Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
রক্তের খেলা (#১২)

বাড়িতে ঢুকে দেখে, নিতা আর কমলা বুবাইকে আগলে ধরে জুবুথুবু হয়ে বসার ঘরে বসে। বলা ছিল যে রাতে ফিরবে না কিন্তু সকাল থেকে দরজার কলিং বেল আর থামতে চায় না। নয়নার দেহ রক্ষী এতজন মানুষ কে সামলাতে পারেনি।

নয়নাকে পেয়ে ওর ভাই ওকে জড়িয়ে ধরে মাথা দুলিয়ে প্রশ্ন করে, "ওরা কেন? ওরা কেন?"

কি উত্তর দেবে ভেবে পায়না নয়না। ওকে নিয়ে ভেতরে যেতে বলে দেয়। দানা ওকে বলে সারাদিন যেন বাড়ির বাইরে না বের হয়। হয়ত পুলিস আসতে পারে আর পুলিস আসলে যেমন ভাবে মহুয়া ওকে শিখিয়ে দিয়েছে ঠিক সেই কথা গুলো যেন বলে। বাধ্য মেয়ের মতন নয়না মাথা নাড়ায়।

এমন সময়ে মহুয়ার ফোন, "এই তাড়াতাড়ি বাড়িতে এস। বড়দা আর সাত্যকি বাবু এসেছেন।"

দানার মাথায় বাজ পড়ে। তবে এটা জানে সাত্যকি বাবু যখন বাড়িতে এসেছেন তখন এই সমস্যার সুরাহা কিছু একটা হবে। তাড়াতাড়ি গাড়ি চালিয়ে বাড়ি পৌঁছে যায়। বাড়িতে পৌঁছেই দেখে বসার ঘরে সাত্যকি চ্যাটার্জি আর মহেন্দ্র বাবু বসে।

দানাকে দেখে মহেন্দ্র বাবু স্মিত হেসে প্রশ্ন করে, "কখন ফিরেছিস তুই?"

মহুয়া ওর হয়ে উত্তর দেয়, "রাতেই ফিরে এসেছিল, বড়দা।"

সাত্যকি চ্যাটার্জি চোরা হাসি দিয়ে বলেন, "শেষ পর্যন্ত আইন হাতে তুলে নিলি?"

সাত্যকি চ্যাটার্জির পাশে বসে দানা ওকে বলে, "বিশ্বাস করুন স্যার, আমি মেয়ের দিব্যি দিয়ে বলছি, আমি আইন হাতে নেইনি। আমার কাছে পিস্তল বন্দুক কিছুই ছিল না।"

মহেন্দ্র বাবু চোরা হাসি দিয়ে দানার দিকে তাকায়। সাত্যকি চ্যাটার্জি জিজ্ঞেস করাতে দানা এক এক করে সব কিছু খুলে বলে তাঁকে। দানা শুধু মাত্র একটা জায়গায় মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে বলে রক্তারক্তি কান্ডের আগেই নয়নাকে নিয়ে বেড়িয়ে গিয়েছিল সেটা বলে কারন নয়নার আর ওর বক্তব্যে যদি মিল না থাকে তাহলে সমস্যায় জড়িয়ে পড়বে। গুলি খরচ না করেই নিখুঁত ষড়যন্ত্র ফেঁদে সবাইকে একসাথে শেষ করে দেওয়ার কথা শুনে সাত্যকি চ্যাটার্জি বিস্মিত হয়ে যান। দানা সেই সাথে এটাও জানায় যে বাপ্পা নস্করের বিরুদ্ধে ওর কাছে প্রচুর তথ্য প্রমান আছে। বাপ্পা নস্কর ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে ফারহানের ওপরে গুলি চালিয়ে হত্যার চেষ্টা করেছিল।

ফোন করে ইন্দ্রনীল আর ভুপেনকে বাড়িতে ডাকে। ইন্দ্রনীল আর ভুপেন, সাত্যকি চ্যাটার্জিকে সব ঘটনা খুলে বলে। নিতাই ভাড়াটে গুন্ডা এনেছিল। ফারহানকে মারার কারন শুনে ক্রোধে ঘৃণায় সাত্যকি চ্যাটার্জির শরীর রি রি করে জ্বলে ওঠে। দাঁতে দাঁত পিষে বলেন এইরকম নিষ্ঠুর দুরাত্মা পাপী লোকের মৃত্যু হওয়া অনেক ভালো।

সঙ্গীতার পাঠান চিপ সাত্যকি চ্যাটার্জির হাতে দানা তুলে দেয়। ওই চিপে, বাপ্পা নস্করের বিরুদ্ধে প্রচুর তথ্য প্রমান রয়েছে, সেই সাথে কোন আমলা কোন পুলিস কোন সরকারী অফিসার কবে কোথায় কত টাকা খেয়ে কি কি কাজ করেছে সব কিছু আছে। সাত্যকি চ্যাটার্জি অবাক হয়ে দানা আর মহুয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। মহেন্দ্র বাবুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেন এতদিন এইসব ওকে কেন জানানো হয়নি। মহেন্দ্র বাবু জানিয়ে দেন, সময় হয়নি তাই জানানো হয়নি। এখন সময় হয়েছে আর সেই সাথে যাদের সরানোর কথা ছিল তারা সবাই সরে গেছে। মহেন্দ্র বাবু বলেন, দানার মাথায় বুদ্ধি আছে। মহেন্দ্র বাবুর কাছে যতদিন কাটিয়েছে ততদিন খালি সময়ে বই পড়ে কাটিয়েছে। সবকিছু শোনার পরে অনেকক্ষণ চুপ করে বসে থাকেন সাত্যকি চ্যাটার্জি।

তারপরে মহুয়ার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলেন, "সেদিন নাতনি কে দেখতে পেলাম না। কোথায়?" মহুয়া আর দানা স্বস্তির শ্বাস নেয়। মহুয়া ছলছল চোখে সাত্যকি চ্যাটার্জির দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতা ব্যাক্ত করে। সাত্যকি চ্যাটার্জি মহুয়ার ছলছল চোখ দেখে বলেন, "কি হলো বৌমা? যাও নাতনিকে নিয়ে এসো, একটু দেখি।"

মহুয়া রুহিকে কাছে ডাকে। রুহি মায়ের আড়াল থেকে জুলুজুলু চোখে মহেন্দ্র বাবু আর সাত্যকি চ্যাটার্জির দিকে তাকিয়ে থাকে।

সাত্যকি চ্যাটার্জি রুহিকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করেন, "তোমার কি খেতে পছন্দ?"

মহুয়ার আড়ালে দাঁড়িয়ে রুহি আদো আদো কণ্ঠে বলে, "চকোলেট।"

সাত্যকি চ্যাটার্জি হেসে বলেন, "ইসসস রে সোনা, চকোলেট তো আনিনি।"

রুহি পুলিসের উর্দি পরা সাতকি চ্যাটার্জিকে দেখে নালিশ জানায়, "দুত্তু ডাডা, ডিনার করেনি আমাল সাথে।"

সাত্যকি চ্যাটার্জির সাথে সবাই হেসে ফেলে। ওকে খাওয়ানোর সময়ে মাঝে মাঝেই ভয় দেখানো হয়, তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও না হলে পুলিস ধরে নিয়ে যাবে। ও জানে পুলিস "দুত্তু" লোকেদের ধরে নিয়ে যায় তাই নালিশ।

সাত্যকি চ্যাটার্জি ওকে হেসে বলেন, "আজকে মাম্মা আর বাবা তোমার সাথে ডিনার করবে। চিন্তা নেই।" তারপরে দানাকে বলেন, "শোন, তোকে একবার আমার সাথে আমার অফিসে যেতে হবে। সেইখানে তোর স্টেটমেন্ট নেব। চিন্তা নেই তোর, তোর গায়ে আঁচ পড়বে না।"

স্বস্তির শ্বাস নেয় দানা আর মহুয়া। পুলিস গোয়েন্দা নিয়ে বড় ভয় ছিল, কখন কোথা থেকে কি সুত্র খুঁজে বের করবে তার নেই ঠিকানা। ওদের অভয় দিয়ে বলেন, ভুপেন আর ইন্দ্রনীল কে ও একবার পুলিস স্টেসানে এসে স্টেটমেন্ট দিতে হবে। আদালতে তিনি সব চেষ্টা করবেন যাতে বাপ্পা নস্করের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়। যেহেতু নয়না, বিমান চন্দ আর বাপ্পা নস্করের সাথে জড়িত তাই এখুনি কিছু কথা দিতে পারছেন না, তবে চেষ্টা করবেন নয়নাকে দূরে সরিয়ে রাখতে। দানা সেটাই চায়, একবার পুলিসের হাতে চলে গেলে পুলিস ওর ওপরে নজর রাখবে তাহলে ওর চক্রান্তের কি হবে। মহুয়া আর দানা চোখে চোখে কথা সারে।

মহুয়া মৃদু আবেদন জানায় সাত্যকি চ্যাটার্জির কাছে, "প্লিস একটু দেখবেন। মেয়েটা বড় ভেঙ্গে পড়েছে।"

সাত্যকি চ্যাটার্জি ওর দিকে তাকিয়ে হেসে বলে, "সত্যি বৌমা, তোমার মন বোঝা বড় মুশকিল। রাতে দানা আর নয়না কি কি করে বেড়িয়েছে সেটা জেনেও?"

মহুয়া মৃদু হেসে বলে, "মেথর যখন পায়খানা পরিস্কার করে তখন কিছুটা গুয়ের ছিটে ওর গায়ে পরে। মেথর যে একেবারে পরিস্কার থাকার চেষ্টা করবে সেটা কিন্তু কখনই সম্ভব নয়। আর এটাই অকাট্য সত্যি।"

সাত্যকি চ্যাটার্জি হেসে ফেলেন মহুয়ার কথা শুনে, "তুমি অনেক বুদ্ধিমতী আর সহনশীল মেয়ে, বৌমা।" দানার দিকে তাকিয়ে বলেন, "উঠি রে, দেখি কাল অথবা পরশু তোকে অফিসে ডেকে নেব।" রুহির দিকে তাকিয়ে হেসে বলেন, "পরের বার তোমার জন্য অনেক চকোলেট আনবো।"

সকাল থেকে একবিন্দু স্বস্তির শ্বাস নিতে পারেনি দুইজনার কেউই। বাড়ি ফাঁকা হতেই সোফায় গা ভাসিয়ে দেয় দানা। রুহি ওর কোলে ঝাঁপিয়ে কিছুক্ষণ মারামারি করে।

মহুয়া ওর পাশে বসে বলে, "বাপ রে, একের পর এক ঝড় চলছে।"

দানা মৃদু হেসে বলে, "একটা ঝড় শেষ হলো, এইবারে দ্বিতীয় ঝড়ের প্রস্তুতি নিতে হবে।"

মহুয়া গলা নামিয়ে ওকে বলে, "তোমার সাথে অনেক কথা আছে।"

দানা ভুরু কুঁচকে ইশারায় জানতে চায়, "কি?"

মহুয়া বলে, "ওই তোমার নয়নার ব্যাপারে। মেয়েটা প্রচন্ড ধুরন্ধর।"

দানা মাথা দোলায়, "জানি।"

মহুয়া বলে, "কি জানো?"

সত্য গোপন করে দানা উত্তরে বলে, "আমার বিরুদ্ধে কিছু একটা চক্রান্ত করেছিল ওরা, এই টুকু জানি।"

মহুয়ার চেহারা সঙ্গে সঙ্গে কঠিন হয়ে যায়, "মেয়েটা সত্যি শয়তানের গ্রহে জন্মেছিল। জানো ওর আসল নাম কি? ওর নাম শায়ন্তনি বসাক।"

দানা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, "তুমি কি করে জানলে।"

মহুয়া ওকে বলে, "কাঁদতে কাঁদতে পাপের পরিতাপ করতে করতে নিজের কথা খুলে বলে আমাকে। ওর ইতিহাস শুনে আমার গায়ের রক্ত হিম হয়ে গেছিল জানো।"

তারপরে, মহুয়া, নয়না বোসের গল্প দানাকে শুনায়। নয়নার আসল নাম, নয়না নয়, ওর নাম শায়ন্তনি বসাক। ওদের বাড়ি ছিল দূরে খয়রাসোল নামে এক জায়গায়। বাবা, অশোক বসাক রেল ইঞ্জিনের কারখানায় চাকরি করতো, আর মা, মৃদুলা বসাক ছিলেন গৃহিণী। কুড়ি বছর আগে, যখন বুবাই খুব ছোট, হামাগুড়ি পর্যন্ত দিতে জানত না, সেই সময়ে এক সন্ধেতে শায়ন্তনির বাবা, ওর মা আর মায়ের মামাতো ভাই, সুখেনকে খুন করে। শায়ন্তনি তখন বাইরের বারান্দায় ভাইকে নিয়ে পুতুল খেলায় মত্ত ছিল। রক্তাক্ত বাবা ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে ওর ভাইকে তুলে ধরে মেঝের ওপরে ছুঁড়ে মারতে উদ্যত হয়। কচি বাচ্চাটার মাথা ফেটে যায়। ছোট শায়ন্তনি, বাবার এই রুদ্র মূর্তি দেখে ভয় পেয়ে মা'কে ডাক দেয়, কিন্তু ঘরের মধ্যে ঢুকে মায়ের আর দুর সম্পর্কের মামার মৃত দেহ দেখে ভয় সিটিয়ে যায়। ওর বাবা, ওর ভাইকে মেরে ফেলতে যায় তখন একটা দা দিয়ে শায়ন্তনি ওর বাবার হাতের ওপরে বসিয়ে দেয়। শায়ন্তনি তারস্বরে কান্না জুড়ে দেয়। কাটা হাতে ওর বাবা ওইখান থেকে পালিয়ে যায়। ছোট বালিকা শায়ন্তনি ওর অজ্ঞান ভাইকে বুকে ধরে মাথা থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধ করার প্রবল প্রচেষ্টা করে। আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে ওদের সাহায্যের জন্য, সঙ্গে সঙ্গে বুবাইকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শায়ন্তনির দিদা ওদের ভার নিতে চলে আসে। চিকিৎসা করে ডাক্তার ওদের জানায় যে মাথার ঘিলুতে জোর আঘাতের ফলে বুবাই আর পাচজনের মতন সাধারন জীবন যাপন করতে পারবে না।
[+] 1 user Likes Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 15-09-2020, 08:27 PM



Users browsing this thread: 8 Guest(s)