Thread Rating:
  • 24 Vote(s) - 3.17 Average
  • 1
  • 2
  • 3
  • 4
  • 5
চোরাবালি (কালেক্টেড)
#95
পর্ব চার। অনুভূতি (#5-#23)
অভিদের বাড়ির আত্মীয় যারা নিজের নিজের গাড়িতে এসেছিল, তারা এক এক করে খাওয়া দাওয়া সেরে বিদায় নিয়ে নেয়। রাত বাড়ে সেই সাথে অতিথি আত্মীয়দের সংখ্যা এক এক করে কমে আসে। বিয়ের বাড়িতে শুধু মাত্র বাড়ির লোক। এর মাঝে কখন দেবাশিস বাবু চলে গেছেন খেয়াল নেই। অদুরে দাঁড়িয়ে দেবী লেখা দিয়া আর ঝন্টুর জটলা। অন্যপাশে দিদিভাইকে ঘিরে বড়মা বড়দি নিলাদ্রি জামাইবাবু আর শিতাভ্র। ওদের ও খাওয়া শেষ করে নেওয়া উচিত, তাই বাড়ির সবাইকে অনুরোধ করে খাওয়া সেরে নিতে। খাওয়া শেষে বাড়ির সবার একসাথে জটলা। বিদায়ের পালা, সবার চোখেই একটু জল, ঠোঁটে একটু ম্লান মিষ্টি হাসি। এর মাঝে দিয়া কখন অভির পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে সেটা ওর খেয়াল নেই। ঘড়ির দেখে অভি, রাত এগারোটা, এবারে বিদায় নেওয়া উচিত না হলে বাড়ি পৌঁছাতে অনেক রাত হয়ে যাবে। এক এক করে যে যে গাড়িতে এসেছিল সেই গাড়িতে উঠে বসে।
দিয়া অভির সুট একটু টেনে নিজের দিকে নজর টেনে জিজ্ঞেস করে, “তুমি আমাকে পৌঁছে দেবে’ত।”
অভি মাথা দোলায়, “হুম।”
লেখা মুচকি হেসে ওদের কাছে এসে বলে, “সাবধানে যাস আর পৌঁছে একটা ফোন করে দিস।”
দিয়াও মাথা দোলায়, “আচ্ছা করে দেব।”
এর মাঝে দেবী অভির কাছে এসে বলে, “দাদাভাই, আমি কার সাথে যাবো?”
হেসে ফেলে অভি, “তুই আমার সাথে যাবি।”
ডিসেম্বরের শীত, রাত অনেক, ঠান্ডাটা বেশ জাঁকিয়ে পড়েছে এই সোনারপুর এলাকায়। দেবী ইতিমধ্যে একটা ব্যাগ থেকে একটা লম্বা লাল রঙের ওভার কোট গায়ে চড়িয়ে নেয়। অভি ওকে দেখে স্মিত হেসে ফেলে, মেয়েটা আজকে শুধু লাল রঙ্গেই সেজেছে। ওয়াগন-আর এর পেছনের সিটে দেবী আর দিয়া উঠে পড়ল।
মনামি তখন বাইরে দাঁড়িয়ে পাশে শিতাভ্র। দিদিভাই আর শিতাভ্রের কাছে গিয়ে দুজনকে জড়িয়ে ধরে বলে, “ভালো থাকিস, আসছি রে।”
বেশি কথা বলার মতন শক্তি ছিল না ওর। পেছনে না তাকিয়ে গাড়ির সামনের সিটে বসে পড়ল। অন্ধকার শীতকালের রাত কেটে হুহু করে গাড়ি ছেড়ে দিল। গাড়ির ভেতরটা ভীষণ নিস্তব্ধ। জানালা বন্ধ থাকা সত্ত্বেও গাড়ির ভেতরটা ভীষণ শীতল মনে হল। দেবী দুই কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনতে মগ্ন। ঠান্ডায় দিয়া একটু কুঁকড়ে চোখ বুজে চুপচাপ বসে। অভি নিজের চিন্তায় মগ্ন। ওর জীবনে নারীর সানিদ্ধ্য যে আসেনি সেটা নয়, খরগপুরে থাকাকালীন অথবা জোকাতে পড়াকালীন অনেকে বান্ধবী ছিল, তবে কারুর সাথে ভালোবাসা করার ইচ্ছেটা জাগেনি। বন্ধু বান্ধবী হই হুল্লোড় এতেই সীমিত। ওর জীবনের পরিধি খুব সীমিত, বড়মা আর দিদিভাই, এই দুইজন ছাড়া ওর ছোট্ট গণ্ডীর ভেতরে আজ পর্যন্ত কাউকে প্রবেশ করতে দেয়নি। তবে এই আঁধার রাতে, পেছনে বসা চাপা রঙের মেয়েটার ভাসা ভাসা নীলচে চোখের সরোবরে এই প্রথমবার ডুব দেওয়ার ইচ্ছেটা প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছে।
রাত দেড়টা নাগাদ, দেবীকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে গাড়ি আবার চলতে শুরু করে দেয়। অভি সামনে থেকে পেছনের সিটে এসে দিয়ার পাশে বসে। অন্ধকার গাড়ি, সিটের একপাশে অভি অন্য পাশে দিয়া, মাঝেখানের ব্যাবধান প্রচুর।
অভি গলা খ্যাঁকরে দিয়াকে জিজ্ঞেস করে, “ঠান্ডা লাগছে নাকি?”
দিয়া মাথা নাড়ায়, “না, ঠিক আছে।” হ্যাঁ, ঠান্ডা একটু লাগছে বটে তবে সেটা বাইরের ঠান্ডার জন্য নয়, ভীষণ ভাবেই ভারাক্রান্ত ওর বুকটা।
অভি ওর পাশে সরে আসতেই কেঁপে ওঠে দিয়ার কমনীয় দেহ পল্লব। নিজের গায়ের কোট খুলে দিয়ার কাঁধে জড়িয়ে দিয়ে নরম গলায় বলে, “কাঁপছ দেখি।”
কাঁধে হাত পড়তেই আলতো ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “তাতে তোমার কি যায় আসে।”
বলতে যাচ্ছিল, অনেক কিছুই যায় আসে, বুঝবে না। সত্যি কি বললে বুঝবে দিয়া? গম্ভীর গলায় আদেশের সুরে বলে, “বেশি তেজ না দেখিয়ে গায়ে জড়িয়ে নাও।”
আদেশ অমান্য করতে অক্ষম হয়ে পরে দিয়া। মনে হয় যেন এই ছেলেটা ওকে আদেশ দেওয়ার জন্যেই জন্মেছে। কোট খানি গায়ে জড়িয়ে পাশ ঘেঁসে জড়সড় হয়ে বসে। আধো আলো আঁধারে ছলছল চোখে অভির দিকে মুখ তুলে তাকায়। নরম পাতলা ঠোঁট জোড়া তিরতির করে কেঁপে ওঠে। অভির মুখ ওর মুখের খুব কাছে, ওর সারা মুখ মন্ডল ভেসে যায় অভির উষ্ণ শ্বাসের ঢেউয়ে।
অভি নরম গলায় বলে, “বারাসাত পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেক রাত হয়ে যাবে, এত রাতে বাড়ি না গেলেই কি নয়?”
দিয়া উত্তর দেয়, “মা চিন্তা করবে।”
অভি বলে, “ফোন করে দাও যে যাবে না।”
দিয়া ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, “কোথায় যাবো তাহলে?”
অভি উত্তর দেয়, “আমার বাড়িতে চল।”
দিয়া অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, “তোমার বাড়ির লোক কিছু বলবে না?”
অভি মাথা নাড়ায়, “না, সেটা আমার ওপর ছেড়ে দাও। বারাসাত পৌঁছাতে পৌঁছাতে আড়াইটে তিনটে হতে পারে, অত রাতে তোমাকে ছাড়তে পারছি না।”
দিয়ার বুক চেঁচিয়ে ওঠে, কেন পার না, আমার জন্য এত চিন্তা কিসের? আমি’ত তোমার কেউ নয়। নিচু গলায় ছোট এক উত্তর দেয়, “আচ্ছা।”
অভির ভেতরটা ককিয়ে ওঠে, একদিকে যেমন জানে এই সম্পর্কের সুস্থ সুরাহা নেই ঠিক তেমনি এই সুন্দরী ললনার ছলছল চোখের ভাষা ওর পক্ষে সহ্য করা ভীষণ কঠিন। দাঁতে দাঁত পিষে উত্তাল চিন্তা ধারা দমিয়ে দিয়াকে নরম করেই প্রশ্ন করে, “খুব টায়ার্ড লাগছে নাকি?”
পোড়া কপাল, কি যে বলে না ছেলেটা, সত্যি। দিয়া মাথা নাড়িয়ে হেসে বলে, “না না, একদম নয়।” এই ভাবে পাশে বসে থাকলে সব ক্লান্তি ভুলে থাকতে পারে।
অভি কিছুক্ষন চুপচাপ বসে থাকে আর ভাবে, কি করবে, ভীষণ ইচ্ছে করছে এই মেয়েটার প্রেমে পড়তে, কিন্তু সেই সাথে খুব বাধো বাধো ঠেকছে এই ভেবে যে হয়ত বড়মা মেনে নিতে পারবে না দিয়াকে, হয়ত ওদের এই প্রেম কোনদিন সাফল্যের সকাল দেখতে পাবে না। প্রেমের আগুনে ঝাঁপ দেওয়ার পর সেখান থেকে চুপিচুপি সরে এসে কারুর হৃদয় ভাঙ্গার মতন পাপ, জীবনের সব থেকে বড় পাপ। কিছু কথা ঠিক সময়ে উচিত জায়গায় না বলতে পারলে চিরজীবন সেই ভুলের মাশুল বয়ে বেড়াতে হয়। দিয়াকে পরিষ্কার করে না হলেও একটু আভাস দেওয়া উচিত যে দিয়া যেটা চাইছে সেটা দিতে অভি অক্ষম।
বেশ কিছুক্ষন চুপ থাকার পর অভি দিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে, “দিয়া।”
দিয়া একটা ঘোরের মধ্যে ছিল, তাই আনমনা হয়েই উত্তর দেয়, “হুম”
অভি, “আমার জীবনের পরিধি খুব ছোট।”
দিয়া ঠিক বুঝতে পারে না কি কারনে হটাত করেই অভি এই কথা গুলো ওকে বলছে, তাই হাজার প্রশ্ন নিয়েই অভির দিকে তাকায়।
অভি বলে, “বড়মা আর দিদিভাই, এই আমার জীবনের সব।”
বুক কেঁপে ওঠে দিয়ার, তোমার এই বুকের কোন এক কোনায় কি সত্যি আমার জন্য কোন জায়গা হবে না। দিয়া অভির চোখের দিকে নিস্পলক নয়নে তাকিয়ে থাকে।
বুক ভরে একটা শ্বাস নিয়ে অভি বলে, “আমি কারুর চোখে জল দেখতে পারি না, দিয়া।”
না, ওর কপালে হয়ত প্রেম নেই। ভালোবাসা জিনিসটা অনেক দামী মনে হল। দিয়ার চোখ জোড়া ছলকে ওঠে, চোয়াল চেপে কোটের তলায় হাত মুঠো করে চোখের জল আয়ত্তে নিয়ে এসে ঠোঁটে এক হাসি মাখিয়ে নেয়, “আমি কাঁদছি না’ত।”
অভি একটু হেসে ওর দিকে হাত বাড়িয়ে বলে, “তাহলে ফ্রেন্ডস, বন্ধু হবে?”
দিয়া শক্ত করে অভির হাতটা ধরে হৃদয় উজাড় করে বলে, “হ্যাঁ, চিরজীবন।”
অভি একটু হেসে বলে, “তোমার চোখ জোড়া কিন্তু অন্য কথা বলছে।”
হায় রে, কি যে ভাষা বোঝে। বুকের মধ্যে এক সুর বেজে ওঠে, না বলে এসেছি, তা বলে ভেবোনা, না বলে বিদায় নেবো, চলে যাই যদি, যেন হই নদী, সাগরে হারিয়ে যাবো। রসিতকতা করে মিষ্টি হেসে প্রশ্ন করে, “আচ্ছা বাবা, কি বলছে আমার চোখ?”
এই চোখের ভাষা ওর অজানা নয়, প্রহর শেষে আলোয় রাঙ্গা, সেদিন চৈত্র মাস, তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ। অভি হেসে ফেলে, “তুমি ভীষণ দুষ্টু মেয়ে।”
দিয়াও খিলখিল করে হেসে ফেলে, “কি এমন দুষ্টুমি দেখলে বল’ত?”
এই মেয়টার দুষ্টুমি দেখতে ভীষণ ইচ্ছে করছে, কিন্তু সেটা কি আর মুখ ফুটে বলতে পারে? মাথা চুলকে উত্তর দেয়, “না মানে তেমন কিছু নয়।”
ঠোঁটে একটা দুষ্টুমি ভরা হাসি মাখিয়ে বলে, “লেখাও কিন্তু কম দুষ্টু নয়, জানো।”
লেখার কথা এখানে কেন উঠছে, তাও উতসুক হয়েই প্রশ্ন করে, “কেমন দুষ্টু? ওকে ত খুব শান্ত স্বভাবের জানি।”
দিয়া খিলখিল করে হেসে ফেলে, “না না, সেই রকমের দুষ্টু নয় রে বাবা।” গলা নামিয়ে ফিসফিস করে বলে, “একটা গ্রে সাইড (ধুসর এলাকা) বলে সবার মধ্যে একটা কিছু থাকে, বুঝেছ।” বলেই চোখ টিপে হেসে ফেলে।
বর্ষার রাতে, খালি ছাদের ওপর, লেখার সুমিষ্ট অধর সুধার কথা মনে পড়তেই অভির গায়ের রক্ত চনমন করে ওঠে। সেদিন আর একটু হলেই পা পিছলে যেত অভির। অভি ভীষণ ভাবেই কৌতূহলী হয়ে ওঠে, “কি রকম গ্রে সাইড, একটু জানতে পারি কি?”
দিয়া মুচকি হেসে বলে, “সব কথা জানতে নেই, বুঝলেন মিস্টার চ্যাটারজি।”
অভিও হেসে ফেলে, “আচ্ছা বাবা, সেটা বুঝলাম যে সবার মধ্যে একটা গ্রে সাইড আছে। তারমানে তোমার মধ্যেও একটা গ্রে সাইড আছে।”
গাড়ির মধ্যে এতক্ষন যে ঠান্ডা ভাবটা ছিল সেটা কেটে গিয়ে একটা মনোরম উষ্ণ পরিবেশে পরিনত হয়ে যায়। অভির কথা শুনে দিয়ার কান গাল লজ্জায় লাল হয়ে যায়। অন্ধকার গাড়ির মধ্যেও এই গালের লালিমা অভির চোখে ধরা পরে যায়। দিয়া মুখ ঘুরিয়ে ফিক করে হেসে বলে, “তুমি বড্ড শয়তান ছেলে।”
দিয়ার কাঁধে নিজের কাঁধ দিয়ে আলতো ধাক্কা মেরে উত্তর দেয়, “একটা গ্রে সাইড কিন্তু আমারও আছে।” বলে কানের কাছে মুখ এনে বলে, “শুনবে নাকি?”
অভির গরম শ্বাস কানের লতির ওপর পড়তেই দিয়া চোখ বন্ধ করে নেয়, কি ভীষণ শয়তান। গলা থেকে এক চাপা মিষ্টি চিৎকার বেড়িয়ে আসে, “নাআআআ...” বলেই অভির বাজুতে একটা কিল মারে।
অভি বাম হাতটা দিয়ার পিঠের পেছন দিয়ে বাড়িয়ে দেয়। দিয়ার কোমল কমনীয় দেহটা সরে আসে অভির পাশে। কাঁধের ওপরে মাথা এলিয়ে দেয় দিয়া, কেমন যেন আপনা হতেই হয়ে যায় এটা। অভি গাল চেপে ধরে দিয়ার মাথার ওপরে, নিজেকে ধরে রাখা সত্যি অসম্ভব। সারাদিনের খাটাখাটুনির পর গায়ের এক ম্যাজম্যাজানির গন্ধ তার সাথে মিশে মিষ্টি কোন সুবাস, অভিকে মাতাল করে তোলে। বাকিটা রাস্তা দুইজনেই ভীষণ চুপচাপ, শুধু মাত্র এই ক্ষনিকের ছোঁয়ায় নিজেদের ভিজিয়ে নেয় দুই প্রান।
গাড়ি বাড়ির সামনে না দাঁড়ানো পর্যন্ত দুইজনেই চুপচাপ নিজেদের মধ্যেই বিলীন হয়েছিল। গাড়িটা দাঁড়াতেই অভির খেয়াল হয় যে বাড়ি এসে গেছে, এবং দিয়া প্রায় ওর বুকের ওপর সেঁধিয়ে।
দিয়া কাঁধে ধরে আলতো ঝাঁকিয়ে বলে, “বাড়ি পৌঁছে গেছি।”
আলিস্যি ভরা নয়ন মেলে অভির দিকে ম্লান সুরে বলে, “এত্ত তাড়াতাড়ি?”
অভি হেসে ফেলে, “হুম।” গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলে, “কাল আবার তাড়াতাড়ি ওঠার আছে।”
দিয়া প্রশ্ন করে, “কেন?”
দিয়ার ব্যাগ হাতে বাড়ির মধ্যে ঢুকতে ঢুকতে উত্তর দেয়, “কাল দুপুরে বড়দির ফ্লাইট, মুম্বাই চলে যাবে।”
দিয়ার মুখটা একটু শুকনো হয়ে গেল, “বাড়িটা একদম খালি হয়ে যাবে, তাই না।”
ম্লান হেসে উত্তর দেয় অভি, “হুম।”
বাড়ির একটা চাবি ওর পকেটে ছিল, সেটা দিয়ে দরজা খুলতে যাবে, ঠিক সেই সময়ে দীপাদেবী দরজা খুলে বলেন, “এসে গেছিস?” পেছনে দিয়াকে দেখে একটু হাসেন, “ওহ, তুমিও এসেছ? এত রাতে না গিয়ে ভালোই করেছ।”
অভি ঘরে ঢুকে বড়মাকে প্রশ্ন করে, “তুমি এখন ঘুমাওনি?”
ছেলের দিকে তাকিয়ে হেসে বলেন, “তুই এখন আসিসনি তাই ঘুম আসেনি।”
অভি প্রশ্ন করে, “বড়দি ঘুমিয়ে পড়েছে?”
দীপাদেবী উত্তর দেন, “হ্যাঁ, কাল আবার সকাল সকাল ওঠার আছে।” দিয়ার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলেন, “যাও শুয়ে পর, অনেক ধকল গেল।” অভিকে বলে, “তুই একটা কম্বল নিয়ে সোফায় শুয়ে যাস তাহলে।”
অভি মাথা দোলায়, “হ্যাঁ রে বাবা, তুমি এখন শুতে যাও।”
অভি, দিয়াকে নিজের ঘরে নিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে পরে। দিয়া চারপাশ তাকিয়ে দেখে, এই প্রথম বার এই ঘরে ঢুকেছে। দেয়াল ঘেঁসে বেশ বড়সড় বক্স খাট, একপাশে একটা টেবিলে ল্যাপটপ, বই ইত্যাদি রাখা। একদিকের দেয়াল জুড়ে বেশ বড় একটা আলমারি। টেবিলের তলায় চোখ যেতেই হাসি পায়, এস্ট্রে ভর্তি সিগারেট। কত সিগারেট খায় রে বাবা।
গায়ের থেকে কোট খুলে অভির হাতে দিয়ে জিজ্ঞেস করে, “বাথরুমটা কোথায়?”
দিয়াকে বাথরুমটা দেখিয়ে বলে, “তুমি ফ্রেস হয়ে শুয়ে পর তাহলে।”
দিয়া মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে, “তুমি সোফায় শোবে?”
অভি উত্তর দেয়, “হ্যাঁ, আর কোথায় শোব?”
দিয়া কয়েকপা ওর দিকে এগিয়ে এসে বলে, “আমার জন্য তোমার খুব কষ্ট হল, তাই না।”
আলমারি থেকে নিজের জন্য একটা বারমুডা আর গেঞ্জি বার করতে করতে হেসে বলে, “বহুত কষ্ট মাইরি, কি বলব।”
দিয়াও হেসে ফেলে অভির রসিকতা শুনে। স্তব্ধ ঘরের দেয়ালে সেই হাসির কল্লোল প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে অভির কানে। দিয়া হাসি থামিয়ে নিচু গলায় জিজ্ঞেস করে, “শাড়ি পরে শোয়াটা একটু কষ্টকর, তোমার দিদির কোন নাইটি নেই?”
অভি দিয়ার দিকে ঝুঁকে মস্করা করে বলে, “দরজা বন্ধ করে, কাপড় জামা খুলে লেপের তলায় ঢুকে পর, কেউ দেখতে আসবে না তোমার গ্রে সাইড।” বলেই হিহি করে হেসে ফেলে।
কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে অভির বাজুতে একটা ছোট কিল মেরে বলে, “ধ্যাত, শয়তান ছেলে, খুব মারব কিন্তু, যাও বেড়িয়ে যাও।”
অভি আলমারি দেখিয়ে বলে, “ওই যে আমার আলমারি, যা ইচ্ছে হয় পরে নিও।”
দিয়া আরো রেগে যায়, “ধ্যাত, আমি তোমার জামা কাপড় কি করে পরব?”
অভি মনে মনে বলে, একদিন তোমাকে আমার জামা পড়িয়েই ছাড়বো। রসিকতা করে উত্তর দেয়, “দেখিয়ে দেবো নাকি?” দিয়া ভুরু কুঁচকে প্রশ্ন করে, কি ভাবে? অভি বলে, “শাড়িটা খুলবে, তারপরে ব্লাউজটা খুলবে...”
দিয়া লজ্জায় লাল হয়ে যায় সেই সাথে একটু রেগে যায়, এই রাগ ঠিক ক্রোধ নয় এটা অনুরাগের প্রথম বসন্তরাগ। চাপা চেঁচিয়ে ওঠে অভির দিকে, “বের হও এখুনি।”
অভি হাসতে হাসতে কম্বল আর নিজের জামা কাপড় নিয়ে ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে আসে। বসার ঘরে পা রাখতেই চমকে ওঠে। বড়মা সোফায় বসে ওর ঘরের খোলা দরজার দিকে একভাবে তাকিয়ে। বড়মাকে দেখেই ওর শিরদাঁড়া বেয়ে এক হিমশীতল ধারা বয়ে যায়।
[+] 1 user Likes ddey333's post
Like Reply


Messages In This Thread
RE: চোরাবালি (কালেক্টেড) - by ddey333 - 11-09-2020, 12:25 PM



Users browsing this thread: 4 Guest(s)