16-09-2020, 10:33 PM
স্টাডিতে বসে রুহিকে নিয়ে পড়াতে বসেছিল। ডাডার কাছে কি আর পড়াশুনা হয়? একদম নয়, কত রকম ঘুষ দিতে হয়, তবে একটা অক্ষর পড়ে। একটু পড়ে নে তারপরে চকোলেট দেব, কালকে পুতুল কিনে দেব, পার্কে বেড়াতে নিয়ে যাবো। এখন আবার টিভিতে ওয়াটার পার্ক দেখেছে সেখানে যাওয়ার বায়না ধরে। পড়বে কি, ওর বায়না আর প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে দানা হিমশিম। মহুয়ার ওপরে রেগে যায় দানা, কেন মরতে ওদের ছেড়ে ওই নয়নার সাথে দেখা করতে গেছে। তার চেয়ে ভালো, মেয়েকে নিয়ে একটু পড়াতে বসতে পারত, তা নয় ভদ্রতা দেখাতে গেছে, প্রাণের বান্ধবী সাজতে গেছে। দানা রাগে গজগজ করে আর পিন্টু ওইদিকে বসার ঘরে বসে ডাডা আর রুহির পাঠ যুদ্ধ দেখে হাসাহাসি করে।
মনার সাথে সাথে মহুয়াকে ঢুকতে দেখেই রুহির পড়াশুনা শিকেয় উঠল। "মাম্মা তি এনেতো? মাম্মা তি এনেতো?" বলেই দানার কবল থেকে এক দৌড়ে পালিয়ে যায়।
দানা হাল ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, "এত দরদ যখন বাড়িতে এনে রাখতে পারো তো।"
মহুয়া মিচকি হেসে বলে, "আগে হলে নিজেই যেচে বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসতে, তাই না জিত।"
দানা ওর কথা শুনে হেসে ফেলে, "তুমি না, আর কি বলি।"
মহুয়া ব্যাগ থেকে একটা চকোলেট বের করে রুহির হাতে দিয়ে দানাকে বলে, "মেয়েকে পড়াতে পারলে না? যাই হোক ওই প্রিন্সিপালের সাথে বাজারে দেখা হয়েছিল। কাবেরি ম্যাডাম বলেছেন আগামী সপ্তাহে কলেজে নিয়ে যেতে। বেশি দেরি করলে সেশান নষ্ট হয়ে যাবে।"
দানা মাথা দোলায়, "না না সেশান নষ্ট করতে চাই না। আর কেমন দেখলে নয়নাকে?"
মহুয়া মাথা দুলিয়ে উত্তর দেয়, "ভালো আছে তবে বুঝতেই পারছ খুব গভীর জলের মাছ। ওর প্রকৃত মন বোঝা দুঃসাধ্য ব্যাপার। কথাবার্তা বলে মনে হল আমার ওপরে বেশ নির্ভরশীল। নতুন একটা ম্যানেজার এসেছে, নতুন সেক্রেটারি নিযুক্ত হয়েছে। বাড়ির বাইরে একটা সাদা পোশাকের পুলিস মোতায়ন আছে দেখলাম। তবে এইবারে খুব সাবধানে চলছে নয়না।"
দানা জিজ্ঞেস করে, "আকরাম আর নাসিরের সাথে দেখা হল?"
নয়না মাথা দুলিয়ে জানিয়ে দেয়, আকরাম আর নাসির পালা করে আড়াল থেকে ওর ওপরে নজর রেখে চলেছে।
ঠিক সেই সময়ে মোহনের ফোন আসে দানার কাছে। বাল্য বন্ধু বিমানের মৃত্যুতে মোহন খৈতান একপ্রকার জ্বলছে, ফোন করেই দানাকে দৃঢ় কণ্ঠে বলে, "বাপ্পা নস্কর আর নেই মিস্টার মন্ডল। আপনার মাথার ওপর থেকে কিন্তু ছত্রছায়া উঠে গেছে। এইবারে আমার প্রকল্প গুলো আমাকে ফিরিয়ে দিন।"
সঙ্গে সঙ্গে দানার মনে পরে যায় বিমানের সাথে মিশে সিমোন খৈতান ওর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল। ওকে ধূলিসাৎ করার জন্যেই ওর প্রকল্প গুলো হাতিয়ে নিয়েছিল দানা। প্রকল্প ফিরিয়ে দেওয়ার কোন অর্থ হয়না। ওই হুমকিতে কাবু হয়ে পড়ার মতন মানুষ নয় তাই ঠাণ্ডা মাথায় উত্তর দেয়, "রাজনৈতিক মহল বর্তমানে গরম তেলের মতন টগবগ করে ফুটছে মিস্টার খৈতান। পুলিসের তদন্ত, আদালতের মামলার এখন সুরাহা হয়নি। এমত অবস্থায় আমাদের কিছুদিন শান্ত থাকা বাঞ্ছনীয় মিস্টার খৈতান। আপনি পালিয়ে যাচ্ছেন না আমিও এই মহানগরে আছি। সময় হলেই আপনার সম্পত্তি আপনাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। একটু ধৈর্য ধরুন।"
মোহন তিতিবিরক্ত হয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, "আমার সাথে আবার নতুন কি ছলনা করা হচ্ছে, মিস্টার মন্ডল।"
দানা বলতে যাচ্ছিল, বিমান চন্দের সাথে মিশে ওর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের উচিত শিক্ষা দেবে কিন্তু মাথা ঠাণ্ডা করে উত্তর দেয়, "আপনি মাথা গরম করছেন কেন মিস্টার খৈতান? এই সময়ে মাথা গরম করে কোন কাজ হবে না।"
মোহন চাপা গরগর করে ওঠে, "বিমান আমার বাল্যবন্ধু, ওর মৃত্যুশোকে আমি পাগল হয়ে গেছি।"
দানা হিমশীতল কণ্ঠে ওকে বলে, "আপনার বাল্যবন্ধু মারা গেছে বলে আপনি পাগল হয়ে গেছেন। আসলে কে এর পেছনে সেটা এক বার খুঁজে দেখবেন না?"
দানা চাইছিল মোহনের সন্দেহের তীর নয়নার দিকে যাক তাই ওই উত্তর দেয়।
মোহন ওকে প্রশ্ন করে, "কি বলতে চাইছেন একটু খুলে বলুন মিস্টার মিন্ডল, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না।"
দানা বাঁকা হেসে উত্তর দেয়, "আপনি কি সত্যি জানেন না, না জেনেও না জানার ভান করছেন মিস্টার খৈতান।"
ইচ্ছে করেই মোহনকে আরো খেপিয়ে তুলে বলে, "দেখুন মিস্টার খৈতান, প্রকল্প নেওয়ার সময়ে মিস্টার বিমান চন্দ আর নয়না আমাদের মাঝে মধ্যস্ততা করেছিল। এবারে যখন ফিরিয়ে দেওয়ার পালা, বিমান চন্দ যখন নেই তাহলে নয়নাকে মধ্যস্ততা করতে হবে। কি বলেন?"
যদি ওর তীর ঠিক নিশানায় লাগে তাহলে এইবারে মোহনের ক্ষোভ ওর বদলে নয়নার ওপরে গিয়ে পরবে। নয়নাকে আক্রমন করে শেষ করে দিক তাহলে ওর পথের কাঁটা আপনা থেকেই সরে যাবে আর তারপরে সঙ্গীতাকে খুনের চক্রান্তের রেকর্ড করা আলোচনা নিয়ে সোজা পুলিসের হাতে তুলে দেবে।
রাজনৈতিক মহল সরগরম। এই এলাকার দুই দলের রাজনৈতিক নেতার মৃত্যুর পরে বিধায়ক পদের প্রার্থী হিসাবে একা দুলাল মিত্র। বিমানের দল অন্য একজনকে দাঁড় করাবে বলে ঠিক করে আর বাপ্পা নস্করের দল পিছিয়ে যায়। প্রথমে ভেবেছিল বাপ্পা নস্করের স্ত্রী, ঝুমা নস্করকে দাঁড় করাবে কিন্তু ওদের বিরুদ্ধে এত চুরি জালসাজির তথ্য প্রমান উজাগর হতেই দল পিছিয়ে যায়। একদিন রমলা ফোন করে দানাকে দেখা করতে বলে। দানা জানিয়ে দেয় দেখা করতে পারে, তবে দুলাল মিত্রের সাথে নয়। সেই শুনে রমলা দমে যায়, আসলে দুলাল মিত্র চেয়েছিল দানাকে ব্যাবহার করে এই সিটে পরের নির্বাচন জেতে। কিন্তু দানা সেই পথে হাঁটে না, উল্টে রমলাকে জানিয়ে দেয় যদি রমলা ওর বিরুদ্ধে কোন কুচক্রান্ত করে তাহলে ওর আর দুলাল মিত্রের কানীন সন্তানকে সব বলে দেবে আর দুলালের যে নিষ্পাপ ছবি জনগনের সামনে রয়েছে সেটা খর্ব করে দেবে।
রাতের বেলা বড় আয়নার সামনে প্রসাধনী সারতে সারতে দানাকে জিজ্ঞেস করে, "মোহন কি বলছে গো? এখন বাপ্পা নস্কর নেই ওইদিকে বিমান চন্দ আর নেই। এইবারে দেখবে মোহন খৈতান আবার দুলাল মিত্রের সাথে মিত্রতা করে বসেছে। সেই বিষয়ে কি কিছু ভেবেছ? মনে রেখো তোমার অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে কিন্তু এই কয়েক মাসে।"
দানা উত্তর কি দেবে, মহুয়ার মসৃণ পুরুষ্টু অনাবৃত জঙ্ঘা দেখে পাগল হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। রুহি তখন ঘুমায়নি, বিছানায় শুয়ে মায়ের বকুনি খেয়ে চোখবুজে এপাশ ওপাশ ধপাস করছে। দানাকে ওই ভাবে তাকাতে দেখে আরও বেশি উত্যক্ত করে তোলে মহুয়া। প্রায় ঊরুসন্ধি পর্যন্ত গাউন টেনে সম্পূর্ণ পেলব জঙ্ঘা অনাবৃত করে দুই হাতে ক্মির মাখিয়ে লাগায়, আর আড় চোখে দানার ছটফটানি উপভোগ করে। নীচে ঝোঁকার ফলে সুউন্নত স্তন যুগল গাউনের ভেতর থেকে বেড়িয়ে পরে। ছোট ব্রার মধ্যে হাঁসফাঁস করে ওঠা নিটোল স্তনের মাঝের গভীর খাঁজ দানাকে হাতছানি দিয়ে ডাক দেয়। দানা চোয়াল চেপে একবার রুহির দিকে তাকায় একবার মহুয়ার দিকে তাকায়। রুহি চোখ চেপে বন্ধ করে পা দাপিয়ে জানিয়ে দেয় এখন ওর চোখে ঘুম আসেনি। বারমুডার ভেতরে পাহাড় তৈরি হয়ে গেছে। ফর্সা জঙ্ঘা জোড়া মৃদু হলদে আলোয় চিকচিক করছে। ঠোঁটে মাখা দুষ্টু মিষ্টি হাসি যেন বলতে চায়, মেয়ে এখন জেগে আছে জিত, সুতরাং কিছু করতে পারবে না।
মহুয়া চোখ পাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, "কি হল বিকেলে মোহনের সাথে কি কথা হল বললে না তো?"
দানা মহুয়াকে খুলে বলে বিকেলের বার্তালাপ। সেই সাথে একটু চিন্তায় পরে যায়। মৈনাকের মৃত্যুর সম্বন্ধে পুলিসকে কিছুই জানায়নি দানা তাই মোহন খৈতান আর সিমোনে খৈতানের ওপরে পুলিসের আঁচ পরে না। আগে ওদের পথে বসাতে চায়। বিকেলের কথাবার্তা শুনেই বুঝে গেছে এই অভূতপূর্ব দুর্ঘটনায় মোহন খৈতান পাগল কুকুরের মতন তেতে আছে। বিমান মারা যাওয়াতে ওদের সব শক্তি খর্ব হয়ে গেছে, সম্পত্তির অনেকাংশ বিমান চন্দ আর নয়নার কথায় দানার নামে লিখে দিয়েছিল। সব শুনে মহুয়া ওকে চুপ করে থাকার পরামর্শ দেয়, কিন্তু সেই সাথে জানে মোহন খৈতান ওকে ছেড়ে দেবে না।