13-09-2020, 01:31 AM
পর্ব ### ২
বসার ঘরে বসতে বসতে শান্তা চট করে রান্নাঘরে গিয়ে চায়ের পানিটা চড়িয়ে দিলো। নিজেকেও একটু গুছিয়ে নিল সেই সাথে। বড় করে দম নিয়ে বেড়িয়ে এলো আবার। “তারপর বলুন না - কেমন আছেন? কয়েক মাস থেকে তো আপনার খবরই নেই...”
“আসলে ফয়সালের এমন একটা সংবাদ, তারপর ওর সঙ্গে আর যোগাযোগ করেও তেমন সাড়া পাচ্ছি না। তাছাড়া ওকে আর এই সময় বিরক্ত করতেও চাইছি না।”
“হ্যাঁ, আজকাল একটু কেমন যেন আনমনা হয়ে থাকে ও...” শান্তা বসতে বসতে নিজেকেই যেন বুঝাল।
“সত্যি বলতে শান্তা,” একটু ইতস্তত করে যেন রাজীব। “এইসব কারণেই তোমার কাছে আসা।”
“মানে?” শান্তা ভ্রূ কুচকে তাকায়।
“ফয়সালকে আমি সপ্তাহ খানেক আগে - ব্লু বার্ড ক্লাব থেকে বেরোতে দেখেছি,” রাজীব মৃদু কণ্ঠে বলে। “দেখে মনে হচ্ছিল - ও মাতাল,”
“ওহ...” নিজের অজান্তেই হাতটা গলার কাছে উঠে আসে শান্তার। কেমন যেন শুকনো লাগছে গলাটা। মনে হচ্ছে কিছু একটা আটকে গেছে। হ্যাঁ, ফয়সাল একটু আধটু মদ্যপান সব সময়ই করেছে। শাশুড়ি মায়ের অগোচরে, ঘুরতে বেরোলে কিংবা অফিস পার্টীতে ওর মদ্যপানের অভ্যাস এর কথাটা জানা আছে শান্তার। কয়েক সপ্তাহ আগে অফিস থেকে আসার পথে দুই-একবার মদ খেয়েই বাড়িতে ফিরেছে ফয়সাল। ও নিয়ে বাকবিতণ্ডাও হয়েছে ওদের মাঝে। তবে তাই বলে ফয়সাল নিশ্চয়ই নিয়ম করে ব্লু বার্ড ক্লাবে যায় না! রোজ রোজ মাতাল হয়ে ফিরলে শান্তা টের পাবে না?
“জানি ব্যাপারটা তোমার কাছে ধাক্কার মত লাগতে পারে,” একটু গলা খাকারি দেয় রাজীব। “কিন্তু কাকি মারা যাবার আগে - ফয়সাল আমার বারণ সত্ত্বেও বিরাট অংকের একটা ইনভেস্টমেন্ট করেছিলো। শুনেছি টাকাটা নাকি সম্পূর্ণই মার গেছে। এমন অবস্থায় মাসনিক ভাবে ভেঙ্গে পড়াটা বেশ স্বাভাবিক। তারপর ওকে ব্লু বার্ড থেকে বেরোতে দেখলাম - আসলে আমি তোমার জন্যই চিন্তা করছিলাম। তোমাদের মাঝে সব কিছু ঠিক থাক চলছে তো!”
রান্নাঘর থেকে চায়ের পানি ফুটার শব্দ হল। শান্তা প্রায় লাফিয়ে উঠলো যেন। নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। “আছে তো - আমাদের মাঝে আবার কি হবে। আপনি বসুন, আমি চা করে আসছি,”
রান্নাঘরে চা বানাতে বানাতে শান্তা ব্যাপারটা নিয়ে ভাবল। ওর হাত কাপছে। বুকটাও কেমন টিব টিব করছে। কি বলছে রাজীব ভাই! শাশুড়ি মা মারা যাবার আগে ফয়সাল বিশাল অংকের টাকা ইনভেস্ট করেছিলো? কিন্তু ওকে তো এই ব্যাপারে কিছুই জানায় নি ফয়সাল!
বিস্কিট, চানাচুর আর চায়ের কাপটা ট্রেতে সাজিয়ে ফিরে এলো শান্তা। আগের জায়গাতেই বসে আছে রাজীব ভাই। রান্নাঘর থেকে বসার ঘরে আসতে গিয়ে শান্তা টের পেলো রাজীব ভাই যেন ওর প্রতিটি পদক্ষেপ গুনছে। ভীষণ লজ্জা করছে ওর। কেমন একটা অপরাধ বোধও মাথা চারা দিচ্ছে। ট্রে-টাকে রাজীব ভাই এর সামনে নামিয়ে রাখল শান্তা। তারপর আবার গিয়ে বসলো উল্টো দিকে। “নিন, একটু চা নিন...”
“তোমার হাতের চা আমার সব সময়ই খুব পছন্দ,” রাজীব ভাই ওর দিকে তাকিয়েই কথাটা বলে একটা হাসি দিলো। ঢোঁক গিলল শান্তা। একটু পানি খেয়ে আসা দরকার ছিল। গলাটা সত্যিই শুকনো লাগছে ওর। শুধু মাত্র চায়ের কাপটা তুলে নিল রাজীব, বিস্কিট গুলো ছুঁয়েও দেখল না। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে প্রশংসা করলো; “তোমার হাতে জাদু আছে শান্তা। তোমার চা বল, আর রান্না বল - সব কিছুই দারুণ স্বাদ। তুমি যদি আমার বউ হতে না, আমি তো মোটা হয়ে ভাল্লুক হয়ে যেতাম এত দিনে হা হা ...”
প্রশংসা শুনে হাসল শান্তা। বিশেষ করে বউ হবার অংশটুকু বেশ উপভোগ করলো যেন। রাজীব ভাইকে ওর কখনো মন্দ মনে হয় নি। এখন এত ঘাবড়াচ্ছে কেন বুঝে পাচ্ছে না সে। “হয়েছে… আপনি তো আর আসেনই না চা খেতে,”
“আসবো,” রাজীব মাথা দোলায়। “এখন থেকে চলে আসব। তোমার সঙ্গে গল্প করবো আর চা খাবো কেমন?”
“আপনার যখন ইচ্ছে চলে আসবেন,” শান্তা সহজ কণ্ঠে বলে। “আচ্ছা রাজীব ভাই, কোথায় টাকা ইনভেস্ট করেছিলো ফয়সাল?”
“সে তো আমি ঠিক বলতে পারি না,” রাজীব মাথা নাড়ে। “আসলে আমি চাই না ও নিয়ে তুমি আবার ফয়সালকে বল। কে জানে - হয়তো ও ভুল বুঝতে পারে তাই না? তোমায় সতর্ক করতেই আমার বলা...”
“আপনাকে ধন্যবাদ, আপনি এমন একটা সময়ে আমাদের কথা ভেবেছেন...”
“এ তো বন্ধু হিসেবে আমার কর্তব্য ছিল শান্তা,” চায়ে আবারও চুমুক দেয় রাজীব। “তোমার মেয়ে কোথায়? কলেজে?”
“হ্যাঁ কলেজে,”
“ওহ, বাসায় একাই আছো তাহলে… কেমন লাগে তোমার একা আজকাল?” রাজীব ভ্রূ নাচিয়ে জানতে চায়।
“এই তো কেটে যাচ্ছে,” শান্তা ঘুড়িয়ে জবাব দেয়। “আসলে, মা চলে যাবার পর একটু ফাকাই হয়ে গেছে বাসাটা...”
“হম, তা বটে,” মাথা দোলায় রাজীব। “তোমার গল্প করার সঙ্গী চলে গেলো,”
শান্তা ঠিক এক মত হতে পারে না। নাহ, শাশুড়ি মায়ের সঙ্গে তেমন গল্পের সম্পর্ক ওর ছিল না। একলা একলাই ওর দিন কাটতো। একটা সুবিধে ছিল, মা তেমন টিভি দেখতেন না। তাই শান্তা যা ইচ্ছে তাই দেখতে পারতো টিভিতে। ওতেই সময় কেটে যেতো শান্তার। তবে এ কথা রাজীবকে বলার দরকার নেই। সে বলল; “মা মারা যাবার পর আমার দায়িত্বটাও বেড়ে গেছে,”
“তা বুঝাই যাচ্ছে,” মাথা দোলায় রাজীব। “একদম শুকিয়ে গেছ তুমি… তবে একটা কথা কি জানো? আগের থেকে তোমায় অনেক… সেক্সি লাগছে।”
সুন্দরী নয়, রূপবতী নয়। এক কথায় সেক্সিতে চলে গেলো! শান্তার বুকটা ধড়ফড় করে উঠলো মুহূর্তের জন্য। সেক্সি! এ তো ঠিক ভদ্রলোক এর শব্দ মনে হচ্ছে না। ঢোঁক গিলে ও চাইলো রাজীব এর চোখে। ওর কোটরের ভেতরে সেধিয়ে যাওয়া চোখ দুটো মেলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাজীব। শান্তার সঙ্গে চোখাচোখি হতেও চোখ নামালো না। বরং শান্তাই চোখ নামিয়ে দেখতে পেলো নিজের ঠোঁটটা চাটছে রাজীব। “আ-আপনি কি - মানে আপনি কি আগের বাসাতেই থাকছেন?”
“নাহ,” মাথা নাড়ে রাজীব। “এই ছয় নম্বরেই বাসা নিয়েছি। ছোট একটা বাসা আর কি…… বেশীদিন হয় নি, তবে এর মধ্যেই একদম যাচ্ছে তাই বানিয়ে ফেলেছি।”
“তাই নাকি!” মুখের সামনে এসে পড়া কটা চুল কানের পেছনে গুজে শান্তা।
“আসলে একলা পুরুষ মানুষ আমি - ঠিক গোছাতে জানি না কিছুই। তুমি একদিন গিয়ে গুছিয়ে দিয়ে এসো তো, তোমার কোমল হাতের স্পর্শ পড়লে ঝকঝকে তকতকে হয়ে যাবে!”
“হা হা,” কষ্ট করে হাসে শান্তা। “ঠিক আছে, একদিন ফয়সালকে নিয়ে হাজির হবো,”
“কেন আমার বাসায় একলা যেতে ভয় করে নাকি?” রাজীব জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। তার চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে না রসিকতা করছে। আবারও ঢোঁক গিলে শান্তা।
“নাহ নাহ, ভয় করবে কেন! মানে বলছিলাম যে...”
“বলছিলে কি আমি বলি, তুমি বলছিলে যে রাজীব তো ভালো লোক নয় - ইতর গোছের লোক! খালি বাসায় নিয়ে গিয়ে কি না কি করে দেয় তাই না?”
“আপনি একদমই ভুল বুঝছেন!” হাতের মুঠিতে উর্ণার কনাটা প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে বলল শান্তা। “এমন কিছু নয়,” বলতে বলতেই কাধ থেকে খসে পড়লো শান্তার উর্ণাটা। চট করে ও হাত তুলে আবার ওটাকে কাঁধে তুলে দিলো। কিন্তু ততক্ষনে রাজীব এর চোখ পড়ে গেছে উর্ণার তলায়। ডান বুকে সুডৌল স্তনের অবয়বটা দেখে আবারও ঠোঁট চাটল রাজীব।
“দুষ্টুমি করছিলাম তোমার সঙ্গে,” রাজীব হাসে। “আমার মনে হয় এভাবে একলা আসাটা ঠিক হয় নি।”
“না না ঠিক হবে না কেন? আপনি এসেছেন আমি খুশী হয়েছি,” শান্তা মনে মনে নিজের গালে নিজেই চড় দেয়। ইশ, আর কিছু বলার পেলো না! খুশী হয়েছি!
“তাহলে তো আবারও আসতে হয়,”
“আসবেম, যখন ইচ্ছে চলে আসবেন।”
“আচ্ছা আজ উঠি কেমন?” রাজীব উঠে দাড়ায়। উঠে দাড়ায় শান্তাও। আবারও কাধ থেকে খসে পড়ে ওর উর্ণাটা। চট করে সেটা কাঁধে তুলতে গিয়ে চোখ তুলে তাকায় শান্তা। এইবার রাজীব এর চোখ দুটো ধরে ফেলে সে। ইশ, লোকটা ওর বুকের দিকেই তাকিয়ে আছে। “আরেকদিন আসবো নি। তুমি আবার ফয়সালকে বলতে যেয়ো না, ও ভাববে আমি অনধিকার চর্চা করছি। আসলে আমার বিপদে তোমরা আমায় সাহায্য করেছো, তাই ফয়সালের বিপদে আমিও পাশে থাকতে চাই। ওকে একটু চোখে চোখে রাখছি আমি, যেন কোন ভুল করে না বসে,”
“আপনাকে কি বলে যে ধন্যবাদ দেবো,” শান্তা জোরে শ্বাস ফেলে। “ফয়সাল আজকাল আমার সঙ্গে মন খুলে একদম কথা বলে না,”
“ঠিক হয়ে যাবে,” রাজীব সাহস দেয়। “কটা দিন সময় দাও ওকে। আমি চলি, কেমন?”
“আচ্ছা রাজীব ভাই,” শান্তা হাসি মুখে এগিয়ে দেয় রাজীবকে দরজা অব্দি। দরজার বাহিরে গিয়ে ফিরে তাকায় রাজীব। একটা হাসি দিয়ে তারপর সিড়ি বেয়ে নেমে যায়। দরজাটা দ্রুত বন্ধ করে দেয় শান্তা। পরক্ষনেই দরজায় পীঠ দিয়ে হেলান দেয়। চেপে রাখা শ্বাসটা বেড়িয়ে আসে ওর হা করা মুখের ভেতর থেকে।
রিয়ান খান
(riank55)