16-09-2020, 03:03 PM
পর্ব ৫
৫(খ)
পরদিন সকালে ফয়সাল বাজার সাজার করে অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে যেতেই রাজীব ভাইকে ফোন করলো শান্তা। খুলে জানালো খুলনা যাবার ব্যাপারটা। সব শুনে চুপ করে রইলো রাজীব। শান্তা যখন জানতে চাইলো, এখন কি করতে পারে ওরা - তখন বলল; “তুমি চিন্তা কর না শান্তা। অফিসের কাজেও যেতে পারে ফয়সাল। আমি বরং আজ ওর অফিসের সামনে গিয়ে পিছু নেবো তার। আমি রাতে তোমায় ফোন করে জানাবো!”
এই বলেই ফোন রেখে দিলো রাজীব। বাকিটা দিন বেশ কষ্ট করেই কাটল শান্তার। কোন কিছুতে মন দিতে পারল না। রান্না করতে গিয়ে আঙ্গুল পুরিয়ে ফেলল। নুনটাও একটু কম হল তরাকারিতে। বিকেল বেলা ফয়সাল ফোন করে জানালো, অফিস থেকে বেরোচ্ছে সে খুলনার উদ্দেশ্যে। তাকে সাবধানে যেতে বলল শান্তা। তারপরই রাজীব ভাইকে আরেকবার ফোন দিয়েছে শান্তা। ফোনটা ধরে নি রাজীব।
বিকেলের পর আয়নার সামনে বসে শান্তা নিজেকে দেখে নিজেই চমকে গেলো। এক দিনেই চোখ এর নিচে কালশিটে পড়ে গেছে তার। চেহারা কেমন দেবে গেছে যেন। ভাবনা থেকে মুক্তির জন্য বিকেলেই খানিকটা রূপচর্চায় মন দিলো শান্তা। তারপর এক কাপ চা করে, তুলির জন্য কিছু নাস্তা বানিয়ে টিভির সামনে বসলো।
রাজীব এর ফোন এলো যখন আবার, তখন ঘড়িতে রাত এগারোটা বাজে। তুলিকে খাইয়ে দাইয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়েছে শান্তা। নিজে খুব একটা খেতে পারে নি। টেবিল গুছিয়ে, তুলির ঘরের আলো নিভিয়ে টিভির সামনে বসেছিল শান্তা। তখনই রাজীব ভাই এর ফোন এলো। বুকটা কেপে উঠলেও দ্রুত ফোনটা কানে লাগাল শান্তা। “হ্যালো! রাজীব ভাই!”
“হ্যাঁ শান্তা, কেমন আছো?” ওপাশে রাজীব এর ভারী গলা শুনতে পারল শান্তা।
“দুশ্চিন্তায় কিছু ভালো লাগছে না,” শান্তা বলে উঠে। “কিছু জানতে পেরেছেন? একলা গেছে নাকি ফয়সাল?”
“শান্তা দেখো, আমি চাই না তুমি ঘাবড়ে যাও...” রাজীব ওপাশে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। “তুমি অযথা দুশ্চিন্তা কর না। নিজেকে একলা ভাবার কিছু নেই। ফয়সাল যদি ডিভোর্স চায়...”
“ফয়সাল এর সঙ্গে কে ছিল রাজীব ভাই?” শান্তার গলা কেপে উঠে। তারপরও বড্ড দৃঢ় শুনায় তার গলা। সারা দিন ভাবার যথেষ্ট অবকাশ পেয়েছে শান্তা। নিজেকে শক্ত করতে হবে বুঝতে পেরেছে।
“মেয়েটি তার অফিসে নতুন জয়েন করেছে,” রাজীব ভাই ফোনে জানায়। শরীরটা কেমন শুন্য অনুভূত হয় শান্তার কাছে। ঝিমঝিম করে মাথাটা। “তাকে নিয়েই গেছে। গাড়ি ভাড়া করে। আমার মনে হয় - সত্যিকার অর্থেই পরকীয়া করছে ফয়সাল।”
“আমি এখন কি করবো রাজীব ভাই?” শান্তা নিজের হাতের আঙ্গুল নিজেই কামড়ে ধরে।
“যদি ফয়সাল তোমায় ডিভোর্স দিতে চায়, তাহলে কোর্টে যাবো আমরা,” রাজীব বলে। “যথেষ্ট তথ্য প্রমাণ ছাড়া কেস জিততে পারব না। তাই ফয়সালকে এখনই কিছু জানাতে পাড়বে না তুমি। একদম গোপন করবে তুমি যে টের পেয়ে গেছ। ও যেন ঘুণাক্ষরেও টের না পায়। একবার হাতে তথ্য প্রমান চলে এলে কোর্টে যাবো আমরা। তোমার ভয় নেই, আমি আছি তোমার সঙ্গে… শান্তা! শুনতে পারছ?”
“জি রাজীব ভাই,”
“তুমি একদম চিন্তা কর না,” ওপাশ থেকে শান্তনা দেয় রাজীব। “ফয়সাল যে পাপ এর দরজা খুলেছে, তাতে ও নিজেই তলিয়ে যাবে...”
“আমা-আমার-আমার ভয় করছে রাজীব ভাই,” কেপে উঠে শান্তার কণ্ঠ।
“ভয় এর কিছু নেই শান্তা,” শান্তনা দেয় রাজীব। “আমি তোমাদের দেখবো। তোমাকে আর তুলিকে আগলে রাখবো...”
“আমি রাখলাম রাজীব ভাই, আমি আর কিছু ভাবতে পাড়ছি না...…”
“তুমি ঘুমিয়ে পড় শান্তা, লম্বা একটা ঘুম দাও সকালে শরীরটা ঝরঝরে লাগবে।” ফোন কেটে দেয় শান্তা উত্তর না করেই।
ঘুমাতে সে রাতে অল্পই পারল শান্তা। বারে বারে জেগে উঠলো ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্ন দেখে। একবার চোখের সামনে ভেসে উঠলো বিরাট একটা কালো রঙের ফটক। ফটক এর ওপাশে কতো গুলো মানুষ দাড়িয়ে আছে। ডাকছে ওরা শান্তাকে, ডাকছে হাত ছানি দিয়ে। ওদের পঢ়নে আলখেল্লা, ওদের লম্বা লিকলিকে জিভ বেড়িয়ে আছে। ওদের ভিড়ে হেটে যাচ্ছে ফয়সাল। ফয়সালের কোলে তুলি, বাপের কাধের উপর দিয়ে হাতছানি দিয়ে বিদেয় জানাচ্ছে শান্তাকে। ভয়ে চিৎকার করে উঠলো শান্তা। তারপরই ধরমরিয়ে উঠে বসলো বিছানায়। একবার নয় - দুবার একই স্বপ্ন দেখল সে। আর ঘুমুতে ইচ্ছে করলো না। বালিশটা টেনে নিয়ে বসার ঘরের দিকে এগোল।
রিয়ান খান