28-09-2020, 06:39 PM
Written By pinuram
বিংশ পর্ব (#01)
কিছুদিন ধরে পায়েলের চরিত্রের বেশ পরিবর্তন ঘটেছে। আগে যেমন অনুপমার সাথে রোজ দিন গাড়িতে করে কলেজে আসত, সেটা অনেক কমিয়ে দিয়েছে। জিজ্ঞেস করলে বলে যে বাসে আসাই ঠিক কেননা সকালে অনুপমার বাড়ির নাম করে একটু আগেই বেড়িয়ে যায় আর অগ্নিহোত্রীর সাথে দেখা করে। অগ্নিহোত্রী ওকে নিতে আসে তাই অনুপমার সাথে কলেজে আসা কমিয়ে দিয়েছে। তবে বিকেলে কোন কোন দিন পায়েল, অনুপমার বাড়িতে কলেজ ফেরত চলে আসে, কোন কোন দিন একা একা কলেজ ছুটি হবার আগেই বেড়িয়ে পরে। অনুপমার বাড়িতে আড্ডা মারার সময়ে অঙ্কন মাঝে মাঝে ওদের সাথে গল্প করে। অঙ্কনের নতুন প্রেম, গরিমার কথা পায়েলকে জানায় অনুপমা। পায়েলের ব্যাপারে অঙ্কনকে একদিন জানায় অনুপমা। পায়েল ইদানীং ছোটো স্কার্ট, চাপা টপ ছেড়ে লম্বা স্কার্ট আর জিন্স পড়া শুরু করেছে। মাঝে মাঝে সালোয়ার কামিজ পরে কলেজে আসে। ওর এই পোশাক আশাকের পরিবর্তন সবার চোখে পরে। সবাই জিজ্ঞেস করলে লাজুক হেসে উত্তর দেয় যে অগ্নিহোত্রীর পছন্দের কাপড় পড়তে হয় এবং পায়েল তাতে বেশ খুশি। মাঝে মাঝে সপ্তাহ শেষে উধাউ হয়ে যায়, অনুপমাকে ফোনে বলে যদি ওর বাড়ি থেকে কেউ জিজ্ঞেস করে তাহলে যেন জানিয়ে দেয় যে পায়েল অনুপমার সাথেই আছে। পায়েলকে অগ্নিহোত্রীর কথা জিজ্ঞেস করলে পায়েল হাসি মুখে এড়িয়ে যায় সেই প্রশ্ন, জানিয়ে দেয়যে সময় মতন অগ্নিহোত্রীর সাথে দেখা করিয়ে দেবে, সেই সাথে পায়েল জানায় যে বাড়ি থেকে পালান হয়ত হবে না। অনুপমা একটু অবাক হয়ে যায় সেই সাথে খুশি হয় যে পায়েল তার পুরানো চিন্তা ছেড়ে দিয়েছে। পায়েল বলে যে ওর বাবা মা হয়ত ওদের সম্পর্ক মেনে নেবে না, তবে বিয়ের যখন সময় হবে তখন নিশ্চয় সবাই মেনে নেবে। কথাটা হেঁয়ালির মতন হলেও, অনুপমা খুঁচিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করে না।
দেবায়ন, অঙ্কনের কথা জিজ্ঞেস করে। অনুপমা জানায় যে অঙ্কন প্রেমে পরে অনেক বদলে গেছে। শনি, রবি বাড়িতে থাকে না বললে চলে। অনুপমা বার কয়েক গরিমার সাথে দেখা করার কথা বলেছিল, অঙ্কন কথা ঘুরিয়ে দেয়। অনুপমা বলেছে যে ওর জন্মদিনে বাড়িতে ডাকতে। অঙ্কন জানিয়েছে যে জন্মদিনে গরিমাকে বাড়িতে ডেকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে।
বর্ষার শেষে, শরতের মিষ্টি আভাসে আকাশ বাতাস মুখরিত। ইতিমধ্যে দেবায়ন বাইক কিনেছে, অনুপমার ইচ্ছে ছিল একটা স্টাইলিস্ট বাইক, কিন্তু দেবায়নের পছন্দ ছিল একটা ভারী বাইকের তাই শেষ পর্যন্ত বুলেট কেনে। বেশ ভারী গাড়ি, রাস্তা কাঁপিয়ে কলেজ কাঁপিয়ে আওয়াজ করে বের হয়। লম্বা চওড়া ছেলে দেবায়ন, পেছনে অনুপমাকে নিয়ে কলেজ থেকে বের হলে অনেকের চোখ ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে। এতদিন পরেও অনুপমা ওই ছেলে গুলোর আর মেয়েদের চাহনি উপভোগ করে।
সামনে পুজো, সবাই ঠিক করে যে পুজোতে একসাথে ঠাকুর দেখবে, একসাথে পুজোর জামা কাপড় কেনা কাটা করবে। অগত্যা দেবায়ন আর অনুপমার ঠিক সময় হয়ে আর ওঠে না। কলেজের পরে দৌড়াতে হয় সোজা কম্পিউটার ক্লাসে, শনি রবিবারেও ওদের ক্লাস থাকে। সঙ্গীতা, শ্রেয়া মন মরা হয়ে যায়। পায়েল জানায় যে ওর পুজোর শপিং করা হয়ে গেছে। অনেকদিনের বন্ধুত্ব অনুপমার আর পায়েলের। গত দুই বছরে পায়েল অনুপমাকে ছেড়ে পুজোর জামা কাপড় কিনতে যায়নি। এবারে পায়েলের কথা শুনে খুব আহত হয় অনুপমা। দেবায়ন অনুপমাকে বুঝিয়ে বলে যে পায়েল হয়ত ওর প্রেমিকের সাথে শপিং করে নিয়েছে, এতে দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। পায়েল নিশ্চয় চিরকাল অনুপমার পাশে থাকবে না। অনুপমা আহত হলেও বোঝে দেবায়নের কথা।
কলেজে পালিয়ে একদিন সব বন্ধু বান্ধবী মিলে পুজোর শপিং করতে বের হয়। পায়েল লাঞ্চের আগেই উধাও হয়ে গিয়েছিল। সবাই ওর কথা জানে যে পায়েল অগ্নিহোত্রীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে, একমাত্র সঙ্গীতা ছাড়া কেউ অগ্নিহোত্রীকে দেখেনি। ধিমান, ঋতুপর্ণাকে ডেকে নেয় সাথে। অনেকদিন পরে ঋতুপর্ণার সাথে সবার দেখা।
দেবায়ন ঋতুপর্ণাকে দেখেই বলে ওঠে, “ডারলিং অনেক দিন পরে তোমার সাথে দেখা হল, কেমন আছো?”
দেবায়নের স্বভাব সবার পেছনে লাগা। ঋতুপর্ণা কিছু উত্তর দেওয়ার আগেই দেবায়ন ওর গায়ে ধাক্কা দিয়ে বলে, “ডার্লিং ওইদিন ঠিক জমল না। হবে নাকি একবার আরো।”
লজ্জায় ঋতুপর্ণার গাল কান লাল হয়ে যায়। ধিমান মারতে ছোটে দেবায়নকে, “শালা তোর বউকে গিয়ে কর না।”
দেবায়ন বলে, “ওরে ছাগল, বাঁশের চেয়ে কঞ্চির দর বেশি। শালী সবসময়ে একটু বেশি মিষ্টি হয়, সে যদি ঋতুর মতন সেক্সি হয় তাহলে কথা নেই।”
শ্রেয়া একটু রেগে যায় ওদের কথা শুনে, অনুপমাকে বলে, “এই তোর বরকে সাবধান করে দে।”
অনুপমা হেসে দেবায়নের কান টেনে ধরে বলে, “তুমি থামবে না এখানে তোমাকে পিটাব।”
ধিমান হেস বলে, “পুচ্চিসোনা কিন্তু রেগে গেছে এবারে আর ঢুকাতে পারবে না পুচ্চু বাবু।”
দেবায়ন হেসে বলে, “কত মাল আছে, ঋতু আছে, সঙ্গীতা আছে। আর শ্রেয়ার কথাই নেই, রূপক ওকে ছেড়ে অন্য কারুর সাথে লাইন মারতে ব্যাস্ত।”
শ্রেয়া রেগে যায় ওই কথায় এমনিতে রূপক আসেনি বলে শ্রেয়া রেগেই ছিল, “ধুর বাল, রূপকের কথা ছাড়। আমাকে না জানিয়ে অন্য কোথাও গাড়ি গ্যারেজ করলে টায়ার ফাটিয়ে দেব।”
সবাই হেসে দেয় শ্রেয়ার কথা শুনে। এসপ্লানেডে ঘুরে ঘুরে ওরা সবাই শপিঙ্গে ব্যাস্ত হয়ে পরে। পুজোর মরশুমে এস্পালনেড ভিড়ে ঠাসা। সব দোকানে প্রচুর ভিড়, সারা কোলকাতা যেন উপচে এস্প্লানেডে এসে পড়েছে। মেয়েরা নিজেদের জামা কাপড় কেনার চেয়ে, গল্পে বেশি ব্যাস্ত। দশ খানা দোকান ঘোরার পরে কারুর একটা পোশাক পছন্দ হয়। প্রবাল চুপ করে সঙ্গীতার পেছন পেছন ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে। ধিমান আর দেবায়ন নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করে প্রবালকে দেখে।
ধিমান প্রবালকে বলে, “বাল এবারে সঙ্গীতার কামিজের নিচে ঢুকে যা একেবারে।”
প্রবাল চোখ পাকিয়ে তাকায় দেবায়ন আর ধিমানের দিকে। দেবায়ন হেসে ফেলে ওর চোখ পাকান দেখে, “ওরে, ওই রকম ভাবে তাকাস না সোনা। বড্ড ভয় করছে আমাদের।”
সঙ্গীতা, “এই তোরা থামবি একটু।”
ধিমান, “কেন ডার্লিং? তোর মেনুপুষুকে আঘাত করেছি তাই এত লেগে গেল?”
সঙ্গীতা, “কেন, তোর ঋতুকে যখন দেবায়ন বলছিল তখন কেন মারতে ছুটেছিলি?”
অনুপমা সঙ্গীতাকে বলে, “ঠিক ত বলেছে। তুই যা তাঁর উলটো প্রবাল।”
সঙ্গীতা ম্লান হেসে, “শেষ পর্যন্ত তুই? আমি ভেবেছিলাম…”
অনুপমা, “আরে আরে না না… এখানে আবার কান্না কাটি জুড়ে দিস না। সামনে পুজো, এখানে বন্যা হয়ে গেলে মুশকিল আছে।”
আবার সবার মধ্যে হাসির কলতান ওঠে। রূপক কোন এক কাজের জন্য আসতে পারে না তাই নিয়ে শ্রেয়ার সাথে সকাল থেকে এক চোট রাগারাগি হয়ে গেছে।
অনুপমা শ্রেয়াকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে রূপক কেন আসতে পারেনি? কি বলেছে তোকে?”
শ্রেয়া, “মাতৃ ভক্ত ছেলে, মাকে নিয়ে শ্যাম বাজার যাবে শপিং করতে।”
দেবায়ন, “গাঁড় মারিয়েছে। বিয়ের পরে দেখিস ভাই, মায়ের আঁচলের তলায় লুকিয়ে থাকবে।”
সঙ্গীতা হেসে বলে, “যারা মায়ের আঁচলের তলায় লুকায়, বিয়ের পরে তারা বৌয়ের আঁচলের তলায় লুকায়।” স্বর নামিয়ে অনুপমার কানেকানে বলে, “আমারটা দেখছিস না, একদম ভিজে বেড়াল। আমি যদি ওকে বলি, প্রবাল আমার এখুনি আম খেতে ইচ্ছে করছে তুই এনে দে যেখান থেকে পারিস। প্রবাল সারা ভারত ঘুরে এনে দেবে।”
ঋতুপর্ণা ধিমানের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমার টা বাবা একদম উলটো। ও যা ভাববে সেটা না হলে রণ মূর্তি ধারন করে।”
এমন সময়ে শ্রেয়ার কাছে রূপকের ফোন আসে। রূপকের ফোন পেয়েই শ্রেয়া রেগে যায়, “যাও তোমার সাথে আমার কোন কথা বার্তা নেই। সবাই বয়ফ্রেন্ড নিয়ে এসেছে আর তুমি তোমার মায়ের সাথে শপিং কর।”
রূপক শ্রেয়াকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “আরে বাবা, তোমার ড্রেস কিনতে আমি আর তুমি একসাথে যাবো। আচ্ছা একটা কথা বল না, পায়েল কি তোমাদের সাথে?”
শ্রেয়া, “হটাত পায়েলের কথা জিজ্ঞেস করলে? কি ব্যাপার?”
রূপক, “মনে হল পায়েল কে দেখলাম একটা ছেলের সাথে শপিং করছে তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
শ্রেয়া, “তা হতে পারে। পায়েল আজকাল খুব উড়ছে। লাঞ্চের আগেই কলেজ থেকে বেড়িয়ে গেছে। বলল যে অগ্নিহোত্রীর সাথে শপিঙ্গে যাবে তাই ত অনুর মুখ শুকনো।”
শ্রেয়া উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস ওরে, “হ্যাঁ গো ওর সাথে যে ছেলেটা আছে সে দেখতে কেমন? পায়েলের চয়েস নিশ্চয় ভালো হবে।”
সঙ্গীতা মুখ বেঁকিয়ে বলে, “অগ্নিহোত্রী দেখতে একটা বাঁদর।”
রূপক, “দূর থেকে দেখলাম। ফর্সা গায়ের রঙ, ভালোই দেখতে মনে হয়। আমার দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে ছেলেটা। ওর সামনে দাঁড়িয়ে পায়েল। তবে মনে হল ছেলেটার বয়স পায়েলের চেয়ে কম।”
অনুপম আর সঙ্গীতা মুখ চাওয়াচায়ি করে। সঙ্গীতা শ্রেয়ার কাছ থেকে ফোন নিয়ে রূপককে জিজ্ঞেস করে, “সঙ্গের ছেলেটা কালো নয়? ওর চুল একটু লম্বা হবে।”
রূপক জানায়, “না ত, কেন অগ্নিহোত্রী কি কালো? তাহলে অগ্নিহোত্রী নয় এই ছেলে অন্য কেউ। ছেলেটার বয়স মনে হয় পায়েলের চেয়ে কম হবে।”
সঙ্গীতা, “ছেলেটা অগ্নিহোত্রী হতেই পারে না।”
অনুপমার দিকে দেখে সবাই। অনুপমা বলে, “আমাকে কেন দেখছিস তোরা? আমি প্রেম করেছি নাকি? দাঁড়া আমি পায়েল কে একটা ফোন করি।”
অনুপমা পায়েলকে ফোন করে, পায়েলের ফোন বেজে যায় কিন্তু পায়েল ফোন উঠায় না।
রূপক বলে, “হ্যাঁ, ফোন বের করেছে কিন্তু ফোন কেটে দিল মনে হল।”
শ্রেয়া, “হবে ওর কোন ভাইয়ের সাথে শপিং করতে বেড়িয়েছে। এত টেন্সান নিচ্ছিস কেন তোরা?”
রূপক হেসে ফেলে শ্রেয়ার কথা শুনে, “আরে বাল, ভাইয়ের সাথে একদম গায়ে গা লাগিয়ে, হাতের আঙুল পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি? ধুর ওটা অন্য কেউ, ওর নতুন কোন বয়ফ্রেন্ড হবে। থাক ছাড়ো অসব কথা তোমাদের শপিং কেমন চলছে।”
অনুপম আহত হয় রূপকের কথা শুনে। রূপককে বলে এগিয়ে গিয়ে পায়েলের সাথে দেখা করতে। রূপক ফোন হাতে এগিয়ে যায় পায়েলের দিকে, ততক্ষণে পায়েল ওর সাথের ছেলেটাকে নিয়ে বাইকে করে বেড়িয়ে যায়। রূপক ওদের বলে, “ধুর বাল, পায়েল চলে গেল বাইকে।”
অনুপমা বড় আহত হয় পায়েলের ব্যাবহার শুনে। শ্রেয়া বলে, “ছাড় পায়েলকে, আমরা বাকি শপিং সেরে ফেলি। ও কার সাথে কি করছে সেটা সময় হলে জানা যাবে।”
সঙ্গীতা অনুপমা, দুইজনে চিন্তিত হয়ে বলে, “পায়েল এটা ভালো করছে না। আমাকে বলল অগ্নিহোত্রীর সাথে প্রেম করছে, কিন্তু ছেলেটা অগ্নিহোত্রী নয়। কি যে করছে মেয়েটা, ওর কপালে শেষ পর্যন্ত কি হবে ভগবান জানে।”
অনুপমা বাকি বন্ধুদের জানিয়ে দেয় যে ওর শরীর ভালো লাগছে না তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চায়। সবাই একটু অবাক হয়ে দেবায়নকে প্রশ্ন করে। দেবায়ন জানায় যে সকালে তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিল তাই ব্রেকফাস্ট করেনি, কিছু দিন থেকে অনুপমার প্রেসার একটু লো চলছে তাই শরীর খারাপ।
দেবায়ন অনুপমাকে নিয়ে বাড়ির উদ্দশ্যে রওনা দেয়। অনুপমা সারাটা রাস্তা মুখ ভার করে দেবায়নের পেছনে বসে থাকে। পায়েলের সাথের ছেল্টা যদি অগ্নিহোত্রী না হয়ে অন্য কেউ হয় তাহলে পায়েলের এত গোপনীয়তা কেন? শরতের ঠাণ্ডা বাতাসে অনুপমা, দেবায়নকে পেছন থেকে নিবিড় করে জড়িয়ে ধরে। বাইকে যেতে যেতে পিঠের উপরে চেপে যায় অনুপমার নরম শরীর। দেবায়নের পিঠ নরম তুলতুলে স্তনের পরশে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দেবায়ন ঘাড় ঘুরিয়ে অনুপমার গালে একটা ছোটো চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করে এই বারে পুজোতে কোথায় বেড়াতে যেতে চায়। অনুপমা হেসে জানিয়ে দেয় যে এবারে কোথাও বেড়াতে যাবার পরিকল্পনা নেই, সবাই মিলে এইবারে পুজোতে আনন্দ হই হুল্লোড় করবে। অনুপমা জানায় যে, ওদের বাড়ির অদুরে ম্যাডক্স স্কয়ার, বলা যেতে পারে ওদের পাড়ার পুজো। ওর বাবা ওই পুজোতে অনেক টাকা চাদা দেয় সেই সাথে ক্লাবের সভাপতি। এবারে সারাদিন পুজোর প্যান্ডেলে বসবে আর সব বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা মারবে। অনুপমা বলে একটা গাড়ি করে অষ্টমীর দিনে সব বন্ধু বান্ধবী ঠাকুর দেখতে বের হলে বেশ ভালো হয়। সেই শুনে দেবায়ন বেশ খুশি। পুজোর সময়ে সবার বাড়িতে একটু ছাড় পাওয়া যায়, দেবায়ন আর অনুপমার বাড়ি থেকে কোন রকমের অসুবিধে হবে না।
বাইক পন্ডিতিয়া থেকে ঘুরে অনুপমাদের বাড়ির দিকে ঢোকে। অনুপমা অনুরোধ করে একবার ম্যাডক্স স্কয়ারে নিয়ে যেতে, মাঠের মাঝে দুর্গা পুজোর প্যান্ডেল বানানো শুরু হয়ে গেছে। অনুপমাকে সবাই চেনে, ওই খানে। দেবায়নের সাথে অনুপমাকে দেখে একটা লোক হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে আসে। অনুপমা সেই ভদ্রলোককে হাঁপাতে দেখে কারন জিজ্ঞেস করে।
আগন্তুক, রঞ্জিত দাস, ক্লাবের মেম্বার, হাঁপাতে হাঁপাতে অনুপমাকে বলে, “হ্যাঁ রে, বিশাল কান্ড ঘটে গেছে। তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি যা। আজকে মনে হয় সোমেশদা র কপালে দুঃখ আছে।”
অনুপমা আর দেবায়ন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কেন? কার কি হয়েছে?”
বিংশ পর্ব (#01)
কিছুদিন ধরে পায়েলের চরিত্রের বেশ পরিবর্তন ঘটেছে। আগে যেমন অনুপমার সাথে রোজ দিন গাড়িতে করে কলেজে আসত, সেটা অনেক কমিয়ে দিয়েছে। জিজ্ঞেস করলে বলে যে বাসে আসাই ঠিক কেননা সকালে অনুপমার বাড়ির নাম করে একটু আগেই বেড়িয়ে যায় আর অগ্নিহোত্রীর সাথে দেখা করে। অগ্নিহোত্রী ওকে নিতে আসে তাই অনুপমার সাথে কলেজে আসা কমিয়ে দিয়েছে। তবে বিকেলে কোন কোন দিন পায়েল, অনুপমার বাড়িতে কলেজ ফেরত চলে আসে, কোন কোন দিন একা একা কলেজ ছুটি হবার আগেই বেড়িয়ে পরে। অনুপমার বাড়িতে আড্ডা মারার সময়ে অঙ্কন মাঝে মাঝে ওদের সাথে গল্প করে। অঙ্কনের নতুন প্রেম, গরিমার কথা পায়েলকে জানায় অনুপমা। পায়েলের ব্যাপারে অঙ্কনকে একদিন জানায় অনুপমা। পায়েল ইদানীং ছোটো স্কার্ট, চাপা টপ ছেড়ে লম্বা স্কার্ট আর জিন্স পড়া শুরু করেছে। মাঝে মাঝে সালোয়ার কামিজ পরে কলেজে আসে। ওর এই পোশাক আশাকের পরিবর্তন সবার চোখে পরে। সবাই জিজ্ঞেস করলে লাজুক হেসে উত্তর দেয় যে অগ্নিহোত্রীর পছন্দের কাপড় পড়তে হয় এবং পায়েল তাতে বেশ খুশি। মাঝে মাঝে সপ্তাহ শেষে উধাউ হয়ে যায়, অনুপমাকে ফোনে বলে যদি ওর বাড়ি থেকে কেউ জিজ্ঞেস করে তাহলে যেন জানিয়ে দেয় যে পায়েল অনুপমার সাথেই আছে। পায়েলকে অগ্নিহোত্রীর কথা জিজ্ঞেস করলে পায়েল হাসি মুখে এড়িয়ে যায় সেই প্রশ্ন, জানিয়ে দেয়যে সময় মতন অগ্নিহোত্রীর সাথে দেখা করিয়ে দেবে, সেই সাথে পায়েল জানায় যে বাড়ি থেকে পালান হয়ত হবে না। অনুপমা একটু অবাক হয়ে যায় সেই সাথে খুশি হয় যে পায়েল তার পুরানো চিন্তা ছেড়ে দিয়েছে। পায়েল বলে যে ওর বাবা মা হয়ত ওদের সম্পর্ক মেনে নেবে না, তবে বিয়ের যখন সময় হবে তখন নিশ্চয় সবাই মেনে নেবে। কথাটা হেঁয়ালির মতন হলেও, অনুপমা খুঁচিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করে না।
দেবায়ন, অঙ্কনের কথা জিজ্ঞেস করে। অনুপমা জানায় যে অঙ্কন প্রেমে পরে অনেক বদলে গেছে। শনি, রবি বাড়িতে থাকে না বললে চলে। অনুপমা বার কয়েক গরিমার সাথে দেখা করার কথা বলেছিল, অঙ্কন কথা ঘুরিয়ে দেয়। অনুপমা বলেছে যে ওর জন্মদিনে বাড়িতে ডাকতে। অঙ্কন জানিয়েছে যে জন্মদিনে গরিমাকে বাড়িতে ডেকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে।
বর্ষার শেষে, শরতের মিষ্টি আভাসে আকাশ বাতাস মুখরিত। ইতিমধ্যে দেবায়ন বাইক কিনেছে, অনুপমার ইচ্ছে ছিল একটা স্টাইলিস্ট বাইক, কিন্তু দেবায়নের পছন্দ ছিল একটা ভারী বাইকের তাই শেষ পর্যন্ত বুলেট কেনে। বেশ ভারী গাড়ি, রাস্তা কাঁপিয়ে কলেজ কাঁপিয়ে আওয়াজ করে বের হয়। লম্বা চওড়া ছেলে দেবায়ন, পেছনে অনুপমাকে নিয়ে কলেজ থেকে বের হলে অনেকের চোখ ওদের দিকে তাকিয়ে থাকে। এতদিন পরেও অনুপমা ওই ছেলে গুলোর আর মেয়েদের চাহনি উপভোগ করে।
সামনে পুজো, সবাই ঠিক করে যে পুজোতে একসাথে ঠাকুর দেখবে, একসাথে পুজোর জামা কাপড় কেনা কাটা করবে। অগত্যা দেবায়ন আর অনুপমার ঠিক সময় হয়ে আর ওঠে না। কলেজের পরে দৌড়াতে হয় সোজা কম্পিউটার ক্লাসে, শনি রবিবারেও ওদের ক্লাস থাকে। সঙ্গীতা, শ্রেয়া মন মরা হয়ে যায়। পায়েল জানায় যে ওর পুজোর শপিং করা হয়ে গেছে। অনেকদিনের বন্ধুত্ব অনুপমার আর পায়েলের। গত দুই বছরে পায়েল অনুপমাকে ছেড়ে পুজোর জামা কাপড় কিনতে যায়নি। এবারে পায়েলের কথা শুনে খুব আহত হয় অনুপমা। দেবায়ন অনুপমাকে বুঝিয়ে বলে যে পায়েল হয়ত ওর প্রেমিকের সাথে শপিং করে নিয়েছে, এতে দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। পায়েল নিশ্চয় চিরকাল অনুপমার পাশে থাকবে না। অনুপমা আহত হলেও বোঝে দেবায়নের কথা।
কলেজে পালিয়ে একদিন সব বন্ধু বান্ধবী মিলে পুজোর শপিং করতে বের হয়। পায়েল লাঞ্চের আগেই উধাও হয়ে গিয়েছিল। সবাই ওর কথা জানে যে পায়েল অগ্নিহোত্রীর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে, একমাত্র সঙ্গীতা ছাড়া কেউ অগ্নিহোত্রীকে দেখেনি। ধিমান, ঋতুপর্ণাকে ডেকে নেয় সাথে। অনেকদিন পরে ঋতুপর্ণার সাথে সবার দেখা।
দেবায়ন ঋতুপর্ণাকে দেখেই বলে ওঠে, “ডারলিং অনেক দিন পরে তোমার সাথে দেখা হল, কেমন আছো?”
দেবায়নের স্বভাব সবার পেছনে লাগা। ঋতুপর্ণা কিছু উত্তর দেওয়ার আগেই দেবায়ন ওর গায়ে ধাক্কা দিয়ে বলে, “ডার্লিং ওইদিন ঠিক জমল না। হবে নাকি একবার আরো।”
লজ্জায় ঋতুপর্ণার গাল কান লাল হয়ে যায়। ধিমান মারতে ছোটে দেবায়নকে, “শালা তোর বউকে গিয়ে কর না।”
দেবায়ন বলে, “ওরে ছাগল, বাঁশের চেয়ে কঞ্চির দর বেশি। শালী সবসময়ে একটু বেশি মিষ্টি হয়, সে যদি ঋতুর মতন সেক্সি হয় তাহলে কথা নেই।”
শ্রেয়া একটু রেগে যায় ওদের কথা শুনে, অনুপমাকে বলে, “এই তোর বরকে সাবধান করে দে।”
অনুপমা হেসে দেবায়নের কান টেনে ধরে বলে, “তুমি থামবে না এখানে তোমাকে পিটাব।”
ধিমান হেস বলে, “পুচ্চিসোনা কিন্তু রেগে গেছে এবারে আর ঢুকাতে পারবে না পুচ্চু বাবু।”
দেবায়ন হেসে বলে, “কত মাল আছে, ঋতু আছে, সঙ্গীতা আছে। আর শ্রেয়ার কথাই নেই, রূপক ওকে ছেড়ে অন্য কারুর সাথে লাইন মারতে ব্যাস্ত।”
শ্রেয়া রেগে যায় ওই কথায় এমনিতে রূপক আসেনি বলে শ্রেয়া রেগেই ছিল, “ধুর বাল, রূপকের কথা ছাড়। আমাকে না জানিয়ে অন্য কোথাও গাড়ি গ্যারেজ করলে টায়ার ফাটিয়ে দেব।”
সবাই হেসে দেয় শ্রেয়ার কথা শুনে। এসপ্লানেডে ঘুরে ঘুরে ওরা সবাই শপিঙ্গে ব্যাস্ত হয়ে পরে। পুজোর মরশুমে এস্পালনেড ভিড়ে ঠাসা। সব দোকানে প্রচুর ভিড়, সারা কোলকাতা যেন উপচে এস্প্লানেডে এসে পড়েছে। মেয়েরা নিজেদের জামা কাপড় কেনার চেয়ে, গল্পে বেশি ব্যাস্ত। দশ খানা দোকান ঘোরার পরে কারুর একটা পোশাক পছন্দ হয়। প্রবাল চুপ করে সঙ্গীতার পেছন পেছন ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে। ধিমান আর দেবায়ন নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করে প্রবালকে দেখে।
ধিমান প্রবালকে বলে, “বাল এবারে সঙ্গীতার কামিজের নিচে ঢুকে যা একেবারে।”
প্রবাল চোখ পাকিয়ে তাকায় দেবায়ন আর ধিমানের দিকে। দেবায়ন হেসে ফেলে ওর চোখ পাকান দেখে, “ওরে, ওই রকম ভাবে তাকাস না সোনা। বড্ড ভয় করছে আমাদের।”
সঙ্গীতা, “এই তোরা থামবি একটু।”
ধিমান, “কেন ডার্লিং? তোর মেনুপুষুকে আঘাত করেছি তাই এত লেগে গেল?”
সঙ্গীতা, “কেন, তোর ঋতুকে যখন দেবায়ন বলছিল তখন কেন মারতে ছুটেছিলি?”
অনুপমা সঙ্গীতাকে বলে, “ঠিক ত বলেছে। তুই যা তাঁর উলটো প্রবাল।”
সঙ্গীতা ম্লান হেসে, “শেষ পর্যন্ত তুই? আমি ভেবেছিলাম…”
অনুপমা, “আরে আরে না না… এখানে আবার কান্না কাটি জুড়ে দিস না। সামনে পুজো, এখানে বন্যা হয়ে গেলে মুশকিল আছে।”
আবার সবার মধ্যে হাসির কলতান ওঠে। রূপক কোন এক কাজের জন্য আসতে পারে না তাই নিয়ে শ্রেয়ার সাথে সকাল থেকে এক চোট রাগারাগি হয়ে গেছে।
অনুপমা শ্রেয়াকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে রূপক কেন আসতে পারেনি? কি বলেছে তোকে?”
শ্রেয়া, “মাতৃ ভক্ত ছেলে, মাকে নিয়ে শ্যাম বাজার যাবে শপিং করতে।”
দেবায়ন, “গাঁড় মারিয়েছে। বিয়ের পরে দেখিস ভাই, মায়ের আঁচলের তলায় লুকিয়ে থাকবে।”
সঙ্গীতা হেসে বলে, “যারা মায়ের আঁচলের তলায় লুকায়, বিয়ের পরে তারা বৌয়ের আঁচলের তলায় লুকায়।” স্বর নামিয়ে অনুপমার কানেকানে বলে, “আমারটা দেখছিস না, একদম ভিজে বেড়াল। আমি যদি ওকে বলি, প্রবাল আমার এখুনি আম খেতে ইচ্ছে করছে তুই এনে দে যেখান থেকে পারিস। প্রবাল সারা ভারত ঘুরে এনে দেবে।”
ঋতুপর্ণা ধিমানের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমার টা বাবা একদম উলটো। ও যা ভাববে সেটা না হলে রণ মূর্তি ধারন করে।”
এমন সময়ে শ্রেয়ার কাছে রূপকের ফোন আসে। রূপকের ফোন পেয়েই শ্রেয়া রেগে যায়, “যাও তোমার সাথে আমার কোন কথা বার্তা নেই। সবাই বয়ফ্রেন্ড নিয়ে এসেছে আর তুমি তোমার মায়ের সাথে শপিং কর।”
রূপক শ্রেয়াকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “আরে বাবা, তোমার ড্রেস কিনতে আমি আর তুমি একসাথে যাবো। আচ্ছা একটা কথা বল না, পায়েল কি তোমাদের সাথে?”
শ্রেয়া, “হটাত পায়েলের কথা জিজ্ঞেস করলে? কি ব্যাপার?”
রূপক, “মনে হল পায়েল কে দেখলাম একটা ছেলের সাথে শপিং করছে তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
শ্রেয়া, “তা হতে পারে। পায়েল আজকাল খুব উড়ছে। লাঞ্চের আগেই কলেজ থেকে বেড়িয়ে গেছে। বলল যে অগ্নিহোত্রীর সাথে শপিঙ্গে যাবে তাই ত অনুর মুখ শুকনো।”
শ্রেয়া উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস ওরে, “হ্যাঁ গো ওর সাথে যে ছেলেটা আছে সে দেখতে কেমন? পায়েলের চয়েস নিশ্চয় ভালো হবে।”
সঙ্গীতা মুখ বেঁকিয়ে বলে, “অগ্নিহোত্রী দেখতে একটা বাঁদর।”
রূপক, “দূর থেকে দেখলাম। ফর্সা গায়ের রঙ, ভালোই দেখতে মনে হয়। আমার দিকে পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে ছেলেটা। ওর সামনে দাঁড়িয়ে পায়েল। তবে মনে হল ছেলেটার বয়স পায়েলের চেয়ে কম।”
অনুপম আর সঙ্গীতা মুখ চাওয়াচায়ি করে। সঙ্গীতা শ্রেয়ার কাছ থেকে ফোন নিয়ে রূপককে জিজ্ঞেস করে, “সঙ্গের ছেলেটা কালো নয়? ওর চুল একটু লম্বা হবে।”
রূপক জানায়, “না ত, কেন অগ্নিহোত্রী কি কালো? তাহলে অগ্নিহোত্রী নয় এই ছেলে অন্য কেউ। ছেলেটার বয়স মনে হয় পায়েলের চেয়ে কম হবে।”
সঙ্গীতা, “ছেলেটা অগ্নিহোত্রী হতেই পারে না।”
অনুপমার দিকে দেখে সবাই। অনুপমা বলে, “আমাকে কেন দেখছিস তোরা? আমি প্রেম করেছি নাকি? দাঁড়া আমি পায়েল কে একটা ফোন করি।”
অনুপমা পায়েলকে ফোন করে, পায়েলের ফোন বেজে যায় কিন্তু পায়েল ফোন উঠায় না।
রূপক বলে, “হ্যাঁ, ফোন বের করেছে কিন্তু ফোন কেটে দিল মনে হল।”
শ্রেয়া, “হবে ওর কোন ভাইয়ের সাথে শপিং করতে বেড়িয়েছে। এত টেন্সান নিচ্ছিস কেন তোরা?”
রূপক হেসে ফেলে শ্রেয়ার কথা শুনে, “আরে বাল, ভাইয়ের সাথে একদম গায়ে গা লাগিয়ে, হাতের আঙুল পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি? ধুর ওটা অন্য কেউ, ওর নতুন কোন বয়ফ্রেন্ড হবে। থাক ছাড়ো অসব কথা তোমাদের শপিং কেমন চলছে।”
অনুপম আহত হয় রূপকের কথা শুনে। রূপককে বলে এগিয়ে গিয়ে পায়েলের সাথে দেখা করতে। রূপক ফোন হাতে এগিয়ে যায় পায়েলের দিকে, ততক্ষণে পায়েল ওর সাথের ছেলেটাকে নিয়ে বাইকে করে বেড়িয়ে যায়। রূপক ওদের বলে, “ধুর বাল, পায়েল চলে গেল বাইকে।”
অনুপমা বড় আহত হয় পায়েলের ব্যাবহার শুনে। শ্রেয়া বলে, “ছাড় পায়েলকে, আমরা বাকি শপিং সেরে ফেলি। ও কার সাথে কি করছে সেটা সময় হলে জানা যাবে।”
সঙ্গীতা অনুপমা, দুইজনে চিন্তিত হয়ে বলে, “পায়েল এটা ভালো করছে না। আমাকে বলল অগ্নিহোত্রীর সাথে প্রেম করছে, কিন্তু ছেলেটা অগ্নিহোত্রী নয়। কি যে করছে মেয়েটা, ওর কপালে শেষ পর্যন্ত কি হবে ভগবান জানে।”
অনুপমা বাকি বন্ধুদের জানিয়ে দেয় যে ওর শরীর ভালো লাগছে না তাই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চায়। সবাই একটু অবাক হয়ে দেবায়নকে প্রশ্ন করে। দেবায়ন জানায় যে সকালে তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিল তাই ব্রেকফাস্ট করেনি, কিছু দিন থেকে অনুপমার প্রেসার একটু লো চলছে তাই শরীর খারাপ।
দেবায়ন অনুপমাকে নিয়ে বাড়ির উদ্দশ্যে রওনা দেয়। অনুপমা সারাটা রাস্তা মুখ ভার করে দেবায়নের পেছনে বসে থাকে। পায়েলের সাথের ছেল্টা যদি অগ্নিহোত্রী না হয়ে অন্য কেউ হয় তাহলে পায়েলের এত গোপনীয়তা কেন? শরতের ঠাণ্ডা বাতাসে অনুপমা, দেবায়নকে পেছন থেকে নিবিড় করে জড়িয়ে ধরে। বাইকে যেতে যেতে পিঠের উপরে চেপে যায় অনুপমার নরম শরীর। দেবায়নের পিঠ নরম তুলতুলে স্তনের পরশে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দেবায়ন ঘাড় ঘুরিয়ে অনুপমার গালে একটা ছোটো চুমু খেয়ে জিজ্ঞেস করে এই বারে পুজোতে কোথায় বেড়াতে যেতে চায়। অনুপমা হেসে জানিয়ে দেয় যে এবারে কোথাও বেড়াতে যাবার পরিকল্পনা নেই, সবাই মিলে এইবারে পুজোতে আনন্দ হই হুল্লোড় করবে। অনুপমা জানায় যে, ওদের বাড়ির অদুরে ম্যাডক্স স্কয়ার, বলা যেতে পারে ওদের পাড়ার পুজো। ওর বাবা ওই পুজোতে অনেক টাকা চাদা দেয় সেই সাথে ক্লাবের সভাপতি। এবারে সারাদিন পুজোর প্যান্ডেলে বসবে আর সব বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা মারবে। অনুপমা বলে একটা গাড়ি করে অষ্টমীর দিনে সব বন্ধু বান্ধবী ঠাকুর দেখতে বের হলে বেশ ভালো হয়। সেই শুনে দেবায়ন বেশ খুশি। পুজোর সময়ে সবার বাড়িতে একটু ছাড় পাওয়া যায়, দেবায়ন আর অনুপমার বাড়ি থেকে কোন রকমের অসুবিধে হবে না।
বাইক পন্ডিতিয়া থেকে ঘুরে অনুপমাদের বাড়ির দিকে ঢোকে। অনুপমা অনুরোধ করে একবার ম্যাডক্স স্কয়ারে নিয়ে যেতে, মাঠের মাঝে দুর্গা পুজোর প্যান্ডেল বানানো শুরু হয়ে গেছে। অনুপমাকে সবাই চেনে, ওই খানে। দেবায়নের সাথে অনুপমাকে দেখে একটা লোক হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে আসে। অনুপমা সেই ভদ্রলোককে হাঁপাতে দেখে কারন জিজ্ঞেস করে।
আগন্তুক, রঞ্জিত দাস, ক্লাবের মেম্বার, হাঁপাতে হাঁপাতে অনুপমাকে বলে, “হ্যাঁ রে, বিশাল কান্ড ঘটে গেছে। তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি যা। আজকে মনে হয় সোমেশদা র কপালে দুঃখ আছে।”
অনুপমা আর দেবায়ন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কেন? কার কি হয়েছে?”