15-09-2020, 05:55 PM
**************নতুন পর্ব******************
২৭ পর্ব
দুজনেই উত্তেজিৎ কি আছে এর ভিতরে,অমিত আর উত্তেজনা চেপে রাখতে না পেরে বললো আচ্ছা কি থাকতে পারে এর ভিতরে?অঞ্জলী ডাইভ করতে করতে একবার অমিতের দিকে তাকিয়ে বললো,সেটা তো একটু পরই জানতে পারবো আমরা। কিন্তু তুমি যখন জানতে চাচ্ছো সেক্ষেএে বলতে পারি কোন দলিল বা গোপন নথি জাতীয় কিছু হতে পারে এটা আমার ধারনা।কারন ফাইলটা দেখে অনুমান করতে পারি কোন কাগজ পত্রই আছে!
প্রায় বিশ মিনিট পর অঞ্জলীর গাড়ি থামলো আশ্রমের গেটে রামলাল গেট খুলে দিতেই হনহন দুজনে হেঁটে চলে এলেন অঞ্জলীর রুমে,দুজনেরই যেন আর তর সইছেনা।রুমে এসেই অমিত বললো এক গ্লাস জল দাও আগে উত্তেজনায় গলা শুকিয়ে গেছে।অঞ্জলী জল এনে দিতেই ঢকঢক করে খেয়ে নিয়ে বললো এবার এটা খোলো ভিতরে কি আছে না জেনে আর থাকা যাচ্ছেনা।অঞ্জলী এবার রুমের জানালা দরজা সব বন্ধ করে দিলেন,সাবধানের মার নেই।এবার অঞ্জলী এক এক করে মোড়ক খুলতে লাগলো,আর ততোই যেন দুজনেই আরো বেশি উত্তেজিত হয়ে পরছে।সব শেষে দেখা গেলো কাংখিত জিনিস।অঞ্জলীর অনুমানই সঠিক ভিতরে অনেক গুলা কাগজ,কোন গুপ্তধন না।এবার অমিতের চোখ গেল প্যাকেটের কোনায় ছোট্ট একটা লাল ব্যাগ,ওটা হাতে নিয়ে অঞ্জলীর দিকে তাকালো,অঞ্জলী ব্যাগটা হাতে নিলো কিন্তু খুললো না। অমিত বললো কি হলো দেখো ওগুলা কিসের কাগজ আর কি আছে ওই ব্যাগে!না রাজকুমার এখন না।এখন আশ্রমে অনেক মানুষের আনাগোনা।তুমি বরং আজকের রাতটা এখানেই থেকো।তখন নিরিবিলিতে দুজনে দেখবো।কারণ আমার ধারনা এই কাগজ গুলা যখন ঠাকুমা এতো গোপন করে রেখেছে,তখন নিশ্চয় কোন ব্যাপার আছে।অঞ্জলীর কথার অবাধ্য হওয়া সেটা অমিত ভাবতেই পারেনা।তাই অঞ্জলীর কথাই মেনে নিলো।
অঞ্জলী অমিতকে বিশ্রাম নিতে বলে বাইরে বেড়িয়ে গেলো,আশ্রমের দেখাশোনার জন্য।বাইরে পুকুর ঘাটে বসে আছে অঞ্জলী,পুজার আর বেশি দেরি নেই।ওদিকে সুব্রত হয়তো সব তথ্য প্রমান জোগার করে ফেলেছে,শুধুমাত্র অঞ্জলী তার দেবীর সমান তাকে মামণি বলে তাই এখনো ব্যাপারটা গোপন রেখেছে।অঞ্জলী জানতো ডাঃ অমলেশ মূখার্জীর মৃত্যুর জন্য একদিন না একদিন সে ফেসে যেতে পারে,কিন্তু অঞ্জলীর তাতে কোন কষ্ট নেই,তার বিদ্রোহী রাজকুমার ভাল আছে এটাই তার কাছে সব থেকে বড় ব্যাপার।
অঞ্জলী কখন বেড়িয়েছে আসার আর কোন খোঁজ নাই।বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে অমিত একটু ঘুমিয়ে গেছিলো,যখন উঠলো তখন দেয়াল ঘড়িতে বলছে সন্ধ্যা ৬ টা।অনেকটা সময় ঘুমিয়েছে সে।কিন্তু অমিত জানে না এর মাঝে অঞ্জলী একবার এসেছিলো কিন্তু অমিত ঘুমাচ্ছে দেখে আর ডাকেনি,কিছুক্ষণ অমিতের ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেছে।তারপর অমিতের জন্য সন্ধ্যার নাস্তা বানিয়ে আবার তার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা পুকুর ঘাটে গিয়ে বসে আছে।অমিত উঠে কিছুক্ষণ এদিক ওদিক খুঁজলো কিন্তু কোথাও না পেয়ে রিসেপসনের সুদীপ্তার কাছে গিয়ে বললো তোমাদের ম্যাডাম কোথায়?সেটা ঠিক জানিনা স্যার আমি দেখছি ফোন করে। অমিত বাঁধা দিলো না না তার দরকার নেই,তুমি শুধু বলো আশ্রমের কোথায় থাকতে পারে?স্যার ম্যাডাম অবসরে পুকুর ঘাটে বসে থাকেন।
অমিত এবার পুকুর ঘাটের দিকে গেল,সত্যি অঞ্জলী বসে আছে,অমিত চুপিসারে গিয়ে পিছন থেকে অঞ্জলীর কাধে হাত রাখলো,অঞ্জলী প্রথমে একটু চমকে উঠলেও পরবর্তীতে পিছনে না তাকিয়েই বললো ও রাজকুমার তুমি।এবার অমিত সামনে গিয়ে অঞ্জলীর পাশে বসে বললো তুমি বুঝলে কি করে ওটা আমি!!অঞ্জলী অল্প হেসে বললো যার জন্য পুরো জীবন যৌবন উৎসর্গ করে দিলাম আর তার স্পর্শ বুঝবো না!!
এবার অঞ্জলী উঠে দাঁড়িয়ে বললো চলো চলো তোমার জন্য নাস্তা বানিয়ে রেখেছি সেই কখন,চলো খাবে।আর একটু বসিনা!?অমিত বললো!না না এমনি তোমার শরীর পুরো ঠিক নেই।আগে চলো,আজ্ঞা বহন কারী অমিত চললো অঞ্জলীর পিছু পিছু।
বন্যাকে অঞ্জলী ফোন করে জানিয়ে দিলো অমিত আজ তার কাছে থাকবে।বন্যাও সুযোগ পেয়ে দুষ্টুমী শুরু কি গো মাসিমনি আমার ছোট কাকুকে কি একদম ঘায়েল করে ফেললে!?এই দুষ্টু মাসিমনির সাথে দুষ্টুমি হচ্ছে দাঁড়াও কাল তোকে দেখাবো মজা।
বন্যার সাথে কথা শেষে রাতের খাবার খেয়ে নিলো অমিত আর অঞ্জলী,খাওয়া শেষে অমিত বললো চলো ওগুলা দেখি আমার আর তর সইছে না।তুমি রুমে যাও আমি এগুলা গুছিয়ে আসছি,অমিত রুমে চলে গেল,অঞ্জলী দশ মিনিট পর রুমে ঢুকে জানালা দরজা সব বন্ধ করে দিলো।তারপর আলমারী থেকে ব্যাগটা বের করলো।তারপর দুজনে বিছানার উপর উঠে বসে ব্যাগ থেকে ছোট্ট লাল ব্যাগ আর কাগজ গুলা বের করবো,অনেক গুলা কাগজ এক দিস্তার মত।অঞ্জলী একবার অমিতের দিকে তাকিয়ে প্রথম কাগজটা হাতে নিলো,অমিভ ইশারায় পরতে শুরু করলো,,,!
আমার বিদ্যোহী রাজকুমার এই সব কাগজ গুলো তুমি যখন পাবে তখন হয়ত আমি আর এই পৃথিবীতে থাকবো না।সেই জন্য রামলালের কাছে আমি একটা চিরকুট রেখে যাচ্ছি।তুমি যদি কখনো দেশে ফেরো এটা রামলাল তোমাকে দিবে,তা না হলে ওটা আর কারো হাতে পরবেনা।তুমি যখন এগুলো পরছো তার মানে তুমি চিরকুটের অর্থ বের করতে পারছো,আর আমি এটা মনে করি এই কাজেও তুমি অঞ্জলীর সাহায্য নিয়েছো।এতোটুকু পড়ে অঞ্জলী অমিতের দিকে তাকালো।থামলে কেন?শুরু করো!!
এই কাগজ গুলো পেয়ে তুমি কি ভাবছো জানিনা,কিন্তু তোমার ব্যাকুলতা দমন করতে আগে থেকেই বলে রাখী এখানে কোন গুপ্তধনের ব্যাপার নেই।তাই কোন পাতা বাদ দিয়ে না পড়ে এক এক করে সব গুলো পড়ো।
ইতি তোমার ঠাকুমা!
তার মানে কোন গুপ্তধনের ব্যাপার না সেটা ঠাকুমা আগেই বলে রেখেছে,তাহলে কি আছে এসব কাগজে?অমিত কথা গুলো বললো অঞ্জলীর দিকে তাকিয়ে।সেটা জানিনা রাজকুমার তার থেকে বরং চলো সব গুলো পড়ে দেখা যাক,অমিত ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো।আবার শুরু করলো অঞ্জলী,,,,
এই কথা গুলো তোমার না জানলেও চলতো আমার বিদ্রোহী রাজকুমার কিন্তু আমি এক বিপদের আশাংকা দেখেছি তাই এগুলো লিখে যাচ্ছি যদি দেশে আসার পর তুমি এসব উদ্ধার করতে পারো তখন তুমি যাতে সাবধান হতে পারো।তুমি তখন জন্মাওনি দাদুভাই।আজ এসব বলতেও আমার খারাপ লাগছে কিন্তু তোমাকে না জানিয়ে আমি থাকতে পারলাম না।আমার ছোট ছেলে মানে তোমার বাবা ছিলেন তোমারই মত জেদি কিন্তু অতি সরল মানুষ জাগতিক প্যাচ সে বুঝতো তা,তোমার দাদু সবে মাএ আর্মি থেকে রিটায়ার্ড করে কিছুদিন অবসর কাটিয়ে এই রায় গ্রুপের ব্যাবসা শুরু করেছে।উনার পরিশ্রম আর সততায় কিছুদিনের ভিতর রায় গ্রুপ শহরের এক নামীদামী প্রতিষ্ঠানের খাতায় নাম লেখালো।আমার পাঁচ ছেলে আর এক মেয়ে,মেয়েটাকে আমার স্বামী চাকুরিতে থাকা অবস্থায় বিয়ে দেন,কিন্তু কপাল দোষে অল্প দিনে বিধবা হয়ে বাপের বাড়ি ফিরে আসতে হয়। তারপর একে একে সব ছেলের বিবাহ শেষে তোমার বাবা মানে আমার ছোট ছেলের বিয়ে দিই। আমাদের পরিবারে সবাই এক সাথে থাকা এবং এক আত্মা হলেও ছোট ছেলেটা ছিলো ঠিক তোমার মত আমার নেউটা।সব ঠিকঠাকই চলছিলো,ছেলেরাও বড় হয়েছে তোমার দাদু ছেলেদের ব্যবসার ভিতর ঢুকানোর সিদ্ধান্ত নিলেন।যথা সময়ে ছেলেদের হাতে সব দ্বায়িত্ব তুলে দিলেন।কারো কোন সমস্যা নাই পরিবারে রাজ শেখর রায় চৌধুরি মানে তোমার দাদুর কথাই শেষ কথা।একে একে সব ছেলেদের সন্তানদি হলো,আমাদের বাড়িটাও নাতী নাতনিতে ভরে উঠলো,কিন্তু বিধিবাম আমার ছোট ছেলে বৌমার কোন সন্তান হলো না বিয়ের তিন বছরের মাথায়ও,এটা নিয়ে তোমার বাবা মা সাথে আমি আর তোমার দাদুও চিন্তিত হয়ে পরলাম,একদিন আমি তোমার মাকে আমার ঘরে ডেকে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে,তোমার মা যেটা বললো সেটা হলো এমন যে তারা প্রতিদিন চেষ্টা করছে কিন্তু হচ্ছেনা,কারণ হিসেবে তোমার বাবাকে দায়ী করলো। ছেলের বদনাম শুনে আমি গর্জে উঠলাম,তখন তোমার মা আমার পা ধরে কেঁদে বলে আপনি চাইলে নিজের চোখে দেখবেন,তবুও আমাকে আপয়া বলবেন না মা।আমি আপনার ছেলেকে খুব ভালবাসি তাই সব মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছি।
সেদিনের মত তোমার মা কে বিদায় করে আমি এই ব্যাপারে তোমার দাদুর সাথে আলোচনা করি।ইতোমধ্যে রায় গ্রুপ অফ কোম্পানি শহরের এক নম্বর হয়ে গেছে আর সামাজিক মর্যাদা তখন আকাশচুম্বি এই অবস্থাতে রায় পরিবারের যে কোন ঘটনা বাইরে প্রকাশ পাওয়া মানে সবকিছু নষ্ট হয়ে যাওয়া,তোমার মা যতোই তোমার বাবাকে ভালবাসুক নিজের ভালো সবাই একদিন না একদিন বুঝবে,স্বামীর আদরে মন না ভরার যন্ত্রনা একটা মহা যুদ্ধেরও তৈরি করতে পারে,তবুও একটা সন্তান হলে সেটা থামিয়ে রাখা যায়।
২৭ পর্ব
দুজনেই উত্তেজিৎ কি আছে এর ভিতরে,অমিত আর উত্তেজনা চেপে রাখতে না পেরে বললো আচ্ছা কি থাকতে পারে এর ভিতরে?অঞ্জলী ডাইভ করতে করতে একবার অমিতের দিকে তাকিয়ে বললো,সেটা তো একটু পরই জানতে পারবো আমরা। কিন্তু তুমি যখন জানতে চাচ্ছো সেক্ষেএে বলতে পারি কোন দলিল বা গোপন নথি জাতীয় কিছু হতে পারে এটা আমার ধারনা।কারন ফাইলটা দেখে অনুমান করতে পারি কোন কাগজ পত্রই আছে!
প্রায় বিশ মিনিট পর অঞ্জলীর গাড়ি থামলো আশ্রমের গেটে রামলাল গেট খুলে দিতেই হনহন দুজনে হেঁটে চলে এলেন অঞ্জলীর রুমে,দুজনেরই যেন আর তর সইছেনা।রুমে এসেই অমিত বললো এক গ্লাস জল দাও আগে উত্তেজনায় গলা শুকিয়ে গেছে।অঞ্জলী জল এনে দিতেই ঢকঢক করে খেয়ে নিয়ে বললো এবার এটা খোলো ভিতরে কি আছে না জেনে আর থাকা যাচ্ছেনা।অঞ্জলী এবার রুমের জানালা দরজা সব বন্ধ করে দিলেন,সাবধানের মার নেই।এবার অঞ্জলী এক এক করে মোড়ক খুলতে লাগলো,আর ততোই যেন দুজনেই আরো বেশি উত্তেজিত হয়ে পরছে।সব শেষে দেখা গেলো কাংখিত জিনিস।অঞ্জলীর অনুমানই সঠিক ভিতরে অনেক গুলা কাগজ,কোন গুপ্তধন না।এবার অমিতের চোখ গেল প্যাকেটের কোনায় ছোট্ট একটা লাল ব্যাগ,ওটা হাতে নিয়ে অঞ্জলীর দিকে তাকালো,অঞ্জলী ব্যাগটা হাতে নিলো কিন্তু খুললো না। অমিত বললো কি হলো দেখো ওগুলা কিসের কাগজ আর কি আছে ওই ব্যাগে!না রাজকুমার এখন না।এখন আশ্রমে অনেক মানুষের আনাগোনা।তুমি বরং আজকের রাতটা এখানেই থেকো।তখন নিরিবিলিতে দুজনে দেখবো।কারণ আমার ধারনা এই কাগজ গুলা যখন ঠাকুমা এতো গোপন করে রেখেছে,তখন নিশ্চয় কোন ব্যাপার আছে।অঞ্জলীর কথার অবাধ্য হওয়া সেটা অমিত ভাবতেই পারেনা।তাই অঞ্জলীর কথাই মেনে নিলো।
অঞ্জলী অমিতকে বিশ্রাম নিতে বলে বাইরে বেড়িয়ে গেলো,আশ্রমের দেখাশোনার জন্য।বাইরে পুকুর ঘাটে বসে আছে অঞ্জলী,পুজার আর বেশি দেরি নেই।ওদিকে সুব্রত হয়তো সব তথ্য প্রমান জোগার করে ফেলেছে,শুধুমাত্র অঞ্জলী তার দেবীর সমান তাকে মামণি বলে তাই এখনো ব্যাপারটা গোপন রেখেছে।অঞ্জলী জানতো ডাঃ অমলেশ মূখার্জীর মৃত্যুর জন্য একদিন না একদিন সে ফেসে যেতে পারে,কিন্তু অঞ্জলীর তাতে কোন কষ্ট নেই,তার বিদ্রোহী রাজকুমার ভাল আছে এটাই তার কাছে সব থেকে বড় ব্যাপার।
অঞ্জলী কখন বেড়িয়েছে আসার আর কোন খোঁজ নাই।বিছানায় শুয়ে থাকতে থাকতে অমিত একটু ঘুমিয়ে গেছিলো,যখন উঠলো তখন দেয়াল ঘড়িতে বলছে সন্ধ্যা ৬ টা।অনেকটা সময় ঘুমিয়েছে সে।কিন্তু অমিত জানে না এর মাঝে অঞ্জলী একবার এসেছিলো কিন্তু অমিত ঘুমাচ্ছে দেখে আর ডাকেনি,কিছুক্ষণ অমিতের ঘুমন্ত নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেছে।তারপর অমিতের জন্য সন্ধ্যার নাস্তা বানিয়ে আবার তার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা পুকুর ঘাটে গিয়ে বসে আছে।অমিত উঠে কিছুক্ষণ এদিক ওদিক খুঁজলো কিন্তু কোথাও না পেয়ে রিসেপসনের সুদীপ্তার কাছে গিয়ে বললো তোমাদের ম্যাডাম কোথায়?সেটা ঠিক জানিনা স্যার আমি দেখছি ফোন করে। অমিত বাঁধা দিলো না না তার দরকার নেই,তুমি শুধু বলো আশ্রমের কোথায় থাকতে পারে?স্যার ম্যাডাম অবসরে পুকুর ঘাটে বসে থাকেন।
অমিত এবার পুকুর ঘাটের দিকে গেল,সত্যি অঞ্জলী বসে আছে,অমিত চুপিসারে গিয়ে পিছন থেকে অঞ্জলীর কাধে হাত রাখলো,অঞ্জলী প্রথমে একটু চমকে উঠলেও পরবর্তীতে পিছনে না তাকিয়েই বললো ও রাজকুমার তুমি।এবার অমিত সামনে গিয়ে অঞ্জলীর পাশে বসে বললো তুমি বুঝলে কি করে ওটা আমি!!অঞ্জলী অল্প হেসে বললো যার জন্য পুরো জীবন যৌবন উৎসর্গ করে দিলাম আর তার স্পর্শ বুঝবো না!!
এবার অঞ্জলী উঠে দাঁড়িয়ে বললো চলো চলো তোমার জন্য নাস্তা বানিয়ে রেখেছি সেই কখন,চলো খাবে।আর একটু বসিনা!?অমিত বললো!না না এমনি তোমার শরীর পুরো ঠিক নেই।আগে চলো,আজ্ঞা বহন কারী অমিত চললো অঞ্জলীর পিছু পিছু।
বন্যাকে অঞ্জলী ফোন করে জানিয়ে দিলো অমিত আজ তার কাছে থাকবে।বন্যাও সুযোগ পেয়ে দুষ্টুমী শুরু কি গো মাসিমনি আমার ছোট কাকুকে কি একদম ঘায়েল করে ফেললে!?এই দুষ্টু মাসিমনির সাথে দুষ্টুমি হচ্ছে দাঁড়াও কাল তোকে দেখাবো মজা।
বন্যার সাথে কথা শেষে রাতের খাবার খেয়ে নিলো অমিত আর অঞ্জলী,খাওয়া শেষে অমিত বললো চলো ওগুলা দেখি আমার আর তর সইছে না।তুমি রুমে যাও আমি এগুলা গুছিয়ে আসছি,অমিত রুমে চলে গেল,অঞ্জলী দশ মিনিট পর রুমে ঢুকে জানালা দরজা সব বন্ধ করে দিলো।তারপর আলমারী থেকে ব্যাগটা বের করলো।তারপর দুজনে বিছানার উপর উঠে বসে ব্যাগ থেকে ছোট্ট লাল ব্যাগ আর কাগজ গুলা বের করবো,অনেক গুলা কাগজ এক দিস্তার মত।অঞ্জলী একবার অমিতের দিকে তাকিয়ে প্রথম কাগজটা হাতে নিলো,অমিভ ইশারায় পরতে শুরু করলো,,,!
আমার বিদ্যোহী রাজকুমার এই সব কাগজ গুলো তুমি যখন পাবে তখন হয়ত আমি আর এই পৃথিবীতে থাকবো না।সেই জন্য রামলালের কাছে আমি একটা চিরকুট রেখে যাচ্ছি।তুমি যদি কখনো দেশে ফেরো এটা রামলাল তোমাকে দিবে,তা না হলে ওটা আর কারো হাতে পরবেনা।তুমি যখন এগুলো পরছো তার মানে তুমি চিরকুটের অর্থ বের করতে পারছো,আর আমি এটা মনে করি এই কাজেও তুমি অঞ্জলীর সাহায্য নিয়েছো।এতোটুকু পড়ে অঞ্জলী অমিতের দিকে তাকালো।থামলে কেন?শুরু করো!!
এই কাগজ গুলো পেয়ে তুমি কি ভাবছো জানিনা,কিন্তু তোমার ব্যাকুলতা দমন করতে আগে থেকেই বলে রাখী এখানে কোন গুপ্তধনের ব্যাপার নেই।তাই কোন পাতা বাদ দিয়ে না পড়ে এক এক করে সব গুলো পড়ো।
ইতি তোমার ঠাকুমা!
তার মানে কোন গুপ্তধনের ব্যাপার না সেটা ঠাকুমা আগেই বলে রেখেছে,তাহলে কি আছে এসব কাগজে?অমিত কথা গুলো বললো অঞ্জলীর দিকে তাকিয়ে।সেটা জানিনা রাজকুমার তার থেকে বরং চলো সব গুলো পড়ে দেখা যাক,অমিত ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো।আবার শুরু করলো অঞ্জলী,,,,
এই কথা গুলো তোমার না জানলেও চলতো আমার বিদ্রোহী রাজকুমার কিন্তু আমি এক বিপদের আশাংকা দেখেছি তাই এগুলো লিখে যাচ্ছি যদি দেশে আসার পর তুমি এসব উদ্ধার করতে পারো তখন তুমি যাতে সাবধান হতে পারো।তুমি তখন জন্মাওনি দাদুভাই।আজ এসব বলতেও আমার খারাপ লাগছে কিন্তু তোমাকে না জানিয়ে আমি থাকতে পারলাম না।আমার ছোট ছেলে মানে তোমার বাবা ছিলেন তোমারই মত জেদি কিন্তু অতি সরল মানুষ জাগতিক প্যাচ সে বুঝতো তা,তোমার দাদু সবে মাএ আর্মি থেকে রিটায়ার্ড করে কিছুদিন অবসর কাটিয়ে এই রায় গ্রুপের ব্যাবসা শুরু করেছে।উনার পরিশ্রম আর সততায় কিছুদিনের ভিতর রায় গ্রুপ শহরের এক নামীদামী প্রতিষ্ঠানের খাতায় নাম লেখালো।আমার পাঁচ ছেলে আর এক মেয়ে,মেয়েটাকে আমার স্বামী চাকুরিতে থাকা অবস্থায় বিয়ে দেন,কিন্তু কপাল দোষে অল্প দিনে বিধবা হয়ে বাপের বাড়ি ফিরে আসতে হয়। তারপর একে একে সব ছেলের বিবাহ শেষে তোমার বাবা মানে আমার ছোট ছেলের বিয়ে দিই। আমাদের পরিবারে সবাই এক সাথে থাকা এবং এক আত্মা হলেও ছোট ছেলেটা ছিলো ঠিক তোমার মত আমার নেউটা।সব ঠিকঠাকই চলছিলো,ছেলেরাও বড় হয়েছে তোমার দাদু ছেলেদের ব্যবসার ভিতর ঢুকানোর সিদ্ধান্ত নিলেন।যথা সময়ে ছেলেদের হাতে সব দ্বায়িত্ব তুলে দিলেন।কারো কোন সমস্যা নাই পরিবারে রাজ শেখর রায় চৌধুরি মানে তোমার দাদুর কথাই শেষ কথা।একে একে সব ছেলেদের সন্তানদি হলো,আমাদের বাড়িটাও নাতী নাতনিতে ভরে উঠলো,কিন্তু বিধিবাম আমার ছোট ছেলে বৌমার কোন সন্তান হলো না বিয়ের তিন বছরের মাথায়ও,এটা নিয়ে তোমার বাবা মা সাথে আমি আর তোমার দাদুও চিন্তিত হয়ে পরলাম,একদিন আমি তোমার মাকে আমার ঘরে ডেকে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে,তোমার মা যেটা বললো সেটা হলো এমন যে তারা প্রতিদিন চেষ্টা করছে কিন্তু হচ্ছেনা,কারণ হিসেবে তোমার বাবাকে দায়ী করলো। ছেলের বদনাম শুনে আমি গর্জে উঠলাম,তখন তোমার মা আমার পা ধরে কেঁদে বলে আপনি চাইলে নিজের চোখে দেখবেন,তবুও আমাকে আপয়া বলবেন না মা।আমি আপনার ছেলেকে খুব ভালবাসি তাই সব মুখ বুজে সহ্য করে যাচ্ছি।
সেদিনের মত তোমার মা কে বিদায় করে আমি এই ব্যাপারে তোমার দাদুর সাথে আলোচনা করি।ইতোমধ্যে রায় গ্রুপ অফ কোম্পানি শহরের এক নম্বর হয়ে গেছে আর সামাজিক মর্যাদা তখন আকাশচুম্বি এই অবস্থাতে রায় পরিবারের যে কোন ঘটনা বাইরে প্রকাশ পাওয়া মানে সবকিছু নষ্ট হয়ে যাওয়া,তোমার মা যতোই তোমার বাবাকে ভালবাসুক নিজের ভালো সবাই একদিন না একদিন বুঝবে,স্বামীর আদরে মন না ভরার যন্ত্রনা একটা মহা যুদ্ধেরও তৈরি করতে পারে,তবুও একটা সন্তান হলে সেটা থামিয়ে রাখা যায়।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!