20-09-2020, 08:58 PM
পর্ব ৮
৮ (ক)
ফয়সাল খুলনা থেকে ফিরে এলো খুশী মনে। মেয়ের জন্য নিয়ে এলো নলেন গুড়ের সন্দেশ আর ছানার সন্দেশ। সেই সাথে ফ্রিজড করা গলদা চিংড়ী। শান্তা ভেবেছিলো সন্ধ্যাবেলা স্বামীর মুখোমুখি হবার সাহস সে পাবে না। কিন্তু কয়েক মুহূর্ত পর বুঝতে পারল মনের পাপবোধ মনে চেপে রাখলে, তা কখনো চেহারায় ফুটে উঠে না।
“তোমার কাজ হল ওখানে?” খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে, মেয়েকে ঘুম পারিয়ে শান্তা যখন ঘরে আসে, তখন নিতান্তই কথাচ্ছলে জানতে চাইলো যেন। ফয়সাল তখন বাথরুমের দরজায় দাড়িয়ে দাত ব্রাশ করছে।
“হ্যাঁ, ওরা রাজি হয়েছে। মনে হয় ব্যাবসাটা চালু করতে পারবো...”
“কিসের ব্যাবসা তা তো আমায় বলবে না তাই না?” শান্তা একটু রুক্ষ ভাবে বলেই বিছানা করতে লাগলো। ওদিকে ফয়সাল বেসিনে থুথু ফেলে হাসল।
“বলবো না কেন? একটু চিন্তায় ছিলাম...” ফয়সাল জানায় তাকে। “তোমায় বলি নি শুধু শুধু ঘাবড়ে যাবে… আমি দশ লাখ টাকা লস খেয়েছিলাম,”
“দশ লাখ!” চোখ কপালে তুলে শান্তা। ওদের জন্য এ তো বিরাট অঙ্কের টাকা! তাছাড়া টাকার অঙ্ক শুনে যতটা না ঘাবড়েছে শান্তা, তার থেকে বেশী অবাক হয়েছে ফয়সাল ওর সঙ্গে আজ নরম সুরে কথা বলছে! “কীভাবে?”
“ওই ভুল সিদ্ধান্ত,” মাথা নাড়ে ফয়সাল। “ওসব ছাড়। সামনে বিরাট প্রজেক্ট পাচ্ছি। আজ যে চিংড়ী খেলে - আমাদের রুপালী গর্ব, বিদেশে রপ্তানির বায়ার পেয়েছি। অর্থায়ন করছে আমার দূর সম্পর্কের এক মামা। মায়ের মৃত্যুর পর এসেছিলো, তুমি দেখেছ তো… হায়দার আলী। হায়দার সাহেবই প্রকল্পটার মালিক। তার হয়েই কাজ করছি আমি এখন,”
“ওহ...” শান্তা বিছানা করতে করতে আপন মনে ভাবছে। “তুমি বলেছিলে… চাকরিটা নাকি ছেড়ে দেবে?”
“নাহ, ছাড়ার প্রয়োজন পরবে না।” মাথা নাড়ে ফয়সাল। “তবে এখন থেকে খুলনায় একটু দৌড়াদৌড়ি করতে হবে।”
“যা ভালো বুঝ কর,” শান্তা বিছানা করে সোজা হয়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটা। “আমার আর তুলির কথাও একটু ভেব,”
“ভাবব না কেন? তোমাদের কথা ভেবেই তো এই ব্যাবসায় হাত দিয়েছি,” হাসে ফয়সাল। মুখ ধুয়ে ব্রাশ রেখে বেড়িয়ে আসে বাথরুম থেকে। “টাকাটা লস গেলো - আমি তো একদম ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তাছাড়া মায়ের চিকিতসার কিছু লোনও তো শোধ করা লেগেছে। ব্যাংক ব্যাল্যান্স একদম নেই। তাই দিগুণ খাটনি যাচ্ছে...”
শান্তা চোখ তুলে স্বামীর দিকে তাকিয়ে থাকে এক মুহূর্ত। বুঝার চেষ্টা করে কি চলছে তার মনে! ফয়সাল কি সত্যি কথা বলছে? নাকি ওর কথার মধ্য দিয়ে সূক্ষ্ম ভাবে বেঙ্গ করছে তাকে? “দেখো আবার এভাবে খুলনা যাওয়া আসা করলে শরীরটা ভেঙ্গে পড়বে।”
“তাও ভাবছি,” মাথা দোলায় ফয়সাল। শান্তা ওর পাশ কাটিয়ে বাথরুমে যেতে চাইলে ওর হাতটা চেপে ধরে ফয়সাল। “শরীরের কথা যখন তুললে… তোমায় কিন্তু বেশ সুন্দরী লাগছে আজ,”
“তাই নাকি!” বুকটা ধক করে উঠে শান্তার। বরফ এর মত জমে যায় শরীরটা। হাতে ফয়সালের স্পর্শটা যেন আগুন ছড়াচ্ছে। “আমার দিকে তাকাবার সময় আছে নাকি তোমার?”
“বাহ রে কেন থাকবে না?” ফয়সাল স্ত্রীর হাতটা চেপে ধরে নিজের দিকে টান দেয়। তাল সামলাতে না পেরে ফয়সালের বুকের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে শান্তা। আঁতকে উঠে সে। তারপর চোখ তুলে তাকায় ফয়সালের মুখের দিকে। ওর চোখে মুখে হঠাৎ করে, এত গুলো মাস পরে যেন আজ প্রথম বারের মতন প্রেমের উষ্ণতা ফুটে উঠেছে! কেপে উঠে শান্তা। কেপে উঠে ওর জগতটা। আর তারপরই ওকে সামলে উঠার সুযোগ না দিয়েই ফয়সালের ঠোঁট জোড়া চেপে বসে শান্তার কোমল ঠোঁটের উপর।
স্বামীর ঠোঁটে মিন্ট এর স্বাদ পায় শান্তা। ওর শরীরটা আরও শীতল হয়ে উঠে। পায়ে ভার রাখতে কষ্ট হচ্ছে যেন তার। কয়েক মুহূর্ত চুমু খেয়ে ওকে ছাড়ে ফয়সাল। “যাও, জলদী বাথরুম করে ধুয়ে টুয়ে আসো। আজ একবার লাগাব তোমাকে!”
শান্তা চোখ দুটো পিট পিট করে। উত্তর দিতে পারে না সে। রোবট এর মতন হেটে যায় বাথরুমে। দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বেসিন চেপে ধরে দাড়ায়। আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বটার দিকে তাকিয়ে নিজেই চমকে উঠে। ওর মুখটা একদম ফ্যাঁকাসে হয়ে উঠেছে। ফয়সাল এমন করছে কেন আজ ওর সঙ্গে? ও কি কিছু টের পেয়েছে? এত দিন পর আজ হঠাৎ করে ওর মনে প্রেম জাগল কেন? তবে কি ও সত্যি কথাই বলছে? ফয়সাল কি আদৌ পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছে? নাকি এসবই অতিকল্পনা ছিল শান্তার?
রিয়ান খান