Thread Rating:
  • 28 Vote(s) - 3.18 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
পাপ কাম ভালবাসা
অষ্টদশ পর্ব (#01)

সিকিউরিটি চেক হয়ে গেছে, অনুপমা দেবশ্রীকে ফোনে জানিয়ে দেয় ওরা কিছুক্ষণের মধ্যে প্লেনে চাপবে। দেবায়ন প্রথম বার প্লেনে চাপতে চলেছে, এয়ারপোর্টের চারদিকে তাকিয়ে দেখে। দেবায়নের চাপা উত্তেজনা দেখে অনুপমা হেসে ফেলে। অনুপমা দুই বার মুসউরি ঘুরতে গেছে, জায়গার প্রতি অনুপমার সেইরকম টান নেই। দেবায়নের সাথে ঘুরতে যাবার খুশির উত্তেজনা চোখে মুখে ফেটে পড়ছে অনুপমার। দেবায়নের সাথে, একা নিভৃতে দূর পাহাড়ের কোলে এক কামরায়, ভাবতেই অনুপমার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। প্লেনে ওঠার আগে পর্যন্ত দেবায়নের হাত শক্ত করে ধরে থাকে, হাতের উষ্ণতা মাখিয়ে নেয় নিজের শরীরে। প্লেনে উঠে চারদিকে তাকিয়ে দেখে দেবায়ন। কিছু পরেই প্লেন ঝাঁকুনি দিয়ে দুরন্ত গতিতে দৌড়াতে শুরু করে। দেবায়ন শক্ত করে সিটের হাতল ধরে বসে। পাশে বসে অনুপমা ওকে বারেবারে আসস্থ করে কোন দুর্ঘটনা ঘটবে না। জানালার পাশে বসে অনুপমা তার পাশে দেবায়ন। প্রথমবার প্লেনে চাপার ভীতি কাটানোর জন্য অনুপমা দেবায়নের হাত ধরে জিজ্ঞেস করে এত কি ভাবছে। প্রেয়সীর কোমল হাতের স্পর্শ পেয়ে ধড়ে প্রান ফিরে আসে দেবায়নের। দেবায়ন জানায় মিস্টার সেনের কথা নিয়ে একটু চিন্তিত সেই সাথে মাকে কি ভাবে এই সব কথা জানাবে। মাকে বললে মা হয়ত মানা করে দেবে। অনুপমা চিন্তা করতে বারন করে দেয়।
দেবায়নের মন শান্ত করার জন্য পুরানো দিনের প্রেমের কথা মনে করিয়ে দেয়। অনুপমা বলে ওদের প্রথম দেখার কথা, শুরুতে শুধু চোখে চোখে দেখা, কেউ কারুর সাথে কথা বলত না। দেবায়নের বলিষ্ঠ দেহ আর গায়ের তামাটে রঙ দেখে অনুপমা পাগল হয়ে গেছিল কিন্তু মনের ভাব ব্যক্ত করার মতন সাহস ছিল না। অনুপমার চিবুকের তিল আর গজ দাঁতের হাসি দেখে দেবায়ন পাগল, কিন্তু গাড়ি থেকে নেমে আসা একটা মেয়ের দিকে তাকান, দেবায়ন ঠিক সাহস জুগিয়ে উঠতে পারেনি, যদি অনুপমা ওর প্রেম নাকচ করে দেয় সেই ভয়ে। প্রথম বেশ কয়েক মাস কেউ কাউকে কিছু বলেনি। দেবায়ন আড় চোখে দেখত অনুপমাকে, গাড়ি থেকে নেমে সোজা কলেজে ঢুকতো, হাঁটা চলার ভঙ্গিমায় দেবায়ন বুঝতে পারতো যে খুব বড় লোকের মেয়ে। কলেজের অর্ধেক ছেলের নজর অনুপমার দিকে। অনুপমা সবসময়ে পায়েল, শ্রেয়া আর সঙ্গীতার সাথে ঘুরত। সব ছেলেরা ওই চার মেয়েকে নাক উঁচু বলে জানত। অনুপমা হেসে ফেলে কথা বলতে বলতে, দেবায়নকে মনে করিয়ে দেয় প্রথম দিনের ঝগড়ার কথা। দেবায়ন কোনদিন ভুলবে না সেইদিনের কথা। দেবায়নের সাথে অনুপমার প্রথম কথা হয়েছিল এক বাকবিতন্ডের মাধ্যমে। সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল, লাঞ্চের পরে বিশেষ ক্লাস ছিল না তাই সবাই ঘর মুখি। অনুপমা, পায়েল আর শ্রেয়া কলেজের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে। দেবায়ন, অলোক, ধিমান, প্রবাল সবাই ওদের পেছন পেছন নামছিল। দেবায়ন আর ধিমান, সামনে মেয়েদের দেখে টিপন্নি করছিল মাঝে মাঝে। তাতে অনুপমা আর শ্রেয়া একটু রেগে গেছিল। বৃষ্টির জন্য সিঁড়ি ভিজে ছিল আর সেই জলে পেছল খায় প্রবাল। প্রবাল পা হড়কে সোজা ধাক্কা খায় শ্রেয়ার সাথে। শ্রেয়া তেলেবেগুন জ্বলে উঠে চেঁচামেচি শুরু করে দেয়, প্রবালকে অনেক কথা শুনিয়ে দেয়। দেবায়ন বুঝাতে চেষ্টা করে যে যে প্রবাল ইচ্ছে করে ধাক্কা মারে নি, সিঁড়ির জলের জন্য প্রবাল পেছল খেয়েছিল। কিন্তু অনুপমা আর পায়েল ঘিরে ধরে প্রবালকে। প্রবাল শান্তশিষ্ট ছেলে, পড়াশুনা ছাড়া বিশেষ কারুর সাথে কথা পর্যন্ত বলে না। প্রবালের কথা মানতে নারাজ অনুপমা, টিচারের কাছে নালিশ করবে বলে ধমক দেয়। বেগতিক দেখে ইচ্ছে করে দেবায়ন অনুপমাকে ধাক্কা মেরে বলে প্রিন্সিপালের কাছে গিয়ে যেন নালিশ করে। অনুপমা দেবায়নের ধাক্কা খেয়ে তাল সামলাতে পারে না। সিঁড়ি থেকে পরে যাবার আগেই দেবায়ন ওকে ধরে ফেলেছিল। ওদের সেই হাত ধরা আর ঝগড়া দেখে শ্রেয়া নিজের কথা ভুলে যায়। দেবায়ন বলেছিল, যে প্রবাল ইচ্ছে করে মারেনি, ধাক্কা সে মেরেছে, যদি নালিশ করতে হয় তাহলে যেন প্রিন্সিপালের কাছে গিয়ে নালিশ করে। অনুপমা, দেবায়নের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে, রাগ করতে ভুলে যায়, দুই চোখ চার হয়ে যায়। দেবায়নের ধাক্কা খেয়ে অনুপমা শিহরিত হয়েছিল সেদিন। সাড়া শরীরে কাটা দিয়েছিল। দেবায়ন অনুপমার হাত মুঠির মধ্যে ধরে ঠোঁটের কাছে এনে বলে যে সেদিনের কথা কোনদিন ভুলবে না। ওই ধাক্কা না মারলে কেউ হয়ত কোনদিন কথা বলত না, চুপচাপ পরস্পরকে দেখে যেত। তারপরে শুধু বন্ধুত্ব, প্রগাড় বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে দুই জনের মাঝে। দেবায়ন নিজের মনের ভাব ব্যাক্ত করতে দ্বিধা বোধ করে ভবিষ্যতের কথা ভেবে। ভেবেছিল অনুপমার বাবা মা ওদের সম্পর্ক নাও মেনে নিতে পারে। এই ভাবে দুই বছর শুধু ভালোবাসার টান উপলব্দধি করে কাটিয়ে দেয়। একদিন আর থাকতে পারে না অনুপমা, দেবায়ন কে ধরে জিজ্ঞেস করে ওদের বন্ধুত্বের ব্যাপারে, জিজ্ঞেস করে কি চায় দেবায়ন। সেদিন বেশ বৃষ্টি হচ্ছিল, পায়েল সাথে ছিল। দেবায়ন দুই বান্ধবীকে নিয়ে কফি হাউসে বসেছিল। পায়েল চুপ করেছিল, অনুপমা দেবায়নকে প্রশ্ন করে উত্তরের অপেক্ষায় ছিল। দেবায়ন বেশ কিছুক্ষণ অনুপমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলেছিল যে রাতে উত্তর দেবে। দেবায়ন জানত না কি উত্তর দেবে। অনুপমা রেগে পায়েল কে সঙ্গে নিয়ে বেড়িয়ে যায়। কফি হাউসের পাশেই একটা বড় বইয়ের দোকান, দেবায়ন দৌড়ে সেখান থেকে একটা ইংরাজি প্রেমের কবিতার বই কেনে। নিচে নেমে দেখে, পায়েল আর অনুপমা ট্যাক্সির জন্য অপেক্ষা করছে। দেবায়ন পেছন থেকে এসে অনুপমার পিঠে হাত রেখেছিল। অনুপমা পেছন ঘুরতেই দেবায়ন ওই বই হাতে দিয়ে বলেছিল যে রোজ রাতে অনুপমা যেন একটা একটা করে কবিতা পড়ে ওকে শোনায়। অনুপমা বই খানা, বুকে জড়িয়ে বলেছিল যে নিশ্চয় শোনাবে কবিতা।
মুসউরিতে এক ঘরের মধ্যে রাত কাটাবে সেই ভেবে দেবায়নের উত্তেজিত হয়ে ওঠে। অনুপমার কোমল হাতখানি মুঠি করে ধরে মুখের কাছে নিয়ে এসে ছোটো চুমু খেয়ে বলে রাতের পরিকল্পনা। একটু লজ্জা পেয়ে যায় সুন্দরী ললনা, দেবায়ন কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে যে একটা রাতেও ঠিক করে ঘুমাতে দেবে না অনুপমাকে। অনুপমা চোখের লাজুক হাসি লুকিয়ে জানালার বাইরে ঘন নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।
দিল্লী এয়ারপোর্টে প্লেন নামে। প্লেন থেকে নেমে দিল্লীর এয়ারপোর্ট দেখে দেবায়ন থমকে যায়। দেবায়ন মানুষের ভিড় দেখে, আলো দেখে থমকে যায়। গরম কাল, ছেলেরা অনেকেই হাফ প্যান্ট, বারমুডা পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, বেশির ভাগ মেয়েদের ছোটো ছোটো পোশাক। অনেক মেয়েরা হাফ প্যান্ট অথবা ছোটো ছোটো স্কার্ট পরা। দেবায়ন যে মেয়েদের ছোটো পোশাকে দেখেনি সেটা নয় তবে প্রকাশ্যে কোলকাতায় কোন মেয়েরা এত ছোটো পোশাক পরে না, পার্টিতে পড়ে। অনুপমা দেবায়নের মুখের ভাবভঙ্গি দেখে হেসে ফেলে। অনুপমা দেশ বিদেশ ঘুরেছে, ওর কাছে এইসব ছোটো পোশাক আশাক কিছু না। দেবায়নকে বলে দিল্লীর এয়ারপোর্টের চেয়ে হেথ্রো এয়ারপোর্ট অনেক বড়, মাসির বাড়ি বেশ কয়েক বার বেড়াতে গেছে অনুপমা। দিল্লী, রাজধানী শহর, মেট্রো শহর, বাকি শহরের চেয়ে মানুষের চিন্তন শিলতা এখানে অনেক উন্মুক্ত। এই খানে মেয়েদের এমন পোশাকে দেখা কোন নতুন নয়। অনুপমা দেবায়নকে কনভেয়ার বেল্ট থেকে ব্যাগ নিয়ে আসার জন্য বলে।
দেবায়ন প্লেন থেকে নেমেই মাকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে ওরা পৌঁছে গেছে দিল্লী। এয়ারপোর্ট থেকে বেড়িয়ে দেখে দেবশ্রী ওদের জন্য অপেক্ষা করছে। অনেকদিন পরে মাকে দেখে খুব খুশি দেবায়ন। অনুপমা দৌড়ে দেবশ্রীকে জড়িয়ে ধরে।
দেবায়ন মাকে বলে, “তোমার জন্য খুব মন কেমন করছিল জানো।”
দেবশ্রী ছেলের গালে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “হ্যাঁ বাবা, জানি। বাড়ির বাইরে থাকতে থাকতে প্রান হাঁপিয়ে উঠেছিল আমার।”
অনুপমা, “হ্যাঁ মামনি, বেস্পতিবার সেই দুঃখে মদ খেয়ে পড়েছিল জানো।”
দেবায়ন মাথা নিচু করে নেয়। দেবশ্রী রাগত কণ্ঠে দেবায়নকে জিজ্ঞেস করে, “কি রে আমি বাড়িতে নেই বলে কি বাড়ি একদম আড্ডা খানা হয়ে উঠেছে।”
দেবায়ন, অনুপমার চুল টেনে ইশারায় জানায় একবার হাতের কাছে পেলে মেরে ফেলবে। অনুপমা দেবশ্রীর পেছনে লুকিয়ে পরে হেসে বলে, “না মামনি ও কিছু করেনি। বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা মারছিল তাই ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে।”
দেবায়ন মাকে জিজ্ঞেস করে, “এই কয়দিন কেমন ঘুরলে?”
দেবশ্রী, “কোথায় আর ঘুরলাম, সব কাজ আর কাজ। দিল্লীতে সেই প্রথম দিনে একটু সময় পেয়েছিলাম তাই তোর জন্য একটা ঘড়ি কিনলাম আর অনুর জন্য একটা জিন্স।”
অনুপমা, “মামনি, তুমি বিজনেস সুট পড়েছিলে?”
দেবশ্রী অনুপমার গালে হাত বুলিয়ে আদর করে বলে, “হ্যাঁ তোর মামনিকে আরো বিজনেস সুট পরা। ক্ষান্ত দে ওই সব, চল যাওয়া যাক। অনেকদুর যেতে হবে, রাস্তায় কোথাও খেয়ে নেব।”
অনুপমা আগে দুই বার মুসৌরি ঘুরতে গেছে তাই দেবশ্রীকে জিজ্ঞেস করে, “মামনি, আমরা কোন হোটেলে থাকব?”
দেবশ্রী, “রেসিডেন্সি ম্যানর।”
হোটেলের সম্বন্ধে অনুপমার অজানা নয়, একবার রেসিডেন্সি ম্যানরে ছিল। প্রথমে ঠিক বিশ্বাস করতে না পেরে আবার জিজ্ঞেস করে অনুপমা, “মামনি, ওটা ফাইভ স্টার হোটেল।”
দেবশ্রী, “হ্যাঁ ফাইভ স্টার।”
দেবায়ন একটু অবাক হয়ে যায়, জানে ওদের অত পয়সা নেই যে ঘুরতে গিয়ে একটা ফাইভ স্টার হোটেলে থাকবে। তাই দেবায়ন মাকে জিজ্ঞেস করে, “আমরা সত্যি ফাইভ স্টারে থাকব?”
দেবশ্রী হেসে বলে, “হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ। অফিস আমাকে এল.টি.এ দিয়েছে তাই তোদের নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছি।”
দেবায়ন, “এত দিন বেড়াতে যাওনি বলে অফিস তোমাকে রানীর হালে রাখবে মনে হচ্ছে। বেশ ভালো বেড়ান যাবে তাহলে।”
অনুপমা আদুরে কণ্ঠে আব্দার করে, “মামনি বেড়াতে যাচ্ছ, সেখানে কিন্তু জিন্স পড়তে হবে।”
দেবশ্রী, “পাগলি মেয়ে, আগে গাড়িতে ওঠ।”
অনুপমা আর দেবশ্রী গাড়ির পেছনের সিটে বসে আর দেবায়ন সামনের সিটে। দেবায়ন জিজ্ঞেস করে হটাত ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনার পেছনের কারন। দেবশ্রী হেসে উত্তর দেয় যে অনেক ছুটি পাওনা ছিল তাই কাজের চাপ ছেড়ে একটু ঘুরতে যাবার ইচ্ছে হল। দেবশ্রী চোখের পেছনে লুকিয়ে রাখে ওর মনের ভাব। গাড়ি সোজা এয়ারপোর্ট থেকে মুসউরির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। স্করপিওর ড্রাইভার এক পাঙ্গাবি, অংশুমান সিং। দেবায়ন ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করে কতখনে মুসউরি পৌঁছাবে, উত্তরে অংশুমান জানায় যে পরেরদিন ভোরবেলা নাগাদ মুসউরি পৌঁছে যাবে। ভিড় ভর্তি রাস্তা দেখতে দেখতে দেবায়নের গাড়ি এগোতে শুরু করে। কয়েক ঘন্টার মধ্যে গাড়ি দিল্লীর জ্যাম ছাড়িয়ে হাইওয়ে ধরে। পেছনে বসে দেবশ্রী আর অনুপমা নিজেদের গল্পে মত্ত। মাঝে মাঝে পেছনে তাকায় দেবায়ন, ওর জীবনের সবথেকে প্রধান দুই নারী বসে। একজন ওর মা, যে ওর অতীত বর্তমান গড়ে তুলেছে, দ্বিতীয় ওর প্রেয়সী যার হাতে ওর ভবিষ্যতের সবকিছু। রাত নেমে আসে। রাতে একটা হোটেলে থেমে ওরা রাতের খাবার সেরে ফেলে।
খাবার সময়ে দেবশ্রী ছেলেকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে, তুই কিছু বলবি বলছিলি?”
দেবায়ন ভেবেছিল যে একেবারে মুসৌরিতে গিয়ে মায়ের সাথে কথা বলবে। দেবায়ন অনুপমার দিকে আড় চোখে তাকায়। অনুপমা দেবায়নের হয়ে উত্তর দেয়, “মামনি, আমি আর দেবায়ন ভাবছি কলেজের সাথে সাথে একটা কম্পিউটার কোর্স করব।”
অনুপমার কথা শুনে দেবশ্রী বেশ খুশি হয়, “হ্যাঁ রে এই কথা আমার একবার মনে হয়েছিল। আজকাল যা চাকরির বাজার তাতে শুধু মাত্র একটা গ্রাজুয়েশান করে কিছু হবে না। একটা কিছু পাশাপাশি না করলে চাকরি পাওয়া বড় মুশকিল।”
দেবায়ন, “হ্যাঁ, তাই ভাবছি একটা ফাস্ট ট্রাক কম্পিউটার কোর্স করব আমরা।”
দেবশ্রী, “সে ত খুব ভালো কথা। কত টাকা লাগবে, কতদিনের কোর্স, সেইসব ব্যাপারে কোথাও খোঁজ খবর নিয়েছিস কি?”
অনুপমা, “না মামনি, সেই সব কিছু জানা হয়নি তবে কলেজ খুললেই অথবা কোলকাতা ফিরলেই আমরা পার্ক স্ট্রিটে একটা খুব নামকরা কম্পিউটার ইন্সটিটিউট আছে সেখানে যাবো। আগে তোমার মতামত চাই তাই এখন কিছু দেখিনি।”
দেবশ্রী ভুরু কুঁচকে হেসে অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে, “তুই কি পারমিতার সাথে কথা বলেছিস এই ব্যাপারে?”
অনুপমা, “হ্যাঁ, বাবার সাথে কথা বলা হয়ে গেছে। শুধু তোমার মতামতের প্রয়োজন।” অনুপমা, কোম্পানির তৈরির কথা লুকিয়ে যায়। অনুপমা চোখের ইশারায় দেবায়নকে জানায় যে পরে এই ব্যাপারে বিস্তারিত কথা বলা যাবে।
দেবশ্রী অনুপমাকে জিজ্ঞেস করে, “আর একটা বছর আছে ফাইনালের। তারপরে কি করবি তোরা কিছু ভেবেছিস? মাস্টার্স করবি না এম.বি.এ করবি?”
অনুপমা আর দেবায়ন পরস্পরের দিকে তাকায়। দেবশ্রীর প্রশ্ন দুইজনকে ফাঁদে ফেলে দেয়। অনুপমা হেসে কথা ঘুরিয়ে দিয়ে বলে, “মামনি, প্লিস ঘুরতে এসেছি এখানে আর পরাশুনার কথা উঠিয় না। আমরা বই খাতা কিন্তু বাড়িতে রেখে এসেছি, এখানে যদি পড়তে বল তাহলে কিন্তু কেঁদে ফেলব।”
দেবশ্রী হেসে বলে, “ঠিক আছে বাবা। চল এবারে যাওয়া যাক।”
অন্ধকার রাত কেটে গাড়ি এগোতে শুরু করে দেয়। একদিকে দেবশ্রী অফিসের কথা কিভাবে শুরু করবে সেই চিন্তায় মগ্ন, অন্যদিকে দেবায়নকি ভাবে নতুন কোম্পানি খুলতে চায় সেই কথা শুরু করবে সেই চিন্তায় মগ্ন। রাতে অনুপমা বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে ভালো ভাবে দিল্লী পৌঁছে ওরা সবাই মুসউরির উদ্দশ্যে রওনা হয়েছে। গাড়ি চলতে চলতে কিছুক্ষণের মধ্যে অনুপমা আর দেবশ্রী ঘুমিয়ে পরে। গাড়ির ড্রাইভারের সাথে দেবায়ন গল্প জুড়ে দেয়। রাস্তা জিজ্ঞেস করাতে ড্রাইভার উত্তর দেয়, হাইওয়ে ছেড়ে ওরা গ্রামগঞ্জের ভেতর দিয়ে দেরাদুন পৌঁছাবে। দেবায়ন, কারন জিজ্ঞেস করাতে ড্রাইভার জানায় যে গরম কালে প্রচুর ভিড় হয় পাহাড়ে তাই হাইওয়েতে মাঝে মাঝে জ্যামে পড়তে হয় আর রাতের বেলা ট্রাক বাস সব মাতালের মতন চালায় তার চেয়ে গ্রামের ভেতরের খালি রাস্তা নিরাপদ। অনেকক্ষন গাড়ি চালানোর পরে, মাঝরাতে একটা ছোটো চায়ের দোকানে গাড়ি থামাতে বলে দেবায়ন। ওখানে একটা সিগারেট ধরায়। গাড়ি থামতেই অনুপমা জেগে ওঠে। চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার, রাস্তায় আলো নেই, রাস্তার দুপাশে খালি মাঠ আর মাঠ, দুরে কোথাও কোন গ্রামের আলো দেখা যায়। মাঝে মাঝে শেয়াল কুকুরের ডাক। দেবায়ন জন্য এই সব দৃশ্য একদম নতুন। চোখ কচলাতে কচলাতে অনুপমা দেবায়নের গা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে যায়। দেবায়ন অনুপমাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে রাতের সৌন্দর্যের ব্যাখা দেয়। দেশ বিদেশ অনেক জায়গা অনুপমার ঘোরা কিন্তু নিস্তব্দ রাতের এই সৌন্দর্য অতুলনীয় মনে হয় অনুপমার কাছে। সিগারেট শেষ করে যাত্রা আবার শুরু, ফাঁকা রাস্তা ধরে ড্রাইভার বেশ জোরেই গাড়ি হাঁকিয়ে দেয়।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: পাপ কাম ভালবাসা - by Mr Fantastic - 28-09-2020, 12:23 AM



Users browsing this thread: 13 Guest(s)