13-09-2020, 03:56 PM
পর্ব ### ৩
খ
বেশ অনেকক্ষন এটা ওটা ঘুরায় শান্তা। রাতের বেলা তেমন ভালো অনুষ্ঠান নেই টিভিতে। কিছু টক-শো, কিছু পুরতন সিনেমা। তারই মধ্যে হঠাৎ একটা রোম্যান্টিক সিরিজ পেয়ে যায় শান্তা। দিনের বেলার এপিসোড রিপিট করছে আবার। দেখতে দেখতে এতটাই মগ্ন হয়ে উঠে যে মনের ভেতরে জমে উঠা কালো মেঘটুক যেন মিলিয়ে যায় ওর। সিরিজ এর শেষ দিকে নায়ক-নায়িকার বেশ সুন্দর একটা দৃশ্য দেখায়। নায়ক কিছু একটা ভুল করেছে, নায়িকা পেছন থেকে তার গলা জড়িয়ে চুমু খাচ্ছে, নায়ককে শান্তনা দিচ্ছে। টিভিটা যখন বন্ধ করে শান্তা, তখন ওর মনেও প্রেম জেগে উঠেছে। রাত কতো হল কে জানে! ফয়সাল এর কি কাজ শেষ হয়েছে?
শোবার ঘরের কাছে আসতেই মনটা দমে উঠে শান্তার। ঘুমিয়ে পড়েছে ফয়সাল। শোবার ঘরের আলো নেভানো। ভারী শ্বাস এর শব্দ শুনা যাচ্ছে। ওর পাশে শুতে আর ইচ্ছে করে না শান্তার। এগিয়ে গিয়ে পা টিপে টিপে নিজের বালিশটা টেনে নেয়। তারপর বেড়িয়ে আসে আবার।
মেয়ের ঘরে দুটো বিছানা। একটায় ওর শাশুড়ি মা শুত। ওখানেই বালিশটা নামিয়ে রাখে শান্তা। তারপর একবার বাথরুম থেকে ঘুরে এসে শুয়ে পরে।
শুয়ে পড়লেও সহজে ঘুম আসতে চায় না শান্তার। মনের ভেতরে কেমন অদ্ভুদ এক আকুতি জন্মে উঠে যেন তার। একবার এপাশ আর একবার ওপাশ করে। কল্পনার জগতে তলিয়ে যায় ধিরে ধিরে। আর কটা নারীর মতনই একটা সুখি দাম্পত্য চেয়েছিল শান্তা। তেমন চটপটে মেয়ে সে কোন কালেই ছিল না। একটু লাজুক গোছের, একটু ঘরকুনো স্বভাব এরই মেয়ে শান্তা। নিজের খেয়ালে পড়ে থাকতেই ভালোবাসে। হয়তো এই কারণেই ফয়সালের সঙ্গে ওর বিয়েটা হয়েছিলো। শাশুড়ি মা হয়তো আগে ভাগেই বুঝতে পেরেছিল, শান্তাকে নিজের হাতের ইচ্ছে মতন চালাতে পাড়বে। প্রতিবাদ করতে আসবে না শান্তা যখন তখন।
আজ ভাবতে ভাবতে শান্তার মনে প্রশ্ন জাগে। ফয়সাল কি আদৌ ওকে ভালবেসেছে? নাকি মায়ের কথা শুনেই ওর সঙ্গে ঘর করে গেছে এত দিন? ভালো না বাসার কি কারনই বা হতে পারে? দেখতে মন্দ নয় শান্তা, আর দশটি মেয়ের মতন তো নিজের চরিত্রেও আঁচ পরতে দেয় নি কখনো সে। রক্ষণশীল পরিবারে বড় হয়েছে, পুরুষ মানুষ এর সামনে কমই আসা যাওয়া ছিল শান্তার। তারপরও তো জৈবিক একটা চাহিদা তৈরি হয়। একটা বয়স পার হলে মনে প্রেমের ইচ্ছে জাগে। শান্তার মনেও জেগেছিল, প্রেম এসেছিলো ওর জীবনে। তখন সে ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী। হারুন ভাই এর সঙ্গে কেমন করে যেন প্রেম হয়ে গেলো তার। খুব মজার মানুষ ছিলেন হারুন ভাই। ফয়সালের মতন এত ক্যারিয়ার সচেতন নয়। হাসি তামাশা ভালবাসতেন, শান্তাকে নিয়ে ঘুরতে যেতেন, বিকেল বেলা চটপটি আর ফুচকা খেতেন আর মজার মজার রসিকতা করতেন।
হারুন ভাই এর কথা ফয়সালকে কখনো বলে নি শান্তা। শুনলে ফয়সাল নির্ঘাত গালাগালি শুরু করে দিবে। তারপরও ইনিয়ে বিনিয়ে অনেক কিছুই জানতে চেয়েছে ফয়সাল। শান্তা বলেছে, একটা ছেলে আমার পেছনে লেগে থাকতো, কিন্তু আমি পাত্তা দিতুম না। ওতটুকই জানা থাকুক ফয়সালের। এর বেশী জানতে গেলেই বিপদ। ওমনিতেই খুতখুতে স্বভাব ওর। বিয়ের পর যখন প্রথম ওদের মিলন হল, তখনই টের পেয়েছিলো শান্তা। ওর প্রতিটি নড়াচড়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লক্ষ্য করছিলো ফয়সাল। পুরুষাঙ্গের প্রথম আঘাতে যখন রক্তপাত হল শান্তার, তখন সন্তুষ্টির ভঙ্গিতে হেসেছিল।
শান্তা ভাবতে পারে না ওদিন হারুন ভাই এর কথায় রাজি হয়ে গেলে কি হতো! আকাশ মেঘলা ছিল সেদিন। ক্লাস শেষ করে বেরোতেই হারুন ভাই এর সঙ্গে দেখা। ওকে নিয়ে পার্কে গিয়ে বসেছিল হারুন ভাই। আর তখনই সে কি বৃষ্টি! ভাগ্যিস ছাতা ছিল শান্তার ব্যাগ এ। নইলে একদম কাক ভেজা হয়ে যেতো। ওদিন কোন বাসও নেই যেন। কোন মতে একটা রিক্সা যোগার করেছিলো হারুন ভাই। দুজনে চাপাচাপি করে বসেছিল। প্লাস্টিক এর আড়ালে হাত বাড়িয়ে নিজের বুকের সঙ্গে টেনে নিয়েছিল শান্তাকে। ওর বাহুডোরে প্রেমের উষ্ণতা শিরায় শিরায় অনুভব করেছে শান্তা। রোম্যান্টিক এক জগতে হাড়িয়ে গিয়েছিলো ও। কোথায় চলছে রিক্সা, কোথায় রয়েছে ওরা - সব কিছুতেই একটা দিশেহারা ভাব ছিল। যখন হারুন ভাই ওকে রিক্সা থেকে নামিয়ে, ভাড়া মিটিয়ে - ভাঙ্গা একটা সিড়ি বেয়ে উপরের ঘরে নিয়ে গেলো - তখন রীতিমতন পা দুটো কাপছিল শান্তার। শীত করছিলো ওর। কোথা থেকে একটা চাদর এনে ওর গায়ে জড়িয়ে দিয়েছিলো হারুন ভাই। তখন যেন প্রথম বারের মতন উপলব্ধি করেছে শান্তা, হারুন ভাই ওকে তার ঘরে নিয়ে গিয়েছে।
তখন শান্তার মনে ভয় এর লেশ মাত্র ছিল না। হয়তো ওর শরীরটাও জেগে উঠেছিলো সেই বৃষ্টির দিনে। হারুন ভাই যখন তাকে জাপটে ধরে, তার কোমল ঠোঁট জোড়ার উপর নিজের পুরুষ্টু ঠোঁট দুটো নামিয়ে নিয়ে এলো - তখনো এতটুকও বাঁধা দেয় নি শান্তা। নীরবে সপে দিয়েছিলো নিজেকে হারুন ভাই এর বাহুডোরে। সেদিনই প্রথম বারের মতন ওর বুকে পুরুষ মানুষ এর হাত পড়েছিলো। স্তন দুটো হাতের মুঠিতে নিয়ে চটকে দিয়েছিলো হারুন ভাই। কামিজটা তুলে কোমল উষ্ণ পেটের উপর চুমু খেয়েছিল। সেলয়ারের ভেতরে হাতটা ঢুকিয়ে দিতে চাইছিল, কিন্তু কিছুতেই এগোতে দেয় নি তাকে শান্তা। দুই হাতে চেপে ধরেছিল হারুন ভাই এর পুরুষালী হাতটা। জোরজবরদস্তি করে নি হারুন ভাই। মেনে নিয়েছিল শান্তার লজ্জাটাকে। তাকে বাহুডোরে নিয়ে বিছানায় গড়িয়েছিল। ওর পুরুষালী বুকে নাক গুজে শান্তা প্রথম বারের মতন উপলব্ধি করেছিলো নারী-পুরুষ এর সম্পর্কটা কতো মধুর হতে পারে!
আচ্ছা, শান্তা যদি হারুন ভাই কে বিয়ে করতো তাহলে কি আজ এতটা কুঁকড়ে থাকতে হতো তাকে? হারুন ভাই সব সময়ই ওর মতটাকে প্রাধান্য দিতো। ও যাই বলতো, মেনে নিতো। দেখতে যাই হোক, মাইনে যত কমই হোক - সত্যিকারের ভালোবাসা পেত ও হারুন ভাই এর কাছে। আর ওদিন যদি, হারুন ভাই একটু জোর করতো, তাহলে হয়তো ওর শরীরে প্রবেশ করা প্রথম পুরুষটি হারুন ভাইই হতো। কিন্তু ভেবে আর কি হবে! হারুন এর খোজ নেই বছর দশেক হয়ে যাচ্ছে। শান্তা এখন ফয়সালের স্ত্রী। পূর্বপ্রেম নিয়ে ভেবে কি আর লাভ আছে? বরং ফয়সালের কথাই ভাবতে লাগলো শান্তা। রাজীব ভাই নিশ্চয়ই ফয়সালের ভালো চাইছে। নাহ, ফয়সালের আসলে দোষ নেই। মাকে হাড়িয়ে, ব্যাবসায় লস খেয়ে ভেঙ্গে গেছে ফয়সাল। ওকে আবার গড়ে নিতে হবে শান্তাকেই। রাজীব ভাই নিশ্চয়ই তাকে সাহায্য করবে। কেন করবে না? ফয়সালই তো বলল, ওকে মদ খেয়ে বারণ করছিলো রাজীব। ভালো চায় বলেই তো করছিলো। যে লোক স্বামীর ভালো চায়, তাকে বিশ্বাস করতে অসুবিধে কোথায়?
রিয়ান খান