Thread Rating:
  • 32 Vote(s) - 3.22 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
মহানগরের আলেয়া
একটানা দুই ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে মহানগরে পৌঁছে যায়। রাত দেড়টা বাজে, রাস্তা নির্জন হয়ে গেছে তাও রাস্তায় বেশ কিছু ট্রাক আর ইতস্তত পুলিসের গাড়ির দেখা পাওয়া যায়। বড় কালো দামী বি এম ডাবলু দেখে কেউ আটকাতে সাহস করে না। সোজা নোনাঝিলে নিজের বাড়ির নিচে এসে গাড়ি দাঁড় করায়। বারান্দা থেকে মহুয়া গাড়ি দেখতে পেয়েই দৌড়ে নিচে নেমে আসে। চোখে মুখে চরম উৎকণ্ঠা। নাড়ু ফোন করে যদিও জানিয়ে দিয়েছিল কিন্তু চোখে না দেখা পর্যন্ত স্বস্তির শ্বাস নিতে পারেনি। বুক চেপে রুদ্ধশ্বাসে এতক্ষণ অধীর উৎকণ্ঠায় প্রহর গুনছিল। ছলছল চোখে এক দৌড়ে গাড়ির কাছে চলে আসে।

ড্রাইভারের দরজা খুলে দানাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে, "এতক্ষণ লাগে নাকি আসতে?"

পেছনে গলা খাঁকড়ানির আওয়াজ শুনে চমকে যায়। পেছনে তাকিয়ে দেখে, একটা তোয়ালে গায়ে জড়িয়ে নয়না বসে। নাড়ু যে বলেছিল নয়নাকে ওর বাড়িতে নামিয়ে দেবে? এত রাতে কেন বাড়িতে এনেছে? চোখ মুছে দানাকে জিজ্ঞেস করে, কি ব্যাপার? দানা ওদের জন্য জামা কাপড় আনতে অনুরোধ করে। তড়িঘড়ি করে দৌড়ে, দানার জন্য একটা ট্রাকসুট আর নয়নার জন্য একটা টপ আর লম্বা স্কার্ট নিয়ে আসে। দানা ট্রাক সুট পরে গাড়ি থেকে নেমে পরে আর নয়নাকে পোশাক ধরিয়ে পরতে বলে দেয়।

গাড়ি থেকে নেমেই মহুয়াকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খায়। দুই হাতে শরীরের সব শক্তি নিঙরে নিয়ে দানার দেহ নিজের সাথে মিলিয়ে দেয় মহুয়া। বুকের মধ্যে মাথা গুঁজে হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি কান পেতে শোনে। রোজ দিন ওই হৃদপিণ্ডের ধুকপুক আওয়াজ কানে না আসলে ঠিক শান্তি পায় না। দানার শরীরের উত্তাপ নিজের শরীরের না মাখালে মনে হয় যেন ওর প্রসাধনী ওর সাজ অসম্পূর্ণ। ওর পুরু ঠোঁটের চুমু না খেলে ওর মন ভরে না। রাতে যদি জড়িয়ে না শোয় তাহলে ঘুম আসে না কিছুতেই।

দানা ওর মুখ আঁজলা করে তুলে ধরে বলে, "এই তো আমি পাপড়ি। এইবারে শান্তি?"

ছলছল চোখে ওর দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে। অনেককিছু বলার আছে কিন্তু পেছনে নয়নাকে দেখে থেমে যায়। বুক ফেটে যাচ্ছে ওর গল্প শোনার জন্য কিন্তু দুইজনের চোখে চোখে কথা হয়। "পরে বলব।" আলতো মাথা দোলায় মহুয়া, "ঠিক আছে।"

মহুয়াকে সব কিছু না বলা পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছে না কিছুতেই, কিন্তু নয়নার সামনে মুখ খোলা যাবে না একদম। ওর সামনে বেফাঁস কিছু বেড়িয়ে গেলেই মুশকিল। ওইদিকে আবার শক্তি বলাইকে বলে দেওয়া হয়েছে কেমিক্যাল আর গাড়ি পরিষ্কার করার সরঞ্জাম নিয়ে আসতে। পেছনের সিটে বেশ কয়েক জায়গায় রক্তের ছোপ ছোপ দাগ পরে গেছে। গাড়ির নিচে মাঠের মাটি পরিষ্কার করে ফেলতে হবে, চাকার খাঁজ থেকে খুটে খুটে মাটি ফেলে বের করে দিতে হবে, ভালো ভাবে গাড়ি পরিষ্কার করতে হবে।

দানা নয়নার দিকে তাকিয়ে দেখে। ফ্যাকাসে চেহারা, প্রচন্ড বেদনায় কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সারা শরীর শুকিয়ে গেছে। চোখে মুখ রক্তহীন, ভাষাহীন চাহনি নিয়ে মহুয়া আর দানার দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলে। দানা চাইছিল নয়নাকে ওর বাড়িতে ছেড়ে দিয়ে আসতে, কিন্তু মহুয়া বারন করে।

নয়নার অলক্ষ্যে দানার দিকে চোখ টিপে বলে, "মেয়েটা কাঁদছে আর তুমি কি যে বল না?" নয়নাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে, "কি হয়েছে তোমার?" এমন একটা ভাব দেখায় যেন কিছুই জানে না মহুয়া।

ওর উষ্ণ হাতের পরশ পেয়ে মহুয়ার কাঁধে মাথা গুঁজে ডুকরে কেঁদে ফেলে নয়না, "আমার সব শেষ হয়ে গেছে মহুয়া। আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমি এত পাপ করেছি আজকে সব পাপের শাস্তি একসাথে পেয়ে গেছি মহুয়া।"

ওর মাথায় হাত বুলিয়ে প্রবোধ দিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলে, "উপরে চলো, একটু শান্ত হও, তারপরে শুনবো কি হয়েছে।"

দানার চোয়াল কঠিন হয়ে যায়। নয়নাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে নারাজ, কিন্তু মহুয়া চোখের ইশারায় ওকে শান্ত হতে অনুরোধ করে। ইঙ্গিতে জানিয়ে দেয়, বেফাঁস আচরন করলে হিতে বিপরিত হয়ে যেতে পারে। নয়নার মনে সন্দেহ জাগতে পারে। ওর কি বলা উচিত যে নয়না রুহিকে অপহরন করার চক্রান্ত করেছিল? না এখুনি বলা ঠিক হবে না তাহলে মহুয়া আরো ভয় পেয়ে যাবে। নিজের বাড়ির ওপরে পাহারা আরো কড়া করে দিতে হবে।

নয়নাকে ধরে ধরে বসার ঘরে নিয়ে আসে মহুয়া। কাজের মেয়ে নিতা ততক্ষণে ঘুম থেকে উঠে গেছে। অভিনেত্রী নয়নাকে বাড়িতে ওই অবস্থায় দেখে চমকে যায়। মহুয়া ওদের নির্দেশ দেয় জল আনতে। নয়নাকে জল খেতে দিয়ে ঘটনা বলি জিজ্ঞেস করে। মহুয়ার হাত আঁকড়ে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে রাতের ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরন দেয়। শুধু মাত্র নিজেদের কাম কেলির ঘটনা বাদ দিয়ে বাকি সব বলে মহুয়াকে। শুনতে শুনতে মাঝে মাঝে মহুয়া আঁতকে ওঠে, "উফফফ তাই নাকি?" "জানতে পারলো কি করে?" ইত্যাদি জিজ্ঞেস করে। চোখে মুখে আতঙ্কের ছাপ মাখিয়ে নেয় মহুয়া। বুকের রক্ত চঞ্চল, এই ছলনাময়ী নারীর সাথে উচিত হয়েছে। কতজনের সাথে ছলনার খেলা করেছে তার ইয়াত্তা নেই, তার পরিনাম একদিন এইভাবে হবে সেটা অবশ্যাম্ভাবি। নয়নাকে অতিথিদের শয়ন কক্ষে শুইয়ে দিল মহুয়া। আতঙ্কে আর দুঃখে এই কয় ঘণ্টায় ওর শরীরের সব রক্ত শুকিয়ে গেছে। শরীরে কিছু আর বেঁচে নেই। চোখ বুজলেও মাঝে মাঝেই কেঁপে কেঁপে ওঠে, কেঁদে কেঁদে ওঠে। মহুয়া আর দানা বড় মুশকিলে পড়ে যায়।

সকাল হতে আর কয়েক ঘন্টা বাকি, হাতে সময় খুব কম, নেই বললেই চলে। পরবর্তী পদক্ষেপের কথা ভাবতে হবে কিন্তু বাড়িতে নয়না থাকায় সেটা কিছুতেই সম্ভবপর হয়ে উঠছে না।

কিছুপরে শক্তি আর বলাই, গাড়ি পরিস্কার করার সরঞ্জাম নিয়ে বাড়িতে চলে আসে। দানা ওদের নিয়ে গ্যারেজে চলে যায় গাড়ি পরিস্কার করতে। মহুয়াও ওর পেছন পেছন নেমে আসে। বাড়ির বাইরে একমাত্র একটু মন খুলে কথা বলতে পারা যাবে।

গ্যারেজে ঢুকেই ওকে জড়িয়ে ধরে মহুয়া, "তুমি গেলে আর আমার বুকের এক লিটার রক্ত শুকিয়ে গেল।"

দানা হেসে ওর কপালে চুমু খেয়ে বলে, "তোমাকে আর রুহিকে ছেড়ে কোথাও কি যেতে পারি বলো।"

শক্তি বলাই গাড়ি পরিস্কার করতে লেগে পরে। দানা এক এক করে সব ঘটনা মহুয়াকে খুলে বলে। বাথরুমের চরম কাম কেলির কথা লুকায় না। শুনতে শুনতে মহুয়া মাঝে মাঝেই আঁতকে ওঠে, "বাপরে কি অসম্ভব ঝুঁকি নিয়েছিলে।"

শক্তি ওদিক থেকে বলে, "আর বলবেন না ম্যাডাম। আমাদের বের হতেই দেয়নি। সবার হাতে পিস্তল ছিল কিন্তু এতক্ষণ বসে বসে শুধু মশা মেরে গেলাম একটাও গুলি মারতে পারলাম না।"

দানা মিচকি হেসে বলে, "তুই তোর কাজ কর বাড়া। পরে গুলি চালাস। গুলি চালানো আমাদের পরিকল্পনায় ছিল না।"

মহুয়া ওর গালে চাঁটি মেরে বলে, "ইসসস, এত চাপা উৎকণ্ঠার মধ্যেও তোমার ওইসব করতে মন চাইলো? তুমি না যাচ্ছেতাই একটা মানুষ মাইরি।"

দানা মিচকি হেসে বলে, "কি করব সোনা। না করলে ধরা পড়ে যেতাম ওদের কাছে। ওরা সবাই উলঙ্গ হয়ে সঙ্গমে মত্ত আর আমি জামা কাপড় পরে পকেটে পিস্তল গুঁজে পড়ে থাকতাম নাকি? অন্তত নয়নার সাথে করতেই হতো না হলে মেয়েটা সন্দেহ করতো।"
[+] 2 users Like Mr Fantastic's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: মহানগরের আলেয়া - by Mr Fantastic - 14-09-2020, 03:04 PM



Users browsing this thread: 6 Guest(s)