16-09-2020, 11:54 PM
রেড এন্ড ব্লু ক্লাব (#০২)
কয়েক দিন আগেই রুহির কলেজে এডমিশান করানো হয়ে গেছে। মনার কাজ আরো বেড়ে যায় কিন্তু তাতে ওর দ্বিরুক্তি নেই বরঞ্চ বেশ খুশি। পরেরদিন রুহি প্রথম বার কলেজ যাবে, খুব খুশি। মাম্মা ডাডার সাথে কেনাকাটা করতে বেড়িয়েছে। কেনা কাটার চেয়ে কোন রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে একটু ফুচকা খাওয়া, কোন রাস্তার দোকানে দাঁড়িয়ে এগ রোল খাওয়া, দুইজনে মেয়ে নিয়ে প্রথম প্রেম করতে বেড়িয়েছে। এতদিনে বাড়ি থেকে ঠিক ভাবে ঘুরতে বের হবার সময় পায়নি। আর আগে যাও বের হত সোজা কোন বড় রেস্তুরেন্তে ঢুকে যেত, রাতের খাওয়া না হয় দুপুরের খাওয়া সেরে বাড়ি। রুহিকে নিয়ে পাশে প্রেয়সীকে নিয়ে এই ভাবে বের হওয়া কোনোদিন হয়নি ওদের। একে গ্রীষ্ম কাল তায় আবার এই মহানগরের ভ্যাপসা গরম, কিছুক্ষণের মধ্যেই হাঁপিয়ে ওঠে দুইজনে। শেষ পর্যন্ত গাড়ি করে একটা বড় মলে এসে ঢোকে।
দানার অনেকদিনের ইচ্ছে মহুয়া জিন্স, শার্ট এই সব আধুনিক পোশাক আশাক পরুক। দানার মন রক্ষার্থে কেনেনি যে তা নয় তবে কোনোদিন পরেনি মহুয়া। বাড়িতে থাকলেও সেই শাড়ি না হয় সালোয়ার কামিজ। কোন কোনদিন অবশ্য লম্বা স্কার্ট টপ পরে, তবে সেদিন দানার দৌরাত্ম বেড়ে যায়। হয়ত মহুয়া রান্না ঘরে অথবা স্টাডিতে অথবা শোয়ার ঘরে কিছু একটা করছে, এমন সময়ে হঠাৎ দানা এসে ওকে জড়িয়ে ধরবে। ইলাস্টিক দেওয়া স্কার্টের কোমর বন্ধনি নামিয়ে দিয়ে নরম পাছার ওপরে হাত বুলিয়ে উত্যক্ত করে তুলবে। শয়তানি আর গেল না। একবার এমন উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল যে সম্পূর্ণ জামা কাপড় খোলার অবকাশ পায়নি দুইজনে। স্টাডির মধ্যে টেবিলে ওপরে মহুয়াকে উঠিয়ে দিয়ে, প্যান্টি সরিয়ে কোনোরকমে প্যান্টের চেন খুলে এক ধাক্কায় লিঙ্গ ঢুকিয়ে দিয়েছিল ওর শিক্ত যোনির মধ্যে। মহুয়া কিছু বুঝে ওঠার আগেই কঠিন উত্তপ্ত লিঙ্গকে ওর শিক্ত কোমল যোনি গ্রাস করে নিয়েছিল তাই উপভোগ করা আর কিছু করার ছিল না। মাঝে মাঝে এমন অতর্কিতে হানা দেয় দানা সেটা যে মহুয়ার খারাপ লাগে তা নয়। খুব ভালো লাগে, সারাদিন সেই অনুভুতি গায়ে মাখিয়ে কাটিয়ে দেয়। মাঝে মাঝে আনমনা হয়ে রান্না করতে করতে কিম্বা অফিসে বসে এমনি এমনি হেসে ফেলে আর শরীর চঞ্চল হয়ে ওঠে, গায়ে কাঁটা দিয়ে দেয়। উফফফ কি না একটা পাগলের পাল্লায় পড়া গেছে।
রুহি একমনে এদিক ওদিক তাকিয়ে তাকিয়ে দানা আর মহুয়া হাত ধরে হাঁটে। মহুয়া ওর বাজু ধরে হাঁটতে হাঁটতে জিজ্ঞেস করে, "এই আমরা বিয়ে কবে করবো?"
দানার খুব ইচ্ছে যত তাড়াতাড়ি বিয়েটা সেরে ফেলা যায়। কত জায়গায় স্বাক্ষর করতে গেলে মাঝে মাঝেই মহুয়া ভুল করে মন্ডল লিখে দেয়। একবার অফিসের মাইনের চেক বাউন্স হয়ে চলে এসেছিল। ব্যাঙ্কের ম্যানেজার হেসে ফোন করে বলেছিল, "স্যার এই বারে বিয়েটা সেরে ফেলুন।" কি লজ্জার ব্যাপার।
দানা ওর কাঁধে হাত রেখে কাছে টেনে বলে, "চলো আজকে রাতেই সেরে ফেলি।"
মহুয়ার গাল লাল হয়ে যায়, "ইসসস, তাড়া দেখ শয়তানের।"
দানা অবাক হয়ে বলে, "যাঃ বাবা, এই তো তুমি বললে আবার এখন পিছিয়ে যাচ্ছও কেন? বাড়ি থেকে পালিয়ে মন্দিরে কি কেউ বিয়ে করে না নাকি?"
মহুয়া লাজুক হেসে ওর নাক টেনে বলে, "করে তবে মেয়ে কোলে, বি.এম.ডাবলু. চড়ে বাড়ি পালিয়ে কেউ মন্দিরে গিয়ে বিয়ে করে না।"
পাশের একটা দোকানের কাঁচের জানালার পেছনে একটা পুতুল একটা ছোট টপ আর ছোট সাদা রঙের স্কার্ট পরে দাঁড়িয়ে ছিল। দানা সেটা দেখে মহুয়াকে বলে, "ওই পুতুলের জায়গায় তোমাকে দাঁড় করিয়ে দিলে ভালো লাগত পাপড়ি।"
মহুয়া কটমট করে তাকিয়ে বলে, "ওই পোশাক, না না একদম নয়। ইসসস এটা রুহির স্কারটের চেয়েও ছোট। আর তুমি না....." বলতে বলতে ওর স্কার্ট পরে কামকেলির দৃশ্য গুলো মনে পরে যায় আর কান লাল হয়ে ওঠে।
দানা ওর কানে ফিসফিস করে বলে, "স্টাডি না রান্না ঘর, কোথায় হারিয়ে গেলে?"
মহুয়া ওকে মারতে শুরু করে দেয়, "যাও আর কথা বলবো না।"
মাম্মার হাতে ডাডার মার খাওয়া দেখে রুহি হেসে ফেলে, "যাও আর কত্তা বব্ব না।"
দানাও হেসে ফেলে, "তোকে কি করলাম রে বাঃবা।"
মহুয়া অভিমানী কণ্ঠে বলে, "জিন্স কিনলাম কিন্তু পরতে পারলাম কই। কখন কোথাও বেড়াতে নিয়ে গেছ কি?"
সেটা সত্যি, প্রেম করার পর থেকে এই ঝামেলা সেই ঝামেলায় জড়িয়ে পরে ওদের কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি। এই শহরের মধ্যে কোথাও গেলে মহুয়া জিন্স পরে বের হবে না। দূরে যদি দানা ওকে বেড়াতে নিয়ে যায় তবেই জিন্স পরবে নচেত নয়।
দানা ম্লান হেসে বলে, "পাপড়ি প্লিস রাগ কর না, এই ঝামেলা মিটে যাক আমি তুমি রুহি মিলে এক মাসের জন্য কোথাও বেড়াতে যাবো।"
বেড়াতে যাবার নাম শুনেই রুহি নেচে ওঠে, "ডাডা কোথায় যাবো?"
মহুয়ার কাছেও এক প্রশ্ন। বিয়ের পরে পূর্বতন স্বামী, রাজেশের সাথে একবার শুধু মাউন্ট আবু বেড়াতে গিয়েছিল তারপরে সেই যে গৃহ বন্দী হয়েছিল কোথাও বের হতে পারেনি। দানার হাত ধরে ওই খাঁচা থেকে বেড়িয়ে রোজদিন যেন ওর সাথে কাটানোটা একটা বেড়ানোর মতন।
দানার হাত খানি শক্ত করে ধরে বলে, "তুমি পাশে থাকলে ওই রান্না ঘর আর স্টাডি আমার বেড়ানোর জায়গা।"
সেটা দানাও জানে অবশ্য তাও এই মহানগরের হইচই ছাড়িয়ে দূরে কোথাও মেয়েকে নিয়ে প্রেয়সীকে নিয়ে বেড়াতে যেতে চায়। এক নয় পাহাড় পর্বতে না হয় কোন সমুদ্র সৈকতে।
দানা ওর কোমর জড়িয়ে কাছে টেনে ফিসফিস করে ইয়ার্কি মেরে বলে, "তাহলে আজ রাতে রান্নাঘরেই বেড়াতে যাওয়া যাক কি বলো?"
ওই কথা শুনে লজ্জায় মহুয়া কোথায় লুকাবে ভেবে পায় না। ওর বাজুতে আলতো চাঁটি মেরে বলে, "ধ্যাত, তুমি না সবসময়ে। একদম ভাল্লাগে না কিন্তু।"
এমন সময়ে দানার ফোন বেজে ওঠে। ফোন খুলে রমলার নাম দেখে আশ্চর্য হয়ে যায় দানা। একবার বলে দিয়েছিল যে দুলাল মিত্রের সাথে হাত মেলাতে নারাজ তাও কেন ফোন করেছে? মহুয়া ওকে ফোন তুলে কথা বলতে অনুরোধ করাতে শেষ পর্যন্ত দানা উত্তর দেয়।
ফোন তুলে রমলাকে জিজ্ঞেস করে, "তারপরে কেমন আছো?"
রমলা স্মিত হেসে বলে, "এই ভালো আছি। একটা খবর দেওয়ার ছিল তোমাকে।"
উৎসুক দানা জিজ্ঞেস করে, "কি খবর?"
রমলা ওকে জানায়, কঙ্কনা আর নাসরিন নাকি রমলার পত্রিকার বার্ষিক উৎসবে আসছে না। এই ঝামেলার মধ্যে পড়ে কঙ্কনা আর নাসরিনের কথা এই প্রকার ভুলতে বসেছিল। হঠাৎ রমলার ফোন পেয়ে শরীরের সব স্নায়ু একত্রে সতর্ক হয়ে যায়। সেটা শুনে দানার মাথা গরম হয়ে যায়, রমলাকে শাসায়, নিশ্চয় রমলা ওর নামে কঙ্কনা আর নাসরিনকে লাগিয়ে দিয়েছে তাই ওরা আর এই শহরে আসছে না। রমলা উত্তরে জানায়, এই কয়দিনে দানার নাম যেভাবে খবরের কাগজে ছড়িয়ে পড়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই যে কঙ্কনা আর নাসরিন সেই খবর পড়ে সতর্ক হয়ে গেছে। তবে রমলা সেই সাথে এটাও জানায় যে ওদের এই শহরে অন্য একটা কাজে আসার কথা ছিল। হয়ত রমলাকে না জানিয়ে ওরা সেই কার্যসিদ্ধি করতে আসবে। কিসের জন্য আসবে সেটা অবশ্য রমলা জানে না।
কঙ্কনা আর নাসরিন আসছে না শুনে দানা হতাশ হয়ে পড়ে। যদিও রমলা ওকে কঙ্কনা আর নাসরিনের নতুন ফোন নাম্বার আর ঠিকানা দিয়েছে, কিন্তু অতদুর জায়গায় গিয়ে ওদের খুঁজে বের করে প্রতিশোধ নেওয়া কেমন যেন ঠেকে ওর কাছে।
লোকেশের নামে একটা পোস্ট বক্স ছিল, সেটা লোকেশের বড় ছেলে সোমেশ নিজের নামে করে নিয়েছিল। এতদিন ওই পোস্ট বক্সে দরকারি কাগজ পত্র আসত। যেগুলো সোমেশের দরকারের হতো সেইগুলো রেখে দিয়ে বাকি কাগজ পত্র সব মহুয়াকে পৌঁছে দেওয়া হত।
বিকেলে বাড়ি ফিরে কাজের মেয়ে মণি জানায় মহুয়ার নামে একটা বাক্স এসেছে। একটা মাঝারি আকারের সাদা রঙের কার্ডবোর্ডের বাক্স, তার ওপরে পোস্ট বক্স নাম্বার ছাড়া আর কিছু লেখা নেই। দানা আর মহুয়া মুখ চাওয়াচায়ি করে। এই রকম একটা অদ্ভুত অপরিচিত বাক্সের অর্থ খোঁজার চেষ্টা করে।
দানা বাক্সটা হাতে নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মহুয়াকে ইয়ার্কি মেরে জিজ্ঞেস করে, "কি গো, নতুন নতুন ল্যাপটপ পেয়ে ইন্টারনেট থেকে ডিলডো অথবা ভাইব্রেটার মার্কা কিছু কিনেছ নাকি?"
মহুয়া কিঞ্চিত রেগে গিয়ে আলতো চাঁটি মেরে বলে, "ধ্যাত জত্তসব আজেবাজে কথাবার্তা। আমি কোন দুঃখে ওইসব কিনতে যাবো বলো তো? কোন রাতে কি আমাকে একটু শান্তিতে ঘুমাতে দাও?"
দানা হেসে ফেলে, প্রতি রাতে একবার মহুয়াকে আস্টেপিস্টে ভালো না বাসলে ঠিক ঘুম হয়না। তার ওপরে আবার ফাঁক পেলে একটু এদিক ওদিকে হাত দিয়ে আদর করা, ফাঁক পেলে আর রুহির নজর বাঁচিয়ে রান্না ঘরে অথবা স্টাডিতে একটু কষে আদর করা হয়েই যায়।
দানা ওকে জড়িয়ে ধরে কানেকানে বলে, "চল স্টাডিতে গিয়ে একেবারে একসাথে মিলে এই বাক্স খুলি।"
স্টাডিতে ঢুকে বাক্সটাকে হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে, একবার কানের কাছে ধরে দেখে। এর মধ্যে কেউ আবার বোমা গুঁজে দেয়নি ত? কিন্তু লোকেশের পোস্ট বক্সে আসা, সুতরাং বোমা থাকার সম্ভাবনা খুব কম। সাদা বাক্স খুলতেই ওদের আশ্চর্যচকিত হয়ে যায়। বাক্সের ভেতরে একটা হলদে রঙের আমন্ত্রন পত্র, একটা চাবি আর একটা লাল রঙের একটা কাপড়ের মুখোশ। মুখোশ হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে চেহারার অর্ধেক ঢাকা যায়, সম্পূর্ণ মাথা ঢাকা যায় আর চোখের জায়গায় দুটো ফুটো, সম্ভবত নিজেদের পরিচয় গোপন করার জন্য এই লাল রঙের মুখোশ।
আমন্ত্রন পত্রের এক কোনায় দুটো পান পাতার চিহ্ন, একটা লাল অন্যটা নীল। জলছবিতে এক জোড়া যৌন সঙ্গম রত নর নারীর ছবি। কাগজের ওপরে বড় বড় অক্ষরে গাঢ় বাদামী রঙ্গে ইংরেজি হরফে লেখা "সুধী সদস্য, ওয়ান নাইন সিক্স টু জিরো ফোর টু ফাইভ। রেড এন্ড ব্লু ক্লাব, আপনাকে সাদর নিমন্ত্রন জানায় তাদের বার্ষিক মিলন সম্মেলনে। তারিখ (আগামী কাল) সন্ধ্যে ছ'টা আপনার উপস্থিতি কাম্য। আর.এস.ভি.পিঃ (একটা ফোন নাম্বার দেওয়া)"।
কার্ড, চাবি আর লাল রঙের মুখোশ দেখে দানা আর মহুয়া দুইজনে বিস্মিত হয়ে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই "রেড এন্ড ব্লু ক্লাব" এর কথা মহুয়া লোকেশের মুখে শুনেছিল, দানাকে এই ক্লাবের কথা কঙ্কনা বলেছিল আর একবার গাড়ি চালাতে চালতে নয়নার মুখে শুনেছিল। কিন্তু লোকেশ মারা গেছে তাও কেন এই কার্ড পাঠানো হয়েছে? নিশ্চয় এই ক্লাবের উদ্যোক্তারা এখন হয়ত জানে না যে লোকেশ এই পৃথিবীতে আর নেই। কঙ্কনা লোকেশকে চেনে, সেই ওকে মহুয়ার খবর দেয়, কিন্তু নয়না কি কঙ্কনাকে চেনে? এর উত্তর ওদের জানা নেই। রমলা কি সত্যি জানে না এই বিষয়ে? জলছবি আর পান পাতা থেকে সহজে বোঝা যায় এই সমাগম যৌন কাম ক্রীড়ার সমাগম। কারা এর সদস্য, কি হয় এইখানে? ওই সংখ্যার কি অর্থ, লোকেশের নাম কেন লেখা নেই এই আমন্ত্রন পত্রে? কোথায় এই যৌন সঙ্গমের সমাগম অনুষ্ঠিত হবে সেটা ওই আমন্ত্রন পত্রে লেখা নেই। বহু প্রশ্ন মহুয়া আর দানার মনে ভিড় করে আসে।
দানা ওকে বলে, "কি ব্যাপার বলো তো? এই সংখ্যার অর্থ কি? তোমার কাছে কি লোকেশের কোন ফাইল অথবা জিনিস পত্র আছে?"