Thread Rating:
  • 24 Vote(s) - 3.17 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
চোরাবালি (কালেক্টেড)
পর্ব চার। অনুভূতি (#7-#25)
অভি হাসতে হাসতে কম্বল আর নিজের জামা কাপড় নিয়ে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে আসে। বসার ঘরে পা রাখতেই চমকে ওঠে। বড়মা সোফায় বসে ওর ঘরের খোলা দরজার দিকে একভাবে তাকিয়ে। বড়মাকে দেখেই ওর শিরদাঁড়া বেয়ে এক হিমশীতল ধারা বয়ে যায়। বড়মা কতক্ষন বসে? ওদের সব কথা কি শুনে ফেলেছে? এই যে শাড়ি ব্লাউজ খোলার কথা, সেটাও? ধরণী দ্বিধা হও, আমি তোমার ভেতরে ডুবে যেতে চাই। কেন মাটি ফেটে গেল না, কেন অভি তলিয়ে গেল না। গলা শুকিয়ে আসে, পা দুটো কেউ যেন মাটিতে পেরেক দিয়ে ঠুকে দিয়েছে। বড়মায়ের দৃষ্টি থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য, মাথা নিচু করে বড় সোফার ওপরে কম্বল রেখে অন্যপাশের বাথরুমে নিজের জামা কাপড় নিয়ে ঢুকে পরে। বড়মায়ের মুখের দিকে তাকানোর সাহস ছিল না একদম তাই ঠিক বুঝতে পারেনা বড়মায়ের মনের অভিব্যাক্তি। বুকের মাঝে প্রচন্ড জোরে ধুকপুকানি শুরু হয়ে যায়। বাথরুমের দরজা খুলে আবার সেই বসার ঘরেই ওকে যেতে হবে। বাথরুমের দেয়ালে বারবার মাথা পেটায় অভি, কি দরকার ছিল দিয়াকে বাড়িতে নিয়ে আসার, রাত হোক আর যাই হোক, বারাসাতে নামিয়ে দিতে পারত, নিজে গিয়ে পৌঁছে দিতে পারত ওর বাড়িতে। যদিও বা বাড়িতে নিয়ে এসেছে, কি দরকার ছিল, দিয়ার সাথে এতটা হাসি ঠাট্টা করার। ঘর দেখিয়ে, শুতে বলে দিয়ে চলে আসলেই হত। এই নিস্তব্ধ শীতের রাতে এইভাবে হেসে কথা বললে যে কেউ শুনতে পাবে, তার ওপরে যদি কেউ বসার ঘরেই বসে থাকে তাহলে তার কানে সব কথাই আসবে। ওর ঘরের দরজা খোলাই ছিল, বন্ধ হলে না হয় বাইরে কোন আওয়াজ আসত না। সাহস জুগাতে পারল না তাও ভয়ে ভয়ে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে এলো।
দীপাদেবী ছেলেকে মাথা নিচু করে বাথরুম থেকে বের হতে দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বলেন, “এদিকে আয়।”
সুবোধ বালকের মতন, গুটি পায়ে দুরের একটা চেয়ারে বসতে যায়। দীপাদেবী নিজের পাশের ছোট সোফায় বসতে বলে প্রশ্ন করে, “কি ব্যাপার? হ্যাঁ?”
মাথা নিচু করে হাতের নখ খুটতে খুটতে নিচু গলায় উত্তর দেয়, “না, কিছু না।”
কিছুক্ষন ছেলের নত মাথার দিকে তাকিয়ে বলেন, “যা করছিস একটু ভেবে চিন্তে করিস। বড় হয়েছিস, এমন কিছু করিস না যাতে তোর পাপার মান সন্মানে আঘাত করে।”
অপরাধ বোধে গলা শুকিয়ে আসে অভির। ঠিক এই কারনেই এখন পর্যন্ত দিয়ার দিকে পা বাড়াতে পারেনি। বড়মা ওর সর্বস্ব। বড়মায়ের সামনে মাথা নিচু করে বলে, “না, মানে তুমি যা ভাবছ তার কিছুই হয়নি।”
অভির মুখ আঁজলা করে নিজের দিকে তুলে ধরে দেখেন যে ছেলের চোখে জল। ছেলের চোখের জল মুছিয়ে বলতে শুরু করেন, “তুই এইটুকুনি ছিলিস যখন তোকে হসপিটাল থেকে এনেছিলাম। তোর জন্মের সময়ে রেণুর শরীর ভীষণ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। প্রিম্যাচিওর ডেলিভারি হল, তোকে তুলোর মধ্যে করে বাড়িতে আনলাম। রেনু আর ফেরেনি।” বলেই বড়মা কেঁদে ফেললেন।
বড়মায়ের হাত দুটো ধরে অভি কেঁদে ফেলে, “মা গো, আমি এইসব কিছু জানতে চাই না।”
পুত্রের কণ্ঠে “মা” ডাক যেকোনো নারীর হৃদয়, মায়া মমতায় গলিয়ে দেয়। দীপাদেবী চোখের জল মুছতে মুছতে বলেন, “একদিকে মনামি, একদিকে তুই। একবার এই বাড়ি, একবার সল্টলেকের বাড়িতে মনিকে নিয়ে দৌড়াই। সেই এইটুকু বয়স থেকে তোকে বুকে আগলে মানুষ করে গেছি। তুই হাঁ করলে হাঁচি দিবি না হ্যাঁ বলবি, সব বুঝতে পারি।”
ডুকরে কেঁদে ওঠে অভি, “মাগো, তুমি যা বলবে যেমন বলবে তাই করব।”
ছেলের কান্না দেখে চোখের জল মুছে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, “মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে, বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে, সেটাই সত্য। তুইই আমার সবে ধন নীলমণি, তুই হোঁচট খেয়ে পরলেও আমার বড্ড লাগে রে বাবা। এমন কিছু করিস নে যাতে কারুর সামনে মুখ দেখাতে লজ্জা করে।”
বড়মায়ের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে হাত ধরে বলে, “না মা, তুমি ভুল ভাবছ। আমি সত্যি বলছি আমি এমন কিছুই করিনি যাতে তোমার বা পাপার মাথা নিচু হয়ে যায়।”
বেশ কিছুক্ষন ছেলের ভিজে চোখের দিকে তাকিয়ে রইলেন দীপাদেবী। এই টুকু বিশ্বাস এই ছেলের ওপরে তাঁর আছে। যে ছেলে, এত পড়াশুনা করেও শুধু মাত্র তাঁদের জন্য মধ্যমগ্রামে থেকে যেতে পারে, সেই ছেলে অন্তত তাঁর বিস্বাসে আঘাত হেনে কিছু করবে না। মাতৃহারা ছেলেটাকে বুকে করে মানুষ করেছে, ছেলের হাসিটাই তাঁর কাছে সব। তবুও কোথাও যেন একটা কালো মেঘের উঁকিঝুঁকি, একটা কিন্তু ভাব চলে আসে মনের মধ্যে। ভবিষ্যতে কি হবে জানেন না, কিন্তু লড়াই করতে দোষ কোথায়? মুখ বুজে সারা জীবন কত ধরনের লড়াই করেই কাটিয়ে গেছেন। একবার না হয় মুখ খুলেই চেষ্টা করবেন ছেলেকে আগলে রাখতে।
দীপাদেবী ছেলেকে জিজ্ঞেস করেন, “দময়ন্তীকে কি তোর সত্যি ভালো লাগে?”
অভি কি উত্তর দেবে ভেবে পায়না, দময়ন্তীকে ভালো লাগে ভীষণ ভাবেই ভালো লাগে কিন্তু সরাসরি কি এইভাবে বলা যায়। মায়ের সামনে মাথা নিচু করে আলতো মাথা দোলায়।
দীপাদেবী আবার প্রশ্ন করেন অভিকে, “তুই কি কিছু বলেছিস ওকে এই ব্যাপারে?”
অভি মাথা নাড়ায়, “না” কি বলবে, কি করে বলবে। বড়মাকে দুঃখ দিয়ে জীবনে কিছুই করতে চায় না।
নিজের চোখ মুছে, ছেলের চোখ মুছে বলেন, “তুই যে কিছু করিসনি অথবা বলিসনি সেটাও আমি বুঝতে পেরে গেছিলাম। আমার সেই বিশ্বাস আমার ছেলের ওপর আছে।” বুক ভরে শ্বাস নিয়ে, ছেলের মাথাটা কোলের কাছে টেনে স্মিত হেসে বলেন, “দময়ন্তী বেশ ভালো দেখতে, কর্মঠ মেয়ে, খুব ভালো মেয়ে তাতে সন্দেহ নেই। কার সাথে কি ভাবে মিশতে হয়, কাকে সন্মান দিয়ে কথা বলতে হয়, সব কিছুই জানে। কিন্তু তোর পাপাকে’ত চিনিস, একটু রাগী, একটু একগুঁয়ে, সেখানেই ভয়, সেটা নিয়েই একটু চিন্তা।”
একটু লজিত হয়ে পরে অভি, বড়মায়ের কোলের মধ্যে মুখ গুঁজে বলে, “মাগো, তুমি পাশে থাকলেই হবে আমার আর কিছু চাইনে।”
চোখের কোল মুছে, আদর করে ছেলের কান ধরে টেনে উঠিয়ে বলেন, “কেন কিছু চাই না? এই একটু আগেই তো বললি যে দময়ন্তীকে তোর ভালো লাগে।” অভি ভীষণ লজ্জায় পরে যায়। দীপাদেবী একটু হেসে বলেন, “আগে একটা ভালো চাকরিতে ঢোক, তারপর ঠিক সময় মতন আমি তোর পাপাকে বুঝিয়ে বলব।”
বড়মায়ের সম্মতি পেয়ে খুশিতে ধড়ে প্রান ফিরে পায় অভি। বড়মায়ের হাত দুটো ধরে কোলের মধ্যে মাথা গুঁজে বলে, “তুমি পৃথিবীর সব থেকে ভালো মা।”
দীপাদেবী হেসে ফেলেন এই কথা শুনে, “সব ছেলের কাছে তাদের মা অনন্যা হয় রে বাবা।”
অভি মাথা নাড়ায়, “বাকিদের কথা কি করে জানবো, আমার এই একটাই মা।”
ছেলের এই কথা শুনে স্নেহ ভরা এক কান্না গলার কাছে দলা পাকিয়ে উঠে আসে, “আমার দুষ্টু ছেলে।” একটু নাক টেনে কান্না সামলে নিজেকে সামলে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে সবাধান করে বলেন, “মডার্ন হওয়া ভালো, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলা ভালো তবে এমন কিছু করা একদম ভালো নয় যাতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ছোট বলে মনে হয়, সেটা মনে রাখিস।”
এই কথার তাৎপর্য ঠিক বুঝতে পারল না অভি, তাই অবাক চোখে হাজার প্রশ্ন নিয়ে বড়মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। বড়মা ওর কান টেনে একটু মিঠে একটু গম্ভীর কণ্ঠে বলেন, “আমি কিছু বলিনা বলে এই নয় যে আমি অন্ধ অথবা কানে শুনতে পাই না। শয়তান ছেলে, এইখানে বসে তোর ঘরের সব কিছু শোনা যায়, বুঝেছিস। খুব বাঁদর হয়ে গেছিস, তাই না?”
বড়মায়ের কথা শুনে লজ্জায় কোথাও লুকিয়ে যেতে পারলে বাঁচে। মুখ লুকাতে কোলের মধ্যে মাথা গুঁজে মাথা নাড়িয়ে জানিয়ে দেয়, একদম না।
ছেলের পিঠের ওপর ছোট কিল মেরে বলেন, “হ্যাঁ, অনেক হয়েছে, আর লজ্জা পেতে হবে না, আমার দুষ্টু বাঁদর একটা।” অভি জল ভরা চোখে একটু হাসি নিয়ে বড়মার দিকে তাকায়। দীপাদেবী ওকে বলেন, “তোর দিদিকে বেশ সুন্দর সাজিয়েছে, কি বল।” অভিও একটা লাজুক হাসি হেসে মাথা দোলায়, হ্যাঁ। দীপাদেবী ওকে জিজ্ঞেস করেন, “লেখার সাথে এই ব্যাপারে কিছু কথা বলেছিস কি?”
অভি প্রশ্ন করে, “কি ব্যাপারে?”
দীপাদেবী উত্তর দেন, “দময়ন্তী তিনদিন এসে, তোর দিদিকে এত সুন্দর করে সাজিয়ে গেল, তার একটা পারিশ্রমিক নেই?”
অভি মাথা দোলায়, “হ্যাঁ, কিন্তু আমি ত ভেবেছিলাম যে এই ব্যাপারটা লেখা দেখবে।”
ওর হাতে একটা সাদা খাম ধরিয়ে বলেন, “লেখা কি করবে না করবে সেটা জানি না। তবে মনামি এটা দিয়েছে। এটা কাল সকালে ওকে দিয়ে দিস।”
অভি বড়মায়ের হাত দুটো ধরে, আদর করে নাকমুখ ঘসে বলে, “কাল সকালে তুমি না হয় নিজে হাতে দিয়ে দিও।”
দীপাদেবী ছেলের চুলে বিলি কেটে মিষ্টি হেসে বলেন, “আচ্ছা বাবা তাই হবে, আর কাল সকালে তোর পাপার সামনে একটু সাবধানে চলাফেরা করিস।”
অভি মাথা নাড়িয়ে হেসে ফেলে, “আমি পাগল নাকি? অতটা বোকা আমি নই।”
অভির কান ভীষণ জোরে মুলে দিয়ে হেসে বলেন, “আমার ছেলে কি আর বোকা হতে পারে নাকি? শুধু একটু বেশি আবেগপ্রবণ।” একটু থেমে প্রশ্ন করেন, “আচ্ছা আমাকে একটা সত্যি কথা বলবি?”
অভি মাথা দোলায়, “কি কথা?”
দীপাদেবী ছেলেকে জিজ্ঞেস করেন, “আচ্ছা, তুই আশীর্বাদের আগের দিন শিতাভ্রকে কি বলেছিলি বল’ত?”
এই বাড়ি ছেড়ে, ওকে ছেড়ে ওর দিদিভাই চিরদিনের জন্য চলে যাবে সেই আবেগের বশে সেদিন একটু বেশিই বলে ফেলেছিল। অভি একটু লজ্জা পেয়ে বলে, “ছাড়ো না ওইসব কথা।”
দীপাদেবী অভিকে বুঝিয়ে বলেন, “দ্যাখ বাবা, মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে তারা শ্বশুর বাড়ির লোক হয়ে যায়। আমি জানি না তুই সেদিন কি বলেছিলিস, কিন্তু যেভাবে মনামি তোকে থাপ্পড় মারল তাতেই আমি বুঝে গিয়েছিলাম যে তুই একটা কান্ড ঘটিয়ে এসেছিস।” অভি বড়মায়ের কথা শুনে মাথা নিচু করে নেয়। দীপাদেবী আরো বলেন, “বিয়ের পর মেয়েদের মুখে যদি সব সময়ে বাপের বাড়ির কথা ওঠে তাহলে সেটা বৈবাহিক জীবনে খুব খারাপ ভাবেই প্রভাব পরে। প্রথম প্রথম হয়ত মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে স্বামীরা কিন্তু পরবর্তী কালে যদি এই জিনিস বারবার ঘটে তাহলে বৈবাহিক জীবনে চিড় ধরে যায়।”
অভি এই কথার তাৎপর্য ঠিক বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করে, “তুমি সোজা সুজি বল কি বলতে চাইছ?”
দীপাদেবী বলেন, “মনামি এর পরের মঙ্গলবার দিল্লী চলে যাবে, এর মাঝে তুই কিন্তু একদিনের জন্যেও ওই বাড়িতে যাবি না। যদি মনামি ফোন করে ডাকে তাহলে কোন কাজের ছুতো দিয়ে দিবি। মঙ্গলবারের দিনে এয়ারপোরটেই যেন দেখা হয়।”
বেদনা ঢাকতে চোয়াল শক্ত করে ঢোক গিলে নিল ব্যাথাটা। দিদিভাইয়ের ডাক আজ পর্যন্ত এইভাবে কোনদিন উপেক্ষা করেনি, যেখানেই থেকেছে, যখন ডেকেছে তখন সব কাজ ফেলে দৌড়ে এসেছে। এক অজানা কোন মানুষ আজকে ওর দিদিভাইকে কত দূরে করে দিল। বড় করুন সুর বেজে ওঠে ওর বুকের মধ্যে তাও বড়মায়ের সাবধান বানীর তাৎপর্য বুঝেই কাজ করবে।
মাথা দোলায় অভি, “পারতপক্ষে তুমি বলতে চাইছ যে এই কয়দিন আমি দিদিভাইকে এড়িয়ে চলব?”
দীপাদেবী করুন কণ্ঠে বলেন, “তুই বাবা, বুঝিস না কেন বল’ত?”
বড়মায়ের হাত ধরে বলে, “আমার ত শুধু দিদিভাই, তোমার ব্যাথা করবে না?”
চোখের কোল মুছে দীপাদেবী বলেন, “এটাই যে ভাগ্য রে, এটাই মেয়েদের কপালে লিখন। এক সুস্থ সংসার করতে হলে, অনেক কিছুই ছাড়তে হয়, অনেক কিছু মেনে নিতে হয়। এই নিয়ে মনামির জন্য বড্ড চিন্তা হয় জানিস। তুই যেমন একটু ইমোশানাল আবেগপ্রবন, তেমনি মনামি প্রচন্ড ভাবুক আর নিজের ছোট গন্ডি নিয়েই থাকে।”
অভি বড়মাকে স্বান্তনা দিয়ে বলে, “তুমি এত চিন্তা কর না, দিদিভাই ঠিক হয়ে যাবে, না হলে শিতাভ্রদা ঠিক করে নেবে।”
দীপাদেবী একটা চিন্তামগ্ন হাসি দিয়ে বলেন, “ভালো হলেই ভালো রে। এমএসসি করার পর চাকরি করলে ভালো করত, একটু বাইরের জীবন সম্পর্কে জ্ঞান বুদ্ধি হত। তা না, মায়ের হাতের ভাত খাওয়া চাই, ভাইয়ের কাছে থাকা চাই।” বলেই একটু হেসে ফেলেন, “তোদের দুটো কে সামলাতে সামলাতে, আমার বড়টা যে কখন নিজে নিজেই বড় হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না রে।” আঁচল দিয়ে চোখের কোনা মুছে স্মিত হেসে বলেন, “যেদিন ওর জন্য বিয়ের সম্বন্ধ এলো সেদিন বুঝতে পারলাম যে আমার বড় মেয়ে বড় হয়ে গেছে।”
বড়মায়ের শেষ বাক্যটা অভির বুকে শক্তিশেলের মতন বাঁধে। ছোটবেলা থেকেই বড়দির মধ্যে একটা বড় বড় ভাব ছিল, আজ বুঝতে পারল যে কেন বড়দির মধ্যে সেই বড় ভাবটা এসেছিল। বড়দির এই ত্যাগ কথা জানতে পেরে ভীষণ দুঃখ পেল অভি। ছোট বেলার দিন আর ফিরে আসবে না, খুব ইচ্ছে করছে ছোট হয়ে একবার বড়দির কাছে আবার যেতে, আবার “গুষ্টির পিন্ডি” খেতে, এবারে রাগ করবে না, এবারে শান্ত ছেলে, বাধ্য ছেলে হয়েই বড়দির হাত থেকে খাবে।
বেশ কিছুক্ষন চুপ থাকার পর, দীপাদেবী অভির মাথায় গালে হাত বুলিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, “নে, অনেক রাত হয়েছে এবারে ঘুমাতে যা। এই আবার ভোরবেলা উঠতে হবে, সকাল থেকেই দৌড়াদৌড়ি আছে কিন্তু। মহেশ কটায় গাড়ি নিয়ে আসবে?”
অভি ও একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উত্তর দিল, “মহেশদা আট’টা নাগাদ গাড়ি নিয়ে চলে আসবে।”
বড়মা চলে যাওয়ার পর, বিছানা ছেড়ে উঠে পরল। চারটে বাজে, এখন ঘুমিয়ে আর কি হবে, আর এক ঘন্টা পরেই পাপা উঠে পড়বেন। সকাল সকাল ঋগবেদের মন্ত্র উচ্চারণ করতে শুরু করবেন, “ওম মধুবাতাঃ ঋতায়তে মধুঃ ক্সরন্তি সিন্ধবহঃ, মাধ্বীর নহঃ সন্তোষদিহঃ মধুনাক্তম উতোঃ শশী...” অনেক ছোটবেলায় পাপা বেশ কয়েক বার এই মন্ত্রের অর্থ বুঝিয়েছিলেন। ছোট বেলায় পাপার চাপে পড়ে সকাল সকাল উঠে মন্ত্র জপতে হত ওকে। দিদিভাই খুব হাসাহাসি করত, বলত অভি নাকি বড় হয়ে পইতে গলায় ঝুলিয়ে পাড়ার কালী মন্দিরের পূজারী হবে। একটু বড় হওয়ার পর বড়মা বলেন যে ছেলেকে অত মন্ত্র তন্ত্র শিখাতে হবে না, সকালে উঠে একটু পড়াশুনা করুক। তারপর আর কোনদিন অভিকে মন্ত্রপাঠ করতে হয়নি। পাপা অনেকবার ওকে বলেছে, ঋগবেদ পড়তে, উপনিষদ পড়তে। অনেকবার বুঝিয়েছেন যে বেদ উপনিষদ গুলোকে ধর্ম গ্রন্থ হিসাবে না পড়ে জীবন দর্শন হিসাবে পড়তে। অভি কোন না কোন ছুতো দিয়ে প্রত্যেক বার পালিয়ে যেত।
প্রেম করার সব থেকে বড় সম্মতি বড় মায়ের কাছ থেকে পাওয়া গেছে ভেবেই মন নেচে উঠল, এবারে আর দেখে কে। ওর ঘরে, ওর বিছানায়, ওর লেপের তলায় দিয়া ঘুমিয়ে আছে এটা ভাবতেই শরীরের সকল ধমনী বেয়ে একটা উষ্ণ ধারা বয়ে গেল। উচ্ছল গোলগাল সুন্দরীর কথা ভাবতেই মনে মনে একটু শয়তানি করার ইচ্ছে জেগে ওঠে, একবার দরজা ধাক্কা দিয়ে দেখবে নাকি, খোলা না বন্ধ? শেষ পর্যন্ত কি পরে ঘুমালো? রাতে থাকার কথা ছিল না, সুতরাং জামা কাপড় কিছুই আনেনি, শেষ পর্যন্ত কি নিজের জিনস আর টপটা পরেই শুয়েছে নাকি? না কি ওর কোন একটা শারট অথবা টিশার্ট পড়েছে। ওর পায়জামা দিয়ার হবে না, সুতরাং কোন পায়জামা অথবা বারমুডা হয়ত পড়বে না। এতক্ষনে নিশ্চয় কোন গ্রে সাইড জেগে উঠেছে সুন্দরী চপলা লাস্যময়ী দিয়ার মধ্যে। গাড়ির মধ্যে দিয়ার মাথার ওপর গাল চেপে বসে থাকার সময়ে ভীষণ ইচ্ছে করছিল একবার অন্তত মাথায় চুমু খায়। যে ভাবে দিয়া পা বাড়িয়েছিল ওর দিকে তাতে একটা চুম্বুনে কিছু হত না, হয়ত উজাড় করে দিত নিজেকে। ঠিক যেভাবে সেই বর্ষার রাতে লেখা নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিল অভির কঠিন বাহুপাশে, তীব্র বিষাক্ত চুম্বনের রসে মাতাল হয়ে উঠেছিল অভি। শুধু মাত্র ওই লাল মিষ্টি অধর সুধাই পান করতে চেয়েছিল, কিন্তু নিশপিশ করা আঙ্গুল গুলো বাধ মানেনি, লেখার নিতম্বের খাঁজে লুকিয়ে লুকিয়ে চোরাপথে সেই গোপন অঙ্গের ওপর চলে গিয়েছিল। ছিঃ লেখার বিষয়ে এমন ভাবা ঠিক নয়। এখন শুধু মাত্র দিয়া, দময়ন্তীকেই ওর চাই। মুচকি হেসে ঘরের দরজায় টোকা মারতে বুঝতে পারল যে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। বিফল মনোরথ হয়েই ছাদে উঠে গেল সিগারেট খেতে। শীতকাল, সুতরাং পূবের আকাশে আলো ফুটতে অনেক দেরি। সেই আকাশে কি রঙ ধরবে সঠিক জানা নেই অভিনন্দনের, তবে যাই রঙ ধরুক হুঁশিয়ার কাণ্ডারির মতন শক্ত হাতে চিরজীবন সেই দাঁড় ধরে থাকবে।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: চোরাবালি (কালেক্টেড) - by ddey333 - 11-09-2020, 03:03 PM



Users browsing this thread: 12 Guest(s)