10-09-2020, 06:18 PM
৫
(আগের পর্বের পর)
কি গো? সারারাত এখানেই ঘুমিয়ে ছিলে?
শ্রীপর্ণার ডাকে ঘুমটা ভেঙে গেলো অতনু বাবুর. পেছনে ফিরে চাইলেন অর্কর মা রাগী চোখে তার দিকে তাকিয়ে.
এই জন্য বলেছিলাম হয়ে গেলে টিভি নিভিয়ে শুতে চলে এসো কিন্তু কে শোনে কার কথা? এই তুমি আর তোমার ছেলে দুজনেই হয়েছো একরিকম. উফফফ... যেমন ছেলে তার তেমন বাবা.
রাগে গজ গজ করতে করতে বলছিলো শ্রীপর্ণা. কিন্তু অতনু বাবুর কানে যেন সেসব কিছুই ঢুকছিলনা. বার বার রাতের দৃশ্য গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে. সেই ভয়ানক পৈশাচিক দৃশ্য গুলো. ভাবতেই কেমন শিহরণ খেলে গেলো শরীরে. তাহলে..... সবই স্বপ্ন ছিল? কিন্তু এত বাস্তবিক লাগছিলো সব..... ওনাকে কি স্বপ্নদোষ রোগে ধরলো নাকি?
উঠে দাঁড়ালেন আর দাঁড়িয়েই বুঝলেন নিম্নাঙ্গের কাছটা ভেজা ভেজা. মানে বুঝতে অসুবিধা হলোনা ওনার. স্বপ্নদোষের কারণে প্যান্টেই ওনার কামরস........ ইশ.... ছি ছি.
ওদিকে অর্কর মা টিভিটা রিমোট দিয়ে অফ করে বললেন: টিভিটাও নেভাইনি লোকটা... মানে কি বলবো... সারারাত চললো টিভিটা... মানে তোমার কি কোনো খেয়াল থাকেনা নাকি? ওতো কি রাত জেগে ফিল্ম দেখা.... ছেলেটা কি শিখবে তোমার থেকে?
মাথাটা হঠাৎ গরম হয়ে গেলো অতনু বাবুর. রাগের মাথায় বলেই ফেললেন: আহঃ.... কি তখন থেকে এত ঘ্যানর ঘ্যানর করছো...কাজ নেই নাকি আর কিছু? যত্তসব...
অবাক হয়ে গেলো শ্রীপর্ণা স্বামীর মুখে এটা শুনে. অতনু বাবু নিজেও নিজের প্রতিক্রিয়াতে অবাক হয়ে গেলেন. সামান্য কথায় এরকম হঠাৎ রেগে গেলেন কেন সেটা নিজেই বুঝলেন না. কোনোদিন নিজের স্ত্রীয়ের সাথে এরকম ভাবে কথা বলেননি তিনি. এর আগেও কতবার বৌয়ের বকুনি খেয়েছেন তবে সেটা ভালোবাসার বকুনি সেটাও তিনি জানেন. তবে আজ হঠাৎ মাথাটা কেন গরম হয়ে গেলো?
যাইহোক... পরিস্থিতি সামলানোর জন্যই নকল হাসি হেসে বললেন: ইয়ে... একটু ইয়ার্কি করলাম.. কিছু মনে কোরোনা. শ্রীপর্ণাও স্বামীর ইয়ার্কি ভেবে রাগী হাসি হেসে চলে গেলো ছেলেকে ডাকতে. অতনু বাবুও গেলেন বাথরুমে.
সকালে খুব তাড়াহুড়ো থাকে শ্রীপর্ণার. ছেলেকে ওঠানো, জল খাবার বানানো, ছেলেকে রেডি করা, স্বামীর আর ছেলের জল খাবার রেডি করা. শশুর শাশুড়িকে খেতে চা জলখাবার দেওয়া আর স্বামী অফিসে চলে যাবার পরে ছেলেকে কলেজে ছেড়ে আসা. এইসব কারণে সারা সকালটা ব্যাস্ততার মধ্যে কাটে.
সেদিনও অর্ক রেডি হচ্ছে. ওর মা ওকে জামা পরিয়ে দিচ্ছে. এমন সময় স্নান সেরে অর্কর বাবা ঘরে এলো. আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হতে লাগলো. ঠিক তখনি অর্কর মায়ের চোখ পড়লো ওর স্বামীর পিঠে.
- একি! এতটা চিড়ে গেলো কি করে!
প্রশ্ন করলো অর্কর মা. ওর প্রশ্ন শুনে অর্কর বাবা ঘুরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো: কি? কি চিড়ে গেছে গো? কোথায়? অর্কর নাকি?
শ্রীপর্ণা: না না তোমার..... ঘাড়ের কাছটা এমন লম্বা দাগ... দেখেতো নখের আঁচড় লেগেছে মনে হচ্ছে.
স্ত্রীয়ের কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে আয়নায় নিজের কাঁধের পেছন দিকটা দেখলেন উনি. সত্যি আঁচড়ের দাগ. লম্বা লম্বা. একটা নয়, তিন চারটে. এবারে লক্ষ করলেন শুধু কাঁধে নয়, বুকের কাছেও একটা আঁচড়ের দাগ.
কি করে এলো এসব? ভাবতেই হটাত ওনার চোখের সামনে ভেসে উঠলো দুটো হাত. যৌন উত্তেজনায় খামচে ধরে অতনু বাবুর কাঁধ. আর তারপরেই কি এই দাগ? কিন্তু...... কিন্তু সে কি করে সম্ভব? ওটাতো স্বপ্ন ছিল.
কি গো? কি হলো বলো? কিকরে লাগলো এমন আঁচড়?
স্ত্রীয়ের প্রশ্নে আবার হুশ ফিরলো অর্কর বাবার. তিনি পরিস্থিতি সামলানোর জন্য বললেন: আর বলোনা..... যা মশা ছিল কাল উফফফ... যেখানেই পারছে কামড়ে দিচ্ছিলো.... তাই চুলকোতে চুলকোতে মনে হয় আমারই নখের আঁচড় লেগেছে. তখন জ্বালা জ্বালা করছিলো... ওতো আর খেয়াল করিনি.
উফফফফফ... তুমি না.... ওতো মশা ছিল যখন গুড নাইট টা জ্বালাও নি কেন? মানে একবার টিভির সামনে বসলে আর উঠতে ইচ্ছে করেনা না? অলস লোক একটা. কিরে এখনও জুতো বাধিসনি? তাড়াতাড়ি কর... দেরি হয়ে যাবে.
এই শেষ কথাগুলো ছিল অর্কর জন্য. শ্রীপর্ণা আবার ছেলের কাছে চলে গেলো. অতনু বাবুও দ্রুত নিজের জামাটা পড়ে নিলেন.
স্বামী অফিসে চলে গেছে, অর্ককেও একটু আগেই কলেজে ছেড়ে দিয়ে ফিরে এসেছে শ্রীপর্ণা. তাই ও শাড়ী পাল্টে বাড়ির ম্যাক্সি পড়ে নীচে রান্না করতে চলে গেলো. রান্নায় ওর শাশুড়ি ওকে সাহায্য করে. যদিও শ্রীপর্ণা শাশুড়িকে বেশি কিচ্ছু করতে দেয় না... সব নিজেই করে.. তবু বাড়ির দুই মহিলা রান্না ঘরে গল্পটা করে. কখন সময় পার হয়ে যায় জানতেও পারেনা ওরা.
রান্না সেরে শ্রীপর্ণা তিন কাপ চা করে নিয়ে গেলো শশুরের ঘরে. দুই বয়স্ক মানুষ বসে টিভি দেখছে. অর্কর দাদু কুন্তল বাবু খবরটা দেখার জন্য বার বার স্ত্রীকে রিমোট দিতে বলছে কিন্তু এখন শাশুড়ির সিরিয়াল দেখার সময়. কিছুতেই রিমোট দেবেন না.
চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো ওনাদের বউমা. শশুর শাশুড়ি কে চা দিয়ে নিজেও শাশুড়ির পাশে বসে সিরিয়াল দেখতে লাগলো. কুন্তল বাবু আর কি করবেন... খবরের কাগজ টা একবার পড়া হয়ে গেছে... আবার পড়তে শুরু করলেন.
কা.. কা.. শব্দে এবারে বাইরের দিকে তাকালেন. বাইরের বট গাছটার ডালে অনেক গুলো কাকে বসে কা কা করে চলেছে. সকালের কথাটা মনে পড়ে গেলো.
উনি স্ত্রী বৌমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন: জানো কি হয়েছে আজ?
শ্রীপর্ণা: কি বাবা?
শশুর মশাই: আর বলোনা বৌমা...... সকালে শরীরটা একটু ভালো লাগছিলো..... তাই ভাবলাম যাই..... ছাদ থেকে হেঁটে আসি. দুদিন ছাদে যেতে পারিনি. তাই গেলাম ছাদে. ওমা.... গিয়ে তো আমি অবাক. দেখি অন্তত ৪0 টা কাক আমাদের ছাদে বসে. ওতো সকালে এত কাক দেখেছি তো আমি অবাক. কিন্তু আরও অবাক হলাম এই দেখে.... হুর হুর যা যা বলে তাড়িয়ে দিচ্ছি.... ওমা দেখি একটু দূরে গিয়ে আবার ফিরে আসছে, নইলে সরে গিয়ে বসছে. কিন্তু উড়ে পালিয়ে যাচ্ছেনা. কাকের যে এত সাহস আছে জানতাম না. শেষে আর ওদের মাঝে থাকাটা ঠিক হবেনা ভেবে ফিরে এলাম. কি কান্ড বলোতো বৌমা!
এই সব শুনে তো শাশুড়ি মায়ের ভয় চোখ বড়ো হয়ে গেলো. উনি আবার কিছু জিনিস খুব মেনে চলেন. সব শুনে তিনি ঘাবড়ে গিয়ে স্বামীকে বললেন: এসব কি বলছো কি গো? এত কাক আমাদের ছাদে বসেছিল! এত শুভ লক্ষণ নয় গো! এত খুব খারাপ ব্যাপার.
অর্কর দাদু মাথা চাপড়ে বৌমাকে বললেন: ব্যাস..... শুরু হয়ে গেলো তোমার শাশুড়ি মায়ের কুসংস্কার মার্কা কথাবার্তা. আরে ছাদে কাকে বসে থাকলেই বা কি? এর আগে কতবার ছাদে কাক দেখেছি আমি..... কই কিছু হয়েছে?
শাশুড়ি মা ভয় ভয় বললেন: সেতো আমিও দেখেছি.... কিন্তু একসাথে এত কাকে কখনো দেখেছো? আবার বলছো ওরা উড়েও যাচ্ছিলোনা.... ওখানেই বসে ছিল. আমি বলছি বৌমা.... কিছু একটা......
নিজের স্ত্রীকে থামিয়ে দিয়ে অর্কর দাদু হেসে পুত্রবধূকে বললেন: দেখলে মা... তোমার শাশুড়ি মায়ের কান্ড..... এইজন্যই এতক্ষন বলতে চায়নি... আরে কাক তো একরকম পাখি নাকি? ওরা আসলেই খারাপ আর ময়না, টিয়া, শালিক আসলে কোনো ক্ষতি নেই তাইতো? সব দোষ ওই কাকেদের?
শাশুড়ি বললেন: হ্যা.... আমার কথা আর তুমি শুনবে কেন? আমি বলছি বৌমা.... এসব ভালো কথা নয়..... কাক পাখিটার সাথে অনেক খারাপ ব্যাপার জড়িয়ে থাকে... আমার মা বলতো বাড়িতে কাক বসলে.....
আবার থামিয়ে দিয়ে অর্কর দাদু বললেন: নিজের মাথায় তো তোমার এইসব কুসংস্কারে ভর্তি..... অন্তত মেয়েটার মাথায় এসব ঢুকিও না..... সত্যি মানে কি বলব. চা খাও.. মেয়েটা চা করে এনেছে খাও তো আর সিরিয়াল দেখো.
যদিও শ্রীপর্ণা বেশি কিছু বলেনি তখন আর ও যে এসব ব্যাপারে খুব একটা পাত্তা দেয় তাও নয় কিন্তু শাশুড়ি অমন থমকে যাওয়া মুখ দেখে ওরও কেমন কেমন লাগলো.
ঘরে এসে ও একটু বিছানায় গা এলিয়ে দিলো. একটা ম্যাগাজিন পড়তে লাগলো. একটু পরে স্নান করতে গেলো ও. স্নান সেরে আবার নিচের তলায় গেলো পুজো দিতে. অতনুকে অনেকবার বলেছে ও একটা ছোট মন্দির কিনে আনতে যাতে ওপরের ঘরেও ঠাকুরের বাসস্থান হয় কিন্তু সে আজ আনবো, কাল আনবো করে আর আনেই নি এখনও.
দুপুরের দিকটাতে একবার ছাদে গেলো ভেজা কাপড় নিয়ে. ছাদে গিয়ে দেখলো কোথাও কোনো কাক এখন নেই. হ্যা দূরে একটা দুটো দেখা যাচ্ছে কিন্তু এখানে কিছু নেই. কাপড় গুলো দড়িতে টাঙিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় পায়ে পা লেগে হঠাৎ পড়ে যাচ্ছিলো তৎক্ষণাৎ রেলিংটা ধরতে পারলো বলে কোনো বিপদ ঘটলোনা. ঠিক করে দাঁড়িয়ে একবার পেছনে ফিরে তাকালো. কেন জানেনা ওর মনে হলো ও নিজের থেকে পড়ে যাচ্ছিলোনা..... যেন পেছন থেকে কারোর পায়ে পা লেগেছে গেছিলো.
অফিসে কাজের ফাঁকে নিজের কেবিনে বসে অতনু বাবু চিন্তা করছেন কি হলো এটা তার সাথে? কেন এতগুলো নখের আঁচড় তার শরীরে? রাতে স্বপ্ন দেখতে দেখতে কি তিনিই unconscious mind এ নিজেই নিজের সাথে এরকম করেছেন? কিন্তু হঠাৎ এরকম কেন হবে? এর আগে তো কোনোদিন এমন হয়নি. রাতের ওই স্বপ্নটা মনে পড়ে গেলো আবার.
কি ভয়ানক সেই স্বপ্ন! কিন্তু কি প্রচন্ড উত্তেজক ছিল সেটি. পুনরায় মনে পড়তেই নিম্নাঙ্গে কেমন হতে লাগলো আবার. কিন্তু মুখটা.... ওই মুখটা চেনা চেনা লাগছে খুব. যেন কিছুদিন আগেই ওই মুখটা উনি কোথাও দেখেছেন. নীল চোখ, অসাধারণ রূপ কিন্তু ঠিক কথায় দেখেছেন মনে পড়ছেনা ওনার.
দুপুরে অর্ক ফিরে এলো. ওর মা ওকে খেতে দিয়ে কিছু কাজে নীচে গেলো. অর্ক একা বসে খাচ্ছে. একটু পরে ওর মনে হলো কেউ পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে. মা ছাড়া আর কে হবে তাই সেটা ভেবে ও বললো..
অর্ক: মা.... একটু নুন কম হয়েছে... নুন দেবে?
কিছু ওর প্রশ্নের পরিবর্তে কোনো উত্তর না পেয়ে ও পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো কই? কেউ কোথাও নেই. একটু পরে মা ফিরে এলো আর খাওয়া হয়ে গেলে অর্ককে নিয়ে ঘুমোতে গেলো.
অর্কর দাদু বিকেলে রোজ বেরোন. মাঠে যান নিজের পরিচিত প্রৌঢ় বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষন সময় কাটান. শনিবার রবিবার নাতিও সাথে আসে কিন্তু অন্যদিন গুলো আর ওর সেরকম বেরোনো হয়না. আজকেও অর্কর দাদু বেরিয়েছিলেন বাইরে. বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে একটু সন্ধ্যা হয়ে গেলো. ফিরে আসলেন উনি. কিন্তু গলির মুখে ঢুকে ভোলাকে আর সাথে আরও দু তিনটে কুকুরকে ওদেরই বাইর গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন. কুকুরের গুলো কান খাড়া করে এক দৃষ্টিতে ওনাদের বাড়ির দিকেই তাকিয়ে.
এই ভোলা..... চেঁচিয়ে ডাকলেন অর্কর দাদু. ভোলা রক নজর ওনার দিকে তাকিয়ে লেজ নেড়ে আবার সামনে তাকিয়ে রইলো.
আশ্চর্য? কি দেখছে কুকুরের গুলো? এগিয়ে গেলেন উনি বাড়ির দিকে. কুকুর গুলো চেনা.... তাই ওদের সামনে যেতে ভয় পেলেন না উনি. এবারে নিজেও তাকালেন বাড়ির দিকে.
কই? কিছু নেই তো. নিচের তলায় আলো জ্বলছে. আর দোতলায় অন্ধকারে বৌমা দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়. দূর থেকে তো তাই লাগছে. এতে আবার কুকুর গুলোর অমন তাকিয়ে থাকার কি হলো? কুকুর গুলো দোতলায় বৌমাকে দেখছে?
গেট খুলে ভেতরে গেলেন তিনি. আবার গেট লাগিয়ে দরজার কাছে গিয়ে বেল বাজালেন উনি. কয়েক সেকেন্ড পরেই তিনি শুনতে পাচ্ছেন দরজা খুলতে কেউ এগিয়ে আসছে.
কিন্তু দরজা খুলতেই অর্কর দাদু অবাক হয়ে গেলেন. কারণ দরজা যে খুলেছে সে অন্য কেউ নয় ওনারই বৌমা!
শ্রীপর্ণার ডাকে ঘুমটা ভেঙে গেলো অতনু বাবুর. পেছনে ফিরে চাইলেন অর্কর মা রাগী চোখে তার দিকে তাকিয়ে.
এই জন্য বলেছিলাম হয়ে গেলে টিভি নিভিয়ে শুতে চলে এসো কিন্তু কে শোনে কার কথা? এই তুমি আর তোমার ছেলে দুজনেই হয়েছো একরিকম. উফফফ... যেমন ছেলে তার তেমন বাবা.
রাগে গজ গজ করতে করতে বলছিলো শ্রীপর্ণা. কিন্তু অতনু বাবুর কানে যেন সেসব কিছুই ঢুকছিলনা. বার বার রাতের দৃশ্য গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে. সেই ভয়ানক পৈশাচিক দৃশ্য গুলো. ভাবতেই কেমন শিহরণ খেলে গেলো শরীরে. তাহলে..... সবই স্বপ্ন ছিল? কিন্তু এত বাস্তবিক লাগছিলো সব..... ওনাকে কি স্বপ্নদোষ রোগে ধরলো নাকি?
উঠে দাঁড়ালেন আর দাঁড়িয়েই বুঝলেন নিম্নাঙ্গের কাছটা ভেজা ভেজা. মানে বুঝতে অসুবিধা হলোনা ওনার. স্বপ্নদোষের কারণে প্যান্টেই ওনার কামরস........ ইশ.... ছি ছি.
ওদিকে অর্কর মা টিভিটা রিমোট দিয়ে অফ করে বললেন: টিভিটাও নেভাইনি লোকটা... মানে কি বলবো... সারারাত চললো টিভিটা... মানে তোমার কি কোনো খেয়াল থাকেনা নাকি? ওতো কি রাত জেগে ফিল্ম দেখা.... ছেলেটা কি শিখবে তোমার থেকে?
মাথাটা হঠাৎ গরম হয়ে গেলো অতনু বাবুর. রাগের মাথায় বলেই ফেললেন: আহঃ.... কি তখন থেকে এত ঘ্যানর ঘ্যানর করছো...কাজ নেই নাকি আর কিছু? যত্তসব...
অবাক হয়ে গেলো শ্রীপর্ণা স্বামীর মুখে এটা শুনে. অতনু বাবু নিজেও নিজের প্রতিক্রিয়াতে অবাক হয়ে গেলেন. সামান্য কথায় এরকম হঠাৎ রেগে গেলেন কেন সেটা নিজেই বুঝলেন না. কোনোদিন নিজের স্ত্রীয়ের সাথে এরকম ভাবে কথা বলেননি তিনি. এর আগেও কতবার বৌয়ের বকুনি খেয়েছেন তবে সেটা ভালোবাসার বকুনি সেটাও তিনি জানেন. তবে আজ হঠাৎ মাথাটা কেন গরম হয়ে গেলো?
যাইহোক... পরিস্থিতি সামলানোর জন্যই নকল হাসি হেসে বললেন: ইয়ে... একটু ইয়ার্কি করলাম.. কিছু মনে কোরোনা. শ্রীপর্ণাও স্বামীর ইয়ার্কি ভেবে রাগী হাসি হেসে চলে গেলো ছেলেকে ডাকতে. অতনু বাবুও গেলেন বাথরুমে.
সকালে খুব তাড়াহুড়ো থাকে শ্রীপর্ণার. ছেলেকে ওঠানো, জল খাবার বানানো, ছেলেকে রেডি করা, স্বামীর আর ছেলের জল খাবার রেডি করা. শশুর শাশুড়িকে খেতে চা জলখাবার দেওয়া আর স্বামী অফিসে চলে যাবার পরে ছেলেকে কলেজে ছেড়ে আসা. এইসব কারণে সারা সকালটা ব্যাস্ততার মধ্যে কাটে.
সেদিনও অর্ক রেডি হচ্ছে. ওর মা ওকে জামা পরিয়ে দিচ্ছে. এমন সময় স্নান সেরে অর্কর বাবা ঘরে এলো. আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হতে লাগলো. ঠিক তখনি অর্কর মায়ের চোখ পড়লো ওর স্বামীর পিঠে.
- একি! এতটা চিড়ে গেলো কি করে!
প্রশ্ন করলো অর্কর মা. ওর প্রশ্ন শুনে অর্কর বাবা ঘুরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো: কি? কি চিড়ে গেছে গো? কোথায়? অর্কর নাকি?
শ্রীপর্ণা: না না তোমার..... ঘাড়ের কাছটা এমন লম্বা দাগ... দেখেতো নখের আঁচড় লেগেছে মনে হচ্ছে.
স্ত্রীয়ের কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে আয়নায় নিজের কাঁধের পেছন দিকটা দেখলেন উনি. সত্যি আঁচড়ের দাগ. লম্বা লম্বা. একটা নয়, তিন চারটে. এবারে লক্ষ করলেন শুধু কাঁধে নয়, বুকের কাছেও একটা আঁচড়ের দাগ.
কি করে এলো এসব? ভাবতেই হটাত ওনার চোখের সামনে ভেসে উঠলো দুটো হাত. যৌন উত্তেজনায় খামচে ধরে অতনু বাবুর কাঁধ. আর তারপরেই কি এই দাগ? কিন্তু...... কিন্তু সে কি করে সম্ভব? ওটাতো স্বপ্ন ছিল.
কি গো? কি হলো বলো? কিকরে লাগলো এমন আঁচড়?
স্ত্রীয়ের প্রশ্নে আবার হুশ ফিরলো অর্কর বাবার. তিনি পরিস্থিতি সামলানোর জন্য বললেন: আর বলোনা..... যা মশা ছিল কাল উফফফ... যেখানেই পারছে কামড়ে দিচ্ছিলো.... তাই চুলকোতে চুলকোতে মনে হয় আমারই নখের আঁচড় লেগেছে. তখন জ্বালা জ্বালা করছিলো... ওতো আর খেয়াল করিনি.
উফফফফফ... তুমি না.... ওতো মশা ছিল যখন গুড নাইট টা জ্বালাও নি কেন? মানে একবার টিভির সামনে বসলে আর উঠতে ইচ্ছে করেনা না? অলস লোক একটা. কিরে এখনও জুতো বাধিসনি? তাড়াতাড়ি কর... দেরি হয়ে যাবে.
এই শেষ কথাগুলো ছিল অর্কর জন্য. শ্রীপর্ণা আবার ছেলের কাছে চলে গেলো. অতনু বাবুও দ্রুত নিজের জামাটা পড়ে নিলেন.
স্বামী অফিসে চলে গেছে, অর্ককেও একটু আগেই কলেজে ছেড়ে দিয়ে ফিরে এসেছে শ্রীপর্ণা. তাই ও শাড়ী পাল্টে বাড়ির ম্যাক্সি পড়ে নীচে রান্না করতে চলে গেলো. রান্নায় ওর শাশুড়ি ওকে সাহায্য করে. যদিও শ্রীপর্ণা শাশুড়িকে বেশি কিচ্ছু করতে দেয় না... সব নিজেই করে.. তবু বাড়ির দুই মহিলা রান্না ঘরে গল্পটা করে. কখন সময় পার হয়ে যায় জানতেও পারেনা ওরা.
রান্না সেরে শ্রীপর্ণা তিন কাপ চা করে নিয়ে গেলো শশুরের ঘরে. দুই বয়স্ক মানুষ বসে টিভি দেখছে. অর্কর দাদু কুন্তল বাবু খবরটা দেখার জন্য বার বার স্ত্রীকে রিমোট দিতে বলছে কিন্তু এখন শাশুড়ির সিরিয়াল দেখার সময়. কিছুতেই রিমোট দেবেন না.
চা নিয়ে ঘরে ঢুকলো ওনাদের বউমা. শশুর শাশুড়ি কে চা দিয়ে নিজেও শাশুড়ির পাশে বসে সিরিয়াল দেখতে লাগলো. কুন্তল বাবু আর কি করবেন... খবরের কাগজ টা একবার পড়া হয়ে গেছে... আবার পড়তে শুরু করলেন.
কা.. কা.. শব্দে এবারে বাইরের দিকে তাকালেন. বাইরের বট গাছটার ডালে অনেক গুলো কাকে বসে কা কা করে চলেছে. সকালের কথাটা মনে পড়ে গেলো.
উনি স্ত্রী বৌমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন: জানো কি হয়েছে আজ?
শ্রীপর্ণা: কি বাবা?
শশুর মশাই: আর বলোনা বৌমা...... সকালে শরীরটা একটু ভালো লাগছিলো..... তাই ভাবলাম যাই..... ছাদ থেকে হেঁটে আসি. দুদিন ছাদে যেতে পারিনি. তাই গেলাম ছাদে. ওমা.... গিয়ে তো আমি অবাক. দেখি অন্তত ৪0 টা কাক আমাদের ছাদে বসে. ওতো সকালে এত কাক দেখেছি তো আমি অবাক. কিন্তু আরও অবাক হলাম এই দেখে.... হুর হুর যা যা বলে তাড়িয়ে দিচ্ছি.... ওমা দেখি একটু দূরে গিয়ে আবার ফিরে আসছে, নইলে সরে গিয়ে বসছে. কিন্তু উড়ে পালিয়ে যাচ্ছেনা. কাকের যে এত সাহস আছে জানতাম না. শেষে আর ওদের মাঝে থাকাটা ঠিক হবেনা ভেবে ফিরে এলাম. কি কান্ড বলোতো বৌমা!
এই সব শুনে তো শাশুড়ি মায়ের ভয় চোখ বড়ো হয়ে গেলো. উনি আবার কিছু জিনিস খুব মেনে চলেন. সব শুনে তিনি ঘাবড়ে গিয়ে স্বামীকে বললেন: এসব কি বলছো কি গো? এত কাক আমাদের ছাদে বসেছিল! এত শুভ লক্ষণ নয় গো! এত খুব খারাপ ব্যাপার.
অর্কর দাদু মাথা চাপড়ে বৌমাকে বললেন: ব্যাস..... শুরু হয়ে গেলো তোমার শাশুড়ি মায়ের কুসংস্কার মার্কা কথাবার্তা. আরে ছাদে কাকে বসে থাকলেই বা কি? এর আগে কতবার ছাদে কাক দেখেছি আমি..... কই কিছু হয়েছে?
শাশুড়ি মা ভয় ভয় বললেন: সেতো আমিও দেখেছি.... কিন্তু একসাথে এত কাকে কখনো দেখেছো? আবার বলছো ওরা উড়েও যাচ্ছিলোনা.... ওখানেই বসে ছিল. আমি বলছি বৌমা.... কিছু একটা......
নিজের স্ত্রীকে থামিয়ে দিয়ে অর্কর দাদু হেসে পুত্রবধূকে বললেন: দেখলে মা... তোমার শাশুড়ি মায়ের কান্ড..... এইজন্যই এতক্ষন বলতে চায়নি... আরে কাক তো একরকম পাখি নাকি? ওরা আসলেই খারাপ আর ময়না, টিয়া, শালিক আসলে কোনো ক্ষতি নেই তাইতো? সব দোষ ওই কাকেদের?
শাশুড়ি বললেন: হ্যা.... আমার কথা আর তুমি শুনবে কেন? আমি বলছি বৌমা.... এসব ভালো কথা নয়..... কাক পাখিটার সাথে অনেক খারাপ ব্যাপার জড়িয়ে থাকে... আমার মা বলতো বাড়িতে কাক বসলে.....
আবার থামিয়ে দিয়ে অর্কর দাদু বললেন: নিজের মাথায় তো তোমার এইসব কুসংস্কারে ভর্তি..... অন্তত মেয়েটার মাথায় এসব ঢুকিও না..... সত্যি মানে কি বলব. চা খাও.. মেয়েটা চা করে এনেছে খাও তো আর সিরিয়াল দেখো.
যদিও শ্রীপর্ণা বেশি কিছু বলেনি তখন আর ও যে এসব ব্যাপারে খুব একটা পাত্তা দেয় তাও নয় কিন্তু শাশুড়ি অমন থমকে যাওয়া মুখ দেখে ওরও কেমন কেমন লাগলো.
ঘরে এসে ও একটু বিছানায় গা এলিয়ে দিলো. একটা ম্যাগাজিন পড়তে লাগলো. একটু পরে স্নান করতে গেলো ও. স্নান সেরে আবার নিচের তলায় গেলো পুজো দিতে. অতনুকে অনেকবার বলেছে ও একটা ছোট মন্দির কিনে আনতে যাতে ওপরের ঘরেও ঠাকুরের বাসস্থান হয় কিন্তু সে আজ আনবো, কাল আনবো করে আর আনেই নি এখনও.
দুপুরের দিকটাতে একবার ছাদে গেলো ভেজা কাপড় নিয়ে. ছাদে গিয়ে দেখলো কোথাও কোনো কাক এখন নেই. হ্যা দূরে একটা দুটো দেখা যাচ্ছে কিন্তু এখানে কিছু নেই. কাপড় গুলো দড়িতে টাঙিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় পায়ে পা লেগে হঠাৎ পড়ে যাচ্ছিলো তৎক্ষণাৎ রেলিংটা ধরতে পারলো বলে কোনো বিপদ ঘটলোনা. ঠিক করে দাঁড়িয়ে একবার পেছনে ফিরে তাকালো. কেন জানেনা ওর মনে হলো ও নিজের থেকে পড়ে যাচ্ছিলোনা..... যেন পেছন থেকে কারোর পায়ে পা লেগেছে গেছিলো.
অফিসে কাজের ফাঁকে নিজের কেবিনে বসে অতনু বাবু চিন্তা করছেন কি হলো এটা তার সাথে? কেন এতগুলো নখের আঁচড় তার শরীরে? রাতে স্বপ্ন দেখতে দেখতে কি তিনিই unconscious mind এ নিজেই নিজের সাথে এরকম করেছেন? কিন্তু হঠাৎ এরকম কেন হবে? এর আগে তো কোনোদিন এমন হয়নি. রাতের ওই স্বপ্নটা মনে পড়ে গেলো আবার.
কি ভয়ানক সেই স্বপ্ন! কিন্তু কি প্রচন্ড উত্তেজক ছিল সেটি. পুনরায় মনে পড়তেই নিম্নাঙ্গে কেমন হতে লাগলো আবার. কিন্তু মুখটা.... ওই মুখটা চেনা চেনা লাগছে খুব. যেন কিছুদিন আগেই ওই মুখটা উনি কোথাও দেখেছেন. নীল চোখ, অসাধারণ রূপ কিন্তু ঠিক কথায় দেখেছেন মনে পড়ছেনা ওনার.
দুপুরে অর্ক ফিরে এলো. ওর মা ওকে খেতে দিয়ে কিছু কাজে নীচে গেলো. অর্ক একা বসে খাচ্ছে. একটু পরে ওর মনে হলো কেউ পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে. মা ছাড়া আর কে হবে তাই সেটা ভেবে ও বললো..
অর্ক: মা.... একটু নুন কম হয়েছে... নুন দেবে?
কিছু ওর প্রশ্নের পরিবর্তে কোনো উত্তর না পেয়ে ও পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো কই? কেউ কোথাও নেই. একটু পরে মা ফিরে এলো আর খাওয়া হয়ে গেলে অর্ককে নিয়ে ঘুমোতে গেলো.
অর্কর দাদু বিকেলে রোজ বেরোন. মাঠে যান নিজের পরিচিত প্রৌঢ় বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষন সময় কাটান. শনিবার রবিবার নাতিও সাথে আসে কিন্তু অন্যদিন গুলো আর ওর সেরকম বেরোনো হয়না. আজকেও অর্কর দাদু বেরিয়েছিলেন বাইরে. বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে একটু সন্ধ্যা হয়ে গেলো. ফিরে আসলেন উনি. কিন্তু গলির মুখে ঢুকে ভোলাকে আর সাথে আরও দু তিনটে কুকুরকে ওদেরই বাইর গেটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন. কুকুরের গুলো কান খাড়া করে এক দৃষ্টিতে ওনাদের বাড়ির দিকেই তাকিয়ে.
এই ভোলা..... চেঁচিয়ে ডাকলেন অর্কর দাদু. ভোলা রক নজর ওনার দিকে তাকিয়ে লেজ নেড়ে আবার সামনে তাকিয়ে রইলো.
আশ্চর্য? কি দেখছে কুকুরের গুলো? এগিয়ে গেলেন উনি বাড়ির দিকে. কুকুর গুলো চেনা.... তাই ওদের সামনে যেতে ভয় পেলেন না উনি. এবারে নিজেও তাকালেন বাড়ির দিকে.
কই? কিছু নেই তো. নিচের তলায় আলো জ্বলছে. আর দোতলায় অন্ধকারে বৌমা দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়. দূর থেকে তো তাই লাগছে. এতে আবার কুকুর গুলোর অমন তাকিয়ে থাকার কি হলো? কুকুর গুলো দোতলায় বৌমাকে দেখছে?
গেট খুলে ভেতরে গেলেন তিনি. আবার গেট লাগিয়ে দরজার কাছে গিয়ে বেল বাজালেন উনি. কয়েক সেকেন্ড পরেই তিনি শুনতে পাচ্ছেন দরজা খুলতে কেউ এগিয়ে আসছে.
কিন্তু দরজা খুলতেই অর্কর দাদু অবাক হয়ে গেলেন. কারণ দরজা যে খুলেছে সে অন্য কেউ নয় ওনারই বৌমা!
চলবে......
বন্ধুরা কেমন লাগলো আপডেট জানাবেন.
ভালো লেগে থাকলে প্লিস লাইক ও রেপস দিতে ভুলবেন না. আপনাদের প্রতিটা লাইক রেপস ও কমেন্ট আমাকে এগিয়ে যেতে সবসময় অনুপ্রেরণা যোগায়. ধন্যবাদ