15-09-2020, 12:24 PM
রুহি নয়নার সামনে গেছে জানতে পেরেই ওর মাথা গরম হয়ে যায়। দানা কিছুতেই চায় ওই হিংস্র জঘন্য মেয়ের দৃষ্টি কোনোভাবে ওর মেয়ের ওপরে পরুক। কিন্তু কচি রুহিকে কি আর সেইসব কথা বলে বোঝানো যায়? তাই রুহিকে শান্ত কণ্ঠে উত্তর দেয়, "আন্টির মন খারাপ তাই কাঁদছে। মাম্মা কোথায়?"
রুহি উত্তর দেয়, "মাম্মা আর আন্তি ভেতলে।"
একটার পর একটা ঝড়। এই ঝঞ্ঝা এত সহজে থামবে বলে মনে হয় না। ষড়যন্ত্র ফাঁদার সময়ে এত অঙ্ক কষে দেখেনি দানা। ভেবেছিল নয়নাকে বাঁচিয়ে নিলেই কাজ শেষ, কিন্তু এটা মাথায় ছিল না যে নয়নাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আহত নয়না সত্যি বলে দিতে পারে পুলিসের সামনে। মহুয়া পাশে না থাকলে এই যাত্রায় বাঁচা অসম্ভব হয়ে যেত। মনা পিন্টু যথারীতি সময় মতন ওর বাড়িতে চলে আসে। আকরাম, নাসির, শঙ্কর রামিজ সবার ফোনের এক এক করে উত্তর দিতে হয়। ফোনের রিং কিছুতেই আর থামতে চায় না। নয়নাকে ওর বাড়িতে পৌঁছে দিতে পারলে শান্তি। রুহিকে নিয়ে ভেতরের ঘরে ঢুকে দেখে নয়নাকে সান্ত্বনা দিয়ে শান্ত করিয়ে দিয়েছে মহুয়া। দানাকে বলে ওকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে। সেই সাথে আরো জানিয়ে দেয়, এতক্ষণে নিশ্চয় ওর বাড়ির সামনে সাংবাদিকের ভিড় উপচে পড়েছে, সেই গুলো যেন সাবধানে এড়িয়ে যায়। হয়ত পুলিস ওর বাড়িতে পৌঁছে যাবে আর সেই সুত্র ধরেই একদিন দানার বাড়িতে আসবে। তার মধ্যে দানার আর মহুয়া পরবর্তী পরিকল্পনার কথা ভেবে নেবে।
নয়নাকে নিয়ে ওর বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় দানা। পথে যেতে যেতে নয়না দানাকে বারে বারে ধন্যবাদ জানায় আর বলে মহুয়া আর দানা না থাকলে রাতেই হয়তো ওর মৃত্যু হত। দানা মনে মনে হাসে, মাছের চারাকে কি কেউ অত সহজে মেরে ফেলে? মাছ ধরার জন্য কেঁচোকে জীবিত রাখতে হয়। নয়না জানিয়ে দেয়, মহুয়ার নির্দেশ মতন যা যা পাখী পড়া ওকে করানো হয়েছে, অক্ষরে অক্ষরে সেই কথা মেনে চলবে। নয়না একদম হাতের মুঠিতে তবে, সেই সাথে দানা এটাও জানে এই ছলনাময়ী আহত নারী যেদিন সুস্থ হয়ে দাঁড়াবে সেদিন খুঁজে খুঁজে সমুদ্র আর সুমিতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নেবে। তার আগেই দানাকে সঙ্গীতার ;., আর ইন্দ্রাণীর নাম করে হুমকি দেওয়ার প্রতিশোধ নিতে হবে। নয়না ওর পরিবারের সম্বন্ধেও জেনে গেছে, সুতরাং একবার যদি কোন ভাবে আঁচ পায় যে দানা এই সকল ষড়যন্ত্রের মূলে তাহলে ওকেও ছেড়ে দেবে না। ভবিষ্যতে নয়না যে মোহনের সাথে হাত মিলিয়ে কাজ করবে না সেটা কে বলতে পারে? তবে মোহন এখন নয়নার ওপরে ক্ষেপে, এটাই ওকে কাজে লাগাতে হবে।
নয়নার বাড়ির সামনে প্রচুর সাংবাদিকের ভিড়। গাড়ি থেকে নামতেই ওকে সাংবাদিকেরা ছেঁকে ধরে। "কোথায় ছিলেন আপনি?" "আপনার সেক্রেটারি আর ম্যানেজারের মৃত্যুর বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কি?" "আপনার সাথে বিমান চন্দের কি সম্পর্ক?" "আপনার সেক্রেটারি আর ম্যানেজার কি ভাবে বিমান চন্দকে চেনে?" "ওদের কে খুন করছে বলে আপনার মনে হয়?" ইত্যাদি প্রশ্নের ঝড় বয়ে আসে ওদের দিকে। দানার একবার মনে হচ্ছিল উত্তর দেয়, "শালা তোদের বাপ মরলে তোরা কি করিস।" কিন্তু চুপচাপ নয়নাকে আগলে বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায়।