Thread Rating:
  • 31 Vote(s) - 3.19 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
পাপ কাম ভালবাসা
সপ্তদশ পর্ব (#10)

সারারাত ধৃতিমান জেগে বসে থাকে দেবশ্রীর পাশে, মাঝে মাঝে মুখের উপরে চুল চলে এলে আঙুল দিয়ে সরিয়ে দেয়। খুব ইচ্ছে হয় ওর গোলাপি নরম ঠোঁটে চুমু এঁকে দিতে। ভোর হয় হয়, ধৃতিমান নিজের হৃদয় কেটে দেবশ্রীকে জাগিয়ে বলে, সকাল হবার আগে নিজের কামরায় চলে যেতে। নব বিবাহিতা প্রেমিকার মতন ঘুমঘুম চোখ খুলে ধৃতিমানকে টেনে বিছানায় ফেলে জড়িয়ে ধরে দেবশ্রী। ধৃতিমান নিজেকে সামলে রাখতে পারে না। ভোরের আলোয় চুম্বনে চুম্বনে উত্তেজিত করে তোলে সুন্দরী রমণীকে, ভালোবাসার শেষ রেশ টুকু নিঃশেষ না হওয়া পর্যন্ত দুজনে মেতে ওঠে পরস্পরে সাথে প্রেম বিনিময়ের জন্য।
ধৃতিমানের বুকের উপরে মাথা রেখে দেবশ্রী প্রেমঘন কণ্ঠে বলে, “জানো আজ অনেক দিন পরে বড় ভালো লাগছে।”
ধৃতিমান দেবশ্রীর চুলে আঁচর কাটতে কাটতে বলে, “তুমি একটা পাগলি মেয়ে। সারারাত আমাকে জাগিয়ে রেখেছিলে।”
দেবশ্রী অবাক চোখে ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে বলে, “কেন ঘুমালে না? আমাকে ছেড়ে, কোথায় গেছিলে?”
ধৃতিমান, “আরে না রে পাগলি। তুমি যখন ঘুমিয়ে ছিলে, তখন তোমার ওই সুন্দর মুখখানি দেখছিলাম। কবে আবার দেখা পাবো তাই দুই চোখ ভরে সেই দেখছিলাম।”
প্রেমের বারিধারা ছলকে ওঠে দেবশ্রীর দুই চোখে, “কাল তোমার কথা ভাবলাম, জানো। আমার ছেলে হয়ত মানা করবে না। দেবায়ন অনেক বড় হয়ে গেছে, মায়ের চাহিদা, মায়ের ভালোবাসা আশা করি বুঝতে পারবে। তাই ভাবছি ঘুরতে গিয়ে ওর সাথে কথা বলব। তুমি চলে এস মুসউরি, সেখানে আমাদের দেখা হবে।”
সেই কথা শুনে আনন্দে ধৃতিমান দেবশ্রীকে জড়িয়ে বুকের সাথে মিলিয়ে বলে, “সত্যি বলছ তুমি? আমার সত্যি বিশ্বাস হচ্ছে না।”
দেবশ্রী, লাজুক চোখে মাথা নাড়িয়ে বলে, “হ্যাঁ ধৃতি, আমি ভাবছি ছেলেকে জানাবো। আশা করি আমাদের সম্পর্কের একটা সুস্থ পরিনাম আসবে। তবে ধৃতি, ছেলের ফাইনাল ইয়ার, ওর পরীক্ষা শেষ হোক, আমি ভাবছি দিল্লীর অফার নিয়ে নেব।”
ধৃতিমান দেবশ্রীর কপালে ঠোঁট চেপে বলে, “আমি জানি, দেবশ্রী। তোমার ছেলের প্রতি তোমার স্নেহ, ভালোবাসা আমি জানি। আমি তোমার জন্য পৃথিবীর শেষ প্রান্তে গিয়ে অপেক্ষা করতে রাজি আছি, দেবশ্রী। তোমার ঠোঁট এই ভালোবাসার পরিনাম শুনে আনন্দে বুক ফেটে যাচ্ছে।”
দেবশ্রী ধৃতিমানের চোখে চোখ রেখে বলে, “আরো একটা কথা আছে, তুমি মল্লিকার সাথে আগে কথা বল। মল্লিকাকে সব কিছু জানাবে, কথা দাও, তুমি তারপরে নিজের সিদ্ধান্ত নেবে। আমি চাই না, আমাদের এই পদক্ষেপ আমাদের সন্তানের উপরে কোন কালো মেঘ নিয়ে আসুক।”
ধৃতিমান কিছুক্ষণ ভেবে বলে, “ঠিক আছে দেবশ্রী, আমি মলির সাথে কথা বলে নেব।”
দেবশ্রী ধৃতিমানের বুকের উপরে কিল মেরে উঠে বলে, “সকাল সকাল, দুষ্টুমি করে আবার মাতিয়ে দিলে আমাকে। এবারে ছাড়ো, আমি যাই নিজের রুমে।”
দেবশ্রী বিছানা ছেড়ে উঠে, কাপড় পরে ধৃতিমানের কপালে চুমু খেয়ে বেড়িয়ে যায়। গতরাতের চরম কামকেলির পরে ভোরের মিষ্টি আলোয় প্রেমঘন আলিঙ্গন ছেড়ে কিছুতেই উঠতে ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু চক্ষু লজ্জার ভয়ে, সন্তর্পণে নিজের কামরায় ঢুকে যায়। মনের ভেতরে যেন এক ময়ুর পেখম তুলে নেচে ওঠে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চেহারা পর্যবেক্ষণ করে নিজেই লজ্জিত হয়ে পরে। তাড়াতাড়ি স্নান সেরে ফেলে, দেবায়নকে এবারে ফোন করতে হবে। খুব বড় চমক দেবে ছেলেকে। দেবায়ন কোনদিন প্লেনে চাপেনি, সেটা একটা বড় চমক হবে ছেলের কাছে। স্নান সেরে দেবায়নের ফোনে ফোন করে, ফোনের রিং অনেকক্ষণ ধরে বেজে যায়, কেউ তোলে না। দেবশ্রী ঘড়ি দেখে, সকাল আটটা, এতক্ষণে দেবায়নের উঠে যাওয়ার কথা, ব্যায়াম সেরে দৌড়ে আসার কথা। কাজের লোক কিছু পরে বাড়িতে আসবে। একটু চিন্তিত হয়ে পরে, তারপরে ভাবে যে একা ছেলে, একটু না হয় ঘুমাচ্ছে, পরে ফোন করবে।
ধৃতিমানকে নিয়ে নিচে প্রাতরাশের টেবিলে যায়। সেখানে বাকিদের সাথে দেখা হয়। শান্তনু দেবশ্রীকে জানায় দিল্লীর টিকিট কাটা হয়ে গেছে, সেইসাথে দেবায়নের কোলকাতা থেকে দিল্লীর টিকিট কাঁটা হয়ে গেছে। পি.এন.আর নাম্বার দিয়ে দেয় দেবশ্রীকে। শান্তনু জানায় যে শেষ মুহূর্তে দেবশ্রীর দিল্লীর টিকিট কাটা হয়েছে তাই এক ফ্লাইটে টিকিট পায়নি। সেই শুনে দেবশ্রী আর ধৃতিমান একটু ব্যাথা পায় মনে। পরস্পরের দিকে চোখের ইশারায় সেই ব্যাথা ব্যাক্ত করে। শান্তনু বলে যে রাতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে থাকার ব্যাবস্থা করে দিয়েছে, সেই সাথে শনিবার সকালে একটা স্করপিও গাড়ি আসবে। সে গাড়িতে করে ওরা মুসউরির উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পারে। রেসিডেন্সি ম্যানরে তিন রাতের জন্য একটা রুম বুক করা হয়ে গেছে, শনিবার থেকে সোমবার, মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে চেক আউট করে দিল্লীতে ফিরে আসা। দিল্লীতে ফিরতে রাত হলে যেন আগে থেকে জানিয়ে দেয় তাহলে ওর জন্য হোটেল বুক করে দেবে। সব কথা শুনে দেবশ্রী বেশ খুশি হয়। ধৃতিমানের দিকে চোখ টিপে ইশারায় জানায় যেন ধৃতিমান তৈরি থাকে মুসউরি যাবার জন্য। ধৃতিমান সবার অলক্ষ্যে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে দেয়। খাবার পরে নিজের রুমে এসে দেবশ্রী আবার দেবায়নের ফোনে ফোন করে। বেশ কয়েকবার ফোনের রিং বেজে যায়, কেউ উঠায় না। দেবশ্রী চিন্তিত হয়ে পরে, ছেলের কি হল। অনুপমার বাড়িতে আবার গেছে নাকি? সেই ভেবে অনুপমাকে ফোন করে দেবশ্রী। অনুপমা সকাল সকাল দেবশ্রীর ফোন পেয়ে আশ্চর্য হয়ে যায়।
অনুপমা দেবশ্রীকে জিজ্ঞেস করে, “মামনি, কেমন আছো? এত সকালে ফোন করলে, কি ব্যাপার? আজকে কখন ফ্লাইট।”
অনুপমার মুখে “মামনি” ডাক শুনে বড় ভালো লাগে দেবশ্রীর। স্নেহ জড়ানো কণ্ঠে বলে, “তুই কেমন আছিস, মা?”
অনুপমা, “আমি ভালো আছি। তুমি আজকে কখন ফিরবে, তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে, মামনি।”
দেবশ্রীর বুকে মায়ের মমতা জেগে ওঠে, “কেন রে?”
অনুপমা, “এমনি মামনি। তোমাকে অনেকদিন দেখিনি মনে হচ্ছে।”
দেবশ্রী জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে, বাঁদরটা কি তোর বাড়িতে?”
অনুপমা, “কই না ত? কি হয়েছে? ফোন পাচ্ছ না?”
দেবশ্রী, “নারে সকাল থেকে অনেকবার ফোন করলাম, ফোন উঠাল না। খুব চিন্তায় পরে গেছি তাই তোকে ফোন করলাম।”
অনুপমা, “আচ্ছা এবারে বুঝেছি।”
অনুপমা জানে যে গতরাতে দেবায়ন বন্ধুদের নিয়ে মদের আসর বসিয়েছিল তাই ওর মামনি ফোন পায় নি। অনুপমা জিজ্ঞেস করে, “ও পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে হবে, তোমার ফ্লাইট কখন বল না। আমি আর দেবু তোমাকে আনতে যাবো।”
দেবশ্রী একটু ইতস্তত করে বলে, “আমি আজকে ফিরছি না রে, অনু।”
অনুপমা অবাক, “কেন মামনি, কি হয়েছে?”
দেবশ্রী, “না মানে, আমি ভাবছিলাম একটু দেবায়নকে নিয়ে বেড়াতে যাবো। অনেকদিন ওকে নিয়ে কোথাও যাইনি, একটু সময় পেলাম তাই ভাবছি।”
বেড়াতে যাওয়ার কথা শুনে অনুপমা বায়না ধরে, “মামনি, আমিও যাবো। প্লিস মামনি, না বল না, আমিও তোমাদের সাথে বেড়াতে যাবো, প্লিস মামনি মানা করো না।।”
দেবশ্রী, “কি বলিস তুই? পারমিতা কি বলবে? তুই পাগল নাকি?”
অনুপমা নাছোড়বান্দা, “না মামনি, প্লিস প্লিস প্লিস, সোনা মামনি। তুমি মাকে বলে দাও, মা মানা করবে না। প্লিস মামনি, আমিও বেড়াতে যাবো। তুমি যেখানে নিয়ে যাবে সেখানে যাবো, শুধু তুমি পাশে থাকলে হল।”
দেবশ্রী মহা ফ্যাসাদে পরে যায়, অনুপমাকে বুঝিয়ে উঠতে পারে না কিছুতেই। শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে বলে, “ঠিক আছে তোকে নিয়ে যাবো, আগে পারমিতার সাথে কথা বলতে দে।”
দেবশ্রী সেই একরাতে দেবায়নের আচরনে বুঝে গেছে অনুপমা ওর জীবনে কতখানি জায়গা জুড়ে। দেবশ্রীকে যদি কোলকাতা ছেড়ে আসতে হয় তাহলে অনুপমার জীবনে সেই ঢেউ লাগবে। দেবশ্রী অনুপমার কথা মেনে নেয়। অনুপমা পারমিতাকে ফোন ধরিয়ে দেয়। পারমিতার সাথে কথা বলে অনুপমার যাওয়ার ব্যাপার আলোচনা করে।
পারমিতা বারন করে না অনুপমাকে, দেবশ্রীকে বলে, “তুমি সাথে থাকলে মেয়েকে যেখানে খুশি পাঠাতে পারি। ঠিক আছে, ওর বাবাকে আমি ম্যানেজ করে নেব।”
অনুপমা খুব খুশি, দেবায়নের সাথে ঘুরতে যাবে।
দেবশ্রী ফোন ছেড়ে বেশ চিন্তায় পরে যায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু গোলমাল হয়ে যায়। নতুন ভাবে ভাবতে শুরু করে, শেষ পর্যন্ত পূর্ব পরিকল্পনা বাতিল করে শান্তনুকে ডাকে। শান্তনুকে বলে যে শনিবারের দুপুরের দুটো টিকিট কাটতে, আর মুসউরিতে একটার জায়গায় দুটি কামরা বুক করতে। কথা অনুযায়ী শান্তনু জানিয়ে দেয় যে আগের টিকিট বাতিল করে দেবে। দিল্লী পৌঁছে বাকি কাজ সেরে দেবে। তবে কোলকাতা থেকে দিল্লীর ফ্লাইটের টিকিট তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিতে পারবে। দেবশ্রী মিস্টার হেমন্তকে ফোনে জানায় যে ওর পরিকল্পনা। মিস্টার হেমন্ত জানিয়ে দেন যে দেবশ্রী নিশ্চিন্ত মনে ঘুরতে যেতে পারে, বাকি খরচ খরচার ব্যাপার কোম্পানি ব্যাবস্থা করে নেবে। দেবশ্রী আসস্থ হয় মিস্টার হেমন্ত ঠাকুরের কথায়। শান্তনু দেবশ্রীকে কোলকাতা থেকে দিল্লীর দুটি টিকিটের পি.এন.আর নাম্বার দেয়, সেই পি.এন.আর নাম্বার, দেবশ্রী অনুপমাকে এস.এম.এস করে জানিয়ে দেয়।
দেবশ্রী দুপুরে বেড়িয়ে পরে এয়ারপোর্টের দিকে। বাকিদের ফ্লাইট বিকেলে। দেবশ্রীর প্লেনের দুই ঘণ্টা পরে ধৃতিমানের দিল্লী যাওয়ার প্লেন। ধৃতিমান দেবশ্রীর সাথে এয়ারপোর্টে চলে আসে। পথে দেবশ্রী জিজ্ঞেস করে কেন এত তাড়াতাড়ি ধৃতিমান এয়ারপোর্ট যাচ্ছে? উত্তরে ধৃতিমান জানায় যে ব্যাঙ্গালরে আর কোন কাজ নেই, দেবশ্রী নিজেই যখন চলে যাচ্ছে সেই খানে থাকার কোন মানে নেই আর। চোখের কোণে ভালোবাসার অশ্রু ছলকে ওঠে দেবশ্রীর, ধৃতিমানের কাঁধে মাথা রেখে কাঁদতে ইচ্ছে করে। মনস্কামনা দমন করে বাইরে তাকিয়ে চোখের অশ্রু লুকিয়ে নেয়।
ধৃতিমান, দেবশ্রীর হাতে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে, “তোমার কথা কোনদিন কিছু বললে না তো আমাকে? আমি এতো পর।”
দেবশ্রী মিষ্টি হেসে বলে, “ধৃতি, আমার অতীত শুনে কি করবে। আমার অতীত তোমার মতন অত রঙ্গিন নয়। সায়ন্তন আমাকে খুব ভালবাসতো, মোটে আট বছর আমার সাথে ছিল কিন্তু সেই আট বছরে আমি আমার আট জন্ম খুঁজে পেয়েছিলাম। কম বয়সে হার্টএটাকে মারা গেল সায়ন্তন, আমার ছেলে দেবায়ন খুব ছোটো তখন। ব্যাস এর চেয়ে বেশি আমার কিছু অতীত নেই, ধৃতি।”
দেবশ্রী নিজের ব্যাথা নিজের বেদনা ইচ্ছে করে ধৃতিমানের সামনে তুলে ধরতে চায় না, চায়না ওর অতীত শুনে কেউ ওকে সান্ত্বনা দিক। সেই পুরানো ব্যাথা ভুলে নতুন করে জীবন গড়তে চায় দেবশ্রী।
ধৃতিমান ম্লান হেসে বলে, “আমি জানি তোমার ওই কাজল কালো চোখের পেছনে অনেক কিছু লুকিয়ে আছে। তুমি নিজেকে একটা কঠোর মূর্তির পেছনে লুকিয়ে রাখতে চাও, আমি কথা দিচ্ছি কোনদিন তোমার অতীত নিয়ে প্রশ্ন করব না। তোমার ব্যাথার জায়গা কোনদিন খুঁচিয়ে দেব না। আচ্ছা আজেক দিল্লী ফিরে দেখা করবে?”
দেবশ্রী হেসে বলে, “ঠিক আছে। আমি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে উঠবো, তুমি দিল্লী পৌঁছে আমাকে একটা ফোন করে দিও। নিচের যে রেস্তোরাঁ আছে সেখানে ডিনার করা যাবে, আর হ্যাঁ মল্লিকাকে নিয়ে আসতে ভুল না।”
ধৃতিমান দেবশ্রীর দিকে তাকিয়ে ভুরু কুঁচকে দুষ্টু হেসে বলে, “ডিনারের পরে কি?”
লজ্জায় দেবশ্রীর গাল লাল হয়ে যায়, ধৃতিমানের হাতে চাটি মেরে বলে, “ডিনারের পরে কি আবার। এতদিন পরে তুমি বাড়ি ফিরছ, বাকি সময় মেয়ের সাথে কাটাবে।”
ধৃতিমান, “ওকে ঠিক আছে। রাত নটা নাগাদ মেয়েকে নিয়ে হোটেল পৌঁছে যাবো।”
এয়ারপোর্টে নেমে দেবায়নকে ফোন করে দেবশ্রী, জানতে চায় ছেলের ঘুম ভেঙ্গেছে। জানতে পেরে খুশি হয় যে দেবায়নকে অনুপমা নিজের বাড়িতে নিয়ে গেছে। দেবায়নকে ঘুরতে যাবার কথা বলাতে দেবায়ন অবাক হয়ে যায়। দেবশ্রী একবার ভাবে একটু কিছু আভাস দেবার কিন্তু গলার স্বর কেঁপে ওঠে, দেবায়ন মায়ের মনের কথা বুঝতে পেরে প্রশ্ন করে। দেবশ্রী এড়িয়ে যায় দেবায়নের উত্তর। এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি ধরে সোজা হোটেলে পৌঁছে যায়। হোটেলে ঢুকে একা একা অনেকক্ষণ বসে ভাবে বিগত পনেরো দিনের ঘটনা বলি আর ভাবতে কি ভাবে দেবায়নের সাথে কথা বলবে।
বিকেলে ধৃতিমানের ফোন পেয়ে একটু আসস্থ হয়। ধৃতিমান জানায় কিছু ব্যাক্তিগত কারনে বিকেলে দেখা করতে পারবে না। কিঞ্চিত মনঃক্ষুণ্ণ হয় তবে নিজের মনকে প্রবোধ জানিয়ে দেয় যে ধৃতিমান ওর মরুভুমি মাঝে এক মরিচিকা মাত্র, হয়ত শুধু মাত্র যৌনতার টানে দেবশ্রীর মন নিয়ে ছেলেখেলা করেছিল। ভাবতেই দেবশ্রীর চোখে জল আসে, সেই প্রতারনা সেই দুঃখ। ভালোবাসার হৃদয় টুকরো টুকরো হতে বেশি দেরি হয় না। চুপচাপ বসে নিজের চোখের জল মোছে দেবশ্রী, বড় নিষ্ঠুর এই পৃথিবী, একা এক নারীকে পেয়ে কত লোকের কত হাতছানি।
এমন সময়ে কামরার ইন্টারকম বেজে ওঠে। অপাশ থেকে অতি পরিচিত কণ্ঠস্বর, “হ্যালো কি করছ? একা একা বসে, মন খারাপ লাগছে নাকি?”
ধৃতিমানের ফোন পেয়ে দেবশ্রী কান্না ভুলে যায়। গলা ধরে আসে, “তুমি এই যে বললে আসতে পারবে না?”
ধৃতিমান, “আরে বাবা, সারপ্রাইস দেব বলে এমন বলেছিলাম, তুমি কি সেটা সত্যি মনে করে কাঁদতে বসেছিলে?”
দেবশ্রী হেসে ফেলে, “না গো, কিছু না। মাঝে মাঝে বড় ভয় হয়। যাই হোক একটু অপেক্ষা কর আমি নিচে আসছি।”
ধৃতিমান, “তাড়াতাড়ি আস, আমি কিন্তু সোজা এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে এসেছি, তোমাকে বাড়িতে নিয়ে যাবো বলে।”
দেবশ্রী, “সোজা বাড়ি নিয়ে যাবে? তোমার মেয়ে নিশ্চয় বাড়িতে আছে, তুমি মেয়েকে কি বলবে? কি বলে আমার পরিচয় দেবে?”
ধৃতিমান হেসে বলে, “আমার অফিসের কলিগ, সেটাই তোমার পরিচয়। একবার মেয়ের সাথে দেখা হয়ে গেলে ভালো হত। এবারে বেশি দেরি করলে কিন্তু আমি উপরে উঠে আসব।”
দেবশ্রীর হৃদয় খুশিতে নেচে ওঠে, “না না, দাঁড়াও। আমি এখুনি আসছি।”
ধৃতিমানের ফোনের পেয়ে দেবশ্রীর মনের ভাব পালটে যায়, তাড়াতাড়ি একটু প্রসাধনি সেরে নিচে নেমে আসে। ধৃতিমান ব্যাগ হাতে হোটেলের লবিতে ওর জন্য অপেক্ষা করছিল। ধৃতিমান দেবশ্রীকে দেখে এক গাল হেসে বলে কেমন চমক দিল। দেবশ্রী ধৃতিমানকে দেখে বড় খুশি।
ধৃতিমান, “তাহলে বেড়িয়ে পড়া যাক, কি বল?”
ধৃতিমানের গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছায়। হোটেলের থেকে বেশি দুরে নয় ধৃতিমানের ফ্লাট। ফ্লাটে ঢুকে মেয়ে বাবাকে দেখে বড় খুশি। সুন্দর সাজানো ছোটো দুই কামরার ফ্লাট। আসার পথে দেবশ্রী মল্লিকার জন্য একটা ফ্রক কিনেছিল। বাবার পাশে এক অচেনা মহিলাকে দেখে একটু অপ্রস্তুত হয়ে পরে মল্লিকা। দেবশ্রীর পরিচয় দেয় ধৃতিমান। ছোট্ট ফুটফুটে মল্লিকা, ছবিতে দেখা ঠিক ওর মায়ের মতন দুই চোখ। মল্লিকার হাতে উপহারের বাক্স ধরিয়ে দেয়। দিল্লীতে বড় হলেও, মল্লিকার মামা বাড়ি কোলকাতায়, বাঙ্গালীর আচরন কিছুটা রক্তের মধ্যে আছে। দেবশ্রীকে দেখে পায়ে হাত দিয়ে প্রনাম করে। দেবশ্রী, মল্লিকার ললাট চুম্বন করে আশীর্বাদ করে। কথায় গল্পে, দেবশ্রী জিজ্ঞেস করে যে মল্লিকা বেড়াতে যেতে চায় নাকি। ধৃতিমানের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে দেখে। ঘুরতে যাবার কথা শুনে মল্লিকা নেচে ওঠে। দেবশ্রী ধৃতিমানকে অনুরোধ করে যে মুসৌরিতে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে যেতে। মুসৌরি যাবে শুনে মল্লিকা এক পায়ে প্রস্তুত। ওর বাবা কাজের চাপে বেশি ঘুরতে বেড়াতে নিয়ে যেতে পারে না, সেই দুঃখ প্রকাশ করে দেবশ্রীর কাছে। দেবশ্রী মৃদু বকে দেয় ধৃতিমানকে। অনেকটা সময় দেবশ্রী, মল্লিকা আর ধৃতিমানের সাথে গল্প করে হোটেলে ফিরে যাবার কথা বলে। মল্লিকা, দেবশ্রীকে পেয়ে ভারী খুশি, জানিয়ে দেয় যে তাড়াতাড়ি নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নেবে। কিছু পরে হোটেলে ফিরে আসে দুই জনে। দেবশ্রী আর ধৃতিমান বেশ কিছুক্ষণ কফিশপে বসে গল্প করার পরে, ধৃতিমান বাড়ির দিকে রওনা দেয়। যাবার আগে জানিয়ে দেয় যে আগামিকাল সকাল বেলায় ধৃতিমান শতাব্দি ধরে দেরাদুন হয়ে মুসউরি পৌঁছে যাবে।
শান্তনু রাতের দিকে হোটেলে পৌঁছে দেবশ্রীকে সব জানায়। মুসউরির রেসিডেন্সি ম্যানর হোটেলে দুটি কামরা বুক করা হয়ে গেছে, আগামী কাল সকালে একটা সাদা স্করপিও গাড়ির ব্যাবস্থা করে দিয়েছে। গাড়ি সকাল থেকেই দেবশ্রীর জন্য হোটেলের বাইরে প্রস্তুত থাকবে। সেই গাড়িতে এয়ারপোর্ট থেকে দেবায়ন আর অনুপমাকে নিয়ে মুসউরির দিকে যাত্রা শুরু করবে। শান্তনুর সাথে মনীষাও দেবশ্রীর সাথে দেখা করতে এসেছিল। দুইজনকে এক সাথে দেখে দেবশ্রী মনীষাকে হেসে জিজ্ঞেস করে ওরা পরস্পররের প্রেমে পড়েছে নাকি?
মনীষা শান্তনুর দিকে একবার তাকিয়ে দেবশ্রীকে বলে, “ম্যাডাম আপনার সাথে একটা কথা ছিল।”
দেবশ্রী, “হ্যাঁ বল, কি কথা।”
মনীষা, “ম্যাডাম, আপনার সাথে হেমন্ত স্যাররে বেশ জানাশুনা আছে। আপনি ম্যাডাম আমাদের একটা কাজ করে দেবেন?”
দেবশ্রী জিজ্ঞেস করে, “কি?”
শান্তনু বলে, “ম্যাডাম আমরা পরস্পরকে ভালোবাসি, আমরা তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই, নাহলে মনীষাকে ওর বাবা মা বিয়ে দিয়ে দেবে। ম্যাডাম আমাদের মাইনে অনেক কম, আপনি যদি একবার হেমন্ত স্যারকে বলে পরের এপ্রেসাল একটু দেখে দেন তাহলে বড় উপকৃত হব।”
দেবশ্রী হেসে শান্তনুকে জিজ্ঞেস করে, “তুমি আসানসোলের ছেলে, কোলকাতায় কোন চাকরি পেলে না? এতদুর দিল্লীতে এসেছে চাকরি করতে?”
শান্তনু, “না ম্যাডাম কোলকাতায় তেমন ভালো মাইনের চাকরি পাচ্ছিলাম না তাই দিল্লীতে আসা। কিন্তু বেশি পড়াশুনা করিনি তাই এইচ.আরে পেলাম না, এডমিনে চাকরি পেলাম।”
দেবশ্রী মনীষার গালে হাত ছুঁইয়ে আসস্থ করে বলে, “হেমন্ত স্যারের সাথে কথা আমি বলব, কিন্তু তোমাদের বিয়েতে নেমন্তন্ন করতে হবে আমাকে।”
মনীষা দেবশ্রীকে জড়িয়ে ধরে বলে, “ম্যাডাম আপনাকে ভুলব না। আপনি এই পনেরদিনে অনেক করেছেন।”
পরদিন সকালে ধৃতিমান, দেবশ্রীকে ফোনে জানিয়ে দেয় সে মুসউরির উদ্দশ্যে রওনা দিয়েছে। দেবশ্রী চিন্তিত সেই সাথে কিঞ্চিত উত্তেজিত। ভয় একটাই, দেবায়নকে বুঝিয়ে ওঠার আগে যদি দেবায়ন, ধৃতিমানের কথা জেনে ফেলে কোন ভাবে। দেবশ্রী দেবায়নের সাথে কথা বলে। দেবায়ন আর কিছুক্ষণের মধ্যেই প্লেনে চাপবে। ব্যাগ গুছিয়ে চুপচাপ বসে দেবশ্রী বিগত পনেরো দিনের ছবি আঁকা সামনে। চিন্তায় মগ্ন দেবশ্রী, কোনদিন ভাবেনি সায়ন্তন ওকে ছেড়ে চিরতিরে চলে যাবে, সেই ভালোবাসা যখন ওকে এই পৃথিবীতে একা ছেড়ে চলে যায় তারপরে একা একা ছেলেকে বড় করে তুলেছে। যে পদের কথা কোনদিন স্বপ্নেও ভাবেনি সেই পদে চাকরি করে, কোনদিন ভাবেনি কোলকাতা ছেড়ে এতদুরে আসবে, কোনদিন ভাবেনি দিল্লীতে চাকরি করতে পাবে। দেবায়নের ভবিষ্যৎ, দেবায়নের মুখের হাসি ফোটানোর জন্য ওর চোখের জল। জীবন যুদ্ধে লড়াই করতে করতে হারিয়ে যেতে বসেছিল দেবশ্রী হটাত এর মাঝে ধৃতিমানের দেখা, জানেনা কি ভাবে ছেলের সামনে এই সব কথা উপস্থাপন করবে। নিচে গাড়ি দাঁড়িয়ে, অনুপমা কিছু আগে ফোনে জানিয়ে দিয়েছে যে ওরা প্লেনে উঠছে।
Like Reply


Messages In This Thread
RE: পাপ কাম ভালবাসা - by Mr Fantastic - 27-09-2020, 06:26 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)