Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
সাপের কোঠর (#০৩)

ময়নাকে এই ঝামেলার মাঝে টানতে চাইছিল না কিন্তু নিরুপায়, এ ছাড়া ওর কাছে আর কোন রাস্তা খোলা নেই ওর ভাইকে ওই বাড়ি থেকে বের করার জন্য। দানার সাথে ওর ভাই বের হবে না, সোজা নয়নাকে নিয়ে সিমোনের হাতে তুলে দেওয়া যাবে না। একমাত্র রাস্তা ওর ভাই। যদি সিমোনের হাতে ওর ভাই পরে তাহলে ভাইকে বাঁচাতে নিশ্চয় নয়না, সিমোনের কাছে ধরা দেবে।

এতদিন পরে দরজায় দানাকে দেখে ময়না অবাক হয়ে যায়। নয়নার গাড়ি চালানোর সময়ে একবার শুধু ফারহান আর ও মিলে ময়নার সাথে সঙ্গমে মেতেছিল, তারপরে ফারহান যদিও মাঝে মাঝে ময়নার কাছে আসতো, তবে দানা কোনোদিন আর আসেনি। ওকে দেখেই একটু অবাক হয়ে যায়। আসার কারন জিজ্ঞেস করেলে দানা জানায় বিশেষ প্রয়োজনে এসেছে। ময়নার প্রেমিক কৌশিক সেদিন বাড়িতেই ছিল। দানার সাথে আগে পরিচয় ছিল না, নয়না পরিচয় করিয়ে দেয় পুরানো বন্ধু বলে। দানার নাম শুনেই কৌশিক ওকে চিনতে পারে। মিচকি হেসে ওকে বলে যে ওর জন্য ময়নাকে হাতে পেয়েছে। সেই শুনে বেশ কিছুক্ষণ হাসাহাসি চলে।

কৌশিক ওর পিঠে চাপড়ে বলে, "তুমি না তুই না আপনি কি বলব ভেবে পাচ্ছি না। আজকাল অনেক বড়লোক হয়ে গেছিস। টিভিতে খবরের কাগজে এই কয়দিন তোর নামে বেশ খবর ছাপাছাপি হল।"

কৌশিককে "তুই" বলেই সম্বোধন করে দানা, "আরে না না, সেই রকম কিছু নয় রে। সব সময়ে মিথ্যের জয় হবে সেটা মেনে নিতে একটু কষ্ট। যাই হোক যেটা আসল কাজে এসেছিলাম সেটা এখন বলি।"

ময়নাকে সব কিছু খুলে বলতেই ময়নার চক্ষু চড়ক গাছ। দানা বলে কি? ওই মন্দ বুদ্ধি বুবাইয়ের সাথে সহবাস করে যাচ্ছে বটে, তবে একেবারে প্রেমের নাটক করতে হবে শুনে একটু ঘাবড়ে যায়। বর্তমান ঝামেলার জন্য বেশ কিছুদিন নয়নার বাড়িতে যাওয়া হয়নি। এরমাঝে কি ভাবে বুবাইকে বাড়ি থেকে বের করে আনবে সেটাই চিন্তার। কিন্তু নয়নাকে ধরতে হঠাৎ বুবাইয়ের সাহায্যের কি দরকার পড়ল সেটা ময়না বুঝতে পারল না। দানা ওকে বুঝিয়ে বলে নয়নার প্রান ভোমরা ওর ভাই বুবাই। বুবাই যদি সিমোনের হাতে পড়ে, তাহলে দিগ্বিদিক জ্ঞান শুন্য হয়ে যাবে নয়না, আর সিমোনের কাছে ধরা দেবে। ময়নাকে শুধু মাত্র বুবাইকে কোথাও নিয়ে যাবার ছলে ওই বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসতে হবে আর সোজা সিমোনের হাতে তুলে দিতে হবে। অবশ্য তার জন্য মোটা টাকা দেবে দানা। ময়না টাকা চায় না, ম্লান হেসে ওর হাত ধরে জানিয়ে দেয় দানা যা বলবে সেটা করতে রাজি। তবে দানা এটাও জানায়, বুবাইকে ওই বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসার পরে ওকে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হবে। কৌশিক জানিয়ে দেয়, দানার কথা মতন বুবাইকে ওর হাতে তুলে দিয়ে ওরা কয়েকদিনের জন্য গা ঢাকা দিয়ে থাকবে।

দানা নিজেকে এর মধ্যে জড়াতে চায় না কিন্তু ময়নাকে আর সিমোনকে বলে এসেছে। কি ভাবে সরাসরি না গিয়ে বুবাইকে সিমোনের হাতে তুলে দেওয়া যায় সেটাই চিন্তায় মগ্ন। রাতের খাওয়ার পরে বারান্দায় বসে একটা সিগারেট ধরিয়ে সেই অঙ্ক কষে।

এমন সময়ে কাঁধের ওপরে প্রেয়সীর নরম হাতের ছোঁয়া পেয়ে সম্বিত ফিরে পায়। কাঁধ ঘাড় নরম আঙ্গুল দিয়ে টিপতে টিপতে মহুয়া ওকে জিজ্ঞেস করে, "শেষ পর্যন্ত বুবাইকে কেন এই ঝামেলার মাঝে টেনে আনছো?"

শেষ পর্যন্ত দানাকে সত্যি উজাগর করতেই হয়, না হলে মহুয়া কিছুতেই এই কাজে ওর সাথে সাথ দেবে না। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে মহুয়াকে বলে, "যেদিন বিমানের খুন হল, সেদিন রাতে ওদের মুখে আমি শুনেছিলাম যে ওরা নাকি মেয়েকে অপহরন করতো।"

কথাটা কানে যেতেই মহুয়ার শরীর কেঁপে ওঠে। মুখ চাপা দিয়ে আঁতকে ওঠে, "কি বলছো?"

দানা ওর হাত ধরে পাশে বসিয়ে বলে, "হ্যাঁ, আর এই নয়নার সাহায্যে রুহিকে ওরা অপহরন করাতো, তাই নয়না আমাদের সাথে এতদিন ভালো সম্পর্ক রেখেছিল।"

মেয়েকে অপহরন করার কথা শুনেই মহুয়ার গায়ে কাঁটা দিয়ে। দাঁতে দাঁত পিষে ছলছল চোখে দানার দিকে তাকিয়ে নির্বাক হয়ে বসে থাকে। কি বলবে? কার দোষে ওর মেয়েকে এর মাঝে টেনে আনা হয়েছে? শেষ পর্যন্ত মাথা ঝাঁকিয়ে দানাকে বলে, "ওর রক্ত আমার চাই জিত।" দানার বুকের ওপরে কিল মেরে অস্ফুট চেঁচিয়ে ওঠে, "নয়না আর সিমোনের রক্ত আমার চাই, জিত।"

দানা ওকে জড়িয়ে ধরে বসে। বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে অনেকক্ষণ নিথর হয়ে পড়ে থাকে মহুয়া। ওর কপালে কি একটুকু শান্তি উপরওয়ালা লিখে যায়নি? ক্ষুধার্ত হায়নার কবল থেকে বেঁচে এসে কি শেষ পর্যন্ত সাপের কবলে পড়লো? কিন্তু এই বুকের মাঝে যতক্ষণ মুখ গুঁজে থাকে ততক্ষণ ওর হৃদয় জানে এই পৃথিবীতে কারুর সাধ্য নেই ওকে এই বুকের ওপর থেকে কেড়ে নিয়ে যায়।

দানা ওর হাত ধরে কোলের ওপরে বসিয়ে বলে, "কি করে বুবাইকে সিমোনের হাতে তুলে দেব সেটাই ভাবছি।"

একহাতে মহুয়ার কোমর জড়ানো, অন্য হাতের আঙ্গুলে সিগারেট। ধুয়ো নাকে যেতেই খুক খুক করে কেশে উঠে রেগে যায় মহুয়া, "আগে সিগারেট ফেলো।"

অগত্যা আধা খাওয়া সিগারেটটা দুর করে ফেলে দিতে হয়। কি করা যাবে কোলের প্রেয়সীকে রাগাতে পারে না যে।

মহুয়া চোখ মুছে ওর গলা জড়িয়ে বলে, "সরাসরি যেতে হবে না। তুমি সিমোনকে ময়নার খবর দিয়ে বল, সোজাসুজি ওর সাথে এই বিষয়ে কথা বলুক। সিমোনকে এটা বল, যেন ময়নাকে খুলে কোন বিষয়ে না জানায়। শুধু এটা জানাক যে একবার বুবাইকে দেখতে চায়। সেই সাথে তুমি সিমোনকে বল, যখন ময়না বুবাইকে নিয়ে সিমোনের কাছে যাবে, তখন সিমোন ময়নার কাছ থেকে বুবাইকে ছিনিয়ে নেবে। ব্যাস তাহলে তুমি এই প্রেক্ষাপটে কোথাও থাকবে না। সিমোনের কাজ হাসিল হয়ে যাবে আর তোমার কাজ হাসিল হয়ে যাবে। শুধু তোমাকে ময়নার ওপরে একটু নজর রাখতে হবে যাতে সিমোন ওকে না আক্রমন করে বসে।"

দানা মাথা নাড়িয়ে মহুয়াকে এক গাদা চুমু খেয়ে বলে, "তুমি না থাকলে আমার কি হতো বলো তো?"

মহুয়া মিচকি হেসে কানেকানে বলে, "এইখানে একা একা বসে ছিঁড়তে আর আটি বাঁধতে।" বলেই খিলখিল করে হেসে ফেলে।

ওই হাসি শুনে দানা আর থাকতে পারে না। মহুয়াকে কোলে তুলে ওদের মিলন কক্ষে ঢুকে পড়ে।

পরদিন সকালেই সিমোন ওকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে কবে দানা, নয়নার ভাইকে ওর হাতে তুলে দেবে। মহুয়ার সুচতুর পরিকল্পনা দানা সিমোনকে খুলে বলে। দানা জানায়, স্মিতা নামের এক মডেলের সাথে নয়নার ভাইয়ের বেশ ভালো সম্পর্ক। তাকে টাকা দিয়ে হাত করতে পারলে অতি সহজে বুবাইকে নিজের কবলে করা যাবে। একবার বুবাই সিমোনের কবলে পড়লে নয়নাকে বাগে ফেলা অতি সহজ হয়ে যাবে। এই পরিকল্পনা সিমোনের মনে ধরে যায়, জানিয়ে দেয় স্মিতা নামক মডেলের সাথে এই বিষয়ে কথা বলবে। সেই সাথে দানা এটা জানিয়ে দেয় যেহেতু স্মিতা বাইরের লোক, সিমোন যেন সব কিছু খলাখুলি ওর সাথে আলোচনা না করে বসে। সিমোনে সাঙ্ঘাতিক ধূর্ত মহিলা, দানাকে জানিয়ে দেয় ওর মাথায় সেই টুকু বুদ্ধি আছে কি ভাবে স্মিতার সাথে কথা বলবে আর কি ভাবে বুবাইকে বের করার পরিকল্পনা করবে। দানা মনে মনে খুব খুশি, এক এক করে ওর শত্রু সংখ্যা কমছে, তবে এখন ওর আসল শত্রু, নাসরিন আর কঙ্কনার হদিস পাওয়া গেল না। সিমোনকে জিজ্ঞেস করলেই বলে আগে বুবাই তারপরে ওদের খবর দেবে।

সেদিন বিকেলে ময়না ওকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে সিমোন ওকে ফোন করেছিল আর বুবাইকে নিয়ে বেড়াতে বের হবার কথা বলেছে। দানা ওকে বলে খুব সন্তর্পণে যেন বুবাইকে নিয়ে বের হয়, ঘুনাক্ষরেও যদি নয়না টের পেয়ে যায় যে এই ঘুরতে বের হবার পেছনে কোন দুরাভিসন্ধি আছে, তাহলে ময়নাকে মেরে ফেলতে ওর হাত কাঁপবে না একটুও। সেই সাথে এটাও জানায় কয়েকদিন ওর সাথে ভালো ব্যাবহার করতে যাতে বুবাই অথবা নয়নার কোন সন্দেহ না হয়। তারপরে চারদিন পরে ময়না যেন বেড়ানোর ছল করে বুবাইকে সঙ্গে নিয়ে বেড়িয়ে আসে। কথা মতন কাজে লেগে পড়ে ময়না।

চারদিন চাপা উৎকণ্ঠায় কেটে যায় মহুয়া আর দানার। সমুদ্র আর সুমিতার চলে যাওয়ার দুঃখ ভোলার জন্য নয়না কাজের মধ্যে ডুবে যায়। ময়না রোজদিন নয়নার বাড়িতে গিয়ে বুবাইয়ের সাথে বেশি করে সময় কাটাতে শুরু করে দেয়। সিমোন ওই দিকে আহত নরখাদক বাঘিনীর মতন বুবাইয়ের অপেক্ষায় দিন গোনে। ময়নার ঘন ঘন আসা যাওয়াতে নয়না একটু খুশি, এই ঝামেলার ফলে বুবাই খুব ভয় পেয়ে গেছিল, সব সময়ে নিজের ঘরের মধ্যে বন্দি থাকতো। ময়না খবর দেয় যে বুবাইকে নিয়ে বের হতে এইবারে কোন অসুবিধে নেই।

সেদিন সকালে সিমোনকে ফোন করে জানিয়ে দেয় যে ফাঁদ তৈরি, শুধু সিমোন বলে দিক কোথায় বুবাইকে নিয়ে আসতে হবে। উত্তরে সিমোন জানিয়ে দেয়, মোহনার দিকের বড় রাস্তায় উঠে বেশ কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পরে একটা সাদা রঙের গাড়ি দেখতে পাবে। বুবাইকে যেন গাড়িতে ছেড়ে ওরা চলে যায়। দানা জানিয়ে দেয়, স্মিতার সাথে আরো একজন থাকবে, আর কঙ্কনার খবর না পেলে বুবাইকে ওর হাতে তুলে দেবে না। যদি সিমোন কোন ছলনা করতে চায় তাহলে সোজা পুলিসকে ফোন করে ডেকে নেবে ওইখানে।

সব শুনে সিমোনে কুটিল এক হাসি দিয়ে বলে, "ইসস দানা, বড় ভুল করছ। পরিকল্পনা তোমার, আমি মানছি আমি স্মিতার সাথে দেখা করেছি কিন্তু তুমি যা পারো সেটা আমি পারি না ভাবলে কি করে। তোমার পরিকল্পনা রীতিমতন আমার মোবাইলে টেপ করা আছে। সুতরাং বেগরবাই করলে ওই টেপ পুলিসের হাতে চলে যাবে। নাও নাও দানা, নিজেদের মধ্যে বেশি মারামারি করে লাভ নেই। যত তাড়াতাড়ি পারা যায় নয়নাকে হাতের মুঠোর মধ্যে আমার চাই।"

দানা বুঝতে পেরেছিল এইরকম কিছু একটা হতে পারে। যে পথে সিমোনকে আক্রমন করতে চেয়েছিল সেই পথ ধরে যে সিমোন এগোবে না সেটা বলে দিতে হয় না।

নয়না নিজের শুটিংয়ে বেড়িয়ে গেছে। পরিকল্পনা মাফিক ময়না ওর বাড়িতে বিকেলে পৌঁছে যায়। এই কয়দিনে বুবাইকে রোজ স্বপ্ন দেখিয়ে গেছে যে একটা বড় পার্কে বেড়াতে নিয়ে যাবে। যদিও নয়নার বিশেষ ইচ্ছে ছিল না, তবুও বুবাইয়ের জেদের বসে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে যায়। স্মিতাকে ভরসা করা যায় না, তাই নিতাকে সঙ্গে যেতে নির্দেশ দেয়। নয়নার বাড়ি থেকে, বুবাই আর নিতাকে নিয়ে বের হতেই দানাকে ফোন করে দেয় ময়না। ওরা একটা ট্যাক্সিতে উঠে মোহনার দিকের বড় রাস্তা ধরে।

পকেটে পিস্তল, মহুয়ার কপালে একটা চুমু খেয়ে বেরিয়ে পড়ে দানা। নিজের গাড়ি নেয় না কারন নিতা আর সিমোন দুইজনে ওর গাড়ি ভালো ভাবেই চেনে। শক্তিকে দিয়ে অন্য একটা গাড়ি আনিয়ে নেয়। ময়নার বাড়ি থেকে কৌশিককে তুলে নিয়ে মোহনার দিকের বড় রাস্তা ধরে।

ময়না ওকে ট্যাক্সির নাম্বার মোবাইলে পাঠিয়ে দিয়েছিল, তাই বড় রাস্তায় পড়ার পরে ট্যাক্সি অনুসরন করতে ওদের অসুবিধে হয় না। ট্যাক্সির মধ্যে ময়না, নিতা আর বুবাই আর পেছনের গাড়িতে শক্তি, কৌশিক আর দানা। দানা শক্ত হাতে গাড়ি চালাতে চালাতে ঘনঘন সিগারেট টেনে চলে, বুকের মধ্যে চাপা উত্তেজনা। ট্যাক্সি হুহু বেগে মোহনার দিকে এগিয়ে চলেছে, বেশ কয়েক কিলোমিটার পার হয়ে যাওয়ার পরেও কোন সাদা রঙের গাড়ির দেখা নেই। দানার সন্দেহ হয়, একি হলো? নিতার হয়ত সন্দেহ হয়ে গেছে আর নয়নাকে ফোনে সব জানিয়ে দিয়েছে। নাকি সিমোন ওদের দেখে ফেলেছে আর তাই কোথাও গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। সামনে পেছনে প্রচুর বাস ট্রাক গাড়ি ঘোড়া, এর মাঝে যদি ওদের কেউ অনুসরন করে চলে তাহলে বোঝার উপায় নেই।

বেশ কিছুপরে ট্যাক্সিটা হঠাৎ এক বাঁক নিয়ে একটা গ্রামের রাস্তায় নেমে পড়ে। দানা চমকে যায়, কি হল ব্যাপারটা। কৌশিক আর দানা মুখ চাওয়াচায়ি করে, এমন কথা ছিল না। সিমোনকে ফোন করবে কি করবে না। সিমোনকে ফোন করলে জেনে যাবে যে পেছনে অনুসরন করছে, সেটা জানাতে চায় না। আড়াল করে দেখতে চায় কতদুর কি হতে চলেছে। দানাও ওই গ্রামের রাস্তায় গাড়ি নামিয়ে দেয়। বেশ দুর থেকে গাড়িটাকে অনুসরন করতে করতে এগিয়ে চলে। নিতা নিশ্চয় এতক্ষণে ময়নার দুরাভিসন্ধি টের পেয়ে গেছে। একটু দুর যেতেই ট্যাক্সির সামনে একটা কালো রঙের গাড়ি এসে দাঁড়ায়। দানা দূরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে হাতে পিস্তল নিয়ে পাশের মাঠে নেমে পড়ে। ধানের মধ্যে গা ঢাকা দিয়ে ট্যাক্সির দিকে তিনজনে এগিয়ে যায়। ওদের কানে মেয়েলী কণ্ঠস্বরের চেঁচামেচির আওয়াজ ভেসে আসে। কয়েকজন দুষ্কৃতি গাড়ি থেকে নেমে ট্যাক্সির দিকে বন্দুক উঁচিয়ে এগিয়ে যায়। সবকটা লোকের মুখ কালো জালের মুখোশে ঢাকা, কাউকে চেনার জো নেই। প্রথমে ট্যাক্সির ড্রাইভারকে গাড়ি থেকে বের করে মাথার পেছনে এক ঘা মেরে অজ্ঞান করে দেয়। তারপরে পেছনের দরজা খুলে তিনজনকে টেনে বের করে। মুখোশে ঢাকা লোক গুলো এদিক ওদিকে তাকিয়ে ফোনে তুলে কারুর সাথে কিছু কথা বলে। দানা হলপ করে বলতে পারে ওইপাশের ব্যাক্তি, সিমোন ছাড়া আর কেউ নয়। ময়না আর নিতার চোখ বেঁধে, নাকের কাছে কিছু একটা শুকিয়ে দিয়ে অজ্ঞান করে দেয়। বুবাইকে অজ্ঞান করে দিয়ে কালো গাড়ির মধ্যে ঢুকিয়ে দুষ্কৃতীরা অন্যপাশের রাস্তা ধরে চলে যায়। দানার কেমন খটকা লাগে, সিমোনে বলেছিল সাদা রঙের গাড়ি বড় রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবে, সেটা না হয়ে একটা কালো রঙের গাড়ি গ্রাম ছাড়িয়ে মাঠের মাঝে।

কৌশিক এক দৌড়ে ময়নার কাছে গিয়ে ওর চোখের বাঁধন খুলে দেয়। জল আনা হয়নি, কোন রকমে ময়নাকে কোলে তুলে শক্তির আনা গাড়িতে বসিয়ে ওরা চলে যায়। ট্যাক্সি চালক আর নিতাকে রাস্তার ধারে অজ্ঞান অবস্থায় ছেড়ে দেয় দানা। এই কিডন্যাপের খবর অন্তত সিমোনের আগে নয়নার কানে পৌঁছান উচিত। গাড়ি করে সোজা ওরা মহানগর ফিরে নদীর ওপাড়ে বড় রেলের স্টেশানে চলে যায়।

দানা একটা টাকা ভর্তি ব্যাগ ময়নার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, "তোরা কয়েক দিনের জন্য গা ঢাকা দিয়ে থাক। আমাকে যেন ভুলেও ফোন করিস না আর পারলে নিজেদের ফোন এই কয়দিনে ব্যাবহার করিস না। খবরের কাগজে চোখ রাখিস, এই ঝামেলার খবর কাগজে ছাপা হবেই সুতরাং ওই বুঝে তোরা আবার এই মহানগরে ফিরে আসিস।"

কৌশিক আর ময়নাকে ট্রেনে উঠিয়ে দানা বাড়ি ফিরে আসে।

চরম উৎকণ্ঠায় মহুয়ার জিভ শুকিয়ে, বারেবারে ঘর বাহির করে দানার অপেক্ষায়। বাড়ি ফিরেই মহুয়াকে সম্পূর্ণ ঘটনাবলী জানিয়ে নিজের অস্থিরতা ব্যাক্ত করে। এটা আবার সিমোনের কোন নতুন চাল, জায়গাটা ওদের বাগান বাড়ি থেকে অনেকদুরে, সাদা রঙের গাড়ির জায়গায় কালো রঙের গাড়ি। সিমোনে অথবা মোহনকে এই সময়ে ফোন করা ঠিক হবে না। দরকার পড়লে ওরা নিজেরাই ফোন করবে। দানা যে এর সাথে জড়িত সেটা যদি পুলিস জানতে পারে তাহলে বিশাল সমস্যা দেখা দেবে।

একটু পরেই মহুয়ার ফোন বেজে ওঠে। ওইপাশ থেকে নয়না আর্তনাদ করে ওঠে, "ভাইকে কেউ কিডন্যাপ করেছে, মহুয়া। প্লিস এসো....." বলেই কেঁদে ফেলে।

মহুয়া আর দানা মুখ চাওয়াচায়ি করে। ওর বাড়িতে এখন যাওয়া উচিত যদিও ওরা জানে কে অপহরন করেছে, তবে একটু সংশয় আছে সেই সম্বন্ধে। নয়নাকে হাতে না পাওয়া পর্যন্ত সিমোন ওর টেপ পুলিসের কাছে দেবে না। মহুয়া রাগে জ্বলতে থাকলেও ওকে শান্ত হতে অনুরোধ করে জানিয়ে দেয় ওরা কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌঁছে যাবে।

চিন্তা মগ্ন দানাকে জিজ্ঞেস করে, "কি করবে? সব চাল যে উলটো পড়ে গেল।"

দানা মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, "কি যে হয়ে গেল জানি না। সিমোন বলেছিল বুবাইকে হাতে পেলে আমাকে কঙ্কনার খবর দেবে। এখন সিমোনকে ফোন করা একদম যাবে না। ওর কথায় বিশ্বাস করা একদম উচিত হয়নি আমার।" একটু থেমে বলে, "এখন চল নয়নার বাড়িতে। পুলিসের সাহায্য এইবারে নিতেই হবে না হলে ওদের বাগে ফেলা যাবে না কিছুতেই। ভেবেছিলাম সিমোন আর নয়না সামনাসামনি হলে একে ওপরকে খুন করবে, কিন্তু এখানে মনে হচ্ছে কোন তৃতীয় ব্যাক্তির আগমন হয়েছে। তবে মোহন হলে ক্ষতি নেই কিন্তু অন্য কেউ হলে বড় মুশকিল।"

তৃতীয় ব্যাক্তি কে হতে পারে, শত চিন্তা করেও কিছুতেই দানা আর মহুয়া উদ্ধার করতে পারে না।
[+] 2 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 22-09-2020, 12:38 PM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)