Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
ষোল


সাপের কোঠর (#১)

দুপুর নাগাদ একবার কঙ্কনার হোটেলে গিয়ে ওর সাথে দেখা করে ওকে আবার সব কথা মনে করিয়ে দেয়। ওর হাতে এক সপ্তাহ সময়, এর মধ্যে কাজ না হলে আগে নাসরিনকে খুন করবে, তারপরে কঙ্কনাকে খুন করবে। কঙ্কনা জানে, যে পথেই পা দেবে, সেই পথে মৃত্যু অবশ্যাম্ভাবি। সিমোন রমলা সবার নজর বাঁচিয়ে এই শহরে এসেছিল ওই ক্লাবের যৌন সমাবেশে যোগদান করবে বলে। স্বপ্নেও ভাবেনি যে এইখানে এসে দানার সাথে দেখা হয়ে যাবে, আর ওদের অদৃষ্টে এই অঘটন ঘটে যাবে। কঙ্কনা ওকে জানায়, নাসরিনের সাথে কথা না বলতে পেরে ওর স্বামী আমজাদ বেশ চিন্তিত। দানা শাসিয়ে দেয়, সত্যি কথা জানালে ওর কপালে মৃত্যু আছে। কঙ্কনা জানায় বিকেলেই সিমোনকে ফোন করে দেখা করার কথা জানাবে।

প্রতিদিন বিকেলে একবার করে কঙ্কনার সাথে দেখা করে জেনে নেয় সিমোনের সাথে কথাবার্তা কতদুর এগিয়েছে। কঙ্কনা জানায়, সিমোন অতীব চটুল ধূর্ত মহিলা, ওকে অত সহজে বাগে ফেলা সম্ভব নয়। তবে নয়নার সম্বন্ধে সিমোন বেশ উৎসুক। কঙ্কনা জানায়, সিমোন নাকি একবার নয়নাকে ফোন করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু নয়না ওর ফোন উঠায়নি, তারপর থেকে সিমোন খুব ক্ষেপে যায় নয়নার ওপরে। ওদের সুহৃদ বন্ধু বিমান চন্দের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য নয়নার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে প্রস্তুত। সেইসাথে যখন জানতে পারে যে দানা এর সাথে জড়িত, তখন পুরানো কথা ভুলে গিয়ে কঙ্কনার সাথে হাত মেলায় সিমোন। কঙ্কনা জানায়, ইতিমধ্যে সিমোনের কানে ওর পরিকল্পনার খবর তুলে দিয়েছে। এই খবর পেয়ে দানা মনে মনে খুব খুশি। এক সময়ে এই নয়না বিমানের সাথে এবং সিমোন মোহনের সাথে চক্রান্ত করে ওর মেয়েকে অপহরন করার ষড়যন্ত্র তৈরি করেছিল। এইবারে সবাই সবার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে গেছে। সবাইকে আরো একবার এক জায়গায় করতে পারলে জতুগৃহ দাহ করা যাবে।

দিন চারেক পরে কঙ্কনা জানায় যে সিমোন নাকি নাসরিনের সাথেও দেখা করতে চেয়েছে। সিমোন জানে একা কঙ্কনা ওর সুহৃদ বান্ধবী নাসরিন ছাড়া কোথাও বের হয় না। এই কয়দিনে এক কঙ্কনাকে দেখে ওর মনে সন্দেহ হয়, হয়ত এ দুই জনে ওর বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র করছে তাই ওদের একসাথে দেখা করতে চায়। দানা কিছুক্ষণ ভেবে বলে এক রাতের জন্য নাসরিনকে ওর হোটেলে ছেড়ে যাবে, সেই সময়ে যেন সিমোনকে হোটেলে ডেকে দেখা করিয়ে দেয়।

কথা মতন নাসরিনকে পঞ্চম রাতে হোটেলে ছেড়ে দেয় দানা। তবে সারা রাত হোটেলের বাইরে গাড়ির মধ্যে বসে পাহারা দেয়। সিমোনে নিশ্চয় ওদের সাথে দেখা করতে আসবে।

একঘণ্টা কেটে যায়, বারেবারে মহুয়া ফোন করে খবরা খবর জানতে চায়। দানা জানায়, কোন সন্দেহজনক লোকের সন্ধান তখন পর্যন্ত পায়নি। রাত বেড়ে ওঠে, কিন্তু সিমোনের গাড়ি অথবা মোহনের গাড়ির দেখা পাওয়া যায় না। চরম উৎকণ্ঠায় সারা রাত কেটে যায়, কিন্তু সিমোন ওদের সাথে দেখা করতে আসেনা। দানার মনে তখন সন্দেহ জাগে, কঙ্কনা আর নাসরিন কি তাহলে ওকে ভুলিয়ে আবার পলায়ন করেছে। সেই চিন্তা মাথায় ঢুকতেই দানার গায়ের রক্ত ফুটতে শুরু করে দেয়। হাতের কাছে পেয়েও ওদের ওপরে নিজের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়া হল না। চেয়েছিল এক আর ফল হল আরেক।

সকাল হয়ে যায়, একবার ভাবে হোটেলের কামরায় গিয়ে ওদের সাথে দেখা করবে। সত্যি কি ওরা পালিয়েছে? সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে মনাকে সঙ্গে নিয়ে লবিতে ঢোকে দানা। রিসেপশনিস্টকে ওদের কামরার নাম্বার দিয়ে বলে ওদের সাথে দেখা করতে এসেছে। রিসেপশনিস্ট ফোন করে কঙ্কনার কামরায়, কিন্তু ফোন বারেবারে বেজে যায়। রিসেপশনিস্ট জানায়, গতরাতে অথবা সকাল পর্যন্ত ওদের দুইজনের কেউই হোটেল ছেড়ে যায়নি। বেশ কয়েকবার ফোন করার পরেও যখন কেউ ফোন উঠাল না তখন রিসেপশনিস্টের সাথে দানার মনে সন্দেহ জাগে। কি হলো কঙ্কনা আর নাসরিনের? একরাতের মধ্যে এই সদর দরজা দিয়ে কি করে উধাও হতে পারে দুই মহিলা। নামকরা পাঁচতারা হোটেল, এদের নিরাপত্তা রক্ষীদের চোখে ধুলো দিয়ে চেক আউট না করেই বেড়িয়ে যাওয়া কোন প্রকারে সম্ভব নয়।

হোটেলের ম্যানেজার চলে আসে ততক্ষণে। রমলার পত্রিকার নাম নিয়ে জানায় ওই পত্রিকার তরফ থেকে ওদের সাথে দেখা করতে এসেছে কিন্তু অনেকবার ফোন করার পরেও কারুর সারা শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত হাউস্কিপিং স্টাফ কে সাথে নিয়ে ম্যানেজার আর দানা ওদের কামরায় যায়।

হোটেলের ম্যানেজার প্রথমে কলিং বেল বাজায়, ওইপাশ থেকে কোন সারা শব্দের আওয়াজ না পেয়ে দানা আর বাকিরা সবাই এক ওপরের মুখ চাওয়াচায়ি করে। হাউস্কিপিং স্টাফের লোক দরজার হাতলে হাত রাখতেই দরজা খুলে যায়। সেই দেখে সবাই স্থম্ভিত হয়ে যায়। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই ওদের নজরে পড়ে বিছানার ওপরে কঙ্কনার রক্তাক্ত দেহ। গলায় একটা ছুরির দাগ, শ্বাসনালী কেটে দেওয়া হয়েছে। পাশের সোফার ওপরে নাসরিনের মৃতদেহ, ওর শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলা হয়েছে। দানার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়, বুঝতে দেরি হয় না এর পেছনে সিমোনের হাত। দুইজনকে একসাথে খুন করবে বলেই নাসরিনকে ডেকে পাঠিয়েছিল। এইকাজ ভাড়াটে গুন্ডার দ্বারা করানো হয়েছে।

সঙ্গে সঙ্গে ম্যানেজার পুলিসে খবর দেয়। আধা ঘন্টার মধ্যেই হোটেল পুলিসে পুলিসে ছয়লাপ হয়ে যায়। নামকরা পাঁচ তারা হোটেল, এই খবর কোন রকমে একবার যদি প্রকাশ হয়ে যায় তাহলে হোটেলের নাম খারাপ হয়ে যাবে। ম্যানেজারের মাথায় হাত, এইদিকে পুলিস ততক্ষণে প্রাথমিক তদন্ত সেরে ফেলে। ওদের সঙ্গের কাগজপত্র ঘেঁটে ওদের পরিচয় উদ্ধার করে। দানা এর মাঝে ওইখান থেকে চুপিচুপি সরে যায়। একবার যদি পুলিসের সন্দেহ ওর ওপরে পড়ে তাহলে মুশকিল। ওর কাছে কোন প্রমান নেই যে এর পেছনে সিমোন খৈতানের হাত, কিন্তু ওকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে উল্টে পুলিসের সন্দেহ ওর ওপরে বেশি করে পড়বে।

বাইরে বেরিয়ে এসেই মহুয়াকে ফোন করে জানাতেই মহুয়া চমকে ওঠে। আর ওইখানে দাঁড়ায় না, সোজা বাড়ি ফিরে যায় দানা। বাড়িতে ফিরে দানা বিস্তারে মহুয়ায়কে সব ঘটনা জানায়। এই সময়ে ওইখানে থাকলে পুলিসের নজরে পড়ে যেত তাই গোলমালের মধ্যে কোনোরকমে গা ঢাকা দিয়ে ওইখান থেকে চলে এসেছে। তবে ওর দৃঢ় বিশ্বাস এর পেছনে সিমোনের হাত। রমলার কাজ এটা হতেই পারে না, কারন রমলা জানেনা যে নাসরিন আর কঙ্কনা এই শহরে এসেছে।

এমন সময়ে দানার ফোন বেজে ওঠে। ফোন তুলেই দানা স্তম্ভিত হয়ে যায়, সিমোন কি মনে করে ফোন করেছে?

মহুয়ার ফিসফিস করে ওকে বলে, "ফোন তুলে দেখো কি বলতে চায়। এইরাতেই কঙ্কনা আর নাসরিনের খুন, আর তারপরেই তোমাকে ফোন। ওদের মতিগতি সুবিধের বলে মনে হচ্ছে না জিত। দেখবে ঠিক তোমাকে দেখা করার জন্য ডাকবে। সাবধান জিত আমার কিন্তু মন বড় ছটফট করছে।"

সেটা অবশ্য দানারও করছে। এরপরে সিমোনে কি পদক্ষেপ নেবে সেটা জানাই গেল না। হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি শান্ত করে ফোন তুলে সিমোনকে জিজ্ঞেস করে, "কেমন আছেন মিসেস খৈতান?"

সিমোন মৃদু হেসে বলে, "আমি আর কেমন থাকতে পারি মিস্টার মন্ডল। ভালো মন্দ মিলে এক রকম আছি।"

হঠাৎ ফোন করার কারন জিজ্ঞেস করে দানা, "হঠাৎ কি মনে করে ফোন করা হল, মিসেস খৈতান?"

সিমোন হেসে উত্তর দেয়, "অত আদিখ্যেতা করে ফোনে বারেবারে মিসেস খৈতান বলে ডাকতে হবে না দানা। আমি আজকে বাগান বাড়িতে। এখন একাই আছি, এই একটু বিশ্রাম আর....."

ওই কথা শুনে ক্ষণিকের জন্য দানার চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। বুঝতে দেরি লাগে না অতীব ধূর্ত হিংস্র নারী ওকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টায় আছে। মহুয়া কি করে এতসব বুঝতে পারে আগে থেকে? ওর নাক কি কুকুর? দানাও দেখতে চায় কতদুর এরা নাচতে পারে। বাগান বাড়িতে একা মানেই সিমোন আবার নতুন কোন ছেলেকে পেয়েছে নিজের কাম পিপাসা চরিতার্থ করার জন্য। এহেন কামুক নারীরা কখনই এক পুরুষে সন্তুষ্ট হতে পারে না, রোজ রাতে নতুন দামাল ষাঁড় চাই বিছানায়।

দানা হেসে সিমোনকে বলে, "আচ্ছা তাই নাকি? নতুন কাকে পেলে?"

সিমোন মিচকি হেসে উত্তর দেয়, "একা মানে সম্পূর্ণ একা দানা। (কণ্ঠে মধু ঢেলে) কিছু না এমনি, খুব একা লাগছিল তাই ফোন করেছিলাম।"

মহুয়া কটমট করে দানার দিকে তাকায়, এই মহিলা কত রঙ্গ না জানে। মহুয়া রাগে ওই দিকে ফুঁসতে শুরু করে দেয়। পারলে ফোনের মধ্যে ঢুকে সিমোনকে গলা টিপে হত্যা করে।

দানা ওকে আরো খেলিয়ে জিজ্ঞেস করে, "কেন সিমোন, যাওয়ার আগে কঙ্কনা নতুন কারুর ফোন নাম্বার দিয়ে যায়নি তোমাকে। কি ব্যাপারে ফোন করেছো বললে না তো?"

অতীব ছলনাময়ী সিমোন হেসে বলে, "কি যে বলো না তুমি। কঙ্কনা শহর ছেড়ে গেছে সে প্রায় এক বছর হয়ে গেল। (সঙ্গে সঙ্গে সিমোন উৎসুক হয়ে ওঠে) তুমি কি করে জানলে যে কঙ্কনা এই শহরে নেই?"

দানাও বাঁকা হেসে জবাব দেয়, "আমি কেন জানতে পারি না সিমোন? ফোন করেছিলাম, ফোন পাইনি, বাড়িতে গেছিলাম সেখানেও পাইনি।"

সিমোনের গলা কিঞ্চিত কেঁপে ওঠে, "ওর বাড়ি গিয়েছিলে মানে? তুমি ওর বাড়ি চেন?"

কিছুতেই বুঝতে দিতে চায় না যে আসলে কঙ্কনার সাথে ওর কোনোদিন দেখা হয়েছিল।

না, কঙ্কনার আসল বাড়ি চেনে না দানা। যেখানে প্রতিবার ওকে নিয়ে যেত সেটা অন্য কারুর বাড়ি আর সেই মালিক বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে বিদেশ চলে গেছে তাই সেই রহস্যের আর উত্তর পেল না দানা।

দানা এতক্ষণ হাঁটতে হাঁটতে কথা বলছিল, কিন্তু সিমোনের চাপা কণ্ঠ স্বর শুনে দাঁড়িয়ে পরে জিজ্ঞেস করে, "সত্যি করে বলো সিমোন, কঙ্কনা কোথায়?"

পাল্টা হেসে জবাব দেয় সিমোন, "আগে দেখা কর তারপরে জানাবো।"

দেখা ওকে করতেই হবে। কঙ্কনা আর নাসরিনের মৃত্যুর পরে, কিছুতেই অনুধাবন করা যাচ্ছে না সিমোনের মাথায় কি চলছে। সেটা জানার জন্য ওর সাথে দেখা করা এক মাত্র পথ। ফোনে সেটা সম্ভব নয়, কিন্তু দেখা করলে ভীষণ কিছু একটা হবার আশঙ্কা আছে।

দানা একটু ভেবে চিন্তে ওকে বলে, "দেখো সিমোন, তোমার সম্বন্ধে অনেক কিছুই আমার জানা, সুতরাং যদি ভালোয় ভালোয় কঙ্কনার খবর দাও তাহলে খুব ভালো হয়।"

পাল্টা হেসে সিমোন জবাব দেয়, "সেটা আমিও জানি দানা। তবে কি জানো সব কিছু ফোনে বলা যায় না। আমি তোমার জন্য আমাদের পুরানো জায়গায় অপেক্ষা করছি। কঙ্কনার খবর জানতে হলে দেখা করো।"

দানা বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে মহুয়ার দিকে তাকায়। মহুয়া বুঝে উঠতে পারে না, দেখা করা ঠিক হবে না না দেখা করা ভালো। সিমোন যেমন ধূর্ত ছলনাময়ী নারী, দানাকে একা পেয়ে যদি প্রাণে মারতে চায় তাহলে মহুয়া সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে। আগে হলে দানার ভয় ডর থাকতো না, কিন্তু এখন পাশে প্রেয়সী আর কচি রুহি।

রুহিকে কোলের মধ্যে শক্ত করে ধরে দানার দিকে তাকিয়ে থাকে মহুয়া। কি করবে দানা? একা একা যাবে নাকি ওই সাপের গর্তে? নয়নার মতন এর ছোবল বিষাক্ত, চুপচাপ পড়ে থাকবে, তারপরে হঠাৎ করে ছোবল মারবে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে দানা উত্তর দেয়, "ঠিক আছে, আমি দেখা করবো।"

মহুয়ার চোখ ফেটে জল চলে আসে।

সিমোন মৃদু হেসে বলে, "সন্ধ্যের পরে আমাদের সেই পুরানো জায়গায় চলে এসো।"

ফোন ছাড়তেই মহুয়া ওকে ভয়ার্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, "কি করতে চলেছ?"

দানা চোয়াল চেপে জিজ্ঞেস করে, "কি চাও তুমি। সারা জীবন গর্তে ঢুকে বেঁচে থাকি? একদিকে নয়না, একদিকে মোহন সিমোন। এরা বেঁচে থাকলে আমাদের জীবন দুর্বিষহ করে ছেড়ে দেবে।"

রুহিকে কোলের মধ্যে আঁকড়ে মাথা ঝাঁকিয়ে বলে, "একটু শান্তি নেই জীবনে। যাচ্ছ যাও একটু সাবধানে যেও।"

সত্যি, একটার পর একটা ঝামেলা ওদের জীবনে লেগেই আছে। শুরু হয়েছিল দানার সাথে কিন্তু সেটা ছড়িয়ে পড়ল মহুয়া আর রুহির জীবনে। এখন পর্যন্ত মহুয়াকে সত্যি কথাটা বলতে পারেনি, কি কারনে কঙ্কনা আর নাসরিন ওকে খুন করতে চেয়েছিল।

চোখের জল মুছে দানাকে বলে, "ওইখানে যেতে দিতে একটা শর্তে পারি। তুমি আকরাম নাসির বলাই শক্তি সবাইকে সাথে নিয়ে যাও।"

দানা জানে সবাইকে সাথে নিয়ে গেলে সিমোন মুখ খুলবে না উল্টে অন্য কিছু চাল খেলবে। দানা একাই যাবে ঠিক করে, তবে সাথে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে যাবে। রুহি জিজ্ঞেস করাতে সঠিক উত্তর দিতে পারে না দানা। বিমানের বাগান বাড়িতে ঢোকার আগে ওর কাছে বেরিয়ে আসার একটা সুচতুর পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু এইবারে সেই পরিকল্পনা নেই। এক প্রকার সাপের গর্তে মাথা ঢুকাতে চলেছে দানা কিন্তু নিরুপায়। মহুয়া আর রুহিকে বাড়িতে নামিয়ে দেয়। মনা আর পিন্টু বারেবারে ওর সাথে যাওয়ার কথা বলে কিন্তু দানা মানা করে দেয়। ওদের বাড়িতে থাকতে নির্দেশ দেয়, বলে দানার না ফিরে আসা পর্যন্ত যেন মশা মাছি যেন বাড়ির ত্রিসীমানায় না আসে।

সন্ধ্যের পরে একাই গাড়ি নিয়ে সিমোনের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ে। কোমরের পেছনে একটা পিস্তল দ্বিতীয় পিস্তল পায়ের গোড়ালিতে। যদি ওই বাড়িতে সিমোন ছাড়া আরও লোকজন থাকে, তাহলে দানার বেঁচে ফেরার আশঙ্কা আছে, আর যদি একা থাকে, তাহলে সিমোনেকে ওইখানে পুঁতে রেখে আসবে।

বড় রাস্তা ছেড়ে গ্রামের পথে বাঁক নিতেই দানার বুকের ধুকপুকানির মাত্রা বেড়ে ওঠে, কি হবে কি হবে। গাড়ি চালাতে চালাতে মোবাইলে মহুয়া আর রুহির ছবিটা দেখে। মোবাইল স্ক্রিনে ঠোঁট চেপে চুম্বন দেয় রুহি আর মহুয়াকে। আসন্ন উৎকণ্ঠায় জিব শুকিয়ে গেছে, কিন্তু দমে গেলে চলবে না। বাড়ির সামনে আসতেই দারোয়ান বড় লোহার গেট খুলে দেয়। এতদিনে দানার গাড়ি চিনে গেছে বাগান বাড়ির দারোয়ান। বাড়ির সামনে একটা মোটরসাইকেল আর সিমোনের গাড়ি দাঁড় করানো। মোটর সাইকেল দেখে বুঝতে দেরি হয় না সিমোন একা নয়, সাথে কোন পুরুষ সঙ্গী আছে। গাড়ি থেকে নেমে একটা সিগারেট ধরাতেই একটা ছেলে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে ওকে ভেতরে ডাকে। ছেলেটা দেখতে সুঠাম স্বাস্থ্যবান, বুঝতে দেরি হয় না নিজের কামক্ষুধা মেটানোর জন্য এই ছেলেকে ধরেছে সিমোনে। ছেলেটার ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত, পরনে শুধু মাত্র একটা প্যান্ট। দানা জানিয়ে দেয় সিগারেট শেষ করে ভেতরে আসবে। ছেলেটা জানায়, সিগারেট নিয়ে ভেতরে ঢুকলে কোন অসুবিধে হবে না। সেটা দানার অজানা নয়, এই বাড়ির শয়ন কক্ষে সিমোনের শরীর নিয়ে বহুবার সঙ্গমে মেতেছিল। ছেলেটার চোখ বাঁচিয়ে কোমরের পেছনে হাত দিয়ে পিস্তল দেখে নেয় আর মোবাইলে রেকর্ডের বোতাম টিপে ওদের বার্তালাপ রেকর্ড করার জন্য চালিয়ে দেয়। তারপরে ছেলেটার পেছন পেছন ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে। ছেলেটা ওকে বসার ঘরের সোফায় বসতে বলে বারের দিকে চলে যায়। কি নেবে জিজ্ঞেস করাতে দানা মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয় কিছু নেবে না। এই বাড়িতে কারুর ওপরে বিশ্বাস নেই, হয়ত মদের সাথে বিষ মিশিয়ে ওকে মেরে ফেলল। ছেলেটা মাথা দুলিয়ে একটা গেলাসে তরল পানীয় ঢেলে শয়ন কক্ষে ঢুকে যায়।
[+] 2 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 21-09-2020, 04:06 PM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)