26-09-2020, 03:43 PM
(26-09-2020, 02:32 PM)যোনিগন্ধা Wrote:আমি যোনিগন্ধা
না, আমি যাজ্ঞসেনী নই।
যাজ্ঞসেনীর মতো
কোনো যজ্ঞের পবিত্র আগুন থেকে
আমার জন্ম হয়নি।
শুনেছি জন্ম মুহূর্তে
মায়ের নাড়ির সাথে নিজেকে
জড়িয়ে আমি নিজের জীবনের সঙ্গে
মায়ের জীবনকেও বিপন্ন করে ফেলে ছিলাম।ডাক্তার আর যমের দড়ি টানাটানি খেলা
চলেছিল অনেক্ষণ।
মায়ের সেই আদিম অন্ধকার মাখা যোনি পথে
মৃত্যুর সঙ্গে জীবনের লড়াইয়ে
জন্মের প্রতীক্ষা করতে করতে
আমার শরীরে বোধহয় সারা জীবনের জন্য
থেকে গেছে যোনিগন্ধ।
তবুওতো
জীবন মৃত্যুর লড়াইয়ে
মৃত্যুকে হারিয়ে
এই রূপ-রস-গন্ধ মাখা
এই পৃথিবীতে
আমি জন্ম নিয়েছিলাম।
না, আমি যাজ্ঞসেনী নই।
কোনো যজ্ঞের পবিত্র আগুন থেকে
আমি জন্ম নিইনি।
আর নিলেই বা কি হতো?
সুতীক্ষ্ণ শলাকায় মাছের চোখ বিঁধে আমাকে জিতে নিতে কোনো বীর।
তারপর মাতৃআজ্ঞা মেনে
আমার যোনিতে ভাগ বসাতো বাকি চার ভাই।
আমাকে বাজি রেখে জুয়া খেলতো।
আমার স্বামী,
এক সভা মানুষের সামনে আমার বস্ত্র হরণ করতো কোনো দুঃশাসন,
রোমস উরু দেখিয়ে তাতে বসবার আহ্বান জানাতো কোনো দুর্যোধন।
আর আমার অপমান দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়তো কোনো কর্ণ।
আমার অন্ধ শ্বশুরের অক্ষম বিলাপ সেই হাসিতে চাপা পড়ে যেতো।
আমি জানি সৃষ্টিকর্তার বিচিত্র নিয়মে
আমি নরকের দ্বার,
মাসে পাঁচদিন আমার শরীর থেকে বের হয় দূষিত রক্ত।
সৃষ্টিকর্তা আমাকে পুরুষের পাঁজর থেকে তৈরি করেছেন, তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির দাসী হিসেবে।
জন্মজন্মান্তরের মেধাবুদ্ধিহীন এক প্রণালী হিসেবে।
আমার শরীর থেকে উৎসারিত যোনিগন্ধ
চির মার্জিত পুরুষকে লম্পট করে তুলতে পারে।
রাস্তায়, বাসস্ট্যান্ডে, চলন্ত ট্রেনে আমার গন্ধে তাদের তাদের চিরায়ত সুশীল পুরুষাঙ্গ অসভ্য হয়ে উঠতে পারে।
তাই আমি নিজেকে অন্তঃপুরে লুকিয়ে রাখি।
বের হলেও আপাদমস্তক নিজেকে মুড়ে রাখি
*ে।
না, আমি যাজ্ঞসেনী নই।
জজ্ঞের কোনো পবিত্র আগুন থেকে
আমার জন্ম হয়নি।
আর হলেই বা কি হতো
নিদাঘে অথবা বসন্ত ঋতুতে,
কোলাহলে বা প্রেমময় নিভৃতে
দিবসে অথবা রজনীতে,
অথবা মসীবর্ণ রাতে
কিংবা
ছায়া জ্যোৎস্নায়
সৃষ্টিকর্তার মায়া কিংবদন্তিতে
আমরা যোনিগন্ধা সবাই।
____
কে বলে তুমি কন্যা, কে বলে তুমি জায়া,কে বলে তুমি জননী।
তুমি যে এ বিশ্ব চরাচরের অপার
বাঙ্ময় বিষ্ময়, তুমি যে নারী।আজ নয়, আজ নয়,
সভ্যতার সেই যুথবদ্ধতার আদিম সময় সরনি ধরে তুমি ই করেছ ধারণ, তুমি ই করেছ বহন, তুমি ই রেখেছ বেঁধে এই সংঘবদ্ধতার চন্দ্রিল ছায়াপথে।
তুমি ই বুঝিয়েছ সমাজ কে মূল্যবোধ তোমার ওই আরক্তিম চেতনা দিয়ে।
রেখেছ তোমার চূড়ান্ত দায়বদ্ধতার তীব্র বহি:প্রকাশ সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে।
তবুও হায় ছায়াবৃতা রেখে দিল তোমায় সেই কৃপণ আলোর অন্ত:পুরে।
আজ ও কি সমাজ বুঝবে না, তোমার দিয়ে যাওয়া নিয়ত ঘটমান সময়ের স্রোতে মূল্যবোধ এর শিক্ষা???????
গর্বিতা নারী।।।।।
অমৃতের সন্ধানে - নিজের মনের নগ্ন নিস্তব্ধতাকে একটু কথা বলতে দাও।