12-09-2020, 04:32 PM
৪ পর্ব
(গল্পটা এখন থেকে আর উত্তম পুরুষে লেখা হচ্ছে না। “আমি” এখন থেকে “অমিত”)
রবিবার এ সাধারণত এ বাড়িতে একটা ঢিলে ঢালা ভাব থাকে। কিন্ত অঞ্জলীর আজ অনেক কাজ। সে খুব সকালেই ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলল। খুব ভোরে উঠে গোসল করেছে। ঘরে সালোয়ার কামিজ আর বাইরে সাধারণত শাড়ি পড়ে অঞ্জলী। কিন্তু আজ সে স্কীন টাইট জিন্স পরেছে। উপরে শাদা টি শার্ট। শার্ট এমন যে অঞ্জলীর শরীরের সকল বাক বুঝা যায় কিন্তু কোন কিছু দৃষ্টিকটু ভাবে বেরিয়ে নেই। অনেকদিন পর সে সাজগোজ করল। তবে উতকট নয়, খুব মার্জিত আর রুচিশীল। কি মনে করে স্যান্ডেল বা স্লীপারের পরিবর্তে কেডস পড়লো। হাতে একটা র*্যাকেট থাকলে টেনিস বা ব্যাডমিন্টনের কোর্টে নামিয়ে দেয়া যেত। ছোট্ট একটা হ্যান্ডব্যাগ কাধে ঝুলিয়ে শিস দিতে দিতে হন হন করে নেমে আসছিল সিড়ি দিয়ে। সে খেয়াল করেনি অমিতও সমান গতিতে সে সময় নীচ থেকে উপরে উঠছিল। নীচের সিড়ির ৫/৬ ধাপ উপরে তাদের সংঘর্ষ হলো। একদম বুকে বুকে। যে গতিতে ধাক্কা লেগেছে ভারসাম্য রাখা খুবই কঠিন। অঞ্জলী মার্শাল আর্টে রপ্ত, অমিতও জিম করে। ফলে দুজনের রিফ্লেক্সই হলো দেখার মতো। অমিত ব্যাথা পাব মনে করে অঞ্জলী তাকে সেইভ করতে গেল আর অঞ্জলী ব্যথা পাবে মনে করে অমিতও তাকে সেইভ করতে গেল। দুজন একই দিকে ডাইভ দিল পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে। সিড়ির গোড়া থেকে ৫/৬ ফুট দূরে কার্পেটের উপর পড়ল দুজন। পড়ে যাবার আগে শূণ্যে থাকতেই অঞ্জলী একটা পাক খেল এবং পড়ার সময় অমিতকে রাখল বুকের উপর। যেটা অমিত করতে চেয়েছিল সেটা অঞ্জলী করল এবং অমিত তার ক্ষিপ্রতার কাছে হার মানল। বার দুই গড়ান দিয়ে ওরা যখন স্থির হতে পারল তখনো অমিত উপরে আর অঞ্জলী তার নীচে। অমিত তার কাছে খুব লজ্জা পেলা। কাচুমাচু করে বলল, “সরি অঞ্জুদি, কোথাও লাগেনি তো।”
-এতক্ষণ লাগেনি, এখন লাগছে।
-মানে?
-মানে ভারী লাগছে।
প্রায় সকল সময়ে হালকা কথার এমন একটা গুণ সে আয়ত্ব করেছে যে, তার উপর কেউ কখনও অখুশী হবার সুযোগ পায় না। হলেও থাকতে পারে না।
অমিত স্প্রীং দেয়া পুতুলের মত লাফিয়ে উঠল। অঞ্জলীও উঠল একই সাথে।
“তোমার কি কোথাও লেগেছে?” অঞ্জলী জানতে চাইল।
“লেগেছে তো বটেই। আমার ইগোতে লেগেছে”, কথাটা অমিত বলল মনে মনে।
“কি বিড় বিড় করছ?” অঞ্জলী খুব কাছে এসে অমিতকে চেক করতে লাগল।
“তোমার কোথাও লেগেছে অঞ্জলীদি? অমিত এবার পাল্টা প্রশ্ন করল।
“বুকে লেগেছে। ব্যথা পেয়েছি,” খু্ব ক্যাজুয়ালিই বলল অঞ্জলী।
“সর্বনাশ, আমি ডাক্তারকে ফোন করছি,” খুব সিরিয়াস ভংগীতে বলল অমিত।
“ব্যথা দেবে তুমি আর সারাতে বলবে ডাক্তারকে সেটা কেমন কথা গো?
“আমি কেমন করে সারাবো? আচ্ছা ঠিক আছে আমার ঘরে এসো মুভ দিয়ে ডলে দিচ্ছি।”
অমিতের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে অঞ্জলীর ছানাবড়া হয়ে যাওয়া চোখের দিকে তাকিয়ে সে বুঝতে পারল তার কথায় মস্তবড় একটা ভুল হয়ে গেছে। অমিত ঠাকুরমার কাছে ছোট কিন্ত তার কাছে না। একটা যুবতী মেয়ের বুক ডলে দেবার প্রস্তাব খুব সুন্দর প্রস্তাব নয়। অমিত লজ্জায় একদম মাটির সাথে মিশে গেল। অঞ্জলী বুজতে পেরে পরিস্থিতি হালকা করার জন্য বলল, “আজ তো সময় নেই। আর একদিন যখন ধাক্কা খাবো তখন ডলে দিও। এখন আমাকে চেক করে দেখ কোথাও ময়লা বা এমন কিছু লেগে আছে কিনা? আমি খুব জরুরী একটা কাজে যাচ্ছি।” কথামত অঞ্জলীকে চেক করল অমিত। কোথাও কোন ময়লা নেই। “তুমিতো রাজহংসী, পাকে ডুবলেও ময়লা লাগে না।” বলতে হয়, বলে ফেলেছে। কিন্ত এর যে নিগুঢ় অর্থ আছে তা বুঝতে পারেনি অমিত। মনে হল অঞ্জলীর মূখটা কালো হয়ে গেল। “কাউকে না কাউকে তো পাকে ডুবতেই হয় অমিত। না হলে যে জগত সংসারটা চলে না ।” সে হন হন করে বেরিয়ে গেলে।
হাউজিং প্রজেক্টে পৌছে অঞ্জলী দেখল দারোয়ানটা টুলে বসে ঝিমুচ্ছে। অল্প কজন স্টাফ আছে ভিতরে। সে গেইটের কাছে গাড়ি থেকে নেমে গেল এবং ড্রাইভারকে পাঠিযে দিল ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসারকে নিয়ে আসার জন্য। তাকে কোথা থেকে পিক করতে হবে সেটাও বলে দিল। প্রজেক্ট অফিসে ঢুকে অঞ্জলী ল্যাপটপটা অন করল এবং মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরটি সঠিকভাবে সেট করল। জটিল ইলেক্ট্রনিকস অঞ্জলী তেমন একটা বুঝে না। তবে আইডিয়াটা তার। কাজটা করেছে রয় এন্ড চৌধুরী ইলেকট্রনিকসের এক ছোকড়া ইঞ্জিনীয়ার। এই ঘরে বসে পুরো প্রজেক্ট সাইট দেখা যায় । সিসিটিভিতে পুরো প্রজেক্ট কাভার করা আছে এবং ইচ্ছা করলে কেউ এ ঘরের বাইরে থেকেও সব কিছু দেখতে পাবে। তবে সে অপশনটা আছে শুধু ঠাকুরমার। তিনি মোবাইলের স্ক্রীনে এখানকার প্রতিটি নড়াচড়া পত্যক্ষ করতে পারেন। শুধু এখানের নয়, রায় গ্রুপের সকল স্থাপনাই তার মোবাইল স্ক্রীনে লাইভ দেখার সুযোগ রয়েছে।
ল্যান্ড ডেভেলাপমেন্ট অফিসার মৃণাল ঘোষ এসে পৌছুলেন ১০ টা নাগাদ। রোদ বেশ তেতে উঠেছে ততক্ষণে। অঞ্জলী তাকে গেইটে রিসিভ করলো। তার পর তাকে নিয়ে হাটতে হাটতে পুরো সাইট ঘুরিয়ে দেখালো। অফিসারের বয়স তেমন বেশী না। বছর চল্লিশেক হবে। তিনি যতটা না সাইট দেখলেন তার চে বেশী দেখলেন অঞ্জলীকে। ঘন্টাখানেক পরে তারা অফিস রুমে এসে ঢুকলেন। বাইরের কড়া রোদ থেকে ঘরের এসিতে ঢুকে মনে হল যেন স্বর্গে এসে পৌছুলেন। অফিস রুমের ভিতর দিকে আরও তিনটা রুম আছে। একটা ঠাকুরমা বিশ্রামের জন্য ব্যবহার করেন। আর দুটোর একটা এমডি সিদ্ধার্থ শংকর রায় চৌধুরী (অমিতের বড় জেঠু) এবং অন্যটা গেস্টদের জন্য। অঞ্জলী মৃণাল বাবুকে গেস্ট রুমে নিয়ে গেল। সে খানে দুজনে বসে একান্তে কথা বলতে শুরু করলো। ফ্রিজ খুলে দুটো কোল্ড ড্রিংকস বের করে একটা মৃণাল বাবুকে দিল আর একটা নিজে নিল। সেন্টার টেবিলে মৌসুমী ফল ফলাদি সাজানো আছে। পাশে রাখা আছে নানান রকমের স্ন্যাকস। গ্লাসে চুমুক দিয়ে অঞ্জলীই নীরবতা ভাংগলো, “কেমন দেখলেন আমাদের প্রজেক্ট, মি. ঘোষ?
“সবই ঠিক আছে মিস চ্যাটার্জি, তবে সরকারের আইন এখন খুব কড়া। নীচু জমি ভরাট করার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি শহরের ভিতরে জলাবদ্ধতা তৈরী হচেছ।”
-মি. ঘোষ, এ গুলি নীচু জমি নয়। এর সবই পতিত চারা জমি। এ গুলিতে কোন ফসল বা অন্য কিছুই হয় না। আপনি রেকর্ড দেখুন।” অঞ্জলী মোটা একটা ফাইল মৃণাল বাবুর সামনে রাখলো। তার মনে ভয়। যদি ব্যটাকে কনভিনস না করতে পারে তবে ঠাকুরমার কাছে তার প্রেস্টিজ বলে কিছু থাকবে না। সোজা পথে না এলে বাঁকা পথে যেতে হবে বৈকি! ফাইল টা রাখার সময় তাকে বেশ নীচু হতে হল। বোতাম খোলা টি শার্টের গলার ফাক দিয়ে তার সুডৌল স্তনের উপরিভাগ পুরোটাই দেখা যাচ্ছে। সে ইচ্ছা করেই সময় নিয়ে সোজা হল। মৃণাল বাবু ফাইল দেখার পরিবর্তে অঞ্জলীর বুকের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হলেন। মৃণাল বাবুর বদ্ধমূল ধারণা অঞ্জলী কর্পোরেট গার্ল। যার অন্য অর্থ হলো ক্লায়েন্ট ম্যানেজ করার জন্য উচু বেতনে অফিসে পোষা বেশ্যা।
তিনি ভদ্রতার ধারে কাছেও গেলেন না। সরাসরি বললেন, “এসব কাগজপত্র রাখুন। আসুন আমরা বন্ধু হই। সময়টাকে উপভোগ করি।”
-আমিও আপনার বন্ধুত্ব কামনা করছি মি. ঘোষ। তবে ফাইলটার অনুমোদনও খুবই প্রয়োজন।
-ঠিক আছে আপনি আমাকে খুশী করুন। আমিও আপনাকে খুশী করে দেব।
-আপনি কি মীন করছেন?
-ন্যাকা? আয় মাগী” বলেই হাত দিয়ে টান মেরে অঞ্জলীকে বিছানায় পেড়ে ফেললো মৃণাল। জোর করে তার টি শার্ট খুলার জন্য টানা টানি করতে লাগলো।
-আহ, মি. ঘোষ এসব কি করছেন? ছাড়ুন, ছাড়ুন আমাকে।” ছাড়া পাওয়ার জন্য অঞ্জলী ধ্বস্তাধ্বস্তি করতে লাগলো। ইচ্ছা করলেই অঞ্জলী সিকিউরিটি ডাকতে পারে, নিজে ওকে পিটিয়ে তক্তা বানাতে পারে। কিন্তু সে কিছুই করছে না। অবলা নারীর মত ছাড়া পাওয়ার জন্য কাকুতি মিনতি করছে। মৃণাল এ সবে গা মাখছে না। তার চোখে নির্লজ্জ লালসা। সে টানতে টানতে টি শার্টটা মাঝখান থেকে ছিড়ে ফেললো। অঞ্জলী ছুটে গেল তার হাত থেকে। পরনে শুধু ব্রা আর জিনস। ছেড়া টি শার্ট মৃণালের হাতে। মৃণাল শার্ট ছুড়ে ফেলে অঞ্জলীকে ধরার জন্য তেড়ে গেল। আর অঞ্জলী তার হাত থেকে বাচার জন্য ঘরময় ছুটাছুটি করতে লাগল। পাচসাত মিনিট তাড়া করার পর একসময় মৃণাল অঞ্জলীকে কোনঠাসা করে ধরে ফেলল। তারপর তাকে বিছানায় চিত করে ফেলে বুকে গালে কামড় দেয়ার চেষ্টা করতে লাগল। অঞ্জলী দুই হাত দিয়ে তার মূখটাকে ঠেকাবার চেষ্টা করছে আর মৃণাল তাকে কামড়ানোর জন্য গায়ের জোরে চাপ বাড়াচ্ছে।
এমন সময় ঘরের দরজা বিস্ফোরিত হল। ঠাকুরমার বাজখাই গলার হুংকার শুনা গেল, “স্টপ দিস ননসেন্স।”
মৃণাল ঘোষ এক ঝটকায় অঞ্জলীকে ছেড়ে উঠে দাড়ালো। তারপর ঠাকুরমার দিকে তাকিয়ে স্ট্যাচু হয়ে গেল। অঞ্জলী তাড়াতাড়ি করে কাবার্ডের সামনে গিয়ে অন্য একটা জামা পড়ে নিল। ঠাকুরমার চোখ দিয়ে যেন আগুন বেরুচ্ছে। “এ বিষয়টাকে আপনি কি ভাবে এক্সপ্লেইন করতে চান অফিসার? আমার অফিসে ঢুকে আমার একজন স্টাফকে এরকম অসম্মান করার সাহস আপনার কি করে হলো?”
-না মানে ম্যাডাম” মৃণাল কিবলবে ভেবে পাচ্ছে না।শুধু আমতা আমতা করছে, “আমি ভেবেছিলাম…।” তাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে ঠাকুরমা হুমকী দিলেন, “আপনার ভাবনাটা আপাতত আমার দরকার নেই। আপনার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বা আপনার বউ ছেলে মেয়ে কি ভাববে সেটা খুব জরুরী।” প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে নিয়েছে মৃণাল। বেশ কায়দা করে বললো, “প্রজেক্ট পরিদর্শনের নামে আমাকে ডেকে এনে একটা প্রস্টিটিউট দিয়ে ব্লাকমেইল করাতে চাইছেন?’ ঠাস করে একটা চড় মারলেন ঠাকুরমা। মৃণাল ভাবতেও পারেনি এমন বয়স্ক একজন মানুষ এত দ্রুত রিএক্ট করতে পারে। গালে পঁাচ আংগুলের দাগ বসে গেল। “শুনুন অফিসার, রায় গ্রুপ সম্পর্কে আপনার কোন ধারণা নেই। আমরা কোন ধরণের অনৈতিক কাজ করি না। আমরা আপনাকে টাকা দিয়ে কিনে নিতে পারতাম । সে চেষ্টা করিনি। আমার স্টাফ আপনাকে সরেজমিনে সব দেখিয়ে আপনার ভুল অবস্থানটা ধরিয়ে দিতে চেয়েছে। আপনি সে দিকে না গিয়ে আমার স্টাফের সাথে অভদ্র আচরণ করেছেন।”
-কি প্রমাণ আছে আপনার কাছে। এখানেতো সব আপনার লোক। সব সাজানো নাটক।
-নাটক তবে সাজানো নয়। আপনার এখানে পা রাখার পর থেকে যা কিছু ঘটেছে, যা কিছু বলেছেন সব রেকর্ড করা আছে। ইচ্ছে হলে আপনি নাটকটা বড় স্ক্রীনে দেখতে পারেন।
এ কথার পর মৃণাল চুপসে গেল। এসব ফাস হলে চাকুরীতো যাবেই, সংসারটাও যাবে। রাস্তায় দাড়িয়ে ভিক্ষে করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। “ম্যাডাম যা হবার হয়ে গেছে। আমি আপনার ফাইল সই করে কাল পাঠিয়ে দেব। প্লিজ এসব নিয়ে আর ঘাটাঘাটি করবেন না।”
“কিন্তু আমার কি হবে মি. ঘোষ?” এই প্রথম কথা বলল অঞ্জলী। “আপনি না হয় ফাইল সই করে বিপদ পেরিয়ে গেলেন। কিন্তু আমি গরীব ঘরের মেয়ে । আমার তো আর কোনদিন বিয়ে হবে না।”
-আই এম সরি মিস চ্যাটার্জি, আমার সংসার আছে, ছোট ছোট দুটি বাচ্চা আছে। প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন। মুহুর্তের উত্তেজনায় আমি যেটা করেছি সেটা অন্যায়্। এমনটি আর কখনও হবেনা।
আবার ঠাকুরমা মূখ খূললেন,” এখানে যেটা করেছেন সেটা উত্তেজনা বশে করেছেন, কিন্ত আমাদের ফাইলটা আটকে রেখেছেন পরিকল্পিত ভাবে। এর খেসারত আপনাকে দিতে হবে মৃণাল বাবু।”
এবারে সটান ঠাকুরমার পায়ের উপর পড়লো মৃণাল। “প্লিজ ম্যাডাম, আমাকে আর লজ্জা দেবেন না। আমি সারা জীবন আপনার কেনা গোলাম হয়ে থাকবো।”
ঠাকুরমা একটুখানি হাসলেন, ভিলেনের হাসি।কলজে হিম হয়ে গেল মৃণালের। লোভে পাপ পাপে মৃত্যু। এই বুড়ি কি তাকে শেষ পর্যন্ত পুলিশে দেবে? “ঠিক আছে মৃণাল বাবু, আমি আপাতত চুপ করে রইলাম। তবে একটা কথা মনে রাখবেন, আমাদের গোলাম দরকার নেই, বন্ধু দরকার। আপনি এখন আসুন। ড্রাইভার আপনাকে পৌছে দেবে।
এ বাড়িতে পুজো অর্চনার তেমন একটা রেওয়াজ নেই। পিসিমা মাঝে মাঝে পুরোত মশাইকে ডেকে নিয়ে এটা সেটা আয়োজন করেন। চলাফেরায় খুব কনজারভেটিভ। সনাতন ধর্মের রীতিনীতে মেনে চলার চেষ্টা করেন। এর কতটা সংস্কার আর কতটা কুসংস্কার সেটা তিনিও জানেন না, এ নিযে কেউ মাথাও ঘামায় না। তবে রোহিতের ছোট বোন প্রতিমা বেশ উগ্র চলাফেরা করে এটা তার পছন্দ না। অমিত কারো কথা শুনেনা এটাও তার ভাল লাগে না। ইদানীং রোহিতের বউয়ের ছোট বোন অঞ্জলী এখানে থাকছে। * র ঘরের অকাল বিধবা। তার চলাফেরাও কেমন জানি উগ্র। তিনি এটাও মেনে নিতে পারেন না। তার সবচে বেশী রাগ হয় নিজের মায়ের উপর। না হয় আত্মীয়, তাই বলে একটা আশ্রিতা মেয়েকে এতটা প্রশ্রয় দিতে হবে এর কোন মানে হয় না! খাবার টেবিলে এক সাথে বসতে হবে। গাড়িতে মায়ের পাশে বসে। মাঝে মাঝে একা একা গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায়। হুট হাট এ ঘর ও ঘরে ঢুকে পড়ে। এসব তিনি আর বরদাশত করবেন না বলে ঠিক করলেন। এর একটা বিহিত করা দরকার। সে দিন খাবার টেবিলে কোন রাখ ঢাক না করেই তিনি মঞ্জূকে বললেন, “বৌমা তোমার বোন কি আরও কিছু দিন থাকবে এখানে?” মঞ্জূ খুব অবাক হলো এ প্রশ্নে। কিন্তু তার বু্দ্ধি আছে। সে সহজ গলায় বলল, ” ঠাম্মি জানেন।” পিসিমার কথা কোন দিকে মোড় নিচেছ কেউ বুঝতে পারছে না। সিদ্ধার্থ রায় বিব্রত বোধ করছেন। টেবিলে রোহিত, প্রতিমা, মঞ্জু, অমিত, অঞ্জলী সবাই রয়েছে। “সব কথায় মাকে জড়াচ্ছ কেন বৌমা? তুমি ওর গার্জেন, তোমাকেই তো ডিসিশান নিতে হবে।?
“না রে হাসি, এটা বৌমার বিষয় নয়। অঞ্জলী যখন এ বাড়িতে আসে তখন সে ছিল আমাদের নিছক আ্ত্মীয় । কিন্ত এখন সে রায় গ্রুপের একজন স্টাফ এবং আমাদের হাউজিং প্রজেক্টের প্রজেক্ট ডিরেক্টর। কাজেই তার ব্যাপারে মা ই সব কিছু জানেন।”
“তুমি বরং তোমার নিজের মেয়েকে সামলাও দাদা, আশ্রিত প্রশ্রিতদের নিযে পরে ভেবো। ঘরের বাইরে তোমরা যা খুশী কর আমি কিছু বলবো না । কিন্তু আমার চোখের সামনে আমি কোন উল্টো সিধে হতে দেব না। মেয়ে বড় হয়েছে বিয়ে থা দিতে হবে। চলাফেরায় সংযত হতে বল।”
“ঠিক বলেছ পিসি,” অমিত বলল, “ওর যে বিয়ে হবে না এ ব্যাপারে আমি তোমার সাথে একমত। প্রতিমা, তোকে আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি তোর ভবিষ্যত একদম অন্ধকার। সময় থাকতে ভাল হয়ে যা।”
“এই হল আর এক হতচ্ছাড়া, বড় বোনকে নাম ধরে ডাকে” পিসিমা রাগে গজরাতে শুরু করলেন, “লেখা নেই পড়া নেই অকম্মার ধাড়ি। যত দিন বাপের ধন আছে ততদিন না হয় খেলি তার পর কি হবে শুনি?”
“কিছুই হবেনা পিসি, তোমার ভাইদের চেয়ে আমার ভাইয়েরা খারাপ না। কিরে বড়দা আমাকে তোদের সাথে রাখবি না?”
রোহিত হেসে জবাব দিল, ” তোকে রাখতে পারি, তবে তোর বউকে রাখতে পারবো না। সে আমি আগেই বলে দিলুম,” পরিস্থিতি হালকা করার চেষ্টা।
“বুঝলে পিসি আমাদের একই গতি। প্রতিমার বিয়ে হবেনা , আমার বউকে বড়দা খাওয়াবে না আর তোমার তো বরই নেই। আমরা সিংগেলসরা রায় বাড়ির আশ্রিত হয়েই থেকে যাব।” অমিত কথা বলছিল রসিকতার সুরে। কিন্তু তার চোখ ঠিকরে আগুন বের হচ্ছিল। সে আগুনের আঁচ কেউ টের পেলো না শুধু মাত্র অঞ্জলী ছাড়া। সকলের কথার মাঝখানে চুপচাপ খাওয়া শেষ করলো অঞ্জলী। তারপর মাথা নীচু করে উঠে গেল টেবিল ছেড়ে। এরপর মঞ্জু, প্রতিমা, অমিত সবাই উঠে গেল। রোহিত বোকার মত বাবার দিকে তাকিয়ে রইল ।
অমিত ঘরে এসে দেখল তার মোবাইলে অঞ্জলীর একটা মেসেজ, “একবার আমার ঘরে এস।”
অমিত খুব বিব্রত বোধ করছিল অঞ্জলীর সামনে যেতে। কিন্তু না গিয়ে পারলো না। সে সাধারণত ঠাকুরমার ঘর ছাড়া আর কারো ঘরে যায় না। হয় বাইরে না হয় নিজের ঘরে। ঠাকুরমার ঘরে কখনও নক করে ঢুকে না। ফলে বাজে অভ্যেসটা রয়েই গেছে। অঞ্জলীর ঘরে ঢুকতে গিয়েও একই ভুল করলো। নক না করেই ঢুকে পড়লো। অঞ্জলী টের পেলনা অমিত কখন এসেছে। সে মোবাইলে কিছু একটা সার্চ করছিল। তার পরনে শুধু ব্রা আর প্যান্টি। গায়ের উপর একটা চাদর টেনে দেয়া ছিল। কিন্তু অসাবধানতায় চাদর কখন সরে গেছে টেরও পায়নি। অমিত ঘরে ঢুকে একদম হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইল। না সে বেরিয়ে যেতে পারছে, না নিজের উপস্থিতি জানান দিতে পারছে। বাস্তবে সে খুব সাধারণ জীবন যাপন করে। সামনের মাসে ১৮তে পা দেবে। কিন্তু আজও কোন মেয়ের সান্নিধ্যে আসেনি। চটি পড়ে না। পর্ণো দেখে না। এমনকি সবচে কমন যে কাজ এ বয়সে হাত মারা সেটাও সে করে না। তার চোখ দুটো চুম্বকের মত আটকে আছে অঞ্জলীর বুকের উপর। সেখান থেকে সুডৌল নিতম্ব ঘুরে চোখ গেল পায়ের দিকে। আহ যেন শিল্পীর তুলিতে আকা শরীর। বিধাতা পুরুষ মনে হয় ছুটি নিয়ে খুব ধীরে সুস্থে এই নারী দেহটি তৈরী করেছেন। অঞ্জলী কাত হয়ে শুয়ে আছে তার দিকে পিছন ফিরে। অমিত তার পুরো পিছন আর বুকের একটা পাশ দেখতে পাচ্ছে। ফলে সে একদম কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়ে দাড়িয়ে রইল। এমনকি নিশ্বাসও বন্ধ। এ ভাবে কতক্ষণ দাড়িয়ে ছিল বলতে পারবে না। হঠাত ফোস করে শ্বাস বেরিয়ে গেল। শব্দ শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে অমিতকে দেখে ঝট করে উঠে দাড়ালো অঞ্জলী। চাদরটা যে গায়ে টেনে দেয়া দরকার সেটাও ভুলে গেল।
দুজনের চার চোখ একত্র হলো এবং হাজার ভোল্টের ইলেক্ট্রন প্রোটন আদান প্রদান হয়ে গেল মুহুর্তে। এবারে অমিত জিতলো। সে অঞ্জলীর আগেই কন্ট্রোল ফিরে পেল এবং হাত থেকে মোবাইলটা ছেড়ে দিয়ে আবার দ্রুত সেটা ক্যাচ করার জন্য উপুর হলো। ফলে অঞ্জলীর শরীর থেকে চোখ দুটো অন্য দিকে সরানোর একটা অজুহাত তৈরী হলো। এক মূহুর্তের সুযোগে অঞ্জলীও সামলে নিল। চাদরটা জড়িয়ে নিল গায়ে। তার পর নিজে বিছানায় বসে অমিতকে সামনের সিংগেল সোফাটা দেখিয়ে দিল। ঘরটা ছোট। ছিমছাম। এটাচড বাথ। ক্লজেট থেকে এক সেট জামা নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল অঞ্জলী। ফিরে এল পাঁচ মিনিট পর। চোখে মূখে জল ছিটানোয় তাকে আরও ফ্রেস লাগছে। সে খুব ক্যাজুয়ালী অমিতের সামনে হাটু গেড়ে বসলো তার পর তার দুটি হাত জড়িয়ে ধরে বলল, “অমিত, সোনা ভাই আমার একটা অনুরোধ রাখবে?”
-বল, চেষ্টা করে দেখি।’
-যা হবার হয়ে গেছে। আমি পিসিমার কথায় একটুও মন খারাপ করিনি। তুমি এ নিয়ে আর কোন অশান্তি করো না।”
-অশান্তি করবো কে বললে তোমায়?”
-কারো বলার দরকার নেই। আমি তোমার চোখ দেখে সব বুঝতে পারি”।
-না পারো না। ঠাম্মি ছাড়া আমাকে আর কেউ বুঝে না। ঠিক আছে আমি নিজে কিছু করবো না। শুধু ঠাম্মিকে জানাবো। যা করার তিনি করবেন।”
-পাগলামী করিস নারে ভাই। আমার মাথার উপর এখন একটা আশ্রয় আছে। তুমি কি চাও সেটা নষ্ট হোক?
-তুমি কেন কারো আশ্রিতা হয়ে থাকবে? ঠাম্মি বলেছেন, তুমি রায় পরিবারের সদস্য। তার কথার উপর কারো কোন কথা নেই।
-শুন অমিত, তুমি ঠাম্মিকে বললে তিনি পিসিমাকে অপমান করবেন। আর সেটা হবে আমার জন্য। আজ পরিবারের সকল সদস্যের সহানুভুতি ছিল আমার দিকে। তখন সেটা আর আমার দিতে থাকবে না। আমার এবং দিদির জন্য সেটা হবে অপমানজনক।
-তার মানে বৌদি ছাড়া এখানে তোমার আর আপন কেউ নেই? এমন কি ঠাম্মিও না?
-ঠাম্মি তো বটবৃক্ষ, মা দুর্গা । তার সাথে কার তুলনা হয়?
-আর আমি? আমি বুঝি তোমার কেউ না,” অমিতের কন্ঠে কিশোরসুলভ অভিমান।
-তুমি রাজ পুত্র। এই অনাথ বিধবার প্রতি তোমার সহানুভুতিতে আমি কৃতজ্ঞ। এর বেশী আমি আর কি বলব?
-অঞ্জলী দি, আমি খুব ছোট বেলায় বাবা-মাকে হারিয়েছি তো। তাই আমার মত কাউকে দেখলে বুকের ভিতরটা কেমন জানি করে উঠে। তোমাকে দেখেও আমার তাই হয়েছে। এটা নিছক সহানুভুতি নয়। আমি তোমার ছোট । সব গুছিয়ে বলতে পারছি না। তবে দেখ তোমার জন্য আমার ঠিক এখানটায় ব্যাথা হচ্ছে।”
অমিত অঞ্জলীর ধরে থাকা হাতটা নিজের ঠিক বুকের উপর রাখলো। তার কন্ঠ শেষ দিকে বুজে এল প্রায়। চোখের কোণা চিক চিক করছে। এমন আবেগময় দরদমাখা কন্ঠ আগে কখনও শুনেছে অঞ্জলী? না শুনেনি। বাবা-মার মৃত্যু, অকাল বৈধব্য, মানুষের গঞ্জনা, ইচ্ছা আর রুচির বাইরে সেক্স; সবকষ্ট যেন এক সাথে দলা পাকিয়ে কান্না হয়ে উঠে এল গলা দিয়ে। দুই হাতে মূখ ঢেকে হু হু করে কেঁদে উঠলো অঞ্জলী। অমিত কখন যে অঞ্জলীকে জড়িয়ে ধরেছে খেয়াল নেই। একদম বুকের মাঝখানে চেপে ধরে বলছে “প্লীজ তুমি কেঁদো না। তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।
চোখ মুছে আবার সামনা সামনি বসলো দুজন। “সত্যি বলছ অমিত আমার কথা তুমি রাখবে?’
-বলেই দেখ না।”
-আজকের ডিনার টেবিলের কথা ঠাম্মিকে জানাবে না। নিজে থেকে জেনে কিছু করতে গেলে তুমি থামাবে। তুমি ছাড়া আর কেউ তাকে থামাতে পারবে না।”
-শুধু এই টুকু? আর কিছু না?
-কাল সকালে আমাকে নিয়ে বেড়াতে বের হবে।
-তোমার অফিস?
-ঠাম্মির কাছ থেকে আজ রাতেই আমি ছুটি নিয়ে রাখবো।
-আর কিছু?” অমিতের চোখে রাজ্যের প্রত্যাশা।
-আমার খুব ঘুম পেয়েছে,” অঞ্জলী হাই তুলল।
এক বুক অতৃপ্তি নিয়ে ফিরে গেল অমিত। কি যেন বলার ছিল বলা হলো না।
(গল্পটা এখন থেকে আর উত্তম পুরুষে লেখা হচ্ছে না। “আমি” এখন থেকে “অমিত”)
রবিবার এ সাধারণত এ বাড়িতে একটা ঢিলে ঢালা ভাব থাকে। কিন্ত অঞ্জলীর আজ অনেক কাজ। সে খুব সকালেই ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলল। খুব ভোরে উঠে গোসল করেছে। ঘরে সালোয়ার কামিজ আর বাইরে সাধারণত শাড়ি পড়ে অঞ্জলী। কিন্তু আজ সে স্কীন টাইট জিন্স পরেছে। উপরে শাদা টি শার্ট। শার্ট এমন যে অঞ্জলীর শরীরের সকল বাক বুঝা যায় কিন্তু কোন কিছু দৃষ্টিকটু ভাবে বেরিয়ে নেই। অনেকদিন পর সে সাজগোজ করল। তবে উতকট নয়, খুব মার্জিত আর রুচিশীল। কি মনে করে স্যান্ডেল বা স্লীপারের পরিবর্তে কেডস পড়লো। হাতে একটা র*্যাকেট থাকলে টেনিস বা ব্যাডমিন্টনের কোর্টে নামিয়ে দেয়া যেত। ছোট্ট একটা হ্যান্ডব্যাগ কাধে ঝুলিয়ে শিস দিতে দিতে হন হন করে নেমে আসছিল সিড়ি দিয়ে। সে খেয়াল করেনি অমিতও সমান গতিতে সে সময় নীচ থেকে উপরে উঠছিল। নীচের সিড়ির ৫/৬ ধাপ উপরে তাদের সংঘর্ষ হলো। একদম বুকে বুকে। যে গতিতে ধাক্কা লেগেছে ভারসাম্য রাখা খুবই কঠিন। অঞ্জলী মার্শাল আর্টে রপ্ত, অমিতও জিম করে। ফলে দুজনের রিফ্লেক্সই হলো দেখার মতো। অমিত ব্যাথা পাব মনে করে অঞ্জলী তাকে সেইভ করতে গেল আর অঞ্জলী ব্যথা পাবে মনে করে অমিতও তাকে সেইভ করতে গেল। দুজন একই দিকে ডাইভ দিল পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে। সিড়ির গোড়া থেকে ৫/৬ ফুট দূরে কার্পেটের উপর পড়ল দুজন। পড়ে যাবার আগে শূণ্যে থাকতেই অঞ্জলী একটা পাক খেল এবং পড়ার সময় অমিতকে রাখল বুকের উপর। যেটা অমিত করতে চেয়েছিল সেটা অঞ্জলী করল এবং অমিত তার ক্ষিপ্রতার কাছে হার মানল। বার দুই গড়ান দিয়ে ওরা যখন স্থির হতে পারল তখনো অমিত উপরে আর অঞ্জলী তার নীচে। অমিত তার কাছে খুব লজ্জা পেলা। কাচুমাচু করে বলল, “সরি অঞ্জুদি, কোথাও লাগেনি তো।”
-এতক্ষণ লাগেনি, এখন লাগছে।
-মানে?
-মানে ভারী লাগছে।
প্রায় সকল সময়ে হালকা কথার এমন একটা গুণ সে আয়ত্ব করেছে যে, তার উপর কেউ কখনও অখুশী হবার সুযোগ পায় না। হলেও থাকতে পারে না।
অমিত স্প্রীং দেয়া পুতুলের মত লাফিয়ে উঠল। অঞ্জলীও উঠল একই সাথে।
“তোমার কি কোথাও লেগেছে?” অঞ্জলী জানতে চাইল।
“লেগেছে তো বটেই। আমার ইগোতে লেগেছে”, কথাটা অমিত বলল মনে মনে।
“কি বিড় বিড় করছ?” অঞ্জলী খুব কাছে এসে অমিতকে চেক করতে লাগল।
“তোমার কোথাও লেগেছে অঞ্জলীদি? অমিত এবার পাল্টা প্রশ্ন করল।
“বুকে লেগেছে। ব্যথা পেয়েছি,” খু্ব ক্যাজুয়ালিই বলল অঞ্জলী।
“সর্বনাশ, আমি ডাক্তারকে ফোন করছি,” খুব সিরিয়াস ভংগীতে বলল অমিত।
“ব্যথা দেবে তুমি আর সারাতে বলবে ডাক্তারকে সেটা কেমন কথা গো?
“আমি কেমন করে সারাবো? আচ্ছা ঠিক আছে আমার ঘরে এসো মুভ দিয়ে ডলে দিচ্ছি।”
অমিতের কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে অঞ্জলীর ছানাবড়া হয়ে যাওয়া চোখের দিকে তাকিয়ে সে বুঝতে পারল তার কথায় মস্তবড় একটা ভুল হয়ে গেছে। অমিত ঠাকুরমার কাছে ছোট কিন্ত তার কাছে না। একটা যুবতী মেয়ের বুক ডলে দেবার প্রস্তাব খুব সুন্দর প্রস্তাব নয়। অমিত লজ্জায় একদম মাটির সাথে মিশে গেল। অঞ্জলী বুজতে পেরে পরিস্থিতি হালকা করার জন্য বলল, “আজ তো সময় নেই। আর একদিন যখন ধাক্কা খাবো তখন ডলে দিও। এখন আমাকে চেক করে দেখ কোথাও ময়লা বা এমন কিছু লেগে আছে কিনা? আমি খুব জরুরী একটা কাজে যাচ্ছি।” কথামত অঞ্জলীকে চেক করল অমিত। কোথাও কোন ময়লা নেই। “তুমিতো রাজহংসী, পাকে ডুবলেও ময়লা লাগে না।” বলতে হয়, বলে ফেলেছে। কিন্ত এর যে নিগুঢ় অর্থ আছে তা বুঝতে পারেনি অমিত। মনে হল অঞ্জলীর মূখটা কালো হয়ে গেল। “কাউকে না কাউকে তো পাকে ডুবতেই হয় অমিত। না হলে যে জগত সংসারটা চলে না ।” সে হন হন করে বেরিয়ে গেলে।
হাউজিং প্রজেক্টে পৌছে অঞ্জলী দেখল দারোয়ানটা টুলে বসে ঝিমুচ্ছে। অল্প কজন স্টাফ আছে ভিতরে। সে গেইটের কাছে গাড়ি থেকে নেমে গেল এবং ড্রাইভারকে পাঠিযে দিল ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসারকে নিয়ে আসার জন্য। তাকে কোথা থেকে পিক করতে হবে সেটাও বলে দিল। প্রজেক্ট অফিসে ঢুকে অঞ্জলী ল্যাপটপটা অন করল এবং মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরটি সঠিকভাবে সেট করল। জটিল ইলেক্ট্রনিকস অঞ্জলী তেমন একটা বুঝে না। তবে আইডিয়াটা তার। কাজটা করেছে রয় এন্ড চৌধুরী ইলেকট্রনিকসের এক ছোকড়া ইঞ্জিনীয়ার। এই ঘরে বসে পুরো প্রজেক্ট সাইট দেখা যায় । সিসিটিভিতে পুরো প্রজেক্ট কাভার করা আছে এবং ইচ্ছা করলে কেউ এ ঘরের বাইরে থেকেও সব কিছু দেখতে পাবে। তবে সে অপশনটা আছে শুধু ঠাকুরমার। তিনি মোবাইলের স্ক্রীনে এখানকার প্রতিটি নড়াচড়া পত্যক্ষ করতে পারেন। শুধু এখানের নয়, রায় গ্রুপের সকল স্থাপনাই তার মোবাইল স্ক্রীনে লাইভ দেখার সুযোগ রয়েছে।
ল্যান্ড ডেভেলাপমেন্ট অফিসার মৃণাল ঘোষ এসে পৌছুলেন ১০ টা নাগাদ। রোদ বেশ তেতে উঠেছে ততক্ষণে। অঞ্জলী তাকে গেইটে রিসিভ করলো। তার পর তাকে নিয়ে হাটতে হাটতে পুরো সাইট ঘুরিয়ে দেখালো। অফিসারের বয়স তেমন বেশী না। বছর চল্লিশেক হবে। তিনি যতটা না সাইট দেখলেন তার চে বেশী দেখলেন অঞ্জলীকে। ঘন্টাখানেক পরে তারা অফিস রুমে এসে ঢুকলেন। বাইরের কড়া রোদ থেকে ঘরের এসিতে ঢুকে মনে হল যেন স্বর্গে এসে পৌছুলেন। অফিস রুমের ভিতর দিকে আরও তিনটা রুম আছে। একটা ঠাকুরমা বিশ্রামের জন্য ব্যবহার করেন। আর দুটোর একটা এমডি সিদ্ধার্থ শংকর রায় চৌধুরী (অমিতের বড় জেঠু) এবং অন্যটা গেস্টদের জন্য। অঞ্জলী মৃণাল বাবুকে গেস্ট রুমে নিয়ে গেল। সে খানে দুজনে বসে একান্তে কথা বলতে শুরু করলো। ফ্রিজ খুলে দুটো কোল্ড ড্রিংকস বের করে একটা মৃণাল বাবুকে দিল আর একটা নিজে নিল। সেন্টার টেবিলে মৌসুমী ফল ফলাদি সাজানো আছে। পাশে রাখা আছে নানান রকমের স্ন্যাকস। গ্লাসে চুমুক দিয়ে অঞ্জলীই নীরবতা ভাংগলো, “কেমন দেখলেন আমাদের প্রজেক্ট, মি. ঘোষ?
“সবই ঠিক আছে মিস চ্যাটার্জি, তবে সরকারের আইন এখন খুব কড়া। নীচু জমি ভরাট করার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনি শহরের ভিতরে জলাবদ্ধতা তৈরী হচেছ।”
-মি. ঘোষ, এ গুলি নীচু জমি নয়। এর সবই পতিত চারা জমি। এ গুলিতে কোন ফসল বা অন্য কিছুই হয় না। আপনি রেকর্ড দেখুন।” অঞ্জলী মোটা একটা ফাইল মৃণাল বাবুর সামনে রাখলো। তার মনে ভয়। যদি ব্যটাকে কনভিনস না করতে পারে তবে ঠাকুরমার কাছে তার প্রেস্টিজ বলে কিছু থাকবে না। সোজা পথে না এলে বাঁকা পথে যেতে হবে বৈকি! ফাইল টা রাখার সময় তাকে বেশ নীচু হতে হল। বোতাম খোলা টি শার্টের গলার ফাক দিয়ে তার সুডৌল স্তনের উপরিভাগ পুরোটাই দেখা যাচ্ছে। সে ইচ্ছা করেই সময় নিয়ে সোজা হল। মৃণাল বাবু ফাইল দেখার পরিবর্তে অঞ্জলীর বুকের প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট হলেন। মৃণাল বাবুর বদ্ধমূল ধারণা অঞ্জলী কর্পোরেট গার্ল। যার অন্য অর্থ হলো ক্লায়েন্ট ম্যানেজ করার জন্য উচু বেতনে অফিসে পোষা বেশ্যা।
তিনি ভদ্রতার ধারে কাছেও গেলেন না। সরাসরি বললেন, “এসব কাগজপত্র রাখুন। আসুন আমরা বন্ধু হই। সময়টাকে উপভোগ করি।”
-আমিও আপনার বন্ধুত্ব কামনা করছি মি. ঘোষ। তবে ফাইলটার অনুমোদনও খুবই প্রয়োজন।
-ঠিক আছে আপনি আমাকে খুশী করুন। আমিও আপনাকে খুশী করে দেব।
-আপনি কি মীন করছেন?
-ন্যাকা? আয় মাগী” বলেই হাত দিয়ে টান মেরে অঞ্জলীকে বিছানায় পেড়ে ফেললো মৃণাল। জোর করে তার টি শার্ট খুলার জন্য টানা টানি করতে লাগলো।
-আহ, মি. ঘোষ এসব কি করছেন? ছাড়ুন, ছাড়ুন আমাকে।” ছাড়া পাওয়ার জন্য অঞ্জলী ধ্বস্তাধ্বস্তি করতে লাগলো। ইচ্ছা করলেই অঞ্জলী সিকিউরিটি ডাকতে পারে, নিজে ওকে পিটিয়ে তক্তা বানাতে পারে। কিন্তু সে কিছুই করছে না। অবলা নারীর মত ছাড়া পাওয়ার জন্য কাকুতি মিনতি করছে। মৃণাল এ সবে গা মাখছে না। তার চোখে নির্লজ্জ লালসা। সে টানতে টানতে টি শার্টটা মাঝখান থেকে ছিড়ে ফেললো। অঞ্জলী ছুটে গেল তার হাত থেকে। পরনে শুধু ব্রা আর জিনস। ছেড়া টি শার্ট মৃণালের হাতে। মৃণাল শার্ট ছুড়ে ফেলে অঞ্জলীকে ধরার জন্য তেড়ে গেল। আর অঞ্জলী তার হাত থেকে বাচার জন্য ঘরময় ছুটাছুটি করতে লাগল। পাচসাত মিনিট তাড়া করার পর একসময় মৃণাল অঞ্জলীকে কোনঠাসা করে ধরে ফেলল। তারপর তাকে বিছানায় চিত করে ফেলে বুকে গালে কামড় দেয়ার চেষ্টা করতে লাগল। অঞ্জলী দুই হাত দিয়ে তার মূখটাকে ঠেকাবার চেষ্টা করছে আর মৃণাল তাকে কামড়ানোর জন্য গায়ের জোরে চাপ বাড়াচ্ছে।
এমন সময় ঘরের দরজা বিস্ফোরিত হল। ঠাকুরমার বাজখাই গলার হুংকার শুনা গেল, “স্টপ দিস ননসেন্স।”
মৃণাল ঘোষ এক ঝটকায় অঞ্জলীকে ছেড়ে উঠে দাড়ালো। তারপর ঠাকুরমার দিকে তাকিয়ে স্ট্যাচু হয়ে গেল। অঞ্জলী তাড়াতাড়ি করে কাবার্ডের সামনে গিয়ে অন্য একটা জামা পড়ে নিল। ঠাকুরমার চোখ দিয়ে যেন আগুন বেরুচ্ছে। “এ বিষয়টাকে আপনি কি ভাবে এক্সপ্লেইন করতে চান অফিসার? আমার অফিসে ঢুকে আমার একজন স্টাফকে এরকম অসম্মান করার সাহস আপনার কি করে হলো?”
-না মানে ম্যাডাম” মৃণাল কিবলবে ভেবে পাচ্ছে না।শুধু আমতা আমতা করছে, “আমি ভেবেছিলাম…।” তাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে ঠাকুরমা হুমকী দিলেন, “আপনার ভাবনাটা আপাতত আমার দরকার নেই। আপনার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ বা আপনার বউ ছেলে মেয়ে কি ভাববে সেটা খুব জরুরী।” প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে নিয়েছে মৃণাল। বেশ কায়দা করে বললো, “প্রজেক্ট পরিদর্শনের নামে আমাকে ডেকে এনে একটা প্রস্টিটিউট দিয়ে ব্লাকমেইল করাতে চাইছেন?’ ঠাস করে একটা চড় মারলেন ঠাকুরমা। মৃণাল ভাবতেও পারেনি এমন বয়স্ক একজন মানুষ এত দ্রুত রিএক্ট করতে পারে। গালে পঁাচ আংগুলের দাগ বসে গেল। “শুনুন অফিসার, রায় গ্রুপ সম্পর্কে আপনার কোন ধারণা নেই। আমরা কোন ধরণের অনৈতিক কাজ করি না। আমরা আপনাকে টাকা দিয়ে কিনে নিতে পারতাম । সে চেষ্টা করিনি। আমার স্টাফ আপনাকে সরেজমিনে সব দেখিয়ে আপনার ভুল অবস্থানটা ধরিয়ে দিতে চেয়েছে। আপনি সে দিকে না গিয়ে আমার স্টাফের সাথে অভদ্র আচরণ করেছেন।”
-কি প্রমাণ আছে আপনার কাছে। এখানেতো সব আপনার লোক। সব সাজানো নাটক।
-নাটক তবে সাজানো নয়। আপনার এখানে পা রাখার পর থেকে যা কিছু ঘটেছে, যা কিছু বলেছেন সব রেকর্ড করা আছে। ইচ্ছে হলে আপনি নাটকটা বড় স্ক্রীনে দেখতে পারেন।
এ কথার পর মৃণাল চুপসে গেল। এসব ফাস হলে চাকুরীতো যাবেই, সংসারটাও যাবে। রাস্তায় দাড়িয়ে ভিক্ষে করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। “ম্যাডাম যা হবার হয়ে গেছে। আমি আপনার ফাইল সই করে কাল পাঠিয়ে দেব। প্লিজ এসব নিয়ে আর ঘাটাঘাটি করবেন না।”
“কিন্তু আমার কি হবে মি. ঘোষ?” এই প্রথম কথা বলল অঞ্জলী। “আপনি না হয় ফাইল সই করে বিপদ পেরিয়ে গেলেন। কিন্তু আমি গরীব ঘরের মেয়ে । আমার তো আর কোনদিন বিয়ে হবে না।”
-আই এম সরি মিস চ্যাটার্জি, আমার সংসার আছে, ছোট ছোট দুটি বাচ্চা আছে। প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন। মুহুর্তের উত্তেজনায় আমি যেটা করেছি সেটা অন্যায়্। এমনটি আর কখনও হবেনা।
আবার ঠাকুরমা মূখ খূললেন,” এখানে যেটা করেছেন সেটা উত্তেজনা বশে করেছেন, কিন্ত আমাদের ফাইলটা আটকে রেখেছেন পরিকল্পিত ভাবে। এর খেসারত আপনাকে দিতে হবে মৃণাল বাবু।”
এবারে সটান ঠাকুরমার পায়ের উপর পড়লো মৃণাল। “প্লিজ ম্যাডাম, আমাকে আর লজ্জা দেবেন না। আমি সারা জীবন আপনার কেনা গোলাম হয়ে থাকবো।”
ঠাকুরমা একটুখানি হাসলেন, ভিলেনের হাসি।কলজে হিম হয়ে গেল মৃণালের। লোভে পাপ পাপে মৃত্যু। এই বুড়ি কি তাকে শেষ পর্যন্ত পুলিশে দেবে? “ঠিক আছে মৃণাল বাবু, আমি আপাতত চুপ করে রইলাম। তবে একটা কথা মনে রাখবেন, আমাদের গোলাম দরকার নেই, বন্ধু দরকার। আপনি এখন আসুন। ড্রাইভার আপনাকে পৌছে দেবে।
এ বাড়িতে পুজো অর্চনার তেমন একটা রেওয়াজ নেই। পিসিমা মাঝে মাঝে পুরোত মশাইকে ডেকে নিয়ে এটা সেটা আয়োজন করেন। চলাফেরায় খুব কনজারভেটিভ। সনাতন ধর্মের রীতিনীতে মেনে চলার চেষ্টা করেন। এর কতটা সংস্কার আর কতটা কুসংস্কার সেটা তিনিও জানেন না, এ নিযে কেউ মাথাও ঘামায় না। তবে রোহিতের ছোট বোন প্রতিমা বেশ উগ্র চলাফেরা করে এটা তার পছন্দ না। অমিত কারো কথা শুনেনা এটাও তার ভাল লাগে না। ইদানীং রোহিতের বউয়ের ছোট বোন অঞ্জলী এখানে থাকছে। * র ঘরের অকাল বিধবা। তার চলাফেরাও কেমন জানি উগ্র। তিনি এটাও মেনে নিতে পারেন না। তার সবচে বেশী রাগ হয় নিজের মায়ের উপর। না হয় আত্মীয়, তাই বলে একটা আশ্রিতা মেয়েকে এতটা প্রশ্রয় দিতে হবে এর কোন মানে হয় না! খাবার টেবিলে এক সাথে বসতে হবে। গাড়িতে মায়ের পাশে বসে। মাঝে মাঝে একা একা গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায়। হুট হাট এ ঘর ও ঘরে ঢুকে পড়ে। এসব তিনি আর বরদাশত করবেন না বলে ঠিক করলেন। এর একটা বিহিত করা দরকার। সে দিন খাবার টেবিলে কোন রাখ ঢাক না করেই তিনি মঞ্জূকে বললেন, “বৌমা তোমার বোন কি আরও কিছু দিন থাকবে এখানে?” মঞ্জূ খুব অবাক হলো এ প্রশ্নে। কিন্তু তার বু্দ্ধি আছে। সে সহজ গলায় বলল, ” ঠাম্মি জানেন।” পিসিমার কথা কোন দিকে মোড় নিচেছ কেউ বুঝতে পারছে না। সিদ্ধার্থ রায় বিব্রত বোধ করছেন। টেবিলে রোহিত, প্রতিমা, মঞ্জু, অমিত, অঞ্জলী সবাই রয়েছে। “সব কথায় মাকে জড়াচ্ছ কেন বৌমা? তুমি ওর গার্জেন, তোমাকেই তো ডিসিশান নিতে হবে।?
“না রে হাসি, এটা বৌমার বিষয় নয়। অঞ্জলী যখন এ বাড়িতে আসে তখন সে ছিল আমাদের নিছক আ্ত্মীয় । কিন্ত এখন সে রায় গ্রুপের একজন স্টাফ এবং আমাদের হাউজিং প্রজেক্টের প্রজেক্ট ডিরেক্টর। কাজেই তার ব্যাপারে মা ই সব কিছু জানেন।”
“তুমি বরং তোমার নিজের মেয়েকে সামলাও দাদা, আশ্রিত প্রশ্রিতদের নিযে পরে ভেবো। ঘরের বাইরে তোমরা যা খুশী কর আমি কিছু বলবো না । কিন্তু আমার চোখের সামনে আমি কোন উল্টো সিধে হতে দেব না। মেয়ে বড় হয়েছে বিয়ে থা দিতে হবে। চলাফেরায় সংযত হতে বল।”
“ঠিক বলেছ পিসি,” অমিত বলল, “ওর যে বিয়ে হবে না এ ব্যাপারে আমি তোমার সাথে একমত। প্রতিমা, তোকে আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি তোর ভবিষ্যত একদম অন্ধকার। সময় থাকতে ভাল হয়ে যা।”
“এই হল আর এক হতচ্ছাড়া, বড় বোনকে নাম ধরে ডাকে” পিসিমা রাগে গজরাতে শুরু করলেন, “লেখা নেই পড়া নেই অকম্মার ধাড়ি। যত দিন বাপের ধন আছে ততদিন না হয় খেলি তার পর কি হবে শুনি?”
“কিছুই হবেনা পিসি, তোমার ভাইদের চেয়ে আমার ভাইয়েরা খারাপ না। কিরে বড়দা আমাকে তোদের সাথে রাখবি না?”
রোহিত হেসে জবাব দিল, ” তোকে রাখতে পারি, তবে তোর বউকে রাখতে পারবো না। সে আমি আগেই বলে দিলুম,” পরিস্থিতি হালকা করার চেষ্টা।
“বুঝলে পিসি আমাদের একই গতি। প্রতিমার বিয়ে হবেনা , আমার বউকে বড়দা খাওয়াবে না আর তোমার তো বরই নেই। আমরা সিংগেলসরা রায় বাড়ির আশ্রিত হয়েই থেকে যাব।” অমিত কথা বলছিল রসিকতার সুরে। কিন্তু তার চোখ ঠিকরে আগুন বের হচ্ছিল। সে আগুনের আঁচ কেউ টের পেলো না শুধু মাত্র অঞ্জলী ছাড়া। সকলের কথার মাঝখানে চুপচাপ খাওয়া শেষ করলো অঞ্জলী। তারপর মাথা নীচু করে উঠে গেল টেবিল ছেড়ে। এরপর মঞ্জু, প্রতিমা, অমিত সবাই উঠে গেল। রোহিত বোকার মত বাবার দিকে তাকিয়ে রইল ।
অমিত ঘরে এসে দেখল তার মোবাইলে অঞ্জলীর একটা মেসেজ, “একবার আমার ঘরে এস।”
অমিত খুব বিব্রত বোধ করছিল অঞ্জলীর সামনে যেতে। কিন্তু না গিয়ে পারলো না। সে সাধারণত ঠাকুরমার ঘর ছাড়া আর কারো ঘরে যায় না। হয় বাইরে না হয় নিজের ঘরে। ঠাকুরমার ঘরে কখনও নক করে ঢুকে না। ফলে বাজে অভ্যেসটা রয়েই গেছে। অঞ্জলীর ঘরে ঢুকতে গিয়েও একই ভুল করলো। নক না করেই ঢুকে পড়লো। অঞ্জলী টের পেলনা অমিত কখন এসেছে। সে মোবাইলে কিছু একটা সার্চ করছিল। তার পরনে শুধু ব্রা আর প্যান্টি। গায়ের উপর একটা চাদর টেনে দেয়া ছিল। কিন্তু অসাবধানতায় চাদর কখন সরে গেছে টেরও পায়নি। অমিত ঘরে ঢুকে একদম হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইল। না সে বেরিয়ে যেতে পারছে, না নিজের উপস্থিতি জানান দিতে পারছে। বাস্তবে সে খুব সাধারণ জীবন যাপন করে। সামনের মাসে ১৮তে পা দেবে। কিন্তু আজও কোন মেয়ের সান্নিধ্যে আসেনি। চটি পড়ে না। পর্ণো দেখে না। এমনকি সবচে কমন যে কাজ এ বয়সে হাত মারা সেটাও সে করে না। তার চোখ দুটো চুম্বকের মত আটকে আছে অঞ্জলীর বুকের উপর। সেখান থেকে সুডৌল নিতম্ব ঘুরে চোখ গেল পায়ের দিকে। আহ যেন শিল্পীর তুলিতে আকা শরীর। বিধাতা পুরুষ মনে হয় ছুটি নিয়ে খুব ধীরে সুস্থে এই নারী দেহটি তৈরী করেছেন। অঞ্জলী কাত হয়ে শুয়ে আছে তার দিকে পিছন ফিরে। অমিত তার পুরো পিছন আর বুকের একটা পাশ দেখতে পাচ্ছে। ফলে সে একদম কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়ে দাড়িয়ে রইল। এমনকি নিশ্বাসও বন্ধ। এ ভাবে কতক্ষণ দাড়িয়ে ছিল বলতে পারবে না। হঠাত ফোস করে শ্বাস বেরিয়ে গেল। শব্দ শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে অমিতকে দেখে ঝট করে উঠে দাড়ালো অঞ্জলী। চাদরটা যে গায়ে টেনে দেয়া দরকার সেটাও ভুলে গেল।
দুজনের চার চোখ একত্র হলো এবং হাজার ভোল্টের ইলেক্ট্রন প্রোটন আদান প্রদান হয়ে গেল মুহুর্তে। এবারে অমিত জিতলো। সে অঞ্জলীর আগেই কন্ট্রোল ফিরে পেল এবং হাত থেকে মোবাইলটা ছেড়ে দিয়ে আবার দ্রুত সেটা ক্যাচ করার জন্য উপুর হলো। ফলে অঞ্জলীর শরীর থেকে চোখ দুটো অন্য দিকে সরানোর একটা অজুহাত তৈরী হলো। এক মূহুর্তের সুযোগে অঞ্জলীও সামলে নিল। চাদরটা জড়িয়ে নিল গায়ে। তার পর নিজে বিছানায় বসে অমিতকে সামনের সিংগেল সোফাটা দেখিয়ে দিল। ঘরটা ছোট। ছিমছাম। এটাচড বাথ। ক্লজেট থেকে এক সেট জামা নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল অঞ্জলী। ফিরে এল পাঁচ মিনিট পর। চোখে মূখে জল ছিটানোয় তাকে আরও ফ্রেস লাগছে। সে খুব ক্যাজুয়ালী অমিতের সামনে হাটু গেড়ে বসলো তার পর তার দুটি হাত জড়িয়ে ধরে বলল, “অমিত, সোনা ভাই আমার একটা অনুরোধ রাখবে?”
-বল, চেষ্টা করে দেখি।’
-যা হবার হয়ে গেছে। আমি পিসিমার কথায় একটুও মন খারাপ করিনি। তুমি এ নিয়ে আর কোন অশান্তি করো না।”
-অশান্তি করবো কে বললে তোমায়?”
-কারো বলার দরকার নেই। আমি তোমার চোখ দেখে সব বুঝতে পারি”।
-না পারো না। ঠাম্মি ছাড়া আমাকে আর কেউ বুঝে না। ঠিক আছে আমি নিজে কিছু করবো না। শুধু ঠাম্মিকে জানাবো। যা করার তিনি করবেন।”
-পাগলামী করিস নারে ভাই। আমার মাথার উপর এখন একটা আশ্রয় আছে। তুমি কি চাও সেটা নষ্ট হোক?
-তুমি কেন কারো আশ্রিতা হয়ে থাকবে? ঠাম্মি বলেছেন, তুমি রায় পরিবারের সদস্য। তার কথার উপর কারো কোন কথা নেই।
-শুন অমিত, তুমি ঠাম্মিকে বললে তিনি পিসিমাকে অপমান করবেন। আর সেটা হবে আমার জন্য। আজ পরিবারের সকল সদস্যের সহানুভুতি ছিল আমার দিকে। তখন সেটা আর আমার দিতে থাকবে না। আমার এবং দিদির জন্য সেটা হবে অপমানজনক।
-তার মানে বৌদি ছাড়া এখানে তোমার আর আপন কেউ নেই? এমন কি ঠাম্মিও না?
-ঠাম্মি তো বটবৃক্ষ, মা দুর্গা । তার সাথে কার তুলনা হয়?
-আর আমি? আমি বুঝি তোমার কেউ না,” অমিতের কন্ঠে কিশোরসুলভ অভিমান।
-তুমি রাজ পুত্র। এই অনাথ বিধবার প্রতি তোমার সহানুভুতিতে আমি কৃতজ্ঞ। এর বেশী আমি আর কি বলব?
-অঞ্জলী দি, আমি খুব ছোট বেলায় বাবা-মাকে হারিয়েছি তো। তাই আমার মত কাউকে দেখলে বুকের ভিতরটা কেমন জানি করে উঠে। তোমাকে দেখেও আমার তাই হয়েছে। এটা নিছক সহানুভুতি নয়। আমি তোমার ছোট । সব গুছিয়ে বলতে পারছি না। তবে দেখ তোমার জন্য আমার ঠিক এখানটায় ব্যাথা হচ্ছে।”
অমিত অঞ্জলীর ধরে থাকা হাতটা নিজের ঠিক বুকের উপর রাখলো। তার কন্ঠ শেষ দিকে বুজে এল প্রায়। চোখের কোণা চিক চিক করছে। এমন আবেগময় দরদমাখা কন্ঠ আগে কখনও শুনেছে অঞ্জলী? না শুনেনি। বাবা-মার মৃত্যু, অকাল বৈধব্য, মানুষের গঞ্জনা, ইচ্ছা আর রুচির বাইরে সেক্স; সবকষ্ট যেন এক সাথে দলা পাকিয়ে কান্না হয়ে উঠে এল গলা দিয়ে। দুই হাতে মূখ ঢেকে হু হু করে কেঁদে উঠলো অঞ্জলী। অমিত কখন যে অঞ্জলীকে জড়িয়ে ধরেছে খেয়াল নেই। একদম বুকের মাঝখানে চেপে ধরে বলছে “প্লীজ তুমি কেঁদো না। তুমি যা বলবে আমি তাই করবো।
চোখ মুছে আবার সামনা সামনি বসলো দুজন। “সত্যি বলছ অমিত আমার কথা তুমি রাখবে?’
-বলেই দেখ না।”
-আজকের ডিনার টেবিলের কথা ঠাম্মিকে জানাবে না। নিজে থেকে জেনে কিছু করতে গেলে তুমি থামাবে। তুমি ছাড়া আর কেউ তাকে থামাতে পারবে না।”
-শুধু এই টুকু? আর কিছু না?
-কাল সকালে আমাকে নিয়ে বেড়াতে বের হবে।
-তোমার অফিস?
-ঠাম্মির কাছ থেকে আজ রাতেই আমি ছুটি নিয়ে রাখবো।
-আর কিছু?” অমিতের চোখে রাজ্যের প্রত্যাশা।
-আমার খুব ঘুম পেয়েছে,” অঞ্জলী হাই তুলল।
এক বুক অতৃপ্তি নিয়ে ফিরে গেল অমিত। কি যেন বলার ছিল বলা হলো না।
""পৃথিবীটা রঙ্গমঞ্চ আমরা সবাই অভিনেতা"" !!