20-09-2020, 12:25 AM
রেড এন্ড ব্লু ক্লাব (#০৭)
এতদিন পরে দানার কাছে সব পরিষ্কার হলো কি ভাবে কঙ্কনা আর নাসরিন ওর ফোন নাম্বার আর আসল পরিচয় যোগাড় করেছে। দেবুকে একবার যদি হাতের কাছে পেত..... দানা মনে মনে হেসে ফেলে, দেবু অনেক আগেই নিজের পাপের শাস্তি পেয়ে গেছে।
কঙ্কনা একটু থেমে আবার বলতে শুরু করে, "কিন্তু তোমার এই স্বাস্থ্যবান দেহ দেখে আর থাকতে পারলাম না, তোমাকে ইন্দ্রাণীদির কবল থেকে মুক্ত করে নিজেদের কাজে লাগাবো ভাবলাম। আমাদের বাঁধা ছকে তুমি পা দিয়ে ফেঁসে গেলে। তোমাকে খুন করার আমাদের কোন পরিকল্পনা ছিল না কারন তোমাকে দিয়ে আমাদের বেশ কাজ হচ্ছিল। তুমি উচ্চবিত্ত ক্ষমতাশালী মহিলাদের সাথে সেক্স করতে। এই উচ্চবিত্ত ক্ষমতাশালী মানুষেরা বাগানের মালী, রান্নার লোক, কাজের লোক, গাড়ির চালক এদের মানুষ বলে গন্য করেনা আর সেই সুযোগ আমরা কাজে লাগালাম। তোমাকে যে পেন দেওয়া হত সেইগুলো আসলে ছোট অত্যাধুনিক মাইক্রোফোন। ওর মধ্যে একটা চিপে কথাবার্তা রেকর্ড করা যায়। ওই পেন থেকে অনেকের গোপন কথোপকথন আমরা জানতে পারলাম। যদিও ওদের ব্লাকমেইল করার ইচ্ছে আমাদের ছিল না, তবে এই উচ্চবিত্ত সমাজে অন্যের গোপন খবর জানা গেলে তাকে দমিয়ে রাখা সহজ হয়। আমাদের কাছে একটা জায়গার কোন বার্তালাপ ছিল না। সেটা হলো, লোকেশের বাড়ির।"
দানার মনে পড়ে যায়, মহুয়া ওকে শোয়ার ঘরে জামা কাপড় খুলে ড্রেসিং গাউন পরে আসতে বলতো। তাই যখন মহুয়ার সাথে কথাবার্তা হতো, তখন ওর কাছে পেন থাকতো না।
কঙ্কনা বলে, "আসলে কি জানো, লোকেশ বাজপাই অত্যন্ত ধূর্ত আর সাঙ্ঘাতিক মানুষ। কচি মেয়েদের ওপরে ওর খুব লোভ। ইচ্ছে করেই রাজস্থানের ছোট জায়গা থেকে ছেলের জন্য বৌমা খুঁজেছিল। হারামির বাচ্চার কপাল দেখো, মহুয়া ভারী সুন্দরী। ছেলের বিয়ে দেওয়ার পর থেকেই মহুয়ার ওপরে ওর নজর। ছেলে মারা যাওয়ার পরে সেই সুযোগ একেবারে হাতে চলে আসে।"
এই খবর শুনে দানার সাথে সাথে বাকি লোকেরা চমকে যায়। কিন্তু কঙ্কনা যখন জানে যে মহুয়া বর্তমানে দানার স্ত্রী তাহলে নিশ্চয় ওরা মহুয়াকে দেখেছে অথবা মহুয়ার আসল পরিচয় জানে। সিমোন কি জানে মহুয়া আসলে লোকেশের ছোট ছেলে রাজেশের স্ত্রী?
দানা চোয়াল চেপে গর্জন করে ওঠে, "তোমরা সত্যি বলছো?"
কঙ্কনা কাঁপা কণ্ঠে উত্তর দেয়, "হ্যাঁ, সত্যি বলছি। বিশ্বাস না হলে লোকেশকে জিজ্ঞেস করে নিও। আসলে কি জানো, আমরা কোনোদিন লোকেশকে ভালো চোখে দেখতাম না। কিন্তু লোকটার অনেক টাকা আর এই যৌন সংসর্গের জন্য প্রচুর টাকা খরচ করত। ওর বাড়ি আমরা কোনোদিন যাইনি, তাই ওর বৌমা, মহুয়াকে কোনোদিন দেখিনি। তবে যখন সিমোনের মুখে তোমার স্ত্রীর নাম মহুয়া শুনলাম তখন আমাদের সন্দেহ হয়েছিল বৈকি। কিন্তু হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম কারন, লোকেশ বেঁচে থাকতে ওর কবল থেকে ওর বৌমাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার সাধ্য কারুর নেই। এই আসল কথা বলি, ওই পনেরো কুড়ি দিন তুমি যে মহুয়ার সাথে যৌন সহবাস করেছিলে তাতে লোকেশের তোমার ওপরে সন্দেহ জাগে। বুড়ো ভয় পেয়ে যায়, বারেবারে এই যৌন সংসর্গ করতে করতে তোমার আর মহুয়ার মধ্যে যদি হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। যদি কোনোদিন তুমি ওর বাড়িতে এসে চড়াও হয়ে মহুয়াকে মুক্ত করে নিয়ে যাও? সেই ভয়ে লোকেশ আমাদের নির্দেশ দিল যে তোমাকে মেরে ফেলতে হবে।"
বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, এরা এখন জানে না যে লোকেশ মারা গেছে। না জেনেই তাহলে নিজের খুনের চক্রান্তের প্রতিশোধ নিয়ে নিয়েছে আর মহুয়াকে মুক্তি দিয়েছে।
দানা প্রশ্ন করে, "যদি লোকেশ তখন আমাকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল তাহলে প্রায় এক মাস দেরি কেন করলে?"
কঙ্কনা বলতে শুরু করে, "তোমাকে সোজা মেরে ফেলতে হলে অনেক আগেই গুলি মারতাম, কিন্তু সিমোনের কাছে তোমাকে পাঠানো খুব দরকার ছিল। আসলে সিমোনকে কিছুতেই বাগে ফেলা যাচ্ছিল না। ওই আরেক ধূর্ত কুটিল নারী, নিজের কার্যসিদ্ধির জন্য যেমন নীচে নামতে প্রস্তুত তেমনি খুন করতেও পিছপা হয় না। ঠিক তাই হল, তোমাকে সিমোনের কাছে পাঠালাম, আর প্রথম দিনেই তুমি আমাদের খবর এনে দিলে। শুধু ওই সাংবাদিকের পরিচয় জানতে পারলাম না, তাহলে একসাথে অনেক কেই বাগে ফেলতে পারতাম। সিমোন সেই সাংবাদিককে খুন করার পরিকল্পনা করছিল সেটা জানা গেল। আগে সিমোন এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ ছিল। ওর কাছ থেকে সেই পদ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য ওই বার্তালাপ কাজে লাগালাম। কোটি কোটি টাকা আসে এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবে, সব টাকা খরচ হয় না। একবার সমাগমের পরে কেউই আর সেই টাকার আয় ব্যায়ের হিসাব চায় না, ওই টাকা খুব সহজে এদিক ওদিক করা যায়।"
সব কিছু শোনার পরে দানা চুপচাপ ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে চাপা কণ্ঠে বলে, "আমাকে খুনের চক্রান্তের প্রতিশোধ আমি নেব কঙ্কনা। বল কি ভাবে মৃত্যু বরন করতে চাও? রমিজ ভাইয়ের ছুরির ঘায়ে, না এই সাগর জলে সলীল সমাধি লাভ করে।"
কঙ্কনা আর নাসরিন দুইজনেই কেঁদে ফেলে। হাতজোড় করে ক্ষমা ভিক্ষে করে দানাকে বলে, "দানা আমাদের ছেলে মেয়েরা ছোট ছোট। দয়া করে ওদের মুখ চেয়ে অন্তত আমাদের ছেড়ে দাও।"
দানা বাঁকা হাসি হেসে বলে, "আমি যদি পাখীর সাথে দেখা করতাম তাহলে ওকেও তোমার খুন করতে তাই না? তখন শুচিস্মিতা আর দেবাদিত্যের কথা তোমাদের মনে পড়েনি?"
কঙ্কনা আর নাসরিন মাথা নিচু করে বসে থাকে। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পরে নাসরিন মৃত্যু ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে, "একটা কথা মনে রেখো দানা, তুমি যে আজকে এই ক্লাবের সমাগমে এসেছ তার মাশুল তোমাকে গুনতেই হবে। সিমোন আর মোহন খৈতান তোমাকে চিনে ফেলেছে। হয়তো তোমার পরিচয় ওই ক্লাবের সবাইকে জানাবে না, তবে ওরা তোমাকে ছাড়বে না, কারন তুমি ওদের অনেক গোপন তথ্য জেনে ফেলেছ। নিজেদের বাঁচানোর জন্য ওরা তোমাকে আর তোমার পরিবারকে আক্রমন করবেই। ইতিমধ্যে ওরা হয়ত তোমার বিরুদ্ধে ফাঁদ তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছে।"
দানা মাথা দুলিয়ে হেসে বলে, "ওদের কি ভাবে শায়েস্তা করব সেটা তোমার কাছ থেকে শুনতে চাই না, নাসরিন। তবে তোমরা যদি আমার কথা মতন কাজ কর তাহলে আমি তোমাদের ছেড়ে দেব।"
দানার কথা শুনে অনেকেই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। রমিজ জিজ্ঞেস করে, "কি বলছিস তুই? এই মহিলারা একবার তোকে খুন করার চেষ্টা করেছে, দ্বিতীয় বার করবে না তার প্রমান কি?"
দানা মৃদু হেসে শঙ্করকে জিজ্ঞেস করে, "ও শঙ্করদা, কাবুলি ঘাট আর কতদুর?"
শঙ্কর উত্তর দেয়, "যা ঝড় উঠেছে তাতে প্রায় এক ঘণ্টার মতন আরো লাগবে রে।"
কালো সমুদ্রের মাঝে উত্তাল ঢেউয়ের দোলায় ছোট মাছ ধরার নৌকা খোলামকুচির মতন দুলতে দুলতে কোনোরকমে মোহনার দিকে এগিয়ে চলেছে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে শুধু অসীম উত্তাল বঙ্গোপসাগর। ওদের অনেক দূরে প্রমোদ জাহাজ। এতক্ষণে নিশ্চয় কঙ্কনা নাসরিন আর দানার অনুপস্থিতিত সবাই টের পেয়ে গেছে। এতদুর থেকে জাহাজের কিছুই পরিস্কার দেখা যায় না। ওদের কাছে কোন দূরবীন নেই যে ওই জাহাজে কি হচ্ছে সেটা একবার দেখে। প্রচন্ড দুলুনির ফলে নাসরিন আর কঙ্কনার নাড়িভুড়ি বেড়িয়ে আসার যোগাড়। নাসরিন জল খেতে চাইলে একজন ওর দিকে একটা জলের বোতল এগিয়ে দেয়। কঙ্কনা আর থাকতে না পেরে নৌকার পাটাতনের ওপরে বমি করতে শুরু করে দেয়।
দানা ওদের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলে, "জল খাওয়া হয়ে গেলে তোমাদের ছাড়।"
কঙ্কনা আর নাসরিন ওর কথা শুনে পরস্পরের দিকে তাকায়। তারপরে দানার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "সত্যি বলছো আমাদের ছেড়ে দেবে? আমাদের কি করতে হবে, দানা?"
দানা বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে অঙ্ক কষতে শুরু করে। এমনিতে সিমোন জেনে গেছে যে দানা ওই জাহাজে ছিল। যদি ওরা কঙ্কনা আর নাসরিনের দেখা না পায় তাহলে সন্দেহের তীর সোজা দানার দিকেই আসবে। এখুনি কঙ্কনা আর নাসরিনকে মেরে ওর খুনের প্রতিশোধ নেওয়া ভুল পদক্ষেপ প্রতিপন্ন হবে। এরা যখন রমলাকে বলেনি এইখানে আসার কথা তাহলে নিশ্চয় আগে থেকে সিমোনকেও বলেনি যে ওরা এই সমাগমে আসবে। এখন যখন ওদের দেখা হয়েই গেছে তখন সিমোনের বিরুদ্ধে এদের ব্যাবহার করা যায়।
দানা ওদের জিজ্ঞেস করে, "তোমাদের মধ্যে কে ভালো প্রতারনা করতে পারে? আশা করি কঙ্কনা তুমি ভালো পারো?"
নাসরিন চুপচাপ বসে থাকে আর কঙ্কনা কি বলবে ভেবে পায় না।
নিরুত্তর কঙ্কনার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, "মৌনং সম্মতি লক্ষনম, তাই ত কঙ্কনা। আমি হলফ করে বলতে পারি আমাকে ফাঁদে ফেলার পুরো পরিকল্পনা তোমার মাথা থেকেই এসেছিল। সিমোনেকে ওই কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র সেটাও নিশ্চয় তোমার মাথার উপজ। তাই তো?"
কঙ্কনা মৃদু মাথা দোলায়, "হ্যাঁ।"
দানা বলতে শুরু করে, "তাহলে আমার কথা মন দিয়ে শোনো। তুমি কাল সকালে সিমোনকে বলবে তোমরা ডেকে গিয়েছিলে আর প্রবল ঝড়ের ফলে তোমরা ডেক থেকে জলে পড়ে গিয়েছিলে। জাহাজের অদুরে একটা মাছ ধরার লঞ্চ তোমাদের বাঁচায়। আমার কথা জিজ্ঞেস করলে বলবে, আমি ওই জাহাজে ছিলাম না। মনে থাকবে?"
কঙ্কনা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ, কিন্তু সিমোন তোমাকে চিনে ফেলেছে দানা। তোমার মতন পেটানো দেহ বহুবার সিমোনকে যৌন সুখ দিয়েছে, সেই উলঙ্গ দেহ কি করে ভুলবে।"
দানা ওদের বলে, "তুমি গল্প বানিয়ে বলবে, যে ওই ছেলেকে সিমোনের চিনতে ভুল হয়েছে। মুখোশের পেছনে কে ছিল সেটা তোমরা জানো না এবং বিশ্বাসের সাথে বলবে যে ওই ছেলে দানা নয়।"
কঙ্কনা মাথা দোলায়, "ঠিক আছে, সেটা না হয় ওকে আমরা বলব।"
দানা ওদের বলে, "এবারে আমাকে বল, সিমোন আমার বিরুদ্ধে কি ষড়যন্ত্র করছে?"
কঙ্কনা আর নাসরিন দুইজনে মাথা নাড়ায়, "সেটার বিষয়ে জানি না দানা। কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে ওকে সরিয়ে দেওয়ার পরে সেই রকম ভাবে মেলামেশা আর নেই ওর সাথে। তবে জাহাজে তোমাকে দেখে আমাকে বলেছিল যে তোমাকে এইবারে সরাতে হবে। ঠিক কি ষড়যন্ত্র করছে সেটা জানা নেই। সত্যি বলছি দানা..... আমার ছোট ছেলের মাথার দিব্যি দিয়ে বলছি।"
দানা ওদের কথা বিশ্বাস করে নেয়। সিমোন আর মোহন প্রচন্ড ধূর্ত প্রকৃতির মানুষ, অত সহজে কাউকে নিজেদের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে জানাবে না। একটু ভেবে কঙ্কনাকে বলে, "তুমি ওকে বলবে যে আমার সাথে তোমার দেখা হয়নি। খবরের কাগজে নিশ্চয়ই আমার বিষয়ে পড়ে তুমি রমলার পত্রিকার বার্ষিক উৎসবে আসনি, তাই না?"
কঙ্কনা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ।"
দানা ওদের বলে, "তুমি বলবে যে তোমাদের সাথে আমার দেখা হয়নি। কিন্তু তুমি রমলার মুখ থেকে শুনেছ যে আমি ওকে এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাব নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলাম। এবং নয়না আমাকে এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাব সম্বন্ধে সব কিছু জানিয়ে দিয়েছে।"
এতদিন পরে দানার কাছে সব পরিষ্কার হলো কি ভাবে কঙ্কনা আর নাসরিন ওর ফোন নাম্বার আর আসল পরিচয় যোগাড় করেছে। দেবুকে একবার যদি হাতের কাছে পেত..... দানা মনে মনে হেসে ফেলে, দেবু অনেক আগেই নিজের পাপের শাস্তি পেয়ে গেছে।
কঙ্কনা একটু থেমে আবার বলতে শুরু করে, "কিন্তু তোমার এই স্বাস্থ্যবান দেহ দেখে আর থাকতে পারলাম না, তোমাকে ইন্দ্রাণীদির কবল থেকে মুক্ত করে নিজেদের কাজে লাগাবো ভাবলাম। আমাদের বাঁধা ছকে তুমি পা দিয়ে ফেঁসে গেলে। তোমাকে খুন করার আমাদের কোন পরিকল্পনা ছিল না কারন তোমাকে দিয়ে আমাদের বেশ কাজ হচ্ছিল। তুমি উচ্চবিত্ত ক্ষমতাশালী মহিলাদের সাথে সেক্স করতে। এই উচ্চবিত্ত ক্ষমতাশালী মানুষেরা বাগানের মালী, রান্নার লোক, কাজের লোক, গাড়ির চালক এদের মানুষ বলে গন্য করেনা আর সেই সুযোগ আমরা কাজে লাগালাম। তোমাকে যে পেন দেওয়া হত সেইগুলো আসলে ছোট অত্যাধুনিক মাইক্রোফোন। ওর মধ্যে একটা চিপে কথাবার্তা রেকর্ড করা যায়। ওই পেন থেকে অনেকের গোপন কথোপকথন আমরা জানতে পারলাম। যদিও ওদের ব্লাকমেইল করার ইচ্ছে আমাদের ছিল না, তবে এই উচ্চবিত্ত সমাজে অন্যের গোপন খবর জানা গেলে তাকে দমিয়ে রাখা সহজ হয়। আমাদের কাছে একটা জায়গার কোন বার্তালাপ ছিল না। সেটা হলো, লোকেশের বাড়ির।"
দানার মনে পড়ে যায়, মহুয়া ওকে শোয়ার ঘরে জামা কাপড় খুলে ড্রেসিং গাউন পরে আসতে বলতো। তাই যখন মহুয়ার সাথে কথাবার্তা হতো, তখন ওর কাছে পেন থাকতো না।
কঙ্কনা বলে, "আসলে কি জানো, লোকেশ বাজপাই অত্যন্ত ধূর্ত আর সাঙ্ঘাতিক মানুষ। কচি মেয়েদের ওপরে ওর খুব লোভ। ইচ্ছে করেই রাজস্থানের ছোট জায়গা থেকে ছেলের জন্য বৌমা খুঁজেছিল। হারামির বাচ্চার কপাল দেখো, মহুয়া ভারী সুন্দরী। ছেলের বিয়ে দেওয়ার পর থেকেই মহুয়ার ওপরে ওর নজর। ছেলে মারা যাওয়ার পরে সেই সুযোগ একেবারে হাতে চলে আসে।"
এই খবর শুনে দানার সাথে সাথে বাকি লোকেরা চমকে যায়। কিন্তু কঙ্কনা যখন জানে যে মহুয়া বর্তমানে দানার স্ত্রী তাহলে নিশ্চয় ওরা মহুয়াকে দেখেছে অথবা মহুয়ার আসল পরিচয় জানে। সিমোন কি জানে মহুয়া আসলে লোকেশের ছোট ছেলে রাজেশের স্ত্রী?
দানা চোয়াল চেপে গর্জন করে ওঠে, "তোমরা সত্যি বলছো?"
কঙ্কনা কাঁপা কণ্ঠে উত্তর দেয়, "হ্যাঁ, সত্যি বলছি। বিশ্বাস না হলে লোকেশকে জিজ্ঞেস করে নিও। আসলে কি জানো, আমরা কোনোদিন লোকেশকে ভালো চোখে দেখতাম না। কিন্তু লোকটার অনেক টাকা আর এই যৌন সংসর্গের জন্য প্রচুর টাকা খরচ করত। ওর বাড়ি আমরা কোনোদিন যাইনি, তাই ওর বৌমা, মহুয়াকে কোনোদিন দেখিনি। তবে যখন সিমোনের মুখে তোমার স্ত্রীর নাম মহুয়া শুনলাম তখন আমাদের সন্দেহ হয়েছিল বৈকি। কিন্তু হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম কারন, লোকেশ বেঁচে থাকতে ওর কবল থেকে ওর বৌমাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার সাধ্য কারুর নেই। এই আসল কথা বলি, ওই পনেরো কুড়ি দিন তুমি যে মহুয়ার সাথে যৌন সহবাস করেছিলে তাতে লোকেশের তোমার ওপরে সন্দেহ জাগে। বুড়ো ভয় পেয়ে যায়, বারেবারে এই যৌন সংসর্গ করতে করতে তোমার আর মহুয়ার মধ্যে যদি হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। যদি কোনোদিন তুমি ওর বাড়িতে এসে চড়াও হয়ে মহুয়াকে মুক্ত করে নিয়ে যাও? সেই ভয়ে লোকেশ আমাদের নির্দেশ দিল যে তোমাকে মেরে ফেলতে হবে।"
বুক ভরে শ্বাস নেয় দানা, এরা এখন জানে না যে লোকেশ মারা গেছে। না জেনেই তাহলে নিজের খুনের চক্রান্তের প্রতিশোধ নিয়ে নিয়েছে আর মহুয়াকে মুক্তি দিয়েছে।
দানা প্রশ্ন করে, "যদি লোকেশ তখন আমাকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিল তাহলে প্রায় এক মাস দেরি কেন করলে?"
কঙ্কনা বলতে শুরু করে, "তোমাকে সোজা মেরে ফেলতে হলে অনেক আগেই গুলি মারতাম, কিন্তু সিমোনের কাছে তোমাকে পাঠানো খুব দরকার ছিল। আসলে সিমোনকে কিছুতেই বাগে ফেলা যাচ্ছিল না। ওই আরেক ধূর্ত কুটিল নারী, নিজের কার্যসিদ্ধির জন্য যেমন নীচে নামতে প্রস্তুত তেমনি খুন করতেও পিছপা হয় না। ঠিক তাই হল, তোমাকে সিমোনের কাছে পাঠালাম, আর প্রথম দিনেই তুমি আমাদের খবর এনে দিলে। শুধু ওই সাংবাদিকের পরিচয় জানতে পারলাম না, তাহলে একসাথে অনেক কেই বাগে ফেলতে পারতাম। সিমোন সেই সাংবাদিককে খুন করার পরিকল্পনা করছিল সেটা জানা গেল। আগে সিমোন এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ ছিল। ওর কাছ থেকে সেই পদ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য ওই বার্তালাপ কাজে লাগালাম। কোটি কোটি টাকা আসে এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাবে, সব টাকা খরচ হয় না। একবার সমাগমের পরে কেউই আর সেই টাকার আয় ব্যায়ের হিসাব চায় না, ওই টাকা খুব সহজে এদিক ওদিক করা যায়।"
সব কিছু শোনার পরে দানা চুপচাপ ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে চাপা কণ্ঠে বলে, "আমাকে খুনের চক্রান্তের প্রতিশোধ আমি নেব কঙ্কনা। বল কি ভাবে মৃত্যু বরন করতে চাও? রমিজ ভাইয়ের ছুরির ঘায়ে, না এই সাগর জলে সলীল সমাধি লাভ করে।"
কঙ্কনা আর নাসরিন দুইজনেই কেঁদে ফেলে। হাতজোড় করে ক্ষমা ভিক্ষে করে দানাকে বলে, "দানা আমাদের ছেলে মেয়েরা ছোট ছোট। দয়া করে ওদের মুখ চেয়ে অন্তত আমাদের ছেড়ে দাও।"
দানা বাঁকা হাসি হেসে বলে, "আমি যদি পাখীর সাথে দেখা করতাম তাহলে ওকেও তোমার খুন করতে তাই না? তখন শুচিস্মিতা আর দেবাদিত্যের কথা তোমাদের মনে পড়েনি?"
কঙ্কনা আর নাসরিন মাথা নিচু করে বসে থাকে। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পরে নাসরিন মৃত্যু ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে, "একটা কথা মনে রেখো দানা, তুমি যে আজকে এই ক্লাবের সমাগমে এসেছ তার মাশুল তোমাকে গুনতেই হবে। সিমোন আর মোহন খৈতান তোমাকে চিনে ফেলেছে। হয়তো তোমার পরিচয় ওই ক্লাবের সবাইকে জানাবে না, তবে ওরা তোমাকে ছাড়বে না, কারন তুমি ওদের অনেক গোপন তথ্য জেনে ফেলেছ। নিজেদের বাঁচানোর জন্য ওরা তোমাকে আর তোমার পরিবারকে আক্রমন করবেই। ইতিমধ্যে ওরা হয়ত তোমার বিরুদ্ধে ফাঁদ তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছে।"
দানা মাথা দুলিয়ে হেসে বলে, "ওদের কি ভাবে শায়েস্তা করব সেটা তোমার কাছ থেকে শুনতে চাই না, নাসরিন। তবে তোমরা যদি আমার কথা মতন কাজ কর তাহলে আমি তোমাদের ছেড়ে দেব।"
দানার কথা শুনে অনেকেই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। রমিজ জিজ্ঞেস করে, "কি বলছিস তুই? এই মহিলারা একবার তোকে খুন করার চেষ্টা করেছে, দ্বিতীয় বার করবে না তার প্রমান কি?"
দানা মৃদু হেসে শঙ্করকে জিজ্ঞেস করে, "ও শঙ্করদা, কাবুলি ঘাট আর কতদুর?"
শঙ্কর উত্তর দেয়, "যা ঝড় উঠেছে তাতে প্রায় এক ঘণ্টার মতন আরো লাগবে রে।"
কালো সমুদ্রের মাঝে উত্তাল ঢেউয়ের দোলায় ছোট মাছ ধরার নৌকা খোলামকুচির মতন দুলতে দুলতে কোনোরকমে মোহনার দিকে এগিয়ে চলেছে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকে শুধু অসীম উত্তাল বঙ্গোপসাগর। ওদের অনেক দূরে প্রমোদ জাহাজ। এতক্ষণে নিশ্চয় কঙ্কনা নাসরিন আর দানার অনুপস্থিতিত সবাই টের পেয়ে গেছে। এতদুর থেকে জাহাজের কিছুই পরিস্কার দেখা যায় না। ওদের কাছে কোন দূরবীন নেই যে ওই জাহাজে কি হচ্ছে সেটা একবার দেখে। প্রচন্ড দুলুনির ফলে নাসরিন আর কঙ্কনার নাড়িভুড়ি বেড়িয়ে আসার যোগাড়। নাসরিন জল খেতে চাইলে একজন ওর দিকে একটা জলের বোতল এগিয়ে দেয়। কঙ্কনা আর থাকতে না পেরে নৌকার পাটাতনের ওপরে বমি করতে শুরু করে দেয়।
দানা ওদের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলে, "জল খাওয়া হয়ে গেলে তোমাদের ছাড়।"
কঙ্কনা আর নাসরিন ওর কথা শুনে পরস্পরের দিকে তাকায়। তারপরে দানার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "সত্যি বলছো আমাদের ছেড়ে দেবে? আমাদের কি করতে হবে, দানা?"
দানা বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে অঙ্ক কষতে শুরু করে। এমনিতে সিমোন জেনে গেছে যে দানা ওই জাহাজে ছিল। যদি ওরা কঙ্কনা আর নাসরিনের দেখা না পায় তাহলে সন্দেহের তীর সোজা দানার দিকেই আসবে। এখুনি কঙ্কনা আর নাসরিনকে মেরে ওর খুনের প্রতিশোধ নেওয়া ভুল পদক্ষেপ প্রতিপন্ন হবে। এরা যখন রমলাকে বলেনি এইখানে আসার কথা তাহলে নিশ্চয় আগে থেকে সিমোনকেও বলেনি যে ওরা এই সমাগমে আসবে। এখন যখন ওদের দেখা হয়েই গেছে তখন সিমোনের বিরুদ্ধে এদের ব্যাবহার করা যায়।
দানা ওদের জিজ্ঞেস করে, "তোমাদের মধ্যে কে ভালো প্রতারনা করতে পারে? আশা করি কঙ্কনা তুমি ভালো পারো?"
নাসরিন চুপচাপ বসে থাকে আর কঙ্কনা কি বলবে ভেবে পায় না।
নিরুত্তর কঙ্কনার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বলে, "মৌনং সম্মতি লক্ষনম, তাই ত কঙ্কনা। আমি হলফ করে বলতে পারি আমাকে ফাঁদে ফেলার পুরো পরিকল্পনা তোমার মাথা থেকেই এসেছিল। সিমোনেকে ওই কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র সেটাও নিশ্চয় তোমার মাথার উপজ। তাই তো?"
কঙ্কনা মৃদু মাথা দোলায়, "হ্যাঁ।"
দানা বলতে শুরু করে, "তাহলে আমার কথা মন দিয়ে শোনো। তুমি কাল সকালে সিমোনকে বলবে তোমরা ডেকে গিয়েছিলে আর প্রবল ঝড়ের ফলে তোমরা ডেক থেকে জলে পড়ে গিয়েছিলে। জাহাজের অদুরে একটা মাছ ধরার লঞ্চ তোমাদের বাঁচায়। আমার কথা জিজ্ঞেস করলে বলবে, আমি ওই জাহাজে ছিলাম না। মনে থাকবে?"
কঙ্কনা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ, কিন্তু সিমোন তোমাকে চিনে ফেলেছে দানা। তোমার মতন পেটানো দেহ বহুবার সিমোনকে যৌন সুখ দিয়েছে, সেই উলঙ্গ দেহ কি করে ভুলবে।"
দানা ওদের বলে, "তুমি গল্প বানিয়ে বলবে, যে ওই ছেলেকে সিমোনের চিনতে ভুল হয়েছে। মুখোশের পেছনে কে ছিল সেটা তোমরা জানো না এবং বিশ্বাসের সাথে বলবে যে ওই ছেলে দানা নয়।"
কঙ্কনা মাথা দোলায়, "ঠিক আছে, সেটা না হয় ওকে আমরা বলব।"
দানা ওদের বলে, "এবারে আমাকে বল, সিমোন আমার বিরুদ্ধে কি ষড়যন্ত্র করছে?"
কঙ্কনা আর নাসরিন দুইজনে মাথা নাড়ায়, "সেটার বিষয়ে জানি না দানা। কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে ওকে সরিয়ে দেওয়ার পরে সেই রকম ভাবে মেলামেশা আর নেই ওর সাথে। তবে জাহাজে তোমাকে দেখে আমাকে বলেছিল যে তোমাকে এইবারে সরাতে হবে। ঠিক কি ষড়যন্ত্র করছে সেটা জানা নেই। সত্যি বলছি দানা..... আমার ছোট ছেলের মাথার দিব্যি দিয়ে বলছি।"
দানা ওদের কথা বিশ্বাস করে নেয়। সিমোন আর মোহন প্রচন্ড ধূর্ত প্রকৃতির মানুষ, অত সহজে কাউকে নিজেদের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে জানাবে না। একটু ভেবে কঙ্কনাকে বলে, "তুমি ওকে বলবে যে আমার সাথে তোমার দেখা হয়নি। খবরের কাগজে নিশ্চয়ই আমার বিষয়ে পড়ে তুমি রমলার পত্রিকার বার্ষিক উৎসবে আসনি, তাই না?"
কঙ্কনা মাথা দোলায়, "হ্যাঁ।"
দানা ওদের বলে, "তুমি বলবে যে তোমাদের সাথে আমার দেখা হয়নি। কিন্তু তুমি রমলার মুখ থেকে শুনেছ যে আমি ওকে এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাব নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলাম। এবং নয়না আমাকে এই রেড এন্ড ব্লু ক্লাব সম্বন্ধে সব কিছু জানিয়ে দিয়েছে।"