম মা, দিদি, দেবায়নদা কেউ আমাদের এই সব মেনে নেবে না। তাই আমরা ঠিক করে নিয়েছিলাম যে আগামী পাঁচ বছরের জন্য দুইজনে লুকিয়ে রাখব আমাদের সম্পর্ক। এত তাড়াতাড়ি যে ধরা পরে যাবো সেটা স্বপ্নেও ভাবিনি।”
অঙ্কনের কথা শুনে মিস্টার সেন রেগে যান, “তুই একটা নচ্ছার ছেলে। পড়াশুনার নাম নেই তোর। রক্তের দোষ আর কোথায় যাবে। ভালো হত যদি …”
কথাটা শেষ করল না মিস্টার সেন, চোখে মুখে ফুটে ওঠে এক অব্যক্ত বেদনা। সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পেরে চুপ করে যান, কথাটা বলে খুব ভুল করেছে মিস্টার সেন।
পারমিতার চোখ ছলছল করে ওঠে মিস্টার সেনের সেই অব্যাক্ত বাক্য ভেবে। অনুপমা ওর বাবাকে ধমকে ওঠে, “তুমি কি বলছ ভাইকে? একটু ভেবে চিন্তে কথা বল।”
পারমিতা ছলছল চোখে মিস্টার সেনকে বলে, “এতোদিন তোমার ছেলে খুব ভালো ছিল তাই না? আর একটা কথা বলবে না তুমি আমার ছেলের সম্বন্ধে।”
মিস্টার সেন বুঝে যান যে অব্যাক্ত ওই বাক্যবাণ বড় নিষ্ঠুর, মুখ থেকে বের হয়ে যায়নি সেটাই বড় কথা। অঙ্কনের দিকে তাকিয়ে মিস্টার সেন গম্ভির কণ্ঠে বলেন, “তোকে উপরে যেতে বলা হয়েছে তুই এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস?”
অঙ্কন মাথা নিচু করে বলে, “বাবা কি বলতে চাইছে আমার রক্তের ব্যাপারে আমি জানতে চাই।”
সবাই নির্বাক হয়ে অঙ্কনের দিকে তাকিয়ে থাকে। পরিস্থিতির সামাল দেওয়ার জন্য দেবায়ন অঙ্কনকে বলে, “আরে বাবা কিছু না, রক্তের কথা কিছু না। তুই জানিস কাকু রাগের মাথায় মাঝে মাঝে উলটো পাল্টা বলে ফেলে। ব্যাপার হচ্ছে, তুই যখন খুব ছোটো ছিলিস, তখন তোর ব্লাডে হিমোগ্লোবিন কম হয়ে যায় একবার। সেই সময়ে বেশ কয়েক বোতল রক্ত চড়াতে হয়েছিল। সেসব কথা তোর মনে নেই। ওই রক্তের কথা বলা হচ্ছে আর কিছু না।”
অঙ্কন চুপ করে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে বলে, “মা বাবাকে বলতে আমার কোন ভয় ছিল না। শুধু মাত্র দিদিকে ভয় ছিল বলে আমরা লুকিয়ে ছিলাম। আমি ভেবেছিলাম ওর কলেজ শেষ হলে আর আমার কলেজ শুরু হলে তারপরে আমরা তোমাদের আমাদের ব্যাপারে বলব। আমি পায়েলকে ভালোবাসি, ওকে ছাড়া আমি থাকবো না।”
ভাইয়ের থমথমে মুখ দেখে অনুপমা বলে, “তুই নিজের ঘরে যা, না হলে তুই আজকে দেবায়নের সাথে ওর বাড়ি চলে যা। আমরা আগে এই ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করে দেখি। আমি জানি কমলেশ কাকু যখন জেনে গেছে পায়েলের এই ব্যাপার তখন ওর ওপরে খুব অত্যাচার হবে। দেখি কি করা যায়।”
মিস্টার সেন অঙ্কনের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলেন, “তুই উপরে যা। পরে তোর সাথে কথা বলব।”
মিস্টার সেন মাথায় হাত দিয়ে চুপ করে বসে থাকেন। পারমিতা, মিস্টার সেনের পাশে বসে শান্ত হতে অনুরোধ করে। অনুপমা অথবা দেবায়নের মাথা কিছু কাজ করছে না, কি করবে কিছুই ভেবে পায় না দুইজনে। আগমনীর ঢাকের বাদ্যির জায়গায় বাড়ির পরিবেশ থমথমে হয়ে যায়। দেবায়ন, অঙ্কনকে বলে নিজের কাপড় গুছিয়ে নিতে। পারমিতা আর অনুপমা করুন চোখে দেবায়নের দিকে তাকিয়ে থাকে। অঙ্কন উপরে নিজের ঘরে চলে যাবার পরে দেবায়ন বলে, অঙ্কনের সাথে কথা বলে বিচার করে ওদের জানিয়ে দেবে। পারমিতা কিছুতেই পায়েলকে বাড়ির বউমা করতে নারাজ। অনুপমা মাথায় হাত দিয়ে বসে। মিস্টার সেন চুপ করে সোফায় বসে ড্রিঙ্ক করতে শুরু করে দেন।
দেবায়ন কিছু পরে অঙ্কনকে নিয়ে নিজের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। অনুপমা আর পারমিতা দুইজনে দেবায়নকে বারবার বলে যে করে হোক অঙ্কনকে বুঝাতে। দেবায়ন বলে যে চেষ্টা করবে, আগে অঙ্কনের কাছে সম্পূর্ণ গল্প শুনতে চায় দেবায়ন। অনুপমাদের বাড়ি থেকে বের হয়ে দেবায়ন ওর মাকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে সাথে অঙ্কন আসছে। অঙ্কনের কথা শুনে দেবশ্রী একটু অবাক হয়ে কারন জিজ্ঞেস করে। উত্তরে দেবায়ন জানায় যে বাড়িতে ফিরে সব কিছু মাকে খুলে বলবে।
কয়েকদিন পরেই মহালয়া আর তার আগেই এই রকম একটা কান্ড ঘটে যাওয়াতে দেবায়ন বেশ চিন্তিত। অঙ্কন চুপ করে পেছনে বসে, দেবায়নকে বেশ সমিহ করে চলে তাই বুকের মধ্যে দুরুদুরু শুরু হয়ে যায় ওর। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কি জিজ্ঞেস করবে, কি করবে কিছুই ভেবে পায় না।
বাড়িতে ঢুকতেই দেবশ্রী জানিয়ে দেয় যে পারমিতা ফোনে সব কিছু জানিয়ে দিয়েছে। দেবশ্রী একবার দেবায়নের দিকে তাকায় একবার অঙ্কনের দিকে। অঙ্কন চুপ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। দেবশ্রী ওর মনের অবস্থা সামাল দেবার জন্য হাত মুখ ধুয়ে খেতে বসতে বলে। অঙ্কনকে দেবায়নের রুমের মধ্যে পাঠিয়ে দিয়ে দেবশ্রী দেবায়নকে পায়েলের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। উত্তরে দেবায়ন জানায় যে পায়েল ওদের কলেজের বান্ধবী। দেবশ্রী বলে যে পারমিতা খুব আহত হয়েছে পায়েল আর অঙ্কনের ব্যাপারে জেনে। বারবার বলে দিয়েছে যে ছেলেকে কোন ভাবে বুঝিয়ে যেন পায়েলের থেকে দুরে সরিয়ে রাখে। দেবায়ন নিজের ঘরের দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে যে অঙ্কন ওখানে দাঁড়িয়ে। অঙ্কনের থমথমে চেহারা দেখে দেবায়ন ভাবনায় পরে যায়। মাকে বলে, আগে অঙ্কনের সাথে কথা বলে তারপরে কোন এক সিদ্ধান্ত নেবে। অঙ্কন জানিয়ে দেয় যে কোন রকম উলটো সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ। দেবায়নের চোয়াল শক্ত হয়ে যায় অঙ্কনের কথা শুনে। অঙ্কনের অবস্থা সঙ্গিন দেখে দেবশ্রী বলে যে আগে খাওয়া দাওয়া সারতে তারপরে সব কিছু জেনে বুঝে একটা বিচার করা যাবে।
খাওয়ার পরে দেবায়ন অঙ্কনকে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। ঠিক সেই সময়ে অনুপমার ফোন আসে। চিন্তিত অনুপমা জানায় যে পায়েলের ফোন বন্ধ, পায়েলের বাড়ির ফোনে ফোন করেছিল কিন্তু কেউ ফোন তোলে নি। ওইদিকে মিস্টার সেন আর পারমিতা বেঁকে বসেছেন পায়েলের ব্যাপারে। অনুপমা, ওর মাকে অনেক বুঝাতে চেষ্টা করেছে, যে পায়েল মেয়ে হিসাবে খারাপ নয়। মন ভালো, মিষ্টি মেয়ে। বাড়ির প্রবল চাপে ওকে বাড়ির বাইরে উশ্রিঙ্খল করে দিয়েছে। বাড়িতে ওর বাবা মায়ের কাছে একটু ছাড় পেলে হয়ত পায়েল এতটা উশৃঙ্খল হয়ে উঠত না। কিন্তু পারমিতা কিছুই মানতে রাজি নয়। অঙ্কনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে, দেবায়ন জানায় যে অঙ্কনের সাথে এখন কথা বলা হয়ে ওঠেনি।
রাতে অঙ্কনকে দেবায়ন জিজ্ঞেস করে পায়েলের কথা। অঙ্কন চুপ করে থাকে, দেবায়নের বাঘের মতন কণ্ঠ স্বর শুনে গলা শুকিয়ে যায়। দেবায়ন স্বর নরম করে আশস্ত করে জানিয়ে দেয় যে ওর বাবা মা সবাই পায়েলের বিরুদ্ধে। অঙ্কন কি বলবে ভেবে পায় না। দেবায়ন ওদের গল্প শোনার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে, অঙ্কনকে বলে যে পুরো কাহিনী জানালে ওর জন্য কিছু করতে পারে।
বুক ভরে শ্বাস নেয় অঙ্কন, “তুমি সত্যি বলছো?”
দেবায়ন, “তোর গার্লফ্রেন্ড গরিমা, কেউ আছে কি ওই নামে? আর পায়েল যে আমাদের অগ্নিহোত্রীর কথা বলে বেড়াতো, কে সে লোক? সঙ্গীতার কাছে শুনেছি যে পায়েলের পিসতুতো দাদার বন্ধু, মানে অগ্নিহোত্রী আছে।”
অঙ্কন বলে, “অগ্নিহোত্রী আর গরিমা, দুই জনেই বর্তমান। তবে আমার গার্লফ্রেন্ড গরিমা নয়। গরিমা আমার ভালো বান্ধবী, প্রনবেশের গার্ল ফ্রেন্ড। আমাদের কাজে সাহায্য করার জন্য ওকে আমি সব কথা জানিয়েছিলাম। তোমাদের সামনে কাউকে প্রস্তুত করতে হত তাই গরিমা আমার গার্ল ফ্রেন্ড সাজতে রাজি হয়। আমি ওকে জানিয়েছিলাম যে এই খেলা হয়ত বেশ কিছুদিন খেলতে হবে। গরিমাকে সন্তুষ্ট করতে ওকে একটা ল্যাপটপ কিনে দিতে হয়েছে। দিদি আমাকে সেই টাকা দিয়েছিল।”
দেবায়ন, “হুম, গরিমার কথা বুঝলাম। কিন্তু তুই কি করে পায়েলের প্রেমে পড়লি? একটু খোলসা করে বল, কিছু লুকাস না।”
দেবায়নের ঠোঁটে বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে, “আমি জানি তুই বড় হয়ে গেছিস, আর পায়েল কি রকম মেয়ে সেটাও আমার অজানা নয়।”
অঙ্কন বলতে শুরু করে ওদের গল্প। পায়েল পাড়ার মেয়ে, ছোটো বেলা থেকে অঙ্কন দেখে আসছে তবে আগে কোনদিন পায়েলকে দেখে ওর মনে কিছু হয়নি। প্রথম যেদিন পায়েল ওর দিদির সাথে ওদের বাড়িতে আসে সেদিনও পায়েলকে দেখে ওর কিছু মনে হয়নি। দিদির বাকি বান্ধবীরা বাড়িতে আসত, গল্প করত কিন্তু তাদের মধ্যে পায়েলকে ওর বড় ভালো লাগে। ভালো লাগার কারন, পায়েলের খোলামেলা পোশাক আর নধর দেহের গঠন। হাঁটতে চলতে যেন এক ঝঙ্কার বেজে উঠত অঙ্কনের চোখের সামনে। ওই ঝঙ্কারের আর মত্ত চালে পায়েলের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যায় অঙ্কন। কিন্তু পায়েল ওর চেয়ে বয়সে অনেক বড় আর দিদির বান্ধবী তাই কোনদিন মুখ ফুটে পায়েলকে নিজের মনের কথা জানায় নি। দিদির সাথে মাঝে মাঝে পায়েল ওদের বাড়িতে থেকে যেত, রাতে গল্প করার সময়ে অথবা কোন আছিলায় পায়েলের সাথে গল্প করত। তখন পায়েলের হাবভাবে অঙ্কন বুঝতে পারত যে ওর প্রতি পায়েলের একটু সংবেদনশীল। কিন্তু বহুদিন ধরে দুই জনে শুধু চোখের দেখা আর কথা বলা ছাড়া নিজেদের মনের কথা কাউকে ব্যাক্ত করেনি।
বিংশ পর্ব (#03)
পায়েলের বাবা, ডক্টর কমলেশ সান্যাল খুব বদরাগী প্রকৃতির লোক। পায়েলের মা, সুজাতা, সেই তুলনায় অনেক নিরীহ আর রক্ষণশীল মহিলা। পায়েল অনেক বড় বয়স পর্যন্ত বাবা মাকে ঝগড়া করতে দেখেছে, এমনকি ওর বাবা ওর মায়ের গায়ে হাত তোলে, সেও দেখেছে। বাবাকে বাধা দিতে গেলে পায়েল অনেক বার মার খেয়েছে। কোন কারন ছাড়াই ওর বাবা ওর মাকে মারত, তরকারিতে নুন হলেও মারত, নুন না হলেও মারত। টাকা পয়সা সব কিছুই ছিল, কিন্তু কেন ওর মাকে ওর বাবা প্রায়দিন মারধোর করত সেই কারন ওর অজানা। একদিন পায়েল ওর মাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ওর মা বলেছিল যে ওর বাবা বদরাগী, বাইরের কারুর কথা বলা, মেলা মেশা পছন্দ করে না, কোন কিছুতেই ভালো দেখে না। পায়েল কলেজে পড়ার সময় থেকেই আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখত, বাড়ির চার দেয়ালের বাইরে উন্মুক্ত পৃথিবীতে বিচরন করার স্বপ্ন দেখত। কিন্তু ওর বাবার ভয়ে কলেজে থাকতে কোনদিন সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি। কোন ছেলের সাথে কথা বলা দুরের কথা, কারুর দিকে তাকালেই ওর বাবা যেন ওকে গিলে ফেলবে এমন করত। তাও পায়েল সেই সময়ে লুকিয়ে চুরিয়ে প্রেম করেছে। অচেনা ছোঁয়ার কিছু স্বাদ নিয়েছে। পায়েল ছোটবেলা থেকে মেয়েদের কলেজ, মহাদেবী বিড়লাতে দিদির সাথে পড়াশুনা করেছে। সেই সময় থেকেই দিদির আর পায়েলের চেনাজানা। কলেজে পড়ার সময়ে থেকে দিদি, অনুপমার সাথে পায়েলের বন্ধুত্ত প্রগাড় হয়ে ওঠে। দিদির খোলামেলা পোশাক আশাক দেখে পায়েল উন্মুক্ত আকাশে ওড়ার স্বপ্ন দেখে। দিদির সাহায্যে পায়েল প্রথম স্বাধীনতার স্বাদ পায়, প্রথম ডিস্কো থেকে যাওয়া, প্রথম কোন বড় রেস্টুরেন্টে খাওয়া, মন খুলে কেনাকাটা করা সব দিদির জন্য করে। পায়েলের এই খোলামেলা পোশাক, নধর গঠনের জন্য অনেক ছেলেরা ওকে কাছে পেতে চেয়েছে। পায়েল সেই সময়ে উড়তে উড়তে অনেকের কাছে ধরা দিয়েছে। পায়েল জানত ওর বাবা যদি এই স্বভাবের কথা জানতে পারে তাহলে ওকে আস্ত রাখবে না, তাই পায়েলের বেশির ভাগ পোশাক দিদির আলমারিতে রেখে দিত। কলেজে যাবার আগে ওদের বাড়িতে এসে পোশাক পালটে তবে দিদির সাথে কলেজ যেত। বাধা অবস্থায় থাকতে থাকতে পায়েল হটাত করে মুক্তির স্বাদ পায় দিদির হাত ধরে, তাই পায়েল একটু বেশি রকমের উশ্রিঙ্খল হয়ে যায়। যদিও অঙ্কন ওর সব উশ্রিঙ্খলতার কথা জানে না, তবে জানে যে পায়েল মাঝে মাঝে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে বাড়িতে ফিরত দিদির সাথে। সেদিন আর পায়েল নিজের বাড়িতে যেত না, দিদি ওকে নিজের কাছে রেখে দিত। এক পাড়ায় বাড়ি, তাই দিদির সাথে মেলামেশা করাতে ওর বাবা ওকে বিশেষ কিছু বলত না। পায়েল বলেছিল যে কোনদিন যদি কাউকে ওর মনে ধরে তাহলে তার সাথে বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে যাবে আর ওর মাকে সাথে নিয়ে যাবে। বাড়ির ওই লোহার খাঁচা থেকে মুক্ত হতে চেয়েছিল কিন্তু ওর অদৃষ্টে মনের মতন মানুষ জুটল না। সবাই ওকে শুধু ভোগের বস্তু হিসাবে ব্যাবহার করে গেছে।
দেবায়ন চুপ করে অঙ্কনের কথা শুনে যায়। পায়েলের এই কাহিনী অনুপমা ওকে আগেই বলেছিল। অঙ্কনের মুখে সব শুনে একটু দমে যায়, অঙ্কন কি জানে যে ওর দিদির সাথে আর দেবায়নের সাথে পায়েলের শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে? অঙ্কনের কথা শুনে মনে হল, পায়েল এই ঘটনা লুকিয়ে রেখেছে অঙ্কনের কাছ থেকে। দেবায়ন, অগ্নিহোত্রীর কথা জিজ্ঞেস করে।
অঙ্কন অগ্নিহোত্রীর কথা বলতে শুরু করে। পায়েল যত বড় হয়েছে, ওর দেহের গঠন তত সুন্দর আর লাস্যময়ী হয়ে উঠেছে। ওর পিসির বাড়ি নৈহাটি, পায়েলের যেতে ইচ্ছে করে না ওর পিসতুতো দাদার জন্য কিন্তু বাবার জন্য যেতে হয় পিসির বাড়িতে। ওর পিসতুতো দাদার কুনজর ছিল পায়েলের উপরে। পিসির বাড়িতে গেলে ওর পিসতুতো দাদা, বিনয়, কোন আছিলায় পায়েলের গায়ে হাত দিত, মাঝে মাঝে ওর বুকে পাছায় হাত দিত। আগে পায়েল কিছু বলত না, কিন্তু পরের দিকে পায়েলের এই সব ভালো লাগত না। পায়েল এই সব কথা কাউকে জানায়নি। এমনকি ওর পিসতুতো দাদা ওকে একদিন একা বাড়িতে পেয়ে, চুমু খেয়ে, স্তন টিপে পাছা টিপে আদর করেছিল। রাগে দুঃখে পায়েল কেঁদেছিল সারারাত, কিন্তু কাউকে বলতে পারে নি।
দিদি আর দেবায়ন গরমের ছুটিতে মুসউরি ভ্রমনে যায়। পায়েলের বাবা, ওকে কয়েক দিনের জন্য ওর পিসির বাড়ি নৈহাটিতে রেখে আসে। পায়েল প্রমাদ গোনে, বুঝতে পারে যে ওর দাদার হাতে ওর ;., হওয়া ছাড়া আর কোন গতি নেই। পায়েল এক মতলব আঁটে তখন, বিনয়ের বন্ধু অগ্নিহোত্রীর সাথে প্রেমের নাটক করে। পায়েল ভেবেছিল যে দুই বন্ধুর ভেতরে দ্বন্দ লাগিয়ে দেবে আর এই ভাবে ও বিনয়ের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে যাবে আর যদি অগ্নিহোত্রীকে ভালো লেগে যায় তাহলে অগ্নিহোত্রীর সাথে পালিয়ে যাবে। নারীর লাস্যময়ী রুপ সব কিছু করতে পারে, সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক হয়েছিল। অগ্নিহোত্রীর সাথে বিনয়ের মনমালিন্য ঘটিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল পায়েল। পায়েল অগ্নিহোত্রীকে নিজের প্রেমের জালে জড়িয়ে নিয়েছিল। কোলকাতা ফিরে আসার পরে, অগ্নিহোত্রীর সাথে বেশ কয়েকবার দেখা হয়।
দেবায়ন মন দিয়ে অঙ্কনের কাছে এই কাহিনী শুনতে শুনতে জিজ্ঞেস করে পায়েলের ব্যাপারে এত কিছু জানল কি করে? অঙ্কন বলে যে পরে এই সব ঘটনা এক এক করে পায়েল ওকে জানিয়েছে। অগ্নিহোত্রীর সাথে প্রেমের কথা পায়েল ওর দিদিকে কিছুটা বলেছিল কিন্তু সম্পূর্ণ বলেনি। পায়েল আর অঙ্কনের মাঝে আগে থেকেই একটু হৃদ্যতা ছিল কিন্তু প্রেম প্রীতি পর্যায় ছিল না। মাঝে মাঝেই দুইজনে ফোনে বেশ গল্প করত। সেই গল্পের আওয়াজ, একদিন ওর দিদি শুনে ফেলেছিল আর সেই নিয়ে প্রশ্ন করেছিল। তখন সেই কথা ঢাকার জন্য গরিমার নাম নেয় অঙ্কন। দেবায়নের কাছে এবারে চিত্র বেশ পরিষ্কার হতে শুরু করে।
প্রথম যেদিন অঙ্কন পায়েলকে ফোন করেছিল তখন পায়েলের সাথে অগ্নিহোত্রীর দেখা হয়নি। একদিন রাতে সাহস জুগিয়ে দিদির ফোন থেকে পায়েলের ফোন নাম্বার নিয়ে পায়েলকে ফোন করেছিল। কাঁপা গলার আওয়াজ শুনে পায়েল রেগে নাম জিজ্ঞেস করেছিল। অঙ্কন ভয় পেয়ে ফোন কেটে দিয়েছিল। কিছু পরে আবার ফোন করেছিল অঙ্কন, তখন কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করেছিল কেমন আছে পায়েল।
পায়েল দ্বিতীয় বার ফোন পেয়ে আরও রেগে যায়, অঙ্কন নিজের পরিচয় দিতে দ্বিধা বোধ করে আবার ফোন কেটে দেয়। রাতে ঘুমাতে পারেনা অঙ্কন, বারে বারে শুধু পায়েলের মুখ ভেসে ওঠে ওর চোখের সামনে। অনেক রাতে ওর ফোনে ফোন আসে পায়েলের। এবারে বুক ভরে শ্বাস নিয়ে অঙ্কন উত্তর দেয়, “আমি মানে তোমার সাথে একটু কথা বলতে চাইছিলাম, পায়েল দি।”
“পায়েল দি” শুনে পায়েল হেসে ফেলে, “হি হি, তুই? আমি ভাবছিলাম কে না কে আমাকে এত রাতে ফোন করে জ্বালাতন করছে। হটাত করে ফোন করলি? ঘুম আসছে না তোর?”
অঙ্কন পায়েলের হাসির কলতান শুনে খুশি হয়ে বলে, “না গো পায়েল দি, একদম ঘুম আসছে না।”
পায়েল, “কেন আসছে না? গার্ল ফ্রেন্ডের কথা মনে পড়ছে?”
অঙ্কন, “হ্যাঁ বটে আবার না বটে। ঠিক জানিনা কেন ঘুম আসছে না, তবে মনে হল তোমার সাথে একটু কথা বলি।”
পায়েল, “বাঃবা এত রাতে ছেলের প্রেম জেগেছে নাকি? তোর দিদি জানতে পারলে কিন্তু ছাল ছাড়িয়ে দেবে।”
অঙ্কন, “আমার ঘরের দরজা সবসময়ে বন্ধ থাকে। দিদি এত রাতে দেবায়নদা র সাথে হয়ত আড্ডা মারছে, আমার কথা শুনতেই পাবে না।”
পায়েল, “তোর কলেজ কেমন চলছে? সামনে পরীক্ষা, পড়াশুনা করছিস ঠিক ভাবে?”
অঙ্কন, “যা বাবা, তুমি দেখি আমার পড়াশুনা নিয়ে বসে গেলে। দিদির মতন কথা বলতে শুরু করে দিলে দেখি। আমি ভাবলাম একটু গল্প করব।”
পায়েল হেসে বলেছিল, “আচ্ছা বাবা, বল কি বলতে চাস।”
অঙ্কন তোতলায় একটু, কি বলবে ঠিক ভেবে পায় না। ওর মনের মাধুরী যাকে দূর থেকে দেখে এসেছে, ফোনে তার গলার আওয়াজ বড় মধুর শোনায়। অঙ্কনকে চুপ থাকতে দেখে পায়েল নিজেই বলে, “তোর কলেজের বান্ধবীদের কথা বল না হয়।”
অঙ্কন, “না গো পায়েল দি, সেইরকম কোন মনের মতন গার্ল ফ্রেন্ড খুঁজে পেলাম না।”
পায়েল খেলায় অঙ্কনকে, “কেমন গার্ল ফ্রেন্ড পছন্দ তোর?”
অঙ্কন মন বলতে শুরু করে “তোমার মতন সুন্দরী আর সেক্সি গার্ল ফ্রেন্ড পছন্দ আমার। তোমাকে আমার চাই”
সেই কথা গলা পর্যন্ত এসেছিল কিন্তু ঠোঁটে আনতে পারেনি অঙ্কন। তার বদলে বলে, “এই একটু বেশ সুন্দরী হবে। কলেজে সবাই যেন আমার উপরে হুমড়ি খেয়ে পরে। সবার নজর আমার টাকা উড়ানো আর দামী দামী গিফট পাওয়ার প্রতি। ঠিক মনের মতন কাউকে পাচ্ছি না।”
পায়েল, “আচ্ছা বাবা, একদিন দেখিস তোর মনের মতন কাউকে পেয়ে যাবি।”
অঙ্কন মনমরা হয়ে বলে, “জানিনা, তার সাথে দেখা হলে মুখ ফুটে বলতে পারব কি না?”
পায়েল, “কেন, কেন? এমন কে সে যে তাকে তুই মুখ ফুটে বলতে পারবি না?”
অঙ্কন, “না মানে, এখন দেখা পাইনি সেই রকম কাউকে তবে জানি না। ছাড়ো ওই সব, তোমার কথা বল।”
পায়েল হেসে দেয় অঙ্কনের আব্দার শুনে, “আমার কথা কি বলব তোকে? তুই কি আমার বন্ধু নাকি?”
অঙ্কন একটু আহত হয় পায়েলের কথায়, “তা যখন বলতে চাইছ না তাহলে ফোন রাখছি।”
পায়েল হেসে বলে, “বাপ রে ছেলের অভিমান কত। ফোন রাখলে কিন্তু কালকে বাড়ি গিয়ে নাক ফাটিয়ে দেব।”