Thread Rating:
  • 24 Vote(s) - 3.17 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
চোরাবালি (কালেক্টেড)
পর্ব পাঁচ। রাগ অনুরাগ (#4-#29)
ঘুম আর হল না, প্রথমে এলো দিয়ার স্বপ্ন তারপর দিদিভাইয়ের ফোন। সাড়ে চারটে বাজে, পাঁচ’টার মধ্যে বারাসাত পৌঁছাবে কথা দিয়েছিল। দিয়াকে ফোনে জানিয়ে দেওয়া দরকার। মেয়েদের ব্যাপার, সাজতে বসবে, তারপর সময়ের ঠিকানা থাকবে না। অভি ভালো ভাবেই জানে এই ব্যাপারে, বাড়িতে দু’দুটো দিদি, বিশেষ করে বড়দি, সাজতে বসলে সময়ের ঠিক থাকে না। বয়সের জন্য একটু ভারী হয়ে গেছে বড়দির শরীর না হলে ওর দুই দিদিকেই বেশ সুন্দরী দেখতে।
ফোন করল দিয়াকে, “এই বেরোচ্ছি।”
অভির ফোন পেয়েই লাফিয়ে ওঠে দিয়া, “বাপরে, এতক্ষন পরে আমার কথা মনে পড়ল?”
অভি নিজের মাথায় চাটি মারে, যা বাবা, সকাল থেকে দুই বার ফোনে কথা হয়ে গেছে, দেখা করতে যাচ্ছে, তাতেও যেন মেয়ের শান্তি নেই, “আসছি তো রে বাবা, আচ্ছা রেডি থেকো।”
দিয়া মুচকি হেসে বলে, “আচ্ছা বাবা, কি ড্রেস পড়ব সেটা বল?”
অভি হেসে ফেলে, “তোমার যা ইচ্ছে, তবে বেশি দেরি কর না।”
দিয়া মাথা নাড়িয়ে হেসে বলে, “নাহ না, একদম না। তুমি গলির ভেতরে এসো না, রাস্তা মোড়ে এসে একটা ফোন কর আমি বেড়িয়ে আসবো।”
অভি মাথা দোলায়, “আচ্ছা ঠিক আছে।”
তাড়াতাড়ি করে বিছানা ছেড়ে উঠে আলমারি খুলে জামা কাপড় পড়ে নেয়। এতদিন বাইকে দিদিভাই বসত তাই একটা হেলমেট ছিল, সেটা সাথে নিয়ে নিল। ঘর থেকে বেড়িয়ে বড়মাকে জানিয়ে দিল যে ফিরতে রাত হবে। দীপাদেবী স্মিত হেসে বললেন যেন বেশি রাত না করে, বাড়ি পুরো ফাঁকা। অভি মাথা দুলিয়ে বেড়িয়ে আসে।
ঠান্ডা একটু বেশি, গলা পর্যন্ত চেন আটকে দিল জ্যাকেটের। সোঁ সোঁ করে বাইক ছুটিয়ে দিল বারাসাতের দিকে। দিয়ার বাড়ির এলাকায় ঢোকার মুখে বাইক দাঁড় করিয়ে ফোন করে জানিয়ে দিল যে পৌঁছে গেছে। শীতকাল, রাস্তায় লোকজনের ভালো ভিড়। সামনে ক্রিসমাস, তাও সেটা যেন বাঙালিদের পার্বণ এমন ভাবে কেনা কাটা করতে বেড়িয়েছে। সিগারেট ধরিয়ে গলির ভেতরে বারেবারে তাকায়, এক মিনিট যেন এক ঘন্টা মনে হয়। ঘড়ির কাটা কি দাঁড়িয়ে গেছে নাকি? ধুস, আরো দেরি করলে মনে হয় ভালো হত। মেয়েদের সাজার ব্যাপার, একটু দেরি হবেই জানা কথা, তাও আবার দিয়া, যে কিনা সাজতে এবং সাজাতে খুব ভালোবাসে। কারুর জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকতে একদম ভালো লাগে না অভির, কিন্তু বড়দি আর দিদিভাইকে নিয়ে বের হওয়া মানেই দেরি, তাই অপেক্ষা করাটা গা সওয়া হয়ে গেছে অভির। অস্থির হয়ে ওঠে অভি, এতক্ষন লাগে নাকি সাজতে, সাড়ে পাঁচ’টা এখানেই বেজে গেলো, যাবে কোথায় সেটাও জানেনা। আরো একটা সিগারেট, সেই সাথে ঘন ঘন গলির দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
ওই তো, বাড়ি থেকে বেড়িয়েছে। দুর থেকে অভিকে দেখতে পেয়েই চঞ্চলামতির পা যেন আর মাটিতে পড়তে চায়না। পারলে দিয়া এক দৌড়ে অভির কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে, কিন্তু আশেপাশের লোকের জন্য তাড়াতাড়ি পা চালায়। অভি সিগারেট ফেলে একভাবে দিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। চোখ আটকে যায়, চঞ্চলা হরিণীর অঙ্গের চলনে। পরনে একটা লাল প্লাজো, প্লাজো গুলো কেন এমন হয়, নিতম্বের চারপাশে বেশ আঁটো তারপরেই ঢলঢলে। প্লাজোটা বড্ড নচ্ছাড়, দিয়া সুগোল নিতম্বের ওপর জেঁকে বসে ওই কোমল লোভনীয় নিতম্বের আকার অবয়াব সবার চোখের সামনে ইতরের মতন মেলে ধরেছে। প্লাজোর সাথে একটা নীলচে ফুল ছাপা সাদা রঙের টপ, তার ওপর জিনসের জ্যাকেট। জ্যাকেটের বোতাম গুলো খোলা। টপটা বুকের সাথে এঁটে বসা, দুই উন্নত স্তন জোড়া সামনের দিকে উঁচিয়ে। মত্ত চলনের ফলে কোমল স্তন জোড়া একটু দুলেদুলে উঠছে। যত কাছে আসে তত দিয়ার গতি বেড়ে ওঠে। চেরি লাল রসালো ঠোঁটের কোনায় মিষ্টি মাদক হাসি। চোখের কোলে কাজল, চোখের পাতা গুলো বেশ লম্বা, মনে হয় আইল্যাস পড়েছে। লম্বা চুল মাথার পেছনে একটা খোঁপা করে বাঁধা, সেই খোঁপা আবার একটা স্টোলের মধ্যে বাঁধা, স্টোলের খালি দুই পাশ, দুই কাঁধের ওপর দিয়ে সামনের দিকে ঝুলিয়ে দেওয়া।
দুর থেকে অভিকে দেখতে পেয়েই, বুকের রক্তে হিল্লোল লাগে, চঞ্চল হয়ে ওঠে ললনা। কতদুরে দাঁড়িয়ে আছে, গলির ভেতরেই আসতে বলতে পারতো। গতকাল দাড়ি কামিয়েছিল, আজকে আর কামায়নি মনে হচ্ছে। একটা গোঁফ রাখলে বেশ পুরুষালী দেখাবে, অনুরোধ করবে যেন অভি গোঁফ রাখে। কেমন ভাবে বুকের কাছে হাত গুটিয়ে একভাবে ওর দিকে তাকিয়ে, চোখে ঝলসানো আগুন, ওই প্রেমের আগুনে পুড়তেই চলেছে দিয়ার অন্তর। অমোঘ তীব্র আকর্ষণের টানে দিয়া আপনা হতেই একটু দৌড়াতে শুরু করে দেয়। পা যেন মাটিতে পড়তেই চাইছে না।
দিয়াকে দেখে আশেপাশের বেশ কয়েকজন লোক হাঁ করে তাকিয়ে। একজন জিজ্ঞেস করে, কোথায় যাচ্ছে। দিয়া, উত্তর দেয়, এই একটু বন্ধুর সাথে বেড়াতে। লোকটার বয়স প্রায় চল্লিশের মতন হবে, দিয়ার সুগোল নিতম্বের ওপর লোকটার লোলুপ দৃষ্টি। অভি চোয়াল চেপে লোকটার দিকে তাকাতেই চোখাচুখি হয়ে যায়, লোকটা মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে নিজের পথে চলে যায়।
কাছে এসে ডান হাত একটু তুলে মিষ্টি হেসে জিজ্ঞেস করে, “কতক্ষন এসেছো?”
অভি মাথা নাড়িয়ে হেসে ফেলে, “অনেকক্ষণ এসেছি।”
নাক কুঁচকে অভির একদম কাছে এসে আদর করে ক্ষমা চেয়ে বলে, “সরি গো, এই লিপস্টিকের শেডটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।”
অভি মাথা নাড়ায়, এটা ওর কাছে কোন নতুন জিনিস নয়, দিদিভাইয়ের সাথেও এক ঘটনা ঘটে। ঠিক বের হওয়ার আগেই কোন একটা সাজার জিনিস খুঁজে পাবে না, সারা বাড়ি মাথায় করে নেবে তারপর দেখা যাবে যে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারের এক কোনায় পড়ে। অভি নিস্পলক দৃষ্টিতে দিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। এতদিন যাকে মাথার মধ্যে এঁকে রেখেছিল, আজ দুরপুরে যাকে স্বপ্নে দেখেছিল, সেই সুন্দরী ললনা আজকে ওর সামনে দাঁড়িয়ে। ওর বুকের একদম কাছে এসে মাথা তুলে ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দেয়। ঠোঁট জোড়া অসম্ভব মিষ্টি দেখতে, চেরি লালে রাঙ্গানো ঠোঁট জোড়া দেখে অভির মনে হল এখুনি একটা চুমু খেয়ে নেয়।
সারারাত এই ছেলেটার জন্য কেঁদেছে, খুব ইচ্ছে করছে অভির গালে সপাটে একটা চড় কষাতে আর তারপর গলা জড়িয়ে ধরে সেই গালে ঠোঁট চেপে ধরতে। নিজেকে ওই প্রসস্থ বুকের সাথে মিশিয়ে দিয়ে একাকার করে নিতে। সত্যি ওদের পৃথিবী অনেক আলাদা। ধীরস্থির কম কথার মানুষ অভি, নিজের গন্ডি সম্পর্কে বেশ সচেতন আর সেখানে দিয়া ঠিক উলটো চরিত্রের, চঞ্চলামতি, খুব কথা বলে, সব সময়ে নেচে বেড়ায়, সবার সাথে মিশে যায়। ওর দেখা ছেলেদের থেকে বেশ আলদা স্বভাবের অভিনন্দন আর সেই ব্যাক্তিত্ব দিয়াকে ভীষণ ভাবেই আকর্ষিত করেছে। অন্য সব ছেলেরা যেমন মেয়ে দেখলেই হ্যাংলার মতন আগ বাড়িয়ে কথা বলতে চলে আসে অথবা গায়ে পড়ে খেজুরে আলাপ পরিচয় শুরু করে দেয়, অভি একদম সেই ধরনের মানুষ নয়। ভীষণ স্থির মতির মানুষ বলেই প্রথম দিন থেকেই অভির প্রতি দিয়ার আকর্ষণ।
পদ্ম কুঁড়ির মতন চোখ মেলে অভির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কেমন লাগছে আমাকে?”
অভি ওর মুখের দিকে একটু ঝুঁকে বলে, “ভীষণ সুন্দরী।”
চোখে লাগে লজ্জার রঙ, বুকের কাছে ঘন হয়ে এসে জিজ্ঞেস করে, “প্লিজ এখান থেকে অন্য কোথাও চলো। এইভাবে এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে কেমন একটা লাগছে।”
অভিও বুঝতে পারে, অনেকের চোখ ওদের দিকে। এটা দিয়ার এলাকা, ওকে নিশ্চয় অনেকেই চেনে তাই দিয়া বিব্রতবোধ করছে। বাইকে উঠে দিয়ার দিকে হেলমেট এগিয়ে দিয়ে স্মিত হেসে বলে, “ওকে বাইকে ওঠো।”
হেলমেট হাত থেকে নিতে গিয়ে কঠিন আঙ্গুলের সাথে ওর চাঁপার কলি আঙ্গুল ছুঁয়ে যায়। শিরশির করে ওঠে দিয়ার হাত। অভির চোখ জোড়া ওকে পুড়িয়ে দেবে মনে হল। অনুরক্তির ভাষা বুঝতে পেরে চোখ নামিয়ে মৃদু সুরে বলে, “হুম।” বাইকের দুইপাশে পা ঝুলিয়ে অভির পেছনে উঠে বসে কানে কানে ফিসফিস করে বলে, “এই শোনো না, প্লিজ জ্যাকেট’টা উলটো করে পড়ো।”
অভি অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “কেন?”
দিয়া হেসে ফেলে, “আরে বাবা, সামনে থেকে হাওয়া লাগবে তাই বললাম।” আসলে দিয়ার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি ছিল।
দিয়ার কথা মেনে জ্যাকেট উলটো করে পড়ে নিয়ে বলে, “এবারে পিঠের চেনটা লাগিয়ে দাও।”
পেছন থেকে অভিকে কোমল দুই হাতে শক্ত করে জাপটে ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, “পেছনে আমি আছি তো। চেন লাগানোর কি দরকার।”
দিয়ার নিটোল উষ্ণ স্তনের কোমল পরশে অভির পিঠ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বাইক স্টারট করে হেসে বলে, “আচ্ছা তোমার এই মতলব ছিল।”
অভির ডান কাঁধে থুঁতনি রেখে পেছন থেকে অভিকে জাপটে ধরে বলে, “হুম।”
রাত হয়ে গেছে না হলে ব্যারাকপুরের গান্ধীঘাটে যেতে পারতো, বারাসাত এলাকায় থাকা ঠিক হবে না, কেউ হয়ত দিয়াকে ওর সাথে দেখে ফেলতে পারে তাতে দিয়ার অসুবিধে হতে পারে, মধ্যমগ্রামেও যাওয়া যাবে না। কোন রেস্টুরেন্টে বসতে পারে, সাতপাঁচ চিন্তা ভাবনা করতে করতে দিয়াকে জিজ্ঞেস করে, “কোথায় যেতে চাও?”
দিয়া চোখ বুজে অভির দেহের উষ্ণতায় ডুবে ছিল। অভির প্রশ্নে সম্বিত ফিরে আসাতে উত্তর দেয়, “জানি না, যাও। আমি তোমার সাথে কথা বলব না।”
বাইক ধিরে ধিরে ব্যারাকপুর রোডের দিকে নিয়ে যায়। দিয়ার অভিমানী সুর শুনে হেসে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা বাবা, কিছু বলতে হবে না, ব্যাস এইভাবে একটু জড়িয়ে ধরে বসে থাকো।”
দিয়া অভিমানী কন্ঠে উত্তর দেয়, “তুমি কিছু বুঝবে না। গতরাত থেকে আজকের সকাল পর্যন্ত, এই সাত আট ঘন্টা আমার জীবনের সব থেকে বিচিত্রময়। কয়েক ঘন্টার মধ্যে জীবন এতটা ওঠানামা করতে পারে সেটা আমার ধারনার বাইরে। তুমি সেটা জানো কি?”
অভি মনে মনে হেসে ফেলে, হ্যাঁ এই ওঠানামার অনেক কিছুই আন্দাজ করতে পেরেছে। গতরাতে গাড়িতে আসার সময়ে প্রথমে একটু কাছে আসা, তারপর বন্ধুত্তের একটু ছোঁয়া, তারপর দিয়াকে নিয়ে বাড়িতে ঢোকা। রাতে দিয়া নিশ্চয় ওর বিছানায় কিছু দুষ্টুমি করেছিল যার প্রমান স্বরূপ ওর লেপের ওপর একটা ছোপ দাগ। তারপরে ঠিক কি ঘটেছিল সেটা ঠিক ভাবে আন্দাজ করতে না পারলেও হয়ত গতরাতের গাড়ির মধ্যে ওর কথা ভেবেই সকালে মন মরা হয়ে গিয়েছিল। অভি হলফ করে বলতে পারে, গতরাতে বড়মায়ের সাথে ওর কথাবার্তা সম্পর্কে দিয়া ওয়াকিবহাল নয়। যদি জানত তাহলে সকালে গোমড়া মুখে আসতো না। তাও, সকালে মায়ের সাথে বেশ কথা বলেছে। দিয়ার এই রূপটাই ভীষণ ভাবে অভিকে আকর্ষণ করে। বুকের মধ্যে হয়ত প্রচুর ঝড় তাও ওর ঠোঁটে সর্বদা এক দুষ্টুমিষ্টি হাসি, দুই চোখ অনবরত কথা বলে চলেছে।
এত কিছু আন্দাজ করার পরেও না জানার ভান করে দিয়াকে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা বেশ, কেমন ওঠানামা হয়েছিল সেটা জানতে পারি কি?”
দিয়া অভির পিঠের ওপরে গাল ঘষে মিহি সুরে বলে, “জানো সকালে মাসিমা আমাকে যেভাবে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে দিলেন তাতে আমি খুব ঘাবড়ে গেছিলাম।”
অভি যেন আকাশ থেকে পরে, “আচ্ছা তাই নাকি? মা কি জিজ্ঞেস করছিল?”
দিয়া উত্তর দেয়, “এই আমার ব্যাপারে, আমি কোথায় থাকি, বাড়িতে কে কে আছে, বাবা কি করেন, দাদা কি করে এইসব।” কথা গুলো বলতে বলতে ফিক করে হেসে ফেলে যেন অভির মা আগে থেকেই জানতেন যে তাঁর ছেলে ওর প্রেমে পড়েছে।
অভি মনে মনে হাসে, মায়ের মন, অন্তর্যামী, কিছু না বললেও ঠিক ওর চোখ দেখে ধরে নেবে কি হয়েছে। মুচকি হেসে বলে, “ওহ আচ্ছা এই কথা।” দিয়ার দুষ্টুমির কথা মনে পড়তেই হেসে ফেলে জিজ্ঞেস করে, “শুধু এই টুকু নাকি?”
গতরাতের স্বমেহনের কথা মনে পড়তেই দিয়া লজ্জায় কুঁকড়ে গিয়ে বলে, “হ্যাঁ এই টুকু।” অভির পিঠের ওপরে থুঁতনি দিয়ে একটু ঠেলা মেরে বলে, “এই প্লিজ কিছু বলো না।”
অভি কি বলবে, যেভাবে এক সুন্দরী ললনা ওকে পেছন থেকে লতার মতন জড়িয়ে ধরে আছে তাতে ওর কথা বলার শক্তি অনেক আগেই লোপ পেয়ে গেছে। তাও ঘাড় ঘুড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, “আচ্ছা তুমি যখন আমার ঘরে ঢুকলে তখন বেশ হাসিখুশি ছিলে। রাতে এমন কি হয়েছিল যে সকাল বেলা একেবারে মন মরা হয়ে গেল?”
এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ার ভীষণ ভাবেই চাই। গতরাতে অভিকে ওর মায়ের সামনে হাঁটু গেড়ে অপরাধীর মতন বসে থাকতে দেখেছে। সেই অভির মা সকাল বেলা নিজে হাতে চা বানিয়ে খাইয়ে আবার হাজার প্রশ্ন করেছে। পালটা প্রশ্ন করে অভিকে, “আমাকে একটা সত্যি কথা বলবে?”
অভি হেসে ফেলে, “যা বাবা আমি আগে প্রশ্ন করলাম তার উত্তর দাও তারপর ভাবছি।”
জোরে জোরে মাথা নাড়ায় দিয়া, “না আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।”
অভি হেসে ফেলে, “আচ্ছা জিজ্ঞেস কর।”
দিয়া, “কাল রাতে মসিমা তোমাকে কি বলেছিলেন?”
প্রশ্ন শুনে ছোট একটা ধাক্কা খায় অভি, এই প্রশ্নের অর্থ কি? দিয়া কি ওর আর ওর মায়ের মধ্যে যা কথাবার্তা হয়েছে সেটা শুনে ফেলেছে? যদি শুনে থাকে তাহলে তো সকালে ওইরকম গোমড়া মুখ করে বের হওয়ার কোন মানে হয়না। অভি পালটা প্রশ্ন করে, “আমার সাথে মায়ের কথাবার্তা হয়েছে সেটা তুমি কি করে জানলে?”
এবারে দিয়া ধরা পরে গেছে, লাজুক হেসে ফিসফিস করে বলে, “আসলে কি জানো, রাতের বেলা এক সময়ে আমি দরজা খুলে দেখি তুমি মাসিমার সামনে অপরাধীর মতন হাঁটু গেড়ে বসে...”
অভি হেসে ফেলে, “ওহ দুষ্টু মেয়ে, রাতে তাহলে গোয়েন্দা গিরি করা হয়েছিল।”
লজ্জা পেয়ে যায় দিয়া, আসলে গোয়েন্দাগিরি করতে যায়নি, চেয়েছিল একবার অভির দর্শন পাওয়ার। আমতা আমতা করে বলে, “না মানে এমনি।” আদুরে সুরে জিজ্ঞেস করে, “প্লিজ বল না।”
অভি সেই রাতের ঘটনা সংক্ষেপে জানাতেই দিয়ার মনে হল দীপাদেবীকে জড়িয়ে ধরতে। অভি, পাপার কথা চেপে যায়, সেই নিয়ে ওর মনেও একটু সংশয় যদিও আছে তবে সেই সাথে আসার আলো আছে যে দিদিভাই আর মা ওর পাশে।
সব শুনে দিয়া আনন্দে প্রায় লাফিয়ে ওঠে, অভি যদি হেলমেট না পরে থাকতো তাহলে অভির গালে একটা মিষ্টি চুম্বন এঁকে দিত। অভিকে ভীষণ শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে, “এখন আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে মাসিমা এমন বলেছেন।”
অভি হেসে উত্তর দেয়, “হ্যাঁ তো, তুমি তো আজব মেয়ে, অর্ধেক কথা শুনে মুখ হাড়ি করে অভিমান করে এমন এক কান্ড ঘটালে কি বলব। সেই জন্য লোকে বলে, অল্প বিদ্যে ভয়ঙ্করি।” বলেই হেসে ফেলে।
দিয়া ঠোঁট উলটে অভির বুকের ওপর আলতো নখের আঁচড় দিয়ে বলে, “আমি ভয়ঙ্করি?”
অভি হেসে ফেলে, “আরে বাবা, সেটা বলিনি রে। তুমি তো আমার দুষ্টু মিষ্টি দিয়া।”
অভিকে জাপটে ধরে কাঁধের ওপর থুঁতনি রেখে মিহি কণ্ঠে বলে, “আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমি তোমার সাথে আছি জানো।”
শক্ত করে জড়িয়ে ধরার ফলে দিয়ার কমনীয় উষ্ণ দেহপল্লব অভির পিঠের ওপরে গলে যায়। অভির বুকের মধ্যে এক ভীষণ উত্তপ্ত ভালোলাগার শিরশিরানি শুরু হয়। ওর বুকের কাছে, দিয়ার চাঁপার কলি আঙ্গুল ওর জামা খামচে ধরে। পিঠের ওপর কোমল স্তন জোড়ার স্পর্শ ওকে উন্মত্ততার শিখরে ছুঁড়ে দিতে প্রস্তুত। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে দিয়াকে বলে, “এই তো তোমার পাশেই আছি দিয়া।”
দিয়া চোখ বুজে নিজেকে ডুবিয়ে নেয় অভির পিঠের ওপরে। কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে কিছুই ভাবতে ইচ্ছে করছে না, শুধু প্রানপন চেষ্টা, এই রাত যেন এইভাবেই অভির বাইকের পেছনে বসে কাটিয়ে দেয়। হয়ত হাত ছাড়লেই অভি কোথাও হারিয়ে যাবে।
এই রাস্তায় প্রচুর যান চলাচল করে, কোথাও ঠিক ভাবে দাঁড়াবার অথবা বসে কথা বলার মতন জায়গা নেই। কিছুদুর গিয়ে বড় রাস্তা ছেড়ে একটা ছোট রাস্তার মধ্যে ভেতরে ঢুকে গেল অভি, এইদিকে একটু এগিয়ে গেলে গ্রাম এলাকা, এইদিকে শহরের কোলাহল নেই, নেই সারিসারি বাড়ি ঘর, এইদিকে রাস্তা একটু খালি পাওয়া যেতে পারে। রাস্তার দুপাশে হুহু করে জমি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, ইট কাঠ পাথরের জঙ্গল মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। একটু এগিয়ে গেলে ওদের ধানা জমি পড়বে। বিকাশ, যে ওদের এই ধানা জমি দেখাশুনা করে তাঁর বাড়িও এইদিকে। বেশ কিছুদুর এগিয়ে গিয়ে একটা ফাঁকা মেঠো পথে বাইক নামিয়ে দিল, আরো একটু গেলেই ওদের জমি।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: চোরাবালি (কালেক্টেড) - by ddey333 - 12-09-2020, 09:36 AM



Users browsing this thread: 2 Guest(s)