14-09-2020, 06:08 PM
২৫ পর্ব
বিন্দুর হাতের রান্নার আলাদা যাদু আছে। তীব্র উত্তেজনা আর টেনশনের পর খাবার টেবিলে শেষ পর্যন্ত সবাই রিল্যাক্সড ছিল। ম্যাগীর নিকট থেকে অমিত আর অঞ্জলীর সম্পর্কের কথা জানার পর বিন্দু নতুন দৃষ্টিতে অঞ্জলীকে দেখতে লাগলো। বয়সে তার চে কিছুটা বেশী হবে। অথচ বন্যার পাশে তাকে প্রায় বন্যার মতই লাগছে। আটপৌঢ়ে সূতীর শাড়ী পরনে। কিন্তু কি সুন্দর ই না লাগছে ওকে।
সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্টও বিন্দু সচেতনভাবেই করলো। দুটিকে পাশাপাশি বসার সুযোগ দিয়ে ওদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা। টেবিলের এক মাথায় রোহিত অপর মাথায় মনি শংকর । বাম পাশে মঞ্জু আর বন্যা, ডান পাশে অমিত আর অঞ্জলী পাশা পাশি। বার বার বলার পরও ম্যাগী বসলো না। সে বিন্দুকে সহায়তা করবে। শখ করে বিন্দুর একটা শাড়ি পড়েছে। ফলে তার অবস্থা দাড়িয়েছে দেখার মত। সে হাটছে যেন ছোট বাচ্চা মাত্র হাটা শিখেছে। আচঁল কোনভাবেই গায়ে রাখতে পারছে না। শাড়ির পাড় বার বার পাযের নীচে চলে যাচেছ আর সে হোচট খেতে খেতে কোনরকমে সামলে উঠছে। ওর অবস্থা দেখে সবাই বেশ এনজনয় করছে। বিন্দু বুঝতে পেরে সোজা ওকে বসিয়ে দিল টেবিলে। অমিতের পাশে। দুই পাশে দুই নায়িকা । বিষয়টা অমিত খেয়াল করেনি। কিন্তু বিন্দুর মাথায় ঠিকই খেলেছে। খাবার পরিবেশনের ফাকে সে দেখার চেষ্টা করছে কার সাথে অমিতকে বেশী মানায়। সে কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারে না।
“বন্যা মা, আমার সাথে একটু কিচেনে আয় তো” বিন্দু কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বন্যাকে ডেকে নেয়।
মূখের উপর আংগুল রেখে ফিস ফিস করে বলে, “খেয়াল করেছিস তোর ছোট কাকুর সাথে দুজনকেই কেমন মানিয়েছে। আমি যে কোন একজনকে চুজ করতে পারছি না। খাবার ফাকেঁ একটু খেয়াল করিসতো। এজন্যই তোকে ডেকেছি। এখন এখন এই ডিশটা হাতে করে নিয়ে যা।”
বুদ্ধিমতি বন্যার জন্য ইশারাই কাফি। সে ডিশটা হাতে নিয়ে টেবিলে ফিরে এল। তার পর ইচ্ছে করেই অমিতকে এটা সেটা এগিয়ে দেবার নাম করে বার বার ওদের দিকে তাকাচ্ছে। আসলে দুজনই চমতকার ম্যাচ করেছে অমিতের সাথে। বন্যাও কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারলো না। তবে অঞ্জলীর প্রতিই সামান্য একটু বেশী টান মনে হলো। ওরা তিন ভাইই মৃদুভাষী। বন্যা ছাড়া মেয়েরাও কেউ প্রগলভ নয়। তাই খাবার টেবিলে তেমন কথা বার্তা হলো না।
লাঞ্চের পর ম্যাগীকে নিয়ে মনি শংকর অফিসে চলে গেল। রোহিতও অফিসের দিকে যাবে। যাবার আগে মঞ্জুকে নামিয়ে দিয়ে যাবে। অঞ্জলী রোহিতের সাথেই বেরুতে চাইছিল। কিন্তু বিন্দু যেতে দিল না। “তুমি একটু থাক না ভাই। বন্যাটা কত দিন শান্তিমত ঘুমায় না। এটা ঘুমাক। তুমি আর আমি একটু গল্প করি।”
অঞ্জলী কথা বাড়ালো না। রয়ে গেল বিন্দুর সাথে। বন্যা সত্যি সত্যি তার রুমে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়লো। গত কয়েক সপ্তাহ একটানা ঘুমের মাঝে কাটিয়েছে অমিত। তাই সে বিছানায় শুয়ে শুয়ে একটা ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাচ্ছিল। বিন্দু অঞ্জলীকে বললো, “তুমি একটু ঠাকুরপোকে সংগ দাও। আমি চারটে নাকে মূখে দিয়েই আসছি। তোমাদের সাথে গল্প করতে।”
“ঠিক আছে বৌদি, কোন অসুবিধা নেই।”
অঞ্জলী ঢুকতেই সোজা হয়ে বসলো অমিত। পিঠে বালিশের ঠেক দিয়ে হেলান দিল খাটের কিনারায়। অঞ্জলী মাথার দিককার সিংগেল সোফাটায় বসলো। কেউ কোন কথা বলছে না। কেবল তাকিয়ে আছে দুজন দুজনের দিকে। দাড়ি কামিয়ে ফেলেছে অমিত। তার ফর্সা মূখটা আরও ফরসা লাগছে। বুকের ভিতরে ধুকপুক ধুকপুক হাতুড়ি পেটানোর শব্দ পাচ্ছে অঞ্জলী। অমিতেরও একই অবস্থা। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তারা মূখোমূখো হতে পারেনি আজও। কিন্তু আবেগের রাশ টানলো অঞ্জলী। বন্যা আছে, মেজ বৌদি আছে। ধরা পড়লে কেলেংকারী হয়ে যাবে।
তারচে এ সুযোগে ঠাকুরমার চিঠিটা নিয়ে কথা বললো অঞ্জলী।
“আচ্ছা ঠাকুরমা অক্সফোর্ড গ্রাজুয়েট ছিলেন না?”
“হ্যা, কেন বলো তো?” অমিত বুঝতে পারলো না অঞ্জলী কেন এ বিষয়ে জানতে চাইছে।
“তোমার ভাষ্যমতে চিঠিটা ঠাকুরমার নিজের হাতে লেখা এবং Asset বানানটা তিনি লিখেছেন Asseet. তাই না?”
“হ্যা” অমিত ছোট্ট করে জবাব দেয়।
“তোমার কি ধারণা ঠাকুরমা ভুল করেছেন?”
“তাইতো মনে হয়”
“আমার তা মনে হয় না। আমি চিঠির ভাষা আর শব্দের ব্যবহার দেখে ধারণা করেছি এটা তিনি ইচ্ছা করে করেছেন এবং বিশেষ একটা কিছু বুঝাতে চেয়েছেন।”
“বুঝলাম না।”
“একটা গল্প শুন। আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি তখন টুয়েলভ ক্লাসের এক ছেলে আমাকে একটা প্রেম পত্র লিখেছিল। পত্রের শেষে একটা কথা লিখা ছিল 11.9.19 square. বলতো এটার অর্থ কি?”
“KISS” নাম্বার গুলিকে লেটার এ কনভার্ট করলে পাওয়া যায়।
“এক্সাক্টলী।” চমতকার একটা হাসি দিল অঞ্জলী। প্রিয়তম পুরুষটি যদি হয় বুদ্ধিমান তবে জীবন অনেক সুন্দর হয়। “এখন ঠাকুরমার চিটির ওয়ার্ডগুলিকে নাম্বারে কনভার্ট করো। তুমি একটা বক্তব্য পাবে।”
“এটা তুমি পরে করো। এখন আমার বুকে একটু হাত বুলিয়ে দাও। খুব ব্যথা হচ্ছে।”
“ব্যথা যে হচ্ছে না সেটা বুঝতে পারছি। ঠিক আছে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু কোন ধরণের দুষ্টুমী নয়। বন্যা আর মেজবৌদি আছেন।”
অঞ্জলী আলতো করে হাত রাখলো অমিতের বুকের উপর। একটা সাদা গেঞ্জি পরেছে অমিত। সাথে জীনস। অমিতের বুকে হাত রাখতে গিয়ে অঞ্জলীকে বেশ খানিকটা সামনে ঝুকতে হয়েছে। ফলে তার আচল খসে গেছে কাঁধ থেকে। লো কাট ব্লাউজের উপর দিয়ে অর্ধেকের বেশী ক্লিভেজ দেখা যাচ্ছে। ব্রা টা সাদা। ৩৪ সি হাসফাস করছে বেরিয়ে আসার জন্য। অমিতের একটা হাত অলসভাবে রাখা ছিল অঞ্জলীর থাইয়ের উপর। সেটা একটু চঞ্চল হয়ে উঠছে। অমিত কখনও সীমা লংঘন করে না। যেহেতু অঞ্জলীর নিষেধ আছে সে হাতটা সরিয়ে নিল। তারপর বললো, “সোজা হও আমার ব্যথা ভাল হয়ে গেছে।”
এমন সময় গলা খাকারী শুনা গেল দরজার কাছ থেকে। “কিন্তু দাড়িয়ে থাকতে থাকতে আমারতো হাত ব্যথা হয়ে গেছে।”
ঝট করে সোজা হল অঞ্জলী। ঘুরে দাড়িয়ে দেখল ট্রে হাতে বিন্দু দরজায় দাড়িয়ে। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে ট্রে টা নিজের হাতে নিল অঞ্জলী।
“দাড়িয়ে থাকলে তো পা ব্যথা হয় বৌদি, হাত কেন?”
“কারণ হাতে তোমাদের জন্য কফি।”
“আর এটা নিয়ে এতক্ষণ দাড়িয়ে ছিলে তুমি, সেই কখন থেকে অপেক্ষা করে আছি তোমার হাতের কফির পান করবো বলে।”
“তুমি যে এর চে মজার কিছু পান করছিলে ঠাকুরপো তাই ঢুকিনি।”
“কি বলছ বৌদি?”
“থাক আর লজ্জা পেতে হবে না। তুমি আমার সুন্দরী ননদিনীর রূপসুধা পান করছিলে।”
“তুমি না একটা যা তা।”
“হয়েছে হয়েছে আমি সব জানি।”
এবার অঞ্জলী কথা বললো, “এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না বৌদি, আমাকে ডেকে এনে নিন্দে মন্দ করছো।
“ও মা তা আ আ আই! ঠিক আছে । পরে যেন বৌদিকে দোষারোপ করো না।”
“প্লিজ বৌদি” অঞ্জলী বিন্দুর হাত চেপে ধরে, “বন্যা আছে, শুনতে পেলে মান ইজ্জত বলে আর কিছু থাকবে না।”
“ঠিক আছে বন্যা শুনবে না। শুধ বল কবে থেকে চলছে এ শখের বৃন্দাবন?”
“আমি বলছি বৌদি,” অমিত কথা বললো, “তুমি যখন থেকে এ বাড়িতে বৌ হয়ে এলে প্রায় তখন থেকেই। কেউ জানতো না। শুধু ঠাকুরমা একটু আঁচ করতে পেরেছিলেন। এখন আমাকে বল তুমি জানলে কি করে?”
“ওমা তোমরা একজন আরেকজনের হাত ধরাধরি করে চোখ দিয়ে গিলবে আর আমি বুঝতে পারবো না?” বিন্দু ইচ্ছা করেই ম্যাগীর কথা এড়িয়ে গেল।
কফি খেতে খেতে তিনজনই হারিয়ে গেল অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করতে। তাদের কথার মাঝখানে বেরসিকের মত হানা দিল সুব্রত’র ফোন।
“মিস, ডাক্তার অমলেশ মুখার্জীর মৃত্যুটা স্বাভাবিক নয়, তার ঘর থেকে আমি একটা সিরিঞ্জ উদ্ধার করেছি। সুইয়ের ডগায় রক্তের ফোটা লেগে রয়েছে। পরীক্ষা করলে হাতের ছাপও পাওয়া যাবে। হত্যা না আত্ম হত্যা আপনি জানেন কিছু?”
“না ব্যাটা, আমার ধারণা নেই।”
“আপনাকে একটু থানায় আসতে হবে। আমি কি গাড়ি পাঠাবো?”
“সহজ করে বললে হয় অ্যারেস্ট করতে চাইছ।”
“ক্ষমা করবেন মিস। আপনিই আমার শিক্ষক।”
“আমি কি দশমী পর্যন্ত সময় পেতে পারি ব্যাটা? পুজোর মাঝে কারও মনো কষ্টের কারণ হতে চাইনা।”
“আপনাকে অবিশ্বাস করার মত স্পর্ধা আমার নেই। তাই হবে।”
অঞ্জলী ফোন কেটে দিল। বিন্দু আর অমিত বার বার জানতে চাইল কি হয়েছে। কে কাকে অ্যারেস্ট করতে চাইছে। কিন্তু অঞ্জলী জবাব দিল না।
বিন্দুর হাতের রান্নার আলাদা যাদু আছে। তীব্র উত্তেজনা আর টেনশনের পর খাবার টেবিলে শেষ পর্যন্ত সবাই রিল্যাক্সড ছিল। ম্যাগীর নিকট থেকে অমিত আর অঞ্জলীর সম্পর্কের কথা জানার পর বিন্দু নতুন দৃষ্টিতে অঞ্জলীকে দেখতে লাগলো। বয়সে তার চে কিছুটা বেশী হবে। অথচ বন্যার পাশে তাকে প্রায় বন্যার মতই লাগছে। আটপৌঢ়ে সূতীর শাড়ী পরনে। কিন্তু কি সুন্দর ই না লাগছে ওকে।
সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্টও বিন্দু সচেতনভাবেই করলো। দুটিকে পাশাপাশি বসার সুযোগ দিয়ে ওদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা। টেবিলের এক মাথায় রোহিত অপর মাথায় মনি শংকর । বাম পাশে মঞ্জু আর বন্যা, ডান পাশে অমিত আর অঞ্জলী পাশা পাশি। বার বার বলার পরও ম্যাগী বসলো না। সে বিন্দুকে সহায়তা করবে। শখ করে বিন্দুর একটা শাড়ি পড়েছে। ফলে তার অবস্থা দাড়িয়েছে দেখার মত। সে হাটছে যেন ছোট বাচ্চা মাত্র হাটা শিখেছে। আচঁল কোনভাবেই গায়ে রাখতে পারছে না। শাড়ির পাড় বার বার পাযের নীচে চলে যাচেছ আর সে হোচট খেতে খেতে কোনরকমে সামলে উঠছে। ওর অবস্থা দেখে সবাই বেশ এনজনয় করছে। বিন্দু বুঝতে পেরে সোজা ওকে বসিয়ে দিল টেবিলে। অমিতের পাশে। দুই পাশে দুই নায়িকা । বিষয়টা অমিত খেয়াল করেনি। কিন্তু বিন্দুর মাথায় ঠিকই খেলেছে। খাবার পরিবেশনের ফাকে সে দেখার চেষ্টা করছে কার সাথে অমিতকে বেশী মানায়। সে কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারে না।
“বন্যা মা, আমার সাথে একটু কিচেনে আয় তো” বিন্দু কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বন্যাকে ডেকে নেয়।
মূখের উপর আংগুল রেখে ফিস ফিস করে বলে, “খেয়াল করেছিস তোর ছোট কাকুর সাথে দুজনকেই কেমন মানিয়েছে। আমি যে কোন একজনকে চুজ করতে পারছি না। খাবার ফাকেঁ একটু খেয়াল করিসতো। এজন্যই তোকে ডেকেছি। এখন এখন এই ডিশটা হাতে করে নিয়ে যা।”
বুদ্ধিমতি বন্যার জন্য ইশারাই কাফি। সে ডিশটা হাতে নিয়ে টেবিলে ফিরে এল। তার পর ইচ্ছে করেই অমিতকে এটা সেটা এগিয়ে দেবার নাম করে বার বার ওদের দিকে তাকাচ্ছে। আসলে দুজনই চমতকার ম্যাচ করেছে অমিতের সাথে। বন্যাও কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারলো না। তবে অঞ্জলীর প্রতিই সামান্য একটু বেশী টান মনে হলো। ওরা তিন ভাইই মৃদুভাষী। বন্যা ছাড়া মেয়েরাও কেউ প্রগলভ নয়। তাই খাবার টেবিলে তেমন কথা বার্তা হলো না।
লাঞ্চের পর ম্যাগীকে নিয়ে মনি শংকর অফিসে চলে গেল। রোহিতও অফিসের দিকে যাবে। যাবার আগে মঞ্জুকে নামিয়ে দিয়ে যাবে। অঞ্জলী রোহিতের সাথেই বেরুতে চাইছিল। কিন্তু বিন্দু যেতে দিল না। “তুমি একটু থাক না ভাই। বন্যাটা কত দিন শান্তিমত ঘুমায় না। এটা ঘুমাক। তুমি আর আমি একটু গল্প করি।”
অঞ্জলী কথা বাড়ালো না। রয়ে গেল বিন্দুর সাথে। বন্যা সত্যি সত্যি তার রুমে ঢুকে ঘুমিয়ে পড়লো। গত কয়েক সপ্তাহ একটানা ঘুমের মাঝে কাটিয়েছে অমিত। তাই সে বিছানায় শুয়ে শুয়ে একটা ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাচ্ছিল। বিন্দু অঞ্জলীকে বললো, “তুমি একটু ঠাকুরপোকে সংগ দাও। আমি চারটে নাকে মূখে দিয়েই আসছি। তোমাদের সাথে গল্প করতে।”
“ঠিক আছে বৌদি, কোন অসুবিধা নেই।”
অঞ্জলী ঢুকতেই সোজা হয়ে বসলো অমিত। পিঠে বালিশের ঠেক দিয়ে হেলান দিল খাটের কিনারায়। অঞ্জলী মাথার দিককার সিংগেল সোফাটায় বসলো। কেউ কোন কথা বলছে না। কেবল তাকিয়ে আছে দুজন দুজনের দিকে। দাড়ি কামিয়ে ফেলেছে অমিত। তার ফর্সা মূখটা আরও ফরসা লাগছে। বুকের ভিতরে ধুকপুক ধুকপুক হাতুড়ি পেটানোর শব্দ পাচ্ছে অঞ্জলী। অমিতেরও একই অবস্থা। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তারা মূখোমূখো হতে পারেনি আজও। কিন্তু আবেগের রাশ টানলো অঞ্জলী। বন্যা আছে, মেজ বৌদি আছে। ধরা পড়লে কেলেংকারী হয়ে যাবে।
তারচে এ সুযোগে ঠাকুরমার চিঠিটা নিয়ে কথা বললো অঞ্জলী।
“আচ্ছা ঠাকুরমা অক্সফোর্ড গ্রাজুয়েট ছিলেন না?”
“হ্যা, কেন বলো তো?” অমিত বুঝতে পারলো না অঞ্জলী কেন এ বিষয়ে জানতে চাইছে।
“তোমার ভাষ্যমতে চিঠিটা ঠাকুরমার নিজের হাতে লেখা এবং Asset বানানটা তিনি লিখেছেন Asseet. তাই না?”
“হ্যা” অমিত ছোট্ট করে জবাব দেয়।
“তোমার কি ধারণা ঠাকুরমা ভুল করেছেন?”
“তাইতো মনে হয়”
“আমার তা মনে হয় না। আমি চিঠির ভাষা আর শব্দের ব্যবহার দেখে ধারণা করেছি এটা তিনি ইচ্ছা করে করেছেন এবং বিশেষ একটা কিছু বুঝাতে চেয়েছেন।”
“বুঝলাম না।”
“একটা গল্প শুন। আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি তখন টুয়েলভ ক্লাসের এক ছেলে আমাকে একটা প্রেম পত্র লিখেছিল। পত্রের শেষে একটা কথা লিখা ছিল 11.9.19 square. বলতো এটার অর্থ কি?”
“KISS” নাম্বার গুলিকে লেটার এ কনভার্ট করলে পাওয়া যায়।
“এক্সাক্টলী।” চমতকার একটা হাসি দিল অঞ্জলী। প্রিয়তম পুরুষটি যদি হয় বুদ্ধিমান তবে জীবন অনেক সুন্দর হয়। “এখন ঠাকুরমার চিটির ওয়ার্ডগুলিকে নাম্বারে কনভার্ট করো। তুমি একটা বক্তব্য পাবে।”
“এটা তুমি পরে করো। এখন আমার বুকে একটু হাত বুলিয়ে দাও। খুব ব্যথা হচ্ছে।”
“ব্যথা যে হচ্ছে না সেটা বুঝতে পারছি। ঠিক আছে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু কোন ধরণের দুষ্টুমী নয়। বন্যা আর মেজবৌদি আছেন।”
অঞ্জলী আলতো করে হাত রাখলো অমিতের বুকের উপর। একটা সাদা গেঞ্জি পরেছে অমিত। সাথে জীনস। অমিতের বুকে হাত রাখতে গিয়ে অঞ্জলীকে বেশ খানিকটা সামনে ঝুকতে হয়েছে। ফলে তার আচল খসে গেছে কাঁধ থেকে। লো কাট ব্লাউজের উপর দিয়ে অর্ধেকের বেশী ক্লিভেজ দেখা যাচ্ছে। ব্রা টা সাদা। ৩৪ সি হাসফাস করছে বেরিয়ে আসার জন্য। অমিতের একটা হাত অলসভাবে রাখা ছিল অঞ্জলীর থাইয়ের উপর। সেটা একটু চঞ্চল হয়ে উঠছে। অমিত কখনও সীমা লংঘন করে না। যেহেতু অঞ্জলীর নিষেধ আছে সে হাতটা সরিয়ে নিল। তারপর বললো, “সোজা হও আমার ব্যথা ভাল হয়ে গেছে।”
এমন সময় গলা খাকারী শুনা গেল দরজার কাছ থেকে। “কিন্তু দাড়িয়ে থাকতে থাকতে আমারতো হাত ব্যথা হয়ে গেছে।”
ঝট করে সোজা হল অঞ্জলী। ঘুরে দাড়িয়ে দেখল ট্রে হাতে বিন্দু দরজায় দাড়িয়ে। দ্রুত এগিয়ে গিয়ে ট্রে টা নিজের হাতে নিল অঞ্জলী।
“দাড়িয়ে থাকলে তো পা ব্যথা হয় বৌদি, হাত কেন?”
“কারণ হাতে তোমাদের জন্য কফি।”
“আর এটা নিয়ে এতক্ষণ দাড়িয়ে ছিলে তুমি, সেই কখন থেকে অপেক্ষা করে আছি তোমার হাতের কফির পান করবো বলে।”
“তুমি যে এর চে মজার কিছু পান করছিলে ঠাকুরপো তাই ঢুকিনি।”
“কি বলছ বৌদি?”
“থাক আর লজ্জা পেতে হবে না। তুমি আমার সুন্দরী ননদিনীর রূপসুধা পান করছিলে।”
“তুমি না একটা যা তা।”
“হয়েছে হয়েছে আমি সব জানি।”
এবার অঞ্জলী কথা বললো, “এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না বৌদি, আমাকে ডেকে এনে নিন্দে মন্দ করছো।
“ও মা তা আ আ আই! ঠিক আছে । পরে যেন বৌদিকে দোষারোপ করো না।”
“প্লিজ বৌদি” অঞ্জলী বিন্দুর হাত চেপে ধরে, “বন্যা আছে, শুনতে পেলে মান ইজ্জত বলে আর কিছু থাকবে না।”
“ঠিক আছে বন্যা শুনবে না। শুধ বল কবে থেকে চলছে এ শখের বৃন্দাবন?”
“আমি বলছি বৌদি,” অমিত কথা বললো, “তুমি যখন থেকে এ বাড়িতে বৌ হয়ে এলে প্রায় তখন থেকেই। কেউ জানতো না। শুধু ঠাকুরমা একটু আঁচ করতে পেরেছিলেন। এখন আমাকে বল তুমি জানলে কি করে?”
“ওমা তোমরা একজন আরেকজনের হাত ধরাধরি করে চোখ দিয়ে গিলবে আর আমি বুঝতে পারবো না?” বিন্দু ইচ্ছা করেই ম্যাগীর কথা এড়িয়ে গেল।
কফি খেতে খেতে তিনজনই হারিয়ে গেল অতীতের স্মৃতি রোমন্থন করতে। তাদের কথার মাঝখানে বেরসিকের মত হানা দিল সুব্রত’র ফোন।
“মিস, ডাক্তার অমলেশ মুখার্জীর মৃত্যুটা স্বাভাবিক নয়, তার ঘর থেকে আমি একটা সিরিঞ্জ উদ্ধার করেছি। সুইয়ের ডগায় রক্তের ফোটা লেগে রয়েছে। পরীক্ষা করলে হাতের ছাপও পাওয়া যাবে। হত্যা না আত্ম হত্যা আপনি জানেন কিছু?”
“না ব্যাটা, আমার ধারণা নেই।”
“আপনাকে একটু থানায় আসতে হবে। আমি কি গাড়ি পাঠাবো?”
“সহজ করে বললে হয় অ্যারেস্ট করতে চাইছ।”
“ক্ষমা করবেন মিস। আপনিই আমার শিক্ষক।”
“আমি কি দশমী পর্যন্ত সময় পেতে পারি ব্যাটা? পুজোর মাঝে কারও মনো কষ্টের কারণ হতে চাইনা।”
“আপনাকে অবিশ্বাস করার মত স্পর্ধা আমার নেই। তাই হবে।”
অঞ্জলী ফোন কেটে দিল। বিন্দু আর অমিত বার বার জানতে চাইল কি হয়েছে। কে কাকে অ্যারেস্ট করতে চাইছে। কিন্তু অঞ্জলী জবাব দিল না।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!