Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
মায়ের মৃত্যুর পরে আর বাবা পালিয়ে যাওয়ার পরে, শায়ন্তনি আর বুবাই দিদার সাথে, নুরপুরে মামাবাড়িতে চলে আসে। মামা মামির লাথি ঝেঁটা ইত্যাদি সহ্য করে বুবাইকে কোলে আঁকড়ে ধরে বাঁচার পথ খোঁজে। ওর দিদা ওকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল, তাই দশ ক্লাস পর্যন্ত পড়াশুনা করতে পেরেছিল। দিনে দিনে বুবাই বড় হল আর শায়ন্তনি বুঝতে পারল যে ওর ভাই মন্দবুদ্ধি।

সব থেকে বড় বাধা মায়ের পেটের ভাই, বুবাই। ছোট বেলায় মায়ের বুকের দুধ পায়নি, রোজ রাতে দিদির বুকে মায়ের স্তন খুঁজতে চেষ্টা করত। ছোট শায়ন্তনি কেঁদে বুক ভাসিয়ে দিত, কিন্তু ওর করার কিছু ছিল না। একটু দুধ পেলে নিজের বুকের মধ্যে লাগিয়ে ভাইয়ের মুখে ধরতো, সেই দুধ টুকু চেটে খেয়ে মনের সুখে দিদিকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়তো বুবাই। দিন দিন যত বড় হল তত একা একা হয়ে গেল, কেউ ওর সাথে খেলে না, কেউ ওর সাথে কথা বলে না। কিন্তু শায়ন্তনি ভাইকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারে না। দিদিকে ওর পাশে চাই, বড় হলেও ওর সেই স্তন থেকে দুধ খাওয়ার নেশা আর ছাড়ানো গেল না। ধীরে ধীরে বুবাই যত বড় হলো, তত ওর আবদার বেড়ে উঠল। শায়ন্তনির দেহে তখন ভরা যুবতীর লক্ষন। আড়ালে নিজের উধভিন্ন যৌবনা কচি স্তন খুলে দুধে মাখিয়ে যুবক বুবাইয়ের মুখে ধরতে হতো তবে ওর ভাই ঘুমাতো। দুধ খাওয়াতে খাওয়াতে সদ্য যুবতী শায়ন্তনির শরীরে যৌবনের সুখের হাতছানি মাঝে মাঝেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠতো। আর সেই সময়ে শায়ন্তনি প্রেমে পড়ল, নুরপুর গ্রামের একটা ছেলের সাথে। ছেলেটা ওর কলেজেই পড়তো।

দশ বছর পরে, দিদা মারা যেতেই ওর মামা মামি অত্যাচার ওর ওপরে অনেক বেড়ে ওঠে। এক রাতে পাশের বাড়ির একটা মেয়ের সাহায্যে মামা মামির খাবারের সাথে ইঁদুর মারার বিষ মিশিয়ে মেরে ফেলে। তারপরে নিশুতি রাতে, নিজের ব্যাগ কাঁধে চাপিয়ে, ছোট ভাইয়ের হাত ধরে অজানা পথের দিকে পাড়ি জমায় শায়ন্তনি। নিরুদ্দেশের পথে এক নাম না জানা ট্রেনে উঠে পরে। শায়ন্তনির তখন বাড়তি বয়স, চাপা জামা ওর ফুলের কুঁড়ির মতন কচি দেহ পল্লবকে ঠিক ভাবে ঢেকে রাখতে অখম। ভিড় ভর্তি ট্রেনে অনেকেই ওর দিকে জুলুজুলু ক্ষুধার্ত চোখে তাকিয়ে।

সেই ট্রেনে সমরেশ নামের একজন বয়স্ক ভদ্রলোক শায়ন্তনিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। ভাইকে নিয়ে মৃত্যুর চেয়ে অজানা পথে পাড়ি দেওয়া সঠিক বলে মনে হয় তখন। খিদেতে পেট জ্বলছে, হাতে পয়সা কড়ি নেই, তাই কিছু না ভেবেই পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব সমরেশের সাথে ওর বাড়িতে আসে। সমরেশে ওকে একটা কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়, বাড়ির কাজের সাথে সাথে পড়াশুনা আর ভাইকে দেখা। দেখতে সুন্দরী, ফর্সা, ঠিক মায়ের গায়ের রঙ আর বাবার সৌন্দর্য পেয়েছিল শায়ন্তনি। বারো ক্লাস পর্যন্ত পড়াশুনায় বেশ ভালো ছিল, ইচ্ছে ছিল আরো পড়াশুনা করার। সমরেশ বাবু বিপত্নীক, তাই বাড়ির সব কিছুতে ওদের অধিকার ছিল। সমরেশ বাবু সৌখিন মেজাজের লোক ছিলেন, বাড়িতে মদের আসর, লাস্যময়ী নারীদের নিয়ে কাম কেলির আসর বসতো। মাঝে মাঝেই পারলে শায়ন্তনিকে কাছে ডেকে গায়ে হাত বুলিয়ে দিতেন, এদিক ওদিকে ছুঁয়ে একটু আদর করে দিতেন। শায়ন্তনির খারাপ লাগতো, কিন্তু মুখ বুঁজে সহ্য করে থাকতো। একরাতে সমরেশ বাবু প্রচুর মদ খেয়ে শায়ন্তনিকে ;., করার চেষ্টা করে। বুবাই চেঁচিয়ে উঠে মারতে আসে সমরেশ বাবুকে। উল্টে সমরেশ বাবু, বুবাইয়ের চুলের মুঠি ধরে মেঝেতে ফেলে এলো পাথারি কিল চড় লাথি মারতে শুরু করে দেয়। সেই দেখে শায়ন্তনির মাথায় রক্ত চড়ে যায়, হাতের কাছে একটা ফুলদানি দিয়ে মাথার মধ্যে জোরে মারতেই, মাথা ফেটে যায় সমরেশ বাবুর। টলতে টলতে বারান্দা দিয়ে নিচে পড়ে গিয়ে মৃত্যু ঘটে। সবাই ভাবে, সমরেশ বাবু মদের ঝোঁকে বারান্দা থেকে পড়ে মারা গেছে।

বালিকা শায়ন্তনি আর সেই কচি বালিকা নেই, ইতিমধ্যে ওর শরীরে মাদকতাময় সৌন্দর্যের দেখা দিয়েছে। সমরেশ বাবু মারা যাওয়ার পরে ওর এক ফটোগ্রাফার বন্ধু, আদিত্য ওকে কাজের অছিলায় নিজের বাড়ি নিয়ে যায়। এক রাতে আদিত্য, শায়ন্তনিকে নিজের স্তন খুলে ভাইকে দুধ খাওয়ানোর দৃশ্য দেখে ফেলে। উদ্ভিন্ন যৌবনা ভীষণ সুন্দরী শায়ন্তনিকে দেখে, আদিত্য নিজের কামক্ষুধা আর সংবরণ করতে পারে না। একাকী ঘরের মধ্যে বন্ধে করে ওর সতীত্ব হরন করে। তবে ওর নারী সুখের বদলে আদিত্য ওকে সামান্য এক মেয়ে থেকে, মডেলিংয়ের পথ দেখিয়ে ছিল। শায়ন্তনি আর বুবাইকে নিয়ে আদিত্য এই মহানগরে আসে। প্রতিরাতে আদিত্যকে শারীরিক সুখ দিত শায়ন্তনি, আর দিনের বেলা আদিত্য ওকে নিয়ে বিভিন্ন মডেলিং এজেন্সির কাছে নিয়ে যেত। শায়ন্তনি নিজের নাম বদলে নয়না বোস হয়ে উঠল। একটু আধটু অভিনয় করতে পারতো নয়না, সেই দেখে আর প্রডিউসারের সাথে শুয়ে বেশ কয়েকটা ছোট ছোট রোল পেয়ে গেল। এক রাতে মদের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে আদিত্যকে মেরে ফেললো।

নিজের ইতিহাস মুছে শায়ন্তনিকে সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দিল নয়না বোস। যুবতী শায়ন্তনির মৃত্যুর পরে, সেই নারী হয়ে উঠল উদ্ভিন্ন যৌবনা লাস্যময়ী নয়না বোস। এই ঝকমকে দুনিয়ায় বাঁচতে হলে এক অবলা নারীকে নিজের শরীর সম্বল করেই বাঁচতে হবে। তারপরে আর পেছনে তাকায়নি নয়না। প্রডিউসার, ডাইরেক্টারের সাথে শুয়ে বসে নিজের কাজ হাসিল করেছে।

বছর চারেক আগে একটা পার্টিতে বাপ্পা নস্করের সাথে দেখা হয়। বাপ্পা নস্কর ওকে বড় নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখায়। এতদিন শুধু শরীর দিয়ে ছোট ছোট রোল পেত, বাপ্পা নস্করের গুন্ডামির হুঙ্কারে বেশ কয়েকটা বড় রোল পেয়ে গেল। পেটে বিদ্যে ছিল, আর অভিনয় ভালোই করতে পারতো, নয়নাকে তাই আর পিছনে তাকাতে হলো না। ধীরে ধীরে নয়না নামকরা এক অভিনেত্রী হয়ে গেল। তবে বাপ্পা নস্কর ওকে বিশেষ টাকা দিয়ে সাহায্য করতো না, বরং ওকে স্বপ্ন দেখাত একদিন ওকে রাজনীতিতে নামাবে। কিন্তু চার বছর পরেও নয়নাকে রাজনীতিতে নামায়নি। নয়নার ইচ্ছে ছিল অভিনয় ছেড়ে রাজনীতি করার। যৌবন যতদিন ততদিন অভিনয়। বড় জোর দশ বারো বছর কাজ করা যায়, তারপরে বয়স হলে বয়স্ক অভিনেত্রীদের কেউ চিনতে চায় না। রাজনীতি করলে সারা জীবনের জন্য টাকা কামানো যাবে। বিমানের সাথে হাত মিলিয়ে বাপ্পা নস্করকে সরানো চক্রান্ত করে, কিন্তু দানা ওর ওপরে গুপ্তচর গিরি করাতে সেটা আর সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। বাকি কথা দানা ভালো ভাবেই জানে।

সবকিছু শোনার পরে, দানা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে। মহুয়া ওকে বলে, "এইবারে বুঝলে নয়না কত সাঙ্ঘাতিক মেয়ে। ওর প্রান ভোমরা ওর ভাই বুবাই। সুমিতা আর সমুদ্রকে ছাড়া এই জগতে আর কাউকে বিশ্বাস করতো না। এখন নিরুপায় তাই পরিতাপে আমাকে খুলে সব বলে দিল। সুমিতা, ওর মামা বাড়ির পাশের বাড়ির মেয়ে, যে ওকে ওর মামা মামিকে মারতে সাহায্য করেছিল। আর সমুদ্র সেই ছেলে যাকে ছোটবেলায় ভালোবেসে ছিল।"

"শায়ন্তনি" যে সমুদ্রের "শায়নি" সেটা এইবারে দানার কাছে পরিস্কার হয়ে গেল। দানার বুঝতে বাকি রইলো না যে এক আহত সাপের গর্তে মাথা ঢুকিয়েছে। নয়না ভেঙ্গে পড়েছে বটে, তবে উঠে দাঁড়ালে ওদের ছোবল মারবেই এই ধূর্ত ছলনাময়ী মহিলা।

সব কিছু শোনার পরে দানা খানিক চিন্তা করে ওকে বলে, "নয়না একটা আহত সাপ, পাপড়ি। বর্তমানে একটু বেকায়দায় পড়ে গেছে তাই ছোবল মারতে দেরি হবে। গতকাল রাত্রে আমি ওই বাড়িতে শুনেছি যে বিমান আর মোহন খৈতান আমার বিরুদ্ধে কোন চক্রান্ত করেছিল। ওরা তোমাকে আর রুহিকে অপহরন করার চক্রান্ত করেছিল।"

কথাটা বলার সময়ে দানার গলা কেঁপে ওঠে। সেই সাথে ভীষণ ক্রোধে আর বিস্ময়ে মহুয়ার চোখ ফেটে জল চলে আসে।

দানা বলে চলে, "এর পেছনে নিশ্চয় সিমোনে আর নয়নার মাথা আছে। বাপ্পাকে কি ভাবে মারা হবে সেটার ছক আসলে নয়না একসময়ে আমাকে বলেছিল, আর সিমোনের ছকেই কিন্তু সঙ্গীতার বদলে মৈনাকের মৃত্যু হয়েছে। সুতরাং এরা যেদিন জানতে পারবে বিমান, সমুদ্র আর সুমিতার মৃত্যুর পেছনে আমাদের মাথা কাজ করেছে, তাহলে আমাদের শেষ করে দেবে।"

মহুয়া দাঁতে দাঁত পিষে দানাকে বলে, "ওকে ওইখানে শেষ করে দিয়ে এলে না কেন?"

দানা মাথা চুলকে বলে, "তুমি বারন করেছিলে, তাই।"

একবার ঘাড় ঘুরিয়ে মেয়েকে দেখে দানার হাত শক্ত করে ধরে বলে, "এখন কি করা যায় বলো তো?"

একটু খানি ভেবে বলে, "আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আছে। বর্তমানে নয়না খুব ভেঙ্গে পড়েছে আর তুমি ওকে বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছ। মোহন আর সিমোন এই সুযোগ নিতে চেষ্টা করবে, তার আগেই আমি যদি ওর পাশে ভালো বান্ধবীর মতন গিয়ে দাঁড়াই তাহলে নয়না বুকে বল পাবে। আর তখন দেখবে, ওকে ধরার জন্য মোহন হাঁসফাঁস করছে। সেই সুযোগ আমাদের কাজে লাগাতে হবে জিত।"

পরামর্শটা বেশ লাগে দানার, সেইসাথে মহুয়াকে পরামর্শ দেয় যেন খুব সাবধানে মেপে মেপে কথা বলে ওর সাথে।




********** পর্ব চোদ্দ সমাপ্ত **********
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 16-09-2020, 12:45 AM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)