Thread Rating:
  • 24 Vote(s) - 3.17 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
চোরাবালি (কালেক্টেড)
পর্ব পাঁচ। রাগ অনুরাগ (#1-#26)
কম্বল মুড়ি দিয়ে একটু টানটান হয়ে শুয়েছিল অভি, কিন্তু চোখে আর ঘুম আসে না। কখন সকাল হবে, বাইকে করে দিয়াকে নিয়ে বারাসাত যাবে। যদিও এইটুকু পথ তাও সেটাই মধুর। ভোরের আলো দিয়ার মসৃণ ত্বকের ওপর পিছল খেয়ে পরবে, সেই দেখে অভির মনে দোলা লাগবে। শীতকাল, নিশ্চয় দিয়া ওর পিঠের ওপর ঝুঁকে বসবে, এই সব চিন্তায় মগ্ন। রাতে কি পরে শুয়েছিল, ওর কোন শারট না টিশারট? নাকি গ্রে সাইড অর্থাৎ শুধু মাত্র ব্রা আর প্যান্টি পরেই লেপের তলায় শুয়েছিল। দময়ন্তীকে বড়মায়ের বেশ ভালোই লেগেছে, তাহলে এত তাড়াতাড়ি প্রপোজ করে কি দরকার, একটু দুষ্টুমি করবে দিয়া সাথে। শান্ত ছেলেটার হৃদয়ে দোলা লাগে।
পাপার উপনিষদ পাঠ শুরু হতেই বুঝে গেল যে নতুন দিন চলে এসেছে, এইবার বড়মা উঠে পড়বে। অভিও উঠে পরল। এত সকালে ছেলেকে উঠতে দেখে প্রনবেশ বাবু একটু অবাক কিন্তু মন্ত্র জপা থামান না। অভিও সোফা ছেড়ে উঠে পড়ল। দিদিভাইয়ের রুমে ঢুকে দেখে যে যথারীতি ভাগ্নে তিতাস পাছা উল্টে লেপের তলায় গুটিশুটি মেরে বড়দি আর নীলাদ্রীদার মাঝখানে শুয়ে। বিছানায় ঝুঁকে পরে তিতাসকে চুমু খেয়ে উঠতে যাবে কি বড়দিও উঠে পড়ল।
অভির দিকে ঘুম চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, “কি রে তুই রাতে ঘুমাসনি নাকি?”
অভি হেসে উত্তর দেয়, “না রে আর ঘুম আসে নি।”
বড়দি জানে না যে বাড়িতে দিয়া এসেছে, জানে না রাতে বড়মায়ের সাথে কি কথা হয়েছে। শায়িত বড়দির পাশে বসে কোলের মধ্যে মাথা গুঁজে বলে, “আমাকে একটু ঘুমাতে দিবি?”
শর্বাণী খুব অবাক হয়ে যায়, “কি হয়েছে রে তোর?”
বড়দির কোলের মধ্যে মাথা রেখে বলে, “কিছু না তো, এই ঘুম ঘুম পাচ্ছে তাই।” বড়দি জানে না, গত রাতে বড়মায়ের কাছে শুনেছে কি ভাবে বড়দি একা একা বড় হয়েছে।
শর্বাণী বিছানায় উঠে বসে, অভির মাথায় হাত বুলিয়ে হেসে ফেলে, “আচ্ছা বাবা শো।”
ইতিমধ্যে দীপাদেবী উঠে পড়লেন। বড়মেয়ের রুমে এসে দেখলেন যে অভি চুপচাপ চোখ বন্ধ করে শর্বাণীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে, বিছানায় তখন বাকিরাও ঘুমিয়ে। দীপাদেবী ওদের দেখে জিজ্ঞেস করলেন, “কি রে উঠে পড়েছিস? চা বানাবো।”
শর্বাণী উঠতে যায়, অভি বড়দির কোল চেপে ধরে বলে, “ধ্যাত একটু শুতে দে না, মা চা বানিয়ে আনবে খানে।”
শর্বাণী এইবারে সত্যি অবাক হয়ে যায়। এত বছরে কোনদিন অভি ওর কোলে শোয়নি, বরাবর মনামির কোলে মাথা রেখে শুয়েছে, এমনকি মনামির বিয়ের কয়েকদিন আগে পর্যন্ত মনামির কোলেই মাথা রেখে আদর খেয়েছে। শর্বাণী অভির মাথার চুলে বিলি কেটে জিজ্ঞেস করে, “সত্যি বলত কি হয়েছে?”
অভি মিষ্টি হেসে উত্তর দেয়, “বললাম তো ঘুম পাচ্ছে তাই। যা তোর খুব কষ্ট হচ্ছে আর শোব না।”
শর্বাণী ওর মাথার চুলে বিলি কেটে হেসে উত্তর দেয়, “আচ্ছা বাবা, শো।”
কিছুক্ষন পরে দীপদেবী চা বানিয়ে বড় মেয়ের রুমের মধ্যে ঢোকেন। চা খেতে খেতে একটু গল্প গুজব, তিতাসের স্কুলের দুষ্টুমির গল্প ইত্যাদি হয়। চা শেষে সবাই সবার কাজে লেগে পরে, শর্বাণী মুখ ধুয়ে ব্যাগ গুছাতে শুরু করে দেয়। নীলাদ্রীও ইতিমধ্যে উঠে পরে। দীপাদেবী অভিকে রান্না ঘরে ডেকে নিয়ে গিয়ে বলেন, যে দময়ন্তীকে উঠিয়ে দিতে। অভি বড়মায়ের সামনে লাজুক হেসে মাথা চুলকে মাথা দুলিয়ে বাধ্য ছেলের মতন নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।
নিজের রুমের দরজা খুলবে তাতেই কত ইতস্তত ভাব, ঘুম ঘুম চোখে দিয়া বিছানা ছেড়ে উঠে দরজা খুলে দেবে। ঢুলুঢুলু টানাটানা চোখে ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি এক হাসি দেবে, এই সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে দরজাতে টোকা মারতেই দরজা খুলে গেল। অভি একটু অবাক, এত তাড়াতাড়ি দিয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেল নাকি? দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে দিয়াকে দেখে আরো অবাক লাগলো অভির, সকাল সকাল উঠে পড়েছে, ওর টেবিলের ওপর মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে। রাতে কি সত্যি ঘুমায়নি মেয়েটা। এর মধ্যেই জামা কাপড় পরে তৈরি। ওর বিছানা একদম পরিপাটি করে সাজানো গুছানো। এমন কি ওর টেবিল যেটা গত রাত পর্যন্ত আগোছোলা ছিল সেটাও বেশ পরিপাটি করে সাজান। টেবিলের নিচে একটা কাপে সিগারেট রাখা ছিল, সেই সিগারেট উধাও, খালি কাপ ধুয়ে সেখানেই রাখা। হটাত কি হল মেয়েটার, একটু চিন্তা হয় অভির। গলা খ্যাঁকরে নিজের অস্তিত্বের জানান দেয়। টেবিল থেকে মাথা তুলে ওর দিকে ঘুম ভরা চোখে তাকায় দিয়া। অভিকে দেখতে পেয়েই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
অভি ওর দিকে দুকদম এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে, “কি ব্যাপার, তুমি কি কাল রাতে ঘুমাওনি নাকি?”
দিয়া অন্য দিকে তাকিয়ে চোখ মুছে উত্তর দেয়, “এই একটু আগেই উঠেছি। তুমি কখন উঠলে?”
অভি উত্তর দেয়, “বেশ আগেই।”
দিয়া ছোট উত্তর দেয়, “ওহ আচ্ছা” তারপর নিজের দুটো ব্যাগ হাতে নিয়ে অভিকে বলে, “আমি বাড়ি যাবো।”
দিয়ার কন্ঠস্বরে সেই উচ্ছলতা নেই। অভির বুকে দামামা বেজে ওঠে, এক রাতে এমন কি হল যে দিয়া আমূল বদলে গেল। দিয়ার দিকে একটু ঝুঁকে প্রশ্ন করে, “তোমার কি হয়েছে বল তো?”
দিয়া ওর দিকে না তাকিয়েই শীতল কণ্ঠে উত্তর দেয়, “না মানে, বেশ ক্লান্ত তাই, আর কিছু না।”
অভি বেশ বুঝতে পারে এই সুর ক্লান্তির নয় কিন্তু দিয়ার মনের কথা আর বুঝতে পারে না। অভি মাথা নাড়িয়ে বলে, “না মানতে পারছি না।”
দিয়ার বুক ককিয়ে ওঠে। শীতল কণ্ঠে বলে, “না মানলে আমার কি করার আছে।”
কথা গুলো বলার সময়ে বেশ কষ্ট হচ্ছিল দিয়ার। জানতে হবে না তোমাকে, আমি অলীক স্বপ্নের পেছনে ছুটে গেছিলাম বুঝতে পারিনি সেই ছোটা তোমার জীবনে এতবড় আঘাত এনে দেবে। তোমার মনে কি কিছুই হয় না নাকি? তুমি কি করে এত সহজে আমার সাথে কথা বল? তুমি সত্যি কি রক্ত মাংসের গড়া মানুষ নাকি পাথরের মানুষ? তোমার বুকের মধ্যে হৃদয় নেই এটা বলা ভীষণ ভুল, সেটা আছে, ভীষণ ভাবেই আছে। আর সেই হৃদয়ে আমার জায়গা নেই সেটা আমি বুঝে গেছি। তোমার পৃথিবী আর আমার পৃথিবী অনেক আলাদা, অভিনন্দন। আমাদের এই দুই পৃথিবী কোনদিন মিশতে পারবে না।
অভিকে পাশ কাটিয়ে ব্যাগ হাতে রুম ছেড়ে বের হতে যায়। অভি বাধা দিতে গেলে ঠান্ডা গলায় বলে, “পথ ছাড়ো আমি যাবো।”
অভি ভুরু কুঁচকে দিয়ার নত মুখের দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে। দিয়ার মনের মধ্যে কি চলছে সেটা কিছুতেই বোধগম্য হয়ে ওঠে না ওর। অভি পথ ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলে, “আচ্ছা বেশ।” দিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে ব্যাগ গুলো বইতে সাহায্য করে। দিয়া কোন কথা না বলেই একটা ব্যাগ অভির হাতে ধরিয়ে দেয়। রুম থেকে বেড়িয়ে আসতেই, বড়মায়ের সাথে দেখা।
দীপাদেবী দিয়াকে দেখে স্মিত হেসে বলেন, “এত তাড়াতারি উঠে পড়লে যে?”
দিয়া একটু ভদ্রতার হাসি দিয়ে বলে, “না মানে বাড়ি যেতে হবে তাই।”
দীপাদেবী দিয়াকে বসতে বলে বলেন, “বস, আমি চা নিয়ে আসছি।”
অভি ব্যাগ রেখে নিজের রুমে চলে যায়। দিয়া চুপচাপ সোফায় বসে পরে। অভির মায়ের স্মিত হাসি আর গত রাতের দৃশ্য, কিছুতেই মেলাতে পারছে না দিয়া। সত্যি যদি গতরাতে অভিকে বকাঝকা করে থাকেন তাহলে সকাল বেলা ওর দর্শন পেয়ে এইভাবে আময়িক হাসি নিশ্চয় দেবেন না অভির মা। দীপাদেবী কিছুক্ষনের মধ্যে চা নিয়ে বসার ঘরে ঢোকেন। দিয়ার দিকে চায়ের কাপ বাড়িয়ে সামনের সোফায় বসে পড়েন।
দীপাদেবী দিয়ার হাতে একটা খাম তুলে দিয়ে বলেন, “এটা রাখো।”
দিয়া জানে এই খামে কি তাও ভদ্রতার খাতিরে বলে, “মাসিমা, এর কি সত্যি কোন দরকার ছিল?”
দীপাদেবী হেসে বলেন, “এটা আমার তরফ থেকে নয়, এটা মনামি তোমাকে দিয়েছে।”
দিয়া মিষ্টি হেসে খামটা নিজের হাত ব্যাগে ঢুকিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দেয়। দীপাদেবী দিয়াকে জিজ্ঞেস করেন, “তোমার সাথে ভালো করে এই কয়দিনে কথাই হল না।” একটু থেমে জিজ্ঞেস করেন, “তোমার বাবা কি করেন?”
দিয়া উত্তর দেয়, “বাবা বারাসাত বিডিও অফিসে চাকরি করেন।”
দীপাদেবী মাথা দুলিয়ে বলেন, “আচ্ছা, আর বাড়িতে কে কে আছে?”
দিয়া, “মা আছেন। দাদা, বেড়াচাপায় হেলথ সেন্টারে চাকরি করে।”
দীপাদেবী জিজ্ঞেস করেন, “তোমার দাদার বিয়ে হয়ে গেছে?”
মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়, “না এখন বিয়ে হয়নি।”
দীপাদেবী, “বারাসাতে তোমাদের নিজেদের বাড়ি?”
দিয়া, “হ্যাঁ, নিজেদের।”
দীপাদেবী, “বারাসাতে কোথায় বাড়ি?”
দিয়া, “নবপল্লীতে।”
দীপাদেবী, “তুমি এই বিউটিসিয়ানের কাজ কত দিন ধরে করছ?”
দিয়া একটু হেসে উত্তর দেয়, “এই বছর তিনেকের মতন।”
দীপাদেবী মাথা দোলায়, “আচ্ছা, এরপর কি করার ইচ্ছে আছে?”
দিয়া একটু ভেবে উত্তর দেয়, “সেই রকম ভাবে কিছু ভাবিনি তবে ভবিষ্যতে নিজের একটা বিউটি পার্লার খোলার ইচ্ছে আছে।”
দীপাদেবী মিষ্টি হেসে বলেন, “তুমি খুব ভালো সাজাতে পারো। কোথাও শিখেছ?”
দিয়া একটু লজ্জা পেয়ে বলে, “না না, তেমন ভাবে কোথাও কোর্স করে শিখিনি, এই একটু আধটু ইন্টারনেট থেকে আর একজন জানা শোনা আছেন তার কাছে দেখে একটু শেখা।”
দীপাদেবী অবাক কণ্ঠে বলেন, “বাপ রে, নিজে নিজে শিখেছ? এতো বেশ ভালো কথা।”
দিয়া লাজুক হেসে উত্তর দেয়, “না তেমন কিছু নয়।”
দীপাদেবী স্মিত হেসে বলেন, “না না, সত্যি বলছি তোমার হাত খুব ভালো।” একটু থেমে জিজ্ঞেস করেন, “এই বিয়ে বৌভাতে যখন তুমি সাজাতে যাও, তখন তোমার বেশ কষ্ট হয় তাই না?”
দিয়া প্রশ্ন করে, “কেন?”
দীপাদেবী স্মিত হেসে বলেন, “এই যে রাত হয়ে যায় বাড়ি ফিরতে, কোনদিন হয়ত ঠিক ভাবে ঘুম হয়না তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
দিয়া হেসে ফেলে, “না মাসিমা, অন্য সব জায়গায় বিয়ে বৌভাতে সাজিয়ে দিয়েই চলে আসি। কোথাও থাকি না। এখানের কথা আলাদা, লেখা জোর করে বলল তাই থেকে গেলাম।”
দীপাদেবী একটু হেসে বলেন, “আচ্ছা বুঝলাম। ”
দিয়া বেশ ধন্ধে পরে যায়, এত প্রশ্ন কি ব্যাপার, কি চাইছেন অভির মা? ওর মনে হাজার প্রশ্ন ওঠে, অভির মা কি জানেন ওদের ব্যাপারে। এমন ভাবে ওর সাথে কেন কথা বলছে? অভি কি ওর মাকে কিছু বলেছে? যদি কিছু বলেও থাকে, তাহলে গতকাল রাত্রে যা কিছু শুনেছে সেটা কি ভুল শুনেছে? না, দিয়া ভুল দেখেনি অথবা শোনেনি। ঠিক দেখেছে যে অভি মাথা নিচু করে ওর মায়ের সামনে অপরাধির মতন হাঁটু গেড়ে বসে।
অভি মুখ ধুয়ে জামা কাপড় পরে তৈরি, দিয়াকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে যাবে। কিন্তু দিয়ার মুখ ভার কেন? কাল রাত অবধি সব ঠিক ছিল, সকালবেলা অভিও ভেবেছিল ওকে ছাড়তে যাওয়ার সময়ে একটু খুনসুটি করবে। রুম থেকে বেড়িয়ে দেখে বড়মা আর দিয়া বেশ গল্প করছে, সেটা দেখে বেশ ভালো লাগলো। অভিকে দেখে দিয়া সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় বিদায় নেওয়ার জন্য।
দীপাদেবী বলেন, “দুই মেয়েরই বিয়ে হয়ে গেল, দুই মেয়েই দূরে চলে যাবে। মাঝে মাঝে এসো ভালো লাগবে।”
দিয়া দীপাদেবীকে প্রনাম করে স্মিত হেসে বলেন, “মাসিমা, আপনি ডাকলে নিশ্চয় আসবো।”
বড়মা, অভির দিকে দেখে বলে, “সাবধানে যাস।”
দিয়া আলতো মাথা দুলিয়ে ব্যাগ হাতে অভির পেছন পেছন বাড়ি ছেড়ে বেড়িয়ে আসে। ভোরের আলোর ছটায় পূব আকাশে লাল রঙ ধরেছে, একটু কুয়াশাচ্ছন সকাল। আগে এই পাড়ায় সবার নিজের নিজের ছোট বাড়ি ছিল, এখন সবার দুইতলা তিনতলা বাড়ি। সবার বাড়িতে একটু জায়গা ছিল, সেইগুলো বিক্রি হয়ে গেছে, সবার বাড়িতে একটা বাগান একটু গাছপালা ছিল, সেই গাছাপালা গুলো কেটে সেখানে গজিয়ে উঠেছে বাড়ি। পাড়ার মধ্যে শুধু মাত্র ওদের বাড়িটাই এখন অক্ষত, একতলা, বাড়ির সামনে ফুলের বাগান এখন আছে, বাড়ির পেছনে অনেকটা জায়গা, একটা ছোট পুকুর, তার পাছে কয়েকটা আম গাছ, একটা জামরুল গাছ, দুটো কাঁঠাল গাছ। অনেকে এসেছিল জায়গা কিনতে, পাপা সবাইকে ভাগিয়ে দিয়েছে। পাপা বলেন চারদিকে শুধুমাত্র লোহার জঙ্গল তার মাঝে একটু সবুজের জঙ্গল থাকতে ক্ষতি কি।
দিয়ার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখল অভি। মাথার চুল একটু এলোমেলো, হয়ত রাতে না ঘুমানোর ফলে এই হয়েছে। চলনে সেই আগের দিনের মত্ততা নেই, মুখ একটু শুকনো, চোখের পাতা ভারী। জ্যাকেটের সব বোতাম লাগানো, সত্যি এইবার ঠান্ডা বেশ জমিয়ে পড়েছে। অভির ইচ্ছে করছিল জিজ্ঞেস করে, যদি ঠাণ্ডা লাগে তাহলে আরো একটা জ্যাকেট দিতে পারে, কিন্তু দিয়ার থমথমে চেহারা দেখে সেই সাহস আর পেলো না।
বাইকে স্টারট দিয়ে আরেকবার দিয়ার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখল। কাঁধের ব্যাগটা অভির দিকে এগিয়ে দিল দিয়া। বিনা বাক্যব্যায়ে দিয়ার কাঁধের ব্যাগটা সামনের দিকে ঝুলিয়ে নিল, যাতে দিয়ার বসতে কষ্ট না হয়। বাইকের পেছনে উঠে বসে দুইজনার মাঝে মেকআপের বাক্সটা রেখে দিল। কাঁধে আলতো একটা চাটি মেরে ইশারায় জানিয়ে দিল যে যেতে প্রস্তুত। অভি ভেবেছিল যে বাক্সটা পেছনে রেখে দেবে, ওদের মাঝের ব্যাবধান থাকবে না, ভেবেছিল এই শীতের মনোরম প্রভাতে পেছন থেকে একটু নিবিড় ঘন হয়েই বসবে দিয়া। বাইক চালিয়ে বড় রাস্তা পর্যন্ত কারুর মুখে কোন কথা নেই, যেন কেউই কাউকে চেনে না। সত্যি কি অচেনা নাকি অচেনার ভান করছে দুইজনেই। অভির বাড়ি থেকে দিয়ার বাড়ি, মিনিট কুড়ির পথ। ভোরের বেলা রাস্তা একদম ফাঁকা তাই অভিও বেশ জোরেই বাইক চালিয়ে দিল। এবারে দিয়ার মনের মধ্যে কোন প্রশ্ন নেই, আবদার নেই যে “ধিরে চালাও”, কণ্ঠে সেই উত্তাপ নেই। অভি উত্তর হাতড়ে বেড়ায়, এক রাতে কি হয়েছে যে উচ্ছল উদ্দাম মেয়েটা একেবারে চুপ করে গেছে? সারাটা রাস্তা, অভির কাঁধে ডান হাত রেখে নিজেকে সামলে বসেছিল দিয়া, এর বেশি কাছে আসার চেষ্টা করেনি অথবা একটাও শব্দ করেনি।
[+] 2 users Like ddey333's post
Like Reply
Do not mention / post any under age /rape content. If found Please use REPORT button.


Messages In This Thread
RE: চোরাবালি (কালেক্টেড) - by ddey333 - 11-09-2020, 03:08 PM



Users browsing this thread: 1 Guest(s)