15-09-2020, 01:12 AM
পর্ব #### ৪
ক
পরের দিনটা বেশ এলোমেলো ভাবেই শুরু হল শান্তার। সকালে কি যেন একটা স্বপ্ন দেখছিল, ঠিক মনে পড়ছে না। মেয়ের ঘরে শুয়েছে বলে অ্যালার্মটাও দেয়া হয় নি। ভাগ্যিস ঘুমটা ভেঙ্গেছিল। একটু দেরি করেই যদিও। চোখ মেলতেই বিছানা ছেড়ে লাফিয়ে উঠতে হয়েছে শান্তাকে। সকাল বেলার কাজ তো আর কম নয়! নাস্তা তৈরি করা, মেয়েকে তোলা, স্বামীর জন্য চা-নাস্তা যথাসময়ে টেবিলে হাজির করা, তারপর ঘরটা একটু গুছিয়ে মেয়েকে তৈরি করে, নিজে তৈরি হয়ে কলেজের জন্য বেড়িয়ে পড়া।
আজ রাস্তাতেও বিরক্ত লাগছিল শান্তার। এদিকে আকাশটা মেঘলা মেঘলা করছে, তার পরও আবার অসহ্য একটা গরম। হেটে না ফিরে শান্তা রিক্সা নিয়েই ফিরেছে আজ বাসায়। সিড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে তেতালার ভাবির সঙ্গে দেখা। এ-কথা সেই কথা বলতে বলতে দশ কথা। পাক্কা আধা ঘণ্টা চলে গেলো। এই কারণেই প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তার মিশতে ইচ্ছে করে না। একে তো বকবক করেই যায় ভাবিগুলো, আবার তার উপর নিজেদের দাম্পত্যের বাহাদুরি।
“এই তো কদিন আগেই কক্স বাজার থেকে ঘুড়িয়ে নিয়ে এলো আমার বর, অফিস ট্যুর ছিল, তাও আমায় নিয়ে গেলো ভাবি… আরেকটা মধুচন্দ্রিমা মনে হচ্ছিল হা হা হা...।”
শান্তা মুখে হাসি ফুটিয়ে রাখলেও মনে মনে বিরক্তবোধ করছিলো। মধুচন্দ্রিমা করেছো নাকি কোথায় বেঢ়াতে গেছ এসব ডেকে ডেকে আমায় শুনাবার কি আছে? বাসায় ফিরে আবার মনটাও খারাপ হয় শান্তার। শেষ কবে ফয়সাল ওকে ঘুরাতে নিয়ে গেছে কোথাও? কক্স বাজার তো দূরে থাক, এই কাছেই একটু মার্কেটে নিয়ে যাবার সময় করে উঠতে পারে না ফয়সাল। নিজের কেনা কাটা নিজেকেই সারতে হয় শান্তার।
ওদিন আর রূপচর্চা করতে মন চাইলো না তার। বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে চিৎ হয়ে পড়ে রইলো বিছানায়। চোখ দুটো বন্ধ করে নিজের জীবনটা নিয়ে ভাবল। কিছুক্ষন পর উঠে বসলো শান্তা। নতুন ব্যাবসাটা কি শুরু করেছে ফয়সাল? কৌতূহল হল বেশ। বিছানা থেকে নেমে ওয়ারড্রব এর কাছে এলো। ওয়ারড্রব এর উপরেই একটা কালো অফিস ব্যাগ এ দরকারি ফাইলপত্র রাখে ফয়সাল। ব্যাগটা নিতে একটু দ্বিধা হচ্ছিল শান্তার। ওখানে হাত দিবে? পাছে ফয়সাল কিছু মনে করে? কিন্তু কৌতূহলের কাছে পরাজিত হতে হল তাকে। ব্যাগটা বিছানায় নামিয়ে চেইন খুলল। কয়েকটা ফাইল বের হল ভেতর থেকে। ওগুলো উল্টে পাল্টে দেখল শান্তা। তেমন কিছু বুঝতে পারছে না। দেখে মনে হল পারচেস অর্ডার ফর্ম। একটা শিপিং কর্পোরেশন এর নাম আছে। আর অপর একটা ফাইলে একটা হোটেল এর কাগজ পত্র। কি নিয়ে ব্যাবসা করছে, কিছুই বুঝতে পারল না শান্তা। অপর ফাইল ঘেটে কিছু একাউন্টিং এর শীট পেলো সে। এগুলো নিশ্চয়ই বর্তমান কোম্পানির। ব্যাগ এর মধ্যে আবার হাত ঢুকালো শান্তা। আর কিছু নেই। ব্যাগটা তুলে নিয়ে, ফাইল ঢুকিয়ে ওয়ারড্রব এর উপর তুলে রাখল। তারপর ফিরে তাকাতেই থেমে যেতে হল তাকে।
বিছানার উপর চকচক করছে একটা বস্তু। ঝুকে এলো শান্তা। হাত বাড়িয়ে তুলে নিল সেটা। বুকের ভেতরে কাপুনি শুরু হয়ে গেলো তার। ব্যাগ থেকে পড়েছে নিশ্চয়ই জিনিষটা। কিন্তু এটা কি করছে ফয়সালের অফিস ব্যাগ এ? এটা ওখানে কি করে এলো? নাকি আগেই বিছানায় পড়ে ছিল? তা কি করে সম্ভব। একটা কনডম এর প্যাকেট কেন বিছানায় পড়ে থাকতে যাবে?
শান্তার মাথা ঝিমঝিম করছে। ও কিছু বুঝতে পারছে না। দুটো কনডম রয়েছে প্যাকেট এর সঙ্গে। শান্তার জানা আছে, তিনটে কনডম থাকে একটা ছোট প্যাকেট এ। তাহলে কি একটা ব্যাবহার করা হয়েছে? কোথায় ব্যাবহার করেছে ফয়সাল? কার সাথে? গত ছয় মাস ধরে ওর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে না ফয়সাল। তাহলে? কনডম কি দরকার পড়ল তার?
তবে কি ফয়সাল ওর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে? এই কারণেই কি আজকাল ওর সঙ্গে ভালো গলায় কথা বলে না ফয়সাল? শান্তার পুরো দুনিয়াটা কাপছে। ও বিছানায় বসে পড়লো। কিছু ভাবতে পারছে না ও। কোন কিছু মানতে পাড়ছে না।
খানিকটা কান্না পেলেও নিজেকে সামলে নিল শান্তা। কনডম এর প্যাকেটটা আবার ব্যাগ এর মধ্যেই ঢুকিয়ে রেখে দিলো। তারপর মেয়েকে কলেজ থেকে নিয়ে এসে বাসার কাজে মন দিলো। মনের একটা কণায় সারাক্ষণ ওকে খোঁচাল ব্যাপারটা। মনে মনে একটা প্ল্যানও করে ফেলল শান্তা। ঠিক করলো, ফয়সালকে এই ব্যাপারে কিছুই জানাবে না সে। বরং রাজীব ভাই এর সঙ্গে যোগাযোগ করবে। রাজীব ভাইই পাড়বে আসল খবরটা বার করে দিতে। পুরতন কাগজ পত্র ঘেটে রাজীব ভাই এর ফোন নম্বরটা নিজের মোবাইলে সেভ করে নিয়েছে শান্তা। আজ নয়, কাল সকালে ফোন দেবে ও রাজীব ভাইকে।
রিয়ান খান