27-09-2020, 02:39 PM
সপ্তদশ পর্ব (#05)
ধৃতিমান দুই পা দেবশ্রীর দিকে এগিয়ে আসে, দেবশ্রীর বুকের মাঝে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাবার যোগাড়। ধৃতিমান দেবশ্রীর হাত দুটি নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে তুলে নেয়। দেবশ্রী শ্বাস বন্ধ করে ধৃতিমানের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। পায়ে কেউ পেরেক দিয়ে মেঝতে গেঁথে দিয়েছে। সামনে পা বাড়াতে অক্ষম পিছিয়ে যেতে অক্ষম। ধৃতিমানের জ্বলন্ত চোখের ভাষা দেবশ্রীকে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়।
ধৃতিমান দেবশ্রীর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমার সাথে ডিনারের জন্য অনেক ধন্যবাদ, ম্যাডাম। তুমি আমার ব্যাথা বেদনা ভাগ করে নিলে, তার জন্য অনেক ধন্যবাদ। জানো আজকে বড় খুশির দিন আমার কাছে, অনেক দিন পরে মনে হচ্ছে নিজেকে ফিরে পেয়েছি।”
ধৃতিমান দেবশ্রীর মুখের উপরে ঝুঁকে পরে, দেবশ্রীর বুকের পাঁজরের ভেতরে হৃদপিণ্ড ধুকপুক করা থামিয়ে দেয়। সারা শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসে এক আসন্ন চুম্বনের চুম্বকীয় আকর্ষণে। দেবশ্রী নিথর হয়ে যায়, মুখের উপরে ধৃতিমানের উষ্ণ শ্বাসের ঢেউ মৃদু প্রলেপ লাগিয়ে চলে যায়। পরস্পরের শারীরিক চাহিদা চাইলেই মিটিয়ে নিতে পারত দেবশ্রী।
দেবশ্রী বহু কষ্টে হাত ছাড়িয়ে ধৃতিমানের দিকে ভেজা চোখে মিহি কণ্ঠে বলে, “গুড নাইট, ধৃতি। কালকে অনেক কাজ আছে।”
চুম্বকের টানে নিজের ঘরে ঢুকে গেল দেবশ্রী। হাতমুখ ধুয়ে, জামা কাপড় বদলে একটু কাজ নিয়ে বসার পরে ছেলেকে ফোন করে। দেবশ্রীর গলা শুকিয়ে যায়, কি বলবে ভেবে পায় না।
মায়ের শুকনো কণ্ঠ শুনে দেবায়ন বিচলিত হয়ে ওঠে, “কি হয়েছে মা? তোমার শরীর ভালো আছে? তোমার গলা ওই রকম শুকনো কেন? বিকেলে কেন ফোন করলে না।”
সন্তানের মুখে “মা” ডাক বড় মধুর, চোখের কোল মুছে কানের উপরে মোবাইল চেপে বলে, “না রে বাবা, ভালো আছি। আজকে অনেক কাজ ছিল বিকেলে তাই আর ফোন করা হয়ে ওঠেনি। বুঝতেই পারছিস, এই রিপোর্ট, সেই রিপোর্ট তৈরি করে দিল্লীতে মেল করা। তারপরে আবার পরের দিনের জন্য কাজ গোছান, সব মিলিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছি রে বাবা।”
দেবায়ন, “তুমি শুক্রবার রাতে বাড়ি ফিরবে ত?”
দেবশ্রী, “হ্যাঁ রে, শুক্রবার রাতেই আমি ব্যাঙ্গালোর থেকে কোলকাতা ফিরে জাব। বাড়ির বাইরে আর মন টিকছে না।”
দেবায়ন, “মা গো, তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে, মা।”
দেবশ্রী কিঞ্চিত চিন্তিত হয়ে পরে ছেলের গলা শুনে, “কি হয়েছে রে তোর?”
দেবায়ন ভাবে আগে মা বাড়ি ফিরে আসুক তারপরে ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলবে। সারাদিন সারারাত শুধু ওর মাথার মধ্যে নিজের কোম্পানি তৈরি করার চিন্তা ঘোরাফেরা করে। মাকে ঠিক ভাবে না বলা পর্যন্ত মনে শান্তি আসছে না। মায়ের ব্যাস্ততার জন্য ফোনে আর খোলসা করে কিছু বলতে চায় না দেবায়ন। উত্তরে কথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আমার জন্য কি আনছো?”
হেসে ফেলে দেবশ্রী। আগে অফিস থেকে ফেরার সময়ে রোজ দিন কিছু না কিছু নিয়ে ঘরে ঢুকত, কোনদিন ক্যাডবেরি, কোনদিন খেলনা, কোনদিন গল্পের বই। কিছু না পেলে রাগ করে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকত দেবায়ন। দেবশ্রী হেসে বলে, “তোর জন্য দিল্লী থেকে একটা দামী ঘড়ি কনেছি আর অনুর জন্য জিন্স কিনেছি রে। বাড়ি গেলে দেখাব। রাতে খেয়েছিস? কাজের লোক এসেছিল?”
দেবায়ন, “হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ। আমার খাওয়া দাওয়া হয়ে গেছে, কাজের লোক এসে রান্না বান্না করে দিয়ে গেছে।”
দেবশ্রী, “আমি বাড়ি নেই, পড়াশুনা নিশ্চয় তাকে উঠিয়ে রেখেছিস।”
অবশ্য গত সাত আট দিনে বই কি জিনিস একবারের জন্য ছুঁয়ে দেখেনি। মা জানতে পারলে পিঠের চামড়া গুটিয়ে দেবে। দেবায়ন কিঞ্চিত বিরক্ত প্রকাশ করে বলে, “বা রে, এই সবে ছুটি শুরু হল। দাঁড়াও পড়াশুনা হবে ঠিক হবে।”
দেবশ্রী, “সামনে পরীক্ষা, ভালো মার্কস না আনলে হাইয়ার স্টাডিস কি করে হবে?”
দেবায়ন, “সব হবে, ঠিক হবে। ফোন রাখো ত। ভালো থেকো গুড নাইট।”
পরের দিন পুনেতে শেষ দিন, সকাল থেকে ইন্টারভিউ নেওয়া, চূড়ান্ত ফলাফল জানিয়ে মিস্টার হেমন্ত ঠাকুরের কাছে রিপোর্ট পাঠানো। সবার ফাইনাল পদ প্রার্থীদের অফার লেটার দেওয়া, দ্বিতীয় বার সবার কাগজ পত্র খুঁটিয়ে দেখা, এই কাজে সারাদিন ব্যাস্ত হয়ে পরে দেবশ্রী। সকাল থেকে ধৃতিমানের সাথে কথা বলার অবকাশ পায়নি একদম। বিকেলে হোটেলে ফিরে গোছগাছ করে এয়ারপোর্টের দিকে রওনা দিল সবাই। গাড়িতে উঠে একটু শান্তির শ্বাস নেয় দেবশ্রী। ধৃতিমান জিজ্ঞেস করে দিন কেমন কাটল। দেবশ্রী মাথায় হাত দিয়ে বলে যে যত দিন এগোয় তত ওর চিন্তা বেড়ে ওঠে কাজ বেড়ে ওঠে। ব্যাঙ্গালর শেষ করে তাড়াতাড়ি কোলকাতা ফিরে যেতে পারলে বেঁচে যায়। প্লেনে চেপে ব্যাঙ্গালরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু। দেবশ্রী চুপচাপ বসে থাকে, বাইরের রাতের অন্ধকার আকাশে এক নতুন জায়গায় নিয়ে যায় প্লেন। পাশে বসে মনীষা নিজের গল্প করে যায়, অর্ধেক কথা কানে ঢোকে, অর্ধেক কথা ঢোকে না। দেবশ্রী, জানালার বাইরের অন্ধকারে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে চুপচাপ বসে থাকে। প্লেন এক মনে নিজের গোঁ গোঁ শব্দে পুনে থেকে ব্যাঙ্গালোর পৌঁছে যায়।
সেন্ট মার্কস রোডের উপরে খুব বড় একটা হোটেলে ওদের থাকার ব্যাবস্থা। পরের দিনের ইন্টারভিউ ওই হোটেলে হবে। সারাদিন কাজের পরে বড় ক্লান্ত সবাই। নিজের কামরায় ঢুকে সব থেকে আগে স্নান সেরে ফেলে দেবশ্রী, তারপরে ছেলেকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে ব্যাঙ্গালোর পৌঁছে গেছে। মায়ের গলা পেয়ে দেবায়ন খুব খুশি, আর মোটে দুই দিন তারপরে মা বাড়িতে চলে আসবে। পুনে থেকে বের হবার সময়ে বিশেষ খাওয়া হয়নি, প্লেনে যা খেতে দিয়েছিল তা এতক্ষনে হজম হয়ে গেছে। দেবশ্রী ল্যাপটপ খুলে কাজে মন লাগায়, একবার ভাবে কিছু একটা রুম সার্ভিস অর্ডার করলে হয়। ঠিক সেই সময়ে রুমের ফোন বেজে ওঠে। ফোন তুলে ওপর পাশে ধৃতিমানকে পেয়ে একটু শান্তি পায় দেবশ্রী, সারাদিনের ব্যাস্ততার মাঝে ধৃতিমানের সাথে ঠিক করে কথা বলতে পারেনি।
ধৃতিমান জিজ্ঞেস করে, “আমার বড় খিধে পেয়েছে, তোমার কি খবর?”
দেবশ্রী হেসে ফেলে, “আমি ঠিক তাই ভাবছিলাম, রুম সার্ভিস ডেকে নেব ভাবছি।”
ধৃতিমান, “হ্যাঁ হ্যাঁ, তাই ভালো এখন আর নিচে নেমে লাভ নেই। তোমার রুমে ডেকে নাও আমি একটু পরে চলে আসছি।”
দেবশ্রী, “মানে?”
ধৃতিমান, “মানে তুমি তোমার রুমে অর্ডার প্লেস করবে না আমার রুমে আসবে?”
দেবশ্রী, “ওকে বাবা, তুমি আমার রুমে চলে এস। আমি কাগজ পত্র মেলে, ল্যাপটপ খুলে বসে পড়েছি। এখানেই চলে এসে কিছু অর্ডার করে দাও।”
ধৃতিমান, “ওকে, আমি একটু পরেই আসছি।”
কিছুক্ষণের মধ্যে ধৃতিমান দেবশ্রীর কামরায় পৌঁছে যায়। দেবশ্রী তাড়াতাড়ি পরনের মাক্সির উপরে একটা স্টোল জড়িয়ে নেয়। ধৃতিমানের চাহনি দেবশ্রীর নধর সুপুষ্ট দেহপল্লবের উপরে ঘোরাফেরা করে। উত্তপ্ত চাহনি দেবশ্রীকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। ধৃতিমানের লিপ্সা মাখা নজরে দেবশ্রীর হৃদয়ে কামনার আগুন জ্বলে ওঠে। ধৃতিমান ফোন তুলে খাবারের অর্ডার দিয়ে একটা সোফা টেনে বসে, মাঝখানে ছোটো টেবিল উলটো দিকের সোফায় দেবশ্রী।
ধৃতিমান জিজ্ঞেস করে, “তুমি সত্যি ব্যাঙ্গালোর থেকে কোলকাতা ফিরে যাবে?”
দেবশ্রী, “হ্যাঁ ধৃতি, আমি দিল্লী যাচ্ছিনা। মিস্টার হেমন্ত ঠাকুর আর মিস্টার ব্রিজেশের সাথে কথা হয়ে গেছে। আমি শুক্রবার রাতে এখানের কাজ শেষ করে সোজা কোলকাতা ফিরে যাবো।”
ধৃতিমানের চেহারায় একটু কালো ছায়া পরে যায় দেবশ্রীর কথা শুনে, ক্ষুণ্ণ মনে বলে, “আমি ভেবেছিলাম তুমি দিল্লী যাবে, তারপরে ওখান থেকে কোলকাতা। দিল্লী গেলে বড় ভালো হত, একদিন তোমাকে অন্তত নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারতাম। মলি তোমাকে দেখে খুশি হত।”
ম্লান হেসে জবাব দেয় দেবশ্রী, “মনে হয় না এই যাত্রায় সম্ভব, ধৃতি। ছেলের জন্য, বাড়ির জন্য মন বড় টানছে, কোলকাতা আমাকে ফিরতে হবেই।”
ধৃতিমান সামনে ঝুঁকে দেবশ্রীর হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে, “ব্যাঙ্গালরে শুধু কাজ আর কাজ, আমি ভেবেছিলাম আরো কিছুদিন তোমার পাশে থাকতে পারব।”
দেবশ্রীর শরীর কেঁপে ওঠে ধৃতিমানের উষ্ণ হাতের চাপে, চাপা কণ্ঠে বলে, “পৃথিবীটা গোল ধৃতি, একদিন হয়ত আবার দেখা হবে।”
ধৃতিমান দেবশ্রীর হাত না ছেড়ে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরে। দেবশ্রীর ধৃতিমানের চোখের মণির দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। ধৃতিমান দেবশ্রীর হাত ঠোঁটের কাছে এনে আলতো চুমু খেয়ে বলে, “দেবশ্রী, এই কয়দিনে আমি তোমাকে বড় ভালোবেসে ফেলেছি।”
তিরতির করে কেঁপে ওঠে দেবশ্রীর ঠোঁটজোড়া, ধরা গলায় বলে, “কেন স্বপ্ন দেখাচ্ছ ধৃতিমান? রঙ্গিন স্বপ্ন দেখা আমি ভুলে গেছি।”
ধৃতিমান ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে যায় দেবশ্রীর ঠোঁটের কাছে, দেবশ্রীর ঠোঁট জোড়া অল্প ফাঁক হয়ে আসন্ন চুম্বনের প্রতীক্ষা করে। উষ্ণ শ্বাসের প্রলেপ লেগে যায় দেবশ্রীর সারা মুখে। ধৃতিমানের পুরু ঠোঁট দেবশ্রীর পাতলা নরম গোলাপি ঠোঁট আলতো করে ছুঁয়ে যায়। দেবশ্রী চোখ বুজে ধৃতিমানের হাত শক্ত করে ধরে থাকে। ধৃতিমানের ঠোঁট ওর নরম তৃষ্ণার্ত অধরের রস চুম্বনে ব্যাস্ত হয়ে যায়। দুই চাতক চাতকী পরস্পরের অধর চুম্বনে মগ্ন হয়ে পরে। ধৃতিমান দেবশ্রীর গা থেকে স্টোল সরিয়ে কাঁধে হাত রাখে। দেবশ্রী ধৃতিমানের বুকের উপরে হাত মেলে চুম্বন গভীর করে নেয়। বহু যুগ পরে প্রেমের বারিসিঞ্চনে দেবশ্রীর অভুক্ত হৃদয় ভরে ওঠে। ধৃতিমান দেবশ্রীর নধর কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নেয়। দুই থাই ফাঁক করে ধৃতিমানকে পায়ের মাঝে হাঁটু গেড়ে বসতে সাহায্য করে দেবশ্রী। দেবশ্রীর হাত উঠে আসে ধৃতিমানের মাথার পেছনে, চুলের মধ্যে আঙুল ডুবিয়ে আঁচর কেটে মাথা টেনে চুম্বন আরো গভীর করে তোলে দেবশ্রী। ধৃতিমানের হাত ওর পিঠের ওপরে চলে যায়। সারা পিঠ জুড়ে ধৃতিমানের হাত উপর নীচ আদর করে। উত্তপ হয়ে ওঠে দেবশ্রীর শরীর, শ্বাস ফুলে ওঠে সেই সাথে নরম উদ্ধত স্তন জোড়া ধৃতিমানের বুকের উপরে চেপে বসে। ধৃতিমানের কঠিন বুকের পেষণে দেবশ্রী গলে যায় মোমের পুতুলের মতন। প্রগার চুম্বন ভাঙ্গে রুম সার্ভিসের বেলে।
লাজুক চোখে ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে বলে, “দুষ্টুমি শুরু করে দিলে, এবারে দরজা খুলে খাবার নিয়ে এস।”
ধৃতিমান দেবশ্রীর গালে চুমু খেয়ে বলে, “ওকে ডার্লিং, যেমন তুমি বলবে।”
দেবশ্রী গায়ে স্টোল জড়িয়ে নেয়, বয় খাবার নিয়ে এসে টেবিলের উপরে রেখে চলে যায়। বয় চলে যেতেই ধৃতিমান দেবশ্রীর হাত ধরে দাঁড় করিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে। দেবশ্রী ধৃতিমানের গলা জড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “খিধে মনে হচ্ছে চলে গেছে?”
ধৃতিমান নতুন প্রেমিকের মতন নাকের উপরে নাক ঘষে বলে, “হ্যাঁ তোমার মিষ্টি ঠোঁটের ডেসার্ট চেখে খিধে মরে গেছে।”
দেবশ্রীর শরীর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, নরম ব্রা পরিহিত স্তনের ওপরে ধৃতিমানের চওড়া বুক চেপে বসে সমতল করে দিয়েছে। ধৃতিমানের হাত দেবশ্রীর শিরদাঁড়ার নিচের অংশে চেপে, নিজের দিকে টেনে ধরে। ধৃতিমানের শিথিল উত্তপ্ত লিঙ্গ ওর ট্রাক প্যান্ট ভেদ করে, দেবশ্রীর পাতলা মাক্সি ভেদ করে নরম পেট পুড়িয়ে দেয়।
দেবশ্রী চেপে ধরে নিজেকে ধৃতিমানের বাহুপাশে, চোখের মণির মাঝে গভীর ভাবে তাকিয়ে বলে, “ধৃতি, আমাকে ডিনারের ছলে রুমে ডেকে একি করলে তুমি। আমি অবশ হয়ে যাচ্ছি তোমার ছোঁয়ায়।”
ধৃতিমান, “আমি তোমার রুপে, তোমার গুনের প্রেমে পরে গেছি দেবশ্রী।”
দেবশ্রী, ধৃতিমানের গালে আলতো চাটি মেরে বলে, “আমার কিন্তু বড় খিধে পেয়েছে, ধৃতি।”
ধৃতিমান, “আমাকে খাও না, প্রথম দিনেই আমার মাথা খেলে আর আজকে ত মনে হয় সব খাবে।”
ধৃতিমান দেবশ্রীর কোমর ছেড়ে সোফায় বসে পরে। ধৃতিমানের বাহুপাশ থেকে মুক্তি পেয়ে সোফায় পা মুড়ে বসে যায়। পরনের মাক্সি হাঁটুর কাছে চলে আসে। ধৃতিমানের দৃষ্টি ফর্সা মসৃণ পায়ের গুলির উপরে নিবদ্ধ হয়ে যায়, পাতলা মাক্সি দেবশ্রীর নধর দেহপল্লবের আকর্ষণ বিশেষ ঢাকা রাখতে পারে না। সুগোল পাছার আকার সুস্পষ্ট হয়ে দেখা দেয়, সেই সাথে পরনের প্যান্টির দাগ পাছার উপরে চেপে বসে দেখা দেয়। ধৃতিমানের দিকে থালা এগিয়ে দিয়ে চিকেন আর রুটি দেয় দেবশ্রী। ধৃতিমানের চাহনির ফলে কোমরের নিচের রোমকুপ ফুলে ওঠে।
দেবশ্রী মিহি কণ্ঠে ধৃতিমানকে বলে, “আগে খাওয়া সার নাহলে রুম থেকে বের করে দেব।”
ধৃতিমান লজ্জা পেয়ে বলে, “না না, তোমাকে উঠতে হবে না।”
খেতে খেতে দেবশ্রী মল্লিকার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। ধৃতিমান জানায় মল্লিকা পড়াশুনায় বেশ ভালো। ধৃতিমানের ইচ্ছে মেয়েকে ডাক্তারি পড়ানর কিন্তু মল্লিকা বিজ্ঞানের চেয়ে ইংরাজি বেশি ভালোবাসে। দেবশ্রী জানায় যে ছেলে মেয়েদের নিজের পছন্দ মতন ভবিষ্যৎ গড়তে দেওয়া উচিত। দেবায়ন নিজেই চেয়েছিল ফিসিক্স নিয়ে পড়তে। দেবশ্রী ছেয়েছিল ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াতে কিন্তু দেবায়ন কোন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি তাই আর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারেনি। দেবায়নের সেই নিয়ে কোন ক্ষোভ নেই, দেবশ্রী সেইসব কথা মন থেকে মুছে ফেলেছে। নিজেদের ছেলে মেয়েদের নিয়ে কথাবার্তায় খাওয়া শেষ হয়।
খাওয়া শেষে ধৃতিমান ট্রেতে সব কিছু গুছিয়ে দরজার বাইরে করিডোরে রেখে আসে। দেবশ্রী বাথরুমে ঢোকে হাত মুখ ধোয়ার জন্য। আয়নায় নিজেকে দেখে লজ্জিত হয়ে পরে দেবশ্রী। ধৃতিমানের তীব্র কামাবেগের চুম্বনে ঠোঁট গাল লাল হয়ে গেছে, চেহারায় এক অনাবিল আনন্দের আলোক ছটা দেখা দিয়েছে। চোখের তারায় ভালোবাসা আর বাসনা মেশানো এক ঝিলিক। ধৃতিমান দেবশ্রীর পেছনে এসে দাঁড়ায়। আয়নার প্রতিফলনে পরস্পরের চোখের মণি নিবদ্ধ হয়ে যায়। ধৃতিমান দেবশ্রীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। কিঞ্চিত কঠিন লিঙ্গ দেবশ্রীর নরম সুগোল পাছার খাঁজে চেপে বসে যায়। ধৃতিমানের হাত দেবশ্রীর কোমর পেঁচিয়ে নরম তুলতুলে পেটের উপরে চলে আসে। দেবশ্রী সোজা হয়ে পিঠ চেপে ধরে ধৃতিমানের প্রসস্থ বুকের উপরে। ধৃতিমানের হাতের উপরে হাত রেখে আলিঙ্গন পাশ নিজের দেহের উপরে নিবিড় করে নেয় দেবশ্রী। ধৃতিমানের মুখ নেমে আসে দেবশ্রীর কাঁধের উপরে। খালি কাঁধে ঠোঁট ছুঁইয়ে চুমু খায় ধৃতিমান। ঠোঁট ঘষে কাঁধ থেকে ঘাড়ে নিয়ে যায়, দেবশ্রীর নধর দেহপল্লব কামাবেগে কেঁপে ওঠে ধৃতিমানের কঠিন বাহুপাশে।
দেবশ্রীর গালে গাল ঘষে আদর করে বলে ধৃতিমান, “তুমি বড় মিষ্টি, দেবশ্রী। তোমাকে আদর করতে ইচ্ছে করছে।”
বুকের প্রজ্বলিত কামনার আগুন দমন করে দেবশ্রী ধৃতিমানের গালে আলতো চাটি মেরে বলে, “বুড়ো ধারি, অনেক হয়েছে প্রেম দেখানো। আমি ঘুমাতে যাচ্ছি তুমিও ঘুমাতে যাও। আগামী কাল অনেক কাজ আছে।”
ধৃতিমান দেবশ্রীর গালে আলত চুমু খেয়ে কামরা থেকে বেড়িয়ে নিজের কামরায় চলে আসে। সকাল বেলা তাড়াতাড়ি ওঠার পালা, স্নান সেরে শাড়ি পরে কাজের জন্য তৈরি। মনীষা এসে প্রাতরাশের জন্য ডেকে নিয়ে যায়। প্রাতরাশের টেবিলে ধৃতিমানের সাথে দেখা। ধৃতিমান ইচ্ছে করে দেবশ্রীর পাশে এসে বসে। কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে রাতের কথা জিজ্ঞেস করে। ধৃতিমানের দিকে লজ্জায় তাকাতে পারেনা দেবশ্রী। দেবশ্রী নিজেকে সামলে নেয়, দিনের আলকে, সবার সামনে ধৃতিমানের এই আচরনে কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ হয়।
সপ্তদশ পর্ব (#06)
দেবশ্রী ধৃতিমানের আচরন উপেক্ষা করে জানিয়ে দেয় যে প্রথম দিনের ব্যাঙ্গালরের অনেক ক্যান্ডিডেট আছে, সেই মত নিজেকে তৈরি করে যেন ভালো ভাবে ইন্টারভিউ নেয়। ধৃতিমান দেবশ্রীর কণ্ঠস্বর শুনে বুঝতে পারে, রাতের দেবশ্রী আর দিনের এই পাশে বসা দেবশ্রীর মাঝে আকাশ পাতাল তফাত। সেই কাম বিলাসিনী ক্ষুধার্ত দেবশ্রীর জায়গায় পুরোদস্তুর এক কর্মঠ দক্ষ পেশাদারী নারী বসে। ধৃতিমান আর দেবশ্রীকে ঘাঁটাতে সাহস পায় না।
সারাদিন সবাই ব্যাস্ত হয়ে পরে কাজে, একের পর এক ক্যান্ডিডেটদের ইন্টারভিউ নেওয়া, তাদের অফার লেটার, স্যালারি সম্বন্ধে আলোচনা ইতাদ্যি কাজে দিন কেটে যায়। সকালে কাজের মধ্যেই একবার ছেলেকে ফোন করেছিল দেবশ্রী। রোজ কথা হয় ছেলের সাথে তাও যেন মনে হয় কতদিন দেবায়নের গলা শোনেনি। কাজের ব্যাস্ততার মাঝে সারাদিন হাঁপিয়ে উঠেছিল। বিকেলে কাজের শেষে ছেলের কথা হটাত খুব মনে পরে যায়। হোটেলে নিজের কামরায় ঢুকেই আগে দেবায়নকে ফোন করে। ছেলের গলা শুনে ধরে যেন প্রান ফিরে আসে। ছেলের ফোন ছাড়তেই মিস্টার হেমন্ত ঠাকুরের ফোন আসে। দেবশ্রীর কাজের কথা জিজ্ঞেস করা, বাকিদের কথা জিজ্ঞেস করা ইত্যাদি। গরম ভালোই পড়েছে ব্যাঙ্গালোরে, একবার ভাবে স্নান কর নেবে। তারপরে ভাবে একেবারে রাতে শোয়ার আগে স্নান সারবে। ল্যাপটপ খুলে রিপোর্ট তৈরি করতে করতে অনেকটা সময় কেটে যায়। সময়ের খেয়াল হয় যখন রুমের ইন্টারকমে ধৃতিমানের ফোন আসে।
ধৃতিমান, “তুমি কি আমার উপরে রেগে আছো?”
দেবশ্রী হেসে ফেলে, “কই না তো। তোমার হটাত এমন মনে হল কেন?”
ধৃতিমান, “না মানে সারাদিনে বিশেষ কথা বললে না। এমন কি বিকেলের চা নিজের রুমে খেয়েছ মনে হচ্ছে। জানো কটা বাজে?”
দেবশ্রী ঘড়ির দিকে তাকায়, কাজে কাজে রাত নটা বেজে গেছে। ধৃতিমানকে হেসে জিজ্ঞেস করে, “তোমার কি ইচ্ছে, সেটা খোলসা করে একবার বলে দাও? আজকে কিন্তু আমি ডিনার নিচে গিয়ে করব, আর তোমার জালে ফাঁসছি না।”
ধৃতিমান হেসে ফেলে, “না না, আজকে ভাবছি নিচে গিয়েই ডিনার করব সবার সাথে।”
দেবশ্রী আদুরে লাজুক কণ্ঠে বলে, “আমি কিন্তু ডিনারের পরে সোজা নিজের ঘরে চলে আসব।”
ধৃতিমান, “ওকে বাবা, আমি কিছু বলেছি নাকি সেই জন্য। যাই হোক, একটা কথা বলার ছিল তোমাকে।”
দেবশ্রী, “কি বলে ফেল, আর লুকিয়ে কি হবে?”
ধৃতিমান, “না এখন বলব না, ডিনারের পরে বলব।”
দেবশ্রী, “ঠিক আছে বাবা, তাই সই। চলো তাহলে নিচে, কাল আবার আমার কয়েকটা ইন্টারভিইউ নেওয়ার আছে। একটা আসিস্টেন্ট এইচ.আরের নতুন রিক্রুটমেন্ট হবে ব্যাঙ্গালোর অফিসে।”
ধৃতিমান আর দেবশ্রী নিচে রেস্তোরাঁতে এসে দেখে কেউ আসেনি খেতে। অনেকেই হয়ত হোটেলে নেই অথবা নিজেদের রুমে। ডিনারে সেরে ফেলে তাড়াতাড়ি। ধৃতিমানের আগুন ঝরান চাহনির সামনে দেবশ্রী পুনরায় মোমের পুতুলের মতন গলতে শুরু করে। লিফটে ওঠার সময়ে দেবশ্রীর কোমর জড়িয়ে ধরে ধৃতিমান। নববিবাহিতা রমণীর মতন ধৃতিমানের কাঁধে মাথা রাখে দেবশ্রী। মন চঞ্চল হয়ে ওঠে মিলনের জন্য। দেবশ্রী মনেপ্রানে ধৃতিমানের সান্নিধ্য পেতে চায়, দিনের আলকে সেটা সম্ভবপর নয় তাই রাতের আঁধারে সবার অলক্ষ্যে ধৃতিমানের অঙ্কশায়িনী হওয়ার জন্য হৃদয় ব্যাকুল হয়ে ওঠে। একটু খোঁচা মেরে ধৃতিমানকে বলে যে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যেতে চায়। ধৃতিমান কানেকানে বলে, তাড়াতাড়ি ঘুম আসবে না। কানের লতির উপরে ধৃতিমানের উষ্ণ শ্বাসের ফলে গাল লাল হয়ে যায় দেবশ্রীর। লিফট থেকে বেড়িয়ে নিজের কামরার দিকে পা বাড়ায় দেবশ্রী। ধৃতিমান পেছন থেকে দেবশ্রীর হাত টেনে বুকের উপরে টেনে ধরে। দেবশ্রী টাল সামলাতে না পেরে ধৃতিমানের বুকের উপরে পরে যায়। ধৃতিমান দেবশ্রীর কোমর জড়িয়ে ঠোঁটের উপরে ঠোঁট বসিয়ে দেয়। স্থান কাল ভুলে দেবশ্রী ধৃতিমানের প্রেমের পরশে ডুব দেয়। দুই হাতে ধৃতিমানের গলা জড়িয়ে প্রেমঘন চুম্বন আরও নিবিড় করে তোলে।
চুম্বন ছাড়িয়ে দেবশ্রী ধৃতিমানকে বলে, “আমি স্নানে যাবো, তুমি কি আসতে চাও?”
ধৃতিমান দেবশ্রীর গালে চুমু এঁকে বলে, “আমি এখুনি আসছি তারপরে স্নানে ঢুকে যেও।”
দেবশ্রী, “তাড়াতাড়ি এসে যেও, আমি কিন্তু বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে পারব না।”
ধৃতিমান, “না আমার সুন্দরী অপ্সরা। তোমাকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করাব না। আজকে তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে।”
দেবশ্রী, “তাই নাকি? কি বলার বাকি আছে? আর কাকে কাকে ভালোবেসে করেছ সেই কথা।”
ধৃতিমান, দেবশ্রীর গালে হাত বুলিয়ে আদর করে নিজের কামরার দিকে পা বাড়ায়, “ধুর বাবা, অদ্ভুত মেয়ে তুমি। যাও যাও, আমি জামা প্যান্ট ছেড়ে বারমুডা পরে এখুনি আসছি।”
দেবশ্রী নিজের কামরায় ঢুকে, গান গাইতে শুরু করে দেয়, “চঞ্চল মন আনমনা হয়ে যেই তার ছোঁয়া লাগে, ভোরের আকাশে আলো দেখে পাখী যেন জাগে… চঞ্চল মন আনমনা হয়ে যেই তার ছোঁয়া লাগে”
মনের ভেতরে এক অদ্ভুত ভালোলাগার শীতল মলয় দোলা দেয়। শাড়ির প্যাঁচ খুলতে খুলতে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে। শুধু মাত্র ব্রা আর প্যান্টি পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বারেবারে জরিপ করে। লজ্জায় মুখ লাল হয়ে যায়, আয়নার প্রতিফলনকে মৃদু বকে দেয়, “ধুত দুষ্টু মেয়ে, জাঃ শুধু মাত্র একটা রাতের ভালোবাসা, নিজেকে ভাসিয়ে নে এই কয় ঘন্টার ভালোবাসায়। কানায় কানায় পরিপূর্ণ করে নে তোর শূন্য হৃদয়কে।”
গায়ে একটা তোয়ালে জড়িয়ে, টেবিলের উপর থেকে ল্যাপটপ, কাগজ পত্র গুছাতে শুরু করে।
পরেরদিন বৃহস্পতিবার আর তারপরে শুক্রবার। শুক্রবারে কোলকাতা ফিরে যাওয়া, সেই নিয়ে অবশ্য মিস্টার ঠাকুর আর মিস্টার ত্রিপাঠির সাথে আলোচনা করা হয়ে গেছে। শুক্রবারে বিশেষ কোন ইন্টারভিইউ নেই তাই দুপুরের ফ্লাইট ধরার ইচ্ছে আছে যাতে সন্ধ্যের আগেই কোলকাতা পৌঁছে যেতে পারে। এমন সময়ে দরজায় টোকা মারার আওয়াজ শুনে উচ্ছল প্রানা দেবশ্রী দৌড়ে যায় দরজার দিকে। দরজা খুলেই ধৃতিমানকে দেখে খুশিতে লাফিয়ে ওঠার মতন হয়ে যায়। এই দেবশ্রী কাজের সময়ে এক ভিন্ন রুপী কঠোর মহিলা ছিল। উচ্ছলতা বুকের মাঝে লুকিয়ে দুষ্টু মিষ্টি হেসে ধৃতিমানকে কামরার ভেতরে আসতে বলে। ধৃতিমানের হাতে একটা বড় উপহারের বাক্স। দেবশ্রীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে দেবশ্রীর কপালে ছোটো চুমু খায়। অবাক চোখে ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে উপহারের কথা জিজ্ঞেস করে।
ধৃতিমান বলে, “তোমাকে বিজনেস সুটের চেয়ে, শাড়িতে বেশি সুন্দরী দেখায়। একটা সাউথ সিল্ক কিনলাম বিকেলে, দেখ একবার খুলে পছন্দ হয়েছে কি না। আমি অবশ্য দোকানে বলে এসেছি যে পছন্দ না হলে যার জন্য নিয়ে যাচ্ছি তাকে নিয়ে আগামী কাল ফিরে আসব বদল করার জন্য।”
দেবশ্রী শাড়ির প্যাকেট খুলে বড় খুশি হয়। ঠোঁটে হাসি মুখে লাজ দেখিয়ে বলে, “এই কেনার কি দরকার ছিল, আমি তোমার জন্য কিছু কিনতে পারলাম না যে।”
ধৃতিমান শাড়িটা মেলে ধরে দেবশ্রীর সামনে, সমুদ্রের নীল রঙের শাড়ি আর গাড় নীল রঙের পাড়। দেবশ্রীর গায়ে ঘোমটার মতন জড়িয়ে দিয়ে বুকের কাছে টেনে বলে, “ব্যাস, আমার কাছে থাকলেই হল। এই সবথেকে বড় উপহার পাওয়া হয়ে গেল আমার।”
ধৃতিমানের প্রেমঘন আলিঙ্গন পাশে নিজেকে সঁপে দিয়ে বড় শান্তি মনে হয় দেবশ্রীর। গেঞ্জির উপর দিয়ে, ধৃতিমানের প্রসস্থ বুকের উপরে কান পেতে গাল ঘষে বলে, “তুমি বড্ড ভালো, ধৃতি। বড় মন কেমন করে ওঠে।”
ধৃতিমান, বারমুডার পকেট থেকে একটা ছোটো বাক্স বের করে দেবশ্রীর সামনে ধরে। দেবশ্রী অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে ধৃতিমানের দিকে। ধৃতিমানের চোখে কাম লিপ্সার ছোঁয়ার বদলে অনাবিল এক ভালোবাসার আবেগ ঘন চাহনি। ছোটো লাল বাক্স দেখে দেবশ্রী অনুধাবন করে যে এই বাক্সে একটা দামী অলঙ্কার আছে। ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে চোখের কোল ভিজে ওঠে। তিরতির করে কেঁপে ওঠে দেবশ্রীর ঠোঁট জোড়া। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে দুই পা পেছনে সরে যায়। ধৃতিমান ছোটো লাল রঙের ভেল্ভেটের বাক্স খুলে একটা সোনার আংটি তার উপরে একটা ছোটো হীরে বসানো, দেবশ্রীর দিকে এগিয়ে দেয়। দেবশ্রীর বুক কেঁপে ওঠে, ভাষা হারিয়ে ফেলে, গলা শুকিয়ে যায়। এতটা এগিয়ে যাবে, ধারনা করতে পারেনি দেবশ্রী। ধৃতিমান দেবশ্রীকে ধরে বিছানার উপরে বসিয়ে দেয়। কাঠের পুতুলের মতন দেবশ্রী চুপচাপ বিছানায় বসে পরে।
সামনে মেঝেতে ধৃতিমান হাঁটু গেড়ে বসে, দেবশ্রীর বাম হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে, “আমাকে বিয়ে করবে, দেবশ্রী?”
কিংকরতব্য বিমুড়ের ন্যায় স্থানুর মতন দেবশ্রী নিথর হয়ে বসে থাকে। ধৃতিমানের বাক্য ওর শরীরের সব শিরা উপশিরা ঝনঝন করে ওঠে, মাথা ফেটে পড়ার যোগাড়। কি বলবে দেবশ্রী, উত্তর খুঁজে পায় না। দুই চোখে অবিরাম শ্রাবন বারিধারা বয়ে চলে। ধৃতিমান দেবশ্রীর গালে হাত দিয়ে চোখের জল মুছিয়ে আবার জিজ্ঞেস করে, “আমি তোমাকে ভালোবাসি, দেবশ্রী।”
দেবশ্রী কান্নায় ভেঙ্গে পরে, দুই হাতে মুখ ঢেকে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে কেঁদে ওঠে, “আমাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছ কেন ধৃতিমান? আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি ঠিক, কিন্তু এখন বিয়ে করা একটা খুব বড় সিদ্ধান্ত।”
ধৃতিমান দেবশ্রীর হাত ধরে মুখের উপরে থেকে সরিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কেন, দেবশ্রী, কেন তুমি আমাকে বিয়ে করতে পারো না। আমি কি খারাপ লোক? আমি তোমাকে কোথায় ব্যাথা দিয়েছি, বল আমাকে। আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি, দেবশ্রী।”
দেবশ্রী, “আমাদের এই ভালোবাসা, এই ভালোলাগা ক্ষণজন্মা। তুমি কেন বুঝতে পারো না। আমি আর তুমি দুইজনে ভিন্ন মরুর মানুষ। তুমি উচ্ছল চঞ্চল, আমি ঠিক জানি না আমি কি পছন্দ করি। আমরা দুইজনে প্রাপ্ত বয়স্ক, আমাদের সন্তান আছে। রাতের অন্ধকারে, একান্তে সবার চোখের আড়ালে পরস্পরের কাছে এসেছি, তাই বলে বিয়ে করা? সেটা অসম্ভব, ধৃতিমান।”
ধৃতিমান উঠে দাঁড়ায় দেবশ্রীর সামনে থেকে, “কেন অসম্ভব, কারন বল।”
দেবশ্রী চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়িয়ে তোয়ালের উপরে গাউন জড়িয়ে বলে, “আমার ছেলে অনেক বড় হয়ে গেছে ধৃতিমান। এই সময়ে দ্বিতীয় বার বিয়ের কথা ভাবতে পারি না আমি। আমার সবকিছু আমার ছেলে, ওর পড়াশুনা, ওর ভবিষ্যৎ, ওর সবকিছু আমার উপরে নির্ভর করে। তুমি দিল্লীতে থাক, আমি কোলকাতায় থাকি। ছেলেকে ছেড়ে আমি কখনই দিল্লীতে আসতে পারব না। আমি জানিনা আমাদের সম্পর্ক কি ভাবে ফলপ্রসু হবে। তোমার নিজের একটা মেয়ে আছে, তার কথা একবার ভাব ধৃতিমান। তুমি মেয়ের সাথে কথা না বলে কি করে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারলে? তুমি নিজে কখন কার সাথে রাত কাটাও সেটা তোমার মেয়ে দেখতে যায় না। কিন্তু এই বয়সে তার জীবনে তার পিতার বিবাহিত এক নারীর পদক্ষেপ, সেটা তোমার মেয়ে মেনে নাও নিতে পারে। আমাকে একটু একা ছেড়ে দাও, আমাকে ভাবতে সময় দাও ধৃতিমান।”
ধৃতিমান হীরের আংটিটা বাক্সের মধ্যে ঢুকিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুপরে শান্ত কণ্ঠে দেবশ্রীকে বলে, “একটা কথা বলব, কিছু মনে করবে না।”
দেবশ্রী ভুরু কুঁচকে ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে থাকে। ধৃতিমান বলে, “আমি মিস্টার ঠাকুরকে তোমার কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম।”
বুক কেঁপে ওঠে দেবশ্রীর, প্রচন্ড রাগ হয় ধৃতিমানের উপরে, চোয়াল শক্ত করে চোখের জল মুছে কড়া কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি আমার উপরে নজরদারি করছিলে? জানতে চাইছিলে আমি কি ধরনের মহিলা? তোমার ভালোবাসা তাহলে মেকি?”
ধৃতিমান, “না দেবশ্রী, তুমি আমাকে ভুল বুঝছ। মিস্টার হেমন্ত জানিয়েছিলেন যে তুমি নাকি পরের বছর ডি.জি.এম এইচ.আর পদে দিল্লীতে ট্রান্সফার হয়ে আসছো।”
চোয়াল শক্ত করে ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে বলে, “অফার পেয়েছি, তবে আমি এখন কোন সিদ্ধান্ত জানাই নি। কারন তোমাকে আগেই বলেছি, আমার সবকিছু আমার ছেলে। ওর খুশি, ওর ভালোবাসা, ওর মুখের হাসির চেয়ে দামী, এই পৃথিবীতে কিছু নেই। সুতরাং আমি শুক্রবার কোলকাতা ফিরে ওর সাথে আলাপ আলোচনা করে তবে আমি ওই অফারের সিদ্ধান্ত নেব।”
ধৃতিমান মাথা নাড়িয়ে বলে, “দেবশ্রী, আমার কথা প্লিস একটি বার ভেবে দেখ।”
দেবশ্রী, “আমিও তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি, ধৃতিমান। জানি এই ভালোবাসা ক্ষণজন্মা, তবে বিয়ের ব্যাপারে একটু ভাবতে দাও। ধৃতিমান তুমি দয়া করে এখন চলে যাও, আমি একটু একা থাকতে চাই।”
ধৃতিমান মাথা নিচু করে দেবশ্রীর কামরা থেকে বেড়িয়ে যায়। দেবশ্রী অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে সোফার উপরে। মাথা চিন্তাশুন্য হয়ে যায়, ভাবনা চিন্তা করার শক্তি লোপ পায়। একা একা বিছানায় শুতেই বুকের মাঝে জেগে ওঠে অপার শূন্যতা। দেবশ্রী জানে ওকে ফিরে যেতে হবে নিজের একাকীত্ব জীবনে। হৃদয় হুহু করে কেঁদে ওঠে। পার্স থেকে দেবায়নের ফটো বের করে দেখে, চোখের কোণে এক চিলতে জল চলে আসে দেবশ্রীর। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে দেবায়নের ফটো বুকে ধরে জিজ্ঞেস করে, “আমি তোর মা হলেও আমি এক নারী দেবু। আমি কি করব একবার বলে দে সোনা? আমি হয়ত ধৃতিমান কে ভালোবেসে ফেলেছি।”
ধৃতিমান দুই পা দেবশ্রীর দিকে এগিয়ে আসে, দেবশ্রীর বুকের মাঝে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাবার যোগাড়। ধৃতিমান দেবশ্রীর হাত দুটি নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে তুলে নেয়। দেবশ্রী শ্বাস বন্ধ করে ধৃতিমানের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। পায়ে কেউ পেরেক দিয়ে মেঝতে গেঁথে দিয়েছে। সামনে পা বাড়াতে অক্ষম পিছিয়ে যেতে অক্ষম। ধৃতিমানের জ্বলন্ত চোখের ভাষা দেবশ্রীকে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়।
ধৃতিমান দেবশ্রীর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, “আমার সাথে ডিনারের জন্য অনেক ধন্যবাদ, ম্যাডাম। তুমি আমার ব্যাথা বেদনা ভাগ করে নিলে, তার জন্য অনেক ধন্যবাদ। জানো আজকে বড় খুশির দিন আমার কাছে, অনেক দিন পরে মনে হচ্ছে নিজেকে ফিরে পেয়েছি।”
ধৃতিমান দেবশ্রীর মুখের উপরে ঝুঁকে পরে, দেবশ্রীর বুকের পাঁজরের ভেতরে হৃদপিণ্ড ধুকপুক করা থামিয়ে দেয়। সারা শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসে এক আসন্ন চুম্বনের চুম্বকীয় আকর্ষণে। দেবশ্রী নিথর হয়ে যায়, মুখের উপরে ধৃতিমানের উষ্ণ শ্বাসের ঢেউ মৃদু প্রলেপ লাগিয়ে চলে যায়। পরস্পরের শারীরিক চাহিদা চাইলেই মিটিয়ে নিতে পারত দেবশ্রী।
দেবশ্রী বহু কষ্টে হাত ছাড়িয়ে ধৃতিমানের দিকে ভেজা চোখে মিহি কণ্ঠে বলে, “গুড নাইট, ধৃতি। কালকে অনেক কাজ আছে।”
চুম্বকের টানে নিজের ঘরে ঢুকে গেল দেবশ্রী। হাতমুখ ধুয়ে, জামা কাপড় বদলে একটু কাজ নিয়ে বসার পরে ছেলেকে ফোন করে। দেবশ্রীর গলা শুকিয়ে যায়, কি বলবে ভেবে পায় না।
মায়ের শুকনো কণ্ঠ শুনে দেবায়ন বিচলিত হয়ে ওঠে, “কি হয়েছে মা? তোমার শরীর ভালো আছে? তোমার গলা ওই রকম শুকনো কেন? বিকেলে কেন ফোন করলে না।”
সন্তানের মুখে “মা” ডাক বড় মধুর, চোখের কোল মুছে কানের উপরে মোবাইল চেপে বলে, “না রে বাবা, ভালো আছি। আজকে অনেক কাজ ছিল বিকেলে তাই আর ফোন করা হয়ে ওঠেনি। বুঝতেই পারছিস, এই রিপোর্ট, সেই রিপোর্ট তৈরি করে দিল্লীতে মেল করা। তারপরে আবার পরের দিনের জন্য কাজ গোছান, সব মিলিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছি রে বাবা।”
দেবায়ন, “তুমি শুক্রবার রাতে বাড়ি ফিরবে ত?”
দেবশ্রী, “হ্যাঁ রে, শুক্রবার রাতেই আমি ব্যাঙ্গালোর থেকে কোলকাতা ফিরে জাব। বাড়ির বাইরে আর মন টিকছে না।”
দেবায়ন, “মা গো, তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে, মা।”
দেবশ্রী কিঞ্চিত চিন্তিত হয়ে পরে ছেলের গলা শুনে, “কি হয়েছে রে তোর?”
দেবায়ন ভাবে আগে মা বাড়ি ফিরে আসুক তারপরে ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলবে। সারাদিন সারারাত শুধু ওর মাথার মধ্যে নিজের কোম্পানি তৈরি করার চিন্তা ঘোরাফেরা করে। মাকে ঠিক ভাবে না বলা পর্যন্ত মনে শান্তি আসছে না। মায়ের ব্যাস্ততার জন্য ফোনে আর খোলসা করে কিছু বলতে চায় না দেবায়ন। উত্তরে কথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে, “আমার জন্য কি আনছো?”
হেসে ফেলে দেবশ্রী। আগে অফিস থেকে ফেরার সময়ে রোজ দিন কিছু না কিছু নিয়ে ঘরে ঢুকত, কোনদিন ক্যাডবেরি, কোনদিন খেলনা, কোনদিন গল্পের বই। কিছু না পেলে রাগ করে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকত দেবায়ন। দেবশ্রী হেসে বলে, “তোর জন্য দিল্লী থেকে একটা দামী ঘড়ি কনেছি আর অনুর জন্য জিন্স কিনেছি রে। বাড়ি গেলে দেখাব। রাতে খেয়েছিস? কাজের লোক এসেছিল?”
দেবায়ন, “হ্যাঁ বাবা হ্যাঁ। আমার খাওয়া দাওয়া হয়ে গেছে, কাজের লোক এসে রান্না বান্না করে দিয়ে গেছে।”
দেবশ্রী, “আমি বাড়ি নেই, পড়াশুনা নিশ্চয় তাকে উঠিয়ে রেখেছিস।”
অবশ্য গত সাত আট দিনে বই কি জিনিস একবারের জন্য ছুঁয়ে দেখেনি। মা জানতে পারলে পিঠের চামড়া গুটিয়ে দেবে। দেবায়ন কিঞ্চিত বিরক্ত প্রকাশ করে বলে, “বা রে, এই সবে ছুটি শুরু হল। দাঁড়াও পড়াশুনা হবে ঠিক হবে।”
দেবশ্রী, “সামনে পরীক্ষা, ভালো মার্কস না আনলে হাইয়ার স্টাডিস কি করে হবে?”
দেবায়ন, “সব হবে, ঠিক হবে। ফোন রাখো ত। ভালো থেকো গুড নাইট।”
পরের দিন পুনেতে শেষ দিন, সকাল থেকে ইন্টারভিউ নেওয়া, চূড়ান্ত ফলাফল জানিয়ে মিস্টার হেমন্ত ঠাকুরের কাছে রিপোর্ট পাঠানো। সবার ফাইনাল পদ প্রার্থীদের অফার লেটার দেওয়া, দ্বিতীয় বার সবার কাগজ পত্র খুঁটিয়ে দেখা, এই কাজে সারাদিন ব্যাস্ত হয়ে পরে দেবশ্রী। সকাল থেকে ধৃতিমানের সাথে কথা বলার অবকাশ পায়নি একদম। বিকেলে হোটেলে ফিরে গোছগাছ করে এয়ারপোর্টের দিকে রওনা দিল সবাই। গাড়িতে উঠে একটু শান্তির শ্বাস নেয় দেবশ্রী। ধৃতিমান জিজ্ঞেস করে দিন কেমন কাটল। দেবশ্রী মাথায় হাত দিয়ে বলে যে যত দিন এগোয় তত ওর চিন্তা বেড়ে ওঠে কাজ বেড়ে ওঠে। ব্যাঙ্গালর শেষ করে তাড়াতাড়ি কোলকাতা ফিরে যেতে পারলে বেঁচে যায়। প্লেনে চেপে ব্যাঙ্গালরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু। দেবশ্রী চুপচাপ বসে থাকে, বাইরের রাতের অন্ধকার আকাশে এক নতুন জায়গায় নিয়ে যায় প্লেন। পাশে বসে মনীষা নিজের গল্প করে যায়, অর্ধেক কথা কানে ঢোকে, অর্ধেক কথা ঢোকে না। দেবশ্রী, জানালার বাইরের অন্ধকারে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে চুপচাপ বসে থাকে। প্লেন এক মনে নিজের গোঁ গোঁ শব্দে পুনে থেকে ব্যাঙ্গালোর পৌঁছে যায়।
সেন্ট মার্কস রোডের উপরে খুব বড় একটা হোটেলে ওদের থাকার ব্যাবস্থা। পরের দিনের ইন্টারভিউ ওই হোটেলে হবে। সারাদিন কাজের পরে বড় ক্লান্ত সবাই। নিজের কামরায় ঢুকে সব থেকে আগে স্নান সেরে ফেলে দেবশ্রী, তারপরে ছেলেকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে ব্যাঙ্গালোর পৌঁছে গেছে। মায়ের গলা পেয়ে দেবায়ন খুব খুশি, আর মোটে দুই দিন তারপরে মা বাড়িতে চলে আসবে। পুনে থেকে বের হবার সময়ে বিশেষ খাওয়া হয়নি, প্লেনে যা খেতে দিয়েছিল তা এতক্ষনে হজম হয়ে গেছে। দেবশ্রী ল্যাপটপ খুলে কাজে মন লাগায়, একবার ভাবে কিছু একটা রুম সার্ভিস অর্ডার করলে হয়। ঠিক সেই সময়ে রুমের ফোন বেজে ওঠে। ফোন তুলে ওপর পাশে ধৃতিমানকে পেয়ে একটু শান্তি পায় দেবশ্রী, সারাদিনের ব্যাস্ততার মাঝে ধৃতিমানের সাথে ঠিক করে কথা বলতে পারেনি।
ধৃতিমান জিজ্ঞেস করে, “আমার বড় খিধে পেয়েছে, তোমার কি খবর?”
দেবশ্রী হেসে ফেলে, “আমি ঠিক তাই ভাবছিলাম, রুম সার্ভিস ডেকে নেব ভাবছি।”
ধৃতিমান, “হ্যাঁ হ্যাঁ, তাই ভালো এখন আর নিচে নেমে লাভ নেই। তোমার রুমে ডেকে নাও আমি একটু পরে চলে আসছি।”
দেবশ্রী, “মানে?”
ধৃতিমান, “মানে তুমি তোমার রুমে অর্ডার প্লেস করবে না আমার রুমে আসবে?”
দেবশ্রী, “ওকে বাবা, তুমি আমার রুমে চলে এস। আমি কাগজ পত্র মেলে, ল্যাপটপ খুলে বসে পড়েছি। এখানেই চলে এসে কিছু অর্ডার করে দাও।”
ধৃতিমান, “ওকে, আমি একটু পরেই আসছি।”
কিছুক্ষণের মধ্যে ধৃতিমান দেবশ্রীর কামরায় পৌঁছে যায়। দেবশ্রী তাড়াতাড়ি পরনের মাক্সির উপরে একটা স্টোল জড়িয়ে নেয়। ধৃতিমানের চাহনি দেবশ্রীর নধর সুপুষ্ট দেহপল্লবের উপরে ঘোরাফেরা করে। উত্তপ্ত চাহনি দেবশ্রীকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। ধৃতিমানের লিপ্সা মাখা নজরে দেবশ্রীর হৃদয়ে কামনার আগুন জ্বলে ওঠে। ধৃতিমান ফোন তুলে খাবারের অর্ডার দিয়ে একটা সোফা টেনে বসে, মাঝখানে ছোটো টেবিল উলটো দিকের সোফায় দেবশ্রী।
ধৃতিমান জিজ্ঞেস করে, “তুমি সত্যি ব্যাঙ্গালোর থেকে কোলকাতা ফিরে যাবে?”
দেবশ্রী, “হ্যাঁ ধৃতি, আমি দিল্লী যাচ্ছিনা। মিস্টার হেমন্ত ঠাকুর আর মিস্টার ব্রিজেশের সাথে কথা হয়ে গেছে। আমি শুক্রবার রাতে এখানের কাজ শেষ করে সোজা কোলকাতা ফিরে যাবো।”
ধৃতিমানের চেহারায় একটু কালো ছায়া পরে যায় দেবশ্রীর কথা শুনে, ক্ষুণ্ণ মনে বলে, “আমি ভেবেছিলাম তুমি দিল্লী যাবে, তারপরে ওখান থেকে কোলকাতা। দিল্লী গেলে বড় ভালো হত, একদিন তোমাকে অন্তত নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারতাম। মলি তোমাকে দেখে খুশি হত।”
ম্লান হেসে জবাব দেয় দেবশ্রী, “মনে হয় না এই যাত্রায় সম্ভব, ধৃতি। ছেলের জন্য, বাড়ির জন্য মন বড় টানছে, কোলকাতা আমাকে ফিরতে হবেই।”
ধৃতিমান সামনে ঝুঁকে দেবশ্রীর হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে, “ব্যাঙ্গালরে শুধু কাজ আর কাজ, আমি ভেবেছিলাম আরো কিছুদিন তোমার পাশে থাকতে পারব।”
দেবশ্রীর শরীর কেঁপে ওঠে ধৃতিমানের উষ্ণ হাতের চাপে, চাপা কণ্ঠে বলে, “পৃথিবীটা গোল ধৃতি, একদিন হয়ত আবার দেখা হবে।”
ধৃতিমান দেবশ্রীর হাত না ছেড়ে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরে। দেবশ্রীর ধৃতিমানের চোখের মণির দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। ধৃতিমান দেবশ্রীর হাত ঠোঁটের কাছে এনে আলতো চুমু খেয়ে বলে, “দেবশ্রী, এই কয়দিনে আমি তোমাকে বড় ভালোবেসে ফেলেছি।”
তিরতির করে কেঁপে ওঠে দেবশ্রীর ঠোঁটজোড়া, ধরা গলায় বলে, “কেন স্বপ্ন দেখাচ্ছ ধৃতিমান? রঙ্গিন স্বপ্ন দেখা আমি ভুলে গেছি।”
ধৃতিমান ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে যায় দেবশ্রীর ঠোঁটের কাছে, দেবশ্রীর ঠোঁট জোড়া অল্প ফাঁক হয়ে আসন্ন চুম্বনের প্রতীক্ষা করে। উষ্ণ শ্বাসের প্রলেপ লেগে যায় দেবশ্রীর সারা মুখে। ধৃতিমানের পুরু ঠোঁট দেবশ্রীর পাতলা নরম গোলাপি ঠোঁট আলতো করে ছুঁয়ে যায়। দেবশ্রী চোখ বুজে ধৃতিমানের হাত শক্ত করে ধরে থাকে। ধৃতিমানের ঠোঁট ওর নরম তৃষ্ণার্ত অধরের রস চুম্বনে ব্যাস্ত হয়ে যায়। দুই চাতক চাতকী পরস্পরের অধর চুম্বনে মগ্ন হয়ে পরে। ধৃতিমান দেবশ্রীর গা থেকে স্টোল সরিয়ে কাঁধে হাত রাখে। দেবশ্রী ধৃতিমানের বুকের উপরে হাত মেলে চুম্বন গভীর করে নেয়। বহু যুগ পরে প্রেমের বারিসিঞ্চনে দেবশ্রীর অভুক্ত হৃদয় ভরে ওঠে। ধৃতিমান দেবশ্রীর নধর কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে নেয়। দুই থাই ফাঁক করে ধৃতিমানকে পায়ের মাঝে হাঁটু গেড়ে বসতে সাহায্য করে দেবশ্রী। দেবশ্রীর হাত উঠে আসে ধৃতিমানের মাথার পেছনে, চুলের মধ্যে আঙুল ডুবিয়ে আঁচর কেটে মাথা টেনে চুম্বন আরো গভীর করে তোলে দেবশ্রী। ধৃতিমানের হাত ওর পিঠের ওপরে চলে যায়। সারা পিঠ জুড়ে ধৃতিমানের হাত উপর নীচ আদর করে। উত্তপ হয়ে ওঠে দেবশ্রীর শরীর, শ্বাস ফুলে ওঠে সেই সাথে নরম উদ্ধত স্তন জোড়া ধৃতিমানের বুকের উপরে চেপে বসে। ধৃতিমানের কঠিন বুকের পেষণে দেবশ্রী গলে যায় মোমের পুতুলের মতন। প্রগার চুম্বন ভাঙ্গে রুম সার্ভিসের বেলে।
লাজুক চোখে ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে বলে, “দুষ্টুমি শুরু করে দিলে, এবারে দরজা খুলে খাবার নিয়ে এস।”
ধৃতিমান দেবশ্রীর গালে চুমু খেয়ে বলে, “ওকে ডার্লিং, যেমন তুমি বলবে।”
দেবশ্রী গায়ে স্টোল জড়িয়ে নেয়, বয় খাবার নিয়ে এসে টেবিলের উপরে রেখে চলে যায়। বয় চলে যেতেই ধৃতিমান দেবশ্রীর হাত ধরে দাঁড় করিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে। দেবশ্রী ধৃতিমানের গলা জড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “খিধে মনে হচ্ছে চলে গেছে?”
ধৃতিমান নতুন প্রেমিকের মতন নাকের উপরে নাক ঘষে বলে, “হ্যাঁ তোমার মিষ্টি ঠোঁটের ডেসার্ট চেখে খিধে মরে গেছে।”
দেবশ্রীর শরীর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, নরম ব্রা পরিহিত স্তনের ওপরে ধৃতিমানের চওড়া বুক চেপে বসে সমতল করে দিয়েছে। ধৃতিমানের হাত দেবশ্রীর শিরদাঁড়ার নিচের অংশে চেপে, নিজের দিকে টেনে ধরে। ধৃতিমানের শিথিল উত্তপ্ত লিঙ্গ ওর ট্রাক প্যান্ট ভেদ করে, দেবশ্রীর পাতলা মাক্সি ভেদ করে নরম পেট পুড়িয়ে দেয়।
দেবশ্রী চেপে ধরে নিজেকে ধৃতিমানের বাহুপাশে, চোখের মণির মাঝে গভীর ভাবে তাকিয়ে বলে, “ধৃতি, আমাকে ডিনারের ছলে রুমে ডেকে একি করলে তুমি। আমি অবশ হয়ে যাচ্ছি তোমার ছোঁয়ায়।”
ধৃতিমান, “আমি তোমার রুপে, তোমার গুনের প্রেমে পরে গেছি দেবশ্রী।”
দেবশ্রী, ধৃতিমানের গালে আলতো চাটি মেরে বলে, “আমার কিন্তু বড় খিধে পেয়েছে, ধৃতি।”
ধৃতিমান, “আমাকে খাও না, প্রথম দিনেই আমার মাথা খেলে আর আজকে ত মনে হয় সব খাবে।”
ধৃতিমান দেবশ্রীর কোমর ছেড়ে সোফায় বসে পরে। ধৃতিমানের বাহুপাশ থেকে মুক্তি পেয়ে সোফায় পা মুড়ে বসে যায়। পরনের মাক্সি হাঁটুর কাছে চলে আসে। ধৃতিমানের দৃষ্টি ফর্সা মসৃণ পায়ের গুলির উপরে নিবদ্ধ হয়ে যায়, পাতলা মাক্সি দেবশ্রীর নধর দেহপল্লবের আকর্ষণ বিশেষ ঢাকা রাখতে পারে না। সুগোল পাছার আকার সুস্পষ্ট হয়ে দেখা দেয়, সেই সাথে পরনের প্যান্টির দাগ পাছার উপরে চেপে বসে দেখা দেয়। ধৃতিমানের দিকে থালা এগিয়ে দিয়ে চিকেন আর রুটি দেয় দেবশ্রী। ধৃতিমানের চাহনির ফলে কোমরের নিচের রোমকুপ ফুলে ওঠে।
দেবশ্রী মিহি কণ্ঠে ধৃতিমানকে বলে, “আগে খাওয়া সার নাহলে রুম থেকে বের করে দেব।”
ধৃতিমান লজ্জা পেয়ে বলে, “না না, তোমাকে উঠতে হবে না।”
খেতে খেতে দেবশ্রী মল্লিকার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করে। ধৃতিমান জানায় মল্লিকা পড়াশুনায় বেশ ভালো। ধৃতিমানের ইচ্ছে মেয়েকে ডাক্তারি পড়ানর কিন্তু মল্লিকা বিজ্ঞানের চেয়ে ইংরাজি বেশি ভালোবাসে। দেবশ্রী জানায় যে ছেলে মেয়েদের নিজের পছন্দ মতন ভবিষ্যৎ গড়তে দেওয়া উচিত। দেবায়ন নিজেই চেয়েছিল ফিসিক্স নিয়ে পড়তে। দেবশ্রী ছেয়েছিল ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াতে কিন্তু দেবায়ন কোন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি তাই আর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারেনি। দেবায়নের সেই নিয়ে কোন ক্ষোভ নেই, দেবশ্রী সেইসব কথা মন থেকে মুছে ফেলেছে। নিজেদের ছেলে মেয়েদের নিয়ে কথাবার্তায় খাওয়া শেষ হয়।
খাওয়া শেষে ধৃতিমান ট্রেতে সব কিছু গুছিয়ে দরজার বাইরে করিডোরে রেখে আসে। দেবশ্রী বাথরুমে ঢোকে হাত মুখ ধোয়ার জন্য। আয়নায় নিজেকে দেখে লজ্জিত হয়ে পরে দেবশ্রী। ধৃতিমানের তীব্র কামাবেগের চুম্বনে ঠোঁট গাল লাল হয়ে গেছে, চেহারায় এক অনাবিল আনন্দের আলোক ছটা দেখা দিয়েছে। চোখের তারায় ভালোবাসা আর বাসনা মেশানো এক ঝিলিক। ধৃতিমান দেবশ্রীর পেছনে এসে দাঁড়ায়। আয়নার প্রতিফলনে পরস্পরের চোখের মণি নিবদ্ধ হয়ে যায়। ধৃতিমান দেবশ্রীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। কিঞ্চিত কঠিন লিঙ্গ দেবশ্রীর নরম সুগোল পাছার খাঁজে চেপে বসে যায়। ধৃতিমানের হাত দেবশ্রীর কোমর পেঁচিয়ে নরম তুলতুলে পেটের উপরে চলে আসে। দেবশ্রী সোজা হয়ে পিঠ চেপে ধরে ধৃতিমানের প্রসস্থ বুকের উপরে। ধৃতিমানের হাতের উপরে হাত রেখে আলিঙ্গন পাশ নিজের দেহের উপরে নিবিড় করে নেয় দেবশ্রী। ধৃতিমানের মুখ নেমে আসে দেবশ্রীর কাঁধের উপরে। খালি কাঁধে ঠোঁট ছুঁইয়ে চুমু খায় ধৃতিমান। ঠোঁট ঘষে কাঁধ থেকে ঘাড়ে নিয়ে যায়, দেবশ্রীর নধর দেহপল্লব কামাবেগে কেঁপে ওঠে ধৃতিমানের কঠিন বাহুপাশে।
দেবশ্রীর গালে গাল ঘষে আদর করে বলে ধৃতিমান, “তুমি বড় মিষ্টি, দেবশ্রী। তোমাকে আদর করতে ইচ্ছে করছে।”
বুকের প্রজ্বলিত কামনার আগুন দমন করে দেবশ্রী ধৃতিমানের গালে আলতো চাটি মেরে বলে, “বুড়ো ধারি, অনেক হয়েছে প্রেম দেখানো। আমি ঘুমাতে যাচ্ছি তুমিও ঘুমাতে যাও। আগামী কাল অনেক কাজ আছে।”
ধৃতিমান দেবশ্রীর গালে আলত চুমু খেয়ে কামরা থেকে বেড়িয়ে নিজের কামরায় চলে আসে। সকাল বেলা তাড়াতাড়ি ওঠার পালা, স্নান সেরে শাড়ি পরে কাজের জন্য তৈরি। মনীষা এসে প্রাতরাশের জন্য ডেকে নিয়ে যায়। প্রাতরাশের টেবিলে ধৃতিমানের সাথে দেখা। ধৃতিমান ইচ্ছে করে দেবশ্রীর পাশে এসে বসে। কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে রাতের কথা জিজ্ঞেস করে। ধৃতিমানের দিকে লজ্জায় তাকাতে পারেনা দেবশ্রী। দেবশ্রী নিজেকে সামলে নেয়, দিনের আলকে, সবার সামনে ধৃতিমানের এই আচরনে কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ হয়।
সপ্তদশ পর্ব (#06)
দেবশ্রী ধৃতিমানের আচরন উপেক্ষা করে জানিয়ে দেয় যে প্রথম দিনের ব্যাঙ্গালরের অনেক ক্যান্ডিডেট আছে, সেই মত নিজেকে তৈরি করে যেন ভালো ভাবে ইন্টারভিউ নেয়। ধৃতিমান দেবশ্রীর কণ্ঠস্বর শুনে বুঝতে পারে, রাতের দেবশ্রী আর দিনের এই পাশে বসা দেবশ্রীর মাঝে আকাশ পাতাল তফাত। সেই কাম বিলাসিনী ক্ষুধার্ত দেবশ্রীর জায়গায় পুরোদস্তুর এক কর্মঠ দক্ষ পেশাদারী নারী বসে। ধৃতিমান আর দেবশ্রীকে ঘাঁটাতে সাহস পায় না।
সারাদিন সবাই ব্যাস্ত হয়ে পরে কাজে, একের পর এক ক্যান্ডিডেটদের ইন্টারভিউ নেওয়া, তাদের অফার লেটার, স্যালারি সম্বন্ধে আলোচনা ইতাদ্যি কাজে দিন কেটে যায়। সকালে কাজের মধ্যেই একবার ছেলেকে ফোন করেছিল দেবশ্রী। রোজ কথা হয় ছেলের সাথে তাও যেন মনে হয় কতদিন দেবায়নের গলা শোনেনি। কাজের ব্যাস্ততার মাঝে সারাদিন হাঁপিয়ে উঠেছিল। বিকেলে কাজের শেষে ছেলের কথা হটাত খুব মনে পরে যায়। হোটেলে নিজের কামরায় ঢুকেই আগে দেবায়নকে ফোন করে। ছেলের গলা শুনে ধরে যেন প্রান ফিরে আসে। ছেলের ফোন ছাড়তেই মিস্টার হেমন্ত ঠাকুরের ফোন আসে। দেবশ্রীর কাজের কথা জিজ্ঞেস করা, বাকিদের কথা জিজ্ঞেস করা ইত্যাদি। গরম ভালোই পড়েছে ব্যাঙ্গালোরে, একবার ভাবে স্নান কর নেবে। তারপরে ভাবে একেবারে রাতে শোয়ার আগে স্নান সারবে। ল্যাপটপ খুলে রিপোর্ট তৈরি করতে করতে অনেকটা সময় কেটে যায়। সময়ের খেয়াল হয় যখন রুমের ইন্টারকমে ধৃতিমানের ফোন আসে।
ধৃতিমান, “তুমি কি আমার উপরে রেগে আছো?”
দেবশ্রী হেসে ফেলে, “কই না তো। তোমার হটাত এমন মনে হল কেন?”
ধৃতিমান, “না মানে সারাদিনে বিশেষ কথা বললে না। এমন কি বিকেলের চা নিজের রুমে খেয়েছ মনে হচ্ছে। জানো কটা বাজে?”
দেবশ্রী ঘড়ির দিকে তাকায়, কাজে কাজে রাত নটা বেজে গেছে। ধৃতিমানকে হেসে জিজ্ঞেস করে, “তোমার কি ইচ্ছে, সেটা খোলসা করে একবার বলে দাও? আজকে কিন্তু আমি ডিনার নিচে গিয়ে করব, আর তোমার জালে ফাঁসছি না।”
ধৃতিমান হেসে ফেলে, “না না, আজকে ভাবছি নিচে গিয়েই ডিনার করব সবার সাথে।”
দেবশ্রী আদুরে লাজুক কণ্ঠে বলে, “আমি কিন্তু ডিনারের পরে সোজা নিজের ঘরে চলে আসব।”
ধৃতিমান, “ওকে বাবা, আমি কিছু বলেছি নাকি সেই জন্য। যাই হোক, একটা কথা বলার ছিল তোমাকে।”
দেবশ্রী, “কি বলে ফেল, আর লুকিয়ে কি হবে?”
ধৃতিমান, “না এখন বলব না, ডিনারের পরে বলব।”
দেবশ্রী, “ঠিক আছে বাবা, তাই সই। চলো তাহলে নিচে, কাল আবার আমার কয়েকটা ইন্টারভিইউ নেওয়ার আছে। একটা আসিস্টেন্ট এইচ.আরের নতুন রিক্রুটমেন্ট হবে ব্যাঙ্গালোর অফিসে।”
ধৃতিমান আর দেবশ্রী নিচে রেস্তোরাঁতে এসে দেখে কেউ আসেনি খেতে। অনেকেই হয়ত হোটেলে নেই অথবা নিজেদের রুমে। ডিনারে সেরে ফেলে তাড়াতাড়ি। ধৃতিমানের আগুন ঝরান চাহনির সামনে দেবশ্রী পুনরায় মোমের পুতুলের মতন গলতে শুরু করে। লিফটে ওঠার সময়ে দেবশ্রীর কোমর জড়িয়ে ধরে ধৃতিমান। নববিবাহিতা রমণীর মতন ধৃতিমানের কাঁধে মাথা রাখে দেবশ্রী। মন চঞ্চল হয়ে ওঠে মিলনের জন্য। দেবশ্রী মনেপ্রানে ধৃতিমানের সান্নিধ্য পেতে চায়, দিনের আলকে সেটা সম্ভবপর নয় তাই রাতের আঁধারে সবার অলক্ষ্যে ধৃতিমানের অঙ্কশায়িনী হওয়ার জন্য হৃদয় ব্যাকুল হয়ে ওঠে। একটু খোঁচা মেরে ধৃতিমানকে বলে যে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যেতে চায়। ধৃতিমান কানেকানে বলে, তাড়াতাড়ি ঘুম আসবে না। কানের লতির উপরে ধৃতিমানের উষ্ণ শ্বাসের ফলে গাল লাল হয়ে যায় দেবশ্রীর। লিফট থেকে বেড়িয়ে নিজের কামরার দিকে পা বাড়ায় দেবশ্রী। ধৃতিমান পেছন থেকে দেবশ্রীর হাত টেনে বুকের উপরে টেনে ধরে। দেবশ্রী টাল সামলাতে না পেরে ধৃতিমানের বুকের উপরে পরে যায়। ধৃতিমান দেবশ্রীর কোমর জড়িয়ে ঠোঁটের উপরে ঠোঁট বসিয়ে দেয়। স্থান কাল ভুলে দেবশ্রী ধৃতিমানের প্রেমের পরশে ডুব দেয়। দুই হাতে ধৃতিমানের গলা জড়িয়ে প্রেমঘন চুম্বন আরও নিবিড় করে তোলে।
চুম্বন ছাড়িয়ে দেবশ্রী ধৃতিমানকে বলে, “আমি স্নানে যাবো, তুমি কি আসতে চাও?”
ধৃতিমান দেবশ্রীর গালে চুমু এঁকে বলে, “আমি এখুনি আসছি তারপরে স্নানে ঢুকে যেও।”
দেবশ্রী, “তাড়াতাড়ি এসে যেও, আমি কিন্তু বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে পারব না।”
ধৃতিমান, “না আমার সুন্দরী অপ্সরা। তোমাকে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করাব না। আজকে তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে।”
দেবশ্রী, “তাই নাকি? কি বলার বাকি আছে? আর কাকে কাকে ভালোবেসে করেছ সেই কথা।”
ধৃতিমান, দেবশ্রীর গালে হাত বুলিয়ে আদর করে নিজের কামরার দিকে পা বাড়ায়, “ধুর বাবা, অদ্ভুত মেয়ে তুমি। যাও যাও, আমি জামা প্যান্ট ছেড়ে বারমুডা পরে এখুনি আসছি।”
দেবশ্রী নিজের কামরায় ঢুকে, গান গাইতে শুরু করে দেয়, “চঞ্চল মন আনমনা হয়ে যেই তার ছোঁয়া লাগে, ভোরের আকাশে আলো দেখে পাখী যেন জাগে… চঞ্চল মন আনমনা হয়ে যেই তার ছোঁয়া লাগে”
মনের ভেতরে এক অদ্ভুত ভালোলাগার শীতল মলয় দোলা দেয়। শাড়ির প্যাঁচ খুলতে খুলতে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে। শুধু মাত্র ব্রা আর প্যান্টি পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বারেবারে জরিপ করে। লজ্জায় মুখ লাল হয়ে যায়, আয়নার প্রতিফলনকে মৃদু বকে দেয়, “ধুত দুষ্টু মেয়ে, জাঃ শুধু মাত্র একটা রাতের ভালোবাসা, নিজেকে ভাসিয়ে নে এই কয় ঘন্টার ভালোবাসায়। কানায় কানায় পরিপূর্ণ করে নে তোর শূন্য হৃদয়কে।”
গায়ে একটা তোয়ালে জড়িয়ে, টেবিলের উপর থেকে ল্যাপটপ, কাগজ পত্র গুছাতে শুরু করে।
পরেরদিন বৃহস্পতিবার আর তারপরে শুক্রবার। শুক্রবারে কোলকাতা ফিরে যাওয়া, সেই নিয়ে অবশ্য মিস্টার ঠাকুর আর মিস্টার ত্রিপাঠির সাথে আলোচনা করা হয়ে গেছে। শুক্রবারে বিশেষ কোন ইন্টারভিইউ নেই তাই দুপুরের ফ্লাইট ধরার ইচ্ছে আছে যাতে সন্ধ্যের আগেই কোলকাতা পৌঁছে যেতে পারে। এমন সময়ে দরজায় টোকা মারার আওয়াজ শুনে উচ্ছল প্রানা দেবশ্রী দৌড়ে যায় দরজার দিকে। দরজা খুলেই ধৃতিমানকে দেখে খুশিতে লাফিয়ে ওঠার মতন হয়ে যায়। এই দেবশ্রী কাজের সময়ে এক ভিন্ন রুপী কঠোর মহিলা ছিল। উচ্ছলতা বুকের মাঝে লুকিয়ে দুষ্টু মিষ্টি হেসে ধৃতিমানকে কামরার ভেতরে আসতে বলে। ধৃতিমানের হাতে একটা বড় উপহারের বাক্স। দেবশ্রীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে দেবশ্রীর কপালে ছোটো চুমু খায়। অবাক চোখে ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে উপহারের কথা জিজ্ঞেস করে।
ধৃতিমান বলে, “তোমাকে বিজনেস সুটের চেয়ে, শাড়িতে বেশি সুন্দরী দেখায়। একটা সাউথ সিল্ক কিনলাম বিকেলে, দেখ একবার খুলে পছন্দ হয়েছে কি না। আমি অবশ্য দোকানে বলে এসেছি যে পছন্দ না হলে যার জন্য নিয়ে যাচ্ছি তাকে নিয়ে আগামী কাল ফিরে আসব বদল করার জন্য।”
দেবশ্রী শাড়ির প্যাকেট খুলে বড় খুশি হয়। ঠোঁটে হাসি মুখে লাজ দেখিয়ে বলে, “এই কেনার কি দরকার ছিল, আমি তোমার জন্য কিছু কিনতে পারলাম না যে।”
ধৃতিমান শাড়িটা মেলে ধরে দেবশ্রীর সামনে, সমুদ্রের নীল রঙের শাড়ি আর গাড় নীল রঙের পাড়। দেবশ্রীর গায়ে ঘোমটার মতন জড়িয়ে দিয়ে বুকের কাছে টেনে বলে, “ব্যাস, আমার কাছে থাকলেই হল। এই সবথেকে বড় উপহার পাওয়া হয়ে গেল আমার।”
ধৃতিমানের প্রেমঘন আলিঙ্গন পাশে নিজেকে সঁপে দিয়ে বড় শান্তি মনে হয় দেবশ্রীর। গেঞ্জির উপর দিয়ে, ধৃতিমানের প্রসস্থ বুকের উপরে কান পেতে গাল ঘষে বলে, “তুমি বড্ড ভালো, ধৃতি। বড় মন কেমন করে ওঠে।”
ধৃতিমান, বারমুডার পকেট থেকে একটা ছোটো বাক্স বের করে দেবশ্রীর সামনে ধরে। দেবশ্রী অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে ধৃতিমানের দিকে। ধৃতিমানের চোখে কাম লিপ্সার ছোঁয়ার বদলে অনাবিল এক ভালোবাসার আবেগ ঘন চাহনি। ছোটো লাল বাক্স দেখে দেবশ্রী অনুধাবন করে যে এই বাক্সে একটা দামী অলঙ্কার আছে। ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে চোখের কোল ভিজে ওঠে। তিরতির করে কেঁপে ওঠে দেবশ্রীর ঠোঁট জোড়া। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে দুই পা পেছনে সরে যায়। ধৃতিমান ছোটো লাল রঙের ভেল্ভেটের বাক্স খুলে একটা সোনার আংটি তার উপরে একটা ছোটো হীরে বসানো, দেবশ্রীর দিকে এগিয়ে দেয়। দেবশ্রীর বুক কেঁপে ওঠে, ভাষা হারিয়ে ফেলে, গলা শুকিয়ে যায়। এতটা এগিয়ে যাবে, ধারনা করতে পারেনি দেবশ্রী। ধৃতিমান দেবশ্রীকে ধরে বিছানার উপরে বসিয়ে দেয়। কাঠের পুতুলের মতন দেবশ্রী চুপচাপ বিছানায় বসে পরে।
সামনে মেঝেতে ধৃতিমান হাঁটু গেড়ে বসে, দেবশ্রীর বাম হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলে, “আমাকে বিয়ে করবে, দেবশ্রী?”
কিংকরতব্য বিমুড়ের ন্যায় স্থানুর মতন দেবশ্রী নিথর হয়ে বসে থাকে। ধৃতিমানের বাক্য ওর শরীরের সব শিরা উপশিরা ঝনঝন করে ওঠে, মাথা ফেটে পড়ার যোগাড়। কি বলবে দেবশ্রী, উত্তর খুঁজে পায় না। দুই চোখে অবিরাম শ্রাবন বারিধারা বয়ে চলে। ধৃতিমান দেবশ্রীর গালে হাত দিয়ে চোখের জল মুছিয়ে আবার জিজ্ঞেস করে, “আমি তোমাকে ভালোবাসি, দেবশ্রী।”
দেবশ্রী কান্নায় ভেঙ্গে পরে, দুই হাতে মুখ ঢেকে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে কেঁদে ওঠে, “আমাকে স্বপ্ন দেখাচ্ছ কেন ধৃতিমান? আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি ঠিক, কিন্তু এখন বিয়ে করা একটা খুব বড় সিদ্ধান্ত।”
ধৃতিমান দেবশ্রীর হাত ধরে মুখের উপরে থেকে সরিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কেন, দেবশ্রী, কেন তুমি আমাকে বিয়ে করতে পারো না। আমি কি খারাপ লোক? আমি তোমাকে কোথায় ব্যাথা দিয়েছি, বল আমাকে। আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি, দেবশ্রী।”
দেবশ্রী, “আমাদের এই ভালোবাসা, এই ভালোলাগা ক্ষণজন্মা। তুমি কেন বুঝতে পারো না। আমি আর তুমি দুইজনে ভিন্ন মরুর মানুষ। তুমি উচ্ছল চঞ্চল, আমি ঠিক জানি না আমি কি পছন্দ করি। আমরা দুইজনে প্রাপ্ত বয়স্ক, আমাদের সন্তান আছে। রাতের অন্ধকারে, একান্তে সবার চোখের আড়ালে পরস্পরের কাছে এসেছি, তাই বলে বিয়ে করা? সেটা অসম্ভব, ধৃতিমান।”
ধৃতিমান উঠে দাঁড়ায় দেবশ্রীর সামনে থেকে, “কেন অসম্ভব, কারন বল।”
দেবশ্রী চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়িয়ে তোয়ালের উপরে গাউন জড়িয়ে বলে, “আমার ছেলে অনেক বড় হয়ে গেছে ধৃতিমান। এই সময়ে দ্বিতীয় বার বিয়ের কথা ভাবতে পারি না আমি। আমার সবকিছু আমার ছেলে, ওর পড়াশুনা, ওর ভবিষ্যৎ, ওর সবকিছু আমার উপরে নির্ভর করে। তুমি দিল্লীতে থাক, আমি কোলকাতায় থাকি। ছেলেকে ছেড়ে আমি কখনই দিল্লীতে আসতে পারব না। আমি জানিনা আমাদের সম্পর্ক কি ভাবে ফলপ্রসু হবে। তোমার নিজের একটা মেয়ে আছে, তার কথা একবার ভাব ধৃতিমান। তুমি মেয়ের সাথে কথা না বলে কি করে এই সিদ্ধান্ত নিতে পারলে? তুমি নিজে কখন কার সাথে রাত কাটাও সেটা তোমার মেয়ে দেখতে যায় না। কিন্তু এই বয়সে তার জীবনে তার পিতার বিবাহিত এক নারীর পদক্ষেপ, সেটা তোমার মেয়ে মেনে নাও নিতে পারে। আমাকে একটু একা ছেড়ে দাও, আমাকে ভাবতে সময় দাও ধৃতিমান।”
ধৃতিমান হীরের আংটিটা বাক্সের মধ্যে ঢুকিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুপরে শান্ত কণ্ঠে দেবশ্রীকে বলে, “একটা কথা বলব, কিছু মনে করবে না।”
দেবশ্রী ভুরু কুঁচকে ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে থাকে। ধৃতিমান বলে, “আমি মিস্টার ঠাকুরকে তোমার কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম।”
বুক কেঁপে ওঠে দেবশ্রীর, প্রচন্ড রাগ হয় ধৃতিমানের উপরে, চোয়াল শক্ত করে চোখের জল মুছে কড়া কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, “তুমি কি আমার উপরে নজরদারি করছিলে? জানতে চাইছিলে আমি কি ধরনের মহিলা? তোমার ভালোবাসা তাহলে মেকি?”
ধৃতিমান, “না দেবশ্রী, তুমি আমাকে ভুল বুঝছ। মিস্টার হেমন্ত জানিয়েছিলেন যে তুমি নাকি পরের বছর ডি.জি.এম এইচ.আর পদে দিল্লীতে ট্রান্সফার হয়ে আসছো।”
চোয়াল শক্ত করে ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে বলে, “অফার পেয়েছি, তবে আমি এখন কোন সিদ্ধান্ত জানাই নি। কারন তোমাকে আগেই বলেছি, আমার সবকিছু আমার ছেলে। ওর খুশি, ওর ভালোবাসা, ওর মুখের হাসির চেয়ে দামী, এই পৃথিবীতে কিছু নেই। সুতরাং আমি শুক্রবার কোলকাতা ফিরে ওর সাথে আলাপ আলোচনা করে তবে আমি ওই অফারের সিদ্ধান্ত নেব।”
ধৃতিমান মাথা নাড়িয়ে বলে, “দেবশ্রী, আমার কথা প্লিস একটি বার ভেবে দেখ।”
দেবশ্রী, “আমিও তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি, ধৃতিমান। জানি এই ভালোবাসা ক্ষণজন্মা, তবে বিয়ের ব্যাপারে একটু ভাবতে দাও। ধৃতিমান তুমি দয়া করে এখন চলে যাও, আমি একটু একা থাকতে চাই।”
ধৃতিমান মাথা নিচু করে দেবশ্রীর কামরা থেকে বেড়িয়ে যায়। দেবশ্রী অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে সোফার উপরে। মাথা চিন্তাশুন্য হয়ে যায়, ভাবনা চিন্তা করার শক্তি লোপ পায়। একা একা বিছানায় শুতেই বুকের মাঝে জেগে ওঠে অপার শূন্যতা। দেবশ্রী জানে ওকে ফিরে যেতে হবে নিজের একাকীত্ব জীবনে। হৃদয় হুহু করে কেঁদে ওঠে। পার্স থেকে দেবায়নের ফটো বের করে দেখে, চোখের কোণে এক চিলতে জল চলে আসে দেবশ্রীর। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে দেবায়নের ফটো বুকে ধরে জিজ্ঞেস করে, “আমি তোর মা হলেও আমি এক নারী দেবু। আমি কি করব একবার বলে দে সোনা? আমি হয়ত ধৃতিমান কে ভালোবেসে ফেলেছি।”