Thread Rating:
  • 31 Vote(s) - 3.19 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
পাপ কাম ভালবাসা
জানি এই ভালোবাসা ক্ষণজন্মা, তবে বিয়ের ব্যাপারে একটু ভাবতে দাও। ধৃতিমান তুমি দয়া করে এখন চলে যাও, আমি একটু একা থাকতে চাই।”

ধৃতিমান মাথা নিচু করে দেবশ্রীর কামরা থেকে বেড়িয়ে যায়। দেবশ্রী অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে সোফার উপরে। মাথা চিন্তাশুন্য হয়ে যায়, ভাবনা চিন্তা করার শক্তি লোপ পায়। একা একা বিছানায় শুতেই বুকের মাঝে জেগে ওঠে অপার শূন্যতা। দেবশ্রী জানে ওকে ফিরে যেতে হবে নিজের একাকীত্ব জীবনে। হৃদয় হুহু করে কেঁদে ওঠে। পার্স থেকে দেবায়নের ফটো বের করে দেখে, চোখের কোণে এক চিলতে জল চলে আসে দেবশ্রীর। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে দেবায়নের ফটো বুকে ধরে জিজ্ঞেস করে, “আমি তোর মা হলেও আমি এক নারী দেবু। আমি কি করব একবার বলে দে সোনা? আমি হয়ত ধৃতিমান কে ভালোবেসে ফেলেছি।”
স্নান আর করা হল না দেবশ্রীর, দেবায়নের ছবি বুকে করে কাঁদতে কাঁদতে একসময়ে ঘুমিয়ে পরে।
রাতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল খেয়াল নেই। সকালে উঠে স্নান করার পরেই দেবায়নকে ফোন করে। প্রাতরাশের টেবিলে ধৃতিমান আর বাকিদের সাথে দেখা। ধৃতিমান আর দেবশ্রী পরস্পরকে দেখে অল্প হাসে। বাকিদের সাথে প্রাতরাশ সেরে কাজে নেমে পরে। সকাল থেকে ক্যান্ডিডেটদের আসার পালা, তাদের ইন্টারভিউ নিতে নিতে দুপুর গড়িয়ে যায়। কথামতন দেবশ্রী পাঁচজনের ইন্টারভিউ নেয়, তার মধ্যে একজনকে দিল্লীতে এসিস্টেন্ট এইচ.আর পদে নিযুক্ত করে। লাঞ্চের সময়ে ধৃতিমানের সাথে দেখা, দেবশ্রী ইচ্ছে করে ধৃতিমানকে একটু এড়িয়ে চলে। গত রাতের পরে ধৃতিমানের আচরনে বেশ বদলে গেছে। দেবশ্রীর সাথে বিশেষ কথাবার্তা বলা বন্ধ হয়ে গেছে। মনীষা আর শান্তনুকে নিয়ে দেবশ্রী লাঞ্চ সারে। লাঞ্চের পরে ধৃতিমান একটু হন্তদন্ত হয়ে দেবশ্রীর কেবিনে ঢোকে। দেবশ্রী কিঞ্চিত বিরক্ত হয়ে ধৃতিমানের এহেন আচরনের কারন জিজ্ঞেস করে।
ধৃতিমান একটু বিরক্তি প্রকাশ করে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা এটা কি হল? আমি দুটো ক্যান্ডিডেটকে সিলেক্ট করেছিলাম, তুমি নাকচ করে দিয়েছ।”
দেবশ্রী উত্তরে বলে, “ওদের স্যালারি একটু বেশি, তাই হোল্ডে রাখা হয়েছে। নাকচ করেছি তোমাকে কে বলল?”
ধৃতিমান একটু তোড় দেখিয়ে দেবশ্রীকে জিজ্ঞেস করে, “হোল্ডে কেন রাখা হয়েছে? ওই দুটো ক্যান্ডিডেট বেশ ভাল, আমি ইন্টারভিউ নিয়েছি, আমি জানি কাকে কি ভাবে কাজ করাতে হয়।”
দেবশ্রী কড়া কণ্ঠে জবাব দেয়, “এখন তোমার পাঁচ খানা ক্যান্ডিডেট আছে, তাদের ইন্টারভিউ শেষ হোক, মনপুত হলে বেছে নিও, নাহলে শেষ পর্যন্ত কি করা যায় দেখা যাবে।”
ধৃতিমান, “কিন্তু যাদের সিলেক্ট করেছি তাদের অফার দিতে অসুবিধে কোথায় তোমার?”
দেবশ্রী গম্ভির কণ্ঠে উত্তর দেয়, “আমি আমার কাজ ভালো ভাবে জানি, ধৃতিমান। সত্যি কথা বলতে তুমি যে দুইজনকে সিলেক্ট করেছ, তাদের এক্সপেক্টেড স্যালারি গ্রেডের চেয়ে বেশি। মনীষা যখন এক মাস আগে ওদের ফোন করেছিল, তখন ওরা যে এক্সপেক্টেড স্যালারি বলেছিল, আর তুমি ইন্টারভিউ নেবার পরে যা লিখে পাঠিয়েছ তাতে দেড় লাখের তফাত। এমন কি হল একমাসে যে ওদের প্রত্যাশা এত বেড়ে গেল?”
ধৃতিমান নিরুত্তর, ইচ্ছে করেই ওই দুই ছেলের স্যালারি একটু বেশি করিয়ে ঢুকাতে চেয়েছিল, কারন ধৃতিমানের পচ্ছন্দের লোক ছিল দুইজনে। ধৃতিমান আমতা আমতা করে বলে, “কোম্পানি দিতে পারে ত স্যালারি, তাহলে তুমি বাধা দিচ্ছ কেন?”
দেবশ্রী, “কোম্পানি কি দিতে পারে না পারে সেটা আমার ভালো ভাবে জানা আছে। আমাকে প্রতিমাসে বোর্ডের কাছে জবাব দিতে হয়, যেটা তোমাকে দিতে হয় না। লাঞ্চের পরে আরও পাঁচখানা ক্যান্ডিডেট আছে তোমার, ভালো করে ইন্টারভিউ নাও, যদি শেষ পর্যন্ত পছন্দ না হয় তাহলে ওই দুই ক্যান্ডিডেটকে অফার লেটার দেব। এখন আমার কাজ আছে, এবারে আসতে পারো।”
 
সপ্তদশ পর্ব (#07)
ধৃতিমান একবার দেবশ্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে, গতরাতের আচরনের জন্য ধৃতিমানের উপরে ক্ষুধ কিনা সেটা বোঝার চেষ্টা করে। দেবশ্রীর মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই ওর মাথার মধ্যে কি চলছে। ধৃতিমানের চাহনি দেখে দেবশ্রীর বুঝতে অসুবিধে হয় না ওর মনের কথা। দেবশ্রী হেসে নিচু কণ্ঠে জানিয়ে দেয় যে ব্যাক্তিগত জীবনের সাথে কাজ আর পেশা কখন গুলিয়ে ফেলে না। ধৃতিমান বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ম্লান হেসে দেবশ্রীর কেবিন থেকে বেড়িয়ে যায়।
পরের দিনের জন্য কোন কাজ ফেলে রাখতে চায় না দেবশ্রী। বিকেলের মধ্যে ইন্টারভিউয়ের কাজ শেষ হয়ে যায়। ধৃতিমান শেষ পর্যন্ত পূর্ব মনোনীত প্রার্থীদের বদলে আরো দুটি প্রার্থীকে নিযুক্ত করে। কাজের শেষে ধৃতিমান দেবশ্রীর কাছে এসে দুপুরের আচরনের জন্য ক্ষমা চায়। ধৃতিমানের আচরনে দেবশ্রী বেশ খুশি হয়। কপট অভিমান দেখিয়ে দেবশ্রী, মনীষাকে নিয়ে হোটেলের দিকে রওনা দেয়। ব্যাগ গুছিয়ে নিতে হবে, আগামী কাল দুপুরের ফ্লাইট। হোটেলে নিজের কামরায় ঢুকে সারাদিনের কাজের রিপোর্ট খুলে বসে। সব মিলিয়ে একটা রিপোর্ট তৈরি করতে বেশ সময় লেগে যায়। রিপোর্ট, মিস্টার হেমন্ত ঠাকুর আর মিস্টার ব্রিজেশ ত্রিপাঠিকে মেল করে দেয়। রুম সার্ভিসে এক কাপ কফি চেয়ে চুপ চাপ টিভি খুলে বসে পরে। টিভি দেখতে দেখতে ব্যাগ গুছিয়ে ফেলে। এমন সময়ে মিস্টার ব্রিজেশ ত্রিপাঠির ফোন আসে দেবশ্রীর কাছে, কনফারেন্স কলে মিস্টার হেমন্ত ঠাকুর।
ব্রিজেশ, “হ্যালো ম্যাডাম, কেমন আছেন? আপনার রিপোর্ট পেলাম।”
দেবশ্রী, “হ্যাঁ স্যার ভালো আছি। ব্যাস সব কাজ শেষ, আশা করি আপনাদের মনপুত ভাবে কাজ শেষ করতে পেরেছি।”
ব্রিজেশ, “ম্যাডাম, আপনি অভূতপূর্ব কাজ করে দিয়েছেন।”
দেবশ্রী জানে কি ব্যাপারে কথা বলছে মিস্টার ত্রিপাঠি, তাও বিনম্র ভাষায় বলে, “এটা আমার কাজ, স্যার।”
হেমন্ত, “আপনি সতের লাখ টাকা বাঁচালেন কি করে? আপনার গোপন শক্তি একটু খোলসা করে বলুন’ত?”
হেসে ফেলে দেবশ্রী, “বাঃ স্যার, আপনি নিজে বোর্ডে আছেন আপনি জানেন ভালো ভাবে কি করতে হয়।”
হেমন্ত, “হ্যাঁ সেটা জানি কিন্তু এর আগে যাকে পাঠিয়েছিলাম মানে চার বছর আগে যে চিফ রিক্রুটার ছিল সে বাজেট ফেল করে দিয়েছিল, সেখানে আপনি সতের লাখ টাকা বাঁচিয়ে এনেছেন, তাও সবার মন রক্ষা করে। কি করে করেন ম্যাডাম।”
ব্রিজেশ, “ম্যাডাম, সত্যি বলছি, আগে মনে হত মিস্টার ঠাকুর আপনার সম্পর্কে বাড়িয়ে বলেন। আজকের রিপোর্ট দেখে মনে হল আপনাকে পরের মাস থেকে দিল্লীতে নিয়ে আসি। এখানে খুব দরকার আপনার, বিজনেসে মারজিন কমে আসছে সেই সাথে কস্ট কাটিং কিন্তু লোক ছাড়িয়ে কস্ট কাটিঙ্গের পক্ষপাতি আমি নই।”
হেমন্ত হেসে বলে, “আপনি আমার চাকরি খেয়ে ফেললেন দেখছি। কিন্তু আমি সত্যি আপনার কৌশলে প্রভাবিত।”
দেবশ্রী হেসে দেয়, “না স্যার, দিল্লী আসার সিদ্ধান্ত এখন ঠিক করে উঠতে পারিনি। ছেলের সাথে ওই বিষয়ে কোন কথা হয় নি। আমি জানি আমার ছেলেকে, হয়ত আমার দিল্লীতে আসা হবে না স্যার। আমি সত্যি খুব দুঃখিত।”
হেমন্ত, “আপনি এত ভেঙ্গে পড়ছেন কেন? আমার কিন্তু আপনার উপরে বিশ্বাস আছে। আচ্ছা এক কাজ করুন, আপনি ছুটি নিন। আপনি ছেলেকে নিয়ে কোন এক ভালো জায়গায় ছুটি কাটিয়ে আসুন, ছেলের সাথে বিস্তারিত কথা বলুন, ওকে জানান যে এখন চাকরির বাজারের কি অবস্থা। এইমত অবস্থায় আপনার কোম্পানি ওকে চাকরি দিচ্ছে।”
দেবশ্রী হেসে বলে, “আগামী কাল আমি কোলকাতা ফিরতে চাই। আমার ছেলে আমার জন্য পথ চেয়ে বসে আছে।”
ব্রিজেশ, “ম্যাডাম, আপনি কালকে কোলকাতা না গিয়ে দিল্লী চলে আসুন। গরম কাল, কোলকাতায় বড় ঘাম দেয়। একটা সুন্দর হিল স্টেসানে ঘুরতে যান ছেলেকে নিয়ে। মুসউরিতে রেসিডেন্সি ম্যানরে আপনার নামে রুম বুক করে দিচ্ছি, আপনি ছেলেকে নিয়ে বেশকিছু দিন ছুটি কাটিয়ে আসুন। কাজের কথা পরে করা যাবে, ওই সব মাথা থেকে মুছে মুসৌরি ঘুরে আসুন। আপনি সতের লাখ টাকা বাঁচিয়ে দিয়েছেন, টাকা সঞ্চয় করা মানে টাকা আয় করা। কোম্পানি আপনার জন্য এতটুকু করতেই পারে, অন্তত আমি করতে পারি।”
ব্রিজেশ হেমন্তকে বলে, “মিস্টার হেমন্ত, তাড়াতাড়ি একটু ব্যাবস্থা করে দিন ম্যাডামের। কাজের কথা না হয় পরে হবে, আগে ম্যাডামের এয়ার টিকিট আর হোটেলের ব্যাবস্থা করে দিন।”
হেমন্ত, “হয়ে যাবে স্যার, আমি এখুনি শান্তনুকে ফোনে জানিয়ে দিচ্ছি। ম্যাডামের সব ব্যাবস্থা হয়ে যাবে।”
দেবশ্রীকে জিজ্ঞেস করে, “কার নামে কবে কার টিকিট হবে, সব কিছু আপনি শান্তনুকে বলে দেবেন। কাল দুপুরের মধ্যে আপনার টিকিট, গাড়ি, মুসউরিতে থাকার ব্যাবস্থা সব হয়ে যাবে। আপনি একটু রেস্ট নিন আর ছেলের সাথে কিছুদিন ঘুরে আসুন।”
বেড়াতে যাবার প্রস্তাবে দেবশ্রী বড় খুশি হয়, অনেক বছর দেবায়নকে নিয়ে কোথাও ঘুরত যায় নি। ঘুরতে গেলেও, পশ্চিমবঙ্গের আশেপাশের জায়গা ছাড়া কোথাও যেতে পারেনি। দেবশ্রী প্রস্তাব মেনে বলে, “ঠিক আছে স্যার, আপনি শান্তনুকে বলে দিন। বাকি আমি কাল সকালে ছেলেকে ফোন করে জানিয়ে দেব।”
দেবশ্রী ফোন ছেড়ে বেশ খুশি হয়, দেবায়নকে একটা বড় চমক দেওয়া যাবে। এতরাতে আর ফোন করে না, সকালে ফোন করে দেবে। কিছু পরে শান্তনু দেবশ্রীকে জানায় যে মিস্টার হেমন্ত ঠাকুরের কথা অনুযায়ী কোলকাতার টিকিট বাতিল করে দিল্লীর টিকিট কেটে দিয়েছে। দেবশ্রী দেবায়নের নামে কোলকাতা থেকে দিল্লীর শুক্রবার রাতের একটা টিকিট কাটতে বলে। দেবশ্রী জানায় যে শনিবার সকালে ওরা দিল্লী থেকে গাড়ি করে অথবা ট্রেনে মুসউরি যেতে চায়। সেইখানে তিন দিন ছুটি কাটাতে চায়। শান্তনু জানিয়ে দেয়, দেবশ্রীর কথা মতন হোটেল গাড়ি সব ঠিক করে দেবে।
সব কিছু গুছিয়ে নিয়ে দেবশ্রী চুপচাপ বসে থাকে। মন একটু ভারাক্রান্ত, ভেবেছিল ধৃতিমানের সাথে শেষ সময়টুকু একটু সুখকর হবে কিন্তু ধৃতিমানের প্রস্তাবে কি করবে কিছু ভেবে পায় না। দুপুরে দেবায়নকে ফোন করেছিল। দেবায়ন অনুরোধ করেছিল যাতে আর রাতে ফোন না করে, তাই আর ফোন করে উত্যক্ত করল না ছেলেকে। দেবায়নের কথা মনে পরে দেবশ্রীর, ছেলে বলেছিল, “তোমার রক্ত মাংসের শরীর মা, তোমার বুকেও নিশ্চয় অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা কামনা বাসনা আছে। মা তুমি কাউকে ভালোবেসে আবার বিয়ে কর। তোমার সামনে অনেক বড় একটা জীবন পরে আছে। কেন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছ? মা, আমি আমার ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছি। আমি হয়ত ভবিষ্যতে নাও থাকতে পারি তোমার কাছে। হয়ত আমার চাকরি বিদেশে হবে। মা অনেক সময়ে তোমার মনে হয় না, যে তোমার পাশে কেউ থাকলে তাঁকে মনের কথা বলতে পারতে, তাঁর কাঁধে মাথা রেখে শুয়ে থাকতে পারতে, তাঁর বুকে মুখ গুঁজে কাঁদতে পারতে।”
তার উত্তরে দেবশ্রী জিজ্ঞেস করেছিল, “তোকে এত কথা কে শিখিয়েছে রে? অনু?” ছেলে মাথা নাড়িয়ে জানিয়েছিল ওই ছোটো মেয়েটা ওকে এই সব শিখিয়েছে। দেবায়নের সাথে সাথে অনুপমার কথা মনে হয়। মনে হয় যে ছেলে মেয়েরা সত্যি অনেক বড় হয়ে গেছে, মনে হয় ওরা বর্তমান যুগের ছেলে মেয়ে, এক একাকী মায়ের দুঃখ কষ্ট বুঝতে পারবে। দেবশ্রী সেদিন হাসি কান্না মিশিয়ে ছেলেকে বলেছিল, “আমার তাহলে আজ মরেও শান্তি আছে রে। জেনে বড় শান্তি পেলাম যে, তোকে দেখার মতন কেউ আছে।”
ধৃতিমানের জন্য মন উতলা হয়ে ওঠে দেবশ্রীর, এই কথা আগে কেন মনে হয় নি ওর। আগে মনে হলে হয়ত অত কড়া ভাবে ধৃতিমানের প্রস্তাবের উত্তর দিত না, হয়ত বুঝিয়ে বলত যে দেবায়নের সাথে কথা বলার পরে নিজের সিদ্ধান্ত জানাবে। ডিনার করা হয়নি, একবার ভাবে ধৃতিমানকে ফোন করে জিজ্ঞেস করবে ডিনারের জন্য। ঠিক সেই সময়ে ধৃতিমানের ফোন আসে হোটেলের ইন্টারকমে।
ধৃতিমান ফোন তুলেই বলে, “কি হল, আমার উপরে রাগ করে আছো মনে হচ্ছে? রাত সাড়ে দশটা বাজে ডিনারের নাম নেই, তোমার মোবাইল অনেকক্ষণ থেকে এনগেজ ছিল? ছেলের সাথে কথা বলছিলে?”
অনেকক্ষণ পরে ধৃতিমানের স্বাভাবিক কণ্ঠস্বর শুনে দেবশ্রীর মন নেচে ওঠে, হেসে উত্তর দেয়, “সত্যি, তোমার উপরে রাগ করে থাকা যায় না।”
ধৃতিমান, “ডিনারের কি খবর? নিচে যাবে?”
দেবশ্রী, “জানো সত্যি কথা বলব। তোমার ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম আমি, কখন ডিনারের জন্য ডাকবে।”
ধৃতিমান অবাক সুরে বলে, “তাই নাকি? আমার মত ভাগ্যবান আর এই পৃথিবীতে নেই তাহলে। রাগ তাহলে কমে গেছে সুন্দরীর।”
দেবশ্রী লাজুক হেসে বলে, “ধুত দুষ্টু, তাড়াতাড়ি নিচে চল। একটা নতুন খবর দেব তোমাকে।”
ধৃতিমান, “তাই নাকি, ওকে ডারলিং, আমি তৈরি। চলে এস।”
দেবশ্রী কাপড় ছাড়ার সময় পায়নি, অফিস থেকে এসে হাত মুখ ধুয়ে কাজে বসে গেছিল, তারপরে হেমন্ত ঠাকুর আর ব্রিজেশ ত্রিপাঠির ফোন এল, তারপরে ব্যাগ গুছানো। কামরা থেকে বেড়িয়ে দেখে ধৃতিমান দরজায় দাঁড়িয়ে। ধৃতিমানকে দেখে একগাল মিষ্টি হেসে নিচে রেস্তোরাঁতে যেতে বলে। ধৃতিমান দেবশ্রীর হাসি মুখ দেখে খুব খুশি হয়, একবার ভয় পেয়ে গেছিল যে দেবশ্রী দ্বিতীয় বার ওর সাথে কথা বলবে না।
খাবার সময়ে ধৃতিমান জিজ্ঞেস করে, “তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে বড্ড খুশি, কি ব্যাপার? কাল চলে যাবে তাই খুশি?”
দেবশ্রী, “না সেটা নয়। আসল খুশি অনেক দিন ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে যাইনি। এবারে ভাবছি ঘুরতে যাবো।”
ধৃতিমান, “বাঃ বেশ, এই অধম যদি একটু সাথে যেতে পারত তাহলে বড় ভালো হত। কিন্তু যাচ্ছো কোথায়?”
দেবশ্রী মিচকি হেসে বলে, “তোমাদের দিল্লীর কাছেই কোথাও একটা যাচ্ছি।”
ধৃতিমান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, “সত্যি বলছ? কোথায় যাচ্ছো একটু ঝেড়ে কাশো।”
দেবশ্রী, “মুসউরি যাচ্ছি, আমি আর ছেলে।”
ধৃতিমান, “হটাত কি ব্যাপার। তোমার ত ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল না?”
দেবশ্রী অফিসের কথা জানাতে দ্বিধা বোধ করে। হেমন্ত ঠাকুরের প্রস্তাব শুনে ধৃতিমানের মনে ঈর্ষা জাগতে পারে, তাই আসল কথা চেপে ধৃতিমানকে বলে, “না মানে, যাচ্ছি। অনেকদিন ছেলেকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাইনি তাই বড় ইচ্ছে হল।”
ধৃতিমান, “কবে যাচ্ছো?”
দেবশ্রী, “কাল দিল্লী ফিরব, পরশু সকালে দিল্লী থেকে গাড়ি অথবা ট্রেনে করে মুসউরি চলে যাবো। সেখানে দিন চারেক থেকে আবার ফিরে যাবো কোলকাতা।”
ধৃতিমান লাফিয়ে ওঠে দেবশ্রীর কথা শুনে, “এই ত ব্যাস। তাহলে আমিও যেতে পারি কি বল।”
দেবশ্রী, “মানে?”
ধৃতিমান, “দেখ এবারে দয়া করে আমাকে মানা করো না। আমি যাচ্ছি তোমাদের সাথে, মানে আমি কাল রাতে দিল্লী ফিরে মুসৌরি চলে যাচ্ছি, তোমার রবিবার আসছো। ব্যাস, দূর থেকে তোমাকে কয়েকদিনের জন্য দেখে শান্তি পাবো অন্তত।”
দেবশ্রীর মন ধৃতিমানকে সেখানে জড়িয়ে ধরার জন্য আকুলি বিকুলি করে ওঠে, ঠোঁট চেপে চাপা কণ্ঠে বলে, “বড্ড দুষ্টুমি করার শখ জেগেছ তাই না? আচ্ছা আমরা জয়পিতে থাকব।”
ধৃতিমানের চোখ বড়বড় হয়ে যায়, “উপ্স, একদম ফাইভ স্টার হোটেলে, কি ব্যাপার।”
দেবশ্রী, “তুমি এক কাজ কর, তুমি মল্লিকাকে নিয়ে চলে এস, ওখানে দেখা হয়ে যাবে তোমার মেয়ের সাথে। ছেলেকে একটা বড় চমক দেব সেই উত্তেজনায় বড় ভালো লাগছে জানো।”
ধৃতিমান একটু ক্ষুণ্ণ হয়ে বলে, “ইসসস, তুমি না মাঠে মারা করে দিলে সব মজা। তুমি কাল দিল্লী ফিরছ, তাহলে রাতে আমার বাড়িতে ডিনারে এস, সেইখানে আমার মেয়ের সাথে দেখা হয়ে যাবে। আমি শনিবার শতাব্দী ধরে দেরাদুন হয়ে মুসউরি পৌঁছে যাব।”
দেবশ্রী, “না গো, কাল বিকেলে ছেলে আসবে দিল্লী। ওকে ছেড়ে যেতে পারি না। একটু বুঝতে চেষ্টা করো।”
ধৃতিমান, “আর আমার মুসউরি যাওয়া? তার কি হবে?”
দেবশ্রী হেসে বলে, “চলে এস, দেখা যাবে কি হয়।”
দেবশ্রীর মনে, কচি কাঁচাদের মতন লুকিয়ে প্রেম করার বাসনা জেগে ওঠে, মিচকি হেসে ধৃতিমানকে বলে, “এই এখন যেমন লুকিয়ে প্রেম করার মজা, ঠিক তেমনি কিছু একটা হবে।”
ধৃতিমান প্রেমে উন্মাদ হয়ে ওঠে, দেবশ্রীর ঠোঁটের দুষ্টু মিষ্টি হাসি দেখে ওইখানে জড়িয়ে ধরার প্রবল ইচ্ছে জাগে। কোনোরকমে সেই ইচ্ছে দমন করে বলে, “সুন্দরী বড় দুষ্টু হয়ে গেছে মনে হচ্ছে।”
দেবশ্রী দুষ্টুমিষ্টি হাসি মাখিয়ে উত্তর দেয়, “ওই যে তোমার সাথে থেকে থেকে হাওয়া লেগে গেছে। কি করা যাবে বল।”
ধৃতিমান লিফটে দেবশ্রীর হাত ধরে থাকে। কঠিন হাতের উষ্ণতায় মন ভরে ওঠে দেবশ্রীর। একবার মনে হয় এই প্রসস্থ লোমশ বুকের মাঝে নিজেকে লুকিয়ে ফেলে। করিডোরে এসে নিজের কামরার দিকে পা বাড়াতে যায়, কিন্তু পা কিছুতেই চলে না। ধৃতিমান নিজের কামরার সামনে এসে দেবশ্রীর হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। দেবশ্রী হাত ছাড়ানোর কোন উপক্রম দেখায় না, নিশ্চুপ নিশ্চল হয়ে ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে নিজেকে বিলীন করার আশায় দাঁড়িয়ে থাকে। ধৃতিমান ধিরে ধিরে দেবশ্রীকে নিজের কামরায় ঢুকিয়ে নেয়। চুম্বকের টানে দেবশ্রী ধৃতিমানের কামরায় ঢুকে যায়, ধৃতিমানের চোখ, ধৃতিমানের বাহুপাশ, ধৃতিমানের কঠোর পেষণ দেবশ্রীকে অবশ করে দেয়। কামরায় ঢুকতেই ধৃতিমান দেবশ্রীর কোমর জড়িয়ে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে গভীর চুম্বন এঁকে দেয়। চোখ বন্ধ করে দেবশ্রী নিজেকে ধৃতিমানের আদরের কাছে সমর্পণ করে দেয়।
 
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: পাপ কাম ভালবাসা - by Mr Fantastic - 27-09-2020, 06:18 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)