26-09-2020, 08:31 PM
এই শহর কোলকাতা থেকে অনেক দুর এক মফঃস্বল শহরে বাস করত তেইশ বর্ষীয় সুভাষ সান্যাল। এক অভিজাত পাড়ার শেষ প্রান্তে এক বস্তি আর তার পাশে রেলের কলোনি। সেই কলোনিতে সুভাষের খুব ছোট তিন কামরার বাড়ি। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয় সন্তান। বাবা রেলের এক সাধারন কর্মচারী। বড়দা বিয়েথা করে আলাদা হয়ে গেছে। দুই বোন, অপর্ণা আর সুজাতা তখন বেশ ছোট। কলেজ শেষ করে কাজের জন্য হন্যে হয়ে এদিকে ওদিকে ঘুরে বেড়ায়। চায়ের দোকানে আড্ডা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা মেরে বেড়ায়। মাঝে মাঝে ওর বন্ধু, অনিলের বাবার ফটোর দোকানে গিয়ে বসে আর ক্যামেরা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করে। সেই সুত্রে অনিলের বাবার কাছ থেকে ফটোগ্রাফি করা শিখে ফেলে। খুব বড় লোক না হলে সেই সময়ে বিয়ে পালা পার্বণে ভিডিও করা হত না তাই স্টিল ফটোগ্রাফির তখন খুব চল ছিল। সবার হাতে তখন ক্যামেরা থাকত না। অনিলের বাবার সাহায্যে এই বিয়ে পালা পার্বণে গিয়ে গিয়ে ফটো তুলত। অনিলের বাবার দোকানে ফটো তুলে অন্তত ওর দিনের খাওয়ার খরচ, চা বিড়ির খরচ চলে আসে।
দেখতে হিন্দি ফ্লিমের হিরোদের মতন মোটেই ছিল না। পকেটে পয়সা না থাকার ফলে প্রেম করতে পারেনি। তবে লুকিয়ে লুকিয়ে একজনকে খুব দেখত। স্বপ্নে আঁকা শ্যাম বরন সুন্দরী কন্যে, অনিতাকে। অনিতার বাড়ি সুভাষের বাড়ি থেকে বেশি দূরে নয়। অনিতার বাবাও সুভাষের বাবার সাথে রেলে চাকরি করতেন। অনিতাকে শুধু মাত্র দুর থেকে দেখে যাওয়া ছাড়া সুভাষের সারা দিনে কোন কাজ ছিল না। মাঝে মাঝে দেখা হলে কথা হত, ব্যাস সেই পর্যন্ত ওর দৌড়। সুভাষের মেজদা, অতিশ তখন একটা বড় সোনার দোকানের কর্মচারী। বড়দা বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পরে মেজদার ওপরেই সংসারের ভার এসে পরে। একদিন ওর বুক ভেঙ্গে অনিতাকে বিয়ে করে ফেলল ওর মেজদা। বাবার অমত একদম ছিল না কারন অনিতার বাবা আর সুভাষের বাবা বন্ধু ছিলেন। যে মেয়েটাকে এতদিন মনের এক কোনায় পরীর মতন এঁকে রেখেছিল, নিজের বাড়িতে নিজের বৌদি হয়ে আসাতে সুভাষের বড় কষ্ট হল। তারপর থেকে সুভাষ এক প্রকার বাড়িতে আসা যাওয়া করা ছেড়ে দিল। সারাদিন এদিকে ওদিকে ঘুরে বেড়িয়ে কাটাত আর অনিলের বাবার দোকানে কাজ করত। অনেক রাতে বাড়িতে ফিরে কোনোরকমে দুটো ভাত মুখে গুঁজে বারান্দায় একটা তক্তপোষে শুয়ে পড়ত।
উঠতি বয়সের ছেলে, মাঝে মাঝে অনিল আর বন্ধুদের সাথে মদ খেত। যেদিন অতিশের সাথে অনিতার বিয়ে হয়, তার দুইদিন পরে মদ খেয়ে বেশ্যা পাড়ায় গিয়ে এক সুন্দরী বেশ্যার সাথে রাত কাটিয়ে নিজের কৌমার্য খুইয়ে আসে সুভাষ। সারা রাত মদের নেশায় সেই সুন্দরী মেয়েটাকে অনিতা ভেবেই যৌন সঙ্গম করে গিয়েছিল। কিছু টাকা অবশ্য অনিল দিয়েছিল আর বাকিটা ওর জমানো টাকা ছিল। অন্ধকার হলেই মাঝেই মাঝেই নেশার ঝোঁকে বেশ্যা পাড়ায় কাটিয়ে আসত সুভাষ।
সেই অভিজাত পাড়ায় এক বিশাল সাদা রঙের বাড়িতে এক কোলিয়ারির ম্যানেজার, বিদ্যুৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বসবাস। দুই ছেলের পরে একমাত্র কন্যে, অতীব সুন্দরী, ঋতুপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাবা মেজাজি মানুষ, এলাকায় বেশ নামডাক। মা, সুনিতা দেবী আর বাবার চোখের মণি, ঋতু। কচি বয়স হলেও অসম্ভব সুন্দরী ছিল ঋতুপর্ণা, বাবা মায়ের আদরে রাজ কুমারী, ঋতু। ভোরের সদ্য ফোটা গোলাপের কুঁড়ির মতন দেখতে। পান পাতার মতন মুখবয়াব, মাথায় মেঘের মতন ঢালাও চুল। আয়ত কাজল কালো দুই চোখে ছিল পাখীর মতন স্বাধীন হয়ে উড়ে যাওয়ার তীব্র বাসনা। গোলাপি কোমল অধরে যখন হাসি ফুটে উঠত তখন কোকিলের কুহু ধ্বনি মনে হত। সব থেকে আকর্ষণীয় ওর নিচের ঠোঁটের নীচে একটা ছোট তিল। বয়সের তুলনায় একটু বাড়ন্ত ছিল ওর দেহের গঠন। বুকের ওপরে উঁচিয়ে থাকা সদ্য গজিয়ে ওঠা তুলতুলে স্তন জোড়া পরনের কামিজ, ফ্রক ফুঁড়ে সামনের দিকে ঠেলে বেড়িয়ে আসতে উদত্য। পাতলা কোমর অনায়াসে হাতের মুঠোর মধ্যে চলে আসবে। আর তার ঠিক নীচে সদ্য ফুলে ওঠা সুগোল নিতম্ব। মত্ত চলনে রূপসী কন্যে সবার হৃদয়ে দোলা লাগিয়ে চলে যেত। রূপকথার রাজকন্যে ঋতুপর্ণার রূপের কাছে ম্লান হয়ে যেত। পড়াশুনায় বিশেষ মাথা না থাকলেও নাচে গানে অতুলনীয় ছিল ঋতুপর্ণা। রবীন্দ্র জয়ন্তী, নজরুল জয়ন্তী, পুজোর সময়ে, কলেজে পাড়ায় যেখানেই নাচের কোন অনুষ্ঠান হত সেখানেই নাচত ঋতুপর্ণা। হাঁটার সময়ে যেন ঋতুপর্ণা হাঁটত না, মনে হত যেন নেচে বেড়াচ্ছে। ওর রূপের ডালি মেলে নাচ দেখার জন্য পাড়ার সবাই জড়ো হয়ে যেত সেই মঞ্চে। উচ্ছল উদ্দাম এক পাহাড়ি স্রোতস্বিনী, অধরা অপ্সরা।
সুভাষের চেয়ে প্রায় বছর আটেকের ছোট ঋতুপর্ণা তাই সুভাষের চোখে ঋতুপর্ণা এক দুষ্টু মিষ্টি ছোট মেয়ে ছাড়া আর কিছুই ছিল না। পাড়ার বকাটে ছেলে গুলো বাকি মেয়েদের দিকে তাকিয়ে ইতর মন্তব্য করলেও কারুর সাহস হত না জাঁদরেল, বিদ্যুৎ বাবুর একমাত্র কন্যে, ঋতুপর্ণাকে কিছু মন্তব্য করে। তবে যখন ঋতুপর্ণা গাড়ি করে কলেজে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হত তখন রাস্তার মুখে অনেকে জটলা পাকিয়ে বসে থাকত এই অসামান্য রূপসীর দেখা পাওয়ার জন্য। বাবার গাড়ি হুস করে ওইসব ছেলেদের পাশ কাটিয়ে বেড়িয়ে যেত। ঋতুপর্ণা মজে থাকত নিজের খেয়ালে, কোনোদিন কোন এক রাজকুমার ওর জীবনে আসবে আর কোন দুর দেশে মেঘের ভেলায় ওকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। কলেজের দিদিমনি যখন অঙ্ক করাতেন তখন ঋতুপর্ণা অঙ্কের খাতায় আঁকিবুঁকি কাটত আর জানালার বাইরে তাকিয়ে আম গাছের বকুলের দিকে একমনে তাকিয়ে হারিয়ে যেত।
সেই সময়ে শীত কালে, পুজোর পরে কলেজে বার্ষিক পরীক্ষা হত। সেদিন অঙ্কের পরীক্ষা, আর সেইদিন একটা রাজনৈতিক মিছিলের জন্য রাস্তায় গাড়ির যানজট। এই রাজ্যে ব্যাঙ্গে পেচ্ছাপ করলেও মিছিল ডাকা হয়, যানজট হয়ে সাধারন মানুষের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।
সুভাষ একটা বিড়ি টানতে টানতে সাইকেল নিয়ে দোকানে যাচ্ছিল। বিশাল জ্যাম দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পরে। সাইকেল নিয়ে এই জ্যাম পার হয়ে দোকানে পৌঁছাতে বিশেষ বেগ পেতে হবে না। তবে খানিকদুরে একজনকে দেখে সুভাষ দাঁড়িয়ে পড়েছিল সেদিন। যদি সেদিন ওইভাবে থমকে দাঁড়িয়ে না পড়ত তাহলে হয়ত বর্তমানের এই গল্প শুরু হত না। সুভাষ একভাবে বিড়ি টানতে টানতে ঋতুপর্ণার দিকে তাকিয়ে থাকে। গাড়ির দরজা দিয়ে বাইরে উঁকি মেরে তাকিয়ে আছে ঋতুপর্ণা। আয়ত কাজল কালো চোখ জোড়া জলে ভরে এসেছে।
ধবধবে সাদা এম্বাসেডর গাড়ির দরজা খুলে চোখে মুখে প্রবল উৎকণ্ঠার ছায়া নিয়ে সামনের বিশাল জ্যামের দিকে তাকিয়ে প্রায় কেঁদে ফেলে ঋতুপর্ণা। পড়াশুনায় ভালো না হলেও পরীক্ষা দেওয়া ওর চাই না হলে বাবা বকবে। কিন্তু এই বিশাল যানজট পেরিয়ে সময় মতন কলেজে পৌঁছানো বড় দায়। বাবা সকালেই ওকে অনেকবার করে বলেছিলেন, একটু তাড়াতাড়ি বের হয়ে যাস আজকে কিন্তু একটা মিছিল বের হবে। কিন্তু সারা সকাল নেচে বেড়িয়েছিল ঋতুপর্ণা। গাড়ি আছে’ত কতক্ষণ লাগবে কলেজে পৌঁছাতে। বড়দা একটু বকা ঝকা করতেই ওর মা এসে বাধা দেয়। আরে বাবা, একটা পরীক্ষা না দিলে কিছু হবে না। বাবা তড়বড়িয়ে ওঠেন, হ্যাঁ হ্যাঁ তোমার আস্কারা পেয়েই মেয়েটা গোল্লায় গেল। সারাক্ষণ শুধু নাচ আর নাচ। সেই সাথে বড়দাও গলা মেলায়। বাবা, বড়দা ছোড়দা সবাই পড়াশুনায় খুব ভালো। সবাই চায় ঋতুপর্ণা অন্তত ভালো ভাবে পড়াশুনা করুক। কিন্তু অঙ্ক আর বিজ্ঞান যে ওর মাথার অনেকদুর থেকে পালিয়ে চলে যেত সেটা কে বুঝায়।
সুভাষ বিড়িটা মাটিতে ফেলে সাইকেল নিয়ে ঋতুপর্ণার গাড়ির সামনে এগিয়ে আসে।
সুভাষ স্মিত হেসে জিজ্ঞেস করে, “কি রে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছিস কেন?”
ঋতুপর্ণা প্রথমে থতমত খেয়ে যায়। বিশেষ চেনাজানা নেই, বিশেষ পরিচয় নেই তবে চিনতে পারে। পাড়ার শেষ প্রান্তে বাড়ি, বড়দার বিয়েতে ফটো তুলতে এসেছিল। এই পর্যন্ত ওদের পরিচয়।
বাবার বকুনির ভয়ে ঋতুপর্ণা ভুলে যায় ওদের মাঝের পরিচয়। ওকে দেখে প্রায় কেঁদে ফেলে, “আজকে অঙ্ক পরীক্ষা আর দেখো এই জ্যাম। কি করে যাই বলত?”
সুভাষ সাইকেল দেখিয়ে ওকে বলে, “চল সাইকেলে তোকে ছেড়ে দেই।”
ঋতুপর্ণার চোখ কপালে উঠে যায়, “সাইকেলে? পরে যাবো ত।” কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে, “বাবা আজকে আমার পিঠের চামড়া তুলে দেবে।”
সুভাষ হেসে ফেলে, “কেন রে?”
ঋতুপর্ণা কোনরকমে চোখের কোল মুছে বলে, “বাবা অনেক করে বলেছিলেন যে জ্যাম হবে আমি শুনিনি তাই।”
সুভাষ ওকে বলে, “আচ্ছা, এখন আর কাঁদিস নে। চল চল সাইকেলে উঠে পর।”
ঋতুপর্ণা কোনোদিন সাইকেলে বসেনি। উভয় সঙ্কটে পরে যায়। গাড়ির চালককে বুঝিয়ে বলে যে বাড়িতে যেন এই কথা কারুর কানে না যায়। বাবাকে যেন বলা হয় যে গাড়িতে করেই ঋতুপর্ণা কলেজে গেছে। না হলে ওর বাবা আর ওর বড়দা ওর পিঠের চামড়া তুলে ঢোল বানিয়ে দেবে। ঋতুপর্ণা কোনোরকমে সাইকেলের সামনের রডে একপাশে পা ঝুলিয়ে বসে পরে। সামনে বসতেই সুভাষের বুকের কাছে ঋতুপর্ণার মাথা এসে লাগে। মেয়েটার শরীর থেকে অসম্ভব এক মিষ্টি মাদক গন্ধ সুভাষকে মাতাল করে তোলে। সাইকেল চালিয়ে গাড়ি মাঝখান থেকে পথ করে ওরা এগিয়ে যায় কলেজের দিকে। ঋতুপর্ণার দুইপাশে হাত রেখে সাইকেলের হ্যান্ডেল ধরার ফলে। কচি ফুলের কুঁড়িটাকে চেপে ধরতে ইচ্ছে করে। ইসস, নাক কুঁচকায় সুভাষ, ওর মুখ থেকে ভুরভুর করে বিড়ির গন্ধ আসছে। সাইকেল চালানোর সময়ে সামনের দিকে ঝুঁকে পরে, ওর বুক ঠেকে যায় ঋতুপর্ণার পিঠের সাথে। সাদা সালোয়ার কামিজে ঋতুপর্ণা যেন নিষ্পাপ এক সুন্দরী অপ্সরা, ঠিক যে শিশিরে ভেজা সাদা পদ্ম ফুল।
কলেজের দিকে যেতে যেতে হটাত নাক কুঁচকে ঋতুপর্ণা ওকে বলে, “ইসস এত বিড়ি খাও যে বিকট গন্ধ বের হচ্ছে।”
লজ্জায় পরে যায় সুভাষ, “আচ্ছা বাবা এই মাথা পেছনে করে নিলাম।”
ঋতুপর্ণা খিলখিল করে হেসে বলে, “না থাক, তাহলে আর সাইকেল চালাতে পারবে না।”
সুভাষ সাইকেল চালাতে চালাতে ঋতুপর্ণাকে জিজ্ঞেস করে, “কেমন প্রিপারেশান হয়েছে?”
ঋতুপর্ণা ম্লান হেসে উত্তর দেয়, “ধুস, অঙ্ক একদম মাথায় ঢোকে না।”
সুভাষ ভেবেছিল রূপসী ঋতুপর্ণা পড়াশুনা বেশ ভালো হবে তাই অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “কেন রে, কোথায় অসুবিধে?”
ঋতুপর্ণা হেসে বলে, “আরে বাবা, একটা ট্রেন এত মিটার লম্বা, এত গতিতে একদিকে ছুটে চলেছে।” খিলখিল করে ব্যাঙ্গাত্মক হাসি দিয়ে বলে, “যাক না দৌড়ে আমার বাবার কি। তাও দেখো ওদের, একটা লাইট পোস্ট অতিক্রম করতে কত সময় লাগবে সেটা নিয়ে অঙ্ক। ভারতীয় রেল কখন ঠিক সময়ে স্টেসানে পৌঁছাতে পারল না তার আবার সময় অঙ্ক কষে জানাও।” হাসতে হাসতে সারা শরীর নড়ে ওঠে ঋতুপর্ণার।
সেই মিষ্টি মধুর কচি মেয়েটার হাসি শুনে সুভাষের বুকের রক্ত ছলকে ওঠে। নরম গালে মিষ্টি করে একটা চুমু খেতে বড় ইচ্ছে করে। বড় তরলমতি মিষ্টি হাসি, বড় নিষ্পাপ আপন ভোলা মন। সুভাষের মাথায় কোনোদিন অঙ্ক বিশেষ ঢুকত না তাই হেসে বলে, “ঠিক বলেছিস, যতসব আজগুবি অঙ্ক। তার চেয়ে ভূগোল ভালো।”
ঋতুপর্ণা হেসে বলে, “আচ্ছা তাই নাকি? বলত পৃথিবীর সব থেকে বড় মরুভুমি কোনটা?”
মাথা ঝাঁকায় সুভাষ, কবে যেন পড়েছে, কিছুতেই মনে করতে পারে না। সাইকেল চালাতে চালাতে একটু ভেবে বলে, “হবে হয়ত কালাহারি নয় থর। কে জানে বাবা আমি অন্ডাল ছেড়ে কোথাও কোনোদিন যাইনি।”
হেসে ফেলে ঋতুপর্ণা, “তোমার ভূগোল আমার অঙ্কের মতন গোল।”
সুভাষ প্রশ্ন করে, “আচ্ছা তুই বলে দে।”
ঋতুপর্ণা উত্তর দেয়, “সাহারা মরুভুমি, আফ্রিকার উত্তরে। বুঝলে চাদু।”
ওদের মাঝে যে এর আগে কোনোদিন বিশেষ কোন পরিচয় ছিল না সেটা কেউ বলতে পারবে না। প্রান খোলা মেয়ে ছিল ঋতুপর্ণা, তাই অতি সহজে সুভাষের মতন একজনের সাথে গল্পে মেতে উঠল। গল্পে গল্পে কলেজ চলে আসে। অনেকেই যান জটের জন্য পরীক্ষা দিতে আসতে পারেনি, তাই পরীক্ষা একটু দেরিতে শুরু হয়। কিন্তু সময়ের আগেই সুভাষ ওকে কলেজে পৌঁছে দিয়েছে।
সাইকেল থেকে নেমেই কলেজের সামনে দাঁড়ানো একটা আলুকাবলি ওয়ালাকে দেখিয়ে ঋতুপর্ণা চেঁচিয়ে ওঠে, “এই আলু কাবলি খাবে?”
সুভাষ হেসে মাথা নাড়ায়, “তোর পরীক্ষা দিতে হবে না? যা মন দিয়ে পরীক্ষা দিস।”
ঋতুপর্ণা ঠোঁট উল্টে ভেংচি কেটে বলে, “ধ্যাত তুমি না।” তারপরে নাক কুঁচকে দুষ্টু মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে, “টেনে টুনে চল্লিশ আনলেই হবে। বাকিটা মা ঠিক আমাকে বাঁচিয়ে নেবে।”
ঋতুপর্ণা কোমর দুলিয়ে, সারা অঙ্গে মাদকতাময় এক হিল্লোল তুলে মেয়েদের মাঝে হারিয়ে যায়। সবাই সাদা সালোয়ার কামিজ পরা তার মধ্যে সুভাষ ঠিক খুঁজে ঋতুপর্ণার ওপরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাখে। কলেজের দরজার ভেতরে ঢোকার মুখে হটাত থমকে দাঁড়িয়ে পরে ঋতুপর্ণা, মুচকি মিষ্টি হেসে হাত নাড়িয়ে ভেতরে চলে যায়। সুভাষ এতটা আশা করেনি এই রূপসীর কাছ থেকে। হটাত কি করে কি হয়ে গেল। সম্মোহিতের মতন সাইকেল নিয়ে কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। কখন মেয়েটার ছুটি হবে, কখন আবার ওই মিষ্টি চাঁদপানা মুখমণ্ডলের দর্শন হবে।
ঋতুপর্ণা এক প্রকার মুখ গোমড়া করেই ক্লাসে ঢুকে পরে। আলু কাবলি খাবার বড্ড ইচ্ছে হচ্ছিল। বাবা মায়ের আদরের মেয়ে, দুই দাদার আদরের বোন কিন্তু জীবনে সেই স্বাধীনতা ছিল না। যা চাইত তাই পেয়ে যেত শুধু স্বাধীনতা ছাড়া। অবশ্য ঋতুপর্ণা তখন সবে মাত্র ক্লাস নাইন, তাই বাইরে বের হলে সব সময়ে মায়ের সাথেই বের হত। একা একা কোথাও যাওয়া অথবা বাইরের খাবার খাওয়া বাড়ির কারুর একদম পছন্দ নয়। কলেজের ছুটির পরে সব বান্ধবীরা আলু কাবলি, ফুচকা খায় কিন্তু ওর জন্য গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। গাড়ির ড্রাইভার, রঞ্জন কাকু ছুটি হলেও, মামনি চলে এসো, বলে ওকে গাড়িতে করে হুস করে বেড়িয়ে যায়। অঙ্ক করতে বসে বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁতের মাঝে পেন নিয়ে চিবিয়ে যায়। কালো সাদা অক্ষর গুলো হিব্রু ল্যাটিন হয়ে চোখের সামনে ঘুরে বেড়ায়। হটাত কেমন আনমনা হয়ে যায় ঋতুপর্ণা, তারপরে আর পেন উঠাতে হয়নি। অঙ্ক পরীক্ষা সেইবারে আগের বারের চেয়ে ভালোই হয়।
অনিল ওইদিকে খুঁজতে খুঁজতে কলেজে চলে আসে। কলেজের সামনের একটা চায়ের দোকানে সুভাষ বসে বিড়ি টানছিল আর ঋতুপর্ণার অপেক্ষা করছিল। জানে পরীক্ষার পরে আর ঋতুপর্ণা ওর সাইকেলে বসে বাড়ি ফিরবে না কারন দুপুরের আগেই যানজট ছেড়ে যাবে আর ওকে নিতে ওর বাড়ি থেকে গাড়ি চলে আসবে।
অনিল ওকে দেখে পিঠের ওপরে এক চাপড় মেরে জিজ্ঞেস করে, “এই শালা এই মেয়েদের কলেজের সামনে বসে কি বাল ছিঁড়ছিস।”
সুভাষ থতমত খেয়ে যায়, “না মানে এমনি।”
অনিল চোখ টিপে মুচকি হেসে বলে, “তুই নাকি বিবির মেয়েকে কলেজে নিয়ে এসেছিস?” বিদ্যুৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে এলাকার সবাই “বি.বি” বলে ডাকে।
সুভাষ অবাক হয়ে যায়, “তোকে কে বলল?”
অনিল ওর পাশে বসে হেসে বলে, “তুই হারামি কি ভেবেছিস কেউ দেখেনি? নরেন, বিমল, পটলা সবাই তোকে দেখেছে বিবির মেয়েকে তুই সাইকেলে করে কলেজে নিয়ে এসেছিস। তাই বলে এইখানে হত্যে দিয়ে পরে থাকবি? ওরে বোকাচোদা ওই মেয়ে ওই রূপের ডালি নিয়ে কি আর তোর কোলে বসবে। ওর জন্য আকাশ থেকে সাদা ঘোড়ায় চেপে রাজকুমার আসবে। চল চল, বিমলের বড়দির ছেলের অন্নপ্রাশন। বাবা ডেকে পাঠিয়েছে, ফটো তুলতে যেতে হবে।”
সুভাষ মুখ কাঁচুমাচু করে অনুনয় করে, “আরে অন্নপ্রাশন সেই বিকেলে এখন প্লিস তুই সামলে নে।”
অনিল চোখ কপালে তুলে বলে, “বোকাচোদা ছেলে, অন্নপ্রাশন কোনোদিন বিকেলে হয়না, দুপুরে হয়। বালের চোদা, এইখানে গাঁড় মারলে পেটে কিছু আসবে না। বাবা অলরেডি বায়না নিয়ে ফেলেছে, যদি তুই না যাস তাহলে বাবা মুখ দেখাতে পারবে না।”
অগত্যা সুভাষ চায়ের ভাঁড় ছুঁড়ে ফেলে উঠে দাঁড়ায়। প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনিলের সাথে দোকানে যায়। ক্যামেরা কাঁধে ফেলে অনিলের সাথে বিমলের বড়দির বাড়িতে পৌঁছায়। সারাদিন ফটো তোলে কিন্তু কানে ভেসে আসে ঋতুপর্ণার মিষ্টি কণ্ঠস্বর, “ধুত তুমি না।” মাঝে মাঝেই হারিয়ে যায়। “ধুত” শব্দটা অনেকবার আগেও শুনেছে তবে ঋতুপর্ণার মিষ্টি মধুর কণ্ঠ স্বর যেন ওই ছোট শব্দটির ধ্বনির সৌন্দর্য বেশি করে বাড়িয়ে দিয়েছে। ইসস, হাতে হয়ত একটু সময় ছিল। ওর সাথে দাঁড়িয়ে আলু কাবলি খেলে হয়ত আরো একটু বেশি সময়ের জন্য ঋতুপর্ণার পাশে থাকতে পারত। না না, বড় কচি মেয়ে ওর চেয়ে অনেক ছোট, কত ছোট হবে, হ্যাঁ আট বছরের মতন ছোট। এত কচি একটা মেয়ের প্রেমে পরবে সেটা সুভাষের পক্ষে আশাতীত। ফটো তুলতে তুলতে অনেক সময় কেটে যায়। সন্ধ্যে নেমে আসে শহরের বুকে। ফটো তোলার পরে ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে সুভাষ বাড়ির পথ ধরে।
ওদের হয়ত আর কোনোদিন সামনাসামনি দেখা হবে না। ঋতুপর্ণা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে সোজা গাড়ি ধরে কলেজে চলে যাবে। সুভাষ সাইকেলে করে দাঁড়িয়ে থাকবে পথের পাশে। সারা রাত ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারল সুভাষ। বৌদি আর পূর্বতন সুপ্ত প্রেয়সী অনিতা ওকে ভাত দিয়ে যায়। চুপচাপ ডাল দিয়ে ভাত মেখে গলা ধক্করন করে ভাত গিলে কাঁথা মুড়ি দিয়ে বারান্দায় শুয়ে পরে। অনেকটা চিরাচরিত বাংলা সিমেনার মতন মনে হচ্ছে। আপন মনেই হেসে ফেলে সুভাষ।
পরেরদিন ঠিক কলেজের সময়ে সুভাষ স্নান করে সাইকেল নিয়ে রাস্তার মোড়ে ঋতুপর্ণার গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। সেইদিন কোন যান জট নেই, তাও এক অলীক কল্পনা করে অপেক্ষা করে থাকে। যদি একবার এই কচি নিষ্পাপ সুন্দরীর দর্শন পাওয়া যায়। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরেও সেই অচেনা অথচ খুব চেনা পরিচিত গাড়ির দেখা পাওয়া যায়না। সুভাষের মনে ভয় ঢুকে যায়। বিদ্যুৎ বাবুর কানে কি ওদের এই পরিচয় হওয়ার ঘটনা পৌঁছে গেছে। আর তাই হয়ত ঋতুপর্ণাকে আর কলেজে আসতে দেয়নি। অবশ্য পরে জানতে পেরেছিল যে সেদিন ঋতুপর্ণার কোন পরীক্ষা ছিল না।
দেখতে হিন্দি ফ্লিমের হিরোদের মতন মোটেই ছিল না। পকেটে পয়সা না থাকার ফলে প্রেম করতে পারেনি। তবে লুকিয়ে লুকিয়ে একজনকে খুব দেখত। স্বপ্নে আঁকা শ্যাম বরন সুন্দরী কন্যে, অনিতাকে। অনিতার বাড়ি সুভাষের বাড়ি থেকে বেশি দূরে নয়। অনিতার বাবাও সুভাষের বাবার সাথে রেলে চাকরি করতেন। অনিতাকে শুধু মাত্র দুর থেকে দেখে যাওয়া ছাড়া সুভাষের সারা দিনে কোন কাজ ছিল না। মাঝে মাঝে দেখা হলে কথা হত, ব্যাস সেই পর্যন্ত ওর দৌড়। সুভাষের মেজদা, অতিশ তখন একটা বড় সোনার দোকানের কর্মচারী। বড়দা বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পরে মেজদার ওপরেই সংসারের ভার এসে পরে। একদিন ওর বুক ভেঙ্গে অনিতাকে বিয়ে করে ফেলল ওর মেজদা। বাবার অমত একদম ছিল না কারন অনিতার বাবা আর সুভাষের বাবা বন্ধু ছিলেন। যে মেয়েটাকে এতদিন মনের এক কোনায় পরীর মতন এঁকে রেখেছিল, নিজের বাড়িতে নিজের বৌদি হয়ে আসাতে সুভাষের বড় কষ্ট হল। তারপর থেকে সুভাষ এক প্রকার বাড়িতে আসা যাওয়া করা ছেড়ে দিল। সারাদিন এদিকে ওদিকে ঘুরে বেড়িয়ে কাটাত আর অনিলের বাবার দোকানে কাজ করত। অনেক রাতে বাড়িতে ফিরে কোনোরকমে দুটো ভাত মুখে গুঁজে বারান্দায় একটা তক্তপোষে শুয়ে পড়ত।
উঠতি বয়সের ছেলে, মাঝে মাঝে অনিল আর বন্ধুদের সাথে মদ খেত। যেদিন অতিশের সাথে অনিতার বিয়ে হয়, তার দুইদিন পরে মদ খেয়ে বেশ্যা পাড়ায় গিয়ে এক সুন্দরী বেশ্যার সাথে রাত কাটিয়ে নিজের কৌমার্য খুইয়ে আসে সুভাষ। সারা রাত মদের নেশায় সেই সুন্দরী মেয়েটাকে অনিতা ভেবেই যৌন সঙ্গম করে গিয়েছিল। কিছু টাকা অবশ্য অনিল দিয়েছিল আর বাকিটা ওর জমানো টাকা ছিল। অন্ধকার হলেই মাঝেই মাঝেই নেশার ঝোঁকে বেশ্যা পাড়ায় কাটিয়ে আসত সুভাষ।
সেই অভিজাত পাড়ায় এক বিশাল সাদা রঙের বাড়িতে এক কোলিয়ারির ম্যানেজার, বিদ্যুৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বসবাস। দুই ছেলের পরে একমাত্র কন্যে, অতীব সুন্দরী, ঋতুপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাবা মেজাজি মানুষ, এলাকায় বেশ নামডাক। মা, সুনিতা দেবী আর বাবার চোখের মণি, ঋতু। কচি বয়স হলেও অসম্ভব সুন্দরী ছিল ঋতুপর্ণা, বাবা মায়ের আদরে রাজ কুমারী, ঋতু। ভোরের সদ্য ফোটা গোলাপের কুঁড়ির মতন দেখতে। পান পাতার মতন মুখবয়াব, মাথায় মেঘের মতন ঢালাও চুল। আয়ত কাজল কালো দুই চোখে ছিল পাখীর মতন স্বাধীন হয়ে উড়ে যাওয়ার তীব্র বাসনা। গোলাপি কোমল অধরে যখন হাসি ফুটে উঠত তখন কোকিলের কুহু ধ্বনি মনে হত। সব থেকে আকর্ষণীয় ওর নিচের ঠোঁটের নীচে একটা ছোট তিল। বয়সের তুলনায় একটু বাড়ন্ত ছিল ওর দেহের গঠন। বুকের ওপরে উঁচিয়ে থাকা সদ্য গজিয়ে ওঠা তুলতুলে স্তন জোড়া পরনের কামিজ, ফ্রক ফুঁড়ে সামনের দিকে ঠেলে বেড়িয়ে আসতে উদত্য। পাতলা কোমর অনায়াসে হাতের মুঠোর মধ্যে চলে আসবে। আর তার ঠিক নীচে সদ্য ফুলে ওঠা সুগোল নিতম্ব। মত্ত চলনে রূপসী কন্যে সবার হৃদয়ে দোলা লাগিয়ে চলে যেত। রূপকথার রাজকন্যে ঋতুপর্ণার রূপের কাছে ম্লান হয়ে যেত। পড়াশুনায় বিশেষ মাথা না থাকলেও নাচে গানে অতুলনীয় ছিল ঋতুপর্ণা। রবীন্দ্র জয়ন্তী, নজরুল জয়ন্তী, পুজোর সময়ে, কলেজে পাড়ায় যেখানেই নাচের কোন অনুষ্ঠান হত সেখানেই নাচত ঋতুপর্ণা। হাঁটার সময়ে যেন ঋতুপর্ণা হাঁটত না, মনে হত যেন নেচে বেড়াচ্ছে। ওর রূপের ডালি মেলে নাচ দেখার জন্য পাড়ার সবাই জড়ো হয়ে যেত সেই মঞ্চে। উচ্ছল উদ্দাম এক পাহাড়ি স্রোতস্বিনী, অধরা অপ্সরা।
সুভাষের চেয়ে প্রায় বছর আটেকের ছোট ঋতুপর্ণা তাই সুভাষের চোখে ঋতুপর্ণা এক দুষ্টু মিষ্টি ছোট মেয়ে ছাড়া আর কিছুই ছিল না। পাড়ার বকাটে ছেলে গুলো বাকি মেয়েদের দিকে তাকিয়ে ইতর মন্তব্য করলেও কারুর সাহস হত না জাঁদরেল, বিদ্যুৎ বাবুর একমাত্র কন্যে, ঋতুপর্ণাকে কিছু মন্তব্য করে। তবে যখন ঋতুপর্ণা গাড়ি করে কলেজে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হত তখন রাস্তার মুখে অনেকে জটলা পাকিয়ে বসে থাকত এই অসামান্য রূপসীর দেখা পাওয়ার জন্য। বাবার গাড়ি হুস করে ওইসব ছেলেদের পাশ কাটিয়ে বেড়িয়ে যেত। ঋতুপর্ণা মজে থাকত নিজের খেয়ালে, কোনোদিন কোন এক রাজকুমার ওর জীবনে আসবে আর কোন দুর দেশে মেঘের ভেলায় ওকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। কলেজের দিদিমনি যখন অঙ্ক করাতেন তখন ঋতুপর্ণা অঙ্কের খাতায় আঁকিবুঁকি কাটত আর জানালার বাইরে তাকিয়ে আম গাছের বকুলের দিকে একমনে তাকিয়ে হারিয়ে যেত।
সেই সময়ে শীত কালে, পুজোর পরে কলেজে বার্ষিক পরীক্ষা হত। সেদিন অঙ্কের পরীক্ষা, আর সেইদিন একটা রাজনৈতিক মিছিলের জন্য রাস্তায় গাড়ির যানজট। এই রাজ্যে ব্যাঙ্গে পেচ্ছাপ করলেও মিছিল ডাকা হয়, যানজট হয়ে সাধারন মানুষের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়।
সুভাষ একটা বিড়ি টানতে টানতে সাইকেল নিয়ে দোকানে যাচ্ছিল। বিশাল জ্যাম দেখে থমকে দাঁড়িয়ে পরে। সাইকেল নিয়ে এই জ্যাম পার হয়ে দোকানে পৌঁছাতে বিশেষ বেগ পেতে হবে না। তবে খানিকদুরে একজনকে দেখে সুভাষ দাঁড়িয়ে পড়েছিল সেদিন। যদি সেদিন ওইভাবে থমকে দাঁড়িয়ে না পড়ত তাহলে হয়ত বর্তমানের এই গল্প শুরু হত না। সুভাষ একভাবে বিড়ি টানতে টানতে ঋতুপর্ণার দিকে তাকিয়ে থাকে। গাড়ির দরজা দিয়ে বাইরে উঁকি মেরে তাকিয়ে আছে ঋতুপর্ণা। আয়ত কাজল কালো চোখ জোড়া জলে ভরে এসেছে।
ধবধবে সাদা এম্বাসেডর গাড়ির দরজা খুলে চোখে মুখে প্রবল উৎকণ্ঠার ছায়া নিয়ে সামনের বিশাল জ্যামের দিকে তাকিয়ে প্রায় কেঁদে ফেলে ঋতুপর্ণা। পড়াশুনায় ভালো না হলেও পরীক্ষা দেওয়া ওর চাই না হলে বাবা বকবে। কিন্তু এই বিশাল যানজট পেরিয়ে সময় মতন কলেজে পৌঁছানো বড় দায়। বাবা সকালেই ওকে অনেকবার করে বলেছিলেন, একটু তাড়াতাড়ি বের হয়ে যাস আজকে কিন্তু একটা মিছিল বের হবে। কিন্তু সারা সকাল নেচে বেড়িয়েছিল ঋতুপর্ণা। গাড়ি আছে’ত কতক্ষণ লাগবে কলেজে পৌঁছাতে। বড়দা একটু বকা ঝকা করতেই ওর মা এসে বাধা দেয়। আরে বাবা, একটা পরীক্ষা না দিলে কিছু হবে না। বাবা তড়বড়িয়ে ওঠেন, হ্যাঁ হ্যাঁ তোমার আস্কারা পেয়েই মেয়েটা গোল্লায় গেল। সারাক্ষণ শুধু নাচ আর নাচ। সেই সাথে বড়দাও গলা মেলায়। বাবা, বড়দা ছোড়দা সবাই পড়াশুনায় খুব ভালো। সবাই চায় ঋতুপর্ণা অন্তত ভালো ভাবে পড়াশুনা করুক। কিন্তু অঙ্ক আর বিজ্ঞান যে ওর মাথার অনেকদুর থেকে পালিয়ে চলে যেত সেটা কে বুঝায়।
সুভাষ বিড়িটা মাটিতে ফেলে সাইকেল নিয়ে ঋতুপর্ণার গাড়ির সামনে এগিয়ে আসে।
সুভাষ স্মিত হেসে জিজ্ঞেস করে, “কি রে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছিস কেন?”
ঋতুপর্ণা প্রথমে থতমত খেয়ে যায়। বিশেষ চেনাজানা নেই, বিশেষ পরিচয় নেই তবে চিনতে পারে। পাড়ার শেষ প্রান্তে বাড়ি, বড়দার বিয়েতে ফটো তুলতে এসেছিল। এই পর্যন্ত ওদের পরিচয়।
বাবার বকুনির ভয়ে ঋতুপর্ণা ভুলে যায় ওদের মাঝের পরিচয়। ওকে দেখে প্রায় কেঁদে ফেলে, “আজকে অঙ্ক পরীক্ষা আর দেখো এই জ্যাম। কি করে যাই বলত?”
সুভাষ সাইকেল দেখিয়ে ওকে বলে, “চল সাইকেলে তোকে ছেড়ে দেই।”
ঋতুপর্ণার চোখ কপালে উঠে যায়, “সাইকেলে? পরে যাবো ত।” কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে, “বাবা আজকে আমার পিঠের চামড়া তুলে দেবে।”
সুভাষ হেসে ফেলে, “কেন রে?”
ঋতুপর্ণা কোনরকমে চোখের কোল মুছে বলে, “বাবা অনেক করে বলেছিলেন যে জ্যাম হবে আমি শুনিনি তাই।”
সুভাষ ওকে বলে, “আচ্ছা, এখন আর কাঁদিস নে। চল চল সাইকেলে উঠে পর।”
ঋতুপর্ণা কোনোদিন সাইকেলে বসেনি। উভয় সঙ্কটে পরে যায়। গাড়ির চালককে বুঝিয়ে বলে যে বাড়িতে যেন এই কথা কারুর কানে না যায়। বাবাকে যেন বলা হয় যে গাড়িতে করেই ঋতুপর্ণা কলেজে গেছে। না হলে ওর বাবা আর ওর বড়দা ওর পিঠের চামড়া তুলে ঢোল বানিয়ে দেবে। ঋতুপর্ণা কোনোরকমে সাইকেলের সামনের রডে একপাশে পা ঝুলিয়ে বসে পরে। সামনে বসতেই সুভাষের বুকের কাছে ঋতুপর্ণার মাথা এসে লাগে। মেয়েটার শরীর থেকে অসম্ভব এক মিষ্টি মাদক গন্ধ সুভাষকে মাতাল করে তোলে। সাইকেল চালিয়ে গাড়ি মাঝখান থেকে পথ করে ওরা এগিয়ে যায় কলেজের দিকে। ঋতুপর্ণার দুইপাশে হাত রেখে সাইকেলের হ্যান্ডেল ধরার ফলে। কচি ফুলের কুঁড়িটাকে চেপে ধরতে ইচ্ছে করে। ইসস, নাক কুঁচকায় সুভাষ, ওর মুখ থেকে ভুরভুর করে বিড়ির গন্ধ আসছে। সাইকেল চালানোর সময়ে সামনের দিকে ঝুঁকে পরে, ওর বুক ঠেকে যায় ঋতুপর্ণার পিঠের সাথে। সাদা সালোয়ার কামিজে ঋতুপর্ণা যেন নিষ্পাপ এক সুন্দরী অপ্সরা, ঠিক যে শিশিরে ভেজা সাদা পদ্ম ফুল।
কলেজের দিকে যেতে যেতে হটাত নাক কুঁচকে ঋতুপর্ণা ওকে বলে, “ইসস এত বিড়ি খাও যে বিকট গন্ধ বের হচ্ছে।”
লজ্জায় পরে যায় সুভাষ, “আচ্ছা বাবা এই মাথা পেছনে করে নিলাম।”
ঋতুপর্ণা খিলখিল করে হেসে বলে, “না থাক, তাহলে আর সাইকেল চালাতে পারবে না।”
সুভাষ সাইকেল চালাতে চালাতে ঋতুপর্ণাকে জিজ্ঞেস করে, “কেমন প্রিপারেশান হয়েছে?”
ঋতুপর্ণা ম্লান হেসে উত্তর দেয়, “ধুস, অঙ্ক একদম মাথায় ঢোকে না।”
সুভাষ ভেবেছিল রূপসী ঋতুপর্ণা পড়াশুনা বেশ ভালো হবে তাই অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “কেন রে, কোথায় অসুবিধে?”
ঋতুপর্ণা হেসে বলে, “আরে বাবা, একটা ট্রেন এত মিটার লম্বা, এত গতিতে একদিকে ছুটে চলেছে।” খিলখিল করে ব্যাঙ্গাত্মক হাসি দিয়ে বলে, “যাক না দৌড়ে আমার বাবার কি। তাও দেখো ওদের, একটা লাইট পোস্ট অতিক্রম করতে কত সময় লাগবে সেটা নিয়ে অঙ্ক। ভারতীয় রেল কখন ঠিক সময়ে স্টেসানে পৌঁছাতে পারল না তার আবার সময় অঙ্ক কষে জানাও।” হাসতে হাসতে সারা শরীর নড়ে ওঠে ঋতুপর্ণার।
সেই মিষ্টি মধুর কচি মেয়েটার হাসি শুনে সুভাষের বুকের রক্ত ছলকে ওঠে। নরম গালে মিষ্টি করে একটা চুমু খেতে বড় ইচ্ছে করে। বড় তরলমতি মিষ্টি হাসি, বড় নিষ্পাপ আপন ভোলা মন। সুভাষের মাথায় কোনোদিন অঙ্ক বিশেষ ঢুকত না তাই হেসে বলে, “ঠিক বলেছিস, যতসব আজগুবি অঙ্ক। তার চেয়ে ভূগোল ভালো।”
ঋতুপর্ণা হেসে বলে, “আচ্ছা তাই নাকি? বলত পৃথিবীর সব থেকে বড় মরুভুমি কোনটা?”
মাথা ঝাঁকায় সুভাষ, কবে যেন পড়েছে, কিছুতেই মনে করতে পারে না। সাইকেল চালাতে চালাতে একটু ভেবে বলে, “হবে হয়ত কালাহারি নয় থর। কে জানে বাবা আমি অন্ডাল ছেড়ে কোথাও কোনোদিন যাইনি।”
হেসে ফেলে ঋতুপর্ণা, “তোমার ভূগোল আমার অঙ্কের মতন গোল।”
সুভাষ প্রশ্ন করে, “আচ্ছা তুই বলে দে।”
ঋতুপর্ণা উত্তর দেয়, “সাহারা মরুভুমি, আফ্রিকার উত্তরে। বুঝলে চাদু।”
ওদের মাঝে যে এর আগে কোনোদিন বিশেষ কোন পরিচয় ছিল না সেটা কেউ বলতে পারবে না। প্রান খোলা মেয়ে ছিল ঋতুপর্ণা, তাই অতি সহজে সুভাষের মতন একজনের সাথে গল্পে মেতে উঠল। গল্পে গল্পে কলেজ চলে আসে। অনেকেই যান জটের জন্য পরীক্ষা দিতে আসতে পারেনি, তাই পরীক্ষা একটু দেরিতে শুরু হয়। কিন্তু সময়ের আগেই সুভাষ ওকে কলেজে পৌঁছে দিয়েছে।
সাইকেল থেকে নেমেই কলেজের সামনে দাঁড়ানো একটা আলুকাবলি ওয়ালাকে দেখিয়ে ঋতুপর্ণা চেঁচিয়ে ওঠে, “এই আলু কাবলি খাবে?”
সুভাষ হেসে মাথা নাড়ায়, “তোর পরীক্ষা দিতে হবে না? যা মন দিয়ে পরীক্ষা দিস।”
ঋতুপর্ণা ঠোঁট উল্টে ভেংচি কেটে বলে, “ধ্যাত তুমি না।” তারপরে নাক কুঁচকে দুষ্টু মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে, “টেনে টুনে চল্লিশ আনলেই হবে। বাকিটা মা ঠিক আমাকে বাঁচিয়ে নেবে।”
ঋতুপর্ণা কোমর দুলিয়ে, সারা অঙ্গে মাদকতাময় এক হিল্লোল তুলে মেয়েদের মাঝে হারিয়ে যায়। সবাই সাদা সালোয়ার কামিজ পরা তার মধ্যে সুভাষ ঠিক খুঁজে ঋতুপর্ণার ওপরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাখে। কলেজের দরজার ভেতরে ঢোকার মুখে হটাত থমকে দাঁড়িয়ে পরে ঋতুপর্ণা, মুচকি মিষ্টি হেসে হাত নাড়িয়ে ভেতরে চলে যায়। সুভাষ এতটা আশা করেনি এই রূপসীর কাছ থেকে। হটাত কি করে কি হয়ে গেল। সম্মোহিতের মতন সাইকেল নিয়ে কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। কখন মেয়েটার ছুটি হবে, কখন আবার ওই মিষ্টি চাঁদপানা মুখমণ্ডলের দর্শন হবে।
ঋতুপর্ণা এক প্রকার মুখ গোমড়া করেই ক্লাসে ঢুকে পরে। আলু কাবলি খাবার বড্ড ইচ্ছে হচ্ছিল। বাবা মায়ের আদরের মেয়ে, দুই দাদার আদরের বোন কিন্তু জীবনে সেই স্বাধীনতা ছিল না। যা চাইত তাই পেয়ে যেত শুধু স্বাধীনতা ছাড়া। অবশ্য ঋতুপর্ণা তখন সবে মাত্র ক্লাস নাইন, তাই বাইরে বের হলে সব সময়ে মায়ের সাথেই বের হত। একা একা কোথাও যাওয়া অথবা বাইরের খাবার খাওয়া বাড়ির কারুর একদম পছন্দ নয়। কলেজের ছুটির পরে সব বান্ধবীরা আলু কাবলি, ফুচকা খায় কিন্তু ওর জন্য গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। গাড়ির ড্রাইভার, রঞ্জন কাকু ছুটি হলেও, মামনি চলে এসো, বলে ওকে গাড়িতে করে হুস করে বেড়িয়ে যায়। অঙ্ক করতে বসে বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁতের মাঝে পেন নিয়ে চিবিয়ে যায়। কালো সাদা অক্ষর গুলো হিব্রু ল্যাটিন হয়ে চোখের সামনে ঘুরে বেড়ায়। হটাত কেমন আনমনা হয়ে যায় ঋতুপর্ণা, তারপরে আর পেন উঠাতে হয়নি। অঙ্ক পরীক্ষা সেইবারে আগের বারের চেয়ে ভালোই হয়।
অনিল ওইদিকে খুঁজতে খুঁজতে কলেজে চলে আসে। কলেজের সামনের একটা চায়ের দোকানে সুভাষ বসে বিড়ি টানছিল আর ঋতুপর্ণার অপেক্ষা করছিল। জানে পরীক্ষার পরে আর ঋতুপর্ণা ওর সাইকেলে বসে বাড়ি ফিরবে না কারন দুপুরের আগেই যানজট ছেড়ে যাবে আর ওকে নিতে ওর বাড়ি থেকে গাড়ি চলে আসবে।
অনিল ওকে দেখে পিঠের ওপরে এক চাপড় মেরে জিজ্ঞেস করে, “এই শালা এই মেয়েদের কলেজের সামনে বসে কি বাল ছিঁড়ছিস।”
সুভাষ থতমত খেয়ে যায়, “না মানে এমনি।”
অনিল চোখ টিপে মুচকি হেসে বলে, “তুই নাকি বিবির মেয়েকে কলেজে নিয়ে এসেছিস?” বিদ্যুৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে এলাকার সবাই “বি.বি” বলে ডাকে।
সুভাষ অবাক হয়ে যায়, “তোকে কে বলল?”
অনিল ওর পাশে বসে হেসে বলে, “তুই হারামি কি ভেবেছিস কেউ দেখেনি? নরেন, বিমল, পটলা সবাই তোকে দেখেছে বিবির মেয়েকে তুই সাইকেলে করে কলেজে নিয়ে এসেছিস। তাই বলে এইখানে হত্যে দিয়ে পরে থাকবি? ওরে বোকাচোদা ওই মেয়ে ওই রূপের ডালি নিয়ে কি আর তোর কোলে বসবে। ওর জন্য আকাশ থেকে সাদা ঘোড়ায় চেপে রাজকুমার আসবে। চল চল, বিমলের বড়দির ছেলের অন্নপ্রাশন। বাবা ডেকে পাঠিয়েছে, ফটো তুলতে যেতে হবে।”
সুভাষ মুখ কাঁচুমাচু করে অনুনয় করে, “আরে অন্নপ্রাশন সেই বিকেলে এখন প্লিস তুই সামলে নে।”
অনিল চোখ কপালে তুলে বলে, “বোকাচোদা ছেলে, অন্নপ্রাশন কোনোদিন বিকেলে হয়না, দুপুরে হয়। বালের চোদা, এইখানে গাঁড় মারলে পেটে কিছু আসবে না। বাবা অলরেডি বায়না নিয়ে ফেলেছে, যদি তুই না যাস তাহলে বাবা মুখ দেখাতে পারবে না।”
অগত্যা সুভাষ চায়ের ভাঁড় ছুঁড়ে ফেলে উঠে দাঁড়ায়। প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও অনিলের সাথে দোকানে যায়। ক্যামেরা কাঁধে ফেলে অনিলের সাথে বিমলের বড়দির বাড়িতে পৌঁছায়। সারাদিন ফটো তোলে কিন্তু কানে ভেসে আসে ঋতুপর্ণার মিষ্টি কণ্ঠস্বর, “ধুত তুমি না।” মাঝে মাঝেই হারিয়ে যায়। “ধুত” শব্দটা অনেকবার আগেও শুনেছে তবে ঋতুপর্ণার মিষ্টি মধুর কণ্ঠ স্বর যেন ওই ছোট শব্দটির ধ্বনির সৌন্দর্য বেশি করে বাড়িয়ে দিয়েছে। ইসস, হাতে হয়ত একটু সময় ছিল। ওর সাথে দাঁড়িয়ে আলু কাবলি খেলে হয়ত আরো একটু বেশি সময়ের জন্য ঋতুপর্ণার পাশে থাকতে পারত। না না, বড় কচি মেয়ে ওর চেয়ে অনেক ছোট, কত ছোট হবে, হ্যাঁ আট বছরের মতন ছোট। এত কচি একটা মেয়ের প্রেমে পরবে সেটা সুভাষের পক্ষে আশাতীত। ফটো তুলতে তুলতে অনেক সময় কেটে যায়। সন্ধ্যে নেমে আসে শহরের বুকে। ফটো তোলার পরে ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে সুভাষ বাড়ির পথ ধরে।
ওদের হয়ত আর কোনোদিন সামনাসামনি দেখা হবে না। ঋতুপর্ণা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে সোজা গাড়ি ধরে কলেজে চলে যাবে। সুভাষ সাইকেলে করে দাঁড়িয়ে থাকবে পথের পাশে। সারা রাত ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারল সুভাষ। বৌদি আর পূর্বতন সুপ্ত প্রেয়সী অনিতা ওকে ভাত দিয়ে যায়। চুপচাপ ডাল দিয়ে ভাত মেখে গলা ধক্করন করে ভাত গিলে কাঁথা মুড়ি দিয়ে বারান্দায় শুয়ে পরে। অনেকটা চিরাচরিত বাংলা সিমেনার মতন মনে হচ্ছে। আপন মনেই হেসে ফেলে সুভাষ।
পরেরদিন ঠিক কলেজের সময়ে সুভাষ স্নান করে সাইকেল নিয়ে রাস্তার মোড়ে ঋতুপর্ণার গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে। সেইদিন কোন যান জট নেই, তাও এক অলীক কল্পনা করে অপেক্ষা করে থাকে। যদি একবার এই কচি নিষ্পাপ সুন্দরীর দর্শন পাওয়া যায়। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরেও সেই অচেনা অথচ খুব চেনা পরিচিত গাড়ির দেখা পাওয়া যায়না। সুভাষের মনে ভয় ঢুকে যায়। বিদ্যুৎ বাবুর কানে কি ওদের এই পরিচয় হওয়ার ঘটনা পৌঁছে গেছে। আর তাই হয়ত ঋতুপর্ণাকে আর কলেজে আসতে দেয়নি। অবশ্য পরে জানতে পেরেছিল যে সেদিন ঋতুপর্ণার কোন পরীক্ষা ছিল না।