16-09-2020, 03:39 PM
পর্ব ৬
৬
“এই যে শান্তা ভাবি, কেমন আছেন? মেয়েকে কলেজে দিয়ে ফিরলেন বুঝি?”
সিড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে হাপাচ্ছে শান্তা। দোতালার ল্যান্ডিঙেই দেখা হয়ে গেলো প্রতিবেশী ভাবির সঙ্গে। বরাবরের মতন মুখে চওড়া হাসি। তবে চকিতে একবার তাকিয়ে স্বস্তি ফেলল শান্তা। মহিলার হাতে ব্যাগ, নিশ্চয়ই বেরোচ্ছে। বেশীক্ষণ নিশ্চয়ই বকবক করবে না। ঠোঁটে আপনা আপনিই হাসি ফুটল শান্তারর। “জি, আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”
“এই তো একটু মার্কেটে যাবো,” হাসল মহিলা। “ওহ আপনার ভাই এসেছিলো তো, আপনাকে না পেয়ে ফিরে যাচ্ছিলো তখনই আমার সঙ্গে দেখা সিড়িতে...”
“ভাই!” ভ্রূ কুচকে উঠে শান্তার। গত পাঁচ বছরেও ওর কোন ভাইয়েরা এখানে আসে নি। আজ হঠাৎ ভাই এলো কি করে? তবে কি ইতিমধ্যেই ফয়সাল ডিভোর্স এর ব্যাপারে ওর ভাই এর সঙ্গে কথা বলে ফেলেছে? কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠে শান্তার। ওর চেহারার পরিবর্তনটা টের পায় যেন মহিলা।
“হ্যাঁ, তাই তো বলল - খোঁচা খোঁচা দাড়ি মুখে, আগেও দেখেছি আপনাদের… মাথায় কাচা-পাকা চুল,”
চকিতে ধরতে পারল শান্তা। স্বস্তির শ্বাস ফেলবে নাকি আরও উদ্বিগ্ন হবে, ভেবে পেলো না। “ওহ হ্যাঁ হ্যাঁ, ভাই...। আমার বড় ভাই,”
“হ্যাঁ সে পরিচয়ই দিলো,” মহিলা একটু চোখ সরু করে তাকিয়েছে এইবার। “আমি বললাম যখন আপনি এখনই চলে আসবেন, তখন বলল একটু বাহির থেকে ঘুরে আসছে।”
“ওহ আপনাকে ধন্যবাদ,” শান্তা আর দাড়ায় না, দ্রুত মহিলার পাশ কাটিয়ে উপরে উঠে যায়। মহিলা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে।
দরজা খুলতে গিয়ে হাত কাপে শান্তার। চাবি পড়ে যায় হাত থেকে। আবার তুলে নিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে। বড় করে দম নিচ্ছে ও। রাজীব ভাই আবার এসেছিলো? এই সকাল বেলা! কেন? ভীষণ গরম করছে শান্তার। হেটে ফিরেছে আজ ও। কাজেই ঘেমে গেছে অনেকটাই। বসার ঘরের ফ্যানটা ছেড়ে দিয়ে খাবার ঘরে চলে আসে শান্তা। ফ্রিজ খুলে ঠাণ্ডা পানির বোতলটা বার করে। মুখ খুলে গ্লাসে পানি ঢেলে ঢকঢক করে খেয়ে নেয় পুরোটা। ধিরে ধিরে আবার যখন স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস নিতে পারছে শান্তা, তখনই দরজায় বেল বাজে। শান্তাকে বলে দিতে হয় না - কে এসেছে! আনমনে নিজের ঠোঁট জোড়ায় জিভ বুলায় শান্তা। বুকটা টিবটিব করছে মৃদু। দরজা খুলতে এগোয় শান্তা।
#
রাজীব ভাই এর হাতে অনেক গুলো প্যাকেট। মুখে আন্তরিক হাসি। দরজা খুলে তাকে ভেতরে আমন্ত্রণ জানালো শান্তা স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই। তারপর দরজাটা লাগিয়ে দিতে দিতে জানতে চাইলো; “আপনি নাকি দোতালার ভাবিকে আমার বড় ভাই হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন?”
“কি করবো বল!” হেসে উঠে রাজীব। “বলতে তো পারি না যে হবু বউ এর কাছে যাচ্ছি, হা হা হা...”
“রসিকতা করবেন না রাজীব ভাই,” শান্তা গম্ভীর স্বরে বলতে চাইলেও ওর ঠোঁটে হাসি ফুটে। আশ্চর্য! ওর ঠোঁটে হাসি ফুটছে কেন? রাজীব এর রসিকতা এত মধুর লাগছে কেন? জোর করে মুখটাকে গম্ভীর করার চেষ্টা করে শান্তা। “এত গুলো কি এনেছেন?”
“তুলির জন্য একটা টেডি বেয়ার নিয়ে আসলাম,” বড় একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দেয় রাজীব ভাই। “আর তোমার জন্য ছোট্ট একটা উপহার,”
“উপহার!”
রাজীব ভাই নিজেই অপর প্যাকেটটা খুলে ভেতর থেকে একটা শো-পিস বার করে। কাঠের কারুকাজ করা দারুণ একটি শ-পিস। দুটো বক, একে অপরের সঙ্গে মাথা ঠেকিয়ে অনেকটা হার্ট শেপ তৈরি করেছে ওদের মাঝে। সেটা শান্তার হাতে ধরিয়ে দেয় রাজীব। হাত বদল করার সময় রাজীব ভাই এর পুরুষালী স্পর্শে কেপে উঠে শান্তা। কেমন একটা বিদ্যুৎ এর স্ফুলিঙ্গ ছুটে যায় যেন আজ এই স্পর্শে! কেপে উঠে ও। খানিকটা বিব্রত বোধ করে। শ-পিসটা হাতের মাঝে নিয়ে ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগে। “বাহ, চমৎকার, খুব সুন্দর...”
“দাও,” রাজীব আবার ওটা শান্তার হাত থেকে নেয়। তারপর সেটাকে টেবিলের উপর রেখে মোড়ক গুলো দলা পাকিয়ে এক দিকে সরিয়ে রাখে। “আমি বোধহয় একটু জলদীই চলে এসেছি। তুমি ঘেমে আছো দেখছি,”
“মাত্র এলাম তো,” অপ্রস্তুত হয় শান্তা। “আপনি একটু বসুন না, আমি চট করে হাত মুখ ধুয়ে চা বসিয়ে আসছি...”
প্রথমেই রান্নাঘুরে ঢুকে চুলোয় চায়ের পানি বসিয়ে দেয় শান্তা। তারপর শোবার ঘরে চলে যায়। তোয়ালেটা নিয়ে বাথরুমে ঢুকে। দরজা লাগিয়ে প্রথমেই বেসিনের সামনে দাড়ায় শান্তা। কলটা ছেড়ে দিয়ে আয়নায় নিজের দিকে তাকায়। কি করছে ও! ওর মনে এমন আশ্চর্যরকমের অনুভূতি হচ্ছে কেন? ফয়সালের ব্যাপারে দুশ্চিন্তা করার কথা ওর। কিন্তু তা না করে রাজীব ভাই এর রসিকতায় হাসি পাচ্ছে শান্তার? এই যে সকাল সকাল রাজীব ভাই চলে এলো ওর বাসায়, একটি বারও ব্যাপারটাকে অস্বাভাবিক মনে হল না? রাজীব ভাই দোতালার ভাবিকে পরিচয় দিলো ওর ভাই হিসেবে - পুরো ব্যাপারটাতেই কেমন একটা গোপনীয়তার ঘ্রান পাচ্ছে শান্তা। মনে হচ্ছে পঁয়ত্রিশ নয়, ওর বয়স আঠারো হয়ে গেছে। কেমন একটা রোমাঞ্চ অনুভূত হচ্ছে ওর তল পেটে। নাহ, এই অনুভূতিগুলোকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না। মোটেই যাবে না। রাজীব ভাই এসেছে, ভালো হয়েছে। ফয়সালের ব্যাপারটা নিয়ে খোলামেলা কথা বলা যাবে। কি করে ফয়সালকে বিপথ থেকে ফিরিয়ে আনা যায়, এই ব্যাপারে পরামর্শ চাইবে শান্তা। একবার নিজের মনটাকে স্থির করে নিয়ে শান্তা চোখে মুখে জলের ছিটে দেয়। হাত মুখ ধুয়ে তোয়ালে নিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বেড়িয়ে আসে বাথরুম থেকে। দরজাটা খুলে শোবার ঘরে পা রাখতেই চমকে যায় শান্তা।
“রাজীব ভাই আপনি এখানে!”
রিয়ান খান