26-09-2020, 07:49 PM
ঋতুপর্ণা গাড়ি চালাবে কি, ওর মন পরে থাকে ছেলের কাছে। ইসসস সকাল সকাল ওর বুকে দোলা দিয়ে পালিয়ে গেল। ছেলের সাথে প্রেমিক প্রেমিকার খেলা খেলতে গিয়ে একটু ছেলের প্রেমে পরে গেছে। কলেজে ঢুকেই ফোন সাইলেন্ট করে দিতে হয়। প্রথমার্ধে ওর নাচের ক্লাস থাকে না, রঙ্গনার সাথে লাইব্রেরিতে বসে লাইব্রেরির কাজ করতে হয়।
ওকে লাইব্রেরিতে মিচকি হাসি হাসি মুখে ঢুকতে দেখে রঙ্গনা ওর কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে জিজ্ঞেস করে, “তোকে আজকে একটু অন্য রকম দেখাচ্ছে কি ব্যাপার।”
ঋতুপর্ণার গালে লালিমা দেখা দেয়, “না কিছু হয়নি এমনি। তুই যা নিজের কাজ কর।”
রঙ্গনা ছাড়ে না চোখ টেরিয়ে ওকে বলে, “কিছু একটা হয়েছে তোর। প্রেম করছিস নাকি রে? তোকে না সত্যি সেই প্রথম প্রেমের ছোট মেয়েদের মতন লাগছে।”
এই যা রঙ্গনা কি সত্যি ওর গালের লালিমা, ওর চোখের তারার চমক দেখে ফেলল। কি উত্তর দেবে, ছেলের সাথে বান্ধবীর খেলা খেলার এক ভিন্ন স্বাদ ওর বুকের মাঝে রক্তিম আভা চাগিয়ে তুলেছে সেই উত্তর দেবে। সবাই ওকে ধিক্কার জানাবে তার চেয়ে ভালো ওদের খেলা ওদের মাঝেই থাক।
একটা চেয়ার টেনে বসে রঙ্গনাকে উত্তর দেয়, “না রে কিছু হয়নি।”
ঋতুপর্ণা আর প্রদীপের সম্পর্কের ব্যাপারে রঙ্গনা জানে তাই রঙ্গনা ওকে প্রশ্ন করে, “মিস্টার বিশ্বাসের সাথে কেমন চলছে?”
ঋতুপর্ণা মনের প্রকৃত ভাব লুকিয়ে উত্তর দেয়, “ভালো চলছে, দে লেজার টা দে, নতুন বইয়ের লিস্ট বানিয়ে ফেলি।”
রঙ্গনা উঠে গিয়ে এক গাদা বই নিয়ে এসে ওর সামনে রেখে দেয়। বই গুলোতে কাগজ সাটিয়ে ঠিক মতন নাম্বারিং করতে শুরু করে দেয়। কোন বই কোন তাকে কোন নাম্বারে থাকবে সেটা আগে একটা খাতায় লিখতে হবে তারপরে কম্পিউটারে এন্ট্রি করতে হবে। মোবাইলের কথা একদম ভুলেই গিয়েছিল। বেশ কিছু পরে ব্যাগ খুলে টিসু বের করার সময়ে ওর চোখ মোবাইলে চলে যায়। বেশ কয়েকটা মিস কল দেখে ফোন খুলে দেখে। ঠিক সেই সময়ে প্রদীপের ফোন আসে। প্রদীপের ফোন পেয়ে একটু বিরক্তি বোধ জেগে ওঠে ওর মনে। ও ঠিক এই ফোনের অপেক্ষায় ছিল না, ওর মন বলছিল ওর ছেলে ওকে ফোন করবে।
তাই ফোন উঠিয়ে একটু বিরক্তির সুরে বলে, “হ্যাঁ বল কেমন আছো।”
প্রদীপ হটাত ঋতুপর্ণার গুরু গম্ভির কণ্ঠস্বর শুনে একটু দমে আমতা আমতা করে বলে, “না মানে এমনি ফোন করলাম। কি করছ?”
ঋতুপর্ণা উত্তর দেয়, “কাজ করছি আর কি করব।”
প্রদীপ জিজ্ঞেস করে, “না মানে জিজ্ঞেস করছিলাম যে একটু বের হতে পারবে। একটু কাজ ছিল এই শপিং আর কি।”
ঋতুপর্ণার একদম ইচ্ছে ছিল না প্রদীপের সাথে কথা বলার বা দেখা করার, ওর মন পরে ছিল ছেলের কাছে তাই প্রদীপকে কাটানোর জন্য উত্তর দেয়, “না, সেকেন্ড হাফে পরপর চার খানা ক্লাস আছে, সরি প্রদীপ আজকে হবে না।”
প্রদীপ মন মরা হয়ে বলে, “আচ্ছা ঠিক আছে। বিয়েতে আসছ ত নাকি সেই দিনেও কলেজ করবে।”
ঋতুপর্ণা হেসে ফেলে, “না না, সেই দিন আসব চিন্তা নেই।”
প্রদীপ ফোন রেখে দিতেই কল লিস্ট খুলে ছেলের মোবাইল নাম্বার দেখে। মন চঞ্চল, ছেলের ঠোঁট একটু হলেই ওর ঠোঁট ছুঁয়ে যেত। নিজের অজান্তেই ঠোঁটের পাশে হাত বুলিয়ে নেয়। সকালে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরেছিল যেন মনে হচ্ছিল কতদিন পরে এক প্রেমিকের বাহু ডোরে বাঁধা পড়েছে। সুভাষের কথা মনে করতে একদম ইচ্ছে করে না। সুভাষের নাম শুনলেই ওর শরীর জ্বলে ওঠে। প্রেম করে বিয়ে করার পরেও ওর সাথে প্রতারনা করল ওর স্বামী। না না, মাথা ঝাঁকিয়ে সুভাষকে মাথা থেকে বের করে দেয়। ছেলেকে কল করবে কি করবে না সেই দোনা মনা করে।
আবার ঠিক তখনি ওর ফোনে একটা মেসেজ আসে। খুলে দেখে ছেলের মেসেজ, “হাই, ডারলিং কি করছ।”
একেবারে একদিনে মা থেকে “ডারলিং” বানিয়ে দিল ওর ছেলে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে ফোন করে ছেলেকে। বুকের রক্তে তীব্র আলোড়ন। ফোন করবে না একটা মেসেজ করবে। না না, ফোন করলে রঙ্গনা আবার ওদের কথোপকথন শুনে ফেলতে পারে। তাই ঋতুপর্ণা ছেলেকে একটা মেসেজ করে, “কি রে তোর ক্লাস নেই।”
সঙ্গে সঙ্গে আদির উত্তর আসে, “না, সন্তোষ স্যারের জ্বর তাই খালি।”
ঋতুপর্ণা প্রশ্ন করে, “লাইব্রেরিতে গিয়ে কিছু পড়াশুনা করতে পারিস ত। খালি বসে কি করছিস?”
আদির উত্তর আসে, “তোমার কথা ভাবছিলাম।”
উফফফ, ছেলে কি ভাবছে ওর কথা। ইসসস ছেলেটা না বড্ড দুষ্টু হয়ে গেছে। ঋতুপর্ণা প্রশ্ন করে, “কি ভাবছিলি রে দুষ্টু ছেলে।”
আদি প্রশ্ন করে, “তোমার নরম গোলাপি গালের কথা।”
উম্মম ছেলেটা সত্যি পাগল হয়ে গেছে আর সেই সাথে ওকেও পাগল করে দিয়েছে। ঋতুপর্ণা লিখে পাঠায়, “কিন্তু আজকে ত ঠিক গালে চুমু খাস নি।”
আদি উত্তর দেয়, “সরি একটু সরে গেছে। মানে তোমার গাল এত পিচ্ছিল যে ঠিক জায়গায় চুমু খেতে পারিনি।”
পাগল ছেলে, মাথা দোলায় ঋতুপর্ণা। নিশ্চয় ইচ্ছে করেই ওর ঠোঁট ছুঁতে চেয়েছিল কিন্তু এইভাবে ঠোঁটে ঠোঁট মেলাতে দ্বিধা বোধ করেছে তাই ঠিক ঠোঁটের পাশে চুমু খেয়েছে। ঋতুপর্ণা লেখে, “যা শয়তান, তোর মনে অন্য কিছু ছিল।”
আদি উত্তর পাঠায়, “তুমি কি করে জানলে।”
ঋতুপর্ণা উত্তর দেয়, “মায়ের মন সব জানতে পারে বুঝলি।”
আদি লিখে পাঠায়, “মায়ের মন না বান্ধবীর মন।”
ঋতুপর্ণা উত্তর দেয়, “দুটোই বলতে পারিস।”
আদি লেখে, “কিন্তু কোনটা বেশি।”
ঋতুপর্ণা কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দেয়, “আগে মা তারপরে বান্ধবী। আদি আমি কিন্তু শুধু তোর সাথে এই বান্ধবীর খেলা খেলছি আর বেশি কিছু না। আশা করি সেটা বুঝিস।”
আদির উত্তর আসে, “জানি মা, কিন্তু তাও মাকে মিষ্টি বান্ধবী রূপে দেখতে বেশি উত্তেজক লাগে।”
শরীরের প্রতিটি রোমকূপ উন্মিলিত হয়ে যায় এই মেসেজ পরে। উত্তেজক মানে, উত্তেজনা যে ওর শরীর মন ছাপিয়ে গেছে। হৃদয়ের আগল বেঁধে ঋতুপর্ণা উত্তর দেয়, “আদি একটা কথা বলব সোনা।”
আদি লিখে পাঠায়, “হ্যাঁ বল না, তোমার সব কথা মানতে রাজি।”
ঋতুপর্ণা কিছুক্ষণ ভেবে লিখে পাঠায়, “আগে কিন্তু মাতৃ স্বত্তা তারপরে তোর বান্ধবী। সেই সন্মান অন্তত একটু রাখিস।”
আদির উত্তর দিতে একটু দেরি হতে দেখে ঋতুপর্ণা ভাবতে শুরু করে, ছেলে কি আহত হল। কিন্তু ছেলেকে এই ভাবে সোজাসুজি না বললে ওরা গন্ডি ছাড়িয়ে কোথায় পৌঁছাবে তার ঠিক নেই। কিছু পরে আদির উত্তর আসে, “নিশ্চয় মা, আগে তুমি আমার মা তারপরে আমার বান্ধবী।”
ঋতুপর্ণা স্বস্তির শ্বাস নিয়ে মজা করে লেখে, “তাই বলে এই নয় যে একদম দুষ্টুমি করতে পারব না।”
আদি সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেয়, “উফফফ তুমি না সোনা মা, মিষ্টি ডারলিং।”
উফফ ছেলেটা পাগল হয়ে গেল যে। ঋতুপর্ণা লিখে পাঠায়, “আচ্ছা বাবা, এইবারে তোর ডারলিং একটু কাজ করবে।”
আদি লিখে পাঠায়, “আচ্ছা তাই সই কিন্তু লাঞ্চে ফোন করব।”
ঋতুপর্ণা উত্তর দেয়, “ওকে বাই। ক্লাসে আবার অন্য মনস্ক হয়ে বসে থাকিস না।”
সঙ্গে সঙ্গে একটা চুম্বনের মেসেজ আসে, “কিসসসসস...”
ঋতুপর্ণা পাল্টা উত্তর দেয়, “উম্মম্মম্ম”
শুধু মেসেজ লিখে আর পরে কি আর মন ভরে। একটু কথা বলা একটু গলার আওয়াজ শোনা। ঋতুপর্ণার চিত্ত বড় ব্যাকুল হয়ে ওঠে ছেলের গাড় আওয়াজ শোনার জন্য। কিন্তু লজ্জা পায় একি করছে। আগে ছেলেই ফোন করুক। ওকে বান্ধবীর মতন দেখার স্বপ্ন ছেলের সুতরাং ছেলের পদক্ষেপের অপেক্ষা করবে। দেখতে চায় ছেলে ওকে নিয়ে কি কি স্বপ্ন এঁকেছে। সময় আর কাটতে চায় না কিছুতেই। খাতা কি লিখবে, বারে বারে পেন দাঁতের মাঝে কেটে মোবাইল দেখে। বারেবারে গত রাতের কথা মনে পরে যায়, কেমন ভাবে ওকে জড়িয়ে ধরেছিল। সকালের কথা মনে পরে যায়, ভীষণ প্রগাঢ় ছিল ছেলের বাহু বেষ্টনী।
ঠিক দুপুরে লাঞ্চের সময়ে ছেলের ফোন। সঙ্গে সঙ্গে ফোন তুলে ছেলেকে মৃদু বকুনি দেয় ঋতুপর্ণা, “পড়াশুনা নেই নাকি, শুধু ফোন আর ফোন। এই রকম করলে হবে।”
আদি উত্তেজিত কণ্ঠে উত্তর দেয়, “কি করব বল, প্রথম বার এত সুন্দরী একজন বান্ধবী পেয়েছি। ওর গলা না শুনলে থাকতে পারছি না।”
ঋতুপর্ণা কানের ওপরে ফোন চেপে ধরে, সকালে রান্না ঘরে ওর কানের সাথে আদির গাল ঠেকেছিল। ফোনের ভেতর দিয়ে সেই পরশ খুঁজে নিতে চেষ্টা করে ওর মন। আসলে সেটা কখনই সম্ভব নয় কিন্তু প্রেমিকার চিত্ত অনেক কিছুই ভেবে নিতে সক্ষম হয়। ঋতুপর্ণা গলা নামিয়ে বলে, “কি হয়েছে এতবার করে ফোন করছিস কেন?”
আদি নিচু গলায় ওইপাশ থেকে উত্তর দেয়, “তোমাকে আজকে ভারী মিষ্টি দেখাচ্ছে।”
ঋতুপর্ণার কান ছেলের কণ্ঠ স্বর শুনে লাল হয়ে যায়, লাজবতী লতার মতন লাজুক হেসে বলে, “আচ্ছা তাই নাকি। কিন্তু তুই যে কোন ফটো উঠালি না।”
আদি মিহি অথচ গভীর কণ্ঠে উত্তর দেয়, “চোখে আঁকা রয়েছে আর সেই ছবি একেবারে বুকে গেঁথে গেছে।”
ঋতুপর্ণা লাজুক হেসে উত্তর দেয়, “বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না একটু। খেলার প্রেমিকার চেয়ে সত্যি কারের একটা প্রেমিকা জোটালে কত ভালো হত। তোর এই সব কথা শুনে অতি সহজে পটে যেত।”
আদি মুখ ভার করে উত্তর দেয়, “সোজা সুজি বলে দাও ভালো লাগছে না আর ফোন করব না।”
ছেলের অভিমানী কণ্ঠ শুনে থাকতে পারে না ঋতুপর্ণা। ছেলেকে প্রবোধ দিয়ে বলে, “না না তোর সাথে ইয়ার্কি মারছিলাম।” একটু থেমে ছেলে সাবধান করে বলে, “কিন্তু আমার ওই কথাটা মনে রাখিস।”
আদি প্রশ্ন করে, “কোন কথা?”
ঋতুপর্ণা উত্তর দেয়, “আগে আমি মা, তারপরে......”
আদি ম্লান হেসে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ হ্যাঁ জানি, তুমি আমার মা তাই এত সহজে এত কথা বলতে পারছি। অন্য কেউ হলে কি আর একদিনে এত খোলামেলা হয়ে মিশতে পারতাম।”
তা সত্যি, ছেলে বলেই এত সহজে মিশে গেছে। অন্য কেউ হলে ওর হাত ধরতেই অথবা ওর গালে চুমু খেতেই কয়েক দিন লাগিয়ে দিত। ঋতুপর্ণা হেসে উত্তর দেয়, “সাবধানে বাড়ি ফিরিস। আকাশ মেঘলা করে আছে।”
আকাশ দুপুরের পর থেকেই মেঘলা, সেই দেখে আদির মন আবার ওঠে, “এই, না না, এই বৃষ্টিতে ঘরে কি আর মন টিকবে। চল আজকে সিনেমা দেখে আসি।”
বাইরে যাওয়ার কথা শুনে একটু ঋতুপর্ণার মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। গতরাতে ছেলের সাথে যে রকম মাখামাখি হয়ে গেছে সেটা আশাতীত। সেই সাথে মন ভারাক্রান্ত হয়ে যায় নিজেদের আর্থিক অবস্থার কথা ভেবে। গত কাল অনেক কেনাকাটা হয়ে গেছে, অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। নাচের ক্লাস করে আর নাচের কোচিং করে এমন কিছু আয় হয় না। ওর বড় ফ্লাট দেখে সবাই ভাবে ওরা খুব বড়লোক কিন্তু আসলে ওদের আর্থিক অবস্থা সাধারন মধ্যবিত্ত মানুষের মতন। আর এই কারনেই ডিভোর্সের পরে এক প্রকার জোর করেই ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পাঠিয়েছিল। গলা ধরে আসে, মাসের শেষ হতে এখন বাকি। যদিও আদির খরচ অনেকটাই সুভাষ দেয় কিন্তু তাও ছেলের ছোট খাটো আবদার ওকেই মেটাতে হয়।
ঋতুপর্ণা নিচু কণ্ঠে ছেলেকে বুঝিয়ে বলে, “না রে গত কাল অনেক খরচ হয়ে গেছে। তার ওপরে আজকে বাড়িতে মেয়েরা নাচ শিখতে আসবে। পরে একদিন না হয় আবার বেরনো যাবে।”
আদি মায়ের ভারী গলা শুনে সংশয় বুঝতে দেরি হয় না। বড় কষ্ট হয় নিজেদের এই আর্থিক অবস্থার কথা ভেবে। বাবার ওপরে ভীষণ রাগ হয়, কেন যে বাবা মাকে ছেড়ে চলে গেল জানে না। তবে সেই সাথে একটা আশার আলো দেখা দেয় ওর মনে। বাবা যদি মায়ের পাশে থাকত তাহলে কি আর মাকে এইভাবে নিজের মতন করে ভালবাসতে পারত? কখনই না। বাবার কাছ থেকে মাকে ছিনিয়ে নিতে পারত না কখনই কিন্তু প্রদীপ বিশ্বাসের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে। মায়ের ভারাক্রান্ত কণ্ঠ স্বর শুনে আদি উত্তর দেয়, “প্লিস ওই ভাবে মন মরা হয়ে থেকো না। তোমার শুকনো মুখ দেখলে বুক শুকিয়ে যায়।”
আহা রে, ছেলেটা সত্যি ওর ব্যাথা বোঝে। চোখের কোনে এক চিলতে জলের রেখা দেখা দেয়। আড়ালে চোখের কোন মুছে হেসে বলে, “ছাতা নিয়ে গেছিস?”
আদি উত্যক্ত করার জন্য উত্তর দেয়, “ছাতা, সেটা কি জিনিস?”
লাঞ্চের সময় শেষ, এইবারে ক্লাস এইটের নাচের ক্লাস শুরু হবে। ঋতুপর্ণা ছেলেকে বলে, “এই আমার এখন ক্লাস আছে। বাকি কথা বাড়িতে হবে। সাবধানে আসিস।”
আদি ফোন ছেড়ে হাওয়ায় হাত ছুঁড়ে নেচে ওঠে। পকেটে বিশেষ টাকা নেই। এই মাসে যা ওর বাবা যা টাকা পাঠিয়েছিল সেটা সেমেস্টার খরচ দিতে আর কিছু বই কিনতে খরচ হয়ে গেছে। তারপরে আবার বন্ধুদের নিয়ে গত সপ্তাহে একটা সিনেমা দেখতে গিয়েছিল সেখানেও খরচ হয়ে গেছে। বাবার কাছে বেশি টাকা চাইতে খারাপ লাগে। গত বছরে একটা দামী নিকোন ডি এস এল আর ক্যামেরা ওর জন্মদিনে কিনে উপহার দিয়েছিল। তার দাম প্রায় চল্লিশ পঞ্চাশ হাজার টাকা। মায়ের কাছে বেশি টাকা চাওয়া যায় না। কলেজ করে নাচের ক্লাস করে, এত বড় বাড়ি সামলে, সারা মাসের খরচ খরচা সামলে তাও মাসে হাজার দেড় হাজার টাকার মতন হাত খরচ দেয়। পার্স খুলে দেখে একটা পাঁচশো টাকার নোট পরে আছে আর কয়েকটা দশ টাকার নোট। তনিমার সাথে প্রেম করার সময়ে তনিমার এই চাই সেই চাই আবদার থাকত। কিন্তু এই নতুন বান্ধবীর তেমন কোন আবদার নেই। উপরন্তু এই বান্ধবী ওর একদম নিজের, এর জন্য একটা কিছু কিনে নিয়ে যেতেই হয়। কলেজের সেকেন্ড হাফ কোনোরকমে ঘড়ি দেখে আর আকাশ দেখে কাটিয়ে দেয় আদি। বিকেল হতে হতেই আকাশের বুকে মেঘের গুরগুর চড়চড় ধ্বনি মুখরিত হয়ে ওঠে। ছাতা নিয়ে কোনোদিন আসে না আদি, তাই বৃষ্টি হওয়ার আগেই বেড়িয়ে পড়ল কলেজ থেকে। বাস স্টপে এসে বাড়ির জন্য বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রইল।
এমন সময়ে মায়ের ফোন আসে, “তুই কি কলেজ থেকে বেড়িয়ে পড়েছিস?”
আদির মন চঞ্চল হয়ে ওঠে মায়ের গলা শুনে, এখুনি মাকে কাছে পেলে যেন জড়িয়ে ধরবে। অসীম চাঞ্চল্য সংযত রেখে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ বেড়িয়ে পড়েছি, তুমি কি বাড়িতে না বাইরে?”
ঋতুপর্ণা অনেক আগেই বাড়ি ফিরে গেছে। বিকেলে নাচ শিখতে বেশ কয়েকটা মেয়ে আসে ওর কাছে। তাদের নাচ শেখাতে ব্যাস্ত ছিল। তার মাঝে আকাশের গুরগুর চড়চড় আওয়াজ শুনে ছেলের জন্য মন কেমন করে ওঠে। উদ্বেগ মাখা কণ্ঠে ছেলেকে বলে, “তুই বললে একদম শুনিস না। দেখ এখুনি বৃষ্টি আসবে।”
আদি মাকে শান্ত করে উত্তর দেয়, “এত বছরে বৃষ্টি কি তোমার ছেলেকে তোমার কাছে যাওয়ার জন্য আটকাতে পেরেছে যে আজকে পারবে।” ঠিক তখনি ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। লোকজনের দৌড়াদৌড়ি লেগে যায়। দেখতে দেখতে বাস স্টান্ডের পাশের গাছের তলা ভরে ওঠে। ব্যাগ মাথায় করে মাকে উত্তর দেয়, “ভেবেছিলাম বাস এসে পরবে কিন্তু বৃষ্টিটা সত্যি শয়তান। ঠিক অসময়ে এসে যায়।”
ঋতুপর্ণা ছেলের কথা শুনে বলে, “এবারে ভেজ আর কি করবি। জ্বর হলে আমি ছাড়া আর কে আছে তোকে দেখবে।”
আদি গলা নামিয়ে উত্তর দেয়, “তুমি ছাড়া আমি কানা, ডারলিং।”
আবার সেই ডারলিং শব্দ শুনে ঋতুপর্ণার বুকের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে। ছেলেকে উত্যক্ত করে বলে, “কলেজ শেষ হলেই তোকে বিয়ে দিয়ে দেব আর আমার ছুটি।”
আদি মজা করে উত্তর দেয়, “ইসসস এই ত সবে মাত্র একটা সুন্দরী বান্ধবীর দেখা পেলাম। কয়েকদিন একটু মজা করে নেই তারপরে দেখা যাবে। আর আমার কপালে কোন মেয়ে জুটবে না বুঝলে।”
ঋতুপর্ণা চোখের তারা ঘুরিয়ে উত্তর নিচু কণ্ঠে দেয়, “আচ্ছা বাবা আচ্ছা। ভালো মতন বাড়ি ফিরে আয়।”
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভেজা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। অন্যদিন হলে বৃষ্টিতে ভিজতে খুব খারাপ লাগে তবে সেদিন বৃষ্টিতে ভিজতে বড় ভালো লাগে। ভিজে জামা কাপড়ে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ওর গত রাতের কথা মনে পরে যায়। আর তখনি বৃষ্টি আর বৃষ্টি বলে মনে হয় না। ওর শরীরে এক অদ্ভুত আগুনের দেখা দেয়। মায়ের আঁচল, মায়ের চুলের মাদক গন্ধ, মা নরম শরীর ওকে বেশি করে টানে। বাড়ি যাওয়ার বাস চলে আসতেই ভিড় বাসে ঠেলে উঠে পরে। যে করে হোক এই বাসে না উঠতে পারলে তাড়াতাড়ি মায়ের কাছে যাওয়া হবে না। সকাল থেকে কলেজ করে ক্লান্ত হয়ে গেছে।
নির্দিষ্ট বাস স্টপেজে নেমে দেখে তখন বৃষ্টি থামেনি। এইবারে হেঁটেই বাড়ি ফিরতে হবে। একে বারে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে কিছুতেই মন মানে না। বৃষ্টি মাথায় করে নিয়ে একটা কেক প্যাটিসের দোকানে ঢুকে পরে। বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য অনেক লোক সেই দোকানে আশ্রয় নিয়েছে তাতে দোকানির বিক্রি বেড়ে গেছে। ছোট বেলা থেকে ওর খুব চকোলেট খেতে পছন্দ, সেটা অবশ্য ওর মায়ের দৌলতে পেয়েছদে। মাও চকোলেট খেতে খুব ভালোবাসে বিশেষ করে ডার্ক চকোলেট হলে কথাই নেই। দোকান থেকে দুই খানা বড় ডার্ক ফ্যান্টাসি চকোলেট কেনে আর দুটো চিকেন প্যাটিস। দোকানের পাশেই রাস্তার ধারে একটা ফুলের দোকান। বৃষ্টির ফলে প্লাস্টিক দিয়ে সব ফুল ঢেকে দিয়েছে দোকানি। গোলাপ কিনবে না রজনী গন্ধা ভেবে পায় না। মায়ের দুটো ফুল বেশ পছন্দের তবে মা হলদে ফুল বেশি পছন্দ করে। বেশ কয়েকটা হলদে ফুলের সাথে বেশ কয়েকটা রজনীগন্ধার স্টিক নিয়ে একটা মোটামুটি আকারের একটা তোড়া বানিয়ে কিনে নেয়। এতেই প্রায় দুশো টাকা খরচ হয়ে যায়। টাকার দিকে দেখে না, মাসের শেষে একটু টানাটানি হবে হয়ত কিন্তু সেটা ঠিক সামলে নেবে। আর নিতান্তই লাগলে মায়ের পার্স জিন্দাবাদ।
ভিকে জামা কাপড় গায়ের সাথে লেপটে ওর শরীরের উত্তাপ এক প্রকার শুষে নিয়েছে। একটা সিগারেট পেলে বড় ভালো হয় কিন্তু নিরুপায়। এই মুষলধার বৃষ্টিতে কি আর সিগারেট খাওয়া যায়। তার ওপরে এক হাতে ফুলের তোড়া আর অন্য হাতে প্যাটিসের প্লাস্টিক। এক প্রকার কাক ভিজে হয়েই বাড়ি ফিরল আদি। ফ্লাটে ঢুকতেই ওদের গার্ড, নিমাই ওকে দেখে হেসে বলে একদম কাকের মতন ভিজে গেছে। নিমাইয়ের সাথে বেশ ভালোই হৃদ্যতা, ওর গাড়ি ধুয়ে দেয় রোজ সকালে। নিমাইকে দেখে আদি একটা সিগারেট ধরাতে বলে। নিমাই মিচকি হেসে ওর দিকে একটা বিড়ি ধরিয়ে এগিয়ে দেয়। মাসের শেষের দিকে মাঝে মাঝেই বিড়িতে নেমে আসতে হয়। তবে ওর পড়ার টেবিলের ড্রয়ারে একটা দুটো বাড়তি সিগারেট লুকিয়ে রাখা থাকে। অগত্যা শরীর গরম করার জন্য নিমাইয়ের কাছ থেকে বিড়ি নিয়ে কয়েকটা টান মেরে জিজ্ঞেস করে গাড়ির কথা। নিমাই উত্তরে জানিয়ে দেয় ওর মা অনেক আগেই ফিরে এসেছে। যেহেতু মা বেশ রূপসী আর সবার সাথে মিশে যায় তাই এই ফ্লাট বাড়ির সবার আদরের দিদিমনি।
ওর হাতে ফুলের তোড়া দেখে নিমাই ইয়ার্কি মেরে বলে, “নতুন আমদানি নাকি আদিদা।”
আদিও ইয়ার্কি মেরে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ রে আজকেই পটালাম আর আজকেই ফুল কিনলাম।”
নিমাই আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার তুমি ফুল কিনলে আর বাড়িতে নিয়ে এলে?”
আদি হেসে উত্তর দেয়, “বৃষ্টির জন্য আর দেওয়া হল না তাই বাড়িতে নিয়ে এলাম।”
নিমাই ভুরু নাচিয়ে ওকে বলে, “যাও যাও, তাড়াতাড়ি বাড়ি যাও, না হলে দিদিমনি মেরে ছাল গুটিয়ে দেবে।”
লিফটে উঠে সোজা চারতলায়। ওর কাছে বাড়ির একটা চাবি থাকে। দরজায় কান পেতে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ বাড়ির ভেতরের আওয়াজ শোনে। বসার ঘরের পাশের ঘরে ডেকে একটা শাস্ত্রিয় সঙ্গীতের তাল বেজে চলেছে, সেই সাথে মায়ের নাচের বোলের আওয়াজ আর পায়ের তোড়ার আওয়াজ কানে ভেসে আসে। উফফফ, মায়ের ওই রাঙ্গা ফর্সা নরম পায়ের পাতায় চুমু খেতে ইচ্ছে করে। ফর্সা বাঁকা রোমহীন পায়ের গুলি বেয়ে ঠোঁটের ভিজে দাগ ফেলতে ইচ্ছে করে। পেলব জঙ্ঘার ওপরে হাত বুলিয়ে আদর করতে ইচ্ছে করে। কবে যে ওর কপালে এই সৌভাগ্য ঘটবে।
ওকে লাইব্রেরিতে মিচকি হাসি হাসি মুখে ঢুকতে দেখে রঙ্গনা ওর কাঁধে আলতো ধাক্কা মেরে জিজ্ঞেস করে, “তোকে আজকে একটু অন্য রকম দেখাচ্ছে কি ব্যাপার।”
ঋতুপর্ণার গালে লালিমা দেখা দেয়, “না কিছু হয়নি এমনি। তুই যা নিজের কাজ কর।”
রঙ্গনা ছাড়ে না চোখ টেরিয়ে ওকে বলে, “কিছু একটা হয়েছে তোর। প্রেম করছিস নাকি রে? তোকে না সত্যি সেই প্রথম প্রেমের ছোট মেয়েদের মতন লাগছে।”
এই যা রঙ্গনা কি সত্যি ওর গালের লালিমা, ওর চোখের তারার চমক দেখে ফেলল। কি উত্তর দেবে, ছেলের সাথে বান্ধবীর খেলা খেলার এক ভিন্ন স্বাদ ওর বুকের মাঝে রক্তিম আভা চাগিয়ে তুলেছে সেই উত্তর দেবে। সবাই ওকে ধিক্কার জানাবে তার চেয়ে ভালো ওদের খেলা ওদের মাঝেই থাক।
একটা চেয়ার টেনে বসে রঙ্গনাকে উত্তর দেয়, “না রে কিছু হয়নি।”
ঋতুপর্ণা আর প্রদীপের সম্পর্কের ব্যাপারে রঙ্গনা জানে তাই রঙ্গনা ওকে প্রশ্ন করে, “মিস্টার বিশ্বাসের সাথে কেমন চলছে?”
ঋতুপর্ণা মনের প্রকৃত ভাব লুকিয়ে উত্তর দেয়, “ভালো চলছে, দে লেজার টা দে, নতুন বইয়ের লিস্ট বানিয়ে ফেলি।”
রঙ্গনা উঠে গিয়ে এক গাদা বই নিয়ে এসে ওর সামনে রেখে দেয়। বই গুলোতে কাগজ সাটিয়ে ঠিক মতন নাম্বারিং করতে শুরু করে দেয়। কোন বই কোন তাকে কোন নাম্বারে থাকবে সেটা আগে একটা খাতায় লিখতে হবে তারপরে কম্পিউটারে এন্ট্রি করতে হবে। মোবাইলের কথা একদম ভুলেই গিয়েছিল। বেশ কিছু পরে ব্যাগ খুলে টিসু বের করার সময়ে ওর চোখ মোবাইলে চলে যায়। বেশ কয়েকটা মিস কল দেখে ফোন খুলে দেখে। ঠিক সেই সময়ে প্রদীপের ফোন আসে। প্রদীপের ফোন পেয়ে একটু বিরক্তি বোধ জেগে ওঠে ওর মনে। ও ঠিক এই ফোনের অপেক্ষায় ছিল না, ওর মন বলছিল ওর ছেলে ওকে ফোন করবে।
তাই ফোন উঠিয়ে একটু বিরক্তির সুরে বলে, “হ্যাঁ বল কেমন আছো।”
প্রদীপ হটাত ঋতুপর্ণার গুরু গম্ভির কণ্ঠস্বর শুনে একটু দমে আমতা আমতা করে বলে, “না মানে এমনি ফোন করলাম। কি করছ?”
ঋতুপর্ণা উত্তর দেয়, “কাজ করছি আর কি করব।”
প্রদীপ জিজ্ঞেস করে, “না মানে জিজ্ঞেস করছিলাম যে একটু বের হতে পারবে। একটু কাজ ছিল এই শপিং আর কি।”
ঋতুপর্ণার একদম ইচ্ছে ছিল না প্রদীপের সাথে কথা বলার বা দেখা করার, ওর মন পরে ছিল ছেলের কাছে তাই প্রদীপকে কাটানোর জন্য উত্তর দেয়, “না, সেকেন্ড হাফে পরপর চার খানা ক্লাস আছে, সরি প্রদীপ আজকে হবে না।”
প্রদীপ মন মরা হয়ে বলে, “আচ্ছা ঠিক আছে। বিয়েতে আসছ ত নাকি সেই দিনেও কলেজ করবে।”
ঋতুপর্ণা হেসে ফেলে, “না না, সেই দিন আসব চিন্তা নেই।”
প্রদীপ ফোন রেখে দিতেই কল লিস্ট খুলে ছেলের মোবাইল নাম্বার দেখে। মন চঞ্চল, ছেলের ঠোঁট একটু হলেই ওর ঠোঁট ছুঁয়ে যেত। নিজের অজান্তেই ঠোঁটের পাশে হাত বুলিয়ে নেয়। সকালে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরেছিল যেন মনে হচ্ছিল কতদিন পরে এক প্রেমিকের বাহু ডোরে বাঁধা পড়েছে। সুভাষের কথা মনে করতে একদম ইচ্ছে করে না। সুভাষের নাম শুনলেই ওর শরীর জ্বলে ওঠে। প্রেম করে বিয়ে করার পরেও ওর সাথে প্রতারনা করল ওর স্বামী। না না, মাথা ঝাঁকিয়ে সুভাষকে মাথা থেকে বের করে দেয়। ছেলেকে কল করবে কি করবে না সেই দোনা মনা করে।
আবার ঠিক তখনি ওর ফোনে একটা মেসেজ আসে। খুলে দেখে ছেলের মেসেজ, “হাই, ডারলিং কি করছ।”
একেবারে একদিনে মা থেকে “ডারলিং” বানিয়ে দিল ওর ছেলে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে ফোন করে ছেলেকে। বুকের রক্তে তীব্র আলোড়ন। ফোন করবে না একটা মেসেজ করবে। না না, ফোন করলে রঙ্গনা আবার ওদের কথোপকথন শুনে ফেলতে পারে। তাই ঋতুপর্ণা ছেলেকে একটা মেসেজ করে, “কি রে তোর ক্লাস নেই।”
সঙ্গে সঙ্গে আদির উত্তর আসে, “না, সন্তোষ স্যারের জ্বর তাই খালি।”
ঋতুপর্ণা প্রশ্ন করে, “লাইব্রেরিতে গিয়ে কিছু পড়াশুনা করতে পারিস ত। খালি বসে কি করছিস?”
আদির উত্তর আসে, “তোমার কথা ভাবছিলাম।”
উফফফ, ছেলে কি ভাবছে ওর কথা। ইসসস ছেলেটা না বড্ড দুষ্টু হয়ে গেছে। ঋতুপর্ণা প্রশ্ন করে, “কি ভাবছিলি রে দুষ্টু ছেলে।”
আদি প্রশ্ন করে, “তোমার নরম গোলাপি গালের কথা।”
উম্মম ছেলেটা সত্যি পাগল হয়ে গেছে আর সেই সাথে ওকেও পাগল করে দিয়েছে। ঋতুপর্ণা লিখে পাঠায়, “কিন্তু আজকে ত ঠিক গালে চুমু খাস নি।”
আদি উত্তর দেয়, “সরি একটু সরে গেছে। মানে তোমার গাল এত পিচ্ছিল যে ঠিক জায়গায় চুমু খেতে পারিনি।”
পাগল ছেলে, মাথা দোলায় ঋতুপর্ণা। নিশ্চয় ইচ্ছে করেই ওর ঠোঁট ছুঁতে চেয়েছিল কিন্তু এইভাবে ঠোঁটে ঠোঁট মেলাতে দ্বিধা বোধ করেছে তাই ঠিক ঠোঁটের পাশে চুমু খেয়েছে। ঋতুপর্ণা লেখে, “যা শয়তান, তোর মনে অন্য কিছু ছিল।”
আদি উত্তর পাঠায়, “তুমি কি করে জানলে।”
ঋতুপর্ণা উত্তর দেয়, “মায়ের মন সব জানতে পারে বুঝলি।”
আদি লিখে পাঠায়, “মায়ের মন না বান্ধবীর মন।”
ঋতুপর্ণা উত্তর দেয়, “দুটোই বলতে পারিস।”
আদি লেখে, “কিন্তু কোনটা বেশি।”
ঋতুপর্ণা কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দেয়, “আগে মা তারপরে বান্ধবী। আদি আমি কিন্তু শুধু তোর সাথে এই বান্ধবীর খেলা খেলছি আর বেশি কিছু না। আশা করি সেটা বুঝিস।”
আদির উত্তর আসে, “জানি মা, কিন্তু তাও মাকে মিষ্টি বান্ধবী রূপে দেখতে বেশি উত্তেজক লাগে।”
শরীরের প্রতিটি রোমকূপ উন্মিলিত হয়ে যায় এই মেসেজ পরে। উত্তেজক মানে, উত্তেজনা যে ওর শরীর মন ছাপিয়ে গেছে। হৃদয়ের আগল বেঁধে ঋতুপর্ণা উত্তর দেয়, “আদি একটা কথা বলব সোনা।”
আদি লিখে পাঠায়, “হ্যাঁ বল না, তোমার সব কথা মানতে রাজি।”
ঋতুপর্ণা কিছুক্ষণ ভেবে লিখে পাঠায়, “আগে কিন্তু মাতৃ স্বত্তা তারপরে তোর বান্ধবী। সেই সন্মান অন্তত একটু রাখিস।”
আদির উত্তর দিতে একটু দেরি হতে দেখে ঋতুপর্ণা ভাবতে শুরু করে, ছেলে কি আহত হল। কিন্তু ছেলেকে এই ভাবে সোজাসুজি না বললে ওরা গন্ডি ছাড়িয়ে কোথায় পৌঁছাবে তার ঠিক নেই। কিছু পরে আদির উত্তর আসে, “নিশ্চয় মা, আগে তুমি আমার মা তারপরে আমার বান্ধবী।”
ঋতুপর্ণা স্বস্তির শ্বাস নিয়ে মজা করে লেখে, “তাই বলে এই নয় যে একদম দুষ্টুমি করতে পারব না।”
আদি সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দেয়, “উফফফ তুমি না সোনা মা, মিষ্টি ডারলিং।”
উফফ ছেলেটা পাগল হয়ে গেল যে। ঋতুপর্ণা লিখে পাঠায়, “আচ্ছা বাবা, এইবারে তোর ডারলিং একটু কাজ করবে।”
আদি লিখে পাঠায়, “আচ্ছা তাই সই কিন্তু লাঞ্চে ফোন করব।”
ঋতুপর্ণা উত্তর দেয়, “ওকে বাই। ক্লাসে আবার অন্য মনস্ক হয়ে বসে থাকিস না।”
সঙ্গে সঙ্গে একটা চুম্বনের মেসেজ আসে, “কিসসসসস...”
ঋতুপর্ণা পাল্টা উত্তর দেয়, “উম্মম্মম্ম”
শুধু মেসেজ লিখে আর পরে কি আর মন ভরে। একটু কথা বলা একটু গলার আওয়াজ শোনা। ঋতুপর্ণার চিত্ত বড় ব্যাকুল হয়ে ওঠে ছেলের গাড় আওয়াজ শোনার জন্য। কিন্তু লজ্জা পায় একি করছে। আগে ছেলেই ফোন করুক। ওকে বান্ধবীর মতন দেখার স্বপ্ন ছেলের সুতরাং ছেলের পদক্ষেপের অপেক্ষা করবে। দেখতে চায় ছেলে ওকে নিয়ে কি কি স্বপ্ন এঁকেছে। সময় আর কাটতে চায় না কিছুতেই। খাতা কি লিখবে, বারে বারে পেন দাঁতের মাঝে কেটে মোবাইল দেখে। বারেবারে গত রাতের কথা মনে পরে যায়, কেমন ভাবে ওকে জড়িয়ে ধরেছিল। সকালের কথা মনে পরে যায়, ভীষণ প্রগাঢ় ছিল ছেলের বাহু বেষ্টনী।
ঠিক দুপুরে লাঞ্চের সময়ে ছেলের ফোন। সঙ্গে সঙ্গে ফোন তুলে ছেলেকে মৃদু বকুনি দেয় ঋতুপর্ণা, “পড়াশুনা নেই নাকি, শুধু ফোন আর ফোন। এই রকম করলে হবে।”
আদি উত্তেজিত কণ্ঠে উত্তর দেয়, “কি করব বল, প্রথম বার এত সুন্দরী একজন বান্ধবী পেয়েছি। ওর গলা না শুনলে থাকতে পারছি না।”
ঋতুপর্ণা কানের ওপরে ফোন চেপে ধরে, সকালে রান্না ঘরে ওর কানের সাথে আদির গাল ঠেকেছিল। ফোনের ভেতর দিয়ে সেই পরশ খুঁজে নিতে চেষ্টা করে ওর মন। আসলে সেটা কখনই সম্ভব নয় কিন্তু প্রেমিকার চিত্ত অনেক কিছুই ভেবে নিতে সক্ষম হয়। ঋতুপর্ণা গলা নামিয়ে বলে, “কি হয়েছে এতবার করে ফোন করছিস কেন?”
আদি নিচু গলায় ওইপাশ থেকে উত্তর দেয়, “তোমাকে আজকে ভারী মিষ্টি দেখাচ্ছে।”
ঋতুপর্ণার কান ছেলের কণ্ঠ স্বর শুনে লাল হয়ে যায়, লাজবতী লতার মতন লাজুক হেসে বলে, “আচ্ছা তাই নাকি। কিন্তু তুই যে কোন ফটো উঠালি না।”
আদি মিহি অথচ গভীর কণ্ঠে উত্তর দেয়, “চোখে আঁকা রয়েছে আর সেই ছবি একেবারে বুকে গেঁথে গেছে।”
ঋতুপর্ণা লাজুক হেসে উত্তর দেয়, “বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না একটু। খেলার প্রেমিকার চেয়ে সত্যি কারের একটা প্রেমিকা জোটালে কত ভালো হত। তোর এই সব কথা শুনে অতি সহজে পটে যেত।”
আদি মুখ ভার করে উত্তর দেয়, “সোজা সুজি বলে দাও ভালো লাগছে না আর ফোন করব না।”
ছেলের অভিমানী কণ্ঠ শুনে থাকতে পারে না ঋতুপর্ণা। ছেলেকে প্রবোধ দিয়ে বলে, “না না তোর সাথে ইয়ার্কি মারছিলাম।” একটু থেমে ছেলে সাবধান করে বলে, “কিন্তু আমার ওই কথাটা মনে রাখিস।”
আদি প্রশ্ন করে, “কোন কথা?”
ঋতুপর্ণা উত্তর দেয়, “আগে আমি মা, তারপরে......”
আদি ম্লান হেসে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ হ্যাঁ জানি, তুমি আমার মা তাই এত সহজে এত কথা বলতে পারছি। অন্য কেউ হলে কি আর একদিনে এত খোলামেলা হয়ে মিশতে পারতাম।”
তা সত্যি, ছেলে বলেই এত সহজে মিশে গেছে। অন্য কেউ হলে ওর হাত ধরতেই অথবা ওর গালে চুমু খেতেই কয়েক দিন লাগিয়ে দিত। ঋতুপর্ণা হেসে উত্তর দেয়, “সাবধানে বাড়ি ফিরিস। আকাশ মেঘলা করে আছে।”
আকাশ দুপুরের পর থেকেই মেঘলা, সেই দেখে আদির মন আবার ওঠে, “এই, না না, এই বৃষ্টিতে ঘরে কি আর মন টিকবে। চল আজকে সিনেমা দেখে আসি।”
বাইরে যাওয়ার কথা শুনে একটু ঋতুপর্ণার মন চঞ্চল হয়ে ওঠে। গতরাতে ছেলের সাথে যে রকম মাখামাখি হয়ে গেছে সেটা আশাতীত। সেই সাথে মন ভারাক্রান্ত হয়ে যায় নিজেদের আর্থিক অবস্থার কথা ভেবে। গত কাল অনেক কেনাকাটা হয়ে গেছে, অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। নাচের ক্লাস করে আর নাচের কোচিং করে এমন কিছু আয় হয় না। ওর বড় ফ্লাট দেখে সবাই ভাবে ওরা খুব বড়লোক কিন্তু আসলে ওদের আর্থিক অবস্থা সাধারন মধ্যবিত্ত মানুষের মতন। আর এই কারনেই ডিভোর্সের পরে এক প্রকার জোর করেই ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পাঠিয়েছিল। গলা ধরে আসে, মাসের শেষ হতে এখন বাকি। যদিও আদির খরচ অনেকটাই সুভাষ দেয় কিন্তু তাও ছেলের ছোট খাটো আবদার ওকেই মেটাতে হয়।
ঋতুপর্ণা নিচু কণ্ঠে ছেলেকে বুঝিয়ে বলে, “না রে গত কাল অনেক খরচ হয়ে গেছে। তার ওপরে আজকে বাড়িতে মেয়েরা নাচ শিখতে আসবে। পরে একদিন না হয় আবার বেরনো যাবে।”
আদি মায়ের ভারী গলা শুনে সংশয় বুঝতে দেরি হয় না। বড় কষ্ট হয় নিজেদের এই আর্থিক অবস্থার কথা ভেবে। বাবার ওপরে ভীষণ রাগ হয়, কেন যে বাবা মাকে ছেড়ে চলে গেল জানে না। তবে সেই সাথে একটা আশার আলো দেখা দেয় ওর মনে। বাবা যদি মায়ের পাশে থাকত তাহলে কি আর মাকে এইভাবে নিজের মতন করে ভালবাসতে পারত? কখনই না। বাবার কাছ থেকে মাকে ছিনিয়ে নিতে পারত না কখনই কিন্তু প্রদীপ বিশ্বাসের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে। মায়ের ভারাক্রান্ত কণ্ঠ স্বর শুনে আদি উত্তর দেয়, “প্লিস ওই ভাবে মন মরা হয়ে থেকো না। তোমার শুকনো মুখ দেখলে বুক শুকিয়ে যায়।”
আহা রে, ছেলেটা সত্যি ওর ব্যাথা বোঝে। চোখের কোনে এক চিলতে জলের রেখা দেখা দেয়। আড়ালে চোখের কোন মুছে হেসে বলে, “ছাতা নিয়ে গেছিস?”
আদি উত্যক্ত করার জন্য উত্তর দেয়, “ছাতা, সেটা কি জিনিস?”
লাঞ্চের সময় শেষ, এইবারে ক্লাস এইটের নাচের ক্লাস শুরু হবে। ঋতুপর্ণা ছেলেকে বলে, “এই আমার এখন ক্লাস আছে। বাকি কথা বাড়িতে হবে। সাবধানে আসিস।”
আদি ফোন ছেড়ে হাওয়ায় হাত ছুঁড়ে নেচে ওঠে। পকেটে বিশেষ টাকা নেই। এই মাসে যা ওর বাবা যা টাকা পাঠিয়েছিল সেটা সেমেস্টার খরচ দিতে আর কিছু বই কিনতে খরচ হয়ে গেছে। তারপরে আবার বন্ধুদের নিয়ে গত সপ্তাহে একটা সিনেমা দেখতে গিয়েছিল সেখানেও খরচ হয়ে গেছে। বাবার কাছে বেশি টাকা চাইতে খারাপ লাগে। গত বছরে একটা দামী নিকোন ডি এস এল আর ক্যামেরা ওর জন্মদিনে কিনে উপহার দিয়েছিল। তার দাম প্রায় চল্লিশ পঞ্চাশ হাজার টাকা। মায়ের কাছে বেশি টাকা চাওয়া যায় না। কলেজ করে নাচের ক্লাস করে, এত বড় বাড়ি সামলে, সারা মাসের খরচ খরচা সামলে তাও মাসে হাজার দেড় হাজার টাকার মতন হাত খরচ দেয়। পার্স খুলে দেখে একটা পাঁচশো টাকার নোট পরে আছে আর কয়েকটা দশ টাকার নোট। তনিমার সাথে প্রেম করার সময়ে তনিমার এই চাই সেই চাই আবদার থাকত। কিন্তু এই নতুন বান্ধবীর তেমন কোন আবদার নেই। উপরন্তু এই বান্ধবী ওর একদম নিজের, এর জন্য একটা কিছু কিনে নিয়ে যেতেই হয়। কলেজের সেকেন্ড হাফ কোনোরকমে ঘড়ি দেখে আর আকাশ দেখে কাটিয়ে দেয় আদি। বিকেল হতে হতেই আকাশের বুকে মেঘের গুরগুর চড়চড় ধ্বনি মুখরিত হয়ে ওঠে। ছাতা নিয়ে কোনোদিন আসে না আদি, তাই বৃষ্টি হওয়ার আগেই বেড়িয়ে পড়ল কলেজ থেকে। বাস স্টপে এসে বাড়ির জন্য বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রইল।
এমন সময়ে মায়ের ফোন আসে, “তুই কি কলেজ থেকে বেড়িয়ে পড়েছিস?”
আদির মন চঞ্চল হয়ে ওঠে মায়ের গলা শুনে, এখুনি মাকে কাছে পেলে যেন জড়িয়ে ধরবে। অসীম চাঞ্চল্য সংযত রেখে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ বেড়িয়ে পড়েছি, তুমি কি বাড়িতে না বাইরে?”
ঋতুপর্ণা অনেক আগেই বাড়ি ফিরে গেছে। বিকেলে নাচ শিখতে বেশ কয়েকটা মেয়ে আসে ওর কাছে। তাদের নাচ শেখাতে ব্যাস্ত ছিল। তার মাঝে আকাশের গুরগুর চড়চড় আওয়াজ শুনে ছেলের জন্য মন কেমন করে ওঠে। উদ্বেগ মাখা কণ্ঠে ছেলেকে বলে, “তুই বললে একদম শুনিস না। দেখ এখুনি বৃষ্টি আসবে।”
আদি মাকে শান্ত করে উত্তর দেয়, “এত বছরে বৃষ্টি কি তোমার ছেলেকে তোমার কাছে যাওয়ার জন্য আটকাতে পেরেছে যে আজকে পারবে।” ঠিক তখনি ঝিরিঝিরি বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। লোকজনের দৌড়াদৌড়ি লেগে যায়। দেখতে দেখতে বাস স্টান্ডের পাশের গাছের তলা ভরে ওঠে। ব্যাগ মাথায় করে মাকে উত্তর দেয়, “ভেবেছিলাম বাস এসে পরবে কিন্তু বৃষ্টিটা সত্যি শয়তান। ঠিক অসময়ে এসে যায়।”
ঋতুপর্ণা ছেলের কথা শুনে বলে, “এবারে ভেজ আর কি করবি। জ্বর হলে আমি ছাড়া আর কে আছে তোকে দেখবে।”
আদি গলা নামিয়ে উত্তর দেয়, “তুমি ছাড়া আমি কানা, ডারলিং।”
আবার সেই ডারলিং শব্দ শুনে ঋতুপর্ণার বুকের রক্ত চঞ্চল হয়ে ওঠে। ছেলেকে উত্যক্ত করে বলে, “কলেজ শেষ হলেই তোকে বিয়ে দিয়ে দেব আর আমার ছুটি।”
আদি মজা করে উত্তর দেয়, “ইসসস এই ত সবে মাত্র একটা সুন্দরী বান্ধবীর দেখা পেলাম। কয়েকদিন একটু মজা করে নেই তারপরে দেখা যাবে। আর আমার কপালে কোন মেয়ে জুটবে না বুঝলে।”
ঋতুপর্ণা চোখের তারা ঘুরিয়ে উত্তর নিচু কণ্ঠে দেয়, “আচ্ছা বাবা আচ্ছা। ভালো মতন বাড়ি ফিরে আয়।”
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভেজা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। অন্যদিন হলে বৃষ্টিতে ভিজতে খুব খারাপ লাগে তবে সেদিন বৃষ্টিতে ভিজতে বড় ভালো লাগে। ভিজে জামা কাপড়ে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ওর গত রাতের কথা মনে পরে যায়। আর তখনি বৃষ্টি আর বৃষ্টি বলে মনে হয় না। ওর শরীরে এক অদ্ভুত আগুনের দেখা দেয়। মায়ের আঁচল, মায়ের চুলের মাদক গন্ধ, মা নরম শরীর ওকে বেশি করে টানে। বাড়ি যাওয়ার বাস চলে আসতেই ভিড় বাসে ঠেলে উঠে পরে। যে করে হোক এই বাসে না উঠতে পারলে তাড়াতাড়ি মায়ের কাছে যাওয়া হবে না। সকাল থেকে কলেজ করে ক্লান্ত হয়ে গেছে।
নির্দিষ্ট বাস স্টপেজে নেমে দেখে তখন বৃষ্টি থামেনি। এইবারে হেঁটেই বাড়ি ফিরতে হবে। একে বারে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে কিছুতেই মন মানে না। বৃষ্টি মাথায় করে নিয়ে একটা কেক প্যাটিসের দোকানে ঢুকে পরে। বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য অনেক লোক সেই দোকানে আশ্রয় নিয়েছে তাতে দোকানির বিক্রি বেড়ে গেছে। ছোট বেলা থেকে ওর খুব চকোলেট খেতে পছন্দ, সেটা অবশ্য ওর মায়ের দৌলতে পেয়েছদে। মাও চকোলেট খেতে খুব ভালোবাসে বিশেষ করে ডার্ক চকোলেট হলে কথাই নেই। দোকান থেকে দুই খানা বড় ডার্ক ফ্যান্টাসি চকোলেট কেনে আর দুটো চিকেন প্যাটিস। দোকানের পাশেই রাস্তার ধারে একটা ফুলের দোকান। বৃষ্টির ফলে প্লাস্টিক দিয়ে সব ফুল ঢেকে দিয়েছে দোকানি। গোলাপ কিনবে না রজনী গন্ধা ভেবে পায় না। মায়ের দুটো ফুল বেশ পছন্দের তবে মা হলদে ফুল বেশি পছন্দ করে। বেশ কয়েকটা হলদে ফুলের সাথে বেশ কয়েকটা রজনীগন্ধার স্টিক নিয়ে একটা মোটামুটি আকারের একটা তোড়া বানিয়ে কিনে নেয়। এতেই প্রায় দুশো টাকা খরচ হয়ে যায়। টাকার দিকে দেখে না, মাসের শেষে একটু টানাটানি হবে হয়ত কিন্তু সেটা ঠিক সামলে নেবে। আর নিতান্তই লাগলে মায়ের পার্স জিন্দাবাদ।
ভিকে জামা কাপড় গায়ের সাথে লেপটে ওর শরীরের উত্তাপ এক প্রকার শুষে নিয়েছে। একটা সিগারেট পেলে বড় ভালো হয় কিন্তু নিরুপায়। এই মুষলধার বৃষ্টিতে কি আর সিগারেট খাওয়া যায়। তার ওপরে এক হাতে ফুলের তোড়া আর অন্য হাতে প্যাটিসের প্লাস্টিক। এক প্রকার কাক ভিজে হয়েই বাড়ি ফিরল আদি। ফ্লাটে ঢুকতেই ওদের গার্ড, নিমাই ওকে দেখে হেসে বলে একদম কাকের মতন ভিজে গেছে। নিমাইয়ের সাথে বেশ ভালোই হৃদ্যতা, ওর গাড়ি ধুয়ে দেয় রোজ সকালে। নিমাইকে দেখে আদি একটা সিগারেট ধরাতে বলে। নিমাই মিচকি হেসে ওর দিকে একটা বিড়ি ধরিয়ে এগিয়ে দেয়। মাসের শেষের দিকে মাঝে মাঝেই বিড়িতে নেমে আসতে হয়। তবে ওর পড়ার টেবিলের ড্রয়ারে একটা দুটো বাড়তি সিগারেট লুকিয়ে রাখা থাকে। অগত্যা শরীর গরম করার জন্য নিমাইয়ের কাছ থেকে বিড়ি নিয়ে কয়েকটা টান মেরে জিজ্ঞেস করে গাড়ির কথা। নিমাই উত্তরে জানিয়ে দেয় ওর মা অনেক আগেই ফিরে এসেছে। যেহেতু মা বেশ রূপসী আর সবার সাথে মিশে যায় তাই এই ফ্লাট বাড়ির সবার আদরের দিদিমনি।
ওর হাতে ফুলের তোড়া দেখে নিমাই ইয়ার্কি মেরে বলে, “নতুন আমদানি নাকি আদিদা।”
আদিও ইয়ার্কি মেরে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ রে আজকেই পটালাম আর আজকেই ফুল কিনলাম।”
নিমাই আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার তুমি ফুল কিনলে আর বাড়িতে নিয়ে এলে?”
আদি হেসে উত্তর দেয়, “বৃষ্টির জন্য আর দেওয়া হল না তাই বাড়িতে নিয়ে এলাম।”
নিমাই ভুরু নাচিয়ে ওকে বলে, “যাও যাও, তাড়াতাড়ি বাড়ি যাও, না হলে দিদিমনি মেরে ছাল গুটিয়ে দেবে।”
লিফটে উঠে সোজা চারতলায়। ওর কাছে বাড়ির একটা চাবি থাকে। দরজায় কান পেতে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ বাড়ির ভেতরের আওয়াজ শোনে। বসার ঘরের পাশের ঘরে ডেকে একটা শাস্ত্রিয় সঙ্গীতের তাল বেজে চলেছে, সেই সাথে মায়ের নাচের বোলের আওয়াজ আর পায়ের তোড়ার আওয়াজ কানে ভেসে আসে। উফফফ, মায়ের ওই রাঙ্গা ফর্সা নরম পায়ের পাতায় চুমু খেতে ইচ্ছে করে। ফর্সা বাঁকা রোমহীন পায়ের গুলি বেয়ে ঠোঁটের ভিজে দাগ ফেলতে ইচ্ছে করে। পেলব জঙ্ঘার ওপরে হাত বুলিয়ে আদর করতে ইচ্ছে করে। কবে যে ওর কপালে এই সৌভাগ্য ঘটবে।