20-09-2020, 11:15 AM
কঙ্কনা সঙ্গে সঙ্গে বলে, "হ্যাঁ হ্যাঁ, সিমোন আর মোহন কথায় কথায় বলে ফেলেছিল যে ওই নয়নার জন্যেই নাকি ওদের বন্ধু বিমান চন্দের মৃত্যু হয়েছে। কি হয়েছিল আসলে দানা?"
দানা বাঁকা হেসে উত্তর দেয়, "হ্যাঁ সেটা একপ্রকার সঠিক। ওই নয়না দুই নৌকায় পা রেখে চলতে চেষ্টা করেছিল আর যখন বাপ্পা নস্কর, নয়নার সাথে বিমানের যৌন সম্পর্কের বিষয়ে জেনে ফেলে তখন রাগে ওদের খুন করে। সেই খুনোখুনিতে সবাই মারা যায়।"
কঙ্কনা ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, "কিন্তু নয়না আর তুমি বেঁচে গিয়েছিলে....."
দানা বাঁকা হেসে বলে, "এত উত্তর দেওয়ার সময় এখন নেই আমার কাছে। তুমি সিমোনকে গিয়ে বলবে আমাকে খৈতানের প্রকল্প গুলো হাতিয়ে দেওয়ার পেছনে নয়নার হাত ছিল। আসলে নয়না চেয়েছিল রাজনীতিতে নামার, তাই প্রথমে আমাকে ব্যাবহার করে বাপ্পাকে সরাতে চেয়েছিল। একবার বাপ্পা নস্কর সরে গেলে ওর ওপরে বিমান চন্দের বিশ্বাস বেড়ে যেত আর তখনি বিমান চন্দকেও পথের থেকে সরিয়ে দিত নয়না। খৈতানের প্রকল্প গুলো আমাকে দিয়ে হাতানোর পেছনেও নয়নার মাথা কাজ করেছে। কিছু বুঝলে?"
কঙ্কনা আর নাসরিন স্তম্ভিত হয়ে ওর কথা শুনে যায়। নাস্রিন অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, "তুমি সত্যি বলছো?"
দানা মাথা দোলায়, "সব কিছু সত্যি বলছি আর এই সব কিছু তোমাকে সিমোনে আর মোহনের কানে তুলে দিতে হবে।"
কঙ্কনা ওকে বলে, "কিন্তু কোন প্রমান ছাড়া ওরা এই কথা বিশ্বাস করবে না।"
দানা সেটা ভালো ভাবে জানে তবে ওর কাছে এখুনি কোন প্রমান নেই, তাই ওদের বলে, "দেখো তুমি এইসব ওদের বলবে আর বলবে এই সব কথা তুমি রমলার কাছ থেকে শুনেছ। নয়না আর রমলার মাঝে গভীর সম্পর্ক আছে সেটা অবশ্য তোমার অজানা যাই হোক।"
কঙ্কনা আর নাসরিন মাথা দোলায়, "ঠিক আছে। কিন্তু এটা হলে সিমোন আর মোহনের সব রাগ নয়নার ওপরে পড়বে। তাতে তোমার কি লাভ?"
দানা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, "সেটাও জেনে তোমার দরকার নেই কঙ্কনা। আমি ঠিক যেমন বলছি তেমন কাজ করলে আমি তোমাদের ছেড়ে দেব। যখন সিমোন রাগে বিতৃষ্ণায় কাঁপতে শুরু করবে তখন তুমি ওকে নয়নাকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা বলবে।"
কঙ্কনা আর নাসরিন দানার অনেক কথার অর্থ বুঝতে পারে না তাও মাথা নাড়িয়ে যায়। দানা ওদের বলে, "তুমি সিমোনের কাছে গিয়ে বলবে, যদি নয়নাকে বাগে করতে চায় তাহলে আগে ওর ভাইকে আঘাত করতে হবে। নয়নার প্রান ভোমরা ওর ভাই। ওকে যদি কিছু করে অপহরন করতে পারে তাহলে নয়নাকে অতি সহজে ফাঁদে ফেলতে সক্ষম হবে। তুমি এটা ওদের বলবে যে আমি ওদের সব প্রকল্প ফিরিয়ে দিতে রাজি আছি। তুমি বলবে যে আমাকে তোমরা মহুয়াকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে এইসব কথা বের করেছ। বুঝলে?"
কঙ্কনা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ সব বুঝেছি।"
দানা ওদের বলে, "যতদিন না আমার কাজ শেষ হচ্ছে ততদিন নাসরিন আমাদের কাছে থাকবে।"
নাসরিন চিৎকার করে ওঠে, "না, প্লিস আমাকে ছেড়ে দাও।"
দানা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, "ঠিক আছে তাহলে কঙ্কনা আমাদের কাছে থাকবে আর তুমি এই সব কথা সিমোনকে বলবে। কে আমাদের কাছে থাকবে সেটা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করে নাও।"
সব কিছু বলার পরে দানা চুপ করে ওদের দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। নিরুপায় নাসরিন মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, যতদিন কঙ্কনা এইসব কাজ করবে ততদিন দানার কাছে বন্দী থাকতে রাজি।
রেড এন্ড ব্লু ক্লাব (#০৮)
প্রচন্ড ঝড়ের ফলে আর ছোট লঞ্চের ভীষণ দুলুনির ফলে নাসরিন আর কঙ্কনার শরীর খারাপ হয়ে যায়। একে আতঙ্কে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে ছিল, তায় সমুদ্রের ঠাণ্ডা জলো হাওয়ায় ওরা কাবু হয়ে পড়ে। প্রবল ঝড়ের ফলে কাবুলি ঘাট পৌঁছাতে পৌঁছাতে ওদের বেশ রাত হয়ে যায়। রাত প্রায় এগারোটা বেজে যায় যখন ওরা কাবুলি ঘাটে পৌঁছায়। কঙ্কনা জানায় মধ্য মহানগরের একটা বেশ বড় হোটেলে ওরা উঠেছে, সেখান থেকে ভাড়ার গাড়ি করে ওরা কাবুলি ঘাটে এসেছিল। দরকারি সব কিচুই হোটেলের কামরায়, তবে ওদের হোটেলের কামরার কার্ড ওই জাহাজে রয়ে গেছে।
মনা ওকে দেখতে পেয়েই তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফোন করতে বলে। মহুয়া চরম উৎকণ্ঠায় কেঁদে কেটে একসা। বিমান বাপ্পার সময়ে ওর হাতে পিস্তল ছিল, সাথে লোকজন ছিল কিন্তু এইবারে যখন মনার মুখে শুনেছে যে দানা একটা লঞ্চে চেপে সমুদ্রের দিকে পাড়ি দিয়েছে, তখন থেকেই বুকের ধুকপুকানি থামেনি।
দানা ফোন করতেই মহুয়া কেঁদে ফেলে, "আমার কথা মেয়ের কথা মনে থাকে না তাই না?" ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে, "কি অদৃষ্টে তোমাকে প্রেম করেছিলাম কে জানে। না তুমি কোথাও যাবে, না আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে পারি।"
দানা চুপ, কি বলবে, ওইপাশ থেকে শুধু ফোঁপানোর শব্দ ছাড়া কিছুই ভেসে আসে না। মহুয়া কিছুতেই ফোন ছাড়বে না, অন্তত দানার নিঃশ্বাসের শব্দটুকু ওর কানের রন্ধ্রে প্রবেশ করে বুকের মাঝে শান্তির মলয় বইয়ে দেয়। শত হোক ঠিক আছে। বেশ কিছুপরে মৃদু কণ্ঠে বলে, "কখন আসছো বাড়িতে? কিছু খেয়েছো?"
দানা এতক্ষণ পরে মুখ খোলে, "এই সোনা, প্লিজ কাঁদে না। দেখো আমি ঠিক আছি, কিছুই হয়নি। তুমি থাকতে আমার গায়ে কি কেউ আঁচড় লাগাতে পারে?"
কান্না ভরা মৃদু হেসে বলে, "হ্যাঁ, আমাকে যেন সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলে!"
দানা হেসে ফেলে, "ওইখানে তোমার না যাওয়াই ভালো। যাই হোক কঙ্কনা নাসরিনের খবর পাওয়া গেছে। এর কয়েক ঘন্টার মধ্যে কঙ্কনাকে হোটেলে নামিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে সব কিছু বলছি।"
কঙ্কনার বিষয়ে মহুয়ার মাথাব্যাথা নেই, আবার প্রশ্ন করে সুন্দরী প্রেয়সী, "কিছু খেয়েছো? তোমার’ত আবার জাহাজে চড়লে মাথা ঘোরায়। বমি টমি করনি তো?"
সত্যি মেয়েটা বড় ভালোবাসে। হ্যাঁ তা বাসে বৈকি, পারলে আঁচলের তলায় লুকিয়ে রাখতো, কিন্তু দানা শুনলে তো। দানা হেসে বলে, "তুমি কিছু খাওনি আমি কি করে খেতে পারি।"
কান্না ভেজা গলায় হেসে বলে, "তাড়াতাড়ি এসো, আমি আটা মাখছি।"
"আচ্ছা আসছি।" বলে দানা ফোন রেখে দেয়।
শঙ্কর একটা লুঙ্গি দিয়েছিল সেটা কোমরে জড়িয়ে নেয়। কোন এক ছেলে কঙ্কনার জন্য জামা দিয়েছিল, সেটা কোনোরকমে উলঙ্গ কঙ্কনা গায়ে জড়িয়ে দানার গাড়ির পেছনের সিটে উঠে বসে। কঙ্কনাকে নিয়ে দানা বেড়িয়ে পড়ে মহানগরের উদ্দেশ্যে, আর নাসরিনকে লঞ্চের মধ্যে বন্দী রেখে বাকিরা হিঙ্গলগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথে যেতে যেতে শহরের এক জায়গায় থেমে কঙ্কনার জন্য কিছু জামা কাপড় কিনে নেয়।
দানা জানতে চায় কেন ওরা এই মহানগর ছেড়ে দিয়ে অন্য শহরে চলে গেছে। তার উত্তরে কঙ্কনা জানায় ওর স্বামী শঙ্কর দেবনাথ আর নাসরিনের স্বামী আমজাদের নতুন জাহাজের কোম্পানিতে চাকরি হয়ে যায়, যার জন্য ওদের এই মহানগর ছেড়ে চলে যেতে হয়। তবে বিত্ত মন্ত্রালয়ের সচিব, রাগিণীর সাথে ওদের যোগাযোগ ছিল। রেড এন্ড ব্লু ক্লাব সম্বন্ধে জানতে চাইলে, কঙ্কনা বলে এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের উদ্যোক্তা আসলে রাগিণী আর সিমোনের মতন কয়েকজন প্রচণ্ড কামুকী মহিলা বছর ছয়েক আগে শুরু করে। বছর পাঁচেক আগে একটা পার্টিতে রাগিণীর সাথে কঙ্কনার আলাপ পরিচয় হয়, তারপরে ওরা এই ক্লাবে যোগদান করে। বছরে প্রায় পাছ ছয় বার এই রিরংসা মাখা ভীষণ যৌন সহবাসের সমাগম হত। ক্লাবের সদস্যরা সবাই বিশাল বড়লোক, এক রাতের জন্য তিরিশ চল্লিশ লাখ টাকা দেওয়া ওদের পক্ষে কিছুই না। রাগিণীর কাছে এটাও জানতে পারে যে একবার টাকা দিলে সেই টাকার আয়ব্যায়ের খোঁজ খবর কেউ নেয় না। সিমোন এই ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত, ক্লাবের টাকা নাকি নিজের ব্যাবসায় খাটিয়েছে সিমোন। টাকার অঙ্ক দেখে ওদের লোভ হয় আর সেই থেকে ওদের মাথায় ঘোরে কি ভাবে কোষাধ্যক্ষ পদ সিমোনের কাছ থেকে হাতাবে। সেই সুযোগ দানার হাত ধরে ওদের ঝুলিতে এসে পড়ে। সাংবাদিকের খুনের পরিকল্পনা জানিয়ে এই কোষাধ্যক্ষ পদ নিজের নামে করে নেয়। বিভিন্ন পার্টি আর এইরকম গোপন কামক্রীড়ার সমাগমে গিয়ে ওরা নতুন সদস্য খোঁজে।
দানা চুপচাপ সব কিছু শোনার পরে ওকে জানিয়ে দেয় ওর কথা মতন কাজ করলে ওদের ছেড়ে দেবে। কঙ্কনাকে এক সপ্তাহের সময় দেয় দানা, তার মধ্যে যদি কাজ করতে না পারে তাহলে বন্দিনী নাসরিনের মৃত্যু অবশ্যাম্ভাবী। ছোট বেলার বান্ধবী নাসরিনের অসহায় অবস্থা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই কঙ্কনা জানিয়ে দেয় ওর কথা মতন কাজ করবে।
বাড়ি ফিরতে আরো রাত হয়ে যায় দানার। মহুয়া জেগেই বসে ছিল, দানা সেই যে দুপুরবেলায় বেরিয়েছিল, সেই থেকে ওর বুকের ধুকপুকানি বিন্দুমাত্র কমেনি। কি যে করে না মাঝে মাঝে। কিন্তু সেই সাথে জানে, এই সাপ গুলোকে না মারা পর্যন্ত ওরা শান্তিতে চোখ বুজে ঘুমাতে পারবে না। সবসময়ে মাথার মধ্যে মৃত্যু ভয় ঘোরাফেরা করবে।
গাড়ির আওয়াজ পেয়েই দৌড়ে নীচে নেমে জিজ্ঞেস করে, "কিছু খাওয়া দাওয়া করেছ, না কি শুধু....." দানার চেহারা দেখে কথাটা শেষ করতে পারে না মহুয়া।
দানাকে দুইহাতে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে মাথা গুঁজে দেয়। ওর বুকের ধুকপুকানির মাত্রা আর কমতে চায় না কিছুতেই। দানা নিজের বুকের সাথে মহুয়াকে মিশিয়ে দিয়ে ওর মাথা চুম্বন করে বলে, "এই পাপড়ি.... এই তো আমি এসে গেছি।"
দানা বাঁকা হেসে উত্তর দেয়, "হ্যাঁ সেটা একপ্রকার সঠিক। ওই নয়না দুই নৌকায় পা রেখে চলতে চেষ্টা করেছিল আর যখন বাপ্পা নস্কর, নয়নার সাথে বিমানের যৌন সম্পর্কের বিষয়ে জেনে ফেলে তখন রাগে ওদের খুন করে। সেই খুনোখুনিতে সবাই মারা যায়।"
কঙ্কনা ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, "কিন্তু নয়না আর তুমি বেঁচে গিয়েছিলে....."
দানা বাঁকা হেসে বলে, "এত উত্তর দেওয়ার সময় এখন নেই আমার কাছে। তুমি সিমোনকে গিয়ে বলবে আমাকে খৈতানের প্রকল্প গুলো হাতিয়ে দেওয়ার পেছনে নয়নার হাত ছিল। আসলে নয়না চেয়েছিল রাজনীতিতে নামার, তাই প্রথমে আমাকে ব্যাবহার করে বাপ্পাকে সরাতে চেয়েছিল। একবার বাপ্পা নস্কর সরে গেলে ওর ওপরে বিমান চন্দের বিশ্বাস বেড়ে যেত আর তখনি বিমান চন্দকেও পথের থেকে সরিয়ে দিত নয়না। খৈতানের প্রকল্প গুলো আমাকে দিয়ে হাতানোর পেছনেও নয়নার মাথা কাজ করেছে। কিছু বুঝলে?"
কঙ্কনা আর নাসরিন স্তম্ভিত হয়ে ওর কথা শুনে যায়। নাস্রিন অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, "তুমি সত্যি বলছো?"
দানা মাথা দোলায়, "সব কিছু সত্যি বলছি আর এই সব কিছু তোমাকে সিমোনে আর মোহনের কানে তুলে দিতে হবে।"
কঙ্কনা ওকে বলে, "কিন্তু কোন প্রমান ছাড়া ওরা এই কথা বিশ্বাস করবে না।"
দানা সেটা ভালো ভাবে জানে তবে ওর কাছে এখুনি কোন প্রমান নেই, তাই ওদের বলে, "দেখো তুমি এইসব ওদের বলবে আর বলবে এই সব কথা তুমি রমলার কাছ থেকে শুনেছ। নয়না আর রমলার মাঝে গভীর সম্পর্ক আছে সেটা অবশ্য তোমার অজানা যাই হোক।"
কঙ্কনা আর নাসরিন মাথা দোলায়, "ঠিক আছে। কিন্তু এটা হলে সিমোন আর মোহনের সব রাগ নয়নার ওপরে পড়বে। তাতে তোমার কি লাভ?"
দানা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, "সেটাও জেনে তোমার দরকার নেই কঙ্কনা। আমি ঠিক যেমন বলছি তেমন কাজ করলে আমি তোমাদের ছেড়ে দেব। যখন সিমোন রাগে বিতৃষ্ণায় কাঁপতে শুরু করবে তখন তুমি ওকে নয়নাকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা বলবে।"
কঙ্কনা আর নাসরিন দানার অনেক কথার অর্থ বুঝতে পারে না তাও মাথা নাড়িয়ে যায়। দানা ওদের বলে, "তুমি সিমোনের কাছে গিয়ে বলবে, যদি নয়নাকে বাগে করতে চায় তাহলে আগে ওর ভাইকে আঘাত করতে হবে। নয়নার প্রান ভোমরা ওর ভাই। ওকে যদি কিছু করে অপহরন করতে পারে তাহলে নয়নাকে অতি সহজে ফাঁদে ফেলতে সক্ষম হবে। তুমি এটা ওদের বলবে যে আমি ওদের সব প্রকল্প ফিরিয়ে দিতে রাজি আছি। তুমি বলবে যে আমাকে তোমরা মহুয়াকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে এইসব কথা বের করেছ। বুঝলে?"
কঙ্কনা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ সব বুঝেছি।"
দানা ওদের বলে, "যতদিন না আমার কাজ শেষ হচ্ছে ততদিন নাসরিন আমাদের কাছে থাকবে।"
নাসরিন চিৎকার করে ওঠে, "না, প্লিস আমাকে ছেড়ে দাও।"
দানা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, "ঠিক আছে তাহলে কঙ্কনা আমাদের কাছে থাকবে আর তুমি এই সব কথা সিমোনকে বলবে। কে আমাদের কাছে থাকবে সেটা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করে নাও।"
সব কিছু বলার পরে দানা চুপ করে ওদের দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। নিরুপায় নাসরিন মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, যতদিন কঙ্কনা এইসব কাজ করবে ততদিন দানার কাছে বন্দী থাকতে রাজি।
রেড এন্ড ব্লু ক্লাব (#০৮)
প্রচন্ড ঝড়ের ফলে আর ছোট লঞ্চের ভীষণ দুলুনির ফলে নাসরিন আর কঙ্কনার শরীর খারাপ হয়ে যায়। একে আতঙ্কে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে ছিল, তায় সমুদ্রের ঠাণ্ডা জলো হাওয়ায় ওরা কাবু হয়ে পড়ে। প্রবল ঝড়ের ফলে কাবুলি ঘাট পৌঁছাতে পৌঁছাতে ওদের বেশ রাত হয়ে যায়। রাত প্রায় এগারোটা বেজে যায় যখন ওরা কাবুলি ঘাটে পৌঁছায়। কঙ্কনা জানায় মধ্য মহানগরের একটা বেশ বড় হোটেলে ওরা উঠেছে, সেখান থেকে ভাড়ার গাড়ি করে ওরা কাবুলি ঘাটে এসেছিল। দরকারি সব কিচুই হোটেলের কামরায়, তবে ওদের হোটেলের কামরার কার্ড ওই জাহাজে রয়ে গেছে।
মনা ওকে দেখতে পেয়েই তাড়াতাড়ি বাড়িতে ফোন করতে বলে। মহুয়া চরম উৎকণ্ঠায় কেঁদে কেটে একসা। বিমান বাপ্পার সময়ে ওর হাতে পিস্তল ছিল, সাথে লোকজন ছিল কিন্তু এইবারে যখন মনার মুখে শুনেছে যে দানা একটা লঞ্চে চেপে সমুদ্রের দিকে পাড়ি দিয়েছে, তখন থেকেই বুকের ধুকপুকানি থামেনি।
দানা ফোন করতেই মহুয়া কেঁদে ফেলে, "আমার কথা মেয়ের কথা মনে থাকে না তাই না?" ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলে, "কি অদৃষ্টে তোমাকে প্রেম করেছিলাম কে জানে। না তুমি কোথাও যাবে, না আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে পারি।"
দানা চুপ, কি বলবে, ওইপাশ থেকে শুধু ফোঁপানোর শব্দ ছাড়া কিছুই ভেসে আসে না। মহুয়া কিছুতেই ফোন ছাড়বে না, অন্তত দানার নিঃশ্বাসের শব্দটুকু ওর কানের রন্ধ্রে প্রবেশ করে বুকের মাঝে শান্তির মলয় বইয়ে দেয়। শত হোক ঠিক আছে। বেশ কিছুপরে মৃদু কণ্ঠে বলে, "কখন আসছো বাড়িতে? কিছু খেয়েছো?"
দানা এতক্ষণ পরে মুখ খোলে, "এই সোনা, প্লিজ কাঁদে না। দেখো আমি ঠিক আছি, কিছুই হয়নি। তুমি থাকতে আমার গায়ে কি কেউ আঁচড় লাগাতে পারে?"
কান্না ভরা মৃদু হেসে বলে, "হ্যাঁ, আমাকে যেন সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলে!"
দানা হেসে ফেলে, "ওইখানে তোমার না যাওয়াই ভালো। যাই হোক কঙ্কনা নাসরিনের খবর পাওয়া গেছে। এর কয়েক ঘন্টার মধ্যে কঙ্কনাকে হোটেলে নামিয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে সব কিছু বলছি।"
কঙ্কনার বিষয়ে মহুয়ার মাথাব্যাথা নেই, আবার প্রশ্ন করে সুন্দরী প্রেয়সী, "কিছু খেয়েছো? তোমার’ত আবার জাহাজে চড়লে মাথা ঘোরায়। বমি টমি করনি তো?"
সত্যি মেয়েটা বড় ভালোবাসে। হ্যাঁ তা বাসে বৈকি, পারলে আঁচলের তলায় লুকিয়ে রাখতো, কিন্তু দানা শুনলে তো। দানা হেসে বলে, "তুমি কিছু খাওনি আমি কি করে খেতে পারি।"
কান্না ভেজা গলায় হেসে বলে, "তাড়াতাড়ি এসো, আমি আটা মাখছি।"
"আচ্ছা আসছি।" বলে দানা ফোন রেখে দেয়।
শঙ্কর একটা লুঙ্গি দিয়েছিল সেটা কোমরে জড়িয়ে নেয়। কোন এক ছেলে কঙ্কনার জন্য জামা দিয়েছিল, সেটা কোনোরকমে উলঙ্গ কঙ্কনা গায়ে জড়িয়ে দানার গাড়ির পেছনের সিটে উঠে বসে। কঙ্কনাকে নিয়ে দানা বেড়িয়ে পড়ে মহানগরের উদ্দেশ্যে, আর নাসরিনকে লঞ্চের মধ্যে বন্দী রেখে বাকিরা হিঙ্গলগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথে যেতে যেতে শহরের এক জায়গায় থেমে কঙ্কনার জন্য কিছু জামা কাপড় কিনে নেয়।
দানা জানতে চায় কেন ওরা এই মহানগর ছেড়ে দিয়ে অন্য শহরে চলে গেছে। তার উত্তরে কঙ্কনা জানায় ওর স্বামী শঙ্কর দেবনাথ আর নাসরিনের স্বামী আমজাদের নতুন জাহাজের কোম্পানিতে চাকরি হয়ে যায়, যার জন্য ওদের এই মহানগর ছেড়ে চলে যেতে হয়। তবে বিত্ত মন্ত্রালয়ের সচিব, রাগিণীর সাথে ওদের যোগাযোগ ছিল। রেড এন্ড ব্লু ক্লাব সম্বন্ধে জানতে চাইলে, কঙ্কনা বলে এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের উদ্যোক্তা আসলে রাগিণী আর সিমোনের মতন কয়েকজন প্রচণ্ড কামুকী মহিলা বছর ছয়েক আগে শুরু করে। বছর পাঁচেক আগে একটা পার্টিতে রাগিণীর সাথে কঙ্কনার আলাপ পরিচয় হয়, তারপরে ওরা এই ক্লাবে যোগদান করে। বছরে প্রায় পাছ ছয় বার এই রিরংসা মাখা ভীষণ যৌন সহবাসের সমাগম হত। ক্লাবের সদস্যরা সবাই বিশাল বড়লোক, এক রাতের জন্য তিরিশ চল্লিশ লাখ টাকা দেওয়া ওদের পক্ষে কিছুই না। রাগিণীর কাছে এটাও জানতে পারে যে একবার টাকা দিলে সেই টাকার আয়ব্যায়ের খোঁজ খবর কেউ নেয় না। সিমোন এই ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত, ক্লাবের টাকা নাকি নিজের ব্যাবসায় খাটিয়েছে সিমোন। টাকার অঙ্ক দেখে ওদের লোভ হয় আর সেই থেকে ওদের মাথায় ঘোরে কি ভাবে কোষাধ্যক্ষ পদ সিমোনের কাছ থেকে হাতাবে। সেই সুযোগ দানার হাত ধরে ওদের ঝুলিতে এসে পড়ে। সাংবাদিকের খুনের পরিকল্পনা জানিয়ে এই কোষাধ্যক্ষ পদ নিজের নামে করে নেয়। বিভিন্ন পার্টি আর এইরকম গোপন কামক্রীড়ার সমাগমে গিয়ে ওরা নতুন সদস্য খোঁজে।
দানা চুপচাপ সব কিছু শোনার পরে ওকে জানিয়ে দেয় ওর কথা মতন কাজ করলে ওদের ছেড়ে দেবে। কঙ্কনাকে এক সপ্তাহের সময় দেয় দানা, তার মধ্যে যদি কাজ করতে না পারে তাহলে বন্দিনী নাসরিনের মৃত্যু অবশ্যাম্ভাবী। ছোট বেলার বান্ধবী নাসরিনের অসহায় অবস্থা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই কঙ্কনা জানিয়ে দেয় ওর কথা মতন কাজ করবে।
বাড়ি ফিরতে আরো রাত হয়ে যায় দানার। মহুয়া জেগেই বসে ছিল, দানা সেই যে দুপুরবেলায় বেরিয়েছিল, সেই থেকে ওর বুকের ধুকপুকানি বিন্দুমাত্র কমেনি। কি যে করে না মাঝে মাঝে। কিন্তু সেই সাথে জানে, এই সাপ গুলোকে না মারা পর্যন্ত ওরা শান্তিতে চোখ বুজে ঘুমাতে পারবে না। সবসময়ে মাথার মধ্যে মৃত্যু ভয় ঘোরাফেরা করবে।
গাড়ির আওয়াজ পেয়েই দৌড়ে নীচে নেমে জিজ্ঞেস করে, "কিছু খাওয়া দাওয়া করেছ, না কি শুধু....." দানার চেহারা দেখে কথাটা শেষ করতে পারে না মহুয়া।
দানাকে দুইহাতে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে বুকের মধ্যে মাথা গুঁজে দেয়। ওর বুকের ধুকপুকানির মাত্রা আর কমতে চায় না কিছুতেই। দানা নিজের বুকের সাথে মহুয়াকে মিশিয়ে দিয়ে ওর মাথা চুম্বন করে বলে, "এই পাপড়ি.... এই তো আমি এসে গেছি।"