13-09-2020, 01:27 AM
পর্ব ### ১
তুলিকে কলেজে দিয়ে আসার পর বেশ অনেকখানি সময় নিজের মত করে পায় শান্তা। তখন আয়নার সামনে একটু গিয়ে বসে। বিয়ের পর আর ওমন করে রূপচর্চা করা হয়ে উঠে নি শান্তার। ত্বকের উজ্জ্বলতাও যেন খানিকটা নষ্ট হয়ে গেছে। সেটা ফিরে পেতেই মুখে মুলতানি মাটি মাখছে কদিন থেকে শান্তা। কয়েক মাস আগেও ব্যাপারটা সম্ভব ছিল না। শান্তার শাশুড়ি - ওসব রূপচর্চা একদম সইতে পারতো না। তার মৃত্যুর শোকটা শান্তাকেও নাড়া দিয়েছে বটে, তবে বেশ দ্রুতই নিজেকে সামলে নিয়েছে সে। মনের গভীরে হয়তো একটা সত্ত্বা স্বস্তির শ্বাসও ফেলেছে। শান্তা ভেবেছিলো এইবার সংসারটাকে একদম নিজের মত করে গোছাতে পাড়বে। কাধের উপর থেকে হুকুম চালাবে না কেউ আর। কিন্তু ভাবনাতেই সাড়া।
দীর্ঘ নয় বছরের দাম্পত্য জীবনে আজ যেন শান্তা নিজেকেই ভুলতে বসেছিল। নিজের চাহিদা, নিজের ইচ্ছে - সব কিছু পরিবারের জন্যই বিসর্জন দিতে হয়েছে তাকে। তবে না, আর নয়। আর কতোই বা নিজের ইচ্ছে গুলো, চাহিদা গুলো ধামাচাপা দিয়ে রাখবে? তাই তো কদিন আগে রূপচর্চার দোকান থেকে এই মূলতানি মাটি কিনে এনেছে ও। শরীরের অবাঞ্চিত মেদ গুলো ঝেটিয়ে বিদেয় করতে আজকাল ডায়েটও করছে শান্তা। মাত্র কয়েক মাসেই দারুণ ফল পেয়েছে সে। মেয়েকে কলেজে দিয়ে হেটেই বাসায় ফিরে আজকাল শান্তা। তারপর যে ঘণ্টা দুয়েক সময় হাতে পায় ও, এই সম্পূর্ণ সময়টাই নিজেকে নিয়ে বেস্ত থাকে। শাশুড়ি বেচে থাকতে নিজেকে সময় দেবার কথা ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারতো না সে।
কোন কোন দিন শান্তা আয়নার সামনে দাড়িয়ে কাপড় ছাড়ার সময় নিজের নগ্ন শরীরটা একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে। নাহ, দেখতে নায়িকাদের মত সুন্দরী না হলেও মন্দ নয় শান্তা। পঁয়ত্রিশ বছরের যৌবন ভরা শরীরে আজও চটক আছে তার। আছে রূপের মাধুর্য আর মায়াবী একটা আকর্ষণ। আজকাল যেন নিজেকে নিজের কাছেই আগের চাইতেও বেশী সুন্দরী মনে হচ্ছে তার। তুলিকে কলেজে দিতে গেলে অনেক ছাত্র-ছাত্রীর বাবারাও কেমন করে যেন তাকায় ওর দিকে আজকাল। কেউ কেউ তো ইনিয়ে বিনিয়ে কথাও বলতে আসে। লজ্জাই করে শান্তার। কদিন থেকে অবশ্য এই পুরুষমানুষদের বাড়তি নজরে আসাটা ভালোই লাগছে তার।
ওসব ভাবতে গেলে কখনো কখনো দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে শান্তার বুক চিড়ে। ইশ, আর সবার মত ফয়সালও যদি একটু চোখ তুলে চাইতো ওর দিকে! কয়েক মাস ধরে যেন স্ত্রীর সঙ্গে ভালো ব্যাবহার করতেও ভুলে গেছে ফয়সাল। শেষ কবে যে ওদের শারীরিক সম্পর্ক হয়েছিলো, সেটাও মনে করতে পারে না শান্তা। মাতৃ শোকে ছেলে কাতর হবে, এটাই স্বাভাবিক, তাই বলে মাস পাঁচেক হয়ে যাবে - একটা বার চুমুও খেতে পাড়বে না? দুটো ভালো কথাও বলতে আসবে না? এটা কি মেনে নেয়া যায়?
শান্তা আজ যখন এত কিছু ভাবছিল, তখনই কলিং বেলটা হঠাৎ করে বেজে উঠে। একটু চমকেই উঠলো শান্তা। এই অসময় কে এলো আবার? ঘড়িতে সকাল এগারোটা বাজে। ঘরের কাজকর্ম শান্তা নিজের হাতেই করে। এই বেলা তাই কাজের লোক আসার তো প্রশ্নই উঠে না। মাসের পনেরো তারিখ, খবরের কাগজ এর বিলও চাইতে আসবে না নিশ্চয়ই। পারা প্রতিবেশীদের সঙ্গে ওভাবে কখনো মেলামেশা করা হয় নি শান্তার। কিন্তু তাই বলে তো আর দরজা না খুলে থাকা যায় না। ভাগ্যিস আজকে এখনো মুলতানি মাটিটা মুখে লাগানো হয় নি। সবে মাত্র প্যাকেটটা বার করে রেখেছে শান্তা ড্রেসিং টেবিল এর উপর। পঢ়নে ওর ঘরের কামিজ। কোন মতে হাতটা বাড়িয়ে উর্ণাটা তুলে বুকে দিতে দিতে শান্তা দরজা খুলতে আসে। পিপহোলে চোখ রাখতেই ওর বুকটা ধড়াস করে উঠে। এ কি! উনি এই অসময়?
“রাজীব ভাই আপনি? এ-এই অসময়?” দরজা খুলে শান্তা একটু বোকার মতই বলে বসে। ওপাশে দাড়িয়ে আছে রাজীব ভাই। লম্বা দেহের গড়ন, চৌকশ মুখের অবয়ব, গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি আর চোখ দুটো যেন কোটরে ঢুকে গেছে অনেক আগেই। চুল গুলো কাচা-পাকা হলেও রাজীব ভাই এর বয়সটা তেমন একটা বুঝা যায় না। হয়তো নিয়মিত ব্যায়াম করে বলেই। ফয়সালের সঙ্গেই চাকরি করতো এক সময় রাজীব। মাঝখানে ডিভোর্স এর পর মানসিক ভাবে অনেক ভেঙ্গে গিয়েছিলো। তখন চাকরি ছেড়ে ব্যাবসায় নেমে পড়েছিল। ওই সুত্র ধরেই বাসায় আসা যাওয়া ছিল রাজীবের। তবে কখনো এমন হুট করে সকাল বেলা চলে আসে নি।
স্বভাবসুলভ মুচকি হাসিটাই দিলো রাজীব। কোটরের ভেতর থেকে ওর চোখ দুটো চকিতে একবার যেন মেপে নিল শান্তাকে। এক দেখাতেই অপাদ্মস্তক জরিপ করা হয়ে গেলো তার। ভারী স্বরে জানালো, “এই তো এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম, ভাবলাম তোমার সঙ্গে একটু দেখা করেই যাই...”
“ওহ… আসুন না, আসুন… ফয়-ফয়সাল তো অফিসেই, মানে… আসুন বসুন...” শান্তা ইতস্তত করে। নাহ, একদম ঠিক হচ্ছে না। রাজীব ভাইকে কখনো তেমন মন্দ লোক বলে মনে হয় নি শান্তার। আগে যখন আসা যাওয়া চলত, তখন একটু চোখাচোখিও হতো তার সঙ্গে। তাই বলে এভাবে হুট করে যদি একলা বাসায় চলে আসে কেউ, তখন একটু ভড়কে যাওয়াটাই যেন স্বাভাবিক।
রিয়ান খান
(riank55)